সেই তুমি ৩ পর্ব ১৯+২০

#সেই_তুমি🍁
#সিজন_০৩
#পর্ব_১৯
#Tabassum_Kotha

“আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?”- হীর এর দু হাত নিজের হাতে চেপে ধরে কথাটা বলে তুর্য।

অশ্রুসিক্ত দুটি চোখ আকুতি ভরা কন্ঠে মিনতি করে যাচ্ছে অনবরত। আমার এখন সব ভুলে নতুন করে সব শুরু করা উচিত কিন্তু নিজেকে কিছুতেই প্রস্তুত করতে পারছি না। তুর্য এর হাতের মুঠোয় থেকে নিজের হাত দুটো আলতো করে সরিয়ে কাউচে হেলান দিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছি। তুর্য অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে আমার সামনে হাঁটু ভেঙে বসে আছেন। তাকে এভাবে পরাজিত সৈনিকের মতো দেখতে মোটেও ভালো লাগছে না। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি আর কিছুই চিন্তা করতে পারছি না। যেনো ধীরে ধীরে আমার সমস্ত চিন্তা শক্তি লোপ পাচ্ছে।

“আপনি শুয়ে পরুন। কালকে এই ব্যাপারে কথা হবে।”
“তুমি কি আমাকে মেনে নিতে পারবে না?”
“আমার সময় প্রয়োজন।”

তুর্য আর কিছু বললেন না। হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমার সংকোচ! আমার ভাবনা ভুল প্রমাণিত করে তুর্য আমাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। আমার কিছু বলার আগেই তুর্য আমাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরেন। যখনই মনে হয় তুর্য আমাকে বুঝতে শুরু করেছেন ঠিক সেই মুহূর্তেই সে এমন কিছু করে ফেলে যেটা আমাকে আরও বেশি কষ্ট দেয়। আমার নিজের সাথে একটু সময় প্রয়োজন ছিল। তুর্য কে এবার সরাসরি বলতে হবে আমার একাকিত্ব প্রয়োজন। তুর্যর পাশ ফিরতেই তুর্যর ঘুমন্ত মুখটা নজরে আসে। এই মায়া ভরা মুখটার প্রেমে না পড়ার শক্তি আমার নেই। তুর্যর এই মুখটি আমার চরম দুর্বলতা। একটা সময় ছিল এই মুখটা দেখার জন্য পাগলের মতো তার পিছু পিছু ছুটতাম। আজ সেই মানুষটার উপর ভালোবাসা টা কোথায় যেনো হারিয়ে যাচ্ছে! এমন তো নয় যে আমি তাকে ভালোবাসি না। কিন্তু তবুও কেনো তাকে মেনে নিতে এতো কষ্ট হচ্ছে!
সাত পাঁচ চিন্তা করতে করতে একটা সময় হীর ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।

.
খুব ভোরেই রায়ানের ঘুম ভেঙে যায়। সত্যি বলতে সারারাত সে এপাশ ওপাশ করেই পার করে দিয়েছে। প্রথম এক ঘণ্টার মতো ঘুম হলেও বাকি টা রাত তার জেগেই কেটেছে। মাথা টা প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে। এ হাতে কপাল চেপে ধরে রেখেছে। এতো কিছু করেও শেষ পর্যন্ত একটু শান্তি সে খুজে পাচ্ছে না।

“নাও চা টা খেয়ে নাও। মাথা ব্যথা কমে যাবে।”
ধোয়া উঠা এক কাপ গরম চা হাতে দাড়িয়ে আছে তাফসি।

চায়ের কাপ টা রায়ানের হাতে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের দিকে চলে গেলো তাফসি।
চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে তাফসি কে দেখছে রায়ান। তাফসি কিভাবে জানলো তার মাথা ব্যথার কথা?
রায়ান চায়ের কাপটা বেড সাইড টেবিলে রেখে তাফসির মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়।
“তুমি কি করে জানলে আমার মাথা ব্যথা হচ্ছে?”
“তোমার ভালো লাগা মন্দ লাগা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।”

তাফসির উত্তরে বেশ বিরক্ত হয় রায়ান।
“কথা পেচাবে না। কিভাবে জানলে জাস্ট সেটা বলো।”
“রাতে ঘুমাতে পারো নি সেটা আমি দেখেছি। তাই চা করে এনেছি। খেয়ে নিলে অনেক উপকার হবে।”

রায়ান আর কথা বাড়ায় না। চা শেষ করে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

.

হীর রুমে না থাকায় সুযোগে কিয়ারা তুর্যর রুমে ঢুকে। তুর্য মাত্রই শাওয়ার শেষ করে বেরিয়েছে। ভেজা চুল গুলো একহাতে টাওয়াল দিয়ে শুকোচ্ছে আর অন্য হাতে একটা ফাইল ধরে আছে। আজ খুব ইমপরট্যান্ট একটা মিটিং তার। মনোযোগ ফাইলে থাকায় কিয়ারা কে রুমে নোটিস করে নি তুর্য। কিয়ারা এক পা দু পা করে এগিয়ে পিছন থেকে তুর্য কে জরিয়ে ধরে। প্রথমে তুর্য হীর মনে করলেও পরক্ষণেই বুঝতে পারে এটা হীর এর স্পর্শ না। তোয়ালে টা বেডে ছুড়ে ফেলে পিছনের মেয়ে টা কে এক টানে সামনে আনে তুর্য। কিয়ারা কে দেখে রাগ চিন চিন করে তার মাথায় উঠে যায়।

“হাউ ডেয়ার ইউ কিয়ারা? এসব কি?”
“কেনো তোমার ভালো লাগে নি?”
“আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড? এর আগেও আমি তোমাকে ওয়ার্ন করেছি যে এই ধরনের চিপ স্টান্স কখনো করবে না। তারপরেও?”
“বুঝেছি। হীর এর রাগ তুমি আমার উপর ঝারছো!”
“ওয়েট! হুয়াট?”
“লুক তুর্য। লেটস্ কাম টু দ্য পয়েন্ট। তোমার আর হীর এর বিয়ে টা একটা ডিল ছিল। যেটা এখন আর কাজ করছে না। তার থেকে বড় কথা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তাই তুমি হীর কে ছেড়ে দাও। আমরা বিয়ে করে নেবো।”

তুর্য চুপচাপ শুধু কিয়ারার কথা শুনছে। তার যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না কিয়ারা এসব বলছে।
“তুমি শুনতে পারছো তুর্য? হীর তোমাকে একদম ভালোবাসে না। ওকে তুমি ছেড়ে দাও।”
“হাউ ডু ইউ নো হীর আর আমার মধ্যে প্রব্লেম হচ্ছে?”
“কাম অন তুর্য! বললাম তো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর আম্রা যাকে ভালোবাসি তার সবকিছুর খোঁজ রাখি।”
“তুমি আমার আর হীর এর উপর নজর রাখছো!”
“রাখতেই হবে। তা না হলে যে তুমি আর হীর ক্লোজ হয়ে যাবে।”
“গেট আউট অফ হিয়ার। ইউ আর ম্যাড। আ সাইকো!”
তুর্যর কথায় কিয়ারা বেশ চটে যায়।
“কি? তুমি আমাকে পাগল বলছো? হাউ ডেয়ার ইউ তুর্য?”
“কজ ইউ আর ম্যাড।”
“হ্যাঁ আমি পাগল। তোমার প্রেমে পাগল। তোমার জন্য পাগল।”
“এখান থেকে যাও কিয়ারা। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু সি ইউ আগেইন।”
“তুমি আমাকে এভাবে রিজেক্ট করতে পারো না তুর্য। তুমি জানো আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি? তুমি জানো তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি কতোকিছু করেছি। আরে তুমি কি জানবে? তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য তাফসি আপুর বিয়ের দিন তোমার ড্রিংক স্পাইক করেছিলাম। জানো কতোটা রিস্ক নিয়েছিলাম তোমাকে আপন করে পাওয়ার জন্য। কিন্তু একটুর জন্য সেই প্ল্যান টা উল্টো পরে যায়। বাট ট্রাস্ট মি তুর্য আই লাভ ইউ ভেরি মাচ।”

কিয়ারার কথাটা বলা শেষ করতে দেরি হলেও তুর্যর তাকে ঠাস করে একটা চড় মারতে দেরি হয় নি। টাল সামলাতে না পেরে কিয়ারা মেঝেতে উপুর হয়ে পরে যায়। রাগে তুর্য আগুন হয়ে গিয়েছে। কিয়ারার জায়গায় কোনো ছেলে হলে হয়তো এতোক্ষণে আধমরা হয়ে যেতো।
নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ায় কিয়ারা।
“তুমি আমাকে মারলে তুর্য?”
“থ্যাংক ইউর স্টারস্ যে শুধু চড় মেরেছি। মেয়ে বলে বেঁচে গিয়েছো নয়তো এতোক্ষণে জানে মেরে ফেলতাম।”
“তুর্য! কি করেছি আমি যার শাস্তি দিচ্ছো আমাকে?”
“তুমি কি এখনও বুঝতে পারছো না তুমি কি করেছো? কিয়ারা তোমার জন্য আজ আমাদের সবার জীবনে এতো ঝড় উঠেছে। তোমার একটা বোকামির জন্য রায়ান আর তাফসির বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল। তোমার জন্য হীর কে শত অপমান লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে। বুঝতে পারছো তুমি তোমার জন্য এখনও আম্মু আর তাফসি হীর কে ভুল বুঝছে!”
“তুর্য আমি তো তোমাকে ভালোবেসে তোমাকে পাওয়ার জন্য এসব করেছিলাম। বিশ্বাস করো আমি তাফসি আপুর বিয়ে ভাঙতে চাই নি। রায়ান ভাইয়া কিভাবে হীর এর সাথে ছিল আমি কিছুই জানি না।”
“তুমি ইচ্ছে করে না করলেও সবকিছুর জন্য তুমিই দায়ী।”

তুর্যর কথায় কিয়ারা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তুর্য কিছু সময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
“লুক কিয়ারা। তুমি এখনও অনেক ছোট। এসব প্ল্যানিং প্লটিং করে নিজের লাইফটাকে কমপ্লিকেটেড করো না। তোমার সামনে একটা ব্রাইট ফিউচার তোমার অপেক্ষা করছে। এসব উটকো চিন্তা ভাবনা ঝেড়ে ফেলো মাথা থেকে।”
“বাট আই লাভ ইউ।”
“তুমি এখনও অনেক ছোট কিয়ারা। সর্বোচ্চ ষোলো বছর হবে তোমার টেনে টুনে। আমার ছোট বোনও তোমার চেয়ে বড়।”
“কিন্তু?”
“এটা ভালোবাসা নয় কিয়ারা। এটা জাস্ট একটা ইনফ্যাচুয়েশন। যেটা সময়ের সাথে সাথেই কেটে যাবে। এসব কিছু বাদ দাও। এসব তোমার আর আমার মধ্যেই থাকবে। কিন্তু তোমাকে মুভ অন করতে হবে। তোমার লাইফটাকে তুমি এভাবে ওয়েস্ট করে দিলে হবে না।”

তুর্যর অনেক বোঝানোর পর কিয়ারা বুঝতে পারে সে কতো বড় ভুল করেছে। কিয়ারা তাফসিকে স্যরি বলতে চেয়েছিল কিন্তু তুর্য তাকে বারণ করে।

.
তুর্যর ইমপরট্যান্ট মিটিং থাকায় তাড়াতাড়ি অফিসে চলে যায়। যাওয়ার আগে আমার সাথে কিছু কথা বলতে চাইলেও এড়িয়ে যাই। এই মুহূর্তে তুর্যর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। হয়তো আমার নিজেকে সময় দেওয়া টা খুব বেশি জরুরি!
সেদিন রাতেই বড় আব্বু জানায় কোম্পানির কিছু কাজে তুর্য কে রাজশাহী যেতে হয়েছে। তুর্য রাজশাহী যাওয়ার আগে একবারও আমাকে জানালেন না? আমার কি এতোটুকু জানার অধিকার নেই? তুর্যর উপর একরাশ অভিমান এসে জমাট বাঁধে মনে। এই তার ভালোবাসা! শহরের বাইরে যাবেন অথচ একটা ফোন করলেন না। ইচ্ছে করছে ফোন করে তাকে অনেক বকতে। আমার মনের রাগ টা এই মূহুর্তে তার উপর ঝাড়তে পারলে হয়তো অনেক শান্তি পেতাম। ফোন হাতে নিয়েও রেখে দিলাম। সে আমাকে ফোন করে নি আমি কেনো করতে যাবো? করবো না ফোন। আমিও দেখতে চাই তার ভালোবাসার জোর!

.
এরই মধ্যে ছয় দিন কেটে যায়। এই ছয় দিনে তেমন কিছু না পাল্টালেও হীর এর জীবন উথালপাথাল হয়ে গিয়েছে।একাকিত্বের কিছুটা সময় চেয়েছিল সে নিজেকে সময় দেওয়ার জন্য। কিন্তু এই ছয় দিনে হীর ভালোই বুঝতে পেরেছে তুর্য কে ছাড়া সে কিছুই না। তার অস্তিত্বের সম্পূর্ণ টা ঘিরেই তুর্য রয়েছে। তুর্য কে ছাড়া একেকটা দিন যেনো একেক শতাব্দীর মতো কাটছে তার। ছয় দিনে হয়তো ছয় হাজার বার তুর্য কে কল দিয়েছে সে। কিন্তু প্রতিবারই রিং হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে লাইন ডিসকানেক্ট করে দিয়েছে। তুর্যর বিরহে কাতর হয়ে আছে সে তবুও ইগো ছাড়তে পারছে না।

এই কয়েক দিনে রায়ান অনেক চেষ্টা করেও তাফসিকে টর্চার করতে পারে নি। উল্টো প্রতিবার সে নিজেই তাফসির প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছে। তাফসির ইচ্ছাতে রায়ান তাফসিকে তাদের বাসায় নিয়ে যাচ্ছে কাল। এই কয়েক দিনে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া হীর রুম থেকে বের হয় নি। তাফসি যাওয়ার আগে একবার হীর এর সাথে কথা বলতে হীর এর রুমে যায়।
বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে হীর। তাফসি দরজায় কড়া নাড়লে হুরমুরিয়ে উঠে।

ভেবেছিলাম তুর্য এসেছেন। আমার আশার এক চিলতে আলো ফিকে হয়ে যায় দরজায় তাফসি কে দেখে।
“ভিতরে আসবো?”
“আরে তুমি অনুমতি নিচ্ছো কেনো? আসো না।”
“ভাই বাসায় নেই। মন খারাপ তাই না?”
“কোই না তো! আমি তো বিন্দাস আছি।”
“কাকে মিথ্যে বলছিস? আমাকে নাকি নিজেকে?”
“আরে আমার কথা ছাড়ো, তোমার খবর শোনাও।”
“শোনানোর মতো কিছুই নেই।”
“তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো তো?”
“ক্ষমা কেনো?”
তাফসির প্রশ্নের উত্তরে হীরের বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
“তোর কোনো ভুল ছিল না হীর। যা কিছু হয়েছে সব টা ভাগ্যে লেখা ছিল। তাই হয়েছে।”
“তুমি বিশ্বাস না করলেও আমি একটাই উত্তর দেবো। এসবের জন্য রায়ান দায়ী।”
“রায়ান কিছু টা দায়ী। বাকিটা ভাগ্যে ছিল।”
“মানে?”
“বিয়ের দিন তোর আর রায়ানের মধ্যে যেসব কথাবার্তা হয়েছিল সবটাই আমি শুনেছিলাম।”
“তার মানে তুমি সত্যি টা জেনেছিলে! তারপরও কেনো বিয়ে টা করলে? আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার কথায় বিশ্বাস করো নি। তাই বাধা দেই নি। কিন্তু তুমি জেনে শুনে কেনো করলে বিয়ে টা?”
“শান্ত হ তুই। আমার কাছে যথেষ্ট সময় ছিল। আর আমি সবকিছু ভেবে চিন্তেই করেছি।”
“কিন্তু কেনো?”
“আমি রায়ান কে ভালোবাসি হীর। আমার অস্তিত্বের সম্পূর্ণ টা জুড়েই শুধু রায়ান। নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও রায়ানের ভালোবাসা আমি চাই।”
“ভালোবাসার জন্য নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে দেবে!”
“ভালোবাসার ধরা বাঁধা কোনো নিয়ম নেই। আমি নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে তার মাঝে সুখ খুঁজে নিয়েছি।”
“আর আত্মসম্মান?”
“আত্মসম্মান যতক্ষণ অহং এ পরিণত না হয় ততক্ষণ ই শ্রেয়। এখন ছাড় তো এসব কথা। আজ চলে যাচ্ছি আমি। হয়তো ভাইয়ার সাথে দেখা হবে না।”
“আর কিছু দিন থেকে যাও।”
“না। রায়ান নিজেই মত দিয়েছে। অনেক তো হলো শত্রু শত্রু খেলা। এবার না হয় আমি নিজের সংসারে মন দেই।”

তাফসি হীর এর কাছে বিদায় নিয়ে নেয়। চলে যাওয়ার আগে পিছনে ফিরে আবার হীর কে ডাকে।
“তুর্য ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে হীর। চোখের দেখা সবসময় সত্যি হবে এমন টা জরুরি না।”

তাফসির কথার কোনো উত্তর দেয় না হীর। বিছানা ছেড়ে উঠে ব্যালকোনিতে চলে যায়।

পড়ন্ত বিকেল। সূর্য তার সারাদিনের দায়িত্ব শেষে ক্লান্ত শরীরে পশ্চিম আকাশে হেলে পরছে। পাখিরা কিচিরমিচির শব্দে ঘরে ফিরে যাচ্ছে। ভালো লাগার মতো একটা পরিবেশ হওয়ার পরেও কোথাও কিছু একটা নেই। স্নিগ্ধ বিকেলের এই চাঞ্চল্যকর আমেজে কোথায় একটা বিষাদময়তা মিশে রয়েছে। মৃদু বাতাসে মিশে আছে শূন্যতা, রিক্ততা। এই মুহূর্তে তুর্যর কথা খুব বেশি মনে পড়ছে হীর এর। হীর চোখ বন্ধ করে এই বিষন্ন সময় টা তে তুর্য কে কল্পনা করছে। কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে এই জায়গাতে বসে তারা একে অপরকে দেখবে। একে অপরের দৃষ্টিতে হারিয়ে নিজেকে খুঁজবে। হাজার মান অভিমানের গল্প সেদিন তারা একে অপরকে শোনাবে। তুর্যর বুকে মাথা রেখে বিকেল থেকে রাত, রাত পেরিয়ে সকাল, দিন পেরিয়ে মাস,,, অতঃপর শেষ নিশ্বাস ত্যাগের মুহূর্ত পর্যন্ত তার বুকেই সময় কেটে যাবে!
#সেই_তুমি🍁
#সিজন_০৩
#পর্ব_২০
#Tabassum_Kotha

ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারোটা বেজে সতেরো মিনিট। এইমাত্র বাড়ি ফিরেছে তুর্য। রুমে ঢুকে খানিকটা অবাক হয় সে। পুরো রুমে বিষম অন্ধকার। হীর এর উজ্জ্বলতা পছন্দ অন্ধকার তো তুর্যর প্রতীকী। তুর্য অন্ধকারেই দিব্যি এগিয়ে যায়। বাম হাতে থাকা রোলেক্স রিষ্ট ওয়াচ টা খুলে সেন্টার টেবিলে রাখতে যাবে তখন আচমকা পিছন থেকে কেউ তাকে জরিয়ে ধরে। আকস্মিকতায় তুর্যর হাত থেকে ঘড়িটা মেঝেতে পড়ে যায়। তুর্য কোনো রিয়েক্ট না করে একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে। হীর তুর্যর শার্ট খিচে শক্ত করে তাঁকে জড়িয়ে ধরেছে। হীর এতোটাই শক্ত করে শার্ট টানছে যে মাঝের চার নম্বর বাটন টা ছিড়ে মেঝেতে কোথাও হারিয়ে যায়। এসবের তোয়াক্কা না করে তুর্য হীর এর স্পর্শ অনুভব করতে ব্যস্ত।
ওপাশ থেকে তুর্যর শার্ট ভিজে যাচ্ছে। তুর্য অবিলম্বে পিছনে ফিরে হীর কে আকড়ে ধরে। পুরো ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন। তবুও খুব সহজেই তারা একে অপরকে দেখতে পাচ্ছে। যেনো তাদের একে অপরকে দেখার জন্য কোনো আলোর প্রয়োজন নেই। তুর্য হীর এর মুখ তার মুখ বরাবর নিয়ে নেয়।

“হুয়াট হ্যাপেন্ড হীর? তুমি কাঁদছো কেনো? কেউ কিছু বলেছে তোমাকে? রায়ান কিছু করেছে? নাকি আম্মু আর তাফসি কিছু বলেছে? টেল মি প্লিজ। হুয়াই আর ইউ ক্রায়িং?”

হীর নাক টানতে টানতে তুর্য কে শান্ত করে।
“কেউ কিছু বলে নি। এমনিতেই কান্না পাচ্ছিল।”
“এমনি এমনি কেউ কান্না করে না। বলো আমায় কি হয়েছে?”
“সত্যি বলছি কিছু হয় নি। এমনিতেই।”
“তোমার চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারছি না হীর। কথা দাও যদি কখনও কারো কথায় বা আমার কোনো কথায় কষ্ট পাও তবে আমার সাথে অনেক ঝগড়া করবে কিন্তু কখনও কাঁদবে না।”

কাঁদতে কাঁদতে তুর্যর বুকে আছড়ে পড়ে হীর।
“আপনি কেনো আমাকে ভালোবাসেন তুর্য? আমি আপনাকে কতো অপমান করেছি, কতো সন্দেহ করেছি। তবুও কেনো আমার এতো পরোয়া করেন?”
তুর্য হীর কে আরও শক্ত করে চেপে ধরে।
“কারণ অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে। ভালোবাসার কোনো কারণ হয় না। যাকে ভালোবাসি তাকে শুধু ভালোবাসি। কেনো ভালোবাসি সেই উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।”

হীর কান্না জড়ানো ভাঙা ভাঙা কন্ঠে নিজের অনুভূতি কে তুর্যর সামনে শব্দে রূপ দেয়।
“কোনো কারণ ছাড়াই আমিও আপনাকে ভালোবাসি তুর্য! ঠিক মনে নেই কখন থেকে কিন্তু যখন থেকে বুঝতে শিখেছি আপনাকে আমার অস্তিত্বে খুঁজে পেয়েছি। আমার সারা টা দিনে আপনাকে চাই, প্রতিটা মুহূর্তে আপনাকে চাই,, শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আপনাকেই চাই!”

হীর এর কপালে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয় তুর্য।
অর্ধ ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের মৃদু আলো ব্যালোকোনির কাঁচ ভেদ করে ঘরের ভিতর প্রবেশ করছে। আবছা আলোয় হীর এর কান্না ভেজা মুখ টা জ্বলজ্বল করছে। তুর্য দু হাতে হীরের চোখের পানি মুছে হীর কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।
বেশকিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর হীর তুর্য কে জোর করে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয় ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

.
কালো টি-শার্ট আর গ্রে ট্রাউজার পরে টাওয়াল দিয়ে চুল শুকোতে শুকোতে ওয়াশরুম থেকে বের হয় তুর্য। বেরিয়ে তুর্যর চোখ কপালে উঠে যাবার উপক্রম। পুরো ঘর রঙিন সুগন্ধি মোমবাতি দিয়ে সাজানো। শ খানেক মোমবাতি পুরো ঘরকে প্রজ্জ্বলিত করে তুলেছে। শুধু মোমবাতিই নয়, হাজারো গোলাপের পাপড়ি তে সম্পূ্র্ণ মেঝে সুসজ্জিত। ব্যালকনিতে ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের আবছা আলোয় একটা ছায়ামূর্তির অবয়বের দিকে এগিয়ে যায় তুর্য। নেভি ব্লু একটা শিফনের শাড়ি পরনে দাড়িয়ে আছে হীর। মৃদু বাতাসে হীর এর খোলা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে। দুই হাত ভাজ করে বুকে গুজে হীর এর দিকে এগিয়ে যায় তুর্য। ব্যালকনিতে একটা টেবিল পাতা, যাতে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার সাজানো হয়েছে। তুর্যর অবাক হওয়া যেনো এখনও বাকি ছিল। দুচোখে মোটা কাজল আর ঠোঁটে ডিপ লিপস্টিকে হীর কে বেশ অন্য রকম লাগছে। তুর্যর যেনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস হচ্ছে না। সত্যি কি এটা হীর! এর আগে কখনও সে হীর কে এই রূপে দেখে নি। হীর এর সৌন্দর্যের মোলায়েম রূপ টাই তুর্যর পছন্দ। আজ তার এই আবেদনময়ী ভঙ্গিও যেনো তুর্য কে মোহিত করে তুলছে।

হীর এর তুরির শব্দে তুর্য মুগ্ধতার জগত থেকে বেরিয়ে আসে।
“কি হলো? ওভাবে কি দেখছেন?”
“আর ইউ অলরাইট?”
“হ্যাঁ! আমার কি হবে?”
“না মানে,, এসব..!”
“ওহ এসব! তেমন কিছুই না। জাস্ট কমপেনসেশন।”
“মানে? ওয়েট কি বলছো তুমি? কিসের ক্ষতিপূরণ? তুমি কি এখনও আমাকে ভালোবাসতে পারো নি হীর?”
“আরেহ রিল্যাক্স। আমি তো শুধু মজা করছিলাম। আপনি তো সিরিয়াসলি নিয়ে নিলেন!”

তুর্য কিছু বলছে না। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হীর এর দিকে।
“আপনি বিশ্বাস করছেন না? সত্যি মজা করছিলাম। পূর্বের সব কষ্টদায়ক স্মৃতি ধুয়ে মুছে নতুন করে সবটা শুরু করতে চাই। ভেবেছিলাম কাল থেকে করবো। কিন্তু তারপর ভাবলাম আজ থেকেই কেনো নয়? এক মুহূর্তই বা কেনো নষ্ট করবো! আপনার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত বহুমূল্য। একটুও নষ্ট করতে রাজি নই।”
“কিন্তু এতো দ্রুত এতোকিছু কিভাবে করলে?”
“আমি সুপারওম্যান নই। আপনি আজকে ফিরবেন সেটা আমি আগেই শুনেছি। তাই আগেই এসব করে রেখেছিলাম, আপনাকে ইমপ্রেস করার জন্য।”
“অ্যান্ড আই এম ইমপ্রেসড্। থ্যাংক ইউ সো মাচ হীর। সত্যি আজকের দিনটা আমার লাইফের ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ডে।”
“এখনও অনেক কিছু বাকি।”

হীর চেয়ার পুল করে তুর্য কে বসায়। দুজনে বেশ রোমান্টিক একটা ডিনার শেষ করে।

“দ্যাটস্ নট ফেয়ার হীর। তুমি এতো রোমান্টিক একটা ডেট প্ল্যান করেছো বাট আমি তোমার জন্য কোনো গিফ্ট আনি নি।”
“আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার আপনি নিজে তুর্য। আপনার সামনে তো কোহিনূরও ফিকে পরে যাবে।”

তুর্যর সামনে হীর হাঁটু গেড়ে বসে পরে। তুর্যর এসব এখনও স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
“আই লাভ ইউ তুর্য! আপনি কি আপনার বাকিটা জীবন আমার সাথে কাটাবেন? আপনি কি আমাকে আপনার মতো করে ভালোবাসবেন?”

তুর্য হীর কে তুলে বুকে জড়িয়ে নেয়।
“ইয়েস হীর। আই লাভ ইউ ঠু। আই ওয়ান্ট টু স্পেন্ট মাই হোল লাইফ উইথ ইউ। এভাবেই সারা জীবন তোমাকে বুকে জরিয়ে বাঁচতে চাই। আমার উপন্যাসের প্রতিটা অধ্যায় তোমাকে নিয়ে গড়তে চাই।”

হীর এর মুখ নিজের দুই হাতের আজলে নিয়ে নেয় তুর্য। হীরের নেশা ভরা দৃষ্টি যেনো তাকে মাতাল করে তুলছে। দু হাতে শক্ত করে চেপে ধরে হীর তুর্য কে। হীর কে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় তুর্য। লজ্জায় হীর দুচোখ বন্ধ করে নিয়েছে। আজ যে উপযুক্ত অর্থে তুর্য আর হীর এক হতে চলেছে। হীর এর উপর নিজের সমস্ত ভর ছেড়ে দিয়ে হীর এর গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় তুর্য। আকাশের বুকে মিশে থাকা অর্ধ চন্দ্রিমাও আজ তুর্য আর হীর এর ভালোবাসায় হিংসায় কাতর হয়ে নিজেকে মেঘাচ্ছন্ন করে নেয়। তাকে স্বাক্ষী রেখেই যে ভালোবাসায় সিক্ত এই দুটি হৃদয় একে অপরের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

.

পুরো বিছানায় গাদি গাদি কাপড় বিছিয়ে রেখেছে তাফসি। ঘন্টা দুয়েক আগেই তাদের আগমন ঘটেছে রায়ানদের বাড়িতে। খাবারের পর্ব শেষেই জিনিস গোছাতে লেগে পরেছে সে। জিনিসপত্র ঠিক করতেই হাঁপিয়ে উঠেছে সে অথচ এখনও সমস্ত কিছু আলমারিতে উঠিয়ে রাখা বাকি। তাফসির দুচোখ ভেঙে ঘুম নামছে কিন্তু দুচোখের পাতা এক করার সাহস পাচ্ছে না। শ্বশুর বাড়িতে প্রথম দিন, আর নতুন বউকে এমন অগোছালো দেখলে ভারী লজ্জায় পরে যাবে সে। সব ক্লান্তি দূরে ঠেলে সে যুদ্ধে নামার জন্য প্রস্তুত হয়ে নেয়। একটা একটা করে শাড়ি আলমিরা তে রাখতে রাখতে এক পর্যায়ে ক্লান্তি তে তাফসি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ঠিক সেই সময়ে রায়ান রুমে প্রবেশ করে। তাফসি কে শাড়ির পালায় চিত্ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে রায়ান ভুত দেখার মতো চমকে যায়।

“এভাবে কেউ ভয় দেখায়?”
“নাতো!”
“তাহলে তুমি এভাবে শুয়ে আছো কেনো? আমাকে ভয় দেখানোর জন্য?”
“তোমাকে ভয় দেখিয়ে আমি কি পাবো?”
“ঘোড়ার ডিম।”
“এ মা! তুমি আবার ডিম পারো নাকি?”
বলেই তাফসি হো হো করে হেসে ওঠে।

তাফসির জোকে যে রায়ান মোটেও খুশি হয় নি সেটা তার চেহারায় স্পষ্ট। রায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তাফসির দিকে। রায়ানের রাগ হওয়াতে তাফসি খানিকটা বিব্রত হয়ে পরে।
“না আসলে জিনিসপত্র ঠিক করতে করতে অনেক ক্লান্ত হয়ে পরেছিলাম তাই।”
“আমার ফ্রেশ হয়ে আসার আগে যেনো এসব ক্লিন হয়ে যায়। আমার বিছানা এমন অগোছালো, সেটা আমার ভালো লাগে না।”
“ওকে!”

কিছুক্ষণ পর রায়ান রুমে ফিরে দেখে তাফসি আবারও ঘুমিয়ে পরেছে। সে একবার তাফসিকে সজাগ করতে গিয়েও থেমে যায়। ঘুমন্ত অবস্থায় তাফসি কে ভীষণ সুন্দর লাগছে। তাফসির মুখটা এতো কাছে থেকে এই প্রথম বার দেখছে রায়ান।চোখের নিচে মোটা মোটা কালো দাগ পরে আছে। বিয়ের আগে যখন তাফসি কে দেখেছিল সে, তখন তার চোখের নিচে কোনো দাগ ছিল না। আর এখন! হয়তো এসবের জন্য রায়ান নিজেই দায়ী। বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার। মেয়ে টা তার জন্য কম কষ্ট সহ্য করে নি!
বিছানায় থাকা বাকি কাপড় গুলো রায়ান গুছিয়ে আলমিরাতে উঠিয়ে রেখে তাফসি কে কোলে তুলে নেয়। তাফসিকে বিছানার এক পাশে ঠিক মতো শুইয়ে দিয়ে নিজেও তার পাশে সুয়ে পরে।

.
.
হঠাত্ বজ্রপাতের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আমার। এতো জোরে বজ্রপাতের শব্দ আগে কখনও শুনেছি কি না সন্দেহ। আমার পাশেই তুর্য ঘুমে বিভোর। ঝাপসা চোখে মনে হচ্ছে ব্যালকনির কাচ খোলা রয়ে গিয়েছে। কাঁচ টা স্লাইড করা প্রয়োজন, নয়তো বৃষ্টি হলে পানি রুমের ভিতর ঢুকবে। তুর্যর হাত আমার কোমর থেকে সরিয়ে আঁচল কাঁধে জরিয়ে উঠে পরলাম। কাঁচ টা বন্ধ করে দিয়ে পিছন ফিরে তুর্য কে বিছানায় পেলাম না। ওয়াশরুমের বাইরে গিয়ে তুর্য কে ডাকলে ভিতর থেকে কোনো সাড়া পেলাম না। আশ্চর্য তুর্য ওয়াশরুমে নেই। কিন্তু এতো দ্রুত কোথায় যেতে পারেন?
“তুর্য! তুর্য! কোথায় আপনি? তুর্য!”
পুরো বাড়ি খুঁজেও তুর্য কে কোথাও পেলাম না। বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। কোথায় গেলেন তুর্য?
ছাঁদে কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দে সিড়ি বেয়ে ছাঁদের দিকে ছুটে গেলাম। কিন্তু ছাঁদে তো কিছুই নেই। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজেই ছাঁদের রেলিং এর পাশে চলে গেলাম। না এখানেও কিছু নেই। হঠাত্ নিচে মাটিতে কারো অবয়বের দিকে দৃষ্টি পরতে আমার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল রক্ত বয়ে যায়। অন্ধকার রাত আর মুষলধারে বৃষ্টি কিন্তু তবুও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা লোকটিকে দেখতে আমার বিন্দুমাত্র সমস্যা হচ্ছে না। কিছু চিন্তা করার মতো শক্তি আমার শরীরে আর নেই। একছুটে বাড়ির বাগানে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। রক্তাক্ত অবয়ব টি যে তুর্য। তুর্য এভাবে কেনো? এইমাত্র বজ্রপাত হচ্ছিল এখন এতো বৃষ্টি কেনো?

চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here