“সেই তুমি💐 পর্ব -৩৩+৩৪

0
410

সেই তুমি💐
পর্ব -৩৩+৩৪
Samira Afrin Samia
#Nipa

ইশিতা পেছন থেকে ইফানের হাত ধরে ফেললে ইফান রেগে গিয়ে কে তার হাত ধরেছে তা দেখার জন্য পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়।
— ইশিতা তুমি।
ইশিতা ইফানের হাত ঝাড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে
— তুমি কি মানুষ?
কি করেছো রিহার সাথে। এমন ভাবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষ কে মারতে পারে?
তোমার মধ্যে কি মনুষ্যত্ব বলতে কিছু নেই?
— ও কিছু না ইশিতা। তুমি এখানে কেন আসছো?
— দেখতে আসছি তুমি আর কতটা নিচে মানতে পারো। এতটা নিঃসংশ ভাবে কি করে তুমি রিহার গায়ে হাত তুলতে পারলে। এতটা কষ্ট তো মানুষ কোন জানোয়ার কে ও দিতে পারে না।
ইফান যখন রিহা কে মারছিল তখন এতটাই শব্দ হচ্ছিল যে ইশিতা নিচে দেখে শুনতে পেয়ে উপরে ইফানের রুমে চলে আসে। এসে দেখতে পেল ইফান প্যান্টের বেল দিয়ে রিহা কে মারছে। আর রিহা চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে সব সহ্য করছে।
— তোমাকে আমি যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। ঘৃণা হচ্ছে তোমার প্রতি। একটা মানুষ এতটা নিচ কি করে হতে পারে। ভালোই হয়েছে তুমি আমার জীবন থেকে দূরে সরে গেছিলে। নাহলে একটা অমানুষের সাথে আমাকে সারা জীবন কাটাতে হত।
— তোমাকে আবার আমার করে পাওয়ার জন্য আমি আরও অনেক নিচে নামতে পারবো। তুমি আমাকে অমানুষ বলো জানোয়ার বলো আর যা ইচ্ছে তাই বলো তার পর ও আমি তোমাকেই চাই।
ইশিতা গিয়ে রিহা কে ধরে
— দেখো তো কি করেছো তুমি?
রিহা তোমার বউ ইফান কেন করছো এমন? কেন সব কিছু মেনে নিতে পারছো না?
আমি তোমাকে ভুলে গিয়ে ইয়াশের সাথে অনেক টা পথ এগিয়ে গেছি। এখন তুমিও সব কিছু ভুলে গিয়ে রিহা কে নিয়ে নতুন করে তোমদের জীবন সাজাতে শুরু করো।
ইফান ইশিতার কথা শুনে রেগে গিয়ে দেওয়ালে কয়েকটা ঘুসি মারে। রিহা সাথে সাথে গিয়ে ইফানের হাত ধরে নেয়।
— কি করছো ইফান হাতে কতটা লেগেছে দেখেছো?
ইফান রিহা কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় রিহা ছিটকে গিয়ে বেডের উপর পড়ে।
ইশিতা ইফানের সামনে গিয়ে ইফানের গালে একটা চড় মারে।
— অমানুষ, তোমার জন্য মেয়েটা কতো কিছু করছে। আর তুমি তাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো। ইচ্ছে তো করছে পায়ের জুতো খুলে তোমার গালে মারি।
রিহা এসে আচমকা ইশিতার গালে থাপ্পড় মেরে বসে।
— তোর সাহস কি করে হয় আমার স্বামীর গায়ে হাত তুলার। আমাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝের ঝগড়া হয়েছে তা আমরা বুঝে নিব। তুই আমাদের মাঝে এসে কথা বলার কে?
রিহা ইশিতা কে থাপ্পড় মারলে ইফান রিহার গলা চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে নেয়।
— আজ আমি তোকে খুন করে ফেলবো। তুই আমার সামনে ইশিতার গায়ে হাত তুললি। ইশিতা আমাকে একটা কেন একশো টা থাপ্পড় মারবে। আমি সব সহ্য করে নিব। কিন্তু আমার সামনে কেউ ইশিতার গায়ে হাত তুললে আমি হাত ভেঙে দিব।
ইফান পুরো পাগল হয়ে গেছে। ইফানের এসব পাগলামি দেখে ইশিতার ভয় হতে লাগলো। ইফান ইশিতা কে পাওয়ার জন্য যেকোন কিছু করতে পারে। ইশিতা এখন ইফানের ভালোবাসা না, ইশিতা এখন ইফানের জিদ হয়ে গেছে।ইশিতা ইফানের এমন একটা জেদ যা পূরণ করার জন্য ইফান ওসব সমস্ত সীমানা অতিক্রম করতে পারে। ইশিতা এখন কি করবে কিছু ভাবতে পারছে না। ভয়ে হাত পা কাঁপছে। ইফান এখন ওর নিজের মধ্যে নেই। ইফান কে এখন ভয়ানক জন্তু জানোয়ার মনে হচ্ছে।

অনেকক্ষণ ধরে ইয়াশ পুরো বাড়ি খুঁজেও ইশিতা কে না পেয়ে অবশেষে ইফানের রুমের সামনে আসে। রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ইয়াশ ভেতর থেকে ইশিতার কন্ঠ শুনতে পেয়ে রুমের ভেতর আসে।
ইয়াশ এসে দেখে ইফান রিহার গলা চেপে ধরে রিহা কে দেওয়ালের সাথে আটকে রেখেছে।
ইয়াশ ইফানের থেকে রিহা কে ছাড়িয়ে ইফানের শার্টের কলার ধরে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসে। সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে ইয়াশ ইফান কে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। ইফান গড়িয়ে সিঁড়ির উপর থেকে নিচে পড়ে যায়। ইফানের কপাল কেটে রক্ত বের হচ্ছে। তাজা লাল রক্ত কপাল বেয়ে গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। ইফান উঠে দাঁড়ায়।
ইয়াশ উপরে দাঁড়িয়ে থেকে
— তুই আমার ধৈর্য্যের সীমা ভেঙে দিয়েছিস ইফান। এতো দিন এতো কিছুর পরেও আমি তোকে কিছু করিনি। কিন্তু আজ তুই তোর লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস। বের হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে। তুই আর এক সেকেন্ড আমার সামনে থাকলে আমি তোর মার্ডার করে দিব। প্রথমে তুই ইশিতা কে ভুল বুঝে ওর সাথে যা করেছিস,এখন সেই ভুল ভেঙে গেলে রিহার সাথে আবার সেই একই জিনিস করছিস।
তুই কি কোনো ভাবেই মেয়েদের সন্মান করেছিস?ইশিতা ও ইয়াশের পেছন পেছন রুম থেকে বের হয়ে আসে। ইশিতা ইয়াশ কে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
— শান্ত হও তুমি। তুমিও এমন করলে কিভাবে হবে। ইফান বুঝে না ওকে বুঝাতে হবে। মাথা গরম করে নয়, ঠান্ডা মাথায় ইফান কে বুঝানো দরকার।
— ওকে আর কতো বুঝাবো?
কোনো ভাবেই তো বুঝানোর বাকি রাখিনি।
ইশিতার রিহার কথা মনে হলে রিহার রুমে গিয়ে দেখে রিহা সেন্সলেস হয়ে নিচে পড়ে আছে। ইশিতা ইয়াশ কে ডাকে ইয়াশ এসে রিহা কে কোলে করে বেডে শুইয়ে দেয়। রিহার অবস্থা বেশি ভালো না। পুরো শরীর লাল হয়ে ফোলে উঠেছে। মাঝে মাঝে কিছু আঘাতের জায়গা থেকে ব্লিডিং হচ্ছে।
ইয়াশ ডক্টর ডাকলে। ডক্টর এসে রিহা কে দেখে কিছু মেডিসিন আর ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে যায়। রিহা কে কিছু দিন রেস্টে রাখতে বলে।
ইশিতা ইয়াশ কিছুক্ষণ রিহার পাশে থাকে৷ তার পর ইয়াশ অফিসে চলে যায়। ইফান বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় গেছে তা কারো জানা নেই।
দুপুর পর্যন্ত রিহা ঘুমিয়ে থাকে। কাজের লোকদের রান্না করতে বলে ইশিতা। এতটা সময় ইশিতা রিহার পাশেই বসে ছিল।
রিহার জ্ঞান ফিরে। রিহা লাল লাল চোখ দুটো খুব কষ্ট করে মেলে তাকায়। রিহা উঠতে চাইলে ইশিতা রিহা কে উঠে বসতে সাহায্য করে। রিহা ইশিতা কে দূরে ঠেলে দিয়ে
— তুই এখানে কি করছিস?
তুই এখানে কেন?
— রিহা ওসব কথা পরে হবে। এখন তুমি অসুস্থ। তোমার শরীর ঠিক নেই।
ইশিতা কাজের লোক কে ডেকে রিহার জন্য খাবার আনতে বলে।
— চলো তোমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাই। ফ্রেশ হয়ে এসে কিছু খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে।
— তুই আমার সামনে থেকে যা ইশিতা তোকে দেখলে আমার রাগে মাথা ফেটে যায়।
— হুম যাবো। তবে তার আগে তোমাকে খাবার খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন দিয়ে তার পর।
এখন কোন কথা না বলে চুপচাপ ওয়াশরুমে চলো।
রিহার সত্যি ই খুব খারাপ লাগছে। কথা বলার শক্তি টুকু পাচ্ছে না। শরীর কাঁপছে। জ্বর ও আসছে।
ইশিতা রিহা কে উঠে দাঁড় করায়।
রিহার গায়ে হাত দিয়ে ইশিতা বুঝতে পারলো রিহার প্রচন্ড জ্বর আসছে।
— রিহা জ্বরে তো তোমার গা পুড়ে যাচ্ছে।
চলো তাড়াতাড়ি করে কিছু খেয়ে ঔষধ নেও।
রিহা ফ্রেশ হয়ে এসে বেডে বালিশে হেলান দিয়ে বসে।
খাবার দিয়ে গেলে ইশিতা রিহা কে খেতে বলে।
— এই নেও খেয়ে নেও।
রিহা কিছু না বলে খাবার খেতে নেয়, তবে রিহা খাবার মুখে তুলতে পারছে না। হাত কাঁপছে তাই মুখে খাবার তুলে নিতে কষ্ট হচ্ছে। এমনিতেই জ্বর তার উপর পুরো শরীর ব্যথা হয়ে গেছে।
ইশিতা খাবারের প্লেট নিজের কাছে এনে রিহা কে খাইয়ে দিতে নেয়।
— তুই ভাবলি কি করে আমি তোর হাতে খাবো?
— ভাবিনি তো।
— তুই আমার সাথে মজা করছিস।
— মজা করতে যাবো কেন?
দেখলাম তুমি দেখো পারছিলে না তাই আমি তোমাকে খাইয়ে দিতে চাইছি।
— আমি তোর হাতে খাবো না।
— জেদ করে না রিহা। এমনিতেই তুমি একদম ঠিক নেই।
— বললাম তো আমি তোর হাতে খাবো না। তুই যা এখান থেকে নাহলে আমি
রিহা খাবার প্লেট ফেলে দিতে নিলে ইশিতা রেগে গিয়ে
— চুপ, একদম চুপ করে বসে থাকবে। একটা কথা ও বলবে না। এখন না খেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। ভালোই ভালোই বলছি তাই ভালো লাগে না তাই না?
হাত কাঁপছে খাবার তুলে নিতে পারছে না তার পরও আমার হাতে খাবে না। এতো কিসের জেদ তোমার?
নিজেকে কি মনে করো।
ইশিতার এতো কথা শুনে রিহা সত্যি ই চুপ হয়ে গেল। কোন কথা বললো না। ইশিতা মুখে খাবার তুলে দিলো রিহা ও চুপচাপ খেয়ে দিলো।
ইশিতা কে দেখে রিহা মনে মনে অবাক হচ্ছে। যে মানুষ টার সাথে রিহা এত অন্যায় করেছে।

আজ সেই তার পাশে থেকে তার কত খেয়াল রাখছে। ইশিতা কি সত্যি ই মানুষ। ইশিতার জীবন নষ্ট করে দিতে চাইছিল রিহা আর আজ ইশিতা রিহা কে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে।
আজ প্রথম ইশিতার জন্য রিহার কষ্ট হচ্ছে। মনের মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করছে।
— আমি তোর সাথে এতো অন্যায় করেছি আর তুই আমার যত্ন নিচ্ছিস?
ইশিতা হাসলো কিছু বললো না।
— আমার উপর তোর কোন রাগ নেই। প্রতিশোধ নিতে চাস না আমার থেকে?
— তোমার উপর কেন রাগ করবো?
আর কিসের প্রতিশোধ?
তুমি ইফান কে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসতে। তোমার ভালোবাসা তোমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছিল। নিজের চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অন্য কারো হতে কেউই দেখতে পারে না। তুমি ও পারো নি। তুমি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমার সাথে যা যা করেছো তা অন্যায়। তবুও তুমি তো এসব কিছু ভালোবাসার জন্য করেছো। একটা মেয়ে হয়ে তুমি আরেকটা মেয়ের সাথে যা করেছো তার জন্য কেউ ই তোমাকে হ্মমা করবে না। আমি নিজেও করতাম না। কিন্তু তোমার জন্য ই আমি ইয়াশ কে স্বামী হিসেবে পেয়েছি। আর তাই তোমার উপর আমার কোন রাগ নেই।
ইশিতার কথা শুনে রিহার বলার মত কিছু নেই। রিহা হাজার চেষ্টা করেও ইশিতার মত হতে পারবে না। ইশিতার মন অনেক বড় আর তাই হয়ত ইফান ইশিতা কে এতো ভালোবাসে।
রিহা ইশিতার সামনে কাঁদতে চায় না। নিজের জেদ রিহার কাছে সবথেকে বড়। মনের মাঝে অপরাধবোধ নিয়েও রিহা ইশিতার সামনে তা প্রকাশ করলো না। হবে এটা সত্যি আজ রিহা নিজের ভুল একটু হলেও বুঝতে পেয়েছে। হয়ত মনে মনে আফসোস ও করছে।
ইশিতা রিহা কে মেডিসিন দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।

চলবে…..

সেই তুমি💐
পর্ব -৩৪
Samira Afrin Samia
#Nipa

.
.
রাতে গা কাঁপিয়ে রিহার জ্বর আসে। জ্বরে আবোলতাবোল বলতে থাকে। বাসায় কেউ নেই শুধু রিহা আর ইশিতা। ইয়াশ অফিসে, ইফান কোথায় তা জানা নেই। রিহার জ্ঞান নেই জ্বরে থরথর করে কাঁপছে আর বিরবির করে কি যেন বলছে। ইশিতা রিহার পাশে বসে রিহার মাথায় জলপট্টি করে দিচ্ছে।
— রিহা কেমন লাগছে তোমার?
আমাকে বলো।
ইশিতা ফোন হাতে নিয়ে ইয়াশ কে কল করছে। কিন্তু ইয়াশ কল তুলছে না। ইয়াশ অফিসে একটা মিটিংয়ে আছে তাই ফোন সুইচ অফ করে রেখেছে।
অফিসের কাজের ঝামেলায় বাসার কথা ভুলে গেছে বললেই হয়।
— কি করছে ইয়াশ?
ফোন তুলছে না কেন?
রিহা বিরবির করে কিছু বলছে
— রিহা কিছু বলছো?
স্পষ্ট করে বলো আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
ইশিতা রিহার মুখের কাছে কান নিয়ে শুনার চেষ্টা করলো। রিহা কি বলছে।
রিহা অস্পষ্ট ভাবে
— ইফান তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া
রিহা বলতে বলতে চুপ করে গেল।
ইশিতা একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো। রিহা সত্যি ই ইফান কে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু রিহা যা করেছে তার পর আর কোন ভাবেই ইফান তার হবে না।

প্রায় অনেক রাত করে ইয়াশ বাড়ি ফিরে আসে। নিজের রুমে গিয়ে ইশিতা কে পায়নি। ফ্রেশ হয়ে ইশিতা কে খুঁজতে যায়। ইফানের রুমে গিয়ে রিহার পাশে ইশিতা কে পেল। রিহার মাথায় জলপট্টি করে দেওয়ায় জ্বর অনেকটা কমে গেছে। রিহা এখন ঘুমিয়ে আছে ইশিতা পাশে বসে ঝিমাচ্ছে।

ইয়াশ রুমে ঢুকে ইশিতার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ ইশিতা কে দেখলো। এতো ভালো মানুষ হয় কি করে। মনে কোন হিংসা নেই, কারো প্রতি একটু ঘৃণা নেই। কিছু যদি থেকে থাকে তা শুধু ভালোবাসা। প্রান উজাড় করে সবাইকে ভালোবাসতে জানে ইশিতা। ইয়াশ যে দাঁড়িয়ে আছে তা ইশিতা খেয়াল করলে তো। ইশিতা বেডের সাইডে বসে ছিল। ঘুরে চোখ লেগে আসলে একটু হেলে পড়ে যেতে নিচ্ছিল ইশিতা। ইয়াশ ইশিতা কে ধরে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। ইশিতার মনে হলো সে শূন্যে বাসছে। ভয় পেয়ে সাথে সাথে চোখ খুলে দেখে ইয়াশ ওকে পাচঁকোলে তুলে রুমের দিকে যাচ্ছে।
— তুমি কখন আসলে?
— এসেছি অনেকক্ষণ।
— আমায় ডাকলে না কেন?
— তোমার নিজের স্বামীর দিকে কি তোমার কোন খেয়াল আছে?
আমি কি করছি, কোথায় আছি, খেয়েছি কিনা তা তো একবার ও জানতে চাও না। সারাক্ষণ অন্যদের নিয়ে পড়ে থাকো।
— কে বললো মশাই আমি আপনার খবর নেই না। নিজের ফোন টা ধরে দেখছেন কত বার কল দিছি।
ইয়াশের ফোনের কথা শুনে মনে হলো সে তো মিটিংয়ের সময় ফোন অফ করে রেখেছিল। তার পর আর ফোন ধরার কথা মনে নেই। এখনও ফোন অফ করাই আছে।
— কি মনে পড়েছে তো?
এতক্ষণে ইয়াশ ইশিতা কে নিয়ে রুমে চলে আসে। ইশিতা কে বেডে বসিয়ে দিয়ে
— হুম মনে পড়েছে।
— এখন আমি রাগ করি?
— কেন, তুমি রাগ করবে কেন?
— তুমি সারাদিন ফোন অফ রাখছিলা তাই।
— না, না প্লিজ এখন আর রাগ করো না। ভুল আমার ই।
ইশিতা খিলখিল করে হেসে দিয়ে
— আরে বাবা ভয় পাচ্ছো কেন? আমি এমনিতে ও রাগ করবো না। আমি জানি তুমি সারাদিন কাজে বিজি ছিলে। নয়তো তুমিই হাজার বার কল করে আমার খোঁজ দিতে।
ইয়াশ সত্যি ই মাঝে মাঝে ইশিতা কে দেখে অবাক না হয়ে পারে না।
— রাত অনেক হয়েছে,তুমি খেয়েছো?
— তুমি রিহার কাছে ছিলে আমি একা খাই কি করে?
— তুমি অফিস থেকে ফিরে এসে এখনও খাও নি?
— না ম্যাডাম। তুমি খেয়েছো? মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে সন্ধ্যার পর থেকে এক ফোঁটা পানি ও মুখে নেও নি। সবার দিকে তোমার খেয়াল আছে। শুধু নিজের দিকে আর নিজের সন্তানের দিকে নেই।
— রিহার অনেক জ্বর ছিল ওর পাশেই থাকতে হয়েছে।
— তাই বলে এখনও রাতের খাবার খাবে না?
— একদিন রাতে না খেলে কি হয়?
— কি হয় মানে? তুমি কি বলো তো। নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবে না। তুমি এমন করে না খেয়ে থাকলে আমাদের বাচ্চা কি করে হেলদি হবে। ও তো রোগা পাতলা হবে তখন?
— আরে এমন কিছু হবে না। দেখো আমাদের বাবু একদম গুলোমুলো হবে।
— কি করে হবে?
— এভাবেই। চলো তো এখন তোমাকে খাবার দেই।

ইয়াশ আজ নিজের হাতে ইশিতা কে খাইয়ে দিচ্ছে। ইশিতা ও ইয়াশের হাতে তৃপ্তি করে খাচ্ছে।
— রিহা এখন কেমন আছে?
— মোটামুটি ভালোই। দুপুরের পর প্রচুর জ্বর আসছে। আমি খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন দিয়ে দিছি।
— রিহা তোমার সাথে এতো কিছু করেছে তার পর ও তুমি রিহার সেবা যত্ন করছো?
— হুম।
— রিহা তোমার সাথে যা করেছে তা অন্য কারো সাথে করলে। সে রিহার মুখ দেখতো না কোন দিন সেবা করবে তো দূর।
— রিহা আমার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছে। আমাকে নানা ভাবে কষ্ট দিয়েছে, অপমান করেছে। এমনকি আমার জীবন টাই নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল।
রিহা যা করেছে তার জন্য ওকে হ্মমা করা উচিত কিনা আমি তাও জানি না।
তবে একটা কথা রিহা আমার সাথে যা যা করেছে তা মনে রেখে ওর থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমিও যদি তাই করি তাহলে ওর আর আমার মাঝে পার্থক্য টা কি থাকবে?
রিহা আমার সাথে খারাপ করেছে সেটা মনে রেখে এখন আমি ওকে অসুস্থ দেখেও ওর কাছে না যাই তাহলে তো আমি ও ওর মতই হয়ে গেলাম তাই না?
ইয়াশ ইশিতা কে কি বলবে কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না।
— আর কেউ ভুল করলে তাকে হ্মমা করে দেওয়া টা ই মহত্ততা। তার প্রতি মনে কষ্ট চেপে রাখার মধ্যে কোন মহত্ততা নেই।
রিহা তার ভুল ঠিকই বুঝতে পেরেছে। আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরেছি। রিহা মনে মনে অনুশোচনায় ভোগছে। ও বাহির থেকে একটু কঠিন তাই এখনও স্বীকার করছে না।

ইয়াশ ইশিতা নিচে গিয়ে খাওয়া শেষ করে আবার রুমে চলে আসে। ইশিতা বিছানা গোছাচ্ছে। ইয়াশ ল্যাবটপ নিয়ে বসে কি যেন করছে।
বিছানা গোছানো শেষ হলে ইশিতা পা তুলে বেডের উপর বসে। ইয়াশের দিকে তাকায়। ইয়াশ এতক্ষণে ল্যাবটপে পুরো ডুবে গেছে।
— এতো কাজ করতে পারে লোকটা। অফিসে কাজ করে শখ মিটে না। এখন আবার বাড়িতে এসে ও কাজ করতে হবে।
দেখো দেখি আমি গলা ফাটিয়ে এতো কথা বলছি তা উনার কানে গেলে তো। উনি তো ল্যাবটপে ডুবে আছেন।
ইশিতা জোরে ইয়াশ কে ডাক দিয়ে
— এই যে আপনার কানে কি আমার কথা গুলো পৌঁছাচ্ছে?আমি কিছু বলছি। শুনতে পাচ্ছেন?
ইয়াশ বেখেয়াল ল্যাবটপ বন্ধ করে রেখে বেডে আছে। ইয়াশ কে কেমন যেন দেখাচ্ছে। খাবার আগে তো এমন দেখায় নি। রুমে এসে ল্যাবটপে কি এমন দেখে নিলো যার জন্য ওর মোড অফ হয়ে গেল।
ইশিতা কিছু আন্দাজ করতে পেরে শান্ত গলায় বললো
— কি হয়েছে তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
— কিছু হয়নি।
— মিথ্যে বলো না। তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।
ইয়াশ ইশিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে
— আমাকে ছাড়া তুমি একা একা থাকতে পারবে?
— কি বলছো এসব?
— আমাকে ছাড়া থাকতে তোমার কষ্ট হবে না?
— পাগল হয়ে গেলা নাকি? উল্টো পাল্টা এসব কি কথা বলছো তুমি?
দেখো কি হয়েছে সোজাসুজি বলো। আমি কিন্তু এখন কেঁদে দিব।
— আরে কাঁদবে কেন?
— কাঁদবো না তো কি করবো। তুমি এসব কেমন কথা বলে যাচ্ছো।
ইয়াশ আমতা আমতা করে
— আমাকে কয়েক দিনের জন্য অফিসের কাজে বাইরে যেতে হবে।
ইশিতা এবার কেঁদে দিলো
— কি হলো কাঁদছো কেন?
— তুমি এতক্ষণ আমাকে ভয় দেখিয়েছো। বাইরে যেতে হবে একথা না বলে কি সব বলছিলে। আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম তুমি জানো?
ইয়াশ ইশিতা কে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে
— সরি বাবা কাঁদে না। ভুল হয়েছে আমার। এই কানে ধরছি। এবার তো কান্না থামাও।
— তোমার সাথে কোন কথা নেই।
— সত্যি তো?
— হুম।
— তাহলে আমি একে বারের জন্য ই বাইরে চলে যাবো। আর দেশে আসবো না।
— একদম খুন করে ফেলবো।
ইয়াশের গলা চেপে ধরে। ইয়াশ হাসতে লাগলো।
— কতদিনের জন্য যেতে হবে?
— দুই বা তিন সপ্তাহ। কাজ শেষ করতে পারলে আরও আগে চলে আসা যাবে।
— কবে যেতে হবে?
— কাল ই।
— আচ্ছা।
— আমি ভাবছি যাবো না।
— যাবে না কেন?
— তোমাকে এই অবস্থায় বাড়িতে একা রেখে কি ভাবে যাই তুমি ই বলো। আর তাছাড়া তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার একটু ও ভালো লাগে না। এক একটা মুহূর্ত এক এক বছরের মত মনে হয়।
— একা কোথায় রিহা আছে। মা ও চলে আসবে কিছু দিনের ভেতর। না গেলে তোমার বিজন্যেসের হ্মতি হয়ে যাবে।
— হোক। তোমাকে আর আমার পুচকো কে রেখে আমি কোথাও যাবো না।
— জ্বী না মশাই যাবেন। কিছু দিনের ই তো ব্যাপার। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে আবার চলে আসবেন।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here