#সেদিন_মুষুলধারে_বৃষ্টি_ছিল
Part–2
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
সেজুতিকে এক ঝটকায় মুহিব নিজের দিকে টেনে আনলো। সেজুতি হুমড়ি খেয়ে মুহিবের বুকের দিকে চলে এলো। কিন্তু তবুও সে মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে রেখেছে সঙ্গে চোখ ও বন্ধ করে রাখা৷ এই ভদ্রলোকের চেহারা দেখতে ইচ্ছা করছে না তার!
মুহিব ধ্যান লাগানো গলায় বলে উঠে, চোখ বন্ধ কেন তোমার? ওপেন ইউর আইস!
সেজুতি চোখ খুললো না তবুও। মুহিবের কথায় কি যেন একটা আছে। তার কেমন যেন লাগছে। গা এলিয়ে আসছে। গরম লাগতে শুরু করে দিয়েছে তার৷ শরীর খারাপ হলো নাকি তার আবার?
বিয়ের আগের দিন অসুস্থ হওয়া অশুভ লক্ষণ।
মুহিব কোথা থেকে যেন কাচা হলুদ বাটা বের করে আনলো। টুকটুক শব্দে চোখ মেলে থ হয়ে যায় সেজুতি।
এই হলুদের বাটি কোথা থেকে এলো? আশ্চর্য! তাও এই মানুষটার হাতে? কি করবে সে হলুদ বাটা দিয়ে? খাবে নাকি? শরবত বানিয়ে? খেতে ও পারে। মুহিব ভাইয়ের ভরসা নেই। দেখা গেল এক গ্লাস পানিতে হলুদ আর চিনি মিশিয়ে খেয়ে নিল।
মুহিব হালকা হেসে বলে উঠে, এভাবে কি দেখছো?
সেজুতি চুপ রইল। অযথা কথা বলার কোন মানেই হয় না।
মুহিব বলে উঠে, তোমার বাবা-মা তোমার এভাবে বিয়ে দিচ্ছে কেন বলো তো? হলুদের অনুষ্ঠান ঘটা করে করছে না কেন? তাদের ভাব খানা এমন যে আপদ বিদায় জানাচ্ছে।এতো টাকা দিয়ে তোমার বাবা করবে টা কি? কিন্তু আমি এমন না। আমার ব্যাংকে লক্ষ লক্ষ টাকা। আর বিয়েও আমার দশবার হবে না। ওতো তেজ নাই আমার। একবারই যখন হচ্ছে তাই হলুদ ছোয়া দিতে এলাম।
সেজুতি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইল। ব্যাটার মতলব টা কি? ধরতে পারছে না সে! আর এই হলুদের বাটি কোথা থেকে পেল? আসার সময় হাতে ছিল কি? খেয়াল নেই। নাকি মুহিব ভাই যাদু-টাদু জানে? ছু-মন্তর-ছু বলে হলুদের বাটি এনেছে কি?
সেজুতির চিন্তার ফোড়ন কেটে দিয়ে মুহিব তার হাতে এক গাদা হলুদ পুড়ে নিল। এবং সেজুতির দিকে পা বাড়ালো। সেজুতি কিছুটা আচ করতেই পেছন দিকে হাটা শুরু করল। মুহিব ও আগাচ্ছে সেই তালে তালে।
সে তোতলানো শুরু করে বলে, ক-কি কর-রতে চ,,চান আপনি?
মুহিব হাতে হলুদ নিয়ে কিছুটা অবাক হয়ে বলে, আশ্চর্য ব্যাপার তো! তুমি পেছাচ্ছো কেন? আমি কি বাঘ? দেখি এইদিকে এসো। তোমার গালে হলুদ ছোয়াব৷
সেজুতি আতকে উঠে বলে, একদম না। আপনি মাত্র বললেন এই বিয়ে আপনার মত অনুযায়ী হচ্ছেনা এখন এইসব ন্যাকামি কেন করছেন?
মুহিব ভ্রু কুচকে বলে, তোমার বাসার কেউ রাজনীতি করে নাকি?
— না তো! (অবাক হয়ে)
— কেউ রাজনীতি করেনা বাসা থেকে তারপর ও তুমি রাজনীতির মূলনীতি শিখে গেলে। ওয়েল ডান!
— রাজনীতির মূলনীতি আবার কি?
— পল্টি মারা।
— আমি আবার কখন পল্টি মারলাম?
— মাত্র!
— মোটেও না। আমি কোন দিন দুইমুখো কাজ করি।
— রাজনীতির দ্বিতীয় মূলনীতি হলো মিথ্যা বলা। খুব নিপুণ ভাবে এই মিথ্যা বলতে হয়। এই কাজেও তুমি বেশ পটু দেখছি৷
সেজুতি থম মেরে দাঁড়িয়ে গেল। এই ছেলের সঙ্গে কথা বলার কোন মানেই হয়। সবসময়ই উল্টা-পাল্টা কথা। অসহ্য। সে কখন মিথ্যা বলল?
মুহিব সেজুতির দিকে এগিয়ে এসে বলে, আমি একবারো বলেছি যে বিয়েতে রাজী নই?
সেজুতির এই প্রথম অদ্ভুত লাগলো মুহিবের কথা শুনে। সে কি আসলেই রাজী নাকি পারিবারিক চাপে রাজী হয়েছে? আপার কাছে শুনেছে সে, মুহিব ভাই একদমই রাজী ছিলো না। হুট করে ব্যাটার হলোটা কি?
আচমকা গেটের বাইরে থেকে সেজুতির কাজিনরা বলে উঠে, দুলাভাজ প্রেমালাপ শেষ হলো নাকি আরো চলবে??
বাইরে থেকে সবাই হাসাহাসি করছে দেখে সেজুতি বিনীত গলায় বলে উঠে, প্লিজ চলে যান তো আপনি।
মুহিব বলে উঠে, আমি তো যেতেই চাচ্ছি। অনেক কাজ বাকি আছে।ব্যবসার রমারমা অবস্থা! বুঝতেই পারছো খুব চাপে থাকি।
সেজুতি ঠোঁট বাকিয়ে জবাব দেয়, তো দাঁড়িয়ে আছেন কি জন্য? যান। বের হন তো। যত্তসব।
হুট করে মুহিব তার টসটসে গালে হলুদ মাখিয়ে দিলো মনের সুখে। সেজুতি এক দফা হতভম্ব হলো। সে চোখ বড় করে ফেলে।
ডান গাল থেকে হাত সরিয়ে বাম গালে হলুদ মাখানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মুহিব। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এই মূহুর্তে হলুদ মাখানোর চেয়ে জরুরি কাজ মহাবিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই!
সেজুতি নড়াচড়া শুরু করে দিলো। কেন তাকে হলুদ লাগাবে?
মুহিব বিরক্ত হয়ে বলে উঠে, হাতে অনেক খানি হলুদ লেগে আছে। এগুলো কোথায় পরিষ্কার করব?
সেজুতি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কাঠ গলায় বলে উঠে, জানি না! যেখানে খুশি করুন।
সেজুতির প্রচুন্ড রাগ রাগ লাগছে। অসহ্য লাগছে আবার সুখ অনুভব ও হচ্ছে।
মুহিব কয়েক সেকেন্ড দাড়িয়ে থেকে, সেজুতির কোমড়ে হাত রেখে তাকে কাছে টেনে এনে বলে উঠে, মেয়েদের রাগ, জেদ আর অহংকার করতে নেই।
সে সোজাসাপটা প্রশ্ন করে, কেন? মেয়েরা কি বানে ভেসে এসেছে? মেয়েরা যদি রাগ জেদ না করে তাহলে কি করবে? কাদবে আজীবন?
মুহিব সেজুতির গলায় হাতে অবশিষ্ট লেগে থাকা হলুদটুকু লাগিয়ে বলে উঠে, বিধাতা মেয়েদের জন্য তিনটা অনুভূতির অলংকার তৈরি করে দিয়েছেন। সেগুলো হলোঃ
১) হাসি। বসুন্ধরা মাতানো হাসি।
২) লজ্জা।
৩) অভিমান!
মুহিবের স্পর্শ পেয়ে সেজুতি কেপে উঠে। এই মূহুর্তে তার খুব লজ্জা লাগছে। তাদের তো এখনো বিয়ে হইনি।
মুহিব বলে উঠে, হলুদ তো লাগালাম। এবারে আমাকে মিস্টি মুখ করাও।
— বাসায় মিস্টি নেই।
— হায়! হায়! বলো কি? বাড়ির দুইমাত্র মেয়ের বিয়ে অথচ মিস্টি কেনা হয়নি। সত্যি করে বলো তো, তুমি কুড়ানি মেয়ে কিনা?
সেজুতি বিরক্ত হয়ে বলে, আপনি যান প্লিজ। লোকে খারাপ ভাববে।
মুহিব হলুদ মাখা হাতেই গেট খুলে বের হয়ে যায়৷
মুহিব যেতেই সেজুতির সব কাজিনরা একে একে তার রুমে চলে এলো। সবাই তাকে ঝাপ্টে ধরে মজা নেওয়া শুরু করে দেয়।
তার এক কাজিন বলে উঠে, আপু দুলাভাই তোমাকে কি বলেছে??
আরো একজন বলল, পাক্কা বিশ মিনিট রুমে কি করছিলে তোমরা?
তার কাজিনদের মধ্যে সবচেয়ে যে বেহায়া এবং ঠোঁট কাটা প্রিয়া আপু সবার সামনে বলেই দিলো, কি রে সেজু? দুলাভাই তোকে চুমু খেয়েছে নাকি?
সেজুতির এই কথা শুনে অবস্থা কিছু টা এমন–মাফ ও চাই, দোয়াও চাই!
সেজুতির বড়বোন সোভা এবারে রুমে এসে সেজুতিকে এক নজরে দেখে নিয়ে বলে উঠে, তোর গালে হলুদ কেন রে? অনুষ্ঠান তো শুরু হইনি এখনো।
সেজুতির টনক নড়লো। সে দ্রুত এক ছুটে বাথরুমে ঢুকে গেল।
বাইরে হাসির রোল পড়ে গেছে।
আচ্ছা কেউ দেখে ফেলেনি তো তার গলায় ও হলুদ লাগানো? ইশ! মুহিব ভাই এতো খারাপ কেন?
সে দ্রুত বেসিন খুলে গালে লাগানো হলুদ ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু হলুদের হলুদ রঙ সেজুতির গালে বেশ প্রগাঢ় করে বসে যেতে লাগলো।
মুহিব সেজুতির বাসা থেকে বের হতেই ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হলো। এক পলকের মধ্যে মুষুলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।
সে থামলো না। হাটা আরম্ভ করল। পবিত্র বৃষ্টিতে ভিজে সে নিজের পাপ ধুয়ে ফেলুক। হাটতে হাটতে সিগারেট ধরানের বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। আগুন নিভে যাচ্ছে।মুহিব বুঝে পায় না, চৈত্র মাসের শেষে বৃষ্টি কেন হবে??
সে ছড়া বানানোর চেষ্টা করছে এবং হাটছে। সঙ্গে সিগারেট আর লাইটারের মধ্যে যুদ্ধ চালাচ্ছে।
বেশ খানিকটা হাটতেই মাথায় মধ্যে শব্দেরা কিলবিলিয়ে উঠে
চৈত্রের শেষ প্রহরে সেদিন মুষুলধারে বৃষ্টি ছিল,,,,,আর পারলো না।
মুহিব একজন ব্যর্থ প্রেমিক এবং ব্যর্থ কবি।
তার মাথা আর কাজ করছে না কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সিগারেট ধরাতে পেরেছে সে।
চলবে।
[ গল্পটাকে এতো এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ভালোবাসা অবিরাম। হ্যাপি রিডিং। ]