#সেদিন_মুষুলধারে_বৃষ্টি_ছিল
part–4
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় মুহিবের। সে চোখ কচলে সজাগ হতেই টের পেল তার পাশে কেউ একজন আছে। সে মনের ভুলে আতকে উঠে। পরক্ষনেই মনে পড়ে যায় কালকে রাতে সে একা ঘুমায়নি। তার বিছানার বাম সাইডে শোয়ার জন্য একজন ভাগীদার চলে এসেছে। মুহিব হাই তুলে উঠে দাড়ালো।
তারপর সোফা হতে গেঞ্জি হাতে নিয়ে পড়ে ফেলল এবং অতি দ্রুত দরজা খুলতে গেল। রুমের দরজায় কড়া বাজানো ব্যক্তির ধৈর্য খুবই কম মনে হচ্ছে। বারবার শব্দ করে থাম থাম করে দরজায় বাড়ি দিচ্ছে।
মুহিব দরজা খুলেই শোভা ভাবীকে দেখে হচকচিয়ে গেল। আট বছরে একদিন ও ভাবী তার রুমে সকাল আসেনি। আজকে অনিয়ম হলো কেন?
সে বলে উঠে, কিছু হয়েছে ভাবী?
শোভা হাসিমুখে বলে, কি আবার হবে? কিছুই হয়নি। আচ্ছা শোন যা বলতে এলাম, আম্মা কিন্তু উঠে গেছেন। বাগানে বসে চা খাচ্ছেন। আধ ঘন্টা পর কিন্তু নাস্তার টেবিলে বসে সবাইকে খুজবেন। আজকে সেজুতির প্রথম দিন এই বাসায়। ওকে নাস্তার টেবিলে না পেলে আম্মার মন খারাপ হয়ে যাবে। তুমি সেজুতিকে ডেকে তুলো। ও প্রচুন্ড ঘুমকাতুরে মেয়ে,,,,
মুহিব অস্বস্তি বোধ করছে। সে এমন ভাবে দরজার সঙ্গে দাঁড়িয়েছে যেন ভেতরের কিছু দেখা না যায়। সে অনুমান করে দাড়িয়ে আছে। অনুমান ভুল হয়ে এক ফালি অংশ দেখাও যেতে পারে। না জানি সেজুতি কি অবস্থায় আছে! ভাবী দেখে ফেললে ব্যাপারটা লজ্জার হবে।
ভাবীরা হচ্ছে সম্মানিত ব্যক্তি। মুহিবের কাছে ভাবী সম্পর্কটা হলো না আপন না পর টাইপের সম্পর্ক। এই সম্পর্কে কেবল সম্মান থাকবে আর কিছু না। প্রয়োজন ছাড়া কথাও না। এটা অবশ্য তার একান্ত মতামত।
মুহিব উসখুস করে বলে, জি আচ্ছা ভাবী। আধ ঘন্টার আগেই ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত হবো।
— গুড। আচ্ছা শুনো।
মুহিব বিরক্ত হচ্ছে আবার অবাক ও হচ্ছে। অবাক হচ্ছে এজন্য যে ভাবী তো এর আগে কোন দিন তার সঙ্গে এতো কথা একসঙ্গে বলেনি। আজ কি হলো? কোন কারনে কি সে অতিমাত্রায় খুশি? কারন কি? বোনের বিয়ে হয়েছে? বোনের বিয়েতে বোন খুশি থাকবে, সে কেন খুশি তাহলে?
খুশি হওয়া ব্যাপারটা সংক্রামক। কেউ একজন খুশি হলে তার আশেপাশে থাকা মানুষ জনও আপনা-আপনি খুশি হয়ে যায়৷ কিন্তু অবশ্যই আশেপাশের মানুষ কে হিংসাবিহীন মানুষ হতে হবে। মনে এক গাদা হিংসা রাখলে খুশির জীবনু শরীরে প্রবেশ করতে পারেনা।ভুলবশত শরীরে প্রবেশ করে ফেললেও হিংসার আগুনে জ্বলে মরে যায়!
— তোমার ভাইয়ার কি হয়েছে কি? মুখ কালো করে আছে কেন?
মুহিব ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেলে এবং মিনমিনে আওয়াজে বলে, ভাবী, ব্যবসার অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। এজন্য দুশ্চিন্তায় আছে ভাইয়া।
শোভা মুখ বাকিয়ে বলে, তোমাদের ব্যবসা কোন দিন ভালো যায় শুনি? সবসময়ই বলো খারাপ যাচ্ছে।
মুহিব হেসে ফেলে বলে, ব্যবসা আর ঠ্যালা গাড়ি কোন দিন স্পীডে চলে না। ঠ্যালা মেরে মেরে আগাতে হয়।
— তোমার যতসব ক্যাবিক কথা! সেজু কে জাগাও। দেরি করোনা কেমন? আম্মা অপেক্ষা করছে কিন্তু।
মুহিব মাথা ঝাকালো। ভাবী যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে দরজা লাগিয়ে হাফ ছেড়ে বাচলো। সে দ্রুত সময় নষ্ট না করে বাথরুমে ঢুকে যায়।
বাথরুম থেকে ফিরে আসতেই দেখে সেজুতি উঠে বসেছে। তার চোখে-মুখে অজানা চিন্তা জুড়ে গেছে৷ চোখ থেকে ঘুম ভাব যায় নি এখনো। চুলগুলোও এলোমেলো হয়ে আছে। পরনের শাড়িও সুশ্রী অবস্থায় নেই।তবুও মেয়েটার কোন হেলদোল নেই।
মুহিব গলা খাকিয়ে নিয়ে বলে, যাও ফ্রেস হও। বিশ মিনিটের মধ্যে ডাইনিং টেবিলে যেতে হবে৷
মেয়েদেরকে কখনোই সঠিক সময়ের কথা বলতে নেই। সময় কমিয়ে হাতে সময় রেখে মেয়েদের সঙ্গে ডিল করতে হয়। মেয়েরা সময় নিয়ে উদাসীন। তারা ঘন্টার ঘন্টা রুপচর্চার মতো ফালতু কাজে সময় অপচয় করে বিন্দুমাত্র আফসোস করেনা। তারা নাম মাত্র বাংলা সেকেন্ড পেপার পরীক্ষায়, রচনায় সময়ের সঠিক ব্যবহার নিয়ে বিশ পৃষ্ঠা লিখে ফেলে।
সেজুতি আড়মোড়া ভেঙে বলে, কেন বিশ মিনিটের মধ্যে যেতে হবে?
— আম্মা সাড়ে আটটার দিকে নাস্তা খায়। আমরাও ওনার সাথে বসে নাস্তা খাব। দেরি করো না।
সেজুতি হাই তুলল পর পর দুইবার। কালকে রাতেও ঘুম হয়নি তার। টানা দুই রাত না ঘুমানোর জন্য বড্ড ক্লান্ত সে। এখন তার আবারো চোখ বুজে ঘুমাতে মন চাচ্ছে। কিন্তু ঘুমালে চলবে না। তা নাহলে শ্বাশুড়ি আম্মা কেলেঙ্কারি ঘটাবে।
আপার কাছে সে শুনেছে মহিলা খুব খিটখিটে মেজাজের।
সেজুতি উঠে দাড়ালো। মুহিব তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
সে মুহিবের দিকে পাত্তা না দিয়ে বাথরুমের দিকে যেতে চাইলে মুহিব বলে উঠে, শাড়ি পড়বে। নাহলে আম্মা মন খারাপ করবে৷
— মন খারাপ করবে নাকি রেগে যাবে?
— রেগে যাওয়ার আপডেটড ভার্সন মন খারাপ করা!
সেজুতি তার দিকে তাকালে মুহিব বলে উঠে, কথার কথা বলছি। ডোন্ট গেট লেইট। আমি যাচ্ছি। তুমি ও আসো।
— আচ্ছা।
মুহিব বেরিয়ে যেতেই সেজুতি বাথরুমে না গিয়ে রুমের দরজা লক কিরে দিয়ে আবারো বিছানায় শুয়ে পড়ে। প্রচুন্ড ঘুম পাচ্ছে তার। আর তাছাড়া মুহিবের আম্মার সঙ্গে তার নাস্তা খাওয়ার একদম ইচ্ছা নেই। বুড়িকে প্রথম দিনই রাগাতে পারলে মন্দ হয় না। সেজুতি মনে মনে খুব খুশি হচ্ছে। সে কাথামুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।
★★★
মুহিবদের দিনাজপুরের বাড়িটা বিশাল। দুইতলা বিল্ডিংয়ের বাসা। সাদা রঙ করা। বাসার মেইন গেটের বাইরে পলাশ গাছ আছে দুইটা। বাসার পেছনে বেশ কিছু অংশ জুড়ে গাছ দিয়ে বাগান করা। বসার ব্যবস্থা ও আছে। রাজকীয় কারবার। খালি বিদেশি নেড়ি কুকুর থাকলে আরো নজরকাড়া হত৷ কিন্তু মুহিবের প্রচুন্ড কুকুর ভীতি থাকায় বাসার আশেপাশে কুকুর ঘেষতে দেয় না আম্মা। আম্মা মানুষ টা কঠোর হলেও তার সন্তানের ভালো-মন্দ সবসময়ই মাথায় রাখেন৷ সেজুতি কে বিয়ে করার পেছনে যে কি ভালো লুকিয়ে আছে তা একমাত্র আম্মা জানেন।
মুহিব বাগানে গেল। আম্মা চা খাচ্ছেন এবং পেপারে চোখ বুলাচ্ছে। মুহিবকে দেখে হাতের ইশারায় ডাকলেন।
মুহিন এগিয়ে গিয়ে মাকে সালাম দিলো। তাদের বাসার নিয়ম হলো– দিনে প্রথম বার ছোট-বড় যার সঙ্গেই দেখা হোক না কেন সুন্দর এবং স্পষ্ট ভাষায় সালাম দিতে হবে। কাজের লোক, দারোয়ান, ড্রাইভার কেউ বাদ যাবে না।
মনোয়ারা আক্তার সালামের জবাব দিয়ে বলে উঠে, বসো আব্বা।
মুহিব চেয়ার টেনে বসে পড়ে। আম্মা একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে, তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে খুব!
কথা একশ ভাগ সত্য। মুহিব আসলেই ক্লান্ত। কালকে ভোর পাচটার দিকে সে ঘুমিয়েছে। আর ভাবী এসে আটটায় ডাক দিলো। মাত্র তিন ঘন্টা ঘুমে ক্লান্তি চুকেনি!
মুহিব কিছু বলল না। এইসব কথা মায়ের সঙ্গে বলা যায় না।
আম্মা নিজে থেকেই খোস মেজাজে বলে উঠে, কাল রাত ঘুম হয় নি আব্বা?
— না।
— এক-দুই রাত না ঘুমালে কিছুই হয় না আব্বা।
— হুম।
— নতুন বউমা কোথায়?
— রেডি হচ্ছে।
— রেডি হওয়ার কি আছে? যাইহোক আজকে আমি নিজ হাতে সেমাই রান্না করেছি। আমাকে দুপুরে একবার অফিসে যেতে হবে। তুমি সঙ্গে যাবে আব্বা?
— না।
–তোমার তো নতুন বিয়ে হয়েছে। থাক। বাসায় থাকো। তাওহীদ কে সঙ্গে নিব। যাও ভেতরে যাও আব্বা। রোদে বসে থাকতে হবে। এই রোদে থেকে থেকে তোমার দুধে আলতা গায়ের রংটা শ্যামলা হয়ে গেল ।
মুহিব উঠে দাড়ালো এবং হাটা ধরল। তাওহীদ মুহিবের বড় ভাই। তাদের বয়সের বেশ তফাত আছে। ভাইয়া খুব সহজ-সরল, মেধাবী ছাত্র ছিলো। মনের দিক থেকে ও ভালো মানুষ। আর্দশ ছেলে, আর্দশ স্বামী। আর্দশ বাবাও হত কিন্তু ভাগ্যে নেই বোধহয়।
মুহিবের আরো একটা ছোট বোন আছে। নাম ইমা। ইমাকে নিয়ে অন্তত্য ভয়াবহ এক অতীত এবং সত্য আছে যা ইমা জানে না।তাকে জানতে দেওয়া হয় নি।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো আম্মা ইমাকে খুব আদর করে। ইমাকে নিজ হাতে চুলে তেল দিয়ে দিবে। পরীক্ষার আগের দিন করে হাতে তুলে খাইয়ে দিবে। বোডে এক্সামে হলে গিয়ে তিন ঘন্টা বসে থাকবেন। সব আহ্লাদ পূর্ণ করা হবে। তাদের বাসায় দুইটা অনুষ্ঠান বড় করে উৎযাপন করা হয়। এক–তাদের বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। দুই– ইমার জন্মদিন।
ইমার বয়স বেশী না। সেজুতির দুই বছরের ছোট। আর ইমা মুহিবের চেয়ে সাত বছরের ছোট। মুহিবের মনে হয়, ইমা যদি পালিয়ে কোন রিকশাওয়ালা কে বিয়ে করে। আম্মা ইমাকে কিছুই বলবে না। বরং ঐ রিকশাওয়ালা কে ঘরজামাই বানিয়ে রেখে দিবে। অথচ এই কাজ সে করলে শাস্তিস্বরূপ শূলে চড়ানো হবে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ইমা মুহিব আর তাওহীদের সৎ বোন। তার বাবা প্রথম স্ত্রী থাকতেও দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এবং সেই পক্ষের মেয়ে হলো ইমা। মুহিবরা কেউ এই সত্য জানত না। মুহিবের বয়স যখন দশ, বাবা একদিন ইমাকে বাসায় এনে পরিচয় দেয়। সেদিন রাতে মুহিব প্রথম তার মাকে কাদতে দেখে।
আরো মজার বিষয় হলো, এই ঘটনার সাত দিন পর ইমার নিজের মা নিখোজ হন। তাকে পুলিশ দিয়ে খুজেও খোজ মেলেনি। আজও নিখোঁজ সে। এবং ইমার নিজের মা নিখোঁজ হওয়ার দুই মাসের মাথায় বাবা প্যারালাইজড হয়ে যান।
বাবার এমন কাজ করার পর ও আম্মা
তাকে ক্ষমা করে দেন এবং অসুস্থ অবস্থায় স্বামীর সেবায় কোন ক্রটি রাখেননি।
তবে পরবর্তীতে এই বাসায় আম্মা রুল জারী কিরে দিয়েছেন, এই বাড়ির কোন পুরুষ দ্বিতীয়বার বিবাহ করতে পারবে না স্ত্রী থাকা অবস্থায়। আর যদি করে থাকে তবে তার ভাগের সম্পত্তির এক পয়সাও পাবে না। তাকে ত্যাজ্য করা হবে।
একে একে সবাই নাস্তার টেবিলে এলো সেজুতি বাদে। মনোয়ারা আক্তার আধ ঘন্টা টেবিলে সেজুতির জন্য অপেক্ষা করলেন,এরপর এমন ভাবে নাস্তা খাওয়া শুরু করলেন যেন কিছুই হয় নি। খাওয়ার মাঝে তাদের দুই ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করলেন।
শোভা ভাবী মুখ গোমড়া করে বারবার মুহিবকে দেখে যাচ্ছে। মুহিবের ও মেজাজ গরম হচ্ছে। সেজুতি মেয়েটা প্রচুন্ড ঘাড়ত্যাড়া। কালকে রাতেই এই ব্যাপার টা টের পেয়েছে সে। জেদীও বটে।
মেয়েদের জেদী হওয়া যায় না। পানির মতো হতে হয়।শীতল-ঠান্ডা। সবকিছুর সঙ্গে মিশে যেতে হবে। নিজের কোন অস্তিত্ব নেই। পাত্র যেই আকারের হবে সেই আকার ধারণা করতে হবে।
পানির ধর্ম বয়ে চলা। একজন নারীকে সব সহ্য করে বয়ে চলতে হয় কি? জানা নেই তার।
বিজ্ঞানসম্মত হয়ে ভাবলে, পানি তেলের সঙ্গে মেশে না। তাহলে নারী যদি পানি হয় তাহলে তেল কে? তার স্বামী?
মুহিব আনমনে হেসে ফেলে। আরো একটা বিষয় হলো, পানির অপর নাম জীবন। তার নামে বিশ্বব্রাহ্মণ পানি ও নারী ছাড়া অচল!
আম্মা মুহিবের প্লেটে সেমাই দিলো। মুহিব স্মিত হাসলো।
সে প্লেট থেকে সেমাই তুলে নিয়ে মুখে পুড়ে নিলো। আম্মার হাতের সেমাই লাজবাব হয়! এর পেছনে কারন আছে নিশ্চয়ই! কোন কিছুই কারন ছাড়া ঘটছে না। কেবল সে-ই সবকিছুই কারন ছাড়া করে।
তার কাজকর্মের পেছনে কোন কারন থাকে না। মুহিব মনে মনে বলে উঠে, There is no cause behind my activities !
আম্মা যে সেমাই নিয়ে রান্না করে, তা একদিন আগে কেবল ঘিয়ে ভেজে রোদে শুকানো হয়। ঘি যেকোন খাবারের স্বাদ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলে। এছাড়াও তিনি অনেক ঘণ ও খাটি গরুর দুধ দিয়ে এই সেমাই তৈরি করে। দুধের পরিমাণ ও বেশী থাকে।
সেমাই বা পায়েস সুস্বাদু করার টেকনিক হলো, সেমাই বা চাল যে পরিমাণ দিবেন, ঠিক তার দ্বিগুণ পরিমাণ দুধ দিতে হবে। তাও আবার জাল দিয়ে ঘণ করে।
সেমাই খেয়ে মুহিব উঠে পড়ে। তাকে অনলাইনে একটা মিটিং এটেন্ড করতে হবে। এখন অবশ্য সারা দুনিয়া ডিভাইসের উপর চলছে।মিটিং শেষ করে সেজুতির খবর নিতে হবে। যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিবে।
বিয়ের পরের দিন অনেক মেয়েই অসুস্থ হয়ে যায়। জ্বর আসে। অবশ্য এই জ্বর আসার পেছনে বিরাট এক বৈজ্ঞানিক ব্যাখা আছে।
সবকিছুর বিশ্লেষণ করতে নেই। কিছু কিছু ব্যাপার ধোয়াশাময় রেখে দিতে হয়!
★★★
মুখে পানির ঝাপ্টা লাগতেই ধড়ফড় করে জেগে উঠে সেজুতি। চোখ খুলতেই তার অতি নিকটে মুহিবকে আবিষ্কার করে সে।
বিরক্তমাখা মুখে সে শাড়ির আচল টেনে মুখের সামনে ধরে ফোটা ফোটা পানি গুলো মুছে দিলো।
মুহিব কড়া গলায় বলে, তোমাকে বিশ মিনিটের মধ্যে নিচে নামতে বলেছিলাম অথচ দুই ঘন্টা পার হলো তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো?
সেজুতির ঘুম ভালো হয়েছে। সে মুহিবকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,ঘুমিয়ে খুব ভালো করেছি।
মুহিব রাগী চোখে তার দিকে তাকালো।
–আপনার আম্মাজান বকেছে কি আপনাকে? আমি না আসায় আপনাকে দিয়ে কানে ধরে উঠ-বস করায় নি তো আবার? ( টিটকারি মেরে)
— আম্মাকে নিয়ে কোন ধরনের রসিকতা করবে না। (কড়া গলায়)
সেজুতি মুচকি হেসে বলে উঠে, এতো রাগী রাগী ভাবে কথা বলছেন কেন? কালকে রাতেই না কত প্রেম দেখালেন আর এখন রাগ করছেন? গিরগিটি ও তো আপনার চেয়ে দ্রুত রঙ বদলায় না!
মুহিব হেসে ফেললো।
সে বলে উঠে, যাও এবার অন্তত ফ্রেস হও আর হ্যা ওই গোলাপি শাড়ি টা পড়বে।
— কেন?
— সেজুতি মেয়েদের এতো প্রশ্ন করতে নেই।
— আপনি কি নারীবিদ্বেষী?
— না। আমি নারীপূজারী। যাও তো যাও। কাজ আছে আমার।
— আপনার মন চাচ্ছে আমাকে গোলাপি শাড়ি তে দেখতে তাই না?
— হু।
— তাহলে ঠিক মতো বলুন? খামোখা নারীজাতিকে টেনে আনার তো মানে দেখি না।
— আমার খুব ইচ্ছা করছে আমি আমার বউকে গোলাপি রঙের শাড়ি তে দেখব। যাও এবার!
সেজুতি শব্দ করে হাসতেই মুহিব চমকে উঠে। সেজুতির হাসিটা অবিকল ওর মতো না?
অসম্ভব! এটা তার মনের ভুল।অবশ্যই মনের ভুল কেননা কারোই হাসিই অন্য কোন ব্যক্তির মতো হবে না। চেহারা একই রকম হলেও হতে পারে, কিন্তু হাসি একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ একজন মানুষের।
#সেদিন_মুষুলধারে_বৃষ্টি_ছিল
part–5
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
বিয়ে মানে আপাতদৃষ্টিতে মজার হলেও আসলে ব্যাপারটা বিরক্তিকর। বেশ বিরক্তিকর এবং অসহ্যকর ও।
সেজুতি হাই তুলতে তুলতে শ্বাশুড়ির রুমে যাচ্ছে। মাত্র নাস্তা সেরেছে সে। নাস্তার টেবিলে শোভা আপা তাকে বেশ ক’টা বকাও দিয়ে দিয়েছে।আপাতত খাবারের সঙ্গে তার পেটে বকারাও সাতার কাটছে৷ সেজুতি মনোয়ারা আক্তারের সঙ্গে দেখা করতে যেতে চাচ্ছে না। আপা জোড় করে পাঠাচ্ছে।
সেজুতি মনোয়ারা আক্তারের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাথায় আচল তুলে দিয়ে রাঙা বউ সাজলো।
শ্বাশুড়ি আম্মা যদি তাকে জিজ্ঞেস করে যে সকালে নাস্তার টেবিলে এলো না কেন? সে কি উত্তর দিবে? আম্মাজান আপনার গুনধর ছেলে কালকে রাতে আমাকে ঘুমোতে দেয় নি৷ এজন্য সকাল বেলা ঘুমিয়েছি? এটা কি বলা উচিত হবে? যতোই হোক মুরুব্বি মানুষ। তবে কেন যেন আগে থেকেই আপার শ্বাশুড়িকে সেজুতি খুব অপছন্দ করত। সেই ছোট্ট বেলার কিশোরী বয়স থেকেই।
কিশোরী বয়সটায় একবার যা মাথায় ঢুকে যায় তা মন ও মাথায় স্থায়ী হয়ে বসে থাকে।
সেজুতি রুমের দরজায় কাড়া বাজালো। দুই মিনিটের ব্যবধানে দরজা খুলে দিলো মনোয়ারা আক্তার। তার পরনে ধবধবে সাদা আর গোল্ডেন পাড়ের সুতি দামী শাড়ি। মুখ ভর্তি পান চিবুচ্ছে সে।
তিনি সেজুতিকে দেখে হালকা হেসে বলে উঠে, আসো ছোট বউমা।ভেতরে আসো৷
সেজুতি তার ব্যবহারে বেশ অবাক হলো। এরপর এক প্রকার সংকোচ নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। এখন এপ্রিলের মাঝামাঝি। বৈশাখের দ্বিতীয় দিন। সূয্যিমামা তার উত্তাপ দেখিয়ে দিচ্ছে। বেশ গরম পড়েছে। চড়া দুপুরে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করছে। কিন্তু আম্মার ঘর বেশ ঠান্ডা। এসি বোধহয় অনেকক্ষন ধরেই চলছে। সেজুতি রুমে ঢুকেই বুঝতে পারে, এই রুমের টেম্পারেচার মিনিমাম ২২° সেলসিয়াস তো হবেই।
মনোয়ারা আক্তার বিছানায় আয়েশ করে বসে বলেন, বসো বউমা তোমার সাথে কথা আছে।
সেজুতি ভাবতে লাগে, কি কথা হতে পারে তার সঙ্গে?
সে দ্বিধায় পড়ে গেল কই বসবে? বিছানা ছাড়া বসার জায়গা নেই। চেয়ার নেই রুমে।
মনোয়ারা আক্তার যেন ব্যাপার টা ধরে ফেললেন। তিনি আগ বাড়িয়ে বলে উঠে, বিছানায় আমার পাশে বস।
সেজুতি মাথা নিচু করে বসে পড়ে। তার কেমন যেন লাগছে। এসির বাতাসে দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা তার!
মনোয়ারা আক্তার বলতে লাগলো, মুহিব বড্ড নাদান!
সেজুতি একথা শুনে টাস্কি খেয়ে উল্টে পড়ল বলে! আম্মা এইসব কি বলে? উনার ছেলে নাদান না ছাই! আস্ত একটা অভদ্র!
মনোয়ারা আক্তার শর্তা দিয়ে সুপারি বেশ দ্রুত গতিতে টুকরো টুকরো করে দুই ফালি করে চলেছেন। এতো দ্রুত এমন ধারওয়ালা শর্তা দিয়ে কিভাবে সুপারি যে কাটছে কে জানে? সেজুতি তার জায়গায় হলে সুপারির জায়গায় নিজের হাত কেটে রক্তাক্ত করে একাকার করে ফেলত।
মনোয়ারা আক্তার পান বানিয়ে সেজুতির দিকে এগিয়ে দিলে সেজুতি বলে উঠে, আমি পান খাই না।
— বেশ! পান খাওয়া খুব বাজে একটা অভ্যাস। পান খেলে কাজের বুয়া গুলোর মতো লাগে!
বলা শেষ করেই মুখে পান পুড়ে নিলেন।
সেজুতির মাথা থেকে টুপ করে আচলটা নিচে পড়ে গেল। সে আর তা ঠিক করার প্রয়োজন বোধ করে না। কাউকে ইমপ্রেস করার জন্য সেজুতি কোন কাজ করে না। মানুষ এমন এক প্রানী যাকে কোন কিছুর বিনিময়ে খুশি করা যায় না।
— কালকে বৌভাতের অনুষ্ঠান মনে আছে?
— জি।
— তোমাদের বাসায় যাবে না কি কালকে?
— হ্যা।
— মুহিব ও যাবে?
— যাওয়ার তো কথা। না গেলেও অসুবিধা নেই।
— আজকে সকালে এলে না কেন? তোমার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।
সেজুতি চুপ বনে গেল।
মনোয়ার আক্তার তার দিকে তাকিয়ে বলে, অসুস্থ নাকি? আমি তো এতোক্ষন খেয়ালই করি নি। তোমার মুখ এমন শুকনা কেন?
— এমনি। অসুস্থ না। মাথাব্যথা প্রচুন্ড।
— আচ্ছা। তেতুলের শরবত খেলে মাথাব্যাথা দূর হয়। যাইহোক, মুহিব তোমাকে নিয়ে ঢাকা চলে যেতে চায়৷
সেজুতি হতভম্ব হয়ে বলে, ঢাকায় চলে যাবে মানে?
মনোয়ারা আক্তার ভ্রু কুচকে বলে, মুহিব কিছু জানায় নি তোমাকে?
— না তো।
— বৌভাতের পরের দিন ও ঢাকায় চলে যাবে। সঙ্গে তুমি ও যাবে৷
সেজুতি বিড়বিড়িয়ে বলে, আমি জীবনে ও মুহিবের সঙ্গে একা এতো দূর যাব না।
— দুপুরে আমি বাসায় থাকব না। রাতে একসাথে খাব। আমরা রাত নয়টার রাতের খাবার খাই।
সেজুতি ভেবেই পাচ্ছে না আম্মার তার সঙ্গে বসে খাওয়ার দরকারটা কি?
মনোয়ারা আক্তার দ্বিতীয় পান মুখে নিয়ে বলে, আগে আমিও তোমাদের মতো পান খেতাম না। মুহিব পেটে আসার পর থেকে পান খাওয়া শুরু করলাম। বাঙালী মেয়েরা পোয়াতি হলে পান খাওয়া শুরু কিরে। পরে কেউ কেউ এই অভ্যাস ছাড়াতে পারে আবার কেউ আমার মতো আজীবন পান খেয়েই যায়৷ প্রতিদিনই বিশ টাকার পান লাগে আমার।
— ও।
উনি পানের বোটার ডগায় চুন নিয়ে তা মুখে দিয়ে বলে, ভালো কথা! কন্সিভ করা নিয়ে মুহিবের সঙ্গে কোন কথা হয়েছে? দুজনের কোন পরিকল্পনা নেই? বাচ্চা কবে নিবে?
সেজুতি চোখ বড় করে ফেলে। লজ্জায় তার মরে যেতে ইচ্ছা করছে৷ আম্মার কি লজ্জা-শরম কিছু নাই?
মনোয়ারা আক্তার সেজুতির মুখ দেখে শব্দ করে হেসে বলে উঠে, বিয়ের পর লজ্জা-শরম কমে যায়৷ তোমার বাবার শরীর কেমন?
— ভালোই।
মনোয়ারা আক্তার তার হাত থেকে চিকন দুটো চুরি খুলে সেজুতির হাতে পড়িয়ে দিয়ে বলে, আজকের রাতের রান্না তুমি করবে।
— ঠিক আছে আম্মা।
— তাহলে এখন যাও।
সেজুতি চুরি হাতে নিয়ে বের হয়ে এলো। আজকে এতো অসাধারণ ব্যবহার করার পরও সেজুতির মনোয়ারা আক্তার কে একবিন্দু পছন্দ হয় নি। আপাতত তার মাথায় ঘুরছে মুহিব যদি ঢাকায় যায়! তাকেও সঙ্গে নিতে চাইলে সে কি করবে?
সেজুতি রুমে ঢুকেই আরেক দফা টাস্কি খেল। রুমের অবস্থা নাজেহাল। আলমারি থেকে প্রতিটা শার্ট-প্যান্ট বের করে বিছানায় ফেলে রেখেছে মুহিব। বিছানার বেডশিট টাও অগোছালো। মনে হচ্ছে, রুমের সঙ্গে এক দফা যুদ্ধ চালানো হচ্ছে।
সেজুতি ঝাঝালো কন্ঠে বলে, রুমের এই অবস্থা কেন? কেন রুমের পরিবেশ নষ্ট করছেন?
মুহিব বিছানার সামনে দাড়িয়ে শার্ট সিলেকশন করছিলো। সেজুতির কথায় চমকে উঠে পেছনে তাকাতেই ভড়কে যায়। হুমড়ি খেয়ে পড়ে সে।
চোখ বড় করে সেজুতির দিকে তাকিয়ে রইল। মেয়েটা সত্যি সত্যি মেজেন্টা রঙের শাড়ি পড়েছে। হাতে চিকন দুটো চুরি, গলায় ও সোনার চেইন। চুল গুলো ছেড়ে রেখেছে। চোখে কাজল। ঠোঁটে হালকা বেবি পিংক রঙের লিপস্টিক। মুহিবের মনে হলো, লাল লিপস্টিক পড়লে বেশী সুন্দর লাগত৷
সেজুতির আচলটা বেশ ঝুলানো। প্রায় ফ্লোর টাচ করছে করছে ভাব। এতো বড় আচল রেখেছে কেন? নিশ্চয়ই মুহিবকে এই আচলে বেধে ফেলার বুদ্ধি এটেছে এই মেয়ে! হ্যা এটাই কারন। নাহলে ওতো বড় আচল কেন শুধু শুধু ফেলে রাখবে? আর একদিনেই সেজুতি তাকে ধমকাচ্ছে? কি সাংঘাতিক ব্যাপার!
সেজুতি বিছানার সামনে এসে দাড়াতেই মুহিব তার পরনের গেঞ্জি খুলতে লাগে । সেজুতি মুহিবকে গেঞ্জি খুলতে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।
সে মুখে বিরক্তি ভাব এনে বলে, আশ্চর্য! কি করছেন এইসব?
মুহিব তার কথায় কর্ণপাত না করে বিছানা থেকে দুইটা শার্ট হাতে তুলে নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে প্রথমে কালো শার্ট নিজের কাছে ধরে আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগে৷
মুহিবের এই কান্ডে সেজুতি হেসে দেয়। আয়নার ভেতর থেকে সেজুতিকে মুগ্ধ হয়ে দেখলেও মুহিব এমন ভাব করল, যেন সে হেসে দেওয়ায় তীব্র পরিমাণে অসন্তোষ ।
সেজুতি মুখে অতিরিক্ত গাম্ভীর্য এনে বলে, উহু! এইটা ভালো না৷
মুহিব দ্বিতীয় শার্টটা গায়ে ধরতেই, সেজুতি মুখ বাকিয়ে বলে, ইশ! এই শার্টে আপনাকে জঘন্য লাগছে!
মুহিব দাতে দাত চেপে ধরে বলে, নীল আমার প্রিয় রঙ।
— ইশ কি বাজে চয়েস আপনার। নীল একটা ক্ষ্যাত রঙ।
মুহিব রেগে তেড়ে এলো বিছানার সামনে৷ তারপর এক এক করে তার সব কাপড় বিছানা থেকে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে এশ রঙের একটা শার্ট হাতে নিতেই তড়িঘড়ি করে সেজুতি বলল, এটা পড়বেন না। তা নাহলে লোকে বলবে মুহিব সারওয়ার বিয়ে করে পুড়তে পুড়তে ছাই হয়ে গেছে। এরপর সেজুতি শুরু করল মুহিবের হৃদয় কাপানো অট্টহাসি। এই হাসির শব্দে মুহিবের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো।
মুহিব মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল। কিছু বলতে পারলো না। তারপর কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে মুহিব বলে উঠে, তাহলে তুমিই বলো কোন শার্টটা পড়ব?
সেজুতি সুন্দর দেখে একটা চকলেট কালারের শার্ট বের করে দিলো। মুহিব সেটা পরে নিজের চুল আছড়ালো। এরপর কড়া পারফিউম দিলো।
পারফিউমের গন্ধে রুম মো মো করতে লাগে। সেজুতি মজার ছলে বলে, কোন মেয়েকে পটাতে যাচ্ছেন নাকি?
মুহিব বলে উঠে, তোমার মতো ডাইনির আশেপাশে থাকলে কোন মেয়েই আমার সাথে ঘেষবে না।
সেজুতি চোখ ছোট করে তাকাতেই মুহিব এই প্রথম খুব সুন্দর করে হাসলো।
মুহিবের হাসিটা দেখে সেজুতির বুক ধক করে উঠে। আহারে! কি সুন্দর হাসি তার। এই হাসির দিকে চেয়ে সেজুতি একটা লম্বা জীবন পাড়ি দিতে ও পিছপা হবে না।
মুহিব বলে উঠে, শোন? শোভা ভাবীকে দ্রুত সত্যটা জানিয়ে দাও। সে যে মা হতে পারবে না এই সত্য লুকানো অসম্ভব ।
— জানাবো। সময় হলেই জানাব।
— কবে সময় হবে? তোমার কি মনে সে সুখে আছে? উহু! সুখে নেই৷ কাজেই অনিশ্চয়তায় না রেখে সত্যটা বলে দাও।
সেজুতি জবাব দিলো না। আচমকা মুহিব তার কাছে এসে তাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিয়ে বলে , যদি কেউ কোন দিন এসে বলে আমি কোন অন্যায় করেছি তখন কি করবে?
সেজুতি ভ্রু কুচকে বলে, অন্যের কথা বিশ্বাস কেন করব?
— আমি নিজেই যদি বলি?
সেজুতি বলে উঠে, কি অন্যায় করেছন আপনি? হু?
— এমনি জিজ্ঞাসা করলাম। আমাকে যেতে হবে৷
— কখন ফিরবেন?
— রাত হবে৷
— আজকে আমি রান্না করব। কি খেতে চান?
মুহিব বলে, তুমি রান্না করলে তা খাওয়ার যোগ্য হবে?
সেজুতি একথা শুনে গাল ফুলালে মুহিব এক গাল হেসে সেজুতির কপালে প্রগাঢ় করে আলতো ভালোবাসার পরশ একে বলে উঠে, আল্লাহ হাফেজ ।
উনি যাওয়ার পর সেজুতি লম্বা এক ঘুম ঘুমিয়ে রান্না করতে নেমে যায়। মুহিবের প্রিয় সরিষার তেলের তেহারি রাধলো সে।
এশার পর পর থেকে সুন্দর করে সেজে মুহিবের অপেক্ষা করতে লাগলো কিন্তু মুহিব এলো না।
রাত বেড়ে যাওয়ায় মনোয়ারা আক্তার খেয়ে নিলেন। তাকে দেখে সবাই খেতে বসলেও সেজুতি খেল না। তার বড্ড অভিমান হতে লাগে। কান্না পেয়ে গেল।
সবার খাওয়া শেষ হলে সে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে এক দফা কান্না করল। মুহিব কি জানে সে না আসায় সেজুতি কতখানি কষ্ট পেয়েছে? না জানে না। জানলে ছুটে আসত!
বুকের কষ্ট দেখানো যায়না। প্রকাশ ও পায় না। দেখা যায় না জন্যই একজন অপর জনকে কষ্ট দিতে পারে।
সেজুতি রুম সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে। সে ভেবেছিল খাওয়া শেষ করে দুইজনে এক গ্লাসে কোক খাবে বারান্দায় দাঁড়িয়ে! এবং সুন্দর সুন্দর গল্প করবে!
রাত বাড়তে থাকে। আকাশে মেঘ ও বাড়তে থাকে। বাড়ির কারো কোন বিকার নেই মুহিব না ফেরায়। কিন্তু সেজুতি ছটফট করতে লাগে৷ অস্থিরতায় সে ঢোক গিলতে পারছেনা।
সে সোফায় বসে তার অপেক্ষায় থেকে ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ ফোনের রিংটনে ঘুম উবে যায়। স্ক্রিনে আননোন নাম্বার দেখে সে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। মনে কু ডাকে। মুহিব ঠিক আছে তো? দেয়াল ঘড়ি জানান দিচ্ছে রাত বারোটা বাজে!
সে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠে, আপনি মুহিব সারওয়ারের কেন হন?
চলবে।
চলবে৷
[ আসসালামু আলাইকুম। আগামীকাল থেকে রাত আটটায় গল্প পোস্ট করা হবে। আর গল্পটা কেমন লাগছে সবার? অসংখ্য ধন্যবাদ গল্পটা পড়ার জন্য। ভালোবাসা অবিরাম। ]