#স্নিগ্ধ_প্রেমের_অনুভূতি
#পার্টঃ১১
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
৭৮.
“আজ ৫ বছর পর নিজ দেশে পা রাখতেই শান্তিপূর্ণ একটা নিশ্বাস নেয় আদ্র। এয়ারপোর্টের কর্ণারে তাকাতেই মুখটা হাসিতে থমথমে হয়ে উঠে তার। রাজ্জাক নীড় এগিয়ে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
” কেমন আছো আদ্র?
‘ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?
‘আমিতো ভালো নেই তোমাকে ছাড়া”
কথাটা শুনেই আদ্র তার বাবার পেছনে তাকালো। চোখ ভর্তি পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিসেস আনেয়া নীড়। চোখে তার হাজার অভিযোগ। আদ্র মুচকি হেসে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“মা তুমি কাঁদছো কেনো? আমি কিন্তু আবার চলে যাবো তুমি কাঁদলে।
” না না আমি আর কাঁদবোনা। তবুও তুই যাসনা।
‘উচ্ছ্বাস অদ্রি দৌঁড়ে গিয়ে আদ্রকে জড়িয়ে ধরে।
‘আদ্র হেসে বলে,
“কেমন আছিস তোরা?
” আদ্র আমরাতো ভালোই আছি। তুই কেমন আছিস তাই বল…
“উচ্ছ্বাসের কথায় আদ্র উত্তর দিতে যাবে তার আগেই চোখ পড়ে তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকা ইচ্ছের দিকে। ইচ্ছে ধীর পায়ে এগিয়ে আদ্রকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই…আদ্র বললো,
” মা-বাবা চলো বাকি কথা বাসায় গিয়ে হবে।
‘হে বাবা চল চল
‘অদ্রি উচ্ছ্বাস ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ইচ্ছে ্র কাঁধে হাত রেখে বললো,
“সবটা ঠিক হতে অনেক সময় লাগবে ইচ্ছে।
৭৯.
আদ্র বাসায় আসতেই..নিহাল চৌধুরীকে নিয়ে আড্ডা করতে বসে গেলো। মামাকে কতোদিন পর সে পেয়েছে। যদিও ফোনে সবসময় যোগাযোগ ছিলো। ইচ্ছে অদ্রিজাকে কোলে নিয়ে ওদের সামনে যেতেই…নিহাল চৌধুরী বললো,
” আরে নানুভাই এসো এসো।
‘ইচ্ছে আঁড়চোখে আদ্রকে দেখছে। আদ্র যেনো তাকে দেখেও দেখছেনা৷
“মামা আমি রুমে যাচ্ছি।
“কেনো? চল লুডু খেলি।
” পরে খেলবো মামা। আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কল করার আছে।
“আচ্ছা যা।
” আদ্র ইচ্ছের দিকে না তাকিয়ে ইচ্ছের পাশ দিয়ে চলে যেতেই ইচ্ছে অসহায় ধরা কন্ঠে বললো,
“বাবা…
‘মারে অনেকটা বছর শেষ। তাই সবকিছু স্বাভাবিক হতেতো সময় লাগবেই।
৮০.
খেয়েছো?
‘ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে কথাটা শুনতেই মুচকি হাসে আদ্র। হেসে বলে,
” হুম খেয়েছি। তুমি?
“হে।
” কি করছো? আমাকে ছাড়া ভীষণ একা লাগছে?
“আদ্র আমাকে নিয়ে গেলেই কিন্তু পারতে।
” তুমি ওখানেই ভালো আছো। আর তাছাড়া তুমি ওইখানে সেটেলাইট হয়ে গেছো।
“তুৃমিওতো। তাহলে?
” আমারটা অন্য ব্যাপার। বাংলাদেশে সব তাই চলে এসেছি। মামুনি কোথায়?
“অপর পাশের ব্যক্তিটি একটা ছোট বাচ্চা মেয়ের হাতে ফোনটা দিয়ে বললো, এই নাও তোমার পাপার সাথে কথা বলো।
” বাবাই.. কোথায় টুমি?
“ওরে আমার লক্ষী মারে। আমি খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো কেমন? তুমি দুষ্টুমি করবেনা। আর একদম মাম্মামকে বিরক্ত করবেনা কেমন?
” বাবাই..টুমাকে আমি খুব মিস কলছি।
“আমার মামনিটাকেও আমি অনেক অনেক মিস করছি।
” হঠাৎ আচমকা কোনো শব্দে পেছনে ফিরে তাকায় আদ্র। দেখে ইচ্ছে চোখে পানি নিয়ে নিচে একবার তাকিয়ে তার দিকে তাকাচ্ছে। ইচ্ছের হাত থেকে কফির গ্লাস পড়ে গেছে। সাথে ট্রি। আদ্র তড়িঘড়ি করে ফোনটা কেটে ইচ্ছেকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইচ্ছে দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে যায়।
৮১.
ইচ্ছে দরজা লাগিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে কান্নায়। আদ্র কাকে বললো? যে বাবাই খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো? মেয়েকে! তার মানে আদ্র ভাই…এইসব ভাবতেই বুক ফেঁটে কান্না আসছে ইচ্ছের। দরজায় বার বার কড়াৎ নাড়ছে উচ্ছ্বাস। ইচ্ছে দরজা খুলছেনা বলে..উচ্ছ্বাস ফোনটা হাতে নেয় প্যাকেট থেকে। কয়েকবার ওপাশ থেকে রিং হতেই কল ধরে উত্তেজিত কন্ঠে কেউ একজন বললো,
“উচ্ছ্বাস বল।
৮২.
আদ্র…বলে চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে আদ্রকে রুপ জড়িয়ে ধরে। পাশ থেকে অয়নি..হেসে বললো,
” অনেকদিন পর আপনাকে দেখছি আদ্র ভাইয়া।
“আদ্র রুপের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মুচকি হেসে বললো,
” আমি ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো অয়নি?
“আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।
” আদ্র আমি বাবা হতে চলেছি..
“অনেকটা আগ্রহ নিয়ে কথাটা বললো রুপ। আদ্র হেসে বললো,
” বাহ্ তোরা বাপ হয়ে গেলি আর আমি! আমার জীবনে বোধহয় আর সুখ নেই বুঝলি রুপ?
৮৩.
‘রাত্রির আবছা আলোতে…ইচ্ছের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কেউ একজন হাসছে। আলতো করে ইচ্ছের সামনে গিয়ে ফ্লোরে বসে ঘুমন্ত ইচ্ছের সামনে ঝেঁকে থাকা এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেয় কেউ একজন। কপালে আলতো পরশ একেঁ বিড়বিড় করে বললো,
‘ভালোবাসি মেরি জান’
“ইচ্ছে আড়মোড়া হয়ে নড়তেই তড়িঘড়ি করে ইচ্ছের রুম থেকে প্রস্থান করে ছায়ামূর্তিটি।
৮৪.
সোনালি রোদ্দুরের আলাপনে ঘুম ভাঙ্গে ইচ্ছের। ঘুম ভাঙ্গতেই আয়নার সামনে যায়। আয়নার সামনে যেতেই চমকে উঠে সে। ঠোঁটে আলতো রক্ত জমাট বাঁধা! ইচ্ছে অবাক হয়ে বললো,
” আরে এমন কি করে হলো? আমার ঠোঁট কাটা! ইচ্ছে দরজার দিকে তাকাতেই রুহ কেঁপে উঠে তার।
“আরে দরজা খুললো কে? আমারতো স্পষ্ট মনে আছে ঘুমানোর আগে আমি দরজা লাগিয়েই ঘুমিয়েছি। দরজাতো ভেতর থেকে বন্ধ করা ছিলো। আর তাছাড়া আমিতো রুমে একাই ঘুমিয়ে ছিলাম। আদ্র ভাইয়ের ওইসব কথা শুনে। তাহলে দরজা খোলা কিভাবে? হাউ!
৮৫.
‘ইচ্ছে তুই আদ্রের গাড়িতে করে ভার্সিটিতে যাবি।
” আনেয়া নীড়ের কথা শুনে অনেকটা অবাক হয় ইচ্ছে। এতোদিন ওকে সহ্যও করতে পারতোনা। আর আজ!
“খাবার টেবিলে বসে দিব্য এক মনে খেয়ে যাচ্ছে আদ্র। আশেপাশে একটিবারের জন্যও তাকায়নি। খাবার শেষে
বেরুতে বেরুতে বললো,
”
‘মা ওকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দাও আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।
৮৬.
‘ইচ্ছে বাসা থেকে বের হতেই দেখলো আদ্র গাড়িতে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে। আদ্রকে দেখে ইচ্ছে যেনো ক্রাশ খেলো।
‘ব্লু কালার ব্লেজার, ব্ল্যাক প্যান্ট,হাতে ঘড়ি চোখে সানগ্লাস। সব মিলিয়ে পুরো পরিপাটি।
“ইচ্ছের এইসব ভাবতেই..কেউ একজন তার কানে ফিসফিস করে বললো,
” আমি জানি আমি ক্রাশ বয়। তাই বলে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে?
চলবে…