স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব -০৪

#স্নিগ্ধ_প্রেমের_অনুভূতি
#পার্টঃ০৪
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

২৩.

‘আহ..সেই লাগছে তোকে আর আদ্র ভাইকে পুরাই হিরো হিরোইন। ইশশ আমাকে যদি কেউ এইভাবে কলেজে কোলে করে নিয়ে আসতো।

“অয়নির এমন কথায় ইচ্ছে কটমট করে তার দিকে তাকায়। অয়নি এইসব পাত্তা না দিয়ে বললো,

” আদ্র ভাইয়া কি রোমান্টিক আর রুপটা দেখ..একটা আনরোমান্টিকের দিব্বা। শেষের কথাটা ভীষণ অসহায় হয়ে বললো অয়নি।

“ওফ অয়নি তুই থামবি? ইশ পা ব্যথায় আজ ক্লাস করতে পারবোনা একটুও।

” আচ্ছা তোর পায়ে ব্যথা পেলি কি করে?

“বেশ আল্হাদের সুরে কথাটা বললো অয়নি। ইচ্ছে তারপর বলতে লাগলো।

” আমি ফুচকা খাবো গাড়ি থামান।

“পাগল হয়েছো ইচ্ছে পরী? খালি পেটে তুমি ফুচকা খাবে? আর জানো? খোলা জায়গার ফুচকা একটুও ভালোনা।

” আপনাকে কোনটা ভালো আর না ভালো সেইটা আমি বলতে বলিনি আদ্র ভাই..গাড়ি থামান…

বাধ্য হয়ে আদ্র গাড়ি থামালো৷ কারণ সে জানে ইচ্ছে কতোটা ফুচকা পাগলী।

“ফুচকা খেয়ে আসো আমি বসে আছি।

‘হুম।

এইটা বলেই ইচ্ছে ফুচকা খেতে শুরু করে৷ ফুচকা খেয়ে যেই আসতে যাবে হঠাৎ একটা ইটের সাথে হোঁচট খেয়ে ধাম…..

এইটা বলেই ইচ্ছে অয়নির দিকে তাকায়। অয়নি হাহা করে হেসে চলেছে। কোনো ছেলের সামনে এইসব পড়ে যাওয়া টাওয়া যে কতোটা লজ্জাজনজ সেইটা ভাবতেই অয়নির হাসির কমতি নেই।

‘অয়নি….

‘ইচ্ছের রাগী গলা শুনে মুখে আঙ্গুল দেয় অয়নি। চুপসে যায় সে।

২৪.

মামা…

নিহাল চৌধুরী সোফায় বসে সংবাদ দেখছিলেন। হঠাৎ পরিচিত কন্ঠে ” মামা” ডাক শুনে পিছনে তাকায় সে। চোখ দুটো ঝলমল করে উৎফুল্লে।

“আদ্র!

” কেমন আছো মামা?

“এইতো দেখছিসইতো কেমন আছি। আয় বাবা আমার পাশে আয়।

” আদ্র গিয়ে বসে..নিহাল চৌধুরীর পাশে।

“আদ্র এতোদিন পর তোর মামার কথা মনে পড়লো?

” মামা তুমি কি বলো এইসব? আসলে অফিসের ভীষণ চাপ তাই…

“আচ্ছা থাক হয়েছে। কি খাবি বল? আজ আমি তোকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবো।

” আরে মামা না না। দরকার নেই৷ পরে একদিন এসে মামু ভাইগ্না দুজনে একসাথে রান্না করবোনে। এখন ছেড়ে দাও।

‘আদ্র হঠাৎ সোফা থেকে উঠে. ফ্লোরে বসে। নিহাল চৌধুরীর পায়ের কাছে। নিহাল চৌধুরীর হাত জাপটে ধরে বললো,”মামা ভাইবোনের মাঝে সব ঝামালা মিটিয়ে ফেললে হয়না?

‘নিহাল চৌধুরী দাঁড়িয়ে পড়ে বসা থেকে। গম্ভীর মুখে বললো,

“আদ্র….নিচ থেকে উঠো।

‘না মামা। আমি উঠবোনা। যতক্ষণ না অব্দি তুমি আমাকে কথার উত্তরটা দিচ্ছো।

‘আদ্র…

” মামা মা তোমাকে দেখার জন্য প্রায় ওই রাতে সবার আড়ালে কান্না করে। আজও মা..কাতলামাছের মাথাটা সবার অগোচরে নিজে না খেয়ে আমাদেরকে দিয়ে দেয়। কারণ, তুমি যে কাতলা মাছের মাথাটা ভীষণ খেতে ভালোবাসো।

‘নিহাল চৌধুরীর চোখে পানি। একটামাত্র বোন ওনার। খুব আদরের। কিন্তু ওনার ছেলে উচ্ছ্বাসের জন্য যে এইভাবে সব নষ্ট হয়ে যাবে তা ওনার কল্পনায়ও আসেনি।

‘আদ্র বসা থেকে উঠে নিহাল চৌধুরীর সামনে এসে বললো,

“মামা..অদ্রি আর উচ্ছ্বাস একে অপরকে ভালোবাসতো তাই ওরা পালিয়ে বিয়ে করেছে। এতে ওদের কোনো দোষ দেখছিনা আমি।

‘দোষ আছে আদ্র। উচ্ছ্বাস অদ্রিকে বিয়ের পিরি থেকে উঠিয়ে নিয়ে মান সম্মান নষ্ট করেছে তোর বাবার।

আদ্র নিহাল চৌধুরীর এই কথা শুনে, ” মনে মনে বললো, “নাহ..এইভাবে হবেনা। আগে বাবাকে ঠিক করতে হবে। মামা বাবার উপরই অভিমান করে আছে।

২৫.

ইচ্ছে বাসায় এসে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আদ্রকে দেখে চিৎকার দিতে যাবে এমন সময় আদ্র তাড়াতাড়ি ইচ্ছের মুখ চেপে ধরে হাত দিয়ে।

‘উম্ উমৃমৃ

‘ইচ্ছে ইশারা দিয়ে তার মুখপান থেকে হাত সরাতে বলতেই আদ্র ইচ্ছের মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। ইচ্ছে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে যায়। কারণ ইচ্ছে শুধু একটি তোয়ালে জড়িয়ে আছে সারা দেহে। আদ্রের খারাপ লাগছিলো বলে নিহাল চৌধুরী জোর করে তাকে রেস্ট করতে এই রুমে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এতো এলাহি কান্ড ঘটে যাবে তা সে ভাবতে পারেনি।

ইচ্ছে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই কটমট করে তাকালো আদ্রের দিকে৷ আদ্র আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইচ্ছে বললো,

‘আপনি এইখানে কি করছেন আদ্র ভাই?

‘না মানে ইয়ে…

‘আমার রুমে কি করছেন?

‘আসলে মাথা পেইন করছিলো তাই মামা এইখানে নিয়ে এসেছে।

‘ইচ্ছে আয়নার সামনে গিয়ে ভেজা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,

‘ফুফু জানে? আপনি এইখানে?

‘না।

‘উচ্ছ্বাস ভাইকে ভীষণ মনে পড়ে আদ্র ভাই।

‘আদ্র বুঝতে পারলো যে ইচ্ছের এইসব সুবিধার ঠেকছেনা। কখন না জানি কেঁদে দেয়। মেয়েটা খুব বাচ্চা স্বভাবের। আদ্র ইচ্ছের সামনে যেতেই এমন একটা কাজ করে বসলো ইচ্ছে যে আদ্র বিষ্মিত হয়ে গেলো। কয়েক সেকেন্ডের জন্য শ্বাস প্রশ্বাস দীর্ঘ হয়ে এলো।

ইচ্ছে কান্নায় আদ্রের বুকে মাথা রাখলো। ঝাপটে ধরলো আদ্রকে। আদ্রও নিজেকে স্বাভাবিক করে ইচ্ছের মাথায় হাত রেখে বললো,

‘কি হয়েছে আমার ইচ্ছে পরীর?

‘ইচ্ছে কান্না ভেজা কন্ঠে বললো,

‘আদ্র ভাই..উচ্ছ্বাসকে কতো দিন দেখিনা৷ কতো দিন ওহ আমাকে বলেনা…’বনু…এইটা বলেই ইচ্ছে পুনরায় কেঁদে উঠে।

আদ্র আদুরে কন্ঠে বললো,

‘আমি খুব তাড়াতাড়ি ওদেরকো নিয়ে আসবো ইচ্ছে পরী।

এই কথাটা শুনতেই ইচ্ছের যেনো হুঁশ ফিরলো। তার এতোক্ষণে বোধ হলো যে সে আদ্রের বাহুদ্বয়ে আবদ্ধ। ইচ্ছে ঝড়ের গতিতে আদ্রের থেকে সরে তাড়াতাড়ি রুম ত্যাগ করে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here