#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_১৩
রুমে ঢুকতে সোহান কিছুটা অবাক হয়ে থমকে দাঁড়ায়। জান্নাত তার ল্যাপটপের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে..? সোহান পা বাড়ানোর সাহস পাচ্ছে না। ভয়ে তার বুকটা কেঁপে উঠছে। জান্নাত তাকে সন্দেহ করছে না তো..? পরোক্ষণে ভাবল করলে করবে তাতে আমার কী আমি তো আর ওর বাপেরটা খাই না। সব কিছু ভাবতে ভাবতে একবার পা বাড়ায় আবার পিছায়। এভাবে মিনিটর দশেকের মতো চলতে থাকে। হঠাৎ করে জান্নাত সোহানের দিকে তাকায়। কী ব্যাপার আপনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন..? কোন সমস্যা হয়েছে.?
সোহান নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
– নাহ্ জান্নাত কী হবে.? আমি দেখছিলাম তুমি আমাকে দেখতে পাও কিনা! কিন্তু না তুমিও তো অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলে।
– আমি আপনার ল্যাপটপ দেখছি। খুব সুন্দর দেখতে। আমারও খুব সখ ল্যাপটপ চালানোর। আপনি কী আমার সখটা পূরণ করতে পারবেন..?
– হ্যাঁ পারব তবে এখন না পরে। জান্নাত তোমার পিরিয়ড ভালো হয়নি.?
সোহানের এমন প্রশ্নের জন্য জান্নাত প্রস্তুত ছিল না। তাই মেজাজ গরম হয়ে গেল। মানুষের যখন অতিরিক্ত রাগ ওঠে তখন কেউ কথা বলতে পারে না আবার কারও কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়ে যায়। আরও অনেক কারণ আছে তবে দুইটা কারণই বেশী দেখা যায়। রাগ খুব খারাপ জিনিস রাগ করলে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। ক্রোধের বশে খুনও করতে পারে, কেউ আবার নিজের হাত-পা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ কাটে এসব রাগকে স্বাভাবিক রাগ বলে না তারা এক একটা সাইকো। মনে মনে কথাগুলো ভেবে নিজের রাগকে সামলিয়ে গলার স্বার নিচু করে স্বাভাবিকভাবে বললাম,
– আমার পিরিয়ড ভালো হয়নি। আরও কয়েকদিন লাগবে।
– জান্নাত তুমি তো আমাকে মেরে দিবে। এতদিন কীভাবে থাকা যায় একটা পুরুষের পক্ষে..?
– আপনি কী একাই পুরুষ মানুষ.? আর কোন পুরুষ মানুষ নাই। আপনার শরীরের এত ঝাঝ আসে কোথা থেকে..? সেক্স ছাড়া আর কিছু বুঝেন না। শুধু প্রতিদিনই লাগবে..?
– পুরুষদের চাহিদা অনেক বেশি থাকে মেয়েদের মতো এত কম না। তোমার তো মনে হয় নেই যার কারণে তুমি এমনভাবে রিয়েক্ট করছ।
– আমার কী আছে সেটা এতদিনে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। যদি না বুঝতে পারেন তবে নতুন করে নিজের সম্পর্কে আপনাকে কিছু বলার নেই।
আরেকটা কথা সেটা হল, মেয়েদের সম্পর্কে দেখছি ভালোই আইডিয়া আছে। মনে হচ্ছে খুব চর্চা করেছেন আগে। তাই তো বলি আপনার এত চাহিদা আসে কোথা থেকে..? পুরুষের জাতটাই হল লুচ্চার দল। নিজের সাথে বউ থাকলেও রাস্তায় বসে অন্য মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদের ফিগার দেখে উফফ বলে সবশেষ করে দেয়। রাতে বাসায় ফিরে বউকে তার মনে লাগে না তখন সেই রাস্তায় দেখা মেয়েটিকে কল্পনা করে নিজের বউকে অপমান করে। কী চিন্তা পুরুষ মানুষদের তাই না..? কেউ দেখে শান্তি পায়, কেউ ধরে আর কেউ খেয়ে শান্তি পায়। তবে তিন ধরণের পুরুষেরাই লুচ্চার জাত।
জান্নাতের কথাগুলো শুনে রাগে ফুলছে সোহান কিন্তু ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই নিস্তেজ হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে আগে ভিডিওটা ডিলিট করি তারপর তোমাকে শায়েস্তা করব।
সোহান কোন কথা না বলে শুধুমাত্র জান্নাতকে বলল আমি যাচ্ছি ফিরতে রাত হবে।
– ঠিকাছে। তবে একটা কথা মনে রাখবেন মেয়েরা মায়ের জাত ওদের দিকে কখনও খারাপ চোখে তাকাবেন না। বিয়ে বাড়িতে অনেক মেয়ে আসবে তাই নিজেকে সামলে নিয়েন বলা তো যায় না আপনাদের তো যখন খুশি তখন বেরে যায়।
সোহানের ইচ্ছা করছিল জান্নাতের প্রতিটা কথার উত্তর দিতে কিন্তু সে সময় নেই বলে চুপচাপ বেরিয়ে যায়।
বাসা দিয়ে নেমে সোজা গ্যারেজে ঢুকে মোটরসাইকেল বের করে স্টার্ট দিতে গেইটের সামনে থাকা দারোয়ান গেইট খুলে দিয়ে সোহান বেরিয়ে যায়। লোপা পর্দা ফাঁক করে সোহানের পথের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রুমে ঢুকে বিছানার উপরে বসল।
ক্লাবের সামনে গাড়ি পার্কিং করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সোহান। ভিতরে ঢুকবে কী ঢুকবে না এটা নিয়ে সংশয়ে আছে সে। নিলয়কে কী কল করবে নাকি সে নিজে থেকেই কল করবে। কিছু ভেবে পাচ্ছিল না কী করবে..? কিছুক্ষণ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিলয় এসে সামনে দাঁড়াল। সোহানকে দেখে দাঁত কেলিয়ে বলল কী রে এত তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে..? ভাবির আঁচলের নিচ থেকে আসতে কষ্ট হয়নি তো..? আচ্ছা সোহান তোর বিয়ের বয়সে ভাবিকে তুই কতবার ইউজ করেছিস হিসেব আছে..? নিলয়ের এমন অদ্ভুত প্রশ্নে সোহান তো হতভম্ব হয়ে যায়। এমন প্রশ্নের কী উত্তর দিবে ভাবতে ভাবতে নিলয় আবারও বলতে শুরু করল আচ্ছা বাদ দে। এখন বল ভাবির ফিগার কত..?
সোহানের এবার রাগে শরীর জ্বলছে। ইচ্ছা করছে গালের উপরে ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পর বসিয়ে দিতে। কিন্তু ভিডিওটার কথা মনে পরলে জমে গেল।
নিলয় এখন বল ভিডিওটা কোথায়..?
– আরে সোহান এত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন..? মাত্রই তো আসলি তাইলে এত পাগল হলে কী হয়.? চল না আগে গিয়ে দুজনে আড্ডা দেই তারপরে ওটা নিয়ে কথা হবে। নিলয় কথা বলতে বলতে ক্লাবে ঢুকল। সোহান নিলয়ের কাধে হাত রাখল।
– সোহান তোর সমস্যা কী বলত.? একটু পরপর ডাকছিস কেন.?
– তুই আমাকে টেনশনে রাখছিস কেন..? ভিডিওটা ডিলিট করে দিলেই তো হয়।
– ভিডিও তো ডিলিট করব ঠিকাছে তবে কিছু শর্ত আছে..?
– কিসের শর্ত নিলয়.?
– তুই এত বড় একটা কাজ করছিস তার পুরো ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে। যখন মজা নিচ্ছিলি তখন তো আর এত সব ভাবিসনি হারামী।
লিজার সাথে এক বিছানায় উফফ এত শক্তি কোথা থেকে আসে তোর.? তুই তো বিয়ের আগেই সব বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে গেছিস যার কারণে ভাবির কোন সমস্যা হয় না। তবে সোহান ভাবির সামনে লিজা কিচ্ছু না। তোর কপালটা এতটাই ভালো যে একদম কচি জিনিসটাই এসে পড়েছে।
কী ফিগার ভাবির.? আউচচচ ঠোঁটের গঠন তো মাসআল্লাহ। হাসলে সরাসরি বুকে এসে লাগে।
– নিলয় এসব তুই কী বলছিস..? জান্নাত তোর ভাবি আর তুই তাকে নিয়ে বাজে কমেন্ট করছিস।
– আরে সোহান এটা বাজে কথা হল কীভাবে..? যা সত্যি তাই বলছি।
– দেখ নিলয় তোর সাথে ঝামেলা করতে চাই না তাই ভালো হয় আমাদের ভেতরে সবকিছু মিটআপ করে নিলে। বল ভিডিওটা ডিলিট করতে তোর কী চাই.?
– আমার বেশি কিছু দরকার নেই শুধুমাত্র তোর বউকে একরাতের জন্য আমার কাছে পাঠিয়ে দিবি কথা দিচ্ছি সাথে সাথে তোর ভিডিওটা ডিলিট করে দিব।
নিলয়ের কথা শুনে সমস্ত শরীরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম তৈরি হয়েছে। এই মূহুর্তে কী বলবে বুঝতে পারছে না। নিলয় এসব তুই কী বলছিস..?
– আমি ঠিকি বলছি যদি তুই আমার শর্তে রাজি থাকিস তাহলে আমাকে কল দিস না হলে ভিডিওটা ইন্টারনেটে ভাইরাল করতে পিছ পা হব না। তখন সবাই দেখবে সোহানের আসল চেহারা।
– নিলয় প্লিজ তুই না আমার বন্ধ আমার সাথে এমনটা করতে পারিস না।
– বন্ধু..! কিসের বন্ধু? তুই জানতি লিজাকে আমি ভালোবাসি তবুও ওর সাথে এসব করতে বিবেকে বাঁধল না। আমার কত বছরের ভালোবাসাকে তুই কেড়ে নিয়েছিস। জানিস কত রাত আমি কেঁদেছি!
এবার তোর বউয়ের সাথে রাত কাটিয়ে এর প্রতিশোধ আমি নিব বলেই নিলয় চলে গেল।
নিলয় চলে গেলে সোহান হাঁটু ভাজ করে ফ্লোরে বসে পরল। কী থেকে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছে না..?
চলবে…….