স্বামী পর্ব ১৭+১৮

#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_১৭

ডাইনিং রুমে ঢুকে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা লাগছে। এতদিন ভেবেছিলাম সোহান বড়লোকের ছেলে বলে আমাকে ওর পছন্দ হয়নি। হয়তো বাবার চাপে পরে আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে। মানুষ বিয়ের আগে যতই খারাপ থাকুক না কেন বিয়ের পরে ভালো হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তার ভেতরে এমন কোন চিন্তাধারা নেই। তার শুধু শরীরের প্রতি ঝোঁক! এমন লুচ্চা মানুষ জীবনে দেখিনি। নিজের বউকে রেখে অন্য নষ্টা মেয়েদের সাথে রাত কাটিয়ে শেষে কিনা সাধু পুরুষ সাজে! মানুষ কতই আজব ভাবলেও অবাক লাগে। সবচেয়ে কষ্ট লাগল নিলয়ের মতো ছেলে কী করে আমাকে একরাতের জন্য চাইল.? সোহান কোন প্রতিবাদ করল না। সোহান কী পুরুষ নাকি জানোয়ার! ওর জায়গায় অন্য কোন পুরুষ হলে এতক্ষণে নিলয়ের জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলত। আফসোস লাগল সোহান এমনটা করেনি। ভাবনার মাঝে কারও হাতের স্পর্শে চমকে উঠলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি সোহান।
মৃদু হেসে চেয়ারের উপরে বসল সোহান। না চাইতেও নাস্তা বেরে সোহানকে দিলাম। খাওয়া শেষ করে হাত ধোঁয়ার জন্য বেসিনের সামনে গেল তখনি সোহানের মা এসে বলল,
– সোহান তোর ছোট খালা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরেছে আমি সাথীকে নিয়ে যাচ্ছি। তুই আর জান্নাত বাসায় থাকিস। জান্নাতকে একা রেখে কোথাও যাস না আবার আমরা দুইদিন সেখানে থাকব।
– ঠিকাছে মা।

সকাল ১০ টার দিকে মা সাথীকে নিয়ে চলে গেল।
সবাই চলে গেলে সোহান ব্যাংকে চলে যায়। যাওয়ার সময় দরজা লক করে দেয়।

সন্ধ্যার আগে দরজা লক খোলার শব্দে বুঝলাম সোহান এসেছে। আমি সোফার উপরে বসে বসে টিভি দেখছি। রুমে ঢুকে আমার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ নিজের রুমে ঢুকল।
হাতমুখ ধুয়ে বেরিয়ে এসে বলল,
– জান্নাত খিদে পেয়েছে কিছু বানিয়ে দাও।
টিভির রিমোটটা রেখে রান্নাঘরে ঢুকলাম। শর্টকাট কী বানানো যায় ভাবতে লাগলাম। হঠাৎ খেয়াল আসল গরম গরম সবজি বরা বানিয়ে নিলেই হয়। আমি তো এবাড়ির কাজের লোক। আমার কাজ শুধু স্বামীর সাথে রাত কাটানো আর দিন হলে কামলা দেওয়া। তাদের তো কথা শুনতেই হবে তিনবেলা খাবার দিচ্ছে, জামা কাপড় দিচ্ছে আর কী চাই.? তার বিনিময়ে তারা একটা পার্মানেন্ট ঝি পেল। আমাকে এখন ঝি ছাড়া কিচ্ছু মনে হয় না। শ্বশুর আব্বা বলেছিলেন তাদের বাসায় কাজের লোক আছে তাই নিজেদের তেমন কাজ করতে হয় না কিন্তু আমি আসার পর থেকে আজ অব্দি কোন কাজের লোকের দেখা পেলাম না। এদিকে ভাবতে ভাবতে চোখের পানি আর নাকের পানি একাকার হয়ে গেছে। হাত দিয়ে পানি মুছে আবার কাজ করছি।
সবজি বরা বানানোর পরে গরম গরম চুলা থেকে নামিয়ে সাথে কফি করে রুমে ঢুকলাম। সোহানের সামনে রেখে বললাম,
– খেয়ে নিন গরম গরম সবজি বরা।
– এটা আবার কী জিনিস জীবনেও তো খাইনি.?
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম,
– এটা গরীব লোকদের সন্ধ্যার নাস্তা। বাসায় কিছু না থাকলে ময়দা অথবা আটার সাথে ঘরে থাকা কয়েক প্রকারের সবজি দিয়ে মেখে গরম তেলে ছেড়ে ভাজি। আপনারা বড়লোক মানুষ এসব খাবেন কীভাবে.? আপনাদের সন্ধ্যায় নাস্তা থাকে নুডলস, চিকেন ফ্রাই, ফ্রান্সিস ফ্রাই, কাটলেট, মোগলাই, বার্গার, গ্রীল, নান, কাবাব আরও নাম না জানা অনেক খাবার। যা আমরা চোখে দেখিনি। আপনাদের একদিনের বিল দিয়ে আমাদের একমাসের মাসিক বাজার হয়। জানেন গরীব মানুষদের কত কষ্ট হয়! কতদিন না খেয়ে কষ্ট করেছি। অভাবের সংসার নুন আনতে পানতা ফুরিয়ে যায়।
সোহানের মেজাজ এবার পুরো গরম হয়ে গেছে। রাগে কটমট করতে থাকে। জান্নাত এসব কী শুরু করেছো তুমি সবজি বরা বানিয়ে এনে এত কথা বলছ কেন..? খুব অন্যায় করে ফেলেছি মাফ চাচ্ছি আপনার কাছে আর কখনও নাস্তা খেতে চাইব না।
খাবার রেখে উঠে দরজা খুলে যাওয়ার সময় বললাম,
– কোথায় যাচ্ছেন লিজার কাছে..? কনডম নিয়ে এসেছেন কোনটা..? আমাকে দেখাবেন না.? আর ঐ নিলয়ের কাছে আমাকে একরাতের জন্য পাঠাতে কত নিবেন.? নিলয় কিন্তু হেব্বি দেখতে। খুব স্মার্ট আর
সেক্সি। তা কবে পাঠাবেন আমাকে.? বলুন তো.! আমার যে তর সইছে না।

লিজার নাম শুনে সোহান অবাক হয়ে যায়। বুঝতে পারল না জান্নাত লিজার নামটা কীভাবে জানল.? তবে আন্দাজ করল।
– তুমি আমার মোবাইল ধরেছো?
– কেন ধরা পরে গেছেন..? তাই না! ভাবছেন এসব কথা আমি কীভাবে জানলাম.?
সোহান দাঁত মুখ খিটে একাকার করে চিৎকার দিয়ে বলল, জান্নাত তুমি আমার মোবাইল ধরেছো কেন..?
– সত্যি কথাগুলো বলার জন্য রাগ করেছেন বুঝি! রাগ করে লাভ নেই সত্যিটা কখনও চাপা থাকে না। তাছাড়া আপনি যে সাধু ধোঁয়া তুলশি পাতা নয় সেটা আমিও জানতাম। এতদিন চুপ ছিলাম কেনো জানেন.? আমার কাছে কোন প্রুভ ছিল না। কিন্তু এখন আমার কাছে আছে।
আপনি এতটা নোংরা কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। আপনি লিজার শরীরকে স্পর্শ করে আবার আমার শরীরকে অপবিত্র করেছেন।
আচ্ছা যদি ফ্রিতে মেয়েদের সাথে শুতে পারতেন তবে বিয়ে করলেন কেন..? নাকি বউকে দিয়ে বিজনেস করানোর জন্য। বউলোকেরা বুঝি এভাবেই ধনী হয়! এর জন্য বড়লোকদের দুচোখে দেখতে পারতাম না। আমার বাবা বড়লোক বাপের একমাত্র সন্তান দেখে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিল কিন্তু ছেলের চরিত্র যে এতটা নোংরা সেটা খোঁজ করেনি। অবশ্য খোঁজ করলেও পাওয়া যেতো না টাকা থাকলে কেউ বদনাম করার সাহস পায় না যদি তার এলকায় থাকতে হয়। আপনি বিয়ের আগে কতজন মেয়েদের সাথে এভাবে রাত কাটিয়েছেন.? আমাকে বিয়ে করার পরেই বা কয়জনের ভেতরে গেছেন একটু সঠিকভাবে বলবেন..?

সোহানের পুরো শরীরে আগুন জ্বলছে জান্নাতের কথা শুনে। চোখদুটো দাউ দাউ করে জ্বলছে। মনে হচ্ছে জান্নাতকে এখনি গলা টিপে মেরে ফেলবে।

আমি আবারও বলতে শুরু করলাম, আচ্ছা আপনার এত ক্ষমতা আসে কোথা থেকে.? কতজনকে প্রতিরাতে মন ভরাতে পারবেন? আমি কত পুরুষদের দেখেছি কিন্তু আপনার মতো এত চরিত্রহীন লোক দেখিনি। আপনি চাইলে পিছনে করা পাপ কাজগুলো ছেড়ে দিয়ে তওবা করে ভালো হয়ে যেতে পারতেন কিন্তু না, আপনি তা করেননি কারণ আপনার দম্ভ খুব বেশি। গরীব মানুষকে একদম সহ্য করতে পারেন না। ভেবেছিলাম আমার চেয়ে ডাবল বয়সের ছেলের সাথে বিয়ে হলেও হয়তোবা সে আমাকে পৃথিবীর সমস্ত সুখ দিবে। সবাই বলতো বয়স্ক স্বামীরা নাকি বউ পাগল হয় কিন্তু আমার ধারণা সব ভুল প্রমাণ হলো। জানি না হয়তো এমনটাই ভাগ্যে লেখা ছিল। আমার অপরাধ কোথায় বলুন তো.? আমার সমস্ত চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়ে আপনাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলাম আর আপনি আমার সব স্বপ্নকে দুমড়ে মুছড়ে পানিতে ফেলে ভাসিয়ে দিয়েছেন কাগজের টুকরার মতো করে। আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিলেন কেনো.? আপনি কী মানুষ.? আমি যদি ডাক্তার হতাম তাহলে আপনার রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতাম আপনার শরীরে মানুষের রক্ত আছে কিনা! সকালে যখন ম্যাসেজগুলো পড়ছিলাম আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল মাথার উপরে পুরো আকাশটা ভেঙে পরেছিল। যার ভার আমি নিতে পারছিলাম না। আপনারা আমাকে এবং আমার পরিবারকে এভাবে ঠকাবেন ভাবতে পারিনি।
বাবা যদি এরচেয়ে আমাকে দিন আনে দিন খায় এমন লোকের সাথে বিয়ে দিত তবুও মনে শান্তি পেতাম। আর না হলে সারাজীবন কুমারী হয়ে বাবার বাসায় রেখে দিত। আপনার মতো নারী ললুপ ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার চেয়ে কেটে নদীর জলে ভাসিয়ে দিলেও বোধহয় ভালো হতো।

অনেকক্ষণ নিজের রাগকে কন্টোল করল সোহান। সোহান বিছানা দিয়ে নেমে আমার পাশে এসে হাত ধরে টেনে নিচে ফেলে দিল। নিচে ফেলে দেয়ায় পিঠের মেরুদন্ডে টান লাগে। ও মা গো বলে চিৎকার দিয়ে উঠি।

এদিকে সোহান দাঁত মুখ খিটে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
আসার সময় রুমের এদিকে ওদিকে ভালো করে তাকায় কিন্তু হাতের কাছে কিছু না পাওয়াতে বিছানার উপরে বেল্টের দিকে নজর পরল।
বেল্টটা হাতে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসল। আমি বুঝতে পারলাম এখন একটা অঘটন ঘটতে যাচ্ছে। বাসায় কেউ না থাকাতে সুযোগ পেল সোহান।
– তোর এত সাহস হয় কী করে..? আমার ফোনে হাত দিয়েছিস কেন..? আমি পুরুষ মানুষ একটা না দশটা মেয়ের সাথে রাত কাটাব তাতে তোর বাপের কী.? তুই তোর সমস্ত চাহিদা পেলেই তো হয় তারপরও আমার ব্যাপার নিয়ে এত লাফালাফি করিস কেন..? কথায় তো আছে ছোটলোকদের কপালে সুখ সয় না তাই তো সব সময় এটা নিয়ে ঝামেলা করিস। তোর নিজের দিকে খেয়াল করেছিস তোর কী আছে..? তোর বাপ তো একটা ফকির। মেয়েকে আমার কাঁধে তুলে দিয়েই খালাশ হয়ে গেছেন আর কোন দ্বায়িত্ব নেই।
এই বলে সোহান বেল্ট দিয়ে পিঠে আঘাত করল।

– আমার বাবা গরিব হতে পারে ঠিকি তাই বলে আমি কী আপনার দেওয়া কোন কিছু পরে আছি.? দেখেন হাতের চুড়িও খুলে ফেলেছি। নাকফুলটা শুধু বাকী আছে। ওটাও খুলে দিয়ে যাব যেদিন আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে এবাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।

আমার কথায় সোহানের মেজাজ আরও গরম হয়ে যায়। তারপর ক্ষেপে গিয়ে আবারও বেল্ট দিয়ে বারি শুরু করে। ব্যাথায় শরীর জ্বলতে লাগল তবুও উফফ শব্দটা পর্যন্ত করিনি।
#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_১৮

সোহান বেল্টটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে চুল ধরে বলল,
– শোন তোকে বিয়ে করেছি বলে এটা ভাবিস না যে তোর কথামতো আমি উঠব আর বসব। তোদের মতো ফকিরন্নির মেয়েরা আমার পকেটে থাকে। তোকে টার্চ করতে গেলে তোর এত সমস্যা হয় কেন.? তোর শরীরটা কী সোনা দিয়ে বাঁধানো নাকি যে ধরলেও ক্ষয় হয়ে যাবে। বিয়ে হয়েছে একবছরও হয়নি তার ভেতরে মুখ চালানো শুরু করে দিয়েছিস। তোর মুখ ভেঙে দিব। বিয়ের পরে শুনেছি তো গ্রামের ছেলেদের সাথে মাখামাখি করেছিস। আমি মনে হয় কোন কিছু বুঝি না। তুই কী নিজেকে ভার্জিন মনে করিস..? কয়জন ছেলের সাথে শুয়ে এসেছিস তাই বল আমারটার হিসেব না হয় পরে দিব। তোদের মতো গ্রামের মেয়েদের আমার চেনা আছে। টাকার জন্য সব করতে পারে।

এবার সোহানের কথায় আমার ভীষণ রাগ উঠছে। আপনি এত নিচ ভাবতেও অবাক লাগছে। আজকে নিজের চরিত্র ঢাকার জন্য আমাকে কলঙ্কিনি বানাচ্ছেন। হ্যাঁ আমি একশ ছেলের সাথে শুয়েছি। আমি তো আপনাকে বলিনি আমাকে বিয়ে করেন তবুও গায়ে পরে বিয়েটা করলেন এখন আবার ঝগড়া করছেন? সমস্যা কী আপনার.? বিয়ে করে তো প্রতিরাতেই ইচ্ছামতো ভোগ করেছেন। এমন কোন রাত নেই যে আপনি শান্ত ছিলেন। তাহলে এত বড় বড় কথা আসে কোথা থেকে..? আমরা গরিব হতে পারি কিন্তু আপনার মতো এত ছোটলোক না। আমাকে ছোটলোক বলার আগে নিজে কী সেটা একবার ভাবুন তারপর না হয় আমাকে বলবেন।

সোহান কথা বলার মাঝে গলটা উপরের দিকে চেপে ধরে চাপ দিয়ে বলল,
– তোকে এত করে বলার পরেও মুখ চালাচ্ছিস। তোর গলাটা চেপে ধরি এখানেই দম বন্ধ হয়ে যাবে। কথাটা বলে গলাটা ছেড়ে দিল।

আমি সোহানের দিকে তাকালাম।
সোহানের চোখ লাল হয়ে আছে। তারপর সোহান দেয়ালের সাথে নিজের হাতটাকে বারি মারে।

রাত তখন ৪ টা বাজে ওদের রুমে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
সোহান রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
সমস্ত শরীর ব্যথায় জ্বলছে। কোথাও হাত দিতে পারছি না। ওয়াশরুমে উঠে যাওয়ার মতো গায়ে কোন শক্তি নেই।

অনেকক্ষণ পরে ধীরে ধীরে বিছানা দিয়ে নেমে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। ভালো করে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে এসে টানটান হয়ে বিছানার উপরে শুয়ে পরলাম। চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। বারবার তন্দ্রা দিচ্ছে। শুয়ে শুয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম সোহানের সংসার আর করব না। ওর মতো লোকের সাথে এক ছাদের নিচে থাকা সম্ভব না। এতদিন অনেক ধৈর্য ধরেছি দেখি ভালো হয় কিনা! কিন্তু না সোহান ভালো হওয়া তো দূরের কথা উল্টো আরও গায়ে হাত তুলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তার চরিত্রকে। সকালে বাবাকে কল করে সবকিছু খুলে বলতে হবে।

ড্রইং রুমে সোফার পাশে হাত পা মেলে দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে সোহান।
মাথার ভেতরে সবকিছু ঘুরছে। এভাবে বসে থেকে বাকী রাত পার করে দিল সোহান। সকাল হওয়ার একটু আগে চোখদুটো লেগে যায়।

হঠাৎ করে সোহান চোখ খুলে তাকিয়ে নিজেকে সোফার পাশে আবিষ্কার করল। হঠাৎ তার খেয়ালে আসল রাতের কথাগুলো। তার মানে সারারাত এখানে ছিলাম। বসা ছেড়ে উঠে তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে রুমে ঢুকল সোহান। সোহান আসলে আমার চোখ তার দিকে পরতেই সাথে সাথে চোখদুটো নামিয়ে নিলাম। এদিকে শরীরে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। সোহান কাছে এসে হাত ধরলে ছিটানি মেরে বললাম,
– আমার গায়ে একদম হাত দিবেন না। দূরে থাকেন আমার কাছ থেকে। আমি আপনার সংসার করব না।
এতদিন অনেক সহ্য করেছি আর না।

– সংসার করব না বললেই হবে নাকি! আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না।
– আমি ডিভোর্স চাই।
– কীসের ডিভোর্স.? আমি কোন ডিভোর্স দিতে পারব না। আমার ঘর থেকে কোথাও যেতে পারবে না।
– আমাকে আপনার ঘরে রেখে তারপর নিলয়ের বিছানায় পাঠিয়ে দিবেন এমন প্লান করেছেন তাই না! আমি বেঁচে থাকতে এমনটা হতে দিব না। আমি কাল সকালের বাসে বাড়ি চলে যাবো।

জান্নাতের কথা শুনে সোহান আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা। জান্নাত তোমার মাথা ঠিকাছে.? তুমি আমার কাছ থেকে যেতে চাইলে জীবিত যেতে পারবে না।
– কী করবেন.? মেরে ফেলবেন.? আমাকে মেরে ফেলুন তাইলে আমার চেয়ে আর কেউ খুশি হবে না। আপনার মতো জানোয়ার স্বামীর সাথে সংসার করার চেয়ে মরা অনেক ভালো।
– এতটা সোজা নয় মরে যাওয়া।
– আপনার মোবাইলটা দিন আমি বাবাকে কল করব।
– ফাজলামি করছো কেন..? তুমি আমার বিয়ে করা বউ তাই আমি যা বলব তাই শুনতে হবে।
– হাসালেন আপনি। আমি আপনার বিয়ে করার বউ না আমি হলাম আপনার ভোগের সামগ্রী। আমাকে বিয়ে করেছেন শুধুমাত্র পুরুষত্ব মেটানোর জন্য এছাড়া অন্য কোন কারণ নেই। যে স্বামী তার বউকে বাসায় একা পেয়ে জানোয়ারের মতো গায়ে হাত তুলতে পারে সে স্বামী নামের কলঙ্গ। ঘৃণা লাগছে আপনার মুখ দেখতে। আপনার ঐ মুখটা আমি আর দেখতে চাই না। দয়া করে আমাকে একা থাকতে দিন।
সোহান রাগে ফোঁসাতে ফোঁসাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

সোহান গিয়ে সোফার উপরে শুয়ে পরল। হঠাৎ তার মোবাইলটা বাজতে লাগল। মেজাজ গরম করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে নিলয়ের নাম্বারটা দেখে আরও ক্ষেপে যায় সোহান। কয়েকবার বাজার পরে রিসিভ করে বলল,
– হ্যাঁ নিলয় বল।
– সোহান তুই তো কোন কিছু বললি না ভাবির ব্যাপারটার বিষয়ে। তোর কী অন্য চিন্তাভাবনা আছে নাকি! শোন যতই লুকাচুরি করিস না কেন আমি কিন্তু বিন্দুমাত্র ছাড় দিব না।
– নিলয় তোর সাথে আমি দেখা করতে চাই। কালকে দেখা করতে পারবি.? জান্নাতের বিষয়ে কথা বলব।
– ঠিকাছে কালকে এরিনা হোটলে আসবি সন্ধ্যা ৭ টার ভিতরে।
– ঠিকাছে।
কলটা কেটে মোবাইলটা ছুঁরে ফেলে দিয়ে ঝিম দিয়ে কিছুক্ষণ নিচু করে ভাবতে লাগল সোহান।

নোটঃ ভীষণ ব্যস্ত থাকায় ছোট হয়ে গেল। কালকে বড় করে দিব বেঁচে থাকলে ইনশাআল্লাহ।

চলবে…….
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here