স্বামী পর্ব -১৮

###__স্বামী__###
পর্ব-১৮
Nirzana(Tanima_Anam)

মেঝেতে উবু হয়ে পরে আছে অনু।
সারা শরীরে মারের দাগ স্পষ্ট। জায়গায় জায়গায় অনেকটা গভীর ভাবে কালো হয়ে আছে আবার কিছু কিছু জায়গায় রক্ত বেরিয়ে জমে গেছে।।অনুর হালকা গোলাপী সাড়িটাতে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে।।
অনুর গলাটা শুকিয়ে গেছে কিন্তু উঠে দাড়ানোর মতো জোড় নেই….

একটু আগেই যে নির্ঝর তাকে পড়নের বেল্ট দিয়ে ইচ্ছে মতো পিটিয়েছে । তারই চিহ্ন বহন করছে শরীরের এই দাগগুলো….!!!

কিছুক্ষন আগে….

সপিংমল থেকে বেরিয়ে নির্ঝর অনুকে ধাক্কা মেরে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।অনু বার বার জিঙ্গেস করছে
-কি হয়েছে এমন করছেন কেন??
-(…)
-কি হলো বলবেন তো???

নির্ঝর শুধু একবার অনুর দিকে চোখ পাকিয়ে ছিলো।নির্ঝরের চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।
নির্ঝরের এমন রূপ দেখতে মোটেও অভ্যস্থ নয় অনু।কেমন জানি ভয় ভয় লাগছিলো।

সারা রাস্তা আর একটিও কথা বলেনি অনু।নির্ঝরও চুপ

নির্ঝরের গাড়ি সোজা গিয়ে থামে বাড়ির দরজার সামনে….
নির্ঝর গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে অনুর হাত ধরে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যায়…
-আহ নির্ঝর লাগছে!! কি হয়েছে বলবেন তো এমন টানাটানি কেন করছেন???

নির্ঝর অনুকে ঘরে এনে সোজা দাড় করিয়ে একটা থাপ্পর মেরে দেয়।অনু ছিটকে গিয়ে মেঝেতে পরে।

-তোর সাহস কি করে হয় আমার ফোন থেকে সায়নকে ফোন করিস
(ফোনটা আছাড় মেরে)

অনু মুর্তির মতো বসে আছে…
-খুব শখ না সায়নের সাথে দেখা কারার?? খুব ইচ্ছে না পুরানো প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার??

-কি করেছি আমি??
-ঠকিয়েছিস আমায়…..
বেঈমান কোথাকার এতো ভালোবাসলাম অথচ তোর গায়েয় লাগে না না??

কথা বলতে বলতে নির্ঝর কোমড় থেকে বেল্টটা খুলে অনুকে পেটাতে থাকে।
“অনু না নির্ঝরের কথার কোনো মানে খুজে পাচ্ছে আর না রাগের”

নির্ঝর অনুকে ইচ্ছে মতো আঘাত করছে অনু প্রথমে চিৎকার করলেও পরে জড়সড় হয়ে গেছে।।।

এই নির্ঝরকে তার বিয়ের প্রথম দিনের নির্ঝর বলে মনে হচ্ছে যে
কি তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে….

অনুর চোখ দিয়ে পানি পরছে…

“এ কেমন ভালোবাসা??
ভালোবাসা বুঝি এমন হয়??
ভালোবাসা কি এতো হিংস্র হয়??
যখন যা ইচ্ছে করা যায়??
যখন খুশি কাছে ডাকা যায় আবার যখন খুশি দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়।যখন খুশি আদর করা যায় যখন খুশি ব্যাথ্যা দেওয়া যায়??এটাই কি ভালোবাসা।এমন ভালোবাসাই কি তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছে নির্ঝর নামের এই লোকটি??

কি জানি….!!অনুর মাথা ঘুরছে একসময় অনু গ্ঞান হারিয়ে পরে যায়।তারপর…

“ভালোবাসার এরকম মানে অনুর জানা ছিলো না তবে নির্ঝর তাকে ভালোবাসার অনেক রকম স্বাদ বুঝিয়ে দিয়েছে….”

নির্ঝরের এমন নির্মম আচরণের কারণ অনুর জানা নেই…..!!

তবে নির্ঝরের করা প্রত্যেকটা আঘাত সে বেশ ভালোভাবেই হজম করেছে….!!!করতে বাধ্য সে এ কদিনে যে মনের বেশ কিছু অংশ সে নির্ঝর নামের এই লোকটাকে দিয়ে দিয়েছে।




বারান্দায় গিটার হাতে দাড়িয়ে আছে সায়ন….
কতো দিন পর দেশে ফিরছে সে।
অনুর জন্য বুকটা বেশ ছটপট করছে।
মেয়েটার মাঝে বড্ড মায়া।এ মায়া কাটানোর সাধ্য তার নেই।
ভুল করেই সে ভুল করে ফেলেছে।

ছলনায় পরে হারিয়ে ফেলেছে সে তার অনুকে।
“কেন সে সেদিন অনুকে প্রত্যাখ্যান করলো কেন সেদিন অনুকে নিয়ে পালিয়ে গেলো না দূরে?কেন সেদিন হুট করেই দেশ ছেড়ে চলে গেল সে??কেন কেন কেন??

কথাগুলো বলতে বলতে সায়ন দেয়ালে কয়েকটা আঘাত…
এখন এসব ভেবে কি লাভ।যা হারানোর সব তো সে হারিয়েই ফেলেছে।
অনু একবার দেখার অধিকারও তার নেই এখন শুধু দেখা কেন অনুকে নাম ধরে ডাকার অধিকারও নেই তার।।

সপিং মলে অনুর সাথে প্রায় দেখা হয়েই যাচ্ছিলো।সায়ন ঐ ক্যাফের দরজার সামনা সামনি বসে ছিলো।অনুও আসছিলো।
কিন্তু সায়ন অনুর নাম ধরে ডাকতে যাবে তার আগেই একটা লোক এসে অনুকে টেনতে টানতে নিয়ে গেল।বোধয় এই লোকটায় অনুর স্বামী……..নির্ঝর চৌধুরী।।

হ্যা…!!
সব কিছুর জন্য দায়ী এই নির্ঝর চৌধূরী।

-তোকে কখনো ক্ষমা করবো না আমি নির্ঝর কখনো না

নির্ঝরের ঘরে

অনু দিত্বীয়বার যখন চোখ খোলে তখন সে বিছানায়।আর নির্ঝর ঠিক তার পাশে বসে আছে।অনু একটু নড়তেই বুঝতে পারে নির্ঝর তার হাত শক্ত করে ধরে আছে।।।

অনু অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠে…
-পানি খাবো

নির্ঝর দ্রুত গিয়ে পানি এনে দেয়।অনু একটু পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে

অনু একদৃষ্টিতে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে..
নির্ঝর মাথা নিচু করে বসে আছে!!
-মি.চৌধূরী
-হুম্ম
-আমাকে বাবার কাছে রেখে আসুন!!
-অনু
-আপনি খুব বাজে একটা লোক।।।
-অনু আমি তোমায় ভালোবাসি
-কিন্তু আমি বাসি না!!
-হ্যা বাসবেই না তো তুমি তো শুধু ঐ সায়নকেই ভালোবাসবে…..!!!
-(…..)
-তুমি ভালোবাসো বা না বাসো তুমি শুধু আমার!!

অনু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে।
নির্ঝরের গাল বেয়ে দুফোটা পানি অনুর হাতে পরলো….

“ওনি কি কাঁদছেন??কিন্তু কেন??”

চলবে….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here