#হারিয়ে_গেলে_খুঁজে_নিও_আমায়
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-শেষ পর্ব
রিধির আর রুম থেকে বের হওয়া হয়নি।এরমাঝে বাতাসা বারকয়েক এসেছে,দরজা নিয়ে ঘুটঘুট করেছে,তেমন লাভ বিশেষ হয়নি।রিধি জবাবও দেয়নি।দরজাও খুলে নি।সন্ধা হলে,চারপাশে আঁধার নামলে রিধি এবার দরজাটা খুলে।চারপাশে তাকিয়ে দেখে বাসা ফাঁকা।তেমন লোকজন নেই।বুঝতে বেগ পেতে হয়নি সব আত্মীয়রা যে চলে গিয়েছে।রিধি আস্তে পা ফেলে নিচে আসতে থাকে তার মায়ের খোঁজে।কয়েকটা রুমে মাকে খুঁজেছে পায়নি।কিচেনের দিকে যায় সেখানেও পায়নি।অতঃপর বাইরের দিকে যাবে ঠিক তখন সামনে বাতাসা এসে দাঁড়ায়।বাতাসার হাবভাবে বুঝা যাচ্ছে সে রিধির উপর খুব রেগল আছে।নাঁকের পাটা ফুলিয়ে বলে,
“তুই না আসলে…কি বলবো আর!এত বড় আয়োজনে কেউ এরকমভাবে থাকে!সত্যি করে বলতো তোর হয়েছে টা কি?সকালে তো সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল!টুম্পা ভাইয়াকে প্রপোজ করবে ঠিক সেই মুহূর্তে এরকম করলি কেনো?”
রিধি প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করে বলে,
“মা কোথায়?মাকে দেখেছিস?”
“জানি না।আগে আমার কথার জবাব দে!”
“মাথাব্যথা করছে।”
“সবসময়ই তো তোর মাথাব্যথা করে!কবেই একটু মাথাটা ঠিক থাকে!যাইহোক,টুম্পার ব্যাপারে জানিস কি হয়েছে পরে?”
এবার রিধি কিছুটা কৌতূহলী মনে চুপ করে যায় বাতাসার কথা শুনতে।বাতাসা বলে,
“ভাইয়াতো ওর দেওয়া গোলাপ নিয়েছে!”
রিধি এবার চমকানো চোখে বাতাসার দিকে তাকায়।বাতাসা আবার বলে,
“বুঝলি প্রেমটা মনে হয় হয়েই গেছে!টুম্পার থেকে ট্রিট চাইবি কিন্তু।ঝাপড়িয়া ধরবি ওকে ট্রিটের জন্যে!এতদিনে স্বপ্নে মানুষটি আজ সত্যি সত্যি নিজের করে ফেলো ট্রিট দিবে না!কি বলিস,রিধি?”
রিধির এবার চরম রকমের রাগ উঠে যায় বাতাসার উপর।মন চায় কষিয়প গালে একটা চড় বসিয়ে দিতে।নিজের দুর্বলতা প্রকাশ পাবে ভেবে পরক্ষণে আবার সামলিয়ে নেয়।তারপর বলে,
“মা কোথায় তা বল!”
“দেখলাম তো খালামণির সাথে কথা বলতে বলতে ছাদে যাচ্ছে..।”
“ছাদ” শুনামাত্রই রিধি আর একটুও দাঁড়ালো না।দ্রুত পায়ে সেদিকে ছুটে চললো।ছাদে যেতেই মাকে দেখলো।গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“মা আমি বাসায় চলে যাবো।”
পাশে রিধির মেঝো খালা।বলে উঠে,
“এ মেয়ে বলে কি!বাসায় যাবে মানে?”
রিধির মাও তাল মিলিয়ে,
“কি বলতেছিস রিধি এসব!”
“তুমি যাবে?তুমি যদি না যাও আমি একাই যাবো।আমি চিনিতো।দিগন্ত বাসে যাত্রাবাড়ি যাবো,তারপর সেখান থেকে কুমিল্লার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বাসের টিকিট কেঁটে বাসায় চলে যাবো।টেনশন নিও না।আমি যেতে পারবো।”
“এখন কয়টা বাজে টাইম দেখেছিস!তুই হঠাৎ বাসায় যেতে চাচ্ছিস মানে কি রিধি!”
বলে রেগে উঠলেন রিধির মা।রিধির খালামণি পাশ থেকে,
“এখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে মা?”
রিধি এবার বুঝলো সে বোকার মতন তার মার সাথে কথা বলেছে এতক্ষণে।একটা বুদ্ধি খাটালেই তো হয়ে যেত।কারণ ছাড়া কিছু বললে তো আর যেতে দেবে না।তাই মনে মনে মিথ্যে কথা বানিয়ে বলে উঠলো,
“ওহ যে কারণে যাচ্ছি…!মা?তোমাকে কিছুদিন আগে বললাম না আমার একটা আইকিউ পরিক্ষা আছে?ওইটার ডেট স্যার নাকি দুই তিনদিনের মধ্যে দিয়ে দিবে।প্রিয়া কল করে জানালো খানিকক্ষণ আগে।ভালো একটা প্রিপারেশন দরকার মা।আমি যাচ্ছি!”
বলে আর দাঁড়ালো না রিধি।রুমে এসে ব্যাগে ঝটপট জামাকাপড় ঢুকিয়ে নিচে নেমে চলে আসতে পেছনে টুম্পা এবং বাতাসা।ওরা রিধিকে হাতে ব্যাগ দেখে,
“রিধি?এই রিধি?এই সন্ধে কই যাচ্ছিস!”
রিধি কোনো কথা বললো না!বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় আসতে চোখজোড়া টলমল করে উঠলো।একটা সি.এন.জি পেয়ে গেল।যাত্রাবাড়ী যাবে বলে উঠে বসলো।গতকাল নিলয় ভাইয়া দুই হাজার টাকা বখশিশ দিয়েছিল।সেটাই এখন রিধির কাছে আছে।আর তা দিয়েই বাসায় চলে যাবে।রিধির চোখের পানি ফেলছে।নিজের উপর নিজের খুব ঘেন্না লাগতেছে তার,কেনো নিহাল ভাইয়াকে এতটা ভালোবাসতে গেলো!গোপনে ভালোবাসাটার উত্তেজনাটা সেদিন বিয়ের দিন কেনো আরো বাড়িয়ে দিয়ে এখন ডানা মেলা পাখির মতন বনে ছেড়ে দিলো!রাগ হচ্ছে রিধির।ভীষণ রাগ হচ্ছে নিজের উপর।সি.এন.জি ওয়ালা এমন সময় বলে উঠলো,
“যাত্রাবাড়ী এসেছি। ”
রিধি নেমে গেলো।তারপর সিনজিওয়ালাকে ভাড়াটা পুষিয়ে দিয়ে কুমিল্লায় যাওয়া বাসগুলোর বাসস্ট্যান্ডের খোঁজ করতে থাকলো।খোঁজ করতে থাকলো মানুষদের থেকে।এ নিয়ে ঢাকা মোট দুইবার এসেছে।প্রথম বার ট্রেনে এসেছি।আর এবার বাসে।একবার আসলেই তো সব মনে থাকে না?আর ঢাকা তো এমন জায়গা না যে একবার দেখলাম সব স্থানই গড়গড়া মুখস্থ হয়ে যাবে।অবশেষে কুমিল্লার বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছালো!টিকিট কাঁটতে গেলো।বাস আছে রাত নয়টার,আরেকটা এগোরটার।এরমাঝে আর কোনো বাস নেই।তারমানে আরো দুই ঘন্টার মতন রিধির অপেক্ষা করতে হবে।রিধি ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসে।অপেক্ষা করতে থাকে।একঘন্টা শেষ হয়।তারপর দেখতে দেখতে পরের ঘন্টাও চলে যায়।বাস এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র।রিধি ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।এক পা সামনে দিয়ে যেই আরেক পা দিবে সেই পা আর মাটিতে পড়লো না!পেছন থেকে কেউ হাত ধরে আছে।রিধি পেছনে ঘুরে তাকালো।তাকিয়ে নিহাল ভাইয়া!চোখমুখ স্পষ্ট খিটখিটে দেখা যাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছে রেগে আছে
সে।রিধি হাসির চেষ্টা করে,
“আপনি ভাইয়া?”
“বাসায় চল!”
আবার হাসলো রিধি।বললো,
“বাসায় কেনো?”
“পরিক্ষা তোর সত্যিই আছে?”
“হ্যাঁ।” ইতস্তত মনে বললো রিধি।নিহাল এবার যেনো আরে রেগে গেল!বললো,
“সত্যি বলছিস তো?”
“মিথ্যে বলবো কেনো?মিথ্যে কি আমি কখনো বলি?”
সাথে সাথে নিহাল রিধির গালে খুব জোরে একটা চড় মারে!যার আওয়াজে আশপাশে থাকা মানুষগুলোর দৃষ্টিও আওড়ায়।নিহাল রুদ্ধ এবং আওয়াস্ত কন্ঠে বলে উঠে,
“আমাকে মিথ্যে বলা শেখাচ্ছিস!আমাকে!”
বলে রিধির সামনে একটা ফোন তুলে ধরে।বলে,
“এইটা কার ফোন দেখতো?”
রিধির চোখে পানি।ঝাপসা দেখতেছে সব।আর ঝাপসা চোখেই ধরে ফেলতে পারলো এটা ওর ফোন।বলতে ইচ্ছে হলো,আমার ফোন আপনার হাতে কীভাবে!রিধির মনোঃকথা নিহালই বলে উঠলো,
“ফোন রেখে চলে যাচ্ছিস, তাও একা একটা মেয়ে এত রাতে!এতটা সেন্স তোর মাঝে?কলেজে পড়িস?ছোট্ট বাচ্চাদের মতন জেদ ধরিস!আর পরিক্ষা তোর!প্রিয়া কল করেছে?আমিতো প্রিয়ার সাথে তোর ফোন দিয়েই কথা বলে নিলাম।আর সিউর হলাম সব তোর বানানো কথা!ভাগ্যিস মনের ভুলে আর যেভাবেই হোক ফোনটা রেখে যেয়েও ভালো কাজ করেছিস!”
রিধি চুপ করে রইলো!নিহাল ত্যক্ত-বিরক্ততায় দুইহাতে পুরো মুখে হাত বুলালো।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তারপর বললো,
“তা এখন কি করতে চাচ্ছিস!বাসায় যাইবি না?”
“আপনি আমার কে!যে আপনার বাসায় যাবো!কি হোন আপনি?!”
রিধির হঠাৎ এমন উদ্ভট কথা শুনে ভ্রু যুগল কুচকালো নিহাল।
“মানে?”
”
রিধি ঢোকর গিললো এবার।বললো,
“আমি কুমিল্লায় যাবো!”
“সত্যিই যাবি?”
“হ্যাঁ..!”
“তবে যা..!আর শোন এই যদি কুমিল্লায় ব্যাক করিস তাহলে কখনো আর ভালোবাসার দাবী নিয়ে আমার সামনে আসতে পারবি না।আমিও আসবো না!”
সাথে সাথে রিধির ব্যাগ্রতা থেমে গেলো।নির্লিপ্ত চোখে নিহালের দিকে তাকালো।অতঃপর মুখে বৈচিত্র্যময় ভঙ্গি টেনে এবার বললো,
“ভালোবাসার দাবী?আপনার ভালোবাসা তো…!”
এতটুকু বলে থেমে গেলো।পাশে তাকিয়ে ড্রাইভার,
“আপা যাবেন না?বাস তো ছেড়ে দেবে এখন!সময় নাই।জলদি উঠেন!”
নিহাল বললো,
“রিধি?”
বলে এগিয়ে এলো আরো কাছে নিহাল।আস্তে কন্ঠে বললো,
“আই লাভ ইউ!টুম্পার সাথে আমার কোনো প্রেম নেই।বাতাসা সব মজা করে বলেছে তোকে খেঁপানোর জন্যে।টুম্পা যখন আমাকে ফুল দিবে আর তুই রুমে দৌড়ে চলে গিয়ে আের হোসনি ও বুঝে নিয়েছে সব!”
কাঁপা এবং উষ্ণ জড়ানো কন্ঠে বললো রিধি,
“কি বুঝে নিয়েছে!”
“আমি তোকে ভালোবাসিও!তুইও!”
“মিথ্যেকথা!”
এ বলে রিধি এক পা পিছিয়ে যায়।রিধি বলে উঠে,
“তাহলে এতদিন চেপে রেখেছেন কেন!আর চেপে রেখে রেখে আমাকে কষ্ট দিলেন!বাহ্ আমি প্রকাশ করার পর বলতে এসেছেন ভালোবাসি?নিহাল ভাই এটা আপনার মুখে মানায় না!”
“তুই যেমন চেপে রেখে একা একা কষ্ট পেয়েছিস,ঠিক আমিও তাই।বিয়ের দিনের কথা মনপ আছে?কেনো সবাইকে বারণ না করে শুধু তোকে করলাম!রিধি তোকে আমি ভালোবাসি।তুই একান্তই আমার ব্যক্তিগত সম্পদ!অন্যকারো না!অন্যকোনো ছেলে তোর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাবে তা আমি চাই না।আর আজকক শাড়ি পড়েছিস,ফ্রেন্ডসদের সাথে কথা বলার মাঝে কতবার যে তাকালাম ইয়ত্তা নেই।লাল খয়েরী শাড়ি,ঠোঁটে লাল খয়েরী লিপস্টিক।আর হাতে লাল রেশমি চুড়ি দিলে আরো বেশ মানাতো।
তবে,আমিতো খুব কনফিউজডে ছিলাম কারো সাথে তোর আবার সম্পর্ক আছে কি না।এত সুন্দরী মেয়ে।রিলেশন না থাকারও অবকাশ নাই।”
আবারো পাশ থেকে বাসের সুপারিন্টেন্ডেন্ট বলে উঠেন,
“আপা?আপনার বাস চলে গেছে!”
রিধি পেছনে তাকালো তাড়াতাড়ি।নিহাল হেসে উঠলো এবার।রিধিও কেনজানি নিহালের দিকে তাকিয়ে আর হাসিটা থামিয়ে রাখতে পারলো না!নিহাল বললো,
“আমার সাথে চল এবার!”
——————————————
বাসায় আসার পর সবাই রিধিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলো।রিধি কারো উত্তর দিলো না।সবার কথার মাঝে বাতাসার মুখের দিকে তাকালো একফোঁড়।বাতাসা ভ্রু কুঁচকে বলতে থাকলো,
“কেমন দিলাম?”
রিধি হেসে উঠলো।আর মনে মনে বললো,এই পাজি মেয়েটার জন্যে সব হলো!অবশ্যি ভালোও হয়েছে, নিহাল ভাইয়ার ভালোবাসাটাও প্রকাশ পেলো আমার প্রতি।ধন্যবাদ বাতাসা পাখি!…
সমাপ্তি।
(