#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-২০
কী মজা, কী মজা মামাই মুসু আন্টিকে আদর করছে, পাপ্পি দিচ্ছে।
সুপ্তির খিলখিল করে হাসি আর হাত তালির আওয়াজ শুনে মুসকান ছিঁটকে দূরে সরে গেলো ইমনের থেকে। লজ্জায় তাঁর পুরো শরীর অবশ হওয়ার উপক্রম। ইমন সুপ্তিকে একবার আরেকবার মুসকানকে দেখে অসহায় ভঙ্গিতে চেয়ে হালকা কেশে ওঠলো। সুপ্তি আর এক মূহুর্ত দেরী না করে দৌড়ে নিচে চলে গেলো আর বলতে লাগলো কি মজা, কি মজা মামাই মুসু আন্টি কে আদর করছে,,,চুমু খাচ্ছে।
দিহান, তাহিয়া বেগম আর তিন্নি বসে আছে।
সায়রী রান্নাঘরে আছে বুয়ার সাথে হঠাৎ সুপ্তি দৌড়ে এসে দিহানের কোলে চেপে বসলো।
বাবাই, বাবাই জানো মামাই মুসু আন্টি কে আদর করছে আর এইভাবে চুমু খাচ্ছে বলেই ইমনের মতো করেই দিহানকে চুমু দিলো কপালে,গালে।আর খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
তিন্নি চোখ বড় বড় করে চেয়ে এক ঢোক গিললো। লজ্জায় শেষ, তাহিয়া বেগম অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো সুপ্তির কথা শুনে। প্রথমে ভাবলো বাচ্চা মানুষ আবার ভাবলো নাহ বাচ্চারা তো মিথ্যে বলে না। এই মুসুটা আবার কে??
,
মুসকান নিচে আসতেই সবাইকে দেখে সালাম দিয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে নিলো অমনি সুপ্তি বললো মুসু আন্টি তুমি আজ অনেক হ্যাপি,,, মামাই তোমায় কত্তো ভালোবাসা দিলো হিহিহি।
মুসকান লজ্জায় দ্রুত রান্নাঘরে চলে গেলো।
দিহান সুপ্তি কে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
জোর পূর্বক হেসে মায়ের দিকে তাকালো।
তাহিয়া বেগম ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে, তিন্নি বেশ অস্বস্তিতে ভুগছে মা ভাইয়ের সামনে এসব কথা শুনে।
দিহান গলা খাকারি দিয়ে বললো মা মানে হয়েছে কি,,,
ওর নাম মুসকান। ইমনের হবু বউ।
তাহিয়া সহ তিন্নি দুজনেই হকচকিয়ে গেলো।
–হবু বউ মানে মেয়েটা তো ইমনের থেকে বেশ ছোট স্কুলে পড়ে মনে হচ্ছে।
–আরে না কি বলছো এবার তিন্নির সাথেই।
–তবুও ও তো ছোট আর এর সাথে ইমন। ইমন ওকে কিভাবে চেনে?
–সব বলবো মা আগে তুমি সায়রীকে ম্যানেজ করো প্লিজ।
–সে জন্যই তো এসেছি বাবা তুই চিন্তা করিস না।
তিন্নি যা তো সায়রী কে নিয়ে আয় এখানে।
,
রাত দশটা ছুঁই ছুঁই রাতের খাবাড় খেয়ে সায়রী ছাদে হাঁটাহাটি করছে। আর ভাবছে বিষাক্ত অতীতের সেই দিনগুলোর কথা হঠাৎ ই ফোনটা বেজে ওঠলো রিসিভ করতেই দিহান বললো কি করছিস??
রাত করে ছাদে হাটাহাটি না করে রুমে যা ঠান্ডা লেগে যাবে।
–আমি কি বাচ্চা নাকি আমার ভালো টা আমি বুঝি তোকে ভাবতে হবে না।
–তুই তো বাচ্চাই তুই এক বাচ্চার মা বলে কি মাথা কিনে নিয়েছিস নাকি?? এখন এক বাচ্চার মা কদিন পর আরেকটা বাচ্চার মা হবি সুপ্তিও ওর ভাই বোন পেয়ে অনেক হ্যাপি হবে। তোর ঘরভর্তি ছেলে মেয়ে হলেও তুই আমার কাছে বাচ্চাই থেকে যাবি বুঝলি।
সায়রী খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো। কানের পিঠে চুল গুজে মলিন হাসলো।
–বাহ কতোদিন পর এই মিষ্টি হাসিটা দেখছিরে,,,
সায়রী হকচকিয়ে গেলো।
নিচে চাইতেই ল্যামপোস্টের আলোতে দিহানকে দেখতে পেলো কালো জ্যাকেট, সাদা প্যান্ট পড়া একহাত পকেটে রাখা আরেক হাতে ফোন ধরে আছে এক গাল হেসে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে।
–এই বয়সে এসে এতো টা এমন মানায় না দিহান বাড়ি যা।
–এই বুড়ি প্রেম,ভালোবাসার কি বয়স আছে নাকি। ইমন আর মুসকান কে দেখছিস না।
–কিহ,তুই আমাকে বুড়ি বললি, শয়তান ছেলে ফোন রাখ একদম ফোন দিবি না।
–তুই তো বুড়িই এতে কি তোর কোন সন্দেহ আছে নাকি। আমাকে দেখ এখনো ক্লাশ 11, 12এর মেয়েদের প্রপোজ পাই। তিন্নির বান্ধবী একটা তো আমার জন্য দিওয়ানা।
–ইশ কি চয়েজ রে তাঁদের। ছিঃ,
–এই মুখ সামলে কথা বল বলছি। তোকে বিয়ে করতে চাই বলে আমাকে এতো ফেলনা ভাবিস না।
–ওও তুই কি আমাকে ফেলনা ভাবসিস শোন এখনো এই সায়রীর পিছনে ছেলের অভাব নেই। স্কুলের কয়টা টিচারের প্রপোজ পেয়েছি জানিস।
আর ঐ রুবেলের কথা মনে নেই বেচারা এখনো বিয়ে করছে না একটা আশায় যে আমি ওকে দয়া করে হলেও মেনে নেবো।
–কি,,, রুবেল তুই এবার শেষ।
বলেই ফোন রাখতে নিতেই সায়রী বললো এই এই কি বলছিস। কোন ঝামেলা করবিনা দিহান।
দিহান ভূবন ভুলানো হাসি দিয়ে বললো তাহলে মায়ের প্রস্তাবে তুই পজিটিভ উওর দে জান। তুই যা বলবি তাই হবে। আর উওর নেগেটিভ হলে বাচ্চা হারাবি, রুবেলকে হসপিটালের বেডে দেখবি প্লাস নিজের জব হারাবি আর নিজেকে এক গুহায় বন্দি পাবি৷ এই শহড়ে ইমন ছাড়া কেউ নেই তোর।
আর ইমন যা করবে তোর আমার, আমাদের মেয়ের ভালোর জন্যই। এবার বল উওর টা কি??
সায়রী চুপ হয়ে গেলো ফোন রেখে দিতে নিতেই দিহান বললো -সায়রী যে সময়টা চলে গেছে সেই সময়টা আমরা কেউ আর ফিরে পাবো না। আমাদের জীবন থেকে পাঁচ টা বছর নষ্ট হয়ে গেছে আর নষ্ট করতে চাইনা। সুপ্তিকে আমি আর পাঁচ টা শিশুর মতোই স্বাভাবিক জীবন দিতে চাই।
দোস্ত তুই সুপ্তির জন্য সবটা মেনে নে না।
আই প্রমিস ইউ তোকে আমি স্পর্শ করবো না।
স্বামীর কোন অধিকার ফলাবো না। আমরা দুজন বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম, আছি আর সারাজীবন তাই থাকবো। শুধু সুপ্তির বাবা হতে চাই প্লিজ দোস্ত।
আমি এখন সিরিয়াস একটুও ফান করছি না বিলিভ মি।
শুধু তোর সাথে জীবনের শেষ দিন অবদি কাটাতে চাই।
জীবনসঙ্গী হিসেবে তোকে পাশে চাই।
দেখ সুপ্তি তাঁর বাবা কে পাবে।দাদী,দাদা,ফুপি সব পাবে। পুরো একটা পরিবার পাবে বাবা, মা-কে একসাথে একি ছাদের নিচে পাবে। ওর সেই আনন্দ টা দেখার লোভ আমি সামলাতে পারছিনা। ওর মুখে বাবাই ডাক টা কে চিরস্থায়ী করতে চাই প্লিজ দোস্ত তুই আমার মেয়ের থেকে আমায় আলাদা করিস না।
সায়রীর চোখে পানি চিকচিক করছে এক ঢোক গিলে কিছু বলতে নিতেই দিহান আবারো বললো ছন্নছারা জীবন দিয়েই তো চলে গিয়েছিলাম। কেমন ছিলি সবটাই জানি আমি কেমন ছিলাম সেটাও আমি জানি। এভাবে বাঁচা যায় না সায়রী।
প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই একজন জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন হয়।
বই পরিসনি নারী,পুরুষ একটি গাড়ির দুইটা চাকার মতো। একটা চাকা না থাকলেই গাড়িটা চলতে পারেনা দোস্ত। মানুষের জীবনও তেমনি যে নারীর জীবনে কোন পুরুষ স্থায়ী ভাবে না থাকে সেই নারীর জীবনটাই বৃথা। ঠিক তেমনি পুরুষের জীবন ও।
নারী পুরুষ একে অপরের পরিপূরক।
একজন মা বাবা ছাড়া তাঁর সন্তান কে কিভাবে মানুষ করে সেটা আমি জানি। হয়তো হাতে পায়ে বড় করতে পারে সব দিতে পারলেও ঘাটতি থেকেই যায়।
একটা শিশুর জন্য মা যতোটা জরুরি বাবা ঠিক ততোটাই জরুরি। তাই সুপ্তিকে আমি কোন কিছু থেকে বন্চিত করতে চাইনা,স্পেশালি ভালোবাসা থেকে।
“সমাজ ছাড়া যেমন মানুষ একা একা বাঁচতে পারেনা তেমনি ব্যাক্তিগত জীবনেও মানুষ একা বাঁচতে পারেনা । সব মানুষের ই একটা ব্যাক্তিতিগত মানুষের প্রয়োজন হয়”।
মনে রাখিস “আমাদের জীবন থেকে বন্ধু চলে গেলে আরেকটা বন্ধু আসবে,তুই আমি আজকে ভালো খাবাড় খাচ্ছি কাল মন্দ খাবাড় জুটতে পারে। আজ মাংস খাচ্ছি কাল লবন ভাত জুটতে পারে। আজ বাড়ি, গাড়ি টাকা পয়সা,সোনাদানা আছে কাল নাও থাকতে পারে। আবার পর্শু এসব কিছু আবার পুনরায় ফেরত আসতে পারে । কিন্তু তোর জীবন থেকে যদি একটা মানুষ চলে যায়। প্রচন্ড অভিমান নিয়ে যদি তোর জীবন থেকে এই পৃথিবী ছেড়েই চলে যায় সে কিন্তু আর ফিরে আসবে না।
“সময় গেলে সাধন হয় না” তোকে আমি আজকে রাত সময় দিলাম ভাবার জন্য বলেই ফোন রেখে দিলো।
,
বেলকুনিতে বসে কাজ করছে আর সিগারেট খাচ্ছে ইমন। মুসকান তাঁর পাশেই বসা ছিলো।
ইমন ইশারা করতেই মুসকান গিয়ে মদের বোতল নিয়ে ট্রি টেবিলে রেখে জগ আর গ্লাস নিয়ে এলো।
ইমন কাজ অফ রেখে বেশ অন্যমনস্ক হয়ে গেলো।
আর বললো এগুলো রেখে আসো খাবো না খেতে ইচ্ছে করছে না।
মুসকান খানিকটা অবাক হলেও গিয়ে আবার সব রেখে আসলো। চুপচাপ এসে বসলো ইমনের পাশে।
–কি ভাবছো, আমি ওটা কেনো খেলাম না??
মুসকান চমকে গেলো।
সে সত্যি এটাই ভাবছে,,,
ইমন ওঠে দাঁড়ালো বেলকুনির রেলিঙের উপর হাত রেখে দূর আকাশে জ্বল জ্বল করা অনেক তাঁরার ভীড়ের সেই একটি চাঁদের ওপর দৃষ্টি স্থির রাখলো।
–ঐ চাঁদ টা যেমন রাতের বিদঘুটে অন্ধকার দূরে সরিয়ে দিয়েছে, ঠিক তেমনি তুমিও আমার জীবনের সেই বিদঘুটে, বিষাক্ত অন্ধকার টা দূরে ঠেলে দিয়েছো।
জোৎস্নার আলোর মতো আলোকিত করেছো আমার জীবন।
মুসকানের বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠলো।
লজ্জায় গাল দুটো লালিমা আভায় ভরে গেলো।
বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো ইমনের পাশে গিয়ে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো। কান দুটো যেনো ইমনের মুখের ওপর বসিয়ে রাখা। যেই সে কথা বলবে অমনি তাঁর কানের ভিতর ঢুকাবে সেখান থেকে মস্তিষ্কে কথাগুলো অটল রাখবে সেখান থেকে তাঁর ছোট্ট হৃদয়ে যত্ন করে রেখে দেবে তাঁর জীবনের মহাপুরুষ টির বলা প্রত্যকটা বানী।
–আমার জীবনে আগে কোন লক্ষ ছিলো না।
ছিলোনা বাঁচার কোন আগ্রহ। দিন চলছে তো চলছেই। রাত যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। বিজনেস করছি সুনাম অর্জন করছি ব্যাস এইটুকুই এর বাইরে কোন চাহিদা ছিলো না। কিসের চাহিদা থাকবে আমার তো পরিবারই ছিলো না। ওহ সরি,,,পরিবার থেকেও নেই।
এই বিশাল পৃথিবী তে যার বাবা,মা নেই সেই বুঝে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কতোটা কষ্টের কতোটা যন্ত্রণার।
আমার সব থেকেও কিছু নেই। জীবনটা ফিকে মনে হতো। এই ঘর,এই বাড়ি,গাড়ি টাকা-পয়সা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতাম সব সময়। কি হবে এগুলো দিয়ে, কি করবো এগুলো দিয়ে। নিঃশ্বাসটা বন্ধ হয়ে গেলেই তো সব ছেড়ে চলে যেতে হবে। কেউ থাকবে না আমার যার এসবের দায়িত্ব নেবে। কেউ থাকবে না যে আমার স্মৃতি মনে রাখবে, এমন কেউ থাকবে না যে নামাজে দাঁড়িয়ে দুহাত তুলে আমার জন্য রবের নিকট পার্থ্যনা করবে। এমন কেউ থাকবে না যে আমার কবরের পাশে বসে এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলবে।
ভাবতাম কোথায় পাবো স্বার্থহীন একটা নিষ্পাপ প্রান। এই শহড়ে সবাই ছলনা করে বেড়ায়। এমন কে আছে যে আমাকে আমার মতো করে বুঝবে কেউ নেই। জীবনের মায়াটা করা তখনি বাদ দিয়েছি।
নিজেকে মদের নেশায় মত্ত রেখেছি। এটাই ছিলো নিস্তব্ধ রাতের একমাএ সঙ্গী আমার।
এমনই একটা লক্ষহীন, আশা,ভরসা, ভালোবাসা হীন জীবনে দমকা হাওয়ার মতো চলে এলে তুমি।
ধীরে ধীরে উপরওয়ালা বুঝিয়ে দিলো তোর জীবনের লক্ষ এবার বদলানোর সময় এসে গেছে।
তোর জীবন এখন অন্যকারো সাথে বাঁধার সময় এসে গেছে।
“লক্ষহীন মানুষ দুনিয়াতে বেঁচে থাকতে পারেনা।
আর যারা বাঁচে তারা জীবন্ত লাশ হয়ে বাঁচে”
বাঁচতে হলে তোমাকে নির্দিষ্ট একটা লক্ষ নিয়ে বাচঁতে হবে।
আমিও জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে ছিলাম।
কিন্তু এখন আমি প্রতি পদে পদে ফিল করি আমার বাঁচতে হবে দীর্ঘ এক সময় পার করতে হবে আমার এই মানুষ টার সাথে।
মুসকানের দিকে তাকালো, মুসকানের অঝড়ে কান্না দেখে ইমন চোখ সরিয়ে নিলো।
পরোক্ষনেই মুসকানের দিকে ফিরে মাথায় হাত রেখে বললো কেঁদো না মুসকান। আমাদের জীবনে দুজনকে এমন ভাবে এগুতে হবে যাতে কোন কষ্ট আমাদের ছুঁতে না পারে। আর যদি কোন কষ্ট চলে আসে তাহলে যেনো দুজনই সেটার মোকাবিলা করতে পারি।
তোমাকে অনেক বড় হতে হবে। আমার দায়িত্ব নিতে হলে তোমায় অনেক বড় হতে হবে। মানসিকভাবে নিজেকে আরো অনেক স্ট্রং করতে হবে।বলেই গালের পানি বুড়ো আঙুলে মুছে আবারো একি ভাবে দাঁড়ালো।
আমার এখন বাঁচতে ইচ্ছে করে যা আগে করতো না।
আগেতো আমার কাছে মুসকান নামের এই নির্মল প্রানীটা ছিলো না। আমার কাছে এতো স্নিগ্ধতা,মুগ্ধতা ভরানো মুখটা ছিলো না।
এখন আছে যার জন্য আমার খুব বাঁচতে ইচ্ছে করে।
আমার ছোট্ট একটা সংসার সাজাতে ইচ্ছে করে।
আমার জীবনে এখন লক্ষ স্থির হয়ে গেছে।
“মদের নেশার থেকেও ভয়ংকর নেশা প্রতি পদে পদে গ্রাস করছে আমায়”
মদের নেশা আমাকে নিঃশ্বেষ করে দেবে। আর এই নেশা আমাকে নতুন করে বাঁচতে শেখাবে।
মুসকান কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো আসুন না আমরা সংসার করি। আমরা খুব ভালো থাকবো চলুন না আমরা বিয়ে করে নেই। দাদী তো বলেছে বিয়ে হয়ে গেলেই আর কেউ আমাদের দিকে আঙুল তুলবে না।
আপনি কেনো এটা করছেন না বলেই কাঁদতে লাগলো।
ইমন মুসকানের হাত ছাড়িয়ে বললো বোকার মতো কাঁদছো কেনো। এখনো তুমি অনেকটা ছোট বিয়ের বয়স হলে তো বিয়ে করবো এমনি এমনি রেখে দেবো নাকি।
মুসকান শান্ত হয়ে ইমনের দিকে তাকালো উৎসুক কন্ঠে বললো দাদীর তো নয় বছরে বিয়ে হয়েছে।
আমাদের গ্রামে আমার বয়সি অনেকের হয়তো ছেলে -মেয়েও হয়ে গেছে। তাহলে আমারো বিয়ের বয়স হয়েছে।
ইমন হকচকিয়ে গেলো। এই প্রথম কোন মেয়ে এভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে নেহাতই ছেলেমানুষ। নয়তো এভাবে বলতে পারতো না ভেবেই মুচকি হাসলো।
তাঁর এই হাসিতে মুসকানের সাহস যেনো একটু বেড়ে গেলো।
–আমাদের ক্লাশের এক মেয়ের ও তো নাইনে বিয়ে হয়েছে। কতো মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে তাঁরা বয়ফ্রেন্ডের সাথে স্বামী-স্ত্রীর মতোই থাকে। ওরা যদি আমার বয়সি হয়ে এতো সব পারে আমি কেনো পারবো না। আমি রান্না, পারি, ঘর গোছাতে পারি, কাপড় ধুতে পারি। আপনার সব কাজই তো আমি করে দিতে পারি। শুধু আপনার বউই না আমি বলেই মন খারাপ করলো ভীষণ।
ইমন আড় চোখে একবার চেয়ে আবার দৃষ্টি দূরে স্থির রাখলো।
মুসকান আবারো বলতে লাগলো।
–দেখুন আমাদের সাথে যে মেয়েটা পড়তো নাইনে ওর নাম তমা। হাইটে আমার এইটুক বলেই হাত কাধ অবদি করলো।
ওর স্বামী ইয়া লম্বা আর ও এইটুক ছিলো তবুও তো ওকে বিয়ে করেছে। আমিতো ওর থেকে একটু বড়ই তাহলে আমারো বিয়ের বয়স হয়েছে তাইনা বলুন।
আমি তো সবার থেকে বেশী কাজ করতে পারি। বলেই হাতের কড় গুনে গুনে বলতে লাগলো ঘর সামলাতে পারি,রান্নাঘর সামলাতে পারি।
আপনার কাপড়চোপড় সবটা সামলাতে পারি।
ইমন নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলো না।
মুসকান কে এক ঝটকায় নিজের কব্জায় নিয়ে নিলো। গাঢ় দৃষ্টি রেখে বললো আমায় সামলাতে পারবে,,,
মুসকান ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে রইলো। কথাটার উওর মনে এনেই মুখে নিয়ে নিলো।
–কেনো সামলাতে পারবো না। আপনার সবটা তো আমিই দেখি আমি সব সামলাতে পারবো।
ইমন চোখ সরিয়ে মনে মনে বললো কথার মানে বুঝারই বয়স হয়নি সে আবার আমাকে সামলাবে।
দূর এর সাথে কথা বলা মানেই সময় নষ্ট।
বিয়ে করবে বিয়ে করবে বিয়ের বুঝে টা কি বলেই হাত আলগা করে দিলো৷ মুসকান মনটা ভাড় করে ঠিক হয়ে দাড়ালো।
–যাও গিয়ে ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে।
মুসকান মাথা নিচু করেই বললো আপনি বিয়ে করবেন না,,,
–যাও ঘুমাও গিয়ে।
মুসকান বড্ড অবাধ্য হয়ে আবারো বললো বলুন না বিয়ে করবেন না।
এবার ইমন বেশ রেগে গেলো।
–এই বিয়ে বিয়ে করছো কেনো বিয়ে মানে বুঝো। যাও রুমে যাও ।
–আমি সব বুঝি, আপনি বিয়ে না করলে সবাই আমাকে আজে বাজে কথা বলে, আপনাকে খুব বাজে কথা বলে এসব আমি সহ্য করতে পারিনা। বলেই কাঁদতে লাগলো।
ইমনের ধৈর্যের বাঁধ যেনো ভেঙে গেলো।
মুসকানকে একটান দিয়ে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে নিলো।
দুগালে শক্ত করে দুহাতে চেপে বললো বিয়ে করবে,,,
মুসকান ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে মাথা নাড়ালো।
ইমন বললো একটা ছেলে মেয়ের বৈবাহিক সম্পর্ক বিষয়ে কি বোঝ তুমি। এইটুকুন মেয়ে সব সামলাবে বড় বড় কথা তাইনা। ওকে পাঁচমিনিট সামলাও আমায় বলেই মুসকানের ঠোঁট জোরা নিজের দখলে নিয়ে নিলো।
#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-২১
বোঝানোর জন্য হলেও মুসকানের মাঝে মত্ত হয়ে গেলো ইমন। আর কোন দিকে হুশ নেই তাঁর মুসকান হাত দিয়ে বাঁধা দিতে গেলে এক হাতেই মুসকানের দুহাত পিছন দিকে আটকে রাখে। মুসকান কোনভাবে তাঁর থেকে নিজেকে ছাড়াতে না পেরে নিজের পা পিছতে লাগে। মুসকান যতো পিছায় ইমন ততো আগায়। পিছানো আগানোতে মুসকান দেয়ালে ঠেঁকে যায়।
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে,দম যেনো বন্ধ হয়ে আসবে এবার চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ছে।
দাঁড়ির ঘষাতে থুতনিসহ গলায় আঁচ লাগছে ভীষন।
ইমনের যখন হুশ ফিরলো চোখ জোরা খুলতেই মুসকানের ভেজা চোখে চোখ পড়লো।
মূহুর্তেই ছেড়ে দিলো হাতজোরা, ঠোঁট জোরা ছাড়তেই মুসকান জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়তে লাগলো।
তাঁর মুখের সম্পূর্ণ শ্বাস ইমনের মুখে পড়ছে।
ইমন তখনো মুসকানের অনেকটা কাছে।
মুসকান অভিমানী চোখে একবার চেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। প্রচন্ড হাঁপাচ্ছে সে,,,
ইমন কিছুক্ষন অবাক চোখে মুসকানের অবস্থা দেখলো। যে ঠোঁটে নিজেকে এতোক্ষন মত্ত রেখেছিলো সেই ঠোঁট জোরা গভীর চোখে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।
নেশাভরা গলায় বলে ওঠলো পরিপক্বতার অভাব।
বুড়ো আঙুলে ঠোঁটে আলতো করে স্পর্শ করতেই কেঁপে ওঠলো মুসকান।
শরীরে অসম্ভব কাঁপুনি ধরেছে তাঁর। ইমন অনুভব করতে পারলো সবটা নিজেকে শান্ত রেখে মুসকানকে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে নিলো।
আদুরে গলায় ফিসফিস করে বললো এখনো অনেক দেরী বড় হতে।
একহাতে বুকের সাথে চেপে ধরে আরেক হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
–শান্ত হও মুসকান,,, কিছু হয়নি ভয় পেওনা।
পানি খাবে,,,
মুসকান কিছু বললো না ইমন একহাতে মুসকানের এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে রুমে নিয়ে বিছানায় বসালো। মুসকান কেঁপেই চলেছে
“এই কাপুনি শুধু তাঁর শরীরে নয় মনেও ধরেছে” এটাই স্বাভাবিক সে যে ফুলের মতো নিষ্পাপ। তাঁর জীবনের প্রথম পুরুষ ইমন চৌধুরী। তাঁর স্পর্শে তাঁর অনুভূতির মাএা যে অনেকটাই প্রখর।
অন্য পুরুষের সামান্য স্পর্শে তাঁর শরীর ঘিনঘিন করে ওঠে ঘৃনা লাগে ভীষণ। আর ইমন তাঁকে এতো গভীরভাবে স্পর্শ করলেও তাঁর ঘৃনা হয়না, বরং সেই স্পর্শ তাঁর শরীর ভেদ করে হৃদয়ে স্পন্দিত হয়।
গ্লাস সামনে দিতেই মুসকান মাথা নিচু করে পানিটা খেয়ে নিলো।
ইমন বাঁকা হেসে গ্লাসটা রেখে মুসকানের পাশে বসলো।
মুসকানের হাতের ওপর হাত রেখে বললো কি,,,ফেইল করে গেলেতো। আমাকে সামলাতে হলে আরো অনেক বড় হতে হবে বুঝলে।
মুসকান মুখটা ভাড় করে ইমনের দিকে চেয়ে বললো আমি যদি নাই বাঁচি তো কিভাবে আপনাকে সামলাবো?
–হোয়াট এসব কি কথা,,,
–হুম তাই ই তো আপনি তো আমার নিশ্বাসটাই আটকে রেখেছিলেন । এটা আপনার প্ল্যান তাইনা যাতে আমি ফেল করে যাই আর এই বাহানায় আপনি বিয়েটা না করতে পারেন।
ইমন হকচকিয়ে গেলো, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিলো মুসকানের দিকে। মুসকান মুখ ফিরিয়ে নিলো ওঠে দাঁড়িয়ে বললো আমি যাচ্ছি।
মুসকানের অভিমানের পাল্লা টা যে এবার বেশ ভারী হয়ে গেছে তা বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হলো না।
কেয়ক পা ফেলতেই ইমন তাঁর হাত আটকে ধরলো।
গম্ভীর গলায় বললো বিয়েতো আমি করবোই আর তোমাকেই। কারো সাধ্য নেই আমার বউ হওয়া থেকে তোমাকে আটকানোর এমনকি তোমার নিজেরও না।
ফালতু বিষয় ভেবে মন খারাপ করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। চুপ চাপ গিয়ে শুয়ে পড়ো।
অনেক পাকনামো দেখেছি কতোদূর কি পারবে তাও বুঝেছি।
এই দুনিয়াতে তোমার আগে আমি এসেছি। তাই তোমার থেকে সব কিছুতে জ্ঞান বলো দক্ষতা বলো আমার বেশী।
“এমনকি তোমাকে তুমি যতোটা চেনো তাঁর থেকে বেশী আমি চিনি। এই হাতের একটা থাপ্পড় খেলে তোমার মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া আসবে সেটা তুমি থাপ্পড় খাওয়ার পর অনুভব করতে পারবে, বুঝতে পারবে।
আর আমি দেওয়ার আগেই সবটা বুঝে যাবো যে কি হতে পারে না হতে পারে, কেমন লাগতে পারে না লাগতে পারে বুঝেছো ”
মুসকান এক ঢোক গিললো। ভয়ে তাঁর গলা শুকিয়ে গেছে। ইমনের হাতের দিকে একবার মুখের দিকে একবার মলিন চোখে চাইতেই ইমন হাতটা ছেড়ে বললো রুমে যাও।
মুসকান মাথা নিচু করে চলে গেলো।
,
অবশেষে বিয়ের ডেট ফিক্সড করে ফেললো দিহান আর ইমন। মুসকান তাঁদের দুজনের জন্যই কফি নিয়ে রুমে আসলো। দিহান এক নজর মুসকান কে দেখে চোখ সরিয়ে নিলো। ইমন ইশারা করতেই মুসকান চলে গেলো।
দিহান বললো দোস্ত বিয়ের আগেই এসব কি??
ইমন গম্ভীর গলায় বললো পরের বউয়ের দিকে এততো নজর দিতে নাই।
–আমি নজর দেই নাই ভাই, আমার কি বউ নাই নাকি তোর থেকে এক ধাপ এগিয়ে বাচ্চা সহ আছে বলেই কলার টানলো,,,
ইমন মৃদু হেসে কফির মগে চুমুক দিলো।দিহান বললো এভাবে সিল রেখে দিছো ক্যান ভাই।
ইমন চোখ গরম করে বললো সিল রাখাতে সমস্যা কি এখানে বাইরের কেউ নেই ওকে।
–বাচ্চা মেয়েটা ইশ মায়া লাগছে।
–এতো মায়া দেখিয়ে কাজ নেই যা সুপ্তি কে স্কুলে দিয়ে আয় আজকে। আমার কিছু কাজ আছে শেষ করে তোকে ফোন করবো।
,
মুসকান হাতের কাছে সব এগিয়ে দিতে লাগলো।
ইমন সব নিয়ে রুম থেকে বেরুলো মুসকান তাঁর স্বভাবেই ইমনের পিছু পিছু যেতে লাগলো।
দরজার কাছ অবদি আসার পর ইমন পিছন ঘুরে সানগ্লাসটা খুলে মুসকানের ঠোঁটের দিকে চেয়ে বললো এতোটা জখম হয়ে গেছে ব্যাথা হচ্ছে না,,,
মুসকান লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ডান দিক বা দিক নাড়ালো।
ইমন বাঁকা হেসে চশমাটা কোর্টের পকেটে রেখে এক হাতে থুতনি ধরে মুখ ওঠিয়ে আরেক হাতে গাল টিপে বললো গুড গার্ল।
মুসকান ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো।
ইমন মৃদু হেসে বেরিয়ে গেলো।
,
ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন করা হলেও বেশ এলাহী ব্যাপার হয়ে গেছে। ও বাড়ির কয়েকজন ও এসে গেছে। ইমনের সব থেকে ক্লোজ ফ্রেন্ডরাই এসেছে। তাঁরা ভীষণ খুশি কারন সায়রী নতুন করে জীবন শুরু করতে রাজি হয়েছে। অবশেষে দিহান তাঁর ভালোবাসা কে নিজের করে পাচ্ছে।
দিহান এবং ইমন দুজনেই যে অবশেষে বিয়ে করছে এবং তাঁদের ভালোবাসার মানুষটাকেই এতেই তাঁরা সকলে ভীষণ খুশি। তাই আনন্দের কোন ত্রুটি রাখতে চায় না তাঁরা।
মুসকান সবার হ্যাঁ তে হ্যাঁ না তে না তাই তাঁকে নিয়ে কারো সমস্যা হলো না। সমস্যা ঘটালো সায়রী কারন তাঁর সব কিছুতেই শুধু না আর না।
দিহান সায়রীকে ফোন করে কয়েকটা থ্রেট দিলো শুধু। সায়রী জানে দিহান থ্রেট দেওয়া অবদিই কিছুই করবে না তবুও দিহানের কথা গুলো মেনে নিলো।
ড্রয়িং রুমে সকলেই বসে আছে রিক্তা সহ তাঁদের আরো কয়েকজন বান্ধবী মিলে মুসকান আর সায়রী কে নিয়ে এলো। সুপ্তিও আছে তাঁদের সাথে তিন্নি গিয়ে সুপ্তিকে কোলে তুলে নিলো।
মুসকান আর সায়রী কে সোফায় বসানো হলো।
অভ্র গিয়ে সুপ্তিকে বললো হেলো মাই লিটল প্রিন্সেস এদিকে এসো বলেই হাত বাড়াতেই তিন্নি মুখ ভেঙচিয়ে সরে গেলো।
অভ্রও মুখ বেঁকিয়ে অন্যপাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
“বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান এইবার ঘুঘু তোমার লহিব পরান” ভেবেই চোখ টিপ দিলো অভ্র।
তিন্নি হা হয়ে চোখ রাঙালো অভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখিয়ে অন্যদিকে তাকালো।
সকলের আবদারে ইয়ানা প্রথম নাচ পরিবেশ করলো। রিক্তা গান করলো, সবাই বেশ হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠেছে এমন সময় দাদী এসে বললো তোরা সকলে যে যার মতো খেয়ে নে। একটুপর কাজি আসবে এখনি খেয়ে নে বলেই মুসকানের পাশে গিয়ে বসলো।
সুপ্তির খাওয়ার সময় হয়ে গেছে সায়রী ছাড়া সে কারো হাতে খেতে চায় না তাই সায়রী সুপ্তিকে উপরে নিয়ে গিয়ে খাওয়াচ্ছে সাথে তন্নি, রিক্তা আছে।
ইয়ানা অভ্র ফোটো তোলায় ব্যাস্ত।
দাদী মুসকানের হাতের ওপর হাত রেখে বললো কিরে ভয় লাগতাছে তোর?
আবারো বলি আমার কিন্তু নয় বছর বয়সে বিয়ে হইছে মানুষ টারে চিনতাম ও না জানতাম ও না।
আর তোর ভাগ্য কতো ভালো আমার নাতীর সাথে ভালোই বোঝাপড়া আছে।
মুসকান লজ্জায় লাল হয়ে গেলো কেমন।
দাদী বললো শোন একটা কথা বলি বাসর ঘরে স্বামীর কাছে নিজেরে সম্পূর্ণ সপে দিবি। যতোটা বোঝাপড়ার অভাব আছে সব ঠিক হয়ে যাবে।
পুরুষ মানুষের মন যুগিয়ে চলতে গেলে কি কি করতে হবে দাদী ফিসফিস করে সব বোঝাচ্ছে মুসকান কে, মুসকান লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে।
বুকের ভিতর হাতুরিপিটা শুরু হয়েছে তাঁর ।
দাদী কথা শেষ করে বললো যা বলছি মাথায় থাকবে তো,,,
মুসকান মাথা নাড়ালো বড়াবড়ই সে খুব বাধ্য তাই দাদীর কথায় সে বাধ্য মেয়ের মতো সায় দিলো।
দাদী মুচকি হাসলো আর মনে মনে ভাবলো।
দাদুভাই আমার বড় ভাগ্যবতী তাঁর দাদামশাইয়ের মতোই। এ মেয়েকে যেভাবে গড়াবে সে ভাবেই গড়বে।
দাদী ভাবলো তাহলে আরেকটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে দেই এই বয়সে কতো ছেলে দুই,তিন বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে আমার দাদু ভাই বাদ থাকবে কেনো। যেই ভাবা সেই কাজ মুসকান কে আবারো কাছে টেনে কানে কানে বললো শোন মেয়ে বর কখন বউদের বেশী ভালোবাসে জানিস।
যখন তাঁর বউ তাকে বাবা হওয়ার মতো সেরা অনুভূতি টা দেয়। যখন তোর গর্ভে ওর সন্তান আসবে দেখবি তখন তোকে ছাড়া আর কিচ্ছু বুঝবে না। যখন ফুটফুটে এক সন্তান ওর কোলে আসবে যখন বাবা বলে ডাকবে দেখবি সেদিন ওর মনের সব কষ্ট, সব ব্যাথা একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। তোকে ছাড়া তোদের বাচ্চা ছাড়া আর কোন দিকে মন দিতে পারবে না। পুরুষ মানুষ কে নিজের কাছে আটকে রাখার মূখ্য উপায় হলো তাঁর সন্তানের মা হওয়া। এতে তোর অধিকার তোর জায়গা শক্ত হবে বুঝলি।
আমার শাশুড়ী মা আমাকে এইসব বুঝিয়েছিলো আর আজ আমি তোকে বোঝালাম দাদী শাশুড়ী হয়ে।
আমার নাতী আমাকে আগেকার মানুষ ভেবে কথা উড়িয়ে দিতে পারে তুই কিন্তু এই ভুল করিস না।
মুরুব্বিদের কথা ফেলনা না বুঝলি। মুরুব্বিরা যা বলে ভেবেচিন্তেই বলে।
ইমন নিচে আসতেই দাদী আর মুসকান কে একসাথে দেখলো দাদী ইমন কে দেখে বেশ ঘাবড়েই ওঠে দাঁড়ালো। ইমন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে জিগ্যেস করলো কি ব্যাপার।
দাদী জোর পূর্বক হেসে বললো কি আবার ব্যাপার তোমার গিন্নির সাথে গল্প করছিলাম বলেই মুসকানের দিকে আঙুল ইশারা করে চুপ দেখিয়ে চলে গেলো।
ইমন বেশ বুঝলো আবার মাথায় কিছু ঢোকানো হয়েছে।
এই দাদীকে নিয়ে আর পারা যায় না। মেয়েটার মাথায় কিসব ঢোকালো কে জানে। এই মেয়েও তো যে যা বলবে তাই শুনবে মুসকানের দিকে চাইতেই ইমন হকচকিয়ে গেলো।
লজ্জায় গাল দুটো লালিমা আভায় ভরে গেছে। ইমনের দিকে তাকাতে অবদি পারছে না।
ইমন বেশ বুঝলো দাদী ওলটা-পালটা কিছু বুঝিয়েছে।
মেয়েটাকে পাকনা বানিয়ে ছাড়বে দেখছি।লম্বা এক শ্বাস নিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে।
,
বিয়ে কমপ্লিট দিহানের মা বার বার ফোন করছে
বেশী রাত না করতে।
তিন্নি সুপ্তিকে নিয়ে আগেই চলে গেছে সাথে অভ্র সহ দিহানের কয়েকটা ফ্রেন্ড রয়েছে। অভ্র অবশ্য সুপ্তির বাহানায় গিয়েছে তাঁদের সাথে।
সায়রীর মা আর ভাই এসেছে। সকলেই মিলে সায়রী আর দিহান কে বিদায় জানালো। সায়রীর মা দিহানের বাবার হাত ধরে বেশ কান্নাকাটি করলো।
–আমার মেয়েটা সুখ কি জিনিস সেটা হয়তো ভুলেই গেছে ভাই। আপনার হাতে তুলে দিলাম,বাবা কে হারিয়েছে অনেক বছর হলো এবার আমার মেয়ে তাঁর আরেক বাবার ভালোবাসা পাবে। আমার নাতনীটাকেও আপনারা আপন করে নিয়েন।
দিলিপ খন্দকার সায়রীর মাকে ভরসা দিলেন।
দিহান এবং সায়রী কে জরিয়ে অনেক কান্না কাটি করলো তাঁর মা। এই কান্না ছিলো সুখের কান্না মেয়ের জীবন নতুন করে শুরু হওয়ার আনন্দের কান্না ।
সায়রীও নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে দিহান বুঝতে পারলো। সায়রীর কান্না বড্ড খারাপ লাগলেও সেই খারাপ লাগাকে গুরুত্ব না দিয়ে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপালো। সায়রীর হাত তার হাতের মাঝে আবদ্ধ ছিলো দিহান একটু আলগা করে হাতে চিমটি কাটলো। সায়রী কান্না চেপে হাত সরাতে নিতেই দিহান আবার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো।। সকলের সামনে বলে সায়রী চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো মনে মনে বেশ বকলো দিহান কে।
মুসকান ও সমান তালে কেঁদে যাচ্ছে সে কারো কান্না সহ্য করতে পারে না। তারওপর সায়রী চলে যাচ্ছে এই ভেবে অঝড়ে কাঁদতে লাগলো সে।
ইমন আড় চোখে তাঁর কান্না দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গেলো ভীষণ। সবাই না থাকলে এতোক্ষনে কয় ধমক খেতো সে নিজেও জানে না। ইমন আস্তে আস্তে দাঁতে দাঁত চেপে বললো কি ব্যাপার বিদায় কি তোমার হচ্ছে না সায়রীর হচ্ছে।
মুসকান কান্না থামিয়ে ইমনের রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে মুখটা কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। কান্না চাপাতে গিয়ে হেচকি ওঠে গেলো তাঁর। ইমন চোখ দিয়েই তাঁকে বেশ শাশাতে শুরু করলো।
বাসর ঘর সাজাতে নিষেধ করলেও ইয়ানা, রিক্তা সেই নিষেধ মানেনি তাঁর ওপর সাপোর্টার হিসেবে যদি দাদী থাকে তাহলে কার সাধ্য আছে তাঁদের আটকানোর।
রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই সারাদিনে বেশ ধকল গেছে সবার। সেই সকালে একটু ভাত খেয়েছিলো মুসকান সারাদিন সে আর কিছু খেতে পারেনি। গলা দিয়ে খাবাড় নামেনি তাঁর। শরীরটা এখন বেশ দূর্বল লাগছে। একরাশ ঘুম এসে ভর করেছে চোখে।
সোফায় বসে ঝিমচ্ছে সে, রাত জাগার অভ্যেস থাকলেও দূর্বলতার কারনে আজ জেগে থাকতে পারছেনা।
ইমন তাঁর বন্ধু দের সাথে ছাদে রয়েছে। সকলে মিলে ড্রিংকসের ব্যবস্থা করেছে যা ইমন জানতো না।
সবাই বউ বাচ্চার জন্য এসব খেতে পারে না তাই আজ সারারাত জমিয়ে ইনজয় করবে তাঁরা ।
ইমন এক প্যাক নিলো খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না তবুও খেলো। সবাই আড্ডায় মেতে ওঠলো। একজন অভ্রকে ফোন করে ওদিকের খবড়াখবড় নিচ্ছে।
দিহানের বাবার জন্য কোন বন্ধু ওখানে যাওয়ার সাহস করেনি। একদিন সকলে মিলে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে সেই সুযোগ টা হাতছাড়া করতে চায়নি কেউ।
,
দাদী এসে মুসকান কে ঝাঁকিয়ে বললো কিরে এখানে ঝিমচ্ছিস কেনো? এখনি ঝিমুলে চলবে?
আজ রাতটা জানি মাটি করস না তুই এই বলে দিলাম আমি।
দাদীর মুখের দিকে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে রইলো।
দাদী বললো দাঁড়া দেখি দাদু ভাই কই তোদের রুমে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
ছাদ থেকে বেশ তর্জন, গর্জন করেই ইমনকে নিচে নিয়ে এলো দাদী। ইমন বেশ বিরক্ত হলো।
দাদীর হাভ,ভাবে মনে হচ্ছে আজি এক বাচ্চার বাবা বানিয়ে দেবে। দাদীর মুখের ওপর কিছু বলতেও পারছেনা।
বন্ধুরা সবাই হৈ-হুল্লোড় শুরু করে দিলো। একজন সাউন্ড বক্স অন করে দিলো।আরেকজন বললো বিগ বস প্রথম বাসর, প্রথম অনুভূতি ইনজয়,,,
ইমন কাউকে তোয়াক্কা না করে দাদীর পিছন চলে গেলো।
ইয়ানা,রিক্তাও রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
দাদীর কথা অনুযায়ী ইয়ানা যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধ টেবিলের ওপর রেখে গেছে। আর বলে গেছে ইমনকে খাওয়াতে।
,
ইমন রুমে ঢুকে সিটকেরী লাগিয়ে ঘড়ি খুলতে খুলতে বললো এই পোশাক ছাড়োনি যে এটা পড়ে ঘুম হবে??
মুসকানের বুকের ভিতরটায় ডিপডিপ আওয়াজ হতে লাগলো। তাঁর ঘুম যেনো এক নিমিষেই পগার পাড়। নিজের ভয় টাকে জয় করার জন্যই চট করে দুধের গ্লাসটা নিয়ে ইমনের সামনে ধরলো।
ইমন জিগ্যাসু দৃষ্টি তে তাকাতেই মুসকান বললো দাদী এটা খেতে বলেছে আপনাকে।
ইমন বেশ বুঝলো দাদীর বলা কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে এখন এই মেয়ে।
–আমি এসব খাইনা ভালো করেই জানো।
–এটা নিয়ম খেয়ে নিন।
নিয়ম মাই ফুট বলেই গ্লাসটা নিয়ে একটু খেয়ে মুসকানের দিকে এগিয়ে বললো বাকিটা তুমি শেষ করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
সারাদিন না খেয়ে পেটে যেনো পিত্তি পড়ে গেছে।
এখনো তাঁর খেতে ইচ্ছে হলো না তবুও ইমনের আদেশ সেই সাথে এই প্রথম ইমনের এঁটো খেতে বড্ড লোভ হলো তাই এক চুমুকে শেষ করলো।
এবার দাদীর বলা অনুযায়ী নিজেকে সুন্দর করে পরিপাটি করে নিয়ে বিছানার মাঝ বরাবর চুপটি মেরে বসে রইলো।
বুকের ভিতর অদ্ভুত সব অনুভূতিরা ওকি দিচ্ছে।
নিজেকে বউ বউ মনে হচ্ছে তাঁর পরোক্ষনেই ভাবলো আমিতো এখন বউ ই ওনার বউ আমি।
লজ্জায় লাল হয়ে গেলো,,, নিচের দিকে মাথা রেখে চুপ করে বসে রইলো।
পৃথিবীর সকল সুখ এসে ভড় করেছে তাঁর মনে।
আবেগ অনুভূতিরা যেনো আকাশ পথে উড়ে বেরাচ্ছে। কিশোরী বয়সের অনুভূতিগুলো যে বড্ড বেহায়া হয়। এর ওপর যদি দাদীর মতো একজন থাকে সেই অনুভূতির আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার জন্য তাহলে তো কথাই নেই।
বাথরুম থেকে বেরুতেই চোখ যেনো কপালে ওঠে গেলো ইমনের। তাঁর বাড়ির সামনের বাগানে এতোগুলো গোলাপ গাছের মাঝে যখন একটা গোলাপ ফুটে থাকে তখন সেই গোলাপটা দেখতে যতোটা সুন্দর লাগে যতোটা আনন্দানুভূতি হয় যোতোটা সৌন্দর্য ভড় করে তাঁর থেকে হাজারগুন বেশী সৌন্দর্য, এখন তাঁর এই চারদেয়ালে উপস্থিত হয়েছে। বিশাল বড় বিছানার মাঝখানে যেনো একটা ফুটন্ত গোলাপ ফুলকে দেখতে পারছে সে।
মুসকান ঘোমটার আড়াল থেকে এক পলক তাকিয়ে দেখতে নিতেই ইমনের নেশা ভড়া চোখে ধরা পড়ে গেলো।
চট করে চোখ সরিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বসে রইলো।
ইমন কি বলবে এখন, কি করবে কিছুই মাথায়,খেলছে না তাঁর । যা বুঝতে পারছে তাতে মেয়েটা একরাশ আশা নিয়ে বসে আছে কি বলে বোঝাবে, অবুঝ মনে কি করে বোঝ দেবে সে।
আর যাই হোক আজ মেজাজ দেখিয়ে,ধমকা ধমকি করে কিছু বলা টা ঠিক হবে না।
–সব ঐ দাদীর জন্য ইচ্ছে করছে গিয়ে এখন বলি আমার বাচ্চা বউয়ের মাথায় কুবুদ্ধি না ঢুকালেও পারতে।
নিজের মনের সাথে বোঝাপড়া করে নিয়ে ইমন এক পা এক পা করে এগিয়ে বিছানায় বসলো।
শান্ত গলায় ডাকলো মুসকান,,,
–একি ওনি আমাকে ডাকছে কেনো? দাদী যে বললো ওনি প্রথমে ঘোমটা খুলবেন তাঁর পর থুতনিতে ধরে মুখ ওঠাবেন।
ইমন আবারো ডাকলো মুসকান,,,
মুসকান ঘোমটার আড়াল থেকেই নিচু স্বরে বললো আপনার যা লাগবে সব এনে দিবো আগে ঘোমটা টা ওঠিয়ে থুতনিতে ধরুন,,, দাদী বলেছে এটা নিয়ম।
চলবে…….
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
চলবে………..