হৃদমাঝারে তুমি পর্ব -১৩

#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#পর্ব_১৩
#Written_by_Mehebin_Nira (ছদ্মনামী)

রাতুল নিরা আর আশা কে সেই রুম টায় নিয়ে আসে যেখানে আদ্রাজ ঘুমোচ্ছে। নিরা এটা দেখে প্রথমে অবশ্য এখানে খেলবে না বলছিলো কিন্তু রাতুল বললো কোনো সমস্যা নেই! তাদের খেলার জন্য আদ্রাজের ঘুমের কোনো সমস্যা হবে না। জুসের একটা কাঁচের বোতল নেয় তারা। বোতল টা ঘুরে যার দিকে যাবে তার পালা আসবে এক এক করে! সর্বপ্রথম গেলো আশার দিকে!

‘আশা বল কি নিবি?’

‘ট্রুথ!’

‘আরে নিরা বুঝতে পারলে না ও তো একটা ভিতুর ডিম সো ট্রুথ ই নিবে! আই হোপ তুমি…(পুরো কথাটা শেষ করার আগে)

আশা রেগে বলল,
‘ঠিক আছে আমি খেলবো না হ্যাপি?’

‘আহা আশা রাগ করছিস কেন?’

‘আমি যাই নিই না কেন তাতে মানুষের কি বলতো নিরা?’

‘ওকে ফাইন আমি আর কিছুই বলছি না!’ বলে রাতুল মুখ তালাবদ্ধ করে দেয়।

‘ট্রুথ মানে হলো যা জিঙ্গেস করবে তা সত্যি সত্যি বলতে হবে বুঝেছিস?’

‘তোর কি আমাকে ছোট বাচ্চা মনে হয়?’

যাই হোক আশা আর রাতুল ঝগড়া খুনসুটি করে দুই জন ই ট্রুথ নেয়। রাতুলের উদ্দেশ্যে নিরা কে ডেয়ার নিতেই হবে মাস্ট। আর তার নেওয়া সেই ডেয়ার কেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে! রাতুল বলল,

‘নিরা এবার তোমার পালা। আমার বিশ্বাস তুমি ডেয়ার নিবে! কারণ তুমি সাহসী!’

পাম দেওয়া কথায় গলে যায় নিরা। সে হেসে বলল,
‘হুম ঠিক বলেছেন আমি এই আশার মতো গাঁধি না হুহ! নিলাম ডেয়ার!’

‘এহ আসছে আমাকে গাঁধি বলতে! আমি মোটেও গাঁধি না! যথেষ্ট সাহসী!’

রাতুল বলল,
‘কে সাহসী কে ভিতু তা আমরা জানি তাই না নিরা?’

নিরা মাথা নাড়ায়। আশা রেগে ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে।

‘সো নিরা তোমার কি আত্মবিশ্বাস আছে যে তুমি ডেয়ার কমপ্লিট করতে পারবে?’

‘অফকোর্স! হোয়াই নট?’

‘ওকে ওকে তাহলে তোমার জন্য ডেয়ার হলো তুমি…

‘হ্যাঁ আমি?’

‘তুমি আদ্রাজ কে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবে! আর হ্যাঁ এটা যে আমার দেওয়া ডেয়ার তা তুমি ওকে বলতে পারবে না!’

নিরা রাতুলের দেওয়া ডেয়ার শুনে সঙ্গে সঙ্গে বলল,
‘কিহহহ আমি? না না এটা আমি পারবো না!’

আশা এবার নিরা কে বাগে পেয়ে বলল,
‘এখন কেন পারবি না শুনি? এতোক্ষণ তো খুব বলছিলি সাহসী! কই এখন তোর সাহস কি ফানুস হয়ে উড়ে গেছে?’

‘আমাকে অন্য কিছু করতে বল, ঠিক করে দেখাবো কিন্তু এটা না!’

‘তার মানে হলো তুই আসলে নিজেই ভিতুর ডিম আমি না হুহ! দেখেছেন এবার?'[রাতুলের দিকে ইশারা করে]

নিরা বেচারি চিন্তায় পড়ে যায় কি করবে। শেষে রাতুল আশা দুজন ই তাকে পঁচাচ্ছে দেখে বলল,

‘ঠিক আছে আমি এই ডেয়ার কমপ্লিট করতে রাজি! তবে..

‘তবে কি?’

‘যদি আমাকে বকা দেয় তাহলে আপনাদের দুজনের খবর আছে! দেখে দেখে এভাবে আমাকে ফাঁসাবেন জানলে আমি খেলতেই আসতাম না!’

আশা হাসতে হাসতে বলল,
‘আমার কথা তো কানে যায় না বোঝো ঠেলা!’

রাতুল বলল,
‘আচ্ছা আমাদের খবর পরে করিও এখন আপাতত আদ্রাজের ঘুম ভাঙ্গাও!’

‘হুম হুম যা! আজকে তোর সাহস দেখেই ছাড়বো!’

অপমান আর উস্কানিমূলক কথা শুনে নিরা রাগে দুঃখে নিজেকে গালি দিতে দিতে আদ্রাজের বিছানার দিকে যায়। আর বলে,

‘এই যে শুনছেন? উঠেন!’

নিরার ঘুম ভাঙ্গামোর স্টাইল দেখে রাতুল আর আশা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম। নিরা তা দেখে বলল,

‘এখন খুব হাসি পাচ্ছে তাই না? আমার ও সময় আসবে!’

‘ওকে আমরা বাহিরে অপেক্ষা করছি! আদ্রাজের ঘুম ভেঙ্গেছে দেখলেই তুমি এক দৌড়ে বাহিরে চলে এসো ব্যাস হয়ে গেলো তোমার ডেয়ার কমপ্লিট!’

‘কিন্তু‌..

আশা তার উসুল নেওয়ার জন্য বলল,
‘কোনো কিন্তু টিন্তু তে কাজ হবে না! সাহসের পরীক্ষা বলে কথা! যা দোস্ত আমার ভাইটার ঘুম ভাঙ্গা!’

‘তুই ও?’

‘জ্বি!’

রাতুল পানি মেরে আদ্রাজের ঘুম ভাঙ্গামোর কথা বলে আশা কে নিয়ে বাহিরে চলে যায়। পৃথিবীতে এতো ডেয়ার থাকতে এই ডেয়ার টাই কেন তাকে দিলো ভাবতে পারছে না নিরা! রেগে গেলে আদ্রাজ কি তার আস্তো আর রাখবে? নিরা হাতের কাছেই একটা গ্লাসে পানি রাখা দেখে সেটি হাতে নেয়! একবার বিছানায় ঘুমন্ত আদ্রাজের দিকে তাকায়! কিছু সময়ের জন্য রাগ ক্ষোভ চিন্তা টেনশন ভুলে হা হয়ে যায় নিরা! থমকে দাঁড়িয়েছে সে! কারণ সে এতোক্ষণ যা খেয়াল করে নি তা এই মুহূর্তে তার নজরে এসে ধরা দিয়েছে! আদ্রাজের গুটিসুটি মেরে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে! বুকের দিক টায় শার্টের দুটো বোতাম খোলা থাকায় ফর্সা বুক কিছুটা দৃশ্যমান হয়ে আছে! ঘুমন্ত আদ্রাজের মুখ টা খুব নিষ্পাপ আর শান্ত লাগছে। আহা এই মুখশ্রী তে কতো শত মায়া লেপ্টে আছে! শক্তপোক্ত গড়নে দীর্ঘদেহী এক পুরুষ আদ্রাজ! ভ্রুঁ জোড়ার নিচে গভীর চোখ দুটো অতৃপ্ত ঘুমে আচ্ছন্ন! গলার এক পাশে কালো তিল টাও চোখে পড়ছে! আগে কখনো আদ্রাজ কে এতো সুক্ষ্ম ভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা হয় নি! সব সময় সে দেখেছে আদ্রাজের রাগী এক চেহারা। এই মোহনীয় চেহারা টা রাগে আস্তরণে আবৃত থাকায় দেখার সুযোগ হয় নি কখনো! চুলো গুলো ও এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে আছে। উফ কি যে লাগছে না! কয়েকশ ক্রাস খাওয়া যাবে! নিরা নিজের মাথায় একটা বাড়ি মারে! মনে মনে বলে,

‘ডেয়ার কমপ্লিট না করে এসব কি ভাবছিস তুই নিরা? পাগল হয়ে গেছিস হ্যাঁ?’

নিরা নিজেই নিজেকে বকা দিয়ে পানির গ্লাস থেকে একটু পানি নিজের হাতে নেয়। আর বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। ইশ আদ্রাজের এতো সুন্দর ঘুম টা ভাঙ্গাতে একদম ইচ্ছা করছে না! রাতুল এমন টা না করলেও পারতো! নিরা ভুলেই যায় আদ্রাজের রাগ সম্পর্কে! আফসোস করতে করতে হাতের পানি টা ফ্লোরে পড়ে যায়। হাতের দিকে তাকাতেই দেখে পানি নাই। আবারো একটু পানি নেয়! এবং সেটি ও পড়ে যায় নিচে! নিরা বিছানার উপর আদ্রাজের মাথার পাশে বসে বলল,

‘এই আপনি উঠে যান প্লিজ! আমার না পানি মেরে আপনার ঘুম ভাঙ্গাতে একদম ইচ্ছা করছে না। প্লিজ উঠেন! আরে উঠেন না!’

নিরা বেশ কয়েক বার ডাকে! আর কথা গুলো জোড়েসোড়ে বলায় আদ্রাজের কানে ও যায়। ফের বিরক্ত হয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,

‘রাতুল প্লিজ ঘুমোতে দে! ডোন্ট ডিস্টার্ব মি!’

বালিশ টা নিয়ে অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে আদ্রাজ। চোখ খুলে দেখেও নি তার সামনে আসলে রাতুল নয় অন্য কেউ আছে! নিরা এবার উপায়ান্তর না পেয়ে রেগে বলল,

‘ভালোয় ভালোয় বললে আপনি যে এই জীবনেও কথা শুনবেন না তা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম! ওয়েট দেখাচ্ছি মজা!’

নিরা গ্লাসের বাকি অর্ধেক পানি টুকু হাতে নিতে গিয়ে বেশ খানিক টা পানি নিচে পড়ে যায়। ব্যাস আর অল্প একটু পানি ই তার শেষ সম্বল। পানির গ্লাস টা হাতে নিয়ে ঘুরে বিছানার অপরপ্রান্তে আদ্রাজের মুখের সামনে যায়। একটু পানির ছিকটে আদ্রাজের মুখে পড়তেই আদ্রাজ পুনরায় বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে ফিরে যায়। নিরা ঘুরে আবার আগের জায়গায় এসে বলে,

‘দিলাম এইবার! ওয়ান টু থ্রি..!’

গ্লাসের শেষ মাথায় আশা পানি ঝফাং করে আদ্রাজের চোখে মুখে ছুঁড়ে মেরে দিতেই সে লাফিয়ে উঠে। হকচকিয়ে গেছে বেচারা! নিরা আদ্রাজের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে! আদ্রাজের ঘুম এখনো কাটেনি। হঠাৎ এমন করায় বেচারা কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। চোখের সামনে নিরা কে হাসতে দেখে বুঝলো ব্যাপার টা! তার মানে এসব নিরার কাজ! রেগে তাকায় আদ্রাজ! নিরা মনে মনে বলে,

‘এইরে সেরেছে এখন কি হবে আমার? ঘূর্ণিঝড়ের আশংকা প্রকাশ পাচ্ছে! আল্লাহ শেষ রক্ষা করো প্লিজ!’

নিরা জোড় পূর্বক হাসি চেপে রেখে ঢোক গিলে বিছানা থেকে নামতে নিলে আদ্রাজ তার সামনে দাঁড়ায়। ভয় পেয়ে নিরা বলল,

‘আ-আ-মি কি-ন্তু কিছু করিনি!’

‘তাহলে কে করেছে?’

‘ঐ যে… আ-মি যাবো!’

বলে নিরা দৌড় দিতে নিলে ফ্লোরে পড়ে থাকা পানিতে স্লিপ করে আদ্রাজ কে নিয়ে সোজা বিছানায় পড়ে যায়। স্লিপ করার সঙ্গে সঙ্গে ভয় পেয়ে নিরা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়েছিলো! যখন চোখ খুলল অনুভব করলো সে ফ্লোরে নেই! অথচ স্লিপ করে ফ্লোরেই পড়ার কথা ছিলো! নিরা নিচের দিকে তাকিয়ে যা দেখলো তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। ইয়া মস্ত বড় হাতি থুক্কু আদ্রাজের উপর সে! তার মানে স্লিপ কেটে আদ্রাজ কে নিয়ে সে বিছানায় পড়েছে! ভয়ার্ত চোখে নিয়ে আদ্রাজের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো আদ্রাজ সেই লেভেলের রেগে আছে। নিরা তাড়াহুড়ো করে উঠে যেতে নিলে আদ্রাজ নিজের দিক থেকে নিরা কে সরিয়ে সে নিরার হাত দুটো বিছানায় চেপে ধরে। এবার নিরা নিচে আর আদ্রাজ তার পাশে রাগী লুকে তাকিয়ে আছে! মানুষ টা এই অবস্থায় দেখে নিরার ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা! মজা নিতে গিয়ে এমন হয়ে যাবে কে জানতো! এই জন্যই সে বলেছিলো সে এই ডেয়ার নিবে না! সব দোষ রাতুল আর আশার।

এদিকে আদ্রাজের ক্ষিপ্ত চোখ জোড়া লক্ষ্য করলো নিরার ভয়ার্ত মুখ টাকে! এর আগে কখনো কোনো মেয়ে কে এতোটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় নি! হবে কি ভাবে সে তো আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে কে তার আশেপাশে ও ঘেঁষতে দেয় নি! মেয়েদের সাথে তেমন করে মেলামেশার অভ্যাস নেই! উল্টো এসবে যেনো এক প্রকার এলার্জি তার! তবে আজ তার ব্যতিক্রম ঘটছে! নিরা অলরেডি ভয়ে চোখ বন্ধ নিয়েছে। কাঁপছে সে! সামনের মানুষ টার বুঝতে দেরি হলো না যে নিরা কতটা ভয় পাচ্ছে তাকে! আদ্রাজ মনে মনে বলল, ‘এতোক্ষন তো খুব হাসি পাচ্ছিলো এখন হাসি কোথায় গেলো? হাসো আরো হাসো!’

নিরা আদ্রাজ কে তার দিকে এগোতে দেখে নির্লিপ্ত গলায় বলল,
‘আ-মার ভুল হয়ে গেছে! সরি সরি অনেক সরি! প্লিজ আমার ক্ষতি করবেন না! আমি আর কক্ষনো এমন করবা না সত্যি বলছি! তিন সত্যি!’

নিরা একনাগাড়ে কথা গুলো বলে দেয় যা শুনে আদ্রাজের রাগ টা বাড়ে। সে দাঁতে দাঁত কতমট করে নিরার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

‘আর কখনো আমার সাথে এমন কিছু আর দ্বিতীয় বার করার দুঃসাহস দেখাবে না! কথা টা মাথায় থাকে যেনো! আজকের মতো ছেড়ে দিলাম! জাস্ট গেট লস্ট!’

আদ্রাজ সরে দাঁড়ায় নিরার কাছ থেকে। নিরা ছাড়া পেয়েই ভৌঁ দৌড় মারে! এই দৌড়ের কোনো শেষ নেই! বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছে সে! মনে মনে ঠিক করেছে আর কক্ষনো ট্রুথ ডেয়ার খেলবে না! এই খেলার প্রতি জন্মের ভয় ঢুকে গেছে নিরার!

রিপ ট্রুথ ডেয়ার!

আদ্রাজ ফ্রেশ হয়ে এসে একটা টিশার্ট পড়ে আয়নায় নিজের চুল ঠিক করতে গিয়ে নিরার বলা তখনকার কথা গুলো মনে পড়ে। নিরা বলছিলো আদ্রাজ যেনো তার ক্ষতি না করে! কথাটা মনে পড়তেই আদ্রাজ চোয়ালে শক্ত করে বলল,

‘কে ক্ষতি করে আর কে তাকে রক্ষা করে আগলে রাখতে চায় তা বুঝার সেন্স টুকুও নেই, এই মেয়ের! স্টুপিড একটা!’

চলবে———————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here