হৃদমাঝারে তুমি পর্ব -৩১+৩২

#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৩১

আরফান বিকেল থেকে শরীর অসুস্থ বোধ করছে । মাথাটা কেমন যেন ভন ভন করে । কেমন কেমন লাগে ।ইফতারি করে আরফান একটা যে ঘুম দিয়েছে আর ওঠার নাম নেই । মিহু যা কাজ ছিল সব গুছিয়ে রুমে এলো । দেখলো রুমের মধ্যে সব অন্ধকার । তাই আলো জ্বালিয়ে বেডের কাছে গেল । ঘুমন্ত আরফানকে দেখতে একটা ছোট্ট বাচ্চার মতো লাগে । মিহু কতক্ষণ আরফানের চুলে হাত বুলিয়ে দেয় আবার কতক্ষণ গাল টেনে দেয় । তারপর নিজের মনেই হাসতে থাকে । আবার দুই হাত দিয়ে আরফানের গাল দুটো চাপ দিয়ে বলতে থাকে

– কি কিউট একটা মানুষ । দেখলে মনে হয় সারা জনম তাকিয়ে থাকি ।

বলতে বলতে একবার অন্য দিকে তাকিয়ে আবার আরফানের দিকে তাকাতেই মিহু ভয় পেয়ে যায় । একটু আগেও যে গভীর ঘুমে ছিল এখন সে ভ্রু কুঁচকে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে । মিহু ভয় পেয়ে উঠে গেল

– আল্লাহ্, আপনি তো ভয় পাইয়ে দিলেন । এমন করে কেউ তাকায় ?

– তুমি আমাকে ডাকোনি কেন ?

মিহু হতভম্ব হয়ে আছে । আরফানকে ডাকবে ? কিন্তু কিসের জন্য? মিহু বুঝতে না পারায় আবার জিজ্ঞেস করল

– কিসের জন্য ডাকব?

– আজব মিহু এখন কি মজা করার সময়? যদি সেহরীর টাইম শেষ হয়ে যায়?

মিহু একটু বোকা হেসে বলল- আপনি মজা করছেন নিশ্চয়ই? এখন সেহরী করতে যাবো কোথা থেকে ? এখন তো রাত ৯ টা বাজে

আরফান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আসলেই নটা বাজে । কিন্তু আরফানের কিছু মনে পড়ছে না কেন ? মাথাটা আবার ঝনঝন করতে লাগলো । আরফানের এমন অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখে মিহু বলল

– আপনি ঠিক আছেন তো?

– হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ঠিক আছি । তুমি আমাকে একটু কফি বানিয়ে দাও তো

– দিচ্ছি বলে মিহু না চাইতেও চলে গেল । আজব তো আরফান হঠাৎ এমন ব্যবহার করবে কেন ?

আরফান নিজেও বুঝতে পারছে না ওর সাথে কি হয়েছে? জীবনে এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি কখনো । আচ্ছা আরফান আজকে দিনে কি কি করেছিল কিছুই তো মনে করতে পারছে না । কিছু কিছু অস্পষ্ট মনে পড়ছে । আরফান অফিস থেকে ফিরে কোথাও একটা গিয়েছিল কিন্তু কোথায় গিয়েছিল সেটা মনে পড়ছে না। আচ্ছা এমন কি হতে পারে আরফান হয়তো ঐ সময় কোনো বিষয় সম্পর্কে জেনেছিল কিন্তু কেউ চায় যে ঐ বিষয় টা আরফান না জানুক । তাই আরফান তার ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়েছে ? কিন্তু কে করবে আর কেন ই বা করবে ?

আরফান আর ভাবতে পারল না কিছু । মাথার মধ্যে সব এলোমেলো হয়ে পড়েছে । মনে হচ্ছে মাথার কোনো একটা জায়গা ছিড়ে যাচ্ছে । মাথা ধরে বেডের মধ্যেই আবার বসে পড়লো ।

মিহু কফি নিয়ে আসার পরে বেডের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরফান মাথা ধরে কেমন অস্বাভাবিক ব্যবহার করছে । দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে মিহু কফি রেখে আরফানের কাছে বসে পড়ল । তারপর আরফানকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করে বলতে লাগল

– আপনার কি হয়েছে? এরকম করছেন কেন ? কোথায় ব্যাথা লাগছে ?

– মিহু আমার মনে হচ্ছে আমার মাথায় কেউ ব্লেড দিয়ে আঘাত করছে । আমি সহ্য করতে পারছি না । প্লিজ কিছু করো মিহু নইলে আমি মারা যাবো

– প্লিজ এমন কথা বলতে হয় না । আপনি একটু ধৈর্য্য ধরুন আমি কিছু করার চেষ্টা করছি

মিহু কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না । আরফানের এমন অবস্থা সহ্য ও করতে পারছে না । চোখ দিয়ে অঝোরে বৃষ্টি নামার সাথে সাথে দিগ্বিদিক হয়ে দৌড়ে রেবেকার ঘরে গেল । রেবেকা এশার সালাত পড়ে মাত্র তারাবির সালাম পড়তে বসবে তখন মিহুর এমন অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেল । মিহু কান্নার দরুন কিছুই বলতে পারছে না শুধু হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । রেবেকা এসে দেখলো আরফানের অস্থিরতা আরো বেড়ে গিয়েছে তাই তিনি নেহালকে ডেকে আনলেন । এরপর আরফানকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন ।

হাসপাতালে এমার্জেন্সি রুমের সামনে বসে প্রতিটা প্রাণী নিস্তব্ধ হয়ে আছে । নেহাল দৌড়া দৌড়ি করছে এই ওষুধ সেই ইন্জ্ঞেকশন এগুলো নিয়ে আসা নিয়ে । নীলু হাটু মুড়ে মাথা নিচে দিয়ে আছে । মিহু তো সেই কখন থেকে কান্না করতে করতে গলা ভেঙে ফেলেছে । পিহু ওকে সামলাচ্ছে ।

আরফানের এই অবস্থার খবর পেয়ে পিয়াস দৌড়াতে দৌড়াতে এসেছে । দৌড়ের কারণে সারা শরীর ঘামে ভিজে গিয়েছে । ওদের ফ্যামিলি ডাক্তার জাভেদ হাসান ও এখানে চলে এসেছে । এমন কি মাহিন এসেছে সাথে সাথে তুলিও । পিয়াস এসেই পিহুকে জিজ্ঞেস করল

– ভাবী আরফান ভাই এখন কেমন আছে ।

– ভাইয়া ডক্টর এখন পর্যন্ত কিছুই জানায় নি । অনেকক্ষণ হয়ে গেল তিনি বের ও হচ্ছেন না ।

জাভেদ হাসানের এখানের সাথে চেনা পরিচিতি আছে তাই সে ডক্টরের কাছে চলে গেল । মাহিন এক কোণে বসে একবার মিহুর দিকে তাকালো । যতোই হোক প্রথম ভালোবাসা বলে কথা । ওর এমন অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে । তবে নীলুর দিকে তাকাতেই মনের মধ্যে আঘাত হানলো । নীলু তো এমনিতে এতো ট্রেস নিতে পারে না । তাহলে ও এখন কেমন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে? এখন ফর্মালিটি দেখিয়ে লাভ নেই কারণ এখন জীবন আগে । গতিশীল পায়ে নীলুর দিকে এগিয়ে গিয়ে নীলুর পাশে বসল ।

– নীলু তুমি কি আমার কথা শুনছো ? দেখো এই পরিস্থিতিতে তোমার উচিত সবাইকে সামলানো সেখানে তুমি যদি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ো তাহলে

নীলুর কোনো রেসপন্স না দেখে মাহিন নীলুর হাত ধরে একটু নড়া দিল । দেখলো নীলু কিছুই বলছে না।তাই একটু জোরে নড়া দিতে নীলু মাহিনের দিকে হেলিয়ে পড়লো । মাহিনের যেটা ভয় হয়েছিল সেটাই হয়েছে , নীলু জ্ঞান হারিয়েছে । মাহিন নীলুকে একটি আলাদা কেবিনে দিয়ে আসলো । আর রেবেকাকে ওর কাছে রেখে আসলো

একটু পরে ডক্টর বের হতেই মিহু উঠে দাঁড়িয়ে ভাঙা গলায় জিজ্ঞেস করল

– উনি কেমন আছেন এখন ?

– দেখুন পেশেন্টের রক্তে প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল আর বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া গিয়েছে । তাই আমাদের এক্ষুনি এ পজেটিভ রক্ত প্রয়োজন তিন ব্যাগ ।

কেউ কিছু বলার আগেই পিয়াস বলে উঠলো – ডক্টর আমার এ পজেটিভ রক্ত । আমার কাছে থেকে নেন ।

– কিন্তু আমাদের তিন ব্যাগ লাগবে । আপনার শরীর থেকে সর্বোচ্চ দুই ব্যাগ ই নেওয়া যাবে । কিন্তু আপনার যা শরীর সেখানে এক ব্যাগ নেওয়া ই রিস্কের বিষয় ।

– আপনি এখন আমার কাছ থেকে নিন । আমি না হয় পড়ে অন্য একজনের থেকে নিয়ে নেবো

– তার কোনো দরকার নেই পিয়াস । আমার রক্তের গ্রুপ ও এ পজেটিভ । আর আমার ছেলের এমন অবস্থায় তো আমি বসে থাকতে পারি না ।

রেবেকার কথা শুনে ডক্টর পিয়াস এবং রেবেকাকে আসতে বলল তার সাথে । আসলে সব সৎ মা সমান নয় । কেউ ভালো কেউ খারাপ । অনেকেই আছে যে সন্তানের ভালো করতে চায় কিন্তু সৎ মা হওয়ার ফলে তাকে লাঞ্ছনার স্বীকার হতে হয় । সৎ মা যদি ভালোর জন্য ও তাকে বকা দেয় তাহলেও সে খারাপ । আর তার একটাই কারণ , তিনি হলেন সৎ মা ।

আরফানকে বেডে দেওয়ার পর থেকে মিহু সেই যে আরফানের হাত ধরে বসে আছে আর ছাড়ছেই না । এমনকি ডক্টর আরফানের কেবিনে কাউকে ঢুকতে নিষেধ করেছে কিন্তু মিহু কারো কথা শুনছেই না । আরফানের হাত ধরে বসে আছে । নেহাল জিজ্ঞেস করেছিল জাভেদ হাসান কে যে আরফানের সাথে এমন কি হয়েছে?

– আরফানের রক্তে প্রচুর পরিমাণে মানে হাই পাওয়ারের অ্যালকোহল আর বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া গিয়েছে । যেটা আরফানের কিছু স্মৃতি ধ্বংস করে দিতে পারে । হয়তো আরফানের জ্ঞান ফেরার পরে অনেক কিছু নাই মনে থাকতে পারে । আবার অনেক কে ভুলেও যেতে পারে ।
#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৩২

সারা রাতে আরফানের জ্ঞান ফিরেনি । মিহুকে জোর করেও কেউ কিছুই খাওয়াতে পারেনি । শুধু পানি খেয়ে রোজা রেখেছে । নেহাল সবাইকে রাতে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে কিন্তু মিহু কিছুতেই যায় নি । এখন বর্তমানে এখানে মাহিন , নেহাল , পিয়াস আর মিহু রয়েছে । ফজরের সালাত আদায় করার পরে মিহু আরফানের পাশে বসে যত দোয়া – দরুদ জানতো সব পড়ছে । ওর মনে শুধু একটাই চাওয়া আরফান যেন সুস্থ হয়ে যায় । সারা রাতে মিহু তেমন ঘুমাতে পারেনি । তাই এখন আরফানের হাত ধরে একটু ঘুমের মত পড়েছে । হঠাৎ নড়াচড়ার জন্য মিহুর ঘুম উড়ে গিয়েছে । আরফান চোখ খুলে মিহুর দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে । আরফানের জ্ঞান ফেরার খবর মিহু নেহালকে জানালো । নেহাল ডক্টর কে নিয়ে আসতে গিয়েছে । পিয়াস, মাহিন খবর পেয়ে আরফানের কাছে চলে গিয়েছে । মিহু আরফানের হাত ধরে কান্না করতে আছে ।

হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে আরফান নিজের হাত টেনে নিয়ে গেল । নেহালের দিকে তাকিয়ে বলল

– পিয়াস ইনি কে ? আমার হাত ধরে কান্না করছে কেন ? আর আমার কি হয়েছিল ?

মিহুর চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসলো । মিহু দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে আছে । বাকি সবাই ও একথায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছে ।মিহু নিজেকে স্থির করল । তারপর ধীরে ধীরে বলতে লাগল

– আপনি মজা করছেন নিশ্চয়ই? আপনি আমাকে ভুলে যেতে পারেন না । প্লিজ এরকম করেন না । আপনি একবার, শুধু একবার বলুন যে আপনি মজা করছেন । আমাকে ভোলেন নি ।

– দেখুন আপনার হয়তো কোনো ভুল হচ্ছে । আমি তো আপনাকে এই প্রথম দেখলাম । আর আপনি প্লিজ বেশি সিনক্রিয়েট করবেন না । আরফান আদিত্য কখনো কোনো মেয়ের সাথে ঝামেলা করেনি । তাই আপনি প্লিজ এরকম কিছু করেন না যেটা আমার মান সম্মানে আঘাত করে

মিহু আর কিছুই শুনতে পারলো না । একে তো না খেয়ে রোজা রাখছে তার ওপর আবার আরফানের এমন ব্যবহার মিহু মেনে নিতে পারছে না । তাই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেল । কিন্তু পড়ে যাওয়ার আগেই মাহিন মিহুকে ধরে ফেলল । মাহিন মিহুকে কোলে করে নিয়ে গেল অন্য কেবিনে যেখানে নীলুকে রেখেছিল ।

আরফানের এই দৃশ্য দেখে আপনা আপনিই মন খারাপ হয়ে গেল । কিছু বিষাক্ত অনুভূতি ওর মধ্যে হানা দিতে লাগল । এগুলো কেন হচ্ছে আরফান বুঝতে পারছে না । হঠাৎ করেই মাথায় ব্যাথা করতে শুরু করল । নেহাল ডক্টর কে সাথে নিয়ে আসলে তিনি আরফানকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দেয় যার ফলে আরফান ধীরে ধীরে অতল ঘুমের দেশে হারিয়ে যায় । পিয়াস ডক্টর কে সব ঘটনা বললে তিনি বলেন

– আমি দুঃখিত । তিনি তার কিছু স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছেন ।

– ডক্টর ভাই কি কখনো স্মৃতি গুলো ফিরে পাবে না ?

– পেতে পারেন তবে সেটা সময়ের ওপর ডিপেন্ড করে । কয়েক দিনের মধ্যেও পেতে পারে আবার কয়েক সপ্তাহ ও হতে পারে সেটা গড়িয়ে বছরেও হতে পারে । তবে হ্যাঁ এটা তার নিজের মাধ্যমে ফিরে পাবে । আপনারা কেউ বাইরে থেকে এটার জন্য প্রেশার দিবেন না । তাতে হীতে বিপরীত হতে পারে ।

– আরফান ভাইকে আমরা কখন বাসায় নিয়ে যেতে পারবো ?

– উনি ধরতে গেলে পুরোপুরি সুস্থ । তাই জ্ঞান ফেরার পরেই নিতে পারবেন । তবে একটা জিনিস মনে রাখবেন এমন কোনো পরিস্থিতি যেনো সৃষ্টি না হয় যেটা তাকে ঐ স্মৃতি গুলো মনে করাতে চাপ সৃষ্টি করবে ।

নেহাল কিছু একটা ভেবে বলল – ডক্টর ভাই তো তার স্ত্রী কে ভুলে গিয়েছে । তাহলে কি ভাই তার বিয়ের পরের থেকে স্মৃতি গুলো ভুলে গিয়েছে?

– এমনটাই হবে ।

________

কেটে গেছে ২৪ ঘন্টা । মিহু মনমরা হয়ে নীলুর রুমের বেলকনীতে বসে আছে । ওর রুমের বেলকনীতে আগে কাচ লাগানো ছিল । কিন্তু নীলু একদিন অসুস্থ হওয়ার পরে আরফান কাচ ভেঙে ঢুকেছিল । তারপরে ওর বেলকনীতে গ্রীল লাগিয়ে দিয়েছে । ওর বেলকনীতেও দোলনা আছে । তবে সেখানে না বসে একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছে । গ্রীলের ফাঁকা স্থান থেকে আকাশের নীল রং দেখা যাচ্ছে । বিকেলের দিকে রোদের দাবানল কমে এসেছে তবে সেটাও অনেকটা অসহনীয় । মিহুর চোখ দেখে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে ।

– আপনি খুব খারাপ আরফান । আপনি ঠিকই বেলী ফুলকে ভালোবাসেন তবে সেটা আমি নয় গাছের ফুল ।
কি করে পারলেন আমাকে ভুলে যেতে।

কাঁধে কেউ হাত রাখায় মিহু পেছনে তাকায় । পেছনে ফিরে দেখে নীলু ওর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে । নীলু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে

– ভাবি তুমি এত নিরাশ হয়ে পড়ো কেন ? তুমি নিজেই তো বলো আল্লাহ্ যা করেন সব সময় ভালোর জন্যই করেন । তাহলে এখন ভেঙে পড়লে চলবে ? এখন তো তোমাকে ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতে হবে । তাঁকে তোমার কথা মনে করাতে হবে ।

– কিন্তু ডক্টর তো বলেছে তাতে হীতে বিপরীত হবে । ওনাকে আগের কথা মনে করাতে গেলে তো ওনার ই ক্ষতি হবে

নীলু একটা বড় দম নিল । তারপর মিহুর দুই কাঁধ ধরে সোজা করে বলল

– ভাবি সফলতার মূলে পৌঁছাতে গেলে একটা রাস্তা যে থাকবে সেটা না । আরো অনেক রাস্তা থাকে । হোক সেটা একটু কন্টক যুক্ত ।

– আমি বুঝিনি নীলু

– তোমার মাথাটা একদম ডাউন হয়ে গিয়েছে । আগে তুমি শোক থেকে বের হও । ভাইয়া তোমাকে ভুলে গিয়েছে তো কি হয়েছে? তুমি আবার তাকে তোমাকে চিনিয়ে দাও । নতুন করে তাকে তোমার ভালোবাসায় সিক্ত করো । ভাইয়া তো এমন না যে তোমাকে ভুলে গিয়েছে কিন্তু অন্য কাউকে মনে রাখছে । ভাইয়ার জীবনে অন্য কোনো মেয়ে নেই । তাই ভাইয়াকে আবার তোমার প্রেমে পড়াতে বাধ্য করো ।

মিহু নীলুর দিকে তাকালে নীলু চোখ দিয়ে সহমত জানায় । মিহু ওর কথায় ভরসা খুঁজে পায় । আসলেই আরফান মিহুকে ভুলে গিয়েছে তো কি হয়েছে? মিহু আবার আরফানকে ভালোবাসায় রাঙাবে ।

– ভাবি এখন চলো নিচে । আজকে তুমি ইফতারি বানাবে

আরফানকে বাসায় নিয়ে আসার আগেই মিহুর সব জিনিস পত্র নীলুর রুমে সিফ্ট করা হয়েছে । যাতে আরফান ওগুলো দেখে প্রেসারে না পড়ে । আর আরফানকে বলা হয়েছে পিহু ও নেহাল রেবেকার ভয়ে লুকিয়ে বিয়ে করেছে । মিহু হলো পিহুর বোন , ও পড়াশোনার জন্য এখানে থাকছে ।

ইফতারির টেবিলে বসে সবাই উৎসুক মুখে আরফানের দিকে তাকিয়ে বসে আছে । আরফান মিহুর রান্না খেয়ে কেমন রিয়্যাক্ট করে সেটা দেখার জন্য । আরফান শরবতের গ্লাস নিতে গিয়ে দেখে সবাই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । আরফান শরবতটা খেয়ে বলল

– সবাই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ?

– ভাইয়া খাবারগুলো কেমন হয়েছে ?

– খাবার তো খাবারের মতো । খাবার আবার কিসের মতো লাগবে ?

পিয়াস নীলুর কথা কেড়ে নিয়ে বলল – ভাই আসলে নীলু বলতে চাইছে খাবারের স্বাদ কেমন লাগছে ? পরিচিত ? মানে বড় মা তো আজকে খাবার তৈরি করেনি । তাই জিজ্ঞেস করলাম

আরফান একটু চিন্তা করল । তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল – ও হ্যাঁ আজকে খাবারটা ভিন্ন স্বাদের । তবে পরিচিত

সবাই ভাবলো আর যাই হোক মিহুর রান্নার কথা তো ভোলেনি । এটা ভেবে সবাই খেতে আরম্ভ করল ঠিক তখনই

– খাবারটা রেস্টুরেন্টের মতো মনে হচ্ছে । বাহির থেকে এনেছিস ?

মিহু রেস্টুরেন্টের কথা শুনে হিচকি উঠে গেল । শেষ মেষ কিনা তাকে রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি বানিয়ে দিল । পিয়াস খুশি মনে বেগুনীতে হাত দিয়ে ছিল কিন্তু আরফানের কথায় বেখেয়ালী হয়ে পাশে রাখা মরিচ উঠিয়ে কামড় দিল । তারপর তো সবাই একটা চিৎকার শুনলো ।

আরফান খেতে খেতে পিহুকে বলল – আপনি যে পালিয়ে বিয়ে করেছেন এটা কি আপনার পরিবার জানে ? মেনে নিয়েছে

পিহু একটু থমকে গিয়েছিল তারপর আমতা আমতা করে বলল – না মানে হ্যাঁ জানে । তবে কালকে একবার দাদু আসবে । তিনি শহরের বাইরে গিয়েছিলেন কাজে । আজকেই আসতে চেয়েছিলেন তবে পারেনি

– ওহ আচ্ছা । আর মিহু
বলে তাকাতেই দেখলো সবাই খাবার রেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । মিহুর হৃদপিন্ডের গতি বেড়ে গেল । ধক ধক করতে লাগলো । আরফান সবাইকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল

– সবাই এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন ?

ওর কথায় সবাই আবার খাবার খেতে লাগে । আরফান বলতে লাগল – ওহ যা বলছিলাম । মিহু আপনি পড়াশোনার জন্য এখানে এসেছেন ভালো কথা । তবে আপনি কোথায় পড়েন ?

– এইতো কাছেই একটা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ।

– কি নিয়ে পড়েন জানতে পারি ?

– আমি আসলে বাংলা নিয়ে পড়ছি । আমাদের বাসা থেকে যাতায়াত করাটা অনেক সমস্যা তাই আরকি ।

– সেটা তো ভালো এখানে থাকবেন । তবে আপনি কি অন্য কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারতেন না বা কোথাও ভর্তি পরীক্ষা দেন নি

– আমার একটু সমস্যা হয়েছিল তো তাই ভর্তি পরীক্ষা গুলো দিতে পারিনি আর আমি যেহেতু মানবিকের স্টুডেন্ট তাই আমার বাংলা ছাড়া অন্য কিছু পছন্দ হয় নি।

– আচ্ছা তাহলে ভালোমতো পড়াশোনা করবেন । যেহেতু আমাদের বাসায় আছেন তাই আমি চাই আপনি যেন আমাদের মর্যাদা বজায় রাখেন

– মিহু মাথা নাড়ালো

অফিসের ফাইল গুলো দেখে আরফান কিছুই বুঝতে পারছে না । সে একটা এক্সিডেন্ড করেছে মাত্র । আর সব উল্টা পাল্টা হয়ে গেল । মাথাটা ধরে বিছানায় বসে পড়ল । ওর নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হলো । কারো অনুপস্থিতি ওকে ভীষণ করে পোড়াচ্ছে । তবে কে এমন ব্যক্তি? আরফান অতিষ্ঠ হয়ে পড়ল । ও তো এতদিন এভাবেই কাটিয়ে এসেছে তাহলে ?

ল্যাপটপ অন করতে গিয়ে পাসওয়ার্ড দিতে গিয়ে দেখে পাসওয়ার্ড ভুল দেখাচ্ছে । কয়েকবার দেওয়ার পরেও মনে পড়ল না যখন তখন নীলুকে ডাকল । নীলু এসে বলল

– কি হয়েছে?

– পাসওয়ার্ড ভুলে গিয়েছি ।

– ল্যাপটপের ?

– হুম

– বেলী ফুল লিখ

ল্যাপটপ অন হওয়ার পরে আরফান অবাক হলো বলল- তুই পারলি কীভাবে ?

– কারণ বেলী ফুল তোমার সব চেয়ে প্রিয়

– তাইতো আমার মাথায়ই আসেনি

নীলু কিছু না বলে চলে গেল । আরফান আসলে যে বেলী ফুলের কথা ভাবছে এটা সে বেলী ফুল না । এই বেলী ফুল তো একজন জলজ্যান্ত মানুষ যাকে মনে রেখেও ভুলে গেছে ।

#চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here