হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব -১৯+২০

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৯
সকাল থেকে রান্নার তোড়জোড় চলছে।আজ মিথিলা আর আনহা আসছে সাখাওয়াত বাড়ি।আরাবীও হাতে হাতে কাজ করছে।শুক্রবার থাকায় আজ বাড়ির পুরুষদেরও অফিস নেই।জায়ান সকাল থেকেই থমথমে মুখে আছে।সকালে ঠিকঠাক খাবারটাও খায়নি।এমনকি রুম থেকেও বের হচ্ছে না।আর আরাবী রুমের বাহিরে গিয়ে পাঁচ মিনিটও থাকতে পারছে না।একটু পর পরই ডাকছে।এইযে আরাবী এখন সালাদ কাটছে।আর তখনই জায়ানের ডাক।আরাবীর বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে ফেললো। নূর মিটিমিটি হেসে বলে,
-‘ যাও ভাবি, যাও ভাইয়া ডাকছে।’

আরাবী ছু’রিটা রেখে দিয়ে বলে,
-‘ তোমার ভাইয়ার সমস্যাটা কি?নিজেও রুমের বাহিরে আসছে না।আর আমাকেও পাঁচ মিনিটের জন্যে রুমের বাহিরে যেতে দিচ্ছে না।’
-‘ তুমি যাও ভাবি।ভাইয়ার মুড এমনিতেও ভালো নেই।তুমি যদি আবার তার কথা না শোনো তাহলে সে আরো রেগে যাবে।’
-‘ কিন্তু এটা কেমন দেখায়? বসার ঘরে বাবা আর ছোট বাবা বসে আছে।তারা কি মনে করবে?’
-‘আহা,কিছু মনে করবে না। যাও তো তুমি।’

এদিকে জায়ান এখনও ডেকে চলেছে।সহ্য করতে না পেরে আরাবী কাজ ফেলেই ছুটলো জায়ানের কাছে।রুমে এসে দেখে জায়ান বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে।আরাবী বিছানার কাছে গিয়ে বলে,
-‘ কি হয়েছে আপনার? এমন ডাকাডাকি করছেন কেন?’

জায়ান কাজ করতে করতেই গম্ভীর স্বরে বলে,
-‘ তুমি রুমের বাহিরে যাচ্ছো কেন?তাই তো আমার ডাকাডাকি করা লাগছে।’

আরাবী ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ তার মানে আপনি বলছেন আমি রুমের বাহিরে যাবো নাহ?’
-‘ নাহ!’

জায়ানের সোজাসাপটা জবাব।আরাবী হা করে চেয়ে রইলো জায়ানের দিকে।জায়ান শান্ত গলায় বলে,
-‘ এদিকে এসো।’

আরাবী জায়ানের এমন শান্ত কণ্ঠের ডাক উপেক্ষা করতে পারলো না। বিছানায় উঠে গিয়ে জায়ানের পাশে বসলো।জায়ান আরাবীকে কাছে এসে বসতে দেখেই ল্যাপটপটা পাশে রেখে দিলো। তারপর বা হাতে আরাবীর কোমড় স্পর্শ করে ওকে টেনে নিজের কোলে নিয়ে বসালো।কেঁপে উঠলো আরাবী।জায়ান ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
-‘ এখনো আমি ধরলে কাঁপাকাঁপি করা লাগে?’

আরাবীর লজ্জা লাগছে এইভাবে জায়ানের কোলে বসতে।আরাবী আমতা আমতা করে বলে,
-‘ আ…আমি কি কর..করবো?’
-‘ আমি করবো?’
-‘ কি কর..করবেন?’

কাঁপা গলায় আরাবীর প্রশ্ন।জায়ান আরাবীর গলায় মুখ গুজে দিলো।আরাবীর গলায় নাক ঘষসে সে।ধীর আওয়াজে বলে,
-‘ চুমু খাবো।’

আরাবী জায়ানের এমন স্পর্শে কাঁপছে।একহাত জায়ানের কাধের পাশে রেখে আরেকহাতে জায়ানের চুল খামছে ধরলো।জায়ান ছোটো ছোটো চুমু দিতে লাগলো।চোখ বুজে জায়ানের ভালোবাসাগুলো উপভোগ করছে আরাবী।একসময় জায়ানের নরম স্পর্শগুলো কাম’ড়ে পরিনত হতে লাগলো।আরাবী আরো জোড়ে খামছে ধরলো জায়ানকে।আরাবীর আর সহ্য করতে না পেরে বলে,
-‘ ব্যা..ব্যাথা পাচ্ছি।’

আরাবী ভাঙা গলায় উচ্চারিত শব্দগুলো শুনে থেমে গেলো জায়ান।মুখ তুলে তাকালো আরাবীর মুখপাণে।আরাবী চোখ বন্ধ করে আছে।জায়ান হালকা শব্দে ডাকলো,
-‘ আরাবী?’

আরাবী নিভু নিভু চোখে তাকালো জায়ানের দিকে।জায়ান আরাবীর গালে স্পর্শ করলো।আরাবী জায়ানের সেই হাতের উপর হাত রাখলো।জায়ান ঘোরলাগা কণ্ঠে বলে,
-‘ কিস মি।’

জায়ানের মুখে এমন একটা কথা শুনে আৎকে উঠলো আরাবী।খামছে ধরলো জায়ানের হাত।আরাবী চোখ বড় বড় করে তাকালো।জায়ান এইবার হাত গলিয়ে দিলো আরাবীর চুলে। আরাবীর চুল খামছে ধরে আরাবীকে টেনে ওর মুখোমুখি আনলো।আরাবী মুখ ঘুরিয়ে নিতে চাইলেও পারলো না।জায়ান আগের মতোই বললো,
-‘ কিস মি আরাবী।’

আরাবী জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।নাহ,সে কখনই পারবে না এটা করতে।লজ্জায় ম’রে না যাবে ও।আরাবী শুকনো ঢোক গিললো।কাঁপা গলায় বলে,
-‘ আমি পা..রবো না এটা করতে।’
-‘ করতে হবে।’
-‘ প্লিজ।’
-‘ উঁহু! ফাস্ট আরাবী।’

আরাবী কি করবে ভেবে পেলো না।সে জানে জায়ানকে শতোবার মানা করলেও এই লোক শোনার পাত্র না।জায়ানকে তার কিস করতেই হবে।নাহলে যে এই লোক তাকে একটুও ছাড়বে নাহ।আরাবী চোখ বন্ধ করে নিলো। মনে মনে সাহস জুগিয়ে মুখশ্রী এগিয়ে নিলো জায়ানের দিকে।জায়ানের গরম নিশ্বাসগুলো ওর চোখ মুখে বারি খাচ্ছে।আরাবী দু একটা জোড়ে নিশ্বাস নিয়েই জায়ানের অধরে অধরে মিলিয়ে দিলো।খামছে ধরলো জায়ানকে আরাবী।দীর্ঘ প্রেমময়ী চুম্বনে লিপ্ত হলো দুজন।একে-অপরের মাঝে বিভোর হয়ে গেলো।যেন সময় থমকে গেলো দুজনের জন্যে।
_______________
বসার ঘরে উপস্থিত সবাই।আরাবী তীব্র উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে সামনের দিকে। না চাইতেও খারাপ লাগা কাজ করছে ওর মাঝে।জায়ানের একহাত কপালে ঠেকিয়ে কাঁদছে এক মেয়ে।এটা যে আহানা। এটা বুঝতে বাকি নেই আরাবীর। একটু আগে যখন তারা একে-অপরের মাঝে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিলো তখন হঠাৎই সাথি বেগম ওদের ডেকে উঠলেন।আরাবী ডাক শুনেই সরে আসতে চাইছিলো।কিন্তু অনুভূতির মাঝে তলিয়ে যাওয়া জায়ান যেন হুশেই ছিলো না।সে মত্ত ছিলো প্রেয়সীর ঠোঁটের সুধা পাণে।আরাবী অনেক কষ্টে জায়ান থেকে ছাড়াতে পেরেছে।লজ্জায় হাসফাঁ’স করে আরাবী দ্রুত রুম ত্যাগ করে জায়ান থেকে ছাড়া পেতেই।নিচে এসেই তিনটে নতুন মুখ দেখেই বুঝলেন।আজকের আয়োজন যাদের জন্যে করা হয়েছে তারা এসে পরেছে।মেয়ে দুজনকে দেখলে বুঝলো। তা হলো এখানের সাথি বেগমের মতো মহিলা ইনিই হলেন জায়ানের ফুপু মিথিলা। আর তার মতোই বয়সী একটি মেয়ে সে হলো আহানা।তবে মিথিলার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা কে তা বুঝতে পারলো না আরাবী।ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ছেলেটা। ছেলেটার চাহনীটাও বি’শ্রি।আরাবী সাথি বেগমের পিছে চলে গেলো।এর মধ্যেই জায়ান নিচে নেমে এসেছে।গম্ভীর মুখশ্রী তার।জায়ান আসতেই আহানা একছুটে এসে পরলো জায়ানের কাছে।জায়ান দ্রুত একহাত সামনে রেখে থামিয়ে দিলো আহানাকে। আহানা জায়ানের সেই হাত চেপে ধরে কপালে ঠেকিয়ে হু হু করে কেঁদে দিলো।কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-‘ কেন করলে জায়ান এমনটা?কেন করলে?আমি তো তোমায় ভালোবাসি জায়ান।আমার ভালোবাসাকে এইভাবে অবহেলা কেন করলে?’

জায়ান চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে।হাত ছাড়ানোর প্রয়াস চালাচ্ছে ও।কিন্তু আহানা ছাড়ছে না।আহানা বলছে,
-‘ আমি তো তোমায় সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসি জায়ান।এটা সবাই জানে।তাহলে তুমি বিয়ে কেন করলে জায়ান?কেন করলে?আমার ভালোবাসার কি বিন্দুমাত্র দাম নেই তোমার কাছে?’

আহানা এভাবে সবার সামনে এসব কথা বলায় জায়ান অসস্থিতে পরে গেলো।আরাবী না জানি কি ভাবছে। যাই হোক আরাবীকে কষ্ট দিতে পারবে না জায়ান।জায়ান টেনে হাত সরিয়ে নিলো আহানা থেকে।শক্ত গলায় বলে,
-‘ বিহেব ইউরসেল্ফ আহানা।আমি এখন বিবাহিত এটা মাথায় রেখো।আর রইলো তোমার কথা। তুমি আমায় ভালোবাসলেও।আমি তোমায় ভালোবাসতাম নাহ।আর নিজের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কাজ আমি জায়ান করি নাহ।’

আহানা কান্নারত কণ্ঠে বলে,
-‘ এখন যাকে বিয়ে করেছো তাকে ভালোবাসো বুঝি?’

জায়ান পিছনে ঘুরে এগিয়ে গেলো আরাবীর কাছে।সাথি বেগমের পিছন থেকে আরাবীর হাত ধরে বের করে আনলো।তারপর আরাবীকে নিয়ে আহানার সামনে দাঁড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বললো,
-‘ নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।’

আরাবী কোমল নয়নে জায়ানের দিকে তাকিয়ে।মনটা শীতলতায় ভরে গিয়েছে জায়ানের এই একটা বাক্য শুনে।আহানা দু কদম পিছিয়ে গেলো।একধ্যানে আরাবী আর জায়ানের দিকে তাকিয়েই থাকলো।হঠাৎ কি মনে করে যেন দু হাতে চোখ মুছে নিলো ঢলে।তারপর জায়ান আর আরাবীর কাছে এসে দাড়ালো।আরাবীর দিকে তাকিয়ে মুঁচকি হাসলো। আরাবী অবাক হয়ে তাকিয়ে আহানার দিকে।আহানা আরাবীর গালে হাত রাখলো।বললো,
-‘ এইজন্যেই বলি জায়ান সাখাওয়াত কোন মেয়ের জন্যে এমন পাগল হবে।যে হঠাৎ করেই বিয়ে করে নিলো।তুমি দেখতে ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে।পুরো মায়াবতী। ‘

আরাবী হা করে তাকিয়ে থাকলো।আরাবী ঠিক কি রিয়েকশন দিবে ভুলে গেলো। নূরের কথা অনুযায়ী মেয়েটা নাকি পা’গল। ওর নাকি ক্ষ’তি করতে পারে।কিন্তু এখন তো দেখছে পুরো উলটো।আহানা আবার বলে,
-‘ জায়ান বোধহয় আমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই ছোটো বেলা থেকে ওকে ভালোবেসেও আমি ওকে পেলাম নাহ।তুমি ভাগ্যবতী মেয়ে। সামলে রেখো তাকে।’

কথাগুলো বলেই সরে গেলো আহানা।সাথি বেগমের কাছে এসে বলে,
-‘ বড় মামি আমি রুমে গেলাম।’

আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না আহানা।দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো।এদিকে মেয়ের কান্না দেখে মিথিলারও চোখ ভিজে।সে এখন আর কোন কথা বলার মুডে নাই। তাই নিহান সাহেবকে বললেন,
-‘ ভাইয়া আমি একটু বিশ্রাম করবো।তুমি আমার জিসানকে একটু ওর রুমটা দেখিয়ে দিয়ে আসো।’

মিথিলা চলে গেলেন।নিহান সাহেব ইফতিকে বললেন জিসানকে রুমটা দেখিয়ে দিতে।ইফতি তাই করলো।জিসানকে চলে গেলো।বাকিরাও যার যার রুমে চলে গেলেন।

#চলবে_______#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২০
-‘ মা এমনটা হয় না মা।তুমি যা বলছো তা সম্পূর্ণ ভুল।ওরা এখন বিবাহিত। আমি চাইলেও এখন আর কিছু করতে পারবো না।আর জায়ান তো বলেই দিলো ও তার বউকে অনেক ভালোবাসে।’

আহানার কথায় মিথিলা উচ্চস্বরে বলে,
-‘ তাহলে কি করবো?আমি কি করলে তোর কষ্ট কমবে?আমি মা হয়ে তো তোর কষ্ট সহ্য করতে পারছি নাহ।’

সাথি বেগম

আহানা মলিন হেসে বলে,
-‘ এই কষ্ট যে কমাতে পারবো না মা।কোনদিন নাহ।আমার হৃদয়ের থেকে জায়ানের নামও কেউ মুছতে পারবো না আর এই কষ্টও ভুলতে পারবো না।’

-‘এইভাবে জীবন চলে না মা।আমি তোকে এমনভাবে দেখতে পারবো না।’

-‘ দেখতে হবে নাহ মা।আমি তো আমার কষ্ট দেখতে দিবো না।আজ থেকে আমি আহানা আর কোনদিন কাঁদবো নাহ।’

মিথিলার কষ্টে বুক ফেঁ’টে যাচ্ছে।একমাত্র মেয়ে তার। সেই মেয়েকে এমনভাবে কষ্ট পেতে দেখে তার তার নিজের যে কি পরিমান খারাপ লাগছে তা বলে বুঝাতে পারবে না মিথিলা।দীর্ঘশ্বাস ফেললো মিথিলা।এমনসময় তাদের দরজায় আওয়াজ হলো।আহানা ‘ আমি দেখছি ‘ বলে গেট খুলতে গেলো।গেট খুলতেই সামনে আরাবীকে দেখে অবাক হলো।এদিকে আরাবী মিষ্টি করে হেসে বলে,
-‘ নিচে যাবেন নাহ আপু?দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গিয়েছে।’

আহানা বড্ড অবাক হলো।আরাবীর জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে তার চুল ছি’ড়ে ফেলতো।সেখানে আরাবী তাকে দেখে মিষ্টি হাসি উপহার দিচ্ছে। আহানা নিজেই তো রাগে ফেটে যেতো।যদি কেউ তার সামনে তার স্বামিকেই ভালোবাসি বলে। সেখানে আরাবীর এমন ঠান্ডা স্বভাব প্রচন্ড পরিমান অবাক করেছে তাকে।আহানা আমতা আমতা করে বলে,
-‘ আসছি তুমি যাও।’

আরাবী চলে গেলো হেঁসে।মিথিলা নাক মুখ কুচকে বলে,
-‘ ঢং দেখে বাজি নাহ।এমন ভাণ করছে যেন দুধে ধোওয়া তুলসি পাতা।’

আহানা বিরক্ত হয়ে বলে,
-‘ উফ মা চুপ করো। আরাবী এমন নাহ।আমি আরাবীকে দেখেই বুঝেছি।’
___________
-‘আপনি খাবেন নাহ?’

জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো আরাবী।জায়ান নির্বিকার ভঙিতে উদোম শরীরে বিছানায় উপর হয়ে সুয়ে আছে। আরাবী আবার বলে,
-‘ আর এইটা কিভাবে সুয়ে আছেন?’

জায়ান না নড়লো না।তেমনভাবেই বললো,
-‘ কিভাবে সুয়ে আছি?ঠিকভাবেই তো আছি।’
-‘ জামা-কাপড়ে নেই আপনার?’
-‘ আছে তো।’
-‘ তো এমন উদোম হয়ে সুয়ে আছেন কেন? টি-শার্ট পরুন।’
-‘ পরতে ইচ্ছে করছে না।’

আরাবী বিছানায় গিয়ে বসলো।জায়ানের উন্মুক্ত পিঠে আলগোছে হাত রেখে বলে,
-‘ উঠুন নাহ।সবাই বসে আছে।’
-‘ আমি এখন খাবো না।তারা খেয়ে নিক।’
-‘ এমন করছেন কেন?বাড়িতে মেহমান এসেছে।পরিবারের সবার সাথে বসে খাবার খাবেন এতেই তো আনন্দ।আর তাছাড়া সে তো আপনার ফুপু আর কাজিন।’

আরাবী কথায় জায়ান ঘুরে গেলো।তারপর আরাবীর হাত ধরে আরাবীকে বুকে টেনে নিলো।জায়ান শীতল গলায় বলে,
-‘ তোমার কি একটুও খারাপ লাগছে নাহ?’

আরাবী অবাক হয়ে বলে,
-‘ আজব,খারাপ কেন লাগবে?’
-‘ এইযে সকালে যা কিছু হলো?’

আরাবী মুঁচকি হেসে জায়ানের বুকে মাথা রাখলো।জায়ানের বুকের বা-পাশে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলে,
-‘ সকালে যা হলো তাতে বুঝতে পারলাম আহানা আপু আপনাকে ভালোবাসে।কিন্তু আপনি বাসেন নাহ।আপনি তো ভালোবাসেন আম…’

থেমে গেলো আরাবী।জায়ান বাঁকা হেসে বলে,
-‘ বলো?থেমে গেলে কেন?’
-‘ নাহ,কিছু না। ছাড়ুন তো আপনি।খাবেন চলুন।’

আরাবী সরে গেলো।তারপর টেনে জায়ানকে উঠালো।জায়ানও হেসে উঠে বসলো।তারপর টি-শার্ট গায়ে দিয়ে আরাবীর হাত ধরে নিচে নেমে আসলো।আরাবী হাত ছাড়াতে চাইলেও জায়ান ছাড়লো নাহ।আরাবীকে নিয়েই চেয়ার টেনে বসলো।জিসান আরাবীর দিকে তাকিয়ে ছিলো।আরাবী এইবার সহ্য করতে পারলো না। ভয়ংক’রভাবে রাগি চোখে তাকালো আরাবী।আরাবীর হঠাৎ এমন তেজিয়ান দৃষ্টিতে ভড়কে গেলো জিসান। ভয় পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।বিরবির করলো,
-‘ এই মেয়েকে তো ভোলাভালা ভাবছিলাম।কিভাবে তাকালো আমার দিকে। যেন ওই চোখের তেজেই আমাকে পু’ড়িয়ে ফেলবে।’

এদিকে আরাবী হাসলো।মনে মনে বলে,
-‘ আমাকে দূর্বল ভেবে ভুল করিস নাহ।আমি নরম,লাজুক শুধু আমি একজনেরই কাছে।আর সে হলো আমার স্বামি।আর বাদ বাকি যে আমার সাথে যেমন আমি তার সাথেও তেমন।আমার সাথে উল্টাপাল্টা করার চিন্তাও মাথায় আনলে আমি আমার ক্রো’ধের আগুনে তাকে ঝল’সে দিবো।’

আহানা করুণ চোখে জায়ানের দিকে তাকালো।তবে জায়ান একবারও তাকালো না আহানার দিকে। মিথিলা শুধু রা’গে ফুসছে আরাবীর দিকে তাকিয়ে।আরাবী তা বুঝল তাইতো তরকারির বাটিটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে হেসে বললো,
-‘ এই তরকারিটা আমি স্পেশালি আপনার জন্যে রান্না করেছি ফুপি।খেয়ে দেখুন।’

মিথিলা দাঁতেদাঁত চেপে বলে,
-‘ আ’ম ওলরেডি ফুল। ‘

নিহান সাহেব বলে উঠলেন,
-‘ আহা,মিথু একটু খেয়ে দেখ নাহ আরাবী মা রান্না করেছে।’

মিথিলা ভাইয়ের কথায় একটু খানি তরকারি নিয়ে খেলো।আরাবী প্রশ্ন করলো,
-‘ কেমন হয়েছে ফুপি তরকারিটা?’

মিথিলা’র রাগি কন্ঠ,
-‘ ভালো।’

খাওয়া দাওয়ার পালা শেষ হতেই। জায়ান আরাবীকে বলে,
-‘ রুমে চলো।’

আরাবী ধীরে বলে,
-‘ আপনি যান।আমি আসছি।এইটুকু কাজ সেরে।’
-‘ হু।’

যেতে নিতেই জায়ান ফের বলে,
-‘ জলদি এসো।’

আরাবী হেসে দিলো।লোকটা এতো অধৈর্য।মিথিলা বসার ঘরে এসব দেখে সাথি বেগমকে বলে,
-‘ আমাদের ছেলেকে তো দেখছি পুরো বশ করে নিয়েছে ভাবি।ছেলেকে সাবধানে রেখো ভাবি।পরে না কপাল চাপড়ে কাঁদতে হয়।’

সাথি বেগমের কথাটা পছন্দ হলো না।বড্ড অবাক হয় সাথি মানুষের চিন্তা ভাবনা এতো নিচ কেন হয় সবসময়। সাথি বেগম বলে,
-‘ এইগুলা কোনদিন হবে না আপা।আপনার ভাইও আমায় কতো ভালোবাসে।তাই বলে কি সে আব্বা,আম্মা বা আপনাদের ভাই বোনকে ফেলে দিয়েছে🫠?দেই নি তো তাই নাহ?তাহলে জায়ানও এমন করবে নাহ! ‘

সাথি বেগম উঠে চলে গেলেন। শুধু মাত্র ননদ বলে আর বেশি কিছু বলতে পারলেন না তিনি।
_____________
-‘ আর কতো এমন করবে?ঝগড়ার সময় তো তোমার মুখ কে’চির মতো চলে।তাহলে আমি ফোন করলে কেন এমন চুপ থাকো?’

ইফতির কথায় আলিফা রে’গেমেগে বলে,
-‘ কি বললেন?আমার মুখ কে’চির মতো চলে? ঠিক আছে আপনি আর ফোনই করবেন নাহ। ‘

-‘ আরেহহ আমি সেটা বুঝাই নি।আমার কথাটা তো শোনো।’

ইফতি বলতে না বলতেই আলিফা ফোন কেটে দিলো।ইফতি আবারও ফোন দিলো সাথে সাথে অপাশ থেকে ফোন কেটে দিলো।ইফতি আবার ফোন দিলো এইনার ফোন বন্ধ শোনাচ্ছে।ইফতি দীর্ঘশ্বাস ফেললো।ইফতির আলিফাকে ভালোলাগে সেটা ইফতি বুঝতে পেরেছে। আরাবীর কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে আলিফার নাম্বার নিয়েছে।কিছুদিন যাবত ফোনে আলিফার সাথে যোগাযোগ রাখছে সে।কিন্তু আলিফা তার যেনো কথাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।ইফতি ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝাতে চাইছে কিছু কথা। কিন্তু আলিফা বুঝতেই চায় নাহ।ইফতির মনে হয় আলিফার মতো মাথামোটা সে আর দুটো এই দুনিয়াতে দেখেনি। এইযে মেয়েটা এখন ফোন বন্ধ করে রেখেছে।ইফতি মন চাচ্ছে আলিফার বাড়িতে গিয়ে মেয়েটাকে কষি’য়ে কয়েকটা থা’প্পড় মেরে আসতে। তাও যেমন তেমন থা’প্পড় না একদম চাপার হাড্ডি-গুড্ডি যেন নড়ে যায়।বেয়া’দপ মেয়ে কোথাকার।ইফতি চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
-‘ এই মেয়েকে যে আমি কি করবো কে জানে? অসহ্যকর একটা মেয়ে। এমন তারছি’রা মেয়ে আমি আমার লাইফে দেখিনি।তবে যাই হোক এই তারছি’রা মেয়েটাকেই আমার চাই।কিন্তু এই মেয়েটাকে যে কিভাবে বুঝাই? উফ,অস’হ্য।’

#চলবে__________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here