#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৩
এখন পুরোপুরি সুস্থ আরাবী।নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারে।কোন সমস্যা হয় নাহ।তাই জায়ানও আজ দুদিন হয়েছে অফিস জয়েন করেছে।অবশ্য যেতে চায়নি।আরাবীই ঠেলেঠুলে পাঠিয়েছে।কতো আর ঘরে বসে থাকবে? জিহাদ সাহেব,মিহান সাহেব তো বয়স্ক মানুষ।বেচারা ইফতির উপরেই প্রেসার পরে যায় বেশি।আর তাছাড়া আলিফা আর ইফতির নতুন নতুন প্রেম।কয়েকদিন পর বিয়েও হবে।অথচ ওর কারনে তারা ঠিকঠাকমতো যে একে-অপরের সাথে একটু ফোনালাপও করতে পারে না তা বেশ বুঝে আরাবী।আলিফা মেয়েটা যতোই নিজের মন খারাপ লুকিয়ে রাখুক।আরাবী ঠিকই বুঝে যায়।আরাবী আজ ভার্সিটি যাবে।কতোদিন হয়েছে যায় নাহ। বাড়িতেই জায়ান সব নোটসগুলো এনে দেয়।আবার আলিফাও মাঝে মাঝে এসে ওকে হেল্প করে।
ভার্সিটিতে এসে দেখে আলিফা আগেই দাঁড়িয়ে ভার্সিটর বড় মেহগনি গাছের নিচে।আরাবী এগিয়ে গেলো আলিফার কাছে।আলিফা ওকে দেখেই জড়িয়ে ধরল।ক্ষানিকটা সময় পর আরাবীকে ছেড়ে দিয়ে বলে,’ কেমন আছিস তুই?’
‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তোর কি খবর?’
‘ আমিও ভালো আছি।তোর শরীরের অবস্থা কেমন?এখনও কোথায় ব্যথা ট্যথা আছে নাকি?’
‘ নাহ নেই।তাই তো উনি আমায় আসতে দিলেন ভার্সিটিতে।নাহলে তো বিছানা থেকেও নামতে দেয় নাহ।’
‘ বাহ বাহ কত্তো প্রেম,কত্তো ভালোবাসা।’
আরাবী চোখ ছোটো ছোটো করে তাকাল।বলল,’ ওহ?আমার সময় এমন করছিস।তুই মনে হয় ধোঁয়া তুলসীপাতা। ইফতি ভাইয়ার সাথে মনে হয় অন্য মেয়ে প্রেম করে।’
জিভ কাটল আলিফা।বলল,’ আরেহ কি বলছিস।এমন কিছুই নাহ।’
‘ কেমন কিছু তা আমি ভালোভাবেই জানি।দুজনে যে বিয়ের জন্যে পাগল হয়ে গিয়েছ তা খুব ভালোভাবেই জানি।’ তিপ্পনি কাটল আরাবী।
আরাবীর কথায় তেতে উঠল আলিফা।বলে,’ নিজের কি হ্যা?নিজে তো বিয়ে করে দিব্বি জামাই নিয়ে সুখে আছ।আমি যে তোমার বেষ্টফ্রেন্ড আমার কথা একটু ভাবিস তুই?’
‘ ভাবি না কে বলল?আমিই তো সবচেয়ে বেশি ভাবি।’
‘ কি ভাবিস তুই?’
‘ এইযে তুই যেন ইফতি ভাইয়ার সাথে ভালোভাবে প্রেম করতে পারিস তাই তো নিজের বরকে ঠেলেঠুলে অফিসে পাঠালাম।’ বলল আরাবী।
আলিফা এইবার চুপ করে রইল।আরাবী বলে,’ আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।তাই উনাকে বলব যাতে খুব শীঘ্রই তোদের বিয়ের ডেইট ফিক্স করেন।খুব তাড়াতাড়িই তোদের বাড়িতে যাবো আমরা।তৈরি থাকিস।’
বিয়ের কথা শুনে লজ্জা পেল আলিফা।প্রতিত্তরে মুঁচকি হাসল। তা দেখে আরাবী বলে,’ ইস,লজ্জায় টমেটো হয়ে গেল একদম।’
‘ তুই বুঝি লজ্জা পাসনি?জায়ান ভাইয়াকে দেখে তো পারলে লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যাস।’ আরাবীকে খোটা দিতে পেরে গর্বে বুক ফুলে গেল আলিফার।
‘ আর তুই বুঝি তা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছিস?’
‘ আমি কেন লুকিয়ে দেখতে যাব?চোখের সামনেই তো সব ঘটেছে।’
‘ হয়েছে চুপ কর।’
তুই বান্ধবী এইভাবে খুনশুটি করে ভার্সিটির সময়টুক পার করল।ভার্সিটি ছুটি হতেই দুজনেই বাড়ি ফিরে যায়।বাসায় এসে দেখে আরাবী বাড়িতে বেশ তোড়জোড় করে আয়োজন চলছে।কি হচ্ছে ব্যাপারটা বুঝল না আরাবী।তাই সোজা রান্না ঘরের দিকে এগোলে।দু শাশুড়ি মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে।রান্না ঘরে যেতেই দেখে তারা খাবারের বেশ জমজমাট আয়োজন করছেন।আরাবী সাথি বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘ আজ এতো আয়োজন কিসের মা?মানে আজ কি কোন বিশেষ দিন?’
সাথি বেগম ইলিশ মাছ ভাজছিলেন।ছেলের বউয়ের প্রশ্ন শুনে তিনি হেসে বলেন, ‘ না কোন বিশেষ দিন নাহ।তোমার ফুপা শশুড় আসছেন আমেরিকা থেকে।অনেক বছর হয়েছে তিনি আসেন নাহ।অনেক বছর মানে অনেক।মিথিলা আপা আর অহনা তো সেই জন্যেই আমেরিকা ব্যাক করেছিল।মূলত তোমার বাবাই আপাকে বলেছিল তারা যেন ভাইয়াকে নিয়েই আবার এই বাড়িতে আসেন।জানো তো একটা বিষয় মিথিলা আপা যেমনই হোক ভাইয়া কিন্তু অনেক ভালো।একদম খাটি মনের মানুষ।’
সাথি বেগমের কথায় বেশ ভালো লাগল আরাবীর।সাথি বেগম যেহেতু বলেছেন তাহলে নিশ্চয়ই ভালো মনের মানুষ হবে লোকটা।আরাবী হাসিমুখে বলে,’ মা আমি কোন হেল্প করব?’
মিলি বেগম দ্রুত পায়ে ওর কাছে এসে বলে,’ কোন হেল্প লাগবে না তোমার। তুমি যাও রেস্ট কর।’
‘ টানা কতোদিন রেস্ট করেছি সেই হিসেব করেছেন আপনারা?আর কতো কাকিমা।ভারি কোন কাজ করব না তো।এইতো হালকা পাতলা কিছু হেল্প করি।’
দুজন হার মানলেন আরাবীর কাছে।মিলি বেগম বলেন, ‘ লেবুগুলো কেটে শরবত বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দেও।তারপর গেস্টরুম দুটোতে গিয়ে দেখে আসো একটু ঠিকঠাকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়েছে কিনা।’
‘ আচ্ছা কাকিমা।’
আরাবী মিলি বেগমের কথা মতো কাজ করতে চলে গেল।শরবত বানানোর কাজ শেষ করে আরাবী গেলো গেস্টরুমের পরিষ্কারের কাজ কতোটুক হয়েছে তা দেখার জন্যে।গিয়ে দেখল কাজ প্রায় শেষ তাও আরেকটু বলে কয়ে সবাইকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলল আরাবী।সব কাজ শেষ করে আবার রান্নাঘরে ফিরে আসল।বলল,’ সব কাজ শেষ আম্মু,কাকিমা।আর কিছু বাকি আছে?যা আমি করতে পারব?’
‘ নাহ, আর কিছু বাকি নেই।এইবার তুমি যাও ফ্রেস হয়ে আস।তোমার বাবা,কাকা,জায়ান আর ইফতি বোধহয় এখনই এসে পরবে।’
অবাক হলো আরাবী শুনে। জায়ানও যে তাদের এয়ারপোর্টে গিয়ে রিসিভ করতে যাবে তা তো বলেনি আরাবীকে। এমনকি যে তার ফুপা আসবে এটাও জানায়নি।যাক অতোশতো ভাবল নাহ আরাবী।মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেলে দিল।তারপর ফ্রেস হতে চলে গেল।বাড়িতে মেহমান আসবে তাই সুন্দর দেখে একটা বেবি পিংক কালারের জামদানি শাড়ি পরল ফ্রেস হয়ে।কানে,গলায়,হাতে স্বর্ণের গহনা পরে নিল।চুলগুলো বেনি করে নিল আরাবী।এমন সময় রুমে প্রবেশ করল জায়ান।আরাবী আয়নায় জায়ানকে দেখেই উঠে দাঁড়াল।জায়ান খেয়াল করেনি আরাবীকে। আরাবী কাছে যেতেই ওকে দেখে থমকে যায় জায়ান।পরক্ষনে মুঁচকি হেসে বলে,’ ভীষণ সুন্দর লাগছে।’
‘ ধন্যবাদ।’ লাজুক হেসে বলে আরাবী
তারপর জায়ানের গায়ের কোট খুলতে সাহায্য করল। জায়ান বলে,’ আজ ভার্সিটির দিন কেমন কাটল।’
আরাবী হেসে দিয়ে বলে,’ ক্লাস করলাম কোথায়?আজ দু বান্ধবী চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছি।’
‘ এইজন্যেই কি তোমাকে আমি ভার্সিটি যাওয়ার পারমিশন দিয়েছি?’
‘ আহ, এমন করছেন কেন?আজ কতোদিন পর ভার্সিটিতে গেলাম।তাই আড্ডা দিয়েই দিন কাটিয়েছি।’ নিজের দোষ ঢাকতে তা বুঝার জন্যে বুঝালো আরাবী
‘ হয়েছে আর বলতে হবে নাহ।’
‘ হুম যান ফ্রেস হয়ে আসুন।’
‘ ফুপা এসেছে।’ আচমকা বলল জায়ান।
আরাবী মুঁচকি হেসে বলে, ‘ শুনেছি আমি।মা বলেছেন।আপনি কি মনে করেছেন আপনি না বললে মনে হয় আমি জানতে পারব নাহ।’
বলেই আরাবী আলমারির দিক চলল জায়ানের জামা কাপড় বের করে দিবে বলে।তার আগেই জায়ানের শীতল কন্ঠের ডাকে থেমে গেল।
‘ আরাবী?’
‘ হুঁ!’
‘ যদি কোনদিন এমন কোন সত্যের সম্মুখীন হও তুমি।যা তুমি কখনও কল্পনাও করোনি।তাহলে কি করবে তুমি?’
জায়ানের হঠাৎ এমন গম্ভীর কণ্ঠে বলা কথাগুলো শুনে থমকে গেল আরাবী।হঠাৎ জায়ান এমন একটা কেন বলল?কি এমন কারন? আরাবী বেশ ঠান্ডা গলায় বলে,’ হঠাৎ এসব বলার মানে কি? কেন আপনি এমন কথা বলছেন?’
জায়ান থমথমে গলায় বলে, ‘ আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দেও। ‘
‘ কিছুই করব নাহ।হয়তো কষ্ট হবে।কিন্তু ভেঙে পরবো নাহ। আর বাদ বাকি রইল যা হবার হবে।আপনি আছেন তো।’
জায়ানের মনটা শান্ত হলো আরাবীর কথায়।আরাবী কাছে গিয়ে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,’ হুম।আমি আছি তোমার কাছে পাশে সবসময়, আজীবন।’
‘ আমি জানি।’
#চলবে_________
ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।ইনশাআল্লাহ কালকেও পাবেন।একটু ছোটো হচ্ছে মানিয়ে নিয়েন একটু।#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৪
জায়ানের সাথেই নিচে নেমে আসল আরাবী।উদ্দেশ্য ফুপা শশুড়ের সাথে সাক্ষাত করবে।আবার একটু কেমন যেন লাগছে।মিথিলা বেগম এসেছেন।তিনি তো আবার আরাবীকে দেখতে পারেন নাহ।জায়ান হয়তো বুঝতে পারল বিষয়টা।আরাবীর হাত ধরে ধীর আওয়াজে বলে,’ ডোন্ট ওয়েরি।ফুপা এসেছেন।ফুপার সামনে ফুপি কিছুই বলবেন না।আর যদি বলেনও আমি আছি তো।’
জায়ানের ভরসা পেয়ে মুঁচকি হাসল আরাবী।দুজনে বসার ঘরের দিকে অগ্রসর হলো।আরাবীকে দেখে আহানা এসে ওকে জড়িয়ে ধরল।আকস্মিকতায় অবাক হলো আরাবী।আহানা বলছে, ‘ তোমাকে অনেক মিস করেছি আমি আরাবী।তুমি এক্সিডে’ন্ট করেছ শুনে আমার অনেক খারাপ লেগেছে।কিন্তু ব্যস্ততার কারনে আসতে পারিনি আর ড্যাড এরও কাজ শেষ হচ্ছিলো না তাই আসতে পারছিলাম নাহ।’
আরাবী সরে আসল আহানার থেকে।জোড়পূর্বক হেসে বলে, ‘ ইট্স ওকে আপু।আমি এখন ঠিক আছি।তুমি ভালো আছ?’
‘ হ্যা অনেক ভালো আছি।তোমার অবস্থা কেমন?’
‘ আ’ম নাও টোটালি ফাইন।’
‘ দেট্স গ্রেট।’
পরক্ষনে আবারও আহানা বলে,’ ওহ চলো আমার ড্যাডের সাথে তোমার মিট করাই।’
আহানা আরাবীর হাত টেনে নিয়ে গেল এক নিহান সাহেবের বয়সী একজন লোকের সামনে তারপর তাকে ইশারা করে বলে,’ হিজ মাই ড্যাট। আর ড্যাট ও হলো আরাবী।জায়ানের ওয়াইফ।’
‘ জি আসসালামু আলাইকুম।’
আহানার বাবা সালামের আরাবীর সালাম দেওয়া শুনে মুচকি হেসে বলেন,’ওয়া আলাইকুমুস সালাম। মাশা-আল্লাহ। জায়ান বাবার পছন্দ আছে দেখছি।একদম হুরপরি বউ এনেছে।’
আরাবী কিছুই বলল না।শুধু একধ্যানে তাকিয়ে রইল লোকটার দিকে।কেমন যেন লাগছে বুকের মাঝে।লোকটা প্রথম দেখাতেই আরাবী অদ্ভূত একটা টান অনুভব করছে লোকটার প্রতি।মনে হচ্ছে সোফায় বসা এই লোকটা আরাবীর চেনা।অনেক আগের চেনা।কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?লোকটাকে দেখেই কেন যেন আরাবীর চোখ ভিজে উঠতে চাইছে বারবার।এমন সময় পাশে কারো উপস্থিতি লক্ষ্য করে তাকায় আরাবী।জায়ান আরাবীর হাত ধরল।তারপর দৃষ্টি তাক করল ওর ফুপার দিকে।বলল,’ ধন্যবাদ ফুপা।আর রইল আপনার কথা।আপনারই রক্ত রইছে ওর শরীরে।সুন্দর না হয়ে যাবে কই।’
আরাবী চমকে তাকাল।জায়ানের ফুপাও অবাক হয়ে বলেন,’ মানে কি বলছ তুমি জায়ান?’
জায়ান বাঁকা হেসে বলে,’ আরেহ ওই তো আপনি একবার বাবাকে রক্ত দিয়েছিলেন না?তখন জেনেছি আপনার রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ।আর আরাবীরও ও পজেটিভ।এখন আপনিই দেখতে সুন্দর।আমার আব্বুও সুন্দর।আরাবীও সুন্দর।ও পজেটিভ রক্তের অধিকারিরা বুঝি সবাই সুন্দর হয়। তাই তো বললাম আপনার শরীরের রক্তও ওর শরীরে বইছে।এইজন্যেই ও সুন্দর।’
জায়ান সবাইকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলল।সবাই জায়ানের রসিকতায় হো হো হেসে দিল।কিন্তু আরাবীর কেন জানি জায়ানের অহেতুক লজিকটা ভালো লাগছে না।কিছু তো একটা জায়ান লুকোচ্ছে।আরাবীর মস্তিষ্ক কিলবিল করে উঠল।ছোটো মনে চিন্তারা এসে হানা দিল।মন বারবার কু ডাকছে তার।কিছু তো একটা খারাপ হতে চলেছে।কিন্তু কি হবে?মনের অস্থিরতা কাউকে বুঝতে না দিল না আরাবী।আস্তে করে বলে, ‘ আমি মায়ের কাছে গেলাম।টেবিলে খাবার দিতে হবে।’
‘হুম যাও।আজ কিন্তু তুমিই ফুপাকে সার্ভ করবে আরাবী।’
‘ জি আচ্ছা।’
জায়ানের অদ্ভূত সব কথাবার্তা আর ব্যবহারগুলো ভালো ঠেকছে না আরাবীর কাছে।তাও সেখান থেকে সরে আসল।সাথি আর মিলির সাথে খাবার সাজাতে হেল্প করল ও।নূর গিয়ে ডেকে আনল সবাইকে।সবাই এক এক করে চেয়ার টেনে বসল।আরাবী পোলাওয়ের বাটি নিয়ে সবাইকে সার্ভ করতে লাগল।তারপর জায়ানের ফুপার কাছে আসতেই জায়ান রহস্যময় হেসে বলে,’ ভালোভাবে খেয়ে নিন ফুপাজি। ও তো আপনারই সন্তান। মেয়ের হাতে সার্ভ করা খাবারটা পেট ভরে খাবেন কিন্তু।’
জায়ানের ফুপা ভ্রু-কুচকে তাকালেন।জায়ান তা দেখে বলে,’ মানে আহানা আপনার মেয়ে।আপনিই তো নূরকেও নিজের মেয়ে বলে দাবি করেন।আর আজ থেকে আরাবীও সেই তালিকায় যুক্ত হলো।কি ঠিক বললাম নাহ ফুপা?’
‘ হ্যা হ্যা অবশ্যই,অবশ্যই।আজ পেট ভরে খাবো।আরাবী দেও মা প্লেট ভরে খাবার দেও।আজ কতোদিন পর নিজের দেশে আসলাম।’
আরাবী তাকে সার্ভ করে জায়ানের দিকে তাকাল।জায়ান চোখের ইশারায় ওকে বসতে বলল।আরাবী বসল।এখন জায়ানের ফুপা আরাবীর একপাশে আর অন্যপাশে জায়ান।আরাবী এইবার ফিসফিস করে জায়ানকে বলে,’ আপনি আজ এমন অদ্ভূত বিহেইভ করছেন কেন?’
‘ কোথায় অদ্ভূত বিহেইভ করলাম আরাবী?’ এমন ভাব করল জায়ান।যেন সে কিছুই জানে না।
আরাবী চিন্তিত স্বরে বলে,’ আপনি তো খাবার সময় এতো কথা বলেন নাহ।’
‘আজ ফুপা এতো বছর পর এসেছে।তাকে সেই আমি ছোটো থাকতে সামনাসামনি দেখেছি।তাকে এতোদিন পর পেয়ে কথা যেন ফুরাচ্ছে না আমার।’
আরাবী কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে রইল জায়ানের দিকে।জায়ানের সবার অগোচরে আরাবীর বামহাত চেপে ধরল।কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,’ এতো চিন্তা করো কেন শুধু শুধু বলো তো? আমি আছি তো।’
আরাবীর সকল চিন্তা যেন এক নিমিষেই গায়েব হয়ে গেল জায়ানের এই একটা বাক্যে। ও আর কথা বাড়াল না।চুপচাপ খাবারে মনোযোগী হলো।এদিকে খেতে খেতে নিহান সাহেব বলে উঠেন,’ শামিম দেশে এসেছেন এতোদিন পর।জায়ানের বিয়েটা তো এটেন্ড করতে পারেনি।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইফতির বিয়েটা শামিম থাকতে থাকতেই সেরে নিব।কি বলো সবাই?’
ইফতি নিজের বিয়ের কথা শুনে খুক খুক করে কেশে উঠলো। নূর একগ্লাস পানি এগিয়ে দিল ওর দিকে।ইফতি ঢকঢক করে একগ্লাস পানি খেয়ে নিল।তারপর বড়ো বড়ো চোখে নিহান সাহেবের দিকে তাকাল।ওর এমন রিয়েকশনে নূর খিলখিল করে হেসে দিল।আর বাকি সবাই মুখ টিপে হাসছে।জায়ান বলে,’ হ্যা বাবা।তুমি আজ এই কথাটা না উঠালেও আমিই বলতাম।অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।এইবার আর না পিছানই ভালো।’
নিহান সাহেব মাথা দুলিয়ে সায় দিলেন ছেলের কথায়।তারপর শামিম মানে জায়ানের ফুপা।তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ কি শামিম?থাকতে পারবে তো? আমি কিন্তু কোন এক্সকিউজ শুনব নাহ।’
জায়ান তাকাল শামিম সাহেবের দিকে।রহস্যময় হেসে বলে,’ ফুপার এইবার পালিয়ে যাবার কোন পথ নেই।এইবার আমি সব পথ বন্ধ করে দিয়েছি।সে চাইলেও পালাতে পারবে নাহ।আমি তা কখনই হতে দিব নাহ।’
শামিন সাহেব ভ্রু-কুচকে বলেন,’ পালিয়ে মানে?’
জায়ান হেসে হেসে বলে,’ উম, আমি ছোটো ছিলাম তখন তুমি আমাকে না জানিয়েই চলে গিয়েছেলি।মানে আমার থেকে একপ্রকার পালিয়েই তো গিয়েছিলে তাই নাহ? এখন তো আমি বড় হয়েছি তাই এখন আর আমানে না জানিয়ে আমাকে ফাকি দিয়ে পালিয়ে যেতে দিব নাহ।’
‘ ওহ তাই বলো।তুমি যে এতো রসিকতা করতে পারো জানতাম নাহ।’ বলেই শামিম সাহেব হো হো করে হেসে দিলেন।
আরাবীও বিরবির করল,’ আমিও জানতাম নাহ।যেই লোকের মুখে বো’ম মারলেও সহজে একটা কথা ঠিকঠাকভাবে বের হয় না কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে।সেখানে আজ যেন লোকটার মুখে খই ফুটেছে।এতো কথা তো সে আমার সাথেও বলে নাহ।’
‘ কি বিরবির করছ আরাবী?’
জায়ানের প্রশ্নে থেমে যায় আরাবী।বলে,’ না কিছু না।’
‘ জলদি খাও।সেই এক চামচ পোলাও নিয়েই বসে আছ।বাকি খাবার কখন খাবে?এখনও কতো কতো পদের রান্না করা খাবার বাকি।সব খাবার থেকে অল্প অল্প করে খাবে।সামনে তোমার অনেক শক্তির প্রয়োজন।’
টেবিলের দিকে তাকাল আরাবী।পুরো টেবিল জুড়ে কম হলেও দশ থেকে বারো পদের রান্না করা খাবার।সব খাবার থেকে অল্প করে খেলেও দুনিয়ার খাবার হবে আরাবীর জন্যে।এতো খাবার আরাবী ওর ইহ জনমে কোনদিন খায়নি।আরাবী চোখ বড়ো বড়ো করে পলক ঝাপ্টে বলে,’ আপনি কি পাগ’ল?এতোগুলো খাবার থেকে আমি অল্প করে নিলে ঠাসা ঠাসা একপ্লেটের থেকেও বেশি খাবার হবে।আমি এতো খাবার আমার জীবনে কনোদিন খায়নি।’
জায়ানের কোন হেলদোল দেখা গেল না আরাবীর কথায়।ও ডোন্ট কেয়ার মুড নিয়ে বলে,’ খাওনি তো কি হয়েছে?এখন থেকে খাবে।’
‘ কোনদিন নাহ।আমি পারব নাহ।’
‘পারতে হবে।’
‘ কেন?’
দুজনে আস্তে আস্তেই কথাগুলো বলছিল।কিন্তু এইবার জায়ান তরকারি বাটি নেওয়ার উছিলা দেখিয়ে ঝুকে আসল আরাবীর দিক।তার শীতল কণ্ঠে ধীর আওয়াজে বলে,’ কারন ভবিষ্যতে তুমি আমার বাচ্চার মা হবে এইজন্য।’
#চলবে_________