##হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩৬
লেখনীতেঃভূমি
অদ্রিজার লাবন্যময়ী ধবধবে ফর্সা, লতিয়ে পড়া শরীরে কালো রাঙ্গা শাড়িটা এলেমেলো হলো।ফর্সা ফুলো পেটের উপর থেকে সরে গেল শাড়ির একাংশ।মুহুর্তেই চোখের সামনে দৃশ্যমান হলো মুগ্ধ করা পেটের সেই মসৃন ত্বক।রক্তিম নেশালো চাহনিতে তাকিয়ে থেকেই মৃদু হাসল।দু পা এগিয়েই নিজের ট্রাইটা খুলে রেখেই ক্লান্ত শরীরটা সোফায় এলিয়ে দিল।চোখজোড়া কিছুক্ষন বন্ধ রেখেই আবার ও মেলে ধরল।অদ্রিজার দিকে আবারও তাকাতে গলা শুকিয়ে আসল মুহুর্তেই।সঙ্গে সঙ্গেই সামনের বোতলটা থেকে ঢগঢগ করে পানি গিলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল সে।ঘড়িতে তখন মাত্র সন্ধ্যে ছয়টা।এই ভর সন্ধ্যায় অদ্রিজার ঘুমন্ত মুখটা দেখে নিয়েই ছোট্ট শ্বাস ফেলল।প্র্যাগনেন্সির শুরু থেকে অদ্রিজার ক্লান্তিটা বুঝে উঠেই চোখমুখ গম্ভীর করল সে।ধীর পায়ে কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই কানে এল অত্রিয়া আর রায়মানের চাপা গলা।রক্তিম ভ্রু কুঁচকাল।দরজাটা হালকা ভিড়িয়ে দিয়েই বেরিয়ে আসল রুম থেকে।ড্রয়িং রুমের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে থাকা রায়মান আর অত্রিয়ার দিকে চোখজোড়া সরু করে তাকাতেই অত্রিয়া খিলখিলিয়ে হাসল।ভ্রু নাচিয়েই বলে উঠল,
‘আপনার বন্ধুর জন্য একটা সুন্দরী মেয়ে দেখেছি জিজু।মেয়েটারও আপনার এই খারাপ দেখতে বন্ধুকে পছন্দ।শুধু পছন্ত নয় চরম রকম পছন্দ। এখন আপনার বন্ধু বিয়ে নিয়ে এত সিরিয়াস হয়েও এই মুহুর্তে মজা করছে।মেয়েটার প্রতি অন্যায় হয়ে যাচ্ছে না বলুন?’
রক্তিম ঠোঁট টেনে হাসল।মৃদু গলায় বলল,
‘ রায়মানের জন্য তো পাত্রী অনেক আগে থেকেই ঠিক করা আছে।তুমি কেন শুধু শুধু কষ্ট করে মেয়ে দেখতে গেলে অত্রিয়া?বৃথা কষ্ট করলে!’
অত্রিয়া বড়বড় চোখে একবার রায়মান তো একবার রক্তিমের দিকে তাকাল।ভ্রু কুঁচকেই বলে উঠল,
‘ সত্যি?মানে সত্যিই? উনি এটা নিয়েও মজা করলেন।কি সাংঘাতিক!কষ্ট পেলাম।’
রক্তিম হাসল।এগিয়ে গিয়ে রায়মানের কানের কাছে কিছু বলেই হু হা করে হেসে উঠল দুজনই।সেই হাসির কম্পনে কম্পিত হলো পুরো রুম।অত্রিয়া বোকার মতোই চেয়ে রইল।দুইজনের হঠাৎ রুম কাঁপানো এই হাসির কোন অর্থ খুঁজে না পেয়েই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল সে।কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হলো?হাসছেন কেন আপনারা?কি এমন বললাম আমি।’
রক্তিম মুখটা নিষ্পাপ বাচ্চার মতো করার চেষ্টা করল।হাসিটা চেপে রাখার অদম্য চেষ্টা চালিয়েই কন্ঠটা গম্ভীর করে বলে উঠল,
‘ নাহ, কি বলবে তুমি। তুমি একেবারেই ছোট। ঐ ছোটমাথায় আমাদের হাসির বিষয়বস্তু বোধগম্য হবে না।তার থেকে রায়মানের জন্য মেয়ে দেখতেই থাকো।ওর পছন্দ না হলে আমাকে ট্রান্সফার করে দিও তাদের। আমি এখনো পিউর সিঙ্গেল!যতজনই আসুক, সামলে নিব।শতহোক সুন্দরীদের ফেরানো যায় না। বলো?’
অত্রিয়া ঠোঁট উল্টাল।রক্তিমের কথার বিনিময়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই রক্তিমের পেঁছন থেকে এক সূক্ষ্ম নারীকন্ঠ ঝংকার তুলে বলে উঠল,
‘ এক্চুয়েলি!রায়মান ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখার সময় উনার জন্য ও পার্ফেক্ট দেখে কয়েকটা মেয়ে চুজ করে ফেলিস অত্রি।আমি চলে যাওয়ার পর বেচারা একা একা দেবদাস হয়ে থাকবে নাকি বল!আমি উনাকে একটা সুন্দরী রমণীর হাতে তুলে দিয়ে তবেই নিশ্চিত হয়ে সুখে সংসার করব।নয়তো দেখা যাবে উনার অভিশাপে আমার ভবিষ্যৎ সংসার দুদিনেই ভেঙ্গে যাবে।’
রক্তিম ঘাড় ঘুরাল।নজর তীক্ষ্ণ করে অদ্রিজার ঘুম ঘুম ফুলে থাকা চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন।অদ্রিজার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসিটা দেখে নিয়েই চোখেমুখে তীক্ষ্ণতার সাথে যোগ হলো বিস্ময়।অদ্ভুত!এই রমণীর হঠাৎ এত পরিবর্তন?তার প্রতি রাগ অভিমান সব মিটে গেছে নাকি?রক্তিম বুঝল না।মনকে বার কয়েক জিজ্ঞেস করেও বিশেষ লাভ হলো না।চোখজোড়া সরু রেখেই কয়েক পা এগিয়ে অদ্রিজার সামনে দাঁড়াল।মৃদু গলায় বলল,
‘ একটা কথা কিছুতেই বুঝতে পারছি না অদ্রিজা।আপনার এই পরিবর্তনের রহস্য কি?কাইন্ডলি বলবেন?আর বিয়েরই বা এত শখ উতলে উঠল হঠাৎ?আমার আপনার ডিভোর্স হয়ে যায় নি মনে রাখবেন।বেশি বিয়ে বিয়ে বলে লাফালাফি করবেন তো দড়ি দিয়ে বেঁধে বাসায় আটকে রাখব।ভালো হবে?’
অদ্রিজা কপাল কুঁচকে ফেলল।রক্তিমের কথার পিঠেই বলে উঠল,
‘ কেন, কেন?বেঁধে রাখবেন কেন?আশ্চর্য!আমি বিয়ে করলে আপনার সমস্যা কি? আপনাকেও সুন্দরী কোন মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিব।নো চিন্তা!’
রক্তিম দাঁতে দাঁত চাপল।কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো একহাত দিয়ে পেঁছনে ঠেলে দিয়েই নিশ্চল চাহনিতে অদ্রিজার দিকে তাকাল কয়েক সেকেন্ড।মুহুর্তেই ঠোঁট বাঁকিয়ে মুচকি হাসল।অদ্রিজার কানের কাছে মুখ এনেই ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ ইয়েস!চিন্তা কিসের।সুন্দরী মেয়ে পেলে দ্বিতীয় বিয়ে করতে নিষেধ নেই আমার। দুই সুন্দরী বউ নিয়ে সংসার জীবন ভালোই কাঁটবে আমার।কিন্তু কথা হলো আপনাকে নিয়ে।আপনি সহ্য করতে পারবেন তো আমার পাশে আমার দ্বিতীয়, সুন্দরী স্ত্রীকে?না মানে, শুনেছিলাম বাঙ্গালি মেয়েরা নাকি তাদের ভালোবাসার মানুষের পাশে কাউকে সহ্য করতে পারে না।তাহলে, আপনি পারবেন তো?’
অদ্রিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখে তাকাল।রক্তিম নামক অভদ্র লোকটার কলার ধরে সটান একটা ঘুষি বসাতে মন চাইল তৎক্ষনাৎ। তারই সামনে কত সুন্দরভাবে, নির্দ্বিধায় বলে দিচ্ছে দ্বিতীয় বিয়ে করতে কোন সমস্যা নেই তার?এত সহজেই বলে দিল?কথাগুলো ভেবেই যুবতী মনটা বিদ্রোহের ঘোষণা দিল।টলমল করে চোখজোড়া ভাসাতে মন চাইল মুহুর্তেই।নরম হৃদয়টা ভীষণ অভিমানী কন্ঠে কিছু কথা বলতে চাইল।কিন্তু না!মস্তিষ্ক খুব শান্ত ভাবে নির্দেশ পাঠাল যে,অভিমান,কান্না, কিংবা নিজের স্বচ্ছ অনুভূতির এইটুকুও এই অভদ্রলোকের সামনে প্রকাশ করা যাবে না।কিছুতেই না।সঙ্গে সঙ্গেই চিবুক শক্ত হলো অদ্রিজার।ভ্রু জোড়া কুঁচকে ভীষণ শান্ত গলায় বলল,
‘ কেন পারব না?আমি কি আপনাকে ভালোবাসি নাকি মিঃ রক্তিম মাহমুদ যে আপনার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারব না?অদ্ভুত!’
রক্তিম হালকা হাসল। কোন উত্তর না দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে অত্রিয়া আর রায়মানের দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসল।সোফায় বসতে বলেই হোতজোড়া বুকে ভাজ করে দাঁড়াল।ঠোঁট টেনে বলে উঠল,
‘ ভীষণ রকম অদ্ভুত!তো মেয়ে চুজ করে নিয়েছেন?বিয়ে কবে করতে হবে?চটফট বলে ফেলুন।আমার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার সাথে সাথেই যাতে তার দ্বিতীয় মাকেও দেখতে পায় সে ব্যাবস্থা করতে হবে না?’
অদ্রিজাএবার জ্বলে উঠল।দৃষ্টিটা ক্রমশ সরু করেই কন্ঠে ঝংকার তুলে বলে উঠল সে,
‘ আমি আসলেই অবাক হয়ে যাই,এত অনায়াসে আমার সন্তান বলছেন কি করে। আর হ্যাঁ!আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করুন সমস্যা নেই।কিন্তু আমার সন্তানের দ্বিতীয় মা বলে সম্বোধন করবেন না কাউকে।তার মা কেবল আমি এবং আমি।আমার সন্তানকে আপনার সাথেও শেয়ার করব না আমি।দ্বিতীয় মায়ের সাথে শেয়ার করা তো দূর!মাইন্ড ইট!’
রক্তিম ঠোঁট টেনে হাসল।ভ্রু কুঁচকে নিয়ে অদ্রিজার রাগে জ্বলজ্বল করা মুখটার দিকে তাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল অদ্রিজার গোলগাল ফুলো মুখটাকে।ঠোঁট কাঁমড়েই বলল,
‘ তাহলে আপনি কি করে ভাবলেন আপনার দ্বিতীয় স্বামীর সাথে আমি আমার সন্তানকে শেয়ার করব?আমার তো আপনার দ্বিতীয় স্বামীর কথা ভেবেই হাসি পাচ্ছে অদ্রিজা।বেচারা আপনার বর হবার আগেই ইন্তেকাল করবে!দারুণ!’
অদ্রিজা কপাল কুঁচকে রেখে কিছুটা সময় তাকাল।তারপরই মুখ চোখ থমথম করে কিছু না বলেই হনহনিয়ে রুমের ভেতরে ডুকল।আর রক্তিম তার হনহনিয়ে চলে যাওয়া দেখেই হেসে উঠল।দুই পা পিঁছিয়ে সোফায় বসে পড়েই ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ হঠাৎ দুই দুইজনই একসাথে?কি ব্যাপার বলোতো!তোমাদের আকস্মিক দেখা করার প্ল্যান ট্ল্যান ছিল নাকি?নাকি মিরাক্কেল!’
অত্রিয়া খিলখিলিয়ে হাসল।রক্তিমের কথা শেষ হওয়ার পর পরই বলে উঠল,
‘ মিরাক্কেল, মিরাক্কেল!’
রক্তিম ঠোঁট চওড়া করে হাসল।রায়মানের দিকে তাকিয়েই বলল,
‘ কিরে!মিরাক্কেল?’
রায়মান গম্ভীর গলায় গমগমে করে বলল,
‘ নাহ!ও আমায় কোনভাবে ফলো টলো করে চলে এসেছে নিশ্চিত।সাংঘাতিক মেয়ে!’
অত্রিয়া মুখ ফুলাল।চোখের দৃষ্টি সরু করেই বলে উঠল,
‘ মোটেই না!আমি আপনাকে ফলো করতে যাব কেন।এটা আমার আপুর বাসা।যখন তখন আসতে পারি আমি।এখানে আসতে হলে আপনাকে ফলো করা লাগবে কেন?অদ্ভুত!’
রায়মান রক্তিম দুইজনই হু হা করে হাসল।অত্রিয়া আবারও বোকার মতো চেয়ে থাকল।কি এমন বলল সে যে এভাবে হাসতে হবে!অদ্ভুত।সূক্ষ্ম নজরে ঐ দুই বন্ধুর দিকে তাকিয়ে রইল কথাগুলো ভেবেই।রায়মান ঠোঁট চওড়া করা সেই হাসি নিয়েই বলে উঠল,
‘ ফলো করতেই পারো।ঐটুকু মেয়ে হয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে কাউকে গিলে খেয়ে নিতে পারলে এটা আর কি এমন ইম্পসিবল কাজ?হতেই পারে আমাকে ড্যাবড্যাব করে দেখার জন্য ফলো করছিলে আমায়।আর ফলো করতে করতে এখানে এসে হাজির!হতেই পারে!’
অত্রিয়া ভ্রু বাঁকাল কথাগুলো শুনে।আর রক্তিম আর রায়মান আবারও একসাথে আওয়াজ করে হাসল।ছোট্ট অত্রিয়ার ফুলিয়ে রাখা গাল, বাঁকানো ভ্রু, আর ঠোঁট উল্টানো দেখেই হাসিটা দ্বিগুণ হলো তাদের!
.
অদ্রিজা বেলকনির একধারেই বসে ছিল।দৃষ্টিটা আকাশের পানে।লতানো ছোট্ট রূপবতী শরীরটায় জড়ানে কালো রাঙ্গা শাড়িটায় বেলকনির হলদেটে আলো স্পষ্ট।লাবন্যময়ী শরীরের ভাজে ভাজে লাবন্যময় সৌন্দর্যের আভাস।নরম ফর্সা গালে আদুরে সৌন্দর্যের ঢেউ!রক্তিম মুচকি হেসেই চাপা স্বরে বলে উঠল,
‘আপনার সৌন্দর্য দিন দিন বাড়ছেই অদ্রিজা।দিনের পর দিন আপনি যে চরম রকম সুন্দর হয়ে উঠছেন, জানেন? আমি যে সে সৌন্দর্যে প্রতিনিয়ত বেসামাল হয়ে উঠছি আপনি বুঝেই উঠছেন না।কতোটা সেক্রিফাইস করছি আমি আন্দাজও নেই আপনার।এতটা সেক্রিফাইস করা যায়? বলুন তো।’
অদ্রিজা চোখ ফিরিয়ে চাইল রক্তিমের দিকে।তার মুখে চোখে দুষ্টুমিমাখা হাসির রেশ।দাঁত কেলানো হাসি।হাতজোড়া বুকে ভাজ করে রেখেই দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো।অদ্রিজা একনজর তাকিয়েই রক্তিমকে পরখ করে চুপ রইল।রক্তিমের সাথে একটাও কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ এড়িয়ে গেল। বেলকনিতে সে ব্যাতীত অন্য কেউ আছে কথাটা ভুলে বসেই একইভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।রক্তিম বোধ হয় বিরক্ত হলো এবার।কপাল কুঁচকে অদ্রিজার সামনে এসেই ঠোঁট টিপে আহত কন্ঠে বলল,
‘ সত্যিই আপনি বেসামাল সুন্দরী হযে উঠছেন!আই কান্ট কন্ট্রোল…’
অদ্রিজা চোখ তুলে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাল।রক্তিমের শীতল,জড়ানো কন্ঠে কথাগুলো শুনেও তার কোন ভাবাবেগ হলো না।দাঁতে দাঁত চেপে রেখেই কঠিন গলায় বলল,
‘ ভালো লাগছে নাহ আমার!একা থাকতে পারি একটু?’
রক্তিমের নির্বিকার উত্তর,
‘ একদমই না।আমি থাকতে একা কেন থাকবেন আপনি?আছি না আমি।’
অদ্রিজা দ্বিগুণ বিরক্ত হলো।রক্তিম বিরক্তিটা বুঝতে পেরেই অদ্রিজার কানের কাছে মুখ নিয়েই ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,
‘ উহহহ!এত রাগবেন না অদ্রিজা।এমনিতেই বাড়তি রকম সৌন্দর্যে কন্ট্রোলল্যাস হয়ে যাচ্ছি আমি।আপনার রাগে লাল হওয়া মুখ দেখে বেশ কষ্টে কন্ট্রোল করা নিজেকে সত্যি সত্যিই কন্ট্রোল্যাস করে ফেলতে চাই না। আবার শাড়িতে!উফফস!শাড়ির আঁকাবাঁকা রূপে আপনি ময় আসক্তিতে মাতাল হয়ে যাচ্ছি!’
কথাটা বলেই বুকের বা পাশে হাত রাখল রক্তিম।চোখেমুখে দুষ্টুমিমাখা হাসিটা স্থির রেখেই চোখজোড়া বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলল।অদ্রিজা বড় বড় চোখে রাগ নিয়ে তাকাতেই চোখ খুলল রক্তিম।ঠোঁট কেলিয়ে হেসেই অদ্রিজার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দ্রুত হুড়মুড় করে বের হয়ে আসল রুম থেকে।ঐ সাংঘাতিক রাগের মুখোমুখি হতে হলে নিশ্চয় আজ আবারও উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্ষ অদ্রিজার ঠোঁটে গিয়ে ঠেকবে!এই চরমরকম ঘটনাটা দ্বিতীয়বার না ঘটিয়ে কেঁটে পড়াই শ্রেয়।
।]হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩৭
লেখনীতেঃ ভূমি
দিহানের হাতটা একহাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরেই আরেক হাত দিয়ে পেট চেপে ধরল অদ্রিজা।কম্পনরত চাহনি নিয়ে চাতক পাখির মতো মাঠের আশেপাশে তাকাল বার কয়েক।কোন পরিচিত মুখ ভেসে উঠল না।নেহাও বোধ হয় আজ ভার্সিটিতে আসে নি।পেটের অসম্ভব ব্যাথায় বাধ্য হয়ে দিহান নামক যুবকটিরই সাহায্য নিতে হলো।যে যুবকটিকে সে ভালোবাসার সুযোগ দিবে বলেও দেয়নি, ঠকিয়েছিল, সেই যুবকটির হাতই শক্ত করে চেপে ধরল নিঃসন্দেহে।এক ঝুড়ি ভরসা, আশ্বাস নিয়েই দিহানের ঘাম জড়ানো মুখের দিকে চাইল অদ্রিজা।তলপেটটা হাত দিয়ে খামচে ধরেই অস্পষ্ট কন্ঠে বলল,
‘ দি্ দিহান?নেহাকে একটু বলবে আসতে?প্লিজ!কল করো না একটু ওকে।’
দিহান বোকার মতো চাইল।অদ্রিজার অসুস্থতা দেখেই ভড়কে গেল।মাথা ফাঁকা লাগল কয়েক মুহুর্ত।কি করবে, কি বলবে বুঝে না উঠেই শূণ্যের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলল সে।কপাল চেপে ধরে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতে করতেই অদ্রিজাকে বলে উঠল,
‘ দ্রিজা?এখানে অনেক রোদ।বসবে একটু কোথাও।হয়তো ভালো লাগবে।এমন রোদে দাঁড়িয়ে থাকলে তো শরীর আরও খারাপ হবে।’
অদ্রিজা মিনমিনে চোখে চাইল। কিছু না বলেই ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে দিহানের হাতটা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল।কিন্তু পারল না।ব্যাথায় বিষিয়ে উঠল পুরো শরীর। প্র্যাগন্যান্সির চার মাসের মাঝেই এই ব্যাথার কোন উৎস খুঁজে না পেয়েই শরীর কেঁপে উঠল তার।হাত পায়ের শিরায় টান পড়ল যেন।দুই হাত দিয়ে তলপেটটা চেপে ধরেই টলমল করা চোখজোড়া বন্ধ করে নিল অদ্রিজা।সঙ্গে সঙ্গেই নরম গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল নোনতা পানি।দিহান ছোটছোট চোখে অদ্রিজার গাল বেয়ে নোনতা পানি গড়ানো, অস্থিরতা, অস্বাভাবিক ব্যাথায় মুখ চোখ নীল হওয়া সবটাই পর্যবেক্ষন করল।নেহাকে কল করে দ্রুত আসতে বলেই কল কাঁটল।এক দৈাড়ে ভার্সিটির সামনে থাকা টং দোকানটা থেকে একটা পানির বোতল নিয়েই আবারও দৈাড়ে এসে দাঁড়াল অদ্রিজার সামনেই।পানির বোতলটা এগিয়ে দিয়েই কপালের ঘাম।মুঁছতে মুঁছতে বলে উঠল,
‘ অল্প পানি খেয়ে মুখে পানির ছিটে দাও তো। হয়তো ভালো লাগবে।হঠাৎ এমন ব্যাথা হচ্ছে কেন?কিছুই তো বুঝতে পারছি না।’
অদ্রিজা মাথা তুলে ঝাপসা চোখে দিহানের দিকে তাকাল।চোখের ঘন পাঁপড়ি গুলো ভিজে উঠল মুহুর্তেই।শূণ্য, সাদা, অনুভূতীহীন মুখটা ব্যাথায় ক্রমশ নীলাভ হয়ে উঠল যেন।দাঁতে দাঁত চেপেই কোনভাবে বলে উঠল সে,
‘ দে্ দেওয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়।পেটের দিকে ধাক্কাটা একটু জোরেই লেগেছিল। তাই..’
অদ্রিজার বাকি কথাটা শেষ হলো না।ব্যাথায় বিষিয়ে উঠল মন প্রাণ।দাঁতে দাঁত কাঁমড়ে কান্না হজম করার সহস্র চেষ্টা করতে করতেই সামনে উপস্থিত হলো বিশালদেহী, লম্বা চওড়া শরীরের রক্তিম নামক যুবকটি।মুখ চোখ গম্ভীর তার।দৃষ্টি অত্যাধিক শান্ত!জমে থাকা গলাটা হালকা ঝেড়েই কোলে তুলে নিল অদ্রিজাকে।ঠোঁট চেপে শীতল গলায় বলে উঠল,
‘ চলাফেরাতে একটু হুশ রাখলে ক্ষতি কি হয়?আপনি তো এখন একা নন।এটা কেন মনে থাকল না আপনার?এত তাড়াহুড়ো করে চলার কি ছিল?’
অদ্রিজা কিছু বলল না।রক্তিমের শার্টটা মুঠো করে খামচে ধরল।অন্য দিনের মতো নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালাল না আজ।হাত পা জমে উঠল ক্রমশ।ভারী শরীরটার নিয়ন্ত্রন যেন নিজের উপর আর রাখা গেল না।রক্তিমের বাহুডোরে নিজের পুরো শরীরের ভার এলিয়ে পড়ল মুহুর্তেই।চোখজোড়া বুঝে নিতে নিতেই অস্ফুট গলায় বলে উঠল সে,
‘ আ্ আমায় কোলে তুললেন কোন সাহসে?আমি যেতে পারব।’
রক্তিম এবার গম্ভীর মুখ চাহনিতেও হাসি ফুটাল।ঠোঁট চওড়া করে হেসেই দিহানকে ধন্যবাদ জানিয়ে পা বাড়াল। গাড়ির সিটে অদ্রিজাকে আলতো করে বসিয়ে দিয়েই বাঁকা হেসে বলে উঠল,
‘ এই না হলে রক্তিমের ওয়াইফ? মরে যাবে তবুও রক্তিমের মতোই জেদ নিয়ে বসে থাকবে।আহহ!আপনার রাগ জেদ এসব দেখেই তো ফিদা হয়ো যাই।আর ফিদা হতে চাই না।চুপচাপ বসে থাকবেন।ব্যস!’
অদ্রিজা কিছু বলল না।বলার জন্য গলা দিয়ে কোন শব্দ ও আসল না অবশ্য।চোখজোড়া বুঝে নিয়েই শরীরটা এলিয়ে দিল গাড়ির সিটে।রক্তিম ড্রাইভিং সিটে বসেই আয়নায় তাকিয়ে অদ্রিজার মুখটা দেখল।ক্লান্তি মাখা ঝিমিয়ে পড়া চোখ। ঘেমে উঠা কপালে ছোটছোট চুল গুলো আটকে আছে।চুপসে আছে পুরো মুখ।রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ফেলল।অদ্রিজার পেটের নিচে হাতজোড়া দিয়ে খিচে ধরা আর ব্যাথায় নীলাভ মুখ, তিক্ত চাহনি দেখেই বুকের ভেতরটা মুঁচড়ে উঠল অজানা ভয়ে।জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত,প্রতিটা ক্ষণ যেখানে হাজার দুঃখও সে হাসিমুখে বরণ করেছে সেখানে আজ এইটুকুতেই বুক ভারী হয়ে উঠছে তার।কঠিন দীর্ঘশ্বাস গুলো মুক্ত করা বেশ কঠিন হয়ে উঠছে আজ!এটাই বুঝি একজন বাবার অনুভূতি।নিজের অনাগত সন্তানের একটুখানি ক্ষতির আভাসেও বুঝি বাবাদের বুকে এমন উতাল পাতাল ঝড় সৃষ্টি হয়?আচ্ছা!তার বাবা কি তার জন্য এতটা উদ্বিগ্ন থাকত?এতটা চিন্তা করত তার জন্য?না!করে নি এত চিন্তা।এতটা উদ্বিগ্নও হয় নি।মনে মনে নিজেকে নিজেই উত্তর গুলো দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করল রক্তিম।উষ্ণশ্বাস ফেলে সামনে থাকা পানির বোতলটার মুখ খুলেই অদ্রিজাকে হা করতে বলল।অদ্রিজা কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকলেও পরমুহুর্তে কিছু না বলেই হা করল।এই গরমে, ঘামে চুপসে উঠা এই শরীরের জন্য ঐটুকু পানি প্রয়োজন ছিল।শুকনো গলা এবার বুঝি একটু ঝরঝরে হলো।রক্তিমের দিকে ছোট ছোট চোখে তাকাতেই রক্তিম হালকা হেসে বোধ হয় বুঝাতে চাইল সে চিন্তা করছে না।এটা চিন্তা করার মতো কোন বিষয়ই না।কিন্তু মন জিনিস টা বড্ড অবাধ্য।শরীরের ক্লান্তি, পেট ব্যাথায় বিষিয়ে উঠা যন্ত্রনার সাথে এবার মন খোঁচখোঁচ করা অজানা ভয় যোগ হলো।গলা সরু করে কিছু বলার আগেই রক্তিম গাড়ি স্টার্ট দিল।সঙ্গে সঙ্গে হালকা বাতাসে শীতল হয়ে উঠল শরীর।নিস্তেজ হয়ে উঠল ভারী দেহ।হাত পা লতিয়ে পড়ল গাড়ির সিটের উপর।চোখ জোড়াও বুঝে আসল মুহুর্তেই।
.
হসপিটালের করিডোরেই দাঁড়িয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলল নেহা।নিচ থেকে উপরে জোরে জোরে সিঁড়ি বেয়ে আসার দরুন হাুঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাল কিছুক্ষন।দিহান চোখ ছোট ছোট করে নেহার দিকে তাকিয়ে রইল।মৃদু হেসে নেহার দিকে এগিয়েই বলল,
‘ এত জোরে উঠলি কেন?এখন হাঁফাতে থাক।আমি যাচ্ছি।’
নেহা মুখ তুলে চাইল।দিহান যাচ্ছি বলেও গেল না।স্থির দাঁড়িয়ে থেকে নেহার হাঁফাতে থাকা মুখটা দেখতে ব্যস্ত হয়েই মুচকি হাসল।ঠোঁট চেপে বলল,
‘ যাব?তুই একাই আসিস তাহলে।’
নেহা আবারও মিনমিনে চাহনিতে তাকিয়ে রইল।কিছু না বলে জোরে জোরে হাঁফিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল।দিহানের হাতটা আকস্মিকভাবেই খপ করে ধরে নিয়ে বলে উঠল,
‘ কি আশ্চর্য!এতটা পথ যখন তোর সাথেই এসেছি তখন এটুকু পথ তুই আমাকে রেখে একা একা চলে যাবি? এত খারাপ তুই?!’
দিহান হালকা হাসল।নেহার হাতটা নিজের হাতের সাথে জড়িয়ে আছে দেখেই গম্ভীর গলায় বলল,
‘ আজ তোরা সবাই আমার হাতটাকে ধপাধপ ধরে ফেলছিস কেন বুঝে উঠছি না।’
নেহা সরু চোখে চাইল।কি বুঝেই মনে হলো, কোনকিছুতে জোর করা উচিত না।দিহান যদি তাকে ভালোবাসে তাহলে কোন একদিন সেও হাত ধরবে।জোর করে হাত ধরতে হবে কেন হাত?কথাটা ভেবেই দিহানের হাতটা ছেড়ে দিল।দু পা এগিয়েই হাঁটতে হাঁটতে বলে উঠল,
‘ স্যরি দিহান।খেয়াল করা হয় নি। হুটহাট কি করে ফেলি খেয়াল থাকে না আমার!’
দিহান কপাল কুঁচকাল।সামনের মেয়েটা যে নেহাই বুঝে উঠতে দেরি হলো।এত সহজে কষ্ট পেয়ে গেল এই মেয়েটা?তার হাতটা ছেড়ে দিল?অথচ সেইদিন তাদের বাসার সামনেও কত জোর দিয়ে কথা বলেছিল। অদ্ভুত!কষ্ট পেল কেন?মনে মনে প্রশ্নগুলো করেই নিজের মাথায় নিজেরই ঘুষি বসাতে মন চাইল দিহানের।দাঁতে দাঁত চেপে দ্রুত পায়ে এগিয়ে নেহার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েই নেহার হাতটা খপ করে ধরে বসল।ভ্রু কুঁচকেই বলল,
‘ তুই এইটুকুতেও মাইন্ড করিস?জানা ছিল না।’
‘ মাইন্ড কখন করলাম?’
দিহান দৃষ্টি গভীর করল।কপাল কুঁচকানো চাহনি নিয়ে নেহার দিকে তাকিয়েই গম্ভীর গমগমে কন্ঠে বলে উঠল,
‘ তাহলে হাত ছাড়লি কেন?’
নেহা অবাক হলো।হাত ছাড়বে না?তাহলে কি করবে? বোকার মতোই প্রশ্ন করল নেহা,
‘ হাত ছাড়ব না?তুই তো বিরক্ত হচ্ছিলি।তাহলে?হাত ছাড়া উচিত হয়নি আমার?’
দিহান শক্ত কন্ঠেই অন্য পাশ ফিরে বলল,
‘ নাহ!উচিত হয়নি।কেন হাত ছাড়বি তুই?হাত ছাড়ার অনুমতি কে দিল তোকে?’
নেহা এবার বোকার মতো তাকাল।ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলে চাহনিটা দিহানের মুখ থেকে নিজের হাতের দিকে নিল।দিহানের হাত যে তার চিকন হাতটা ধরে রেখেছে তা বোধগম্য হতেই ক্লান্তিমাখা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল ভেতর থেকে।মুখে ফুটল মৃদু মিষ্টি হাসি। চোখজোড়া বন্ধ করে নিয়ে প্রশান্তির হাসি হাসল।প্রতিউত্তরে একটা কথাও না বলে নিশ্চুপে দিহানের সাথে পা মিলিয়েই পা বাড়াল।
.
হসপিটালের কেবিনে নিজেকে আবিষ্কার করতেই চোখ মেলে চাইল অদ্রিজা।নিজের অনেকটা কাছে কোন পুরুষের অস্তিত্ব বুঝে উঠেই থমকে গেল সে।উষ্ণ নিঃশ্বাসগুলো মুখচোখ ছুঁয়ে যেতেই কেঁপে উঠল।হাত পায়ের তালু ইষৎ ঘেমে উঠল অস্বস্তিতে।তবুও নড়াচড়া করার মতো এটুকু শক্তি পেল না নিজের মধ্যে। বার কয়েক শুকনো ঢোক গিলেও নিজের মুখের উপর উপছে থাকা পুরুষটিকে সরার জন্য বলতে পারল না সে।মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের হলো না।বিস্ময়, অস্বস্তি নিয়ে ছোটছোট চোখে উপরের দিকটায় চেয়ে থাকতেই বুঝতে পারল সামনের লোকটা ফুপাচ্ছে। আরও বুঝল,লোকটার ঠোঁটজোড়া তার কপালের মসৃন ত্বকটাতেই স্থির। অদ্রিজা হালকা কাঁপল।হাঁসফাঁস করল। অস্ফুট স্বরে অনেক চেষ্টা করেই বলে উঠল,
‘ র্ রক্ তিম!’
অদ্রিজার অস্ফুট স্বরে কেঁপে কেঁপে বলা কথাটা শুনেই সামনের লোকটি মুহুর্তেই এক লাফে সরে দাঁড়াল। অদ্রিজা এতক্ষন জেগে ছিল ভেবেই চমকাল সে।কন্ঠ নিচু করেই গমগমে কন্ঠে বলল,
‘ স্যরি।আ’ম স্যরি। বুঝতে পারিনি আপনি জেগে আছেন।’
অদ্রিজা কিছু বলতে পারল না।তাকিয়ে রইল স্থির দৃষ্টিতে। রক্তিমের শুকনো মুখচোখ পরখ করেই গলা শুকিয়ে আসল মুহুর্তেই।কি এমন হয়েছে?রক্তিম এতটা চুপচাপ?এতটা শান্ত?শরীর শিউরে উঠল মুহুর্তেই।চোখজোড়া ছোটছোট করে স্থিরভাবে রক্তিমের দিকে তাকাতেই মনে জাগল কঠিন প্রশ্ন।কাঁপা কাঁপা ভাবে বাম হাতটা গিয়ে ঠেকল তার পেটে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপেই বলে উঠল
‘ র্ রক্ তি….’
বাকি কথাটা বলা হলো না অদ্রিজার।রক্তিম তার তর্জনি আঙ্গুলটা অদ্রিজার ঠোঁটে রেখেই হালকা হাসল।কন্ঠটা পিচেল করার চেষ্টা করেই বাঁকা হাসার চেষ্টা করল।কিন্তু চেষ্টা সফল হলো না।স্পষ্ট বুঝা গেল রক্তিমের হাসিটা বানোয়াট।চোখেমুখে হাসির সেই উচ্ছ্বলতাটা ফুটেই উঠল না।তবুও বানোয়াট সে হাসি নিয়েই বুঝাতে চাইল সবটা ঠিক আছে।কোন চিন্তা নেই।কিন্তু মিথ্যে সেই সান্ত্বনাতে অদ্রিজার মন মানল না।স্থির নয়নে তাকিয়ে আবারও বলার চেষ্টা করল,
‘ আ্ মা্ র বে্ বি ভা….’
রক্তিম আবারও আঙ্গুলটা অদ্রিজার ঠোঁটে রেখেই লম্বা নিঃশ্বাস ফেলল।মুখে চোখে হাসির রেখা ফুটানোর চেষ্টা চালিয়েই শুকনো কন্ঠে বলল,
‘ আপনার শরীরে ইনজ্যাক্ট করা হয়েছে।ঘুমানোর কথা আপনার। ঘুমোন।আপনার শরীর দুর্বল।পরে কথা বলার শক্তি পেলে কথাগুলো বলে নিবেন।ওকে?যা জানার জেনে নিবেন।এখন প্লিজ চুপ থাকুন।প্লিজ!’
অদ্রিজা মুখ ফুলাল।বড়বড় চোখে রক্তিমের মুখের দিকে দৃষ্টি স্থির রাখতেই তপ্তশ্বাস বেরিয়ে আসল ভেতর থেকে।রক্তিম কি তার থেকে কিছু এড়িয়ে যাচ্ছে?লুকোতে চাইছে কিছু?কথাগুলো মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে ঘুরতেই আবারও নিস্তেজ হয়ে আসল শরীর।চোখজুড়ে নেমে আসল চরম ঘুম।মুহুর্তেই বুঝে আসল চোখজোড়া। ঝাপসা হলো দৃষ্টি।সামনের লোকটার মুখও ঝাপসা হয়ে আসল সেই দৃষ্টিতে।তার চোখজোড়া বোধ হয় ছলছল করছিল।কে জানে!ঝাপসা চাহনিতে অতো কিছু বুঝা হয়ে উঠে নি আর!
#চলবে…
[