হৃদয়ের শুভ্রতা পর্ব ১০

#হৃদয়ের_শুভ্রতা🌸🌸

পর্ব-১০

#ফাবিহা_নওশীন

🍀🍀
শুভ্রা নিজের রুমে বেডে বসে বসে সন্ধ্যাবেলায় কার্টুন দেখছে আর পপকন খাচ্ছে।কোলের উপর কুশন রেখে টিভির দিকে চেয়ে বিরবির করছে।

“কি লাইফ আমার?ফোন নেই,ল্যাপটপ নেই,ভার্সিটি যাওয়া নেই,ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরাঘুরি,আড্ডা নেই।ঘরবন্দী করে রেখেছে আমাকে।এই টিভিটাও নিয়ে যেতো এটা কেন রেখে গেছে?বোর হতে হতে মরে যেতাম।”

হৃদ হন্তদন্ত হয়ে শুভ্রার রুমে এলো তারপর বেডের উপর ওর ফোন,ল্যাপটপ রাখলো।শুভ্রা ফোন,ল্যাপটপ পেয়ে খুশিতে মাতোয়ারা।ফোন হাতে নিয়েই ওয়াইফাই অন করে নিলো।ওয়াইফাই অন করতেই মেসেজ,নোটিফিকেশনে হৃদের কান যাওয়ার অবস্থা।হৃদ অবাক হয়ে শুভ্রাকে দেখেছে।
তারপর বেডে দুহাত চাপকে বললো,
—–হয়ার ইজ মাই ফোন?

শুভ্রার হুশ হলো কিন্তু ফোনে ব্যস্ত থেকেই বললো,
—–সোফার উপর থেকে লাভ সেপের কুশনটা নিয়ে আসুন।

হৃদ শুভ্রার কথা শুনে হতবাক।
—–হোয়াট দ্যা হেল!আমি কি তোমার চাকর?আমি কেন আনবো?আই কান্ট।

—–ওয়েল।ইউ ক্যান গো নাও ইফ ইউ ডোন্ট নিড ইউর ফোন।

হৃদ রাগ দেখিয়ে চেচিয়ে বললো,
—–শুভ্রা আমার ফোন দে।

—-আশ্চর্য আমি তো দিতেই চাইলাম।আপনিই তো নিতে চাইছেন না।সোফার মিডিলে যে কুশন সেটার ভিতরে ফোন।

হৃদ আর কথা না বাড়িয়ে কুশন চেক করে ফোন পেয়ে গেলো।তারপর ফোন অন করে চেক করছে।

শুভ্রা টিভি অফ করে বেডে গা এলিয়ে দিলো।তারপর ফোনে টাইপ করতে করতে বললো,
—-ডোন্ট ওরি।আমি আপনার ফোনের সাথে কিছুই করিনি।ইভেন লক খোলার ও ট্রাই করিনি।

শুভ্রার ফোনে হৃদের কোম্পানি থেকে ফোন এসেছে।শুভ্রা বিরক্ত হয়ে রোজের রুমে গিয়ে বললো,
—–তোদের কোম্পানি থেকে ফোন এসেছে।ওরা এপোলাইজ করেছে আর আমাকে আবার জয়েন করতে বলছে।তোর ভাই কি খেলা পেয়েছে?

রোজ শুয়া থেকে উঠে বসে।তারপর মনে মনে বলছে,
—–তারমানে আমার মেডিসিন কাজ করেছে।তাহলে মিথ্যা বলায় কিছুটা হলেও কাজ হয়েছে।ভাইয়া ভয় পেয়ে শুভ্রাপুকে ব্যাক করতে বলেছে।

শুভ্রা ভ্রু কুচকে বললো,
—–কিরে বোবা হয়ে গেলি?কথা বলিস না কেন?

—–এটা তো গুড নিউজ।

—–গুড নিউজ?এত অপমানের পর আমি আবার যাবো?ইম্পসিবল।আমি আর যাচ্ছি না।

—–আপু তোমাকে মাম্মা আর পাপা সিলেক্ট করেছে।তাদের কথায় গিয়েছো,ভাইয়ার কথায় নয়।আর তাছাড়া মাম্মা এখনো কোম্পানির হেড ভাইয়া নয়।
আর তুমি বলছিলে অপমান।তুমি তোমার অপমানের বদলা নিবেনা।আর সেটা অফিসে থেকেই সম্ভব।

শুভ্রা সন্দেহের দৃষ্টিতে রোজের দিকে তাকালো।
—-ব্যাপার কি রোজ?হটাৎ করে আমার পক্ষ নিচ্ছিস নিজের ভাইকে ছেড়ে।

রোজ আমতা আমতা করে বললো,
—–আমি কারো পক্ষ নিচ্ছিনা।তোমার ইচ্ছে না হলে যেওনা।

রাতে ডিনার করার জন্য সবাই ডাইনিং টেবিলে বসেছে।হৃদ,রোজ,শুভ্রা,শুভ্রার পাপা,মাম্মা,দিদা।হৃদের পাপা হৃদের মাম্মাকে জোর করে ডাইনিং টেবিলে আনছে।সবার দৃষ্টি সেদিকে।
হৃদের মাম্মা বারবার বলছে আমার হাত ছাড়ো তো আমার ঘুম পাচ্ছে আমি খাবোনা।
হৃদের পাপা ধমকে বলছে,
—–চুপ আর একটা কথাও না।ডিনার করেই ঘুম নয়তো নয়।

চেয়ার টেনে এক প্রকার জোর করেই বসালো।সবার দৃষ্টি সেদিকে।
—-আমি খাবোনা।(ঘুম ঘুম চোখে)

—-চুপ,এই বয়সে না খেয়ে উনি ক্যাটরিনা হবে।ভাত খেয়ে ওষুধ খেতে হবে।ঠান্ডা লাগিয়ে বসে আছিস খেয়াল আছে?

তারপর এক প্রকার জোর করেই হৃদের মাম্মা খাবার খাচ্ছে।মাঝে মাঝে হৃদের পাপা ধমকে উঠছে খাওয়া বন্ধ করায়।
শুভ্রা খাওয়া রেখে গালে হাত দিয়ে ওদের দেখছে।

শুভ্রার মামনি(হৃদের মা)বললো,
—-তোর আবার কি হলো?গালে হাত দিয়ে বসে আছিস কেন?খাবিনা?

শুভ্রা গালে থেকে হাত সরিয়ে বললো,
—-তোমাদের প্রেম দেখেই পেট ভরে গেছে।আহা কি প্রেম!!
মামনি বাবাইয়ের মতো লাভিং কেয়ারিং একটা ছেলে দেখো তো আমার জন্য। বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি চলে যাই।

সবাই শুভ্রার দিকে চেয়ে আছে।
—-এভাবে তাকিয়ে আছো কেন কি এমন বললাম?বিয়ের বয়স হয়েছে তাই বললাম।

হৃদ পানির গ্লাস ঠাস করে টেবিলে রেখে উঠে গেলো।
হৃদ উঠে যেতেই মামনি বললো,
—–শুভ্রা কি করলি এটা?

—–আমি কি করেছি?

শুভ্রার মাম্মা বললো,
—–তোর জন্য ছেলেটা না খেয়ে চলে গেলো।

—–আজব!আমি কি কাউকে না খেয়ে চলে যেতে বলেছি?
শুভ্রা প্লেটে হাত ধুয়ে উঠে গেলো।

শুভ্রার পাপা বললো,
—–এদের আবার কি হলো?

রোজ বললো,
—–কাকাই আমি বলছি।ভাইয়া আপুকে কোম্পানি থেকে ফায়ার করে দিয়েছে।আজ আবার ব্যাক করতে বলেছে তাই শুভ্রাপু রেগে আছে।

—–চিন্তার বিষয়।এদের কোনো কিছুই ঠিক হচ্ছে না।এভাবে ঝগড়া করতে থাকলে এদের বিয়ে আর এ জীবনে দেখে যেতে পারবোনা।

পরেরদিন শুভ্রা অফিসে গেলো।নিজের ইগোকে এক পাশে রেখে অফিসে গিয়েছে শুধুমাত্র হৃদকে একটা শিক্ষা দেওয়ার জন্য।সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়না।উদ্দেশ্য ইশানের সাথে বন্ধুত্ব করা।তারপর হৃদকে জেলাস ফিল করানো।
শুভ্রা অফিসে গিয়েই ইশানকে খোজছে।ইশানকে এতোদিন পাত্তা দেয়নি কিন্তু আজ নিজের প্রয়োজনেই ইশানের সাথে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করতে চাইছে।
হৃদ তোমার জন্য কি কি করতে হচ্ছে।

শুভ্রা ইশানকে পেয়ে গেলো।ইশান মুচকি হাসছে আর ফোনে টাইপ করছে।শুভ্রা ওকে দেখে থেমে যায় আর মনে মনে বলে,
“শিওর কোনো মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করছে।”

শুভ্রা সামনে গিয়ে বললো,
—-হায় ইশান!

ইশান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বললো,
—-আরে শুভ্রতা যে!কি খবর? বসুন বসুন।

শুভ্রা অপর পাশের চেয়ারে বসে পড়ল।
ইশান বললো,
—-তা কি মনে করে?

শুভ্রা বললো,
—-আসলে একা বসে বসে বোর হচ্ছি।তাই ভাবলাম আপনার সাথে একটু আলাপ করি।আপনার সাথে তো আলাপ হয়নি।

ইশান নড়েচড়ে বসে বললো,ওয়েট একটা মেসেজ করে নেই।

—-শিওর।

ইশান তার ফোনের অপর পাশের তথাকথিত গার্লফ্রেন্ডকে রেখে শুভ্রার সাথে আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।ওদের আড্ডা জমে উঠেছে।

আর অপর পাশে আরেকজনের রাগ মাথায় চড়ে বসেছে।হৃদ ওদের দুজনকে অনেকক্ষন ধরে পর্যবেক্ষণ করছে।সেদিকে ওদের কারো খেয়ালই নেই।

“এজন্যই একে ফায়ার করেছিলাম আর ওর সাথেই গল্পে মেতে উঠেছে?রোজ তো বললো শুভ্রা নাকি ডিমান্ড নিয়ে চলে কাউকে পাত্তা দেয়না কিন্তু ও তো নিজ থেকেই পাত্তা দিচ্ছে।”
হৃদ রাগে গজগজ করতে করতে নিজের কেবিনে চলে গেলো।

তারপর শুভ্রাকে নিজের কেবিনে ডেকে পাঠালো।

রোজ ভার্সিটিতে ঢুকেছে মাত্র।ব্যাগ থেকে মাত্র চিপসের প্যাকেট বের করেছে।তখনই অরিত্র ওর সামনে এসে দাড়ালো।
রোজ অরিত্রের দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
অরিত্র রোজের দৃষ্টি বুঝতে পেরে বললো,
—–তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।তোমার সময় হবে?

রোজ ভদ্রতামূলক হাসি দিয়ে বললো,
—-হ্যা অবশ্যই বলুন।

অরিত্র আমতা আমতা করছে।রোজ সেটা দেখে চিপসের প্যাকেট খোলা শুরু করলো।
প্যাকেট খোলা শেষ।রোজ আবার অরিত্রের দিকে মনোযোগ দিলো।তারপর বললো,
—-এমন আমতা আমতা করছেন কেন?আর আপনাকে এতো নার্ভাস লাগছে কেন?

—–একচুয়ালি তুমি কথাটা কিভাবে নিবে সেটা ভেবেই নার্ভাস লাগছে।

রোজ হেসে দিয়ে বললো,
—–আপনার ভাব দেখে মনে হচ্ছে আপনি আমাকে প্রপোজ কররে যাচ্ছেন।
তারপর রোজ আবার হাসতে শুরু করলো।

অরিত্র রোজের কথা শুনে রীতিমতো শকড।তারপর কাচুমাচু করে বললো,
—–যদি বলি তাই!!

রোজ হাসি থামিয়ে চোখ বড়বড় করে বললো,
—–মানে?

অরিত্রের নার্ভাসনেস এক নিমিষেই গায়েব।
স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—–মানে তোমাকে আমি পছন্দ করি প্রথম দিন থেকেই।

রোজ নার্ভাস হয়ে গেলো অরিত্রের কথা শুনে।
—-পছন্দ মানে?

—-পছন্দ মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি।

অরিত্রের কথা শুনে রোজের হাত থেকে চিপসের প্যাকেট পড়ে গিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে গেলো।রোজ অসহায় ভাবে সেদিকে তাকিয়ে আছে।

অরিত্র নিজেও চিপসের দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর রোজের দিকে তাকিয়ে বললো,
—–তুমি কি আমাকে তোমার জন্য সারাজীবন চিপস কিনার অধিকার দিবে?

রোজ অরিত্রের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,
—–আপনার জন্য আমার চিপস পড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর আপনি আসছেন সারাজীবন চিপস কিনে দেওয়ার অধিকার নিতে?তাহলে আর এ জীবনে আমার আর চিপস খাওয়া হবেনা।খাওয়া কেন এ জীবনে হয়তো আর চিপস চোখেও দেখবোনা।সরুন এখান থেকে আমার আবার চিপস কিনতে হবে।

রোজ অরিত্রের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।অরিত্র রোজের যাওয়ার দিকে হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো।

শুভ্রা হৃদের কেবিনে যেতেই হৃদ চোখ মুখ লাল করে দাঁড়িয়ে টেবিলে দুহাত দিয়ে ভর করে শুভ্রাকে বললো,
—–ওই তোকে এখানে কেন আনা হয়েছে?

অফিসে হৃদের মুখে তুই তুকারি শুনে ভরকে গেলো।
শুভ্রা টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—-স্যার এটা অফিস,আপনার বাসা নয় যে আমার সাথে এমন ভাষায় কথা বলবেন।ভদ্র ভাবে কথা বলুন,তবেই ভদ্রভাবে উত্তর পাবেন।

হৃদ কোনো জবাব না দিয়ে চেয়ারে বসে পিছন ঘুরে গেলো।তারপর চোখ বন্ধ করে হাতের মুঠো শক্ত করে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।বারবার আংগুল দিয়ে কপাল ঘষছে।কিন্তু রাগ কমাতে পারছেনা।
তাই শুভ্রাকে বললো,
—–লিভ নাও।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here