হয়ত সিজন ২ পর্ব ৬

#ছায়া_হয়ে_মিশে_রব_কল্পনাতে
পর্ব:- ৬

.
-” আপনাদের আকাশ কী সব সময় এমন উদাসীন থাকে?”
-” মানে?”
-” না মানে আমি ভাবছিলাম, আমি আসার কারণে হয়ত আকাশ কষ্টে পাচ্ছে।”
বর্ষণ তাপৌষির কথায় হেসে দিল। তাপৌষি আসার পর থেকেই ঢাকার আকাশে শীতকালে বৃষ্টি হচ্ছে।
-” ঠিক বলেছ আমাদের আকাশ সব সময় উদাসীন। ”
-” ঠিক আপনার মতো।”
-” জি?”
-” না কিছুনা। চা খাবেন?”
-” তুমি চা বানাতে পারো নাকি?”
-” হ্যাঁ পারি। চা বানাতে আবার স্পেশাল ট্রেনিং নিতে হয় নাকি?”
-” প্রসেসটা বলো তো।”
-” থাক আমি একাই খাবো। উঠি।”
-” এই তাপৌষি আমার জন্য এক কাপ নিয়ে এসো। আমি ডাইনিং টেবিলে বসলাম। চা যেন পাই।”
.
-” ভাইয়া.. ”
রৌদের কথায় বর্ষণ অতীত থেকে ফিরে আসলো।
-” জি?”
-” গেটটা লাগিয়ে দাও। আমি বের হবো।”
ঘরের দরজা লাগিয়ে হাতের ফোনের গ্যালারিতে ঢুকল বর্ষণ। তাপৌষির কয়েকটা ছবি আছে এখানে। এর মধ্যে তিনটা ছবি বর্ষণ লুকিয়ে তুলেছিল। ভেবেছিল পরে ডিলিট দিয়ে দিবে।
” সত্যি তাপৌষি আমি বড্ড উদাসীন। আমার উদাসিতার জন্য তুমি হারিয়ে গেলে।”
__________________________________________
অথৈ রাজশাহী এসেছে গতকাল। তবে ও বর্ষণের সাথে যোগাযোগের কোন চেষ্টা করেনি। রাজশাহী এসে সরাসরি রৌদের সাথে কথা বলেছে। রৌদ আজ দেখা করতে চেয়েছে। যেকোনো সময় চলে আসতে পারে।
.
-” কেন এসেছ অথৈ? ”
-” আই এম সরি। দোষ আমার তাইনা?”
রৌদ অথৈর কথায় হাসল। দোষ দেখতে গেলে সবার। ও নিজেকেও মনে করে তাপৌষির দোষী।
-” ফিরে যাও অথৈ। ভাইয়ার মেন্টাল কন্ডিশন ভালো না। তোমাকে এখানে দেখে কী রকম রিয়্যাক্ট করবে বুঝতে পারছি না।”
-” আমি শুধু সাহায্য করতে চাই।”
-” তোমার কোন সাহায্য লাগবে না আমাদের। প্লিজ ফিরে যাও।”
-” আমি যাব না।”
রৌদ রাগ করে উঠে আসে অথৈর সামনে থেকে। মেয়েটা কেমন জানি। বড্ড জেদি।
___________________________________________
-” আসুন আসুন প্রিয়তা ম্যাডাম।”
প্রিয়তা মাসুদ আল হকের কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে। চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় করে তাকিয়ে আছে।
-” কী খাবেন বলুন। চা না কফি?”
-” কী হয়েছে মাসুদ ভাই?”
মাসুদ আল হক তীক্ষ্ণ স্বরে প্রিয়তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
-” শাক বাবার ইন্টার্ভিউ কোথায়?”
-” ইন্টার্ভিউ.. ”
-” জি হ্যাঁ ইন্টার্ভিউ। তুমি উনার ইন্টার্ভিউ নেওনি। তুমি তো নিজেই বড় সাংবাদিক। আমার উপদেশ নিয়ে তোমার লাভ কী? তোমার এই চাকরি না করলেও চলবে।”
-” মাসুদ ভাই..”
-” নট এ সিংগেল ওয়ার্ড। ইস্তফা দিয়ে বিদায় হও।”
-” ভাই একটা সুযোগ। ”
-” নো।”
.
প্রিয়তা নিজের ডেস্কে এসে বসল। মাথায় চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। চাকরি গেলে করবে কী ও?
-” কী হলো?”
পাশের ডেস্কে বসা রেখার প্রশ্ন শুনেও কোন উত্তর দিলনা। আজ দিনটা সত্যি খারাপ।
-” এটা ধর। মাসুদ ভাই দিতে বলেছে।”
-” কী এটা?”
-” খুলে দেখ।”
ঢাকার একটি বড় বেসরকারি চ্যানেলের নিউজ রিপোর্টার হিসেবে জয়েনিং লেটার। কিন্তু প্রিয়তা সেখানে নিজের সিভিও পাঠায়নি, কোন ইন্টার্ভিউও দিতে যায়নি। তাহলে?
রেখা উঠে প্রিয়তার হাতে একটা চকলেট ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-” কনগ্রেটস। মাসুদ ভাই এসবের পিছনে।”
প্রিয়তার চোখে খুশিতে পানি চলে এলো।
.
মাসুদ আল হক কম্পিউটারে কাজ করছিলেন। প্রিয়তা এসেই সরাসরি তার সামনে দাঁড়াল। কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়েই মাসুদ আল হক প্রশ্ন করলেন,
-” ইস্তফা কোথায়?”
প্রিয়তা হাসল। চেয়ার টেনে মাসুদের সামনে বসলো।
-” ধন্যবাদ মাসুদ ভাই। আপনার ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারব না। ”
এবার মনিটর স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে মাসুদ প্রিয়তার দিকে তাকালেন। প্রিয়তা অতি আনন্দে কেঁদে ফেলেছে।
-” আহ! এই মেয়ে দেখি কাঁদছে। তোমার যোগ্যতা আছে প্রিয়তা। ইউ টোটালি ডিসার্ভ দিস। একটা কথা বলবো?”
প্রিয়তা উৎসুক চোখে তাকায়।
-“এতো দিন যে রাগ দেখিয়েছি তা তোমার ভালোর জন্য। প্লিজ মনে কিছু নিও না। ওহ হ্যাঁ, আজকের পেপার দেখেছ? প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম সম্পর্কে তোমার লিখা আর্টিকেল ছাপানো হয়েছে।”
কিছুক্ষণ থেমে মাসুদ আল হক আবার বললেন,
-” যাও, বাসায় যাও। মেন্টাল প্রিপারেশন নাও টেলিভিশনে কাজ করার।”
-” মাসুদ ভাই একটা সমস্যা।”
-” শাক বাবার ইন্টার্ভিউ?”
-” হুমমমমম…
-” এটা তো খুব বড় সমস্যা এটা। আমি বরং বাবাকে এখানে ধরে এনে ইন্টার্ভিউ নিব।’
বলে মাসুদ আল হক হেসে দিলেন।
-” মাসুদ ভাই জয়েন হতে এখনো একমাস বাকী। এই একমাস আমি একটা মিসিং কেস নিয়ে কাজ করতে চাই। ”
-” ওহ হ্যাঁ, দেখলাম। তাপৌষি নামের তরুণীটির?”
প্রিয়তা উপর নিচে মাথা নাড়াল।
-” আচ্ছা বিষয়টা বুঝলাম না। মেয়েটা নিজের ইচ্ছায়ও তো পালাতে পারে।”
-” না ভাই। ওর উড বি স্টেশনে ওর জন্য অপেক্ষা করছিল। মেয়েটা বলেছে কিছু সময় অপেক্ষা করতে। ও নিজে নিতে আসবে উড বি কে। কিন্তু মেয়েটা আর আসে নি। আমার মনে হয় এটা কোন সাধারণ কেস নয়।”
-” আচ্ছা দেখ। ”
-” ধন্যবাদ মাসুদ ভাই।”
-” ওয়েলকাম।”
.
প্রিয়তা অফিসে দাঁড়িয়েই মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে, এই বিয়ে ও করবে না। কিছুতেই করবে না। কুয়োর ব্যাঙের জীবন ওর চাই না।

___________________________________________
সামিরাকে আদালতে তোলার আগেই ও নিজের দোষ শিকার করেছে। ও জানে ওর ভাইয়েরা কখনো ওর জামিন করাবে না। উকিলের খরচ দেওয়ার মতো টাকা থাকলেও বোনের পেছনে তা ঢালবে না। সেই পঞ্চান্ন হাজার টাকাও সামিরা শপিং করে শেষ করে দিয়েছে। তাই ভেবে ঠিক করে, রিমান্ডের থেকে আগেভাগে দোষ শিকার করে নেওয়া বেশি যুক্তিকর।
.
ম্যাজিস্ট্রেটের খাস কামরায় সামিরার দোষ স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়। সেই সূত্র ধরে পুলিশ রেল স্টেশনের পিছনে শিরোইলে যায়। কিন্তু হোটেল রুমে তাপৌষি কিংবা সামিরার বর্ণিত তিন পুরুষের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
.
হোটেলের ভিতরে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। সে ক্যামেরার ভিডিও থেকে সামিরাকে দিয়ে সেই তিনজনের মুখ সনাক্তের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে পুলিশ। হঠাৎ এএসপি ওবায়দুল হক ” স্টপ ” বললেন। সামনের বড় এলইডি টিভিতে চলমান হোটেলের ভিডিও স্টিল হয়ে গেল। ভিডিও জুম করা হলো। দুইজন লোক একটা বস্তা টেনে বের হচ্ছে হোটেল থেকে। সময় রাত একটা বেজে বিশ মিনিট। এএসপি ওবায়দুল হক সামিরার দিকে তাকালেন ওর প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। সামিরার মুখটা শুকিয়ে গেছে। পা কাঁপছে থরথর করে।
এএসপি রাগী স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
-” এরা?”
সামিরা জবাব না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তাপৌষি কী ওই বস্তার মধ্যে?
.
এই নিয়ে পুলিশ অনেকবার সামিরার থেকে নাম্বার নিয়ে ওই তিন লোকের নাম্বারে চেষ্টা করেছে। কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না। তাই তিনজনের নাম্বার ট্রেক করতে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে ওদের কল হিস্টোরিও চেক করা হচ্ছে।
উপর মহল থেকে চাপ এসেছে দ্রুত কেস সলভ করার। পুলিশ খেয়ে না খেয়ে কাজ করছে।
___________________________________________
-” মা আমি বিয়ে করবো না।”
-” মানে? কোথায় থেকে আসলি তুই?”
-” যেখান থেকে আসি না কেন। বিয়ে আমি করবো না।”
কথাটা বলেই প্রিয়তা সোফায় বসা হারুনের দিকে তাকাল।
-” হারুন ভাই, ঢাকার খুব বড় একটা টিভি চ্যানেলে আমার চাকরি হয়েছে। এটা আমার স্বপ্ন ছিল। এতো দিনে বাস্তব হওয়া স্বপ্নকে বিয়ে করে আমি গলা টিপে হত্যা করতে পারব না।”
প্রান্ত প্রিয়তার ঘর থেকে গুটি গুটি পায়ে বেড়িয়ে এসে প্রিয়তার পাশে দাঁড়াল। আতিয়া খাতুন চমকে প্রান্তর দিকে তাকালেন। এই জন্য এতবার দরজা ধাক্কিয়েও কোন লাভ হয়নি।
-” প্রিয়তা চুপচাপ বসো এখানে।”
-” না মা।”
-” প্রিয়তা…”
এবার প্রান্ত আস্তে করে বলল,
-” মা বুবু বিয়ে করবে না। জোর করছ কেন? বাবা থাকলে এমন জোর করে এখন বুবুর বিয়ে দিতে পারতে?”
আতিয়া খাতুনের মাথা ঘুরাচ্ছে। ছেলে- মেয়ে দুটা সারা জীবন বাবা বাবা করে আসলো। ওদের মা’ও যে আছে তা ভুলেই গেছে হয়ত।
-” প্রিয়তা আমি কিছু বলেছি।”
-” আমিও বলেছি, বিয়ে আমি করবো না।”
হারুনের আম্মা এতক্ষণ ধরে প্রিয়তাদের পারিবারিক নাটক দেখলেও এখন ছেলেকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। আজ প্রথম তিনি ছেলের চোখের অনুনয়কে তোয়াক্কা করলেন না। হারুনের হাত ধরে বেরিয়ে আসলেন আতিয়া খাতুনের বাড়ি থেকে। এ চরম অপমান।
প্রিয়তা তাকিয়ে ছিল হারুনদের যাওয়ার পানে। আজ ভদ্রমহিলা কোন উচ্চ বাক্য ব্যয় করলেন না কেন?
এই নীরবতা কী তাহলে ঝড়ের আগের পূর্বাভাস?
.
.
চলবে…
[ আজও কী সকলে তাপৌষিকে মিস করেছেন? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here