১৬ পৃষ্ঠায় পর্ব ২

#১৬_পৃষ্ঠায়
পর্ব – ২ #কালরাত
লেখিকা – Zaira insaan

গাড়ি থেকে নামিয়ে কিছু মহিলা এসে সোজা রুমে নিয়ে গেল নিনি কে। মুখটা এখনো বড় ঘোমটা দিয়ে ঢাকা আশপাশ কিছুই দেখতে পারছে না সে। রুমের এক কোণায় বসিয়ে চলে গেল তারা। ভয় লাগতে শুরু করলো তার কেননা তার বাবা তাকে গাড়িতে উঠানো আগে বলেছিল,, জামাইবাবু যদি কোন ব্যাথা দেয় তাহলে সহ্য করে নেবি।” কিন্তু সে জানে না তার বাবা কিসের ব্যাথা কথা বলেছে। এসব ভাবতে ভাবতে দরজা বন্ধ করার শব্দ তার কানে এলো সে সাথে সাথে ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো। ঘেমে তার একাকার অবস্থা। এনোন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে এক পলক তাকালো তার দিকে তারপর তোয়াল নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেল। নিনি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। দশ মিনিটের মাথায় সে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো। নিনি নিজেকে গুটিয়ে নিল শাড়ির আঁচল আঙুল দিয়ে পেঁচাতে লাগল আর কাঁপতে লাগল। এনোন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাপড় পড়ে বারান্দায় চলে যায়। সে এমন ভাব করল যেন সে ছাড়া আর কেউ রুমেই নেই। নিনি ভ্রু কুটি করল। সে এখনো তাকে দেখতেও পেল না এর চেয়ে বড় কথা সে জানেই না তার বরের নাম কি।

রাতের গভীরতা বাড়তে লাগল। পুরো শহর অন্ধকারে ডুব দেয়। নিস্তব্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হলো। এনোন এখনো বারান্দায় তার মেজাজ গরম শক্ত হাতে রেলিং ধরে আছে। একটু পরেই সে রুমে আসে সামনে নিনি কে আধশোয়া অবস্থায় ঘুমোতে দেখে তার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। সে এসে কঠিন গলায় ডাকতে শুরু করল,, এই মেয়ে এখানে ঘুমাচ্ছো কেন? উঠো আর রুম থেকে বের হও।” সামনের জনের কোন নড়চড় দেখলো না মেজাজ আরো বিগড়ে যায় তার সে আবারো ডাকতে শুরু করল। কিন্তু সে উঠলো না গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে নিনি। এনোন এবার শক্ত হাতে নিনির বাহু ধরে টেনে দাঁড় করায়। নিনি ঘুমের নেশায় দাঁড়িয়ে যেতে নিজের তাল সামলাতে না পেরে এনোনের বুকে ঢলে পড়ে। এনোনের দৃষ্টি অস্বাভাবিক হয়ে যায় সে ভেবাছেকা খেয়ে পড়ে। নিনি কে নিজের কাছ থেকে সরাতে জোরে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয় তাকে। আচমকা ধাক্কা দেওয়াতে মাথা ঘুরিয়ে উঠে নিনির মাথায় এক হাত দিয়ে বসে বলে,, ধাক্কা দিলেন কেন?”
এনোন রেগে উঠে আর বলে,, এক তো মানুষের গায়ে গিয়ে পড়ো উল্টো বলো ধাক্কা দিলাম কেন, নির্লজ্জ।” নিনি পুরো চমকে উঠে এমন কথায়।কিছু বলার আগেই এনোন ধমকের স্বরে বলে,, বের হও আমার রুম থেকে, তোমার সাহস হলো কিভাবে আমার বেডে শোঁয়ার।” নিনি কেঁপে উঠে পিটপিট চোখে তাকালো সামনের দিকে কিন্তু দেখতে পেল না লম্বা ঘোমটার জন্য।
এনোন আবারো বলল,, বের হতে বলেছি নাহলে আবারো ধাক্কা মেরে বের করব।”
নিনি চরম অবাক হলো, সে এমন করছে কেন? মাথায় আসছে না নিনির। নিনি কে তাও বসে থাকতে দেখে এনোনের চোয়াল শক্ত ও হাত রাগে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়, রাগে গজগজ করে বলে,, তুমি তো দেখি নির্লজ্জ ও বেহায়া এতো বলার পরেও গর্দভের মতন বসে আছো, কানে শুনতে পাও না Get out from here!!”
এতো অপমানিত হওয়ার পর নিনি গুটি গুটি পায়ে দাঁড়ায়। তার এ মুহূর্তে কান্না পাচ্ছে তাও কান্না কে দমিয়ে রাখলো দরজার কাছে এসে আবার পিছনে ফিরে। এনোন শুয়ে ছিল তাকে আবার ফিরতে দেখে উঠে বসে বলে,, কি?” নিনি আমতা আমতা করে বলে,, কোন রুমে যাব?” এনোন প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলে,, যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাও কিন্তু এ রুমের দিকে তাকাবে না, দরজা বন্ধ করে বের হও।”
নিনি বেরিয়ে যায়, রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে মুখ চেপে কান্না করে দেয় ভেজা ভেজা কন্ঠে বলে,, আমি এখানে থাকব না, আমি আব্বুর কাছে যাব।” বলতে বলতে ভারি শাড়ি পড়ে নিচে নেমে যায়।
____________________
সকালে নতুন বধূকে সোফায় ঘোমটা অবস্থায় ঘুমাতে দেখে ভূত দেখার মত চমকে যায় সিনান। কাছে এসে মুখের সামনের থেকে ঘোমটা টি সরিয়ে নেয় সে। জামাই এসে বউয়ের ঘোমটা সরায় কিন্তু এখানে ননদ এসে বউয়ের ঘোমটা সরালো। মুখ ঘেমে মেকআপ সব লেপ্টে গেছে। সিনান তার হাত ধরে আলতো করে ডেকে উঠায় নিনি হুট করে উঠে বসে। সিনান তাকে এখানে ঘুমোতে দেখে কিছু বুঝলো না তাই সে জিজ্ঞেস করলো,, তুমি এখানে ঘুমিয়েছো কেন?” নিনি ভীত চোখে তাকালো কিন্তু কিছু বলল না। সিনান আবারো জিজ্ঞেস করলো,, রাতে তোমার আর ভাইয়ার মধ্যে কিছু হয়নি?”
নিনি কাঁদো কাঁদো মুখ করে হা সূচক মাথা নাড়ল সিনান মুচকি হেসে দিল অর্থাৎ সে উল্টো বুঝে বসে আছে। হাঁসি হাঁসি মুখ করে বলে,, লজ্জা পাচ্ছো?”
নিনি না সূচক মাথা নেড়ে বলল,, অপমানিত বোধ করছি।” সিনান না বুঝে ‘এ্যাহ’ করে উঠলো। নিনি সাথে সাথে চুপ করলো। সিনান এতো পাত্তা দিল না বলল,, নতুন কাপড় পড়ে নাও, ব্যাগ তোমার রুমে রাখা হয়েছে যাও।” নিনি ভয় পেল তাড়াতাড়ি মাথা নাড়ল মানে সে ওই লোকের রুমে যাবে না। সিনান অবাক হয়ে বলল,, আরে এতো টা লজ্জা পাওয়ার কি আছে? সবার মধ্যে সেইসব হয় শুধু তুমি নতুন না, বুঝলা না যাও এবার।” নিনি তাও উঠলো না সিনান বুঝতে পেরে বলল,, আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমার রুমে আসো।” নিনি উঠে দাঁড়ালো সিনানের রুমে গিয়ে সে গোসল সেড়ে নেই। রুম থেকে বের হতেই দেখে সবাই খাবারের টেবিলে বসে আছে।

নিনির কাকিমা অর্সা নিনি কে ডেকে বলল,, যা গিয়ে এনোন কে ডেকে আন।” নিনি চিনলো না এনোন টা কে? তাই সে ঠাই দাঁড়িয়ে রইল।
তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাকিমা আবারো বলেন,, ওমা দাঁড়িয়ে আছিস কেন যাহ্ গিয়ে ডেকে আন।” নিনি অর্সার কাছে এসে আস্তে করে বলল,, এনোন টা কে?” বসে থাকা অনেক উপস্থিত মহিলারা তা শুনে জোরে হেঁসে দিল। সর্ণালি ভ্রু কুঁচকে নিনির দিকে তাকিয়ে আছেন।
সেখানে এক মহিলা হাসতে হাসতে সর্ণালি কে বলে,, আরে সর্ণা এটা কেমন বউ আনলি, বৌমা তো নিজের বরের নামও জানে না।” বলতেই বাকি মহিলারা জোরে জোরে হাসতে লাগলো। সর্ণালি অপমান বোধ করলো সাথে। নিনি দাঁড়িয়ে বুঝতে পারলো যে তার বরের নাম ‘এনোন’। অর্সা নিনির হাত জোরে চেপে ধরে গরম চোখে বলে,, যাহ্ গিয়ে এনোন কে নিয়ে আয়।” নিনি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো পিছন থেকে সিনান এসে বলল,, ওর হাত ছাড়েন।”
কিছুটা গরম হয়ে বলতেই হাত ছেড়ে দেয় অর্সা। সিনান মিষ্টি হেঁসে নিনি কে বলে,, যাও গিয়ে ভাইয়া কে ডেকে আনো।” নিনি মাথা নেড়ে সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে উপরে চলে যায়। এখনো অনেক মহিলারা মিটমিট করে হাসছে সর্ণালি নিনির ব্যবহারে প্রচন্ড বিরক্ত হলেন।

নিনি উপরে উঠে কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে ঢুকলো। আশেপাশে চোখ বুলালো তারপর বারান্দায় গেল কোথাও এনোন নেই। এনোন কে না পেয়ে তার বুক ধক করে উঠল এখন এ কথাটা নিচে সবাইকে বললে সবাই আবার কি না কি মন্তব্য করবে। নিনি সাহস জুগিয়ে নিচে গেল সবাই তার দিকে প্রশ্নাত্তুর দৃষ্টিতে তাকায় মানে এনোন কই?
অর্সা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করেন,, তোর বর কই?
নিনি ঠোঁট ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বলে,, উনি রুমে নেই।” কথাটি কর্ণগোচর হতেই ‘কিহহ্’ বলে দাড়িয়ে যান সর্ণালি। সবাইও দাঁড়িয়ে যায়। সবাই এক এক করে বিভিন্ন মন্তব্য করা শুরু করে দিয়েছে। সর্ণালি রক্তুচোখে তাকান নিনির দিকে। নিনি মাথা নুয়ে ফেলে সবাইকে খারাপ মন্তব্য করতে দেখে সিনান বলে,, থামেন আপনারা, আমি ভাইয়া কে কল করে জেনে নিচ্ছি সে কোথায়।”
ফোন উঠিয়ে কল করতেই….।

(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here