#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১০
গাড়িতে বসে আছে আয়ানা। এখনো মাঝে মাঝে চোখ মু’ছে যাচ্ছে সে। কিছুক্ষন পর পর টিস্যু দিয়ে নাক মু’ছ’ছে। আদ্রিশ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে মাঝে মাঝে আড়চোখে তাকাচ্ছে আয়ানার দিকে। কেঁ’দে কে*টে নাক মুখ লাল করে ফেলেছে। সেও বাঁধা দেয় নি বরং এক বক্স টিস্যু এগিয়ে দিয়েছে। আদ্রিশের কাছে এই মুহূর্তে আয়ানা কে ভীষণ আদুরে বাচ্চা লাগছে। বিশেষ করে লাল হওয়া নাকটার কারণে একটু বেশিই কিউট লাগছে। আদ্রিশ আয়ানার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো।
গাড়ি থামতেই হুঁশ ফিরলো আয়ানার। এতক্ষন সে কা’ন্না’য় ব্যস্ত ছিলো। গাড়ি থামাতে ভাবলো বাড়ি পৌঁছে গেছে হয়তো। কিন্তু জানালা বাইরে তাকিয়ে অচেনা একটা জায়গা দেখলো। আয়ানা আরেক দফা নাক মু’ছে কৌতূহলী চোখে আদ্রিশের পানে চাইলো। আদ্রিশ আয়ানার দিকে হালকা ঝুঁ’কে সিট বে’ল্ট টা খুলে দিলো। কিছুটা অ’স্বস্তিতে পড়লো আয়ানা। নিজের বাড়ি থেকে আসার সময় ও আদ্রিশই সিট বে’ল্ট বেঁ*ধে দিয়েছিলো কিন্তু তখন অতো খেয়াল করে নি আয়ানা। আদ্রিশ ডোর খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলো। এরপরে আয়ানার দরজাও খুলে বললো,
— নেমে এসো।
আয়ানা কৌতূহলী ভাব নিয়েই নেমে এলো। চারপাশে অনেক বেশি শো’র’গো’ল। মেইন রোড হওয়ায় অসংখ্য গাড়ি চলাচল করছে। এতো এতো হর্ণের শব্দে মাথা ধরে যাওয়ার উপক্রম। সামনে বিশাল বিশাল দালান। আদ্রিশ আয়ানার হাত শ’ক্ত করে ধরে একটা বিশাল দালানে প্রবেশ করলো। অতঃপর লিফটে উঠে পঞ্চম তলায় চলে আসলো। এই ফ্লোরে আসার পর আয়ানা বুঝতে পারলো তাকে হয়তো কোচিং এ ভর্তি করতে নিয়ে এসেছে আদ্রিশ। একজনের কেবিনের সামনে এসে দরজা ন’ক করলো আদ্রিশ। ভেতর থেকে প্রবেশের অনুমতি পেয়ে আয়ানার হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করলো সে।
আয়ানা ভেতরে ঢুকে দেখলো সামনে চেয়ারে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বসে আছেন। আদ্রিশ তাকে সালাম দিলো। ভদ্র লোকের চেহারা হঠাৎ হাসি হাসি হয়ে গেলো। তিনি আনন্দিত কণ্ঠে সালামের জবাব দিয়ে বললেন,
— আরে আদ্রিশ না? বসো বসো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
আদ্রিশ লোকটার কথায় হালকা হাসলো। অতঃপর আয়ানা কে চেয়ার টে*নে বসতে বলে নিজেও পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো,
— জি স্যার আমি আদ্রিশ। আপনি আমাকে এখনো মনে রেখেছেন দেখে খুব খুশি লাগছে স্যার। আমার সৌভাগ্য।
লোকটা উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো,
— কি যে বলো তোমাকে কি করে ভুলি। তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে একজন। তোমাকে ভুলে যাওয়া কি সম্ভব? যাই হোক এতদিন পর কি মনে করে স্যারের কাছে আসলে আর মেয়ে টা কে?
স্যার আর আদ্রিশ যে পূর্ব পরিচিত বুঝলো আয়ানা। আদ্রিশের খানিকটা অ’স্বস্তি হলো স্যারের প্রশ্নে তবুও সে নম্র স্বরে জবাব দিলো,
— স্যার ও আমার ওয়াইফ আয়ানা রহমান।
ভদ্র লোক খুশি খুশি চেহারায় বললেন,
— বাহ্ বিয়ে করেছো তাহলে? খুব মিষ্টি দেখতে তো তোমার ওয়াইফ।
আয়ানা লোকটার কথায় কিছু টা লজ্জা পেলো। আদ্রিশ আলতো হেসে বললো,
— জি স্যার। আসলে ওর ব্যাপারেই কথা বলতে এসেছিলাম আপনার সাথে। ও এবার এইচ এস সি দিয়েছে। সামনে ভর্তি পরীক্ষা আছে। আর ওর ইচ্ছা মেডিকেলে পড়ার। তাই আপনাদের কোচিং সেন্টারে নিয়ে আসলাম। এটাই আমার কাছে বেস্ট মনে হয়। আসলে ও একটা সমস্যার কারণে সময় মতো কোচিং এ ভর্তি হতে পারে নি। আমি জানি ক্লাস অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে আর ও এখন আসলে অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে থাকবে। তবে আপনি চিন্তা করবেন না স্যার। আমিও ওকে যথাসাধ্য হেল্প করবো যাতে ও ছেড়ে যাওয়া পড়াগুলো কভার করতে পারে।
লোকটা হেসে বললেন,
— সমস্যা নেই আদ্রিশ। তুমি ওকে ভর্তি করিয়ে যাও। আর তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে। তুমি হেল্প করলে ও অবশ্যই এগিয়ে যাবে।
লোক টা এবার আয়ানার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— তো মামুনী তোমাকে কিন্তু ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। তোমার হাসব্যান্ড কিন্তু ওর ব্যাচ এর বেস্ট স্টুডেন্ট ছিলো। Highest মার্ক পেয়ে মেডিকেলে চান্স হয়েছিল ওর। তোমাকেও কিন্তু ওর মতো ভালো ফলাফল করতে হবে। আর কিছু না বুঝলে অবশ্যই টিচার কে জিজ্ঞাসা করবে। এক্সট্রা ক্লাস লাগলে সেটাও বলবে কেমন?
আয়ানা সৌজন্যের হাসি হেসে মাথা না’ড়া’লো। আদ্রিশ ভদ্র লোকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। ভর্তি কার্যক্রম সম্পূর্ণ করে লাইব্রেরি তে গিয়ে প্রয়োজনীয় সব বই কিনে ফেললো। এতোটা সময় আয়ানা একজন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। সে শুধু দেখে গিয়েছে আদ্রিশ কতোটা দায়িত্বেবোধের সাথে সব কাজ করছে। আয়ানা ফীল করলো সে অনেক লাকি এমন একজন দায়িত্ববান মানুষ কে নিজের জীবনে পেয়ে।
——-
বাড়ি পৌঁছাতেই আদ্রিশ তার মা, চাচী কে সালাম দিয়ে সব বই নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। অনু বেগম আয়ানা কে দেখে এগিয়ে এলেন। পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
— কেমন আছে আমার মা টা?
অনুর ‘মা’ ডাকে একরাশ ভালো লাগা ছেয়ে গেলো আয়ানার মনে। অনু নামক মহিলার প্রতি অনেক অনেক সম্মান জন্মালো। আয়ানা বোঝে না এই ব্যক্তি এতোটা মমতাময়ী কেনো! কি সুন্দর করে তাকে জিজ্ঞাসা করলো যেনো নিজের মা। একদিনে কি কাউকে এতোটা আপন করে নেয়া সম্ভব? কিন্তু এই ব্যক্তির ভালোবাসায় যে কোনো ছ’ল’না নেই তা স্পষ্ট। আয়ানা ঠিক করে নিলো এই মানুষ টা কে সে নিজের দ্বিতীয় মায়ের স্থান দিবে। নিজের মায়ের মতোই ভালোবাসবে। কখনো অ’সম্মান করবে না।
আয়ানাও অনু কে জড়িয়ে ধরে বললো,
— ভালো আছি আম্মু। তুমি কেমন আছো?
অনু আয়ানা কে ছেড়ে হাসি মুখে বললেন,
— ভালো ছিলাম, এখন আমার আম্মুটা কে দেখে আরও ভালো আছি।
অনুর বলার ধরণে হেসে ফেললো আয়ানা। অনু আয়ানা কে জিজ্ঞাসা করলো,
— আদ্রিশের হাতে অনেকগুলো বই দেখলাম। কিসের বই ওগুলো? এডমিশন টে’স্টে’র নাকি?
আয়ানা মাথা না’ড়া’লো। অনু বেগম আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
— ভালো মতো পড়বে আম্মা। কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করবে না। শুধু পড়ায় মনোযোগ দিবে। বেশি সময় হাতে নেই। যেকোনো কিছুর দরকার হলে আমাকে বলবে। আমাকে নিজের মা মনে করে সব কিছু শেয়ার করবে ঠিক আছে?
আয়ানা হেসে হ্যা বোধক মাথা না’ড়া’লো। অনু বেগম বললেন,
— যাও এবার ফ্রেস হয়ে রেস্ট নাও। অনেক পথ অতিক্রম করে এসেছো। আমি নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমাদের রুমে খেয়ে নিও।
আয়ানা আচ্ছা বলে উপরে চলে আসলো। রুমে ঢুকে দেখলো আদ্রিশ ফ্রেস না হয়েই আয়ানার বই খাতা টেবিলে গুছিয়ে রাখছে। লজ্জা লাগলো আয়ানার। এসব তো তার করার কথা। অথচ লোকটা tired হওয়ার পরও সব একাই করছে। টেবিলে আগে আদ্রিশের বই ছিলো। সেগুলো সরিয়ে জায়গা করে আয়ানার বই রাখছে সে।
আয়ানা আদ্রিশের সামনে গিয়ে বললো,
— আমি ঠিক করে নিতে পারতাম।
আদ্রিশ আয়ানার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
— আমার বই কোথায় রাখবে,তোমার বই কোথায় রাখবে এসব নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারতে। তাই আমি ঠিক করে দিলাম। এরপর থেকে সব সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবে। জিনিস অগোছালো রাখা আমার পছন্দ না।
আয়ানা মাথা না’ড়া’লো। আদ্রিশ সব ঠিক করে আয়ানার সামনে এসে দাঁড়ালো। শান্ত কিন্তু গম্ভীর গলায় বললো,
— কালকে থেকে তোমার এক প্রকার যু*দ্ধ শুরু হবে। আই হোপ তুমি আমাকে নি’রা’শ করবে না। সবার সামনে আমি বলেছি তোমাকে আমার যোগ্য করে গড়ে তুলবো। এখন এটা আমার দায়িত্ব। আর তোমাকেও স’র্বা’ত্ম’ক চেষ্টা করতে হবে। যেনো কেউ তোমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ না পায়। আমি যদি তোমাকে আমার নিয়মে চালাই এই ক’দিন তাহলে কি তোমার সমস্যা আছে?
আয়ানা নিম্ন স্বরে বললো,
— না।
আদ্রিশ বললো,
— ভেবে বলো পরে কিন্তু চেঞ্জ করতে পারবে না। তখন আমি যা বলবো তাই করতে হবে।
আয়ানা এবার একটু চিন্তায় পরে গেলো। মনে মনে ভাবলো, ‘উনি আমার জন্য যা করবে, আমার ভালোর জন্যই করবে। এতটুকু বিশ্বাস আছে আমার উনার উপর।’
আয়ানা এবার গলায় কিছু টা জো”র দিয়ে বললো,
— আপনি আমাকে যেভাবে যা করতে বলবেন, আমি সেভাবেই করবো। আমার কোনো সমস্যা নেই।
আদ্রিশের গম্ভীর মুখে হালকা হাসির ছ*টা দেখা গেলো এবার। সে আয়ানার কপালে একটা টো*কা মে*রে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেস হতে। আর আয়ানা হা করে তাকিয়ে রইলো আদ্রিশের যাওয়ার পানে। এই লোকের কখন কি হয় সে বুঝে না।
চলবে?
()