#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৫
(সবাইকে শেষের নোট টা পড়ার অ’নু’রো’ধ রইলো)
রাত ১ টা বা*জে। আয়ানা এখনো পড়েই যাচ্ছে দেখে মুখ দিয়ে একটা ‘চো’ জাতীয় শব্দ বের হলো আদ্রিশের। আগামীকাল কোচিং এ তার প্রথম পরীক্ষা। সেই উপলক্ষে সে পড়েই যাচ্ছে, পড়েই যাচ্ছে। আদ্রিশ বুঝে না সে এতো কি পড়ে। এমন না যে তার পড়া হয়নি। আদ্রিশ নিজে পড়া ধ’রে’ছে, করতে দিয়েছে। আয়ানা মোটামোটি সবটাই পেরেছে। তারপরও সে একই জিনিস বারবার পড়ছে দেখে বি’র’ক্ত হলো আদ্রিশ। সে ভেবেছিলো আয়ানা পড়াচো*র হবে কিন্তু এখন বুঝতে পারছে এই মেয়ে অ’তি’রি’ক্ত পড়ুয়া। সে আয়ানার সামনে গিয়ে তার বই টা বন্ধ করে দিলো। আয়ানা পড়া শেষ করছে না দেখে সে এতক্ষন সোফায় বসে কিছু ফাইল চেক করছিলো। কিন্তু এই মেয়ের উঠার নাম নাই দেখে নিজেই উঠে এসে বই বন্ধ করলো।
বই বন্ধ করায় অবাক হলো আয়ানা। চোখ বড় বড় করে আদ্রিশের দিকে তাকালো। আদ্রিশ কপাল কু*চ’কে গম্ভীর গলায় বললো,
— কি সমস্যা, একই জিনিস বারবার কেনো পড়ছো? যা পারো তাই এনাফ। আর পড়ার দরকার নেই। এখন ঘুমাতে চলো। অনেক রাত হয়েছে। বাকিটা সকালে আবার দেখে নিও যদি ইচ্ছা হয়।
আয়ানার মুখ টা নিমিষেই কাঁ’দো কাঁ’দো হয়ে গেলো। সে মোটামোটি ভালো প্রিপারেশন নিয়েছে তা ঠিক; তবে যতবারই কালকে এক্সাম দিতে হবে কথা টা মাথায় আসছে, ততবারই তার মনে হচ্ছে সে সব ভুলে গেছে। অনেক বেশি না*র্ভা’স সে। আর মিথির কাছে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টদের কথা শুনে তার মনে হচ্ছে সে ওদের ধারে কাছেও যেতে পারবে না। তবে সে চায় নিজের বেস্ট টা দিতে।
আদ্রিশ হয়তো আয়ানার মনের কথাগুলো ধরে ফেললো। সে আয়ানার সামনের চেয়ারে বসে বললো,
— তোমার হয়তো মনে হচ্ছে তুমি কিছু পারবে না বা তোমার কিছু মনে নেই। আসলে কিন্তু ব্যাপার টা এমন না। তোমার সবটাই মনে আছে। কিন্তু ভ*য়ে’র কারণে তোমার মনে হচ্ছে এমন টা। তাই নিজের ভ*য় কে দূর করো। আমি তো তোমার পড়া নিলাম আর তুমি পেরেছোও। তাহলে ভ*য়ে’র কি আছে। কালকেও পারবে দেখে নিও। আর অন্যের সাথে কখনো নিজের তুলনা করতে যাবে না। সবসময় এই কনফিডেন্স রাখবে যে, ‘আমিই বেস্ট। আমি পারবোই।’ দেখবে তুমি সব পারবে। এখন চলো ঘুমাবে। বেশি প্রে’সা’র নিলে পরে দেখা যাবে মাথা হ্যা*ঙ হয়ে যা পারো তাও ভুলে গেছো।
আয়ানা সম্মতি জানিয়ে উঠে পড়লো। সে আসলেই কনফিডেন্স এর অভাবে ভু*গ*ছিলো, যা আদ্রিশের কথায় বেড়ে গিয়েছে।
——-
আজও ঘুম ভা*ঙা’র পর আয়ানার হাত নিজের বুঁকের উপর পেলো আদ্রিশ। প্রতিদিনই এভাবে থাকে। এই ক’দিনে আদ্রিশের অভ্যাস হয়ে গেছে এই জিনিসটার। সে আয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে আলতো হাসলো। মেয়েটাকে তার একেবারে আদুরে বাচ্চা লাগে। আদ্রিশ ধীরে ধীরে আয়ানার হাত সরিয়ে উঠে বসলো। আয়ানার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করলো, ‘যদি মেয়ে টা দেখতে পেতো সে প্রতিদিন আমার বুঁকের উপর হাত রেখে ঘুমায়, তাহলে কি লজ্জাটাই না পেতো!
আদ্রিশ ফ্রেস হয়ে এসে আয়ানা কে ডেকে দিলো। নিয়মানুযায়ী সব শেষে তাকে কোচিং এ নিয়ে আসলো। কোচিং এর সামনে গাড়ি থামতেই আয়ানা সিট বেল্ট খুলতে লাগলো নামার জন্য। আয়ানা নামবে এমন সময় আদ্রিশ তাকে ডেকে বললো,
— ভ*য় পাবে না। দেখবে পরীক্ষা ভালো হবে। এটা কোচিং টেস্ট। এতো চিন্তা করার কিছু নেই। ঠান্ডা মাথায় রিল্যাক্স হয়ে পরীক্ষা দিবে। আর আজকে আমি নিতে আসবো। আজ আমার তেমন প্রে’সা’র নেই। ওকে?
আয়ানা মাথা নে’ড়ে বেরিয়ে গেলো গাড়ি থেকে। আদ্রিশ আয়ানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ দেখা যায়।
——-
পরীক্ষা শেষে খাতা জমা দেয়ার পর আয়ানার মাথায় একটা গা*ট্টা মা*র’লো মিথি। আয়ানা মাথা ড’ল’তে ড’ল’তে মিথির দিকে চোখ গ’র’ম করে তাকালো। মিথি দাঁ’ত কে’লি’য়ে বললো,
— কিরে একদম ফা*টি’য়ে পরীক্ষা দিলি দেখি? বাহ্ বাহ্।
এর মধ্যে দ্বীপ ও এগিয়ে এলো। মিথির সাথে তাল দিয়ে বললো,
— হয় ঠিকই বলসোস। ঝাঁ*কা’না’কা এক্সাম দিছে। কিন্তু গার্ড টা ভালো পড়ে নাই রে নাইলে ভালো করে দেখতে পারতাম।
আয়ানা, দ্বীপ আর মিথির কথায় মিষ্টি হেসে বললো,
— আলহামদুলিল্লাহ এক্সাম ভালোই হয়েছে রে। তোদের কেমন হয়েছে?
মিথি বললো,
— মোটামুটি বেশি ভালোও না, আবার খা’রা’প ও না।
আর দ্বীপ দুঃ’খী দুঃ’খী মুখ করে আয়ানা কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— আমারও মোটামুটি হইছে কিন্তু গার্ড টা একটু ভালো পড়লে তোর টা ভালো করে দেখতে পারতাম আর ফা*টা’য় পরীক্ষা দিতাম।
দ্বীপের এক্সপ্রেশন দেখে আয়ানা আর মিথি দুইজনই হেসে দিলো। এই ক’দিনে আয়ানার দ্বীপের সাথেও ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। দ্বীপের আচার আচরণে সে বুঝেছে, দ্বীপ অনেক ভালো ছেলে কিন্তু একটু দু*ষ্ট।
আয়ানা, দ্বীপ আর মিথির সাথে কথা বলতে বলতে নিচে নামলো। তার একপাশে দ্বীপ আরেক পাশে মিথি। নিচে নামতেই মিথি, দ্বীপ কে আয়ানার সাথে দাঁড়াতে বলে চিপস কিনতে দোকানে গেলো। আয়ানা চারপাশে একবার চোখ বুলালো আদ্রিশ এসেছে কিনা দেখার জন্য। কিন্তু আদ্রিশ কে দেখতে না পেয়ে দ্বীপের সাথে গল্প করতে লাগলো।
আদ্রিশ কোচিং এর সামনে এসে গাড়ি থামালো। তার আসতে বোধহয় একটু লেট হয়েছে বুঝতে পেরে দ্রুত চারপাশে আয়ানা কে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু সামনের দিকে চোখ যেতেই চো’য়া’ল শ*ক্ত হয়ে গেলো আদ্রিশের। আয়ানা একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে দেখে রা*গে চোখ লাল হয়ে গেলো তার। কই তার সাথে কথা বলার সময় তো ঠিক ভাবে নজর ও মিলায় না। আর এখানে বাইরের একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আদ্রিশের মনে হচ্ছে কেউ তার মাথায় আ*গু’ন জ্বা*লি’য়ে দিয়েছে। তার এমন কেনো মনে হচ্ছে সে জানে না আর এই মুহূর্তে জানতেও চাচ্ছে না। তার শুধু মনে হচ্ছে ওই ছেলেটার কাছ থেকে আয়ানা কে সরাতে পারলেই বুঝি তার শান্তি লাগবে। আদ্রিশ গাড়ি থেকে বেরিয়ে ধু’প’ধা’প পা ফেলে চললো আয়ানার কাছে।
হঠাৎ হাতে টা*ন পড়ায় হ’ত’ভ’ম্ব হলো আয়ানা। সামনে তাকিয়ে আদ্রিশ কে দেখে অবাক হলো সে। আদ্রিশ এক মনে তার হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে যাচ্ছে। হাত অনেক শ*ক্ত করে ধরায় ব্য*থা পাচ্ছে সে। আয়ানার কেনো যেনো মনে হচ্ছে আদ্রিশ কোনো কারণে অনেক রে*গে আছে। তাই সে কোনো শব্দ বা বি*রো’ধ না করে আদ্রিশের সাথে চলতে লাগলো। আদ্রিশ গাড়ির দরজা খুলে দিতেই আয়ানা ভিতরে ঢু’কে গেলো। আদ্রিশ দরজা লক করে নিজেও ড্রাইভিং সিটে চলে আসলো।
অন্যদিকে, এখনো হ’ত’ভ’ম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দ্বীপ। সবকিছু তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। আর মিথিও হঠাৎ হওয়া কাণ্ডে টা*শ’কি খেয়েছে। সে চিপস নিয়ে আসছিলই এরমাঝে আয়ানার হাত ধরে নিয়ে গেলো একটা যুবক। সে দ্বীপের কাছে এসে দ্বীপের কাঁধে বা*রি দিতেই হুঁশ ফিরলো দ্বীপের। মিথি দ্বীপকে বললো,
— দোস্ত ওই হ্যা*ন্ডু ছেলে টা কে রে? আর আয়ানা কে এভাবে নিয়ে গেলো কেন?
দ্বীপ কাঁধ উঁ*চি’য়ে ঠোঁট উ*ল্টে বললো,
— কি জানি। আমারও তো সব মাথার উপর দিয়ে গেলো। হতে পারে আয়ানার ভাই অথবা পরিচিত কেউ। দেখলি না আয়ানা তার সাথে চুপচাপ চলে গেলো।
মিথি দ্বীপের দিকে তাকিয়ে বললো,
— হবে হয়তো কেউ।
সে দ্বীপের হাতে চিপসের প্যাকেট টা ধরিয়ে দিয়ে দু হাতে মুখ ঢেকে বললো,
— দোস্ত আমি না ক্রা*শ খা’ই’সি।
দ্বীপ বাঁ’কা চোখে তাকিয়ে বললো,
— তুই তো উঠতে ব’ই’তে এর, ওর উপর ক্রা*শ খা’ই’তেই থাকোস। এখন আবার কার উপর খা’ই’লি?
মিথি লজ্জা লজ্জা ভাব করে বললো,
— ওই যে ওই ছেলেটার উপর, যে আয়ানা কে নিয়ে গেলো। ইশ কি হ্যা*ন্ডু ছেলে টা!
— হু*দা’ই, রাখ তোর ফা*উ’ল প্যা*চা’ল মাইয়া।
দ্বীপ কথাটা বলে একটু আগালো রিকশা ঠিক করার জন্য। মিথিও মুখ গো’ম’ড়া করে দ্বীপের পিছু নিলো।
——-
মনোযোগ সহকারে কার ড্রাইভ করছে আদ্রিশ। আয়ানা বারবার কো’না চোখে আদ্রিশ কে পর্যবেক্ষণ করছে। গাড়ি তে উঠার পর থেকে একবারও আদ্রিশ তার দিকে তাকায় নি, না কোনো কথা বলেছে। চুপচাপ ড্রাইভ করছে। কোনো কারণে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে তার, তাই কিছুক্ষন পর পর দেখতে লাগলো আয়ানা। নিজেও কোনো কথা বললো না।
বাড়ির সামনে গাড়ি থামায় নামতে নিলো সে।
— ছেলে টা কে ছিলো?
আদ্রিশের গ’ম্ভী’র কণ্ঠে পা জোড়া থেমে গেলো আয়ানার। হঠাৎ কোনো ছেলে সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় আদ্রিশের কথার মানে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না সে। আদ্রিশের দিকে ঘুরে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চাইলো। আয়ানার কাছ থেকে জবাব না পেয়ে আরও রে*গে গেলো আদ্রিশ। রা*গে চেঁ*চি’য়ে উঠলো সে।
— কথা কেনো বলছো না স্টু*পি’ড? কে ছিলো ছেলে টা?
আদ্রিশের চেঁ*চা’নো তে ভ*য়ে কেঁ*পে উঠলো আয়ানা। এই বাড়িতে আসার পর থেকে আজ প্রথম আদ্রিশ কে এতোটা রা*গ করতে দেখলো সে। ভ*য়ে তার চোখে পানি চলে আসলো। কিন্তু আদ্রিশ আরও রা*গ করবে ভেবে কাঁ*পা’কাঁ*পা গলায় জিজ্ঞাসা করলো,
— ক,,, কোন ছেলে?
আদ্রিশ জানে না তার এতো কেনো রা*গ হচ্ছে। ইচ্ছা করছে আয়ানা কে তুলে আ*ছা’ড় দিতে। কিন্তু আয়ানা ভ*য় পাচ্ছে দেখে নিজেকে শান্ত করলো আদ্রিশ। কপালে হাত ঘ*ষ’তে ঘ*ষ’তে বললো,
— যার সাথে হাহা হিহি করছিলে কোচিং এর নিচে দাঁড়িয়ে।
আয়ানার মুখ টা হা হয়ে গেলো। সে নিজের অবাক ভাব দূর করে মিনমিন করে বললো,
— ও দ্বীপ। আমার সাথে পড়ে। আমার ফ্রেন্ড।
আদ্রিশ নিজের রা*গ নি’য়’ন্ত্র’ণ করে আয়ানা কে বললো গাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে। আয়ানাও দ্রুত গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো। দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে গেলো। তার মনে হচ্ছে এতক্ষন তার দম টা আ*ট’কে ছিলো। সে বুঝতে পারছে না দ্বীপের সাথে কথা বলার জন্য আদ্রিশ এতোটা রিএক্ট করলো কেনো!
আদ্রিশ গাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ির গায়ে স্ব*জো*রে আ*ঘা’ত করলো। নিজের চুল খা*ম’চে ধরে বলতে লাগলো,
— কি হচ্ছে এগুলো আমার সাথে। ওকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে এতো কেনো রা*গ হচ্ছে আমার? ওর ছেলে বন্ধু থাকতেই পারে, ও তাদের সাথে কথাও বলতেই পারে। কিন্তু, কিন্তু আমার কেনো স*হ্য হলো না? কেন স*হ্য করতে পারলাম না? কেন? কেন?
চলবে?
(