#অতল_গভীরে
#পর্ব ৬
Eliyana Aara
—বউ না আমার ভালো চল না।দেখ নাহলে আমার বস আমাকে ধরে ঠেঙাবে। চল না এক বোতল হুইস্কি কিনে দিবো বিদেশিটা।
—-হুইস্কি…? বিদেশিটা…? কিনে দিবেনতো…?নাকি পরে আপনার কাজ শেষ হয়ে গেলে ভুলে জাবেন?
—-নারে ভুলবো না।তুই আগে চল তারপর কিনে এনে দিবো প্রমিস।
—–ঠিক আছে জাবো কিন্তু কবে??
—-পরশুদিন।
—-ওকে কিন্তু কি পরে যাবো??জামা কাপোর কিনে দিন।
—–কেন তোর কি কাপোর নেই??
—–যা আছে ওগুলা পার্টির না সব নরমাল।আমার নতুন ড্রেস লাগবে।
—-আমাকে ফকির বানিয়ে ছারবি তাইতো।ঠিক আছে কালকে গিয়ে একটা শাড়ি কিনে নিয়ে আশিস।
—-ওকে।কিন্তু শাড়ি??
—-হে শাড়ি কিনে আনবি।
—-হুহ ওকে।
দুইদিনপর,তানহা রেডি হয়ে নে সময় হয়ে যাচ্ছে।
—-ঠিক আছে যাচ্ছি।
ওকে বলে আমিও রেডি হয়ে নিলাম, হালকা বাদামি কালার একটা সুট পরে নিলাম তার সাথে কালো জিন্স সাদা শার্ট হাতে বেল্ট ঘরি। চুলগুলোকে স্পাইক করে কপালে ছেরে দিলাম জেল লাগাইনি। একটু পারফিউম লাগিয়ে নিলাম যেইটা আমি ওলওয়েজ লাগাই।এইতো আমি রেডি, না জানি ওর কি অবস্থা, যাই দেখে আসি।
ওর রুমে গিয়েই নক না করেই ঢুকে যেতে নিয়েছিলাম কিন্তু ওইদিনকার কথা মনে পরে গেলো তাই আর নক ছারা ডুকলাম না।দুইবার নক করতেই ও দরোজা খুলে বাহিরে চলে এলো।ওকে দেখেতো আমি ফিদা।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না আমি কাকে দেখছি।ওহ মাই আল্লাহ এটা তানহা? আজ তো ওর উপর থেকে চোখই ফেরানো দায় হয়ে পরছে।কালো শাড়ি উইথ গোল্তেন স্টোনের কাজ করা।হাতে কানে গলায় কালো সেট পরা।ফর্শা মানুষতো ভালোই মানিয়েছে কালো রংটায়। না জানি আজকে কয়জন একে দেখে ফিদা হয় এতো সাজার কি দরকার, ইচ্ছে করছে বোরকা পরিয়ে নিয়ে যাই।আমাকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার মুখটা হাত দিয়ে বন্ধ করে বললো,
—–আরে আরে মুখে মশা চলে যাবেতো।মুখ বন্ধ করুন।
আমি জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললাম,
—-হে হে,যাবে না। না মানে পাশেই কালা ভুতকে দেখে ফেলেছিলামতো তাই ভয়ে মুখ হা হয়ে গেছে।
—-কিহ্ আমি ভুত।যাবোনা আমি আপনার সাথে।
—–তাহলে বিদেশি বোতলও পাবি না।
—–থাক লাগবে না আমার। আমার আবার এতো লোভ নেই।
—–না থাক আমি কিছু বলিনি এইযে চুপ।তাও চল আমার সাথে।
——আব আয়া বাচ্চু উঠ পাহাড়ের নিচে। এবার বলুন কেমন লাগছে।
—-ছো সুইট।
ও কিছুসময় টেরা চোখে তাকিয়ে থেকে বললো,
চলুন যাই আমি রেডি।
হুম চল আমিও রেডি।দুজনেই আর সময় নষ্ট না করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।ভাবছি কি দিয়ে জাবো অটে,রিকশা নাকি উবার।তানহাই আমাকে বলতে লাগলো,
—–আচ্ছা ক্লাবটা কি এখান থেকে খুব দুরে??
—–না অতটাও দুরে নায় মিনিট পঁচিশ খানেক হবে।
—–তাহলে চলুন না রিকশা করে যাই।আজ অনেক দিন হয়ে গেলো রিকশায় উঠি না।
—–ঠিক আছে চল।পরে ওখান থেকে ডাইরেক্ট রিকশা করে চলে গেলাম ক্লাবে।রিকশা থেকে নেমে ভারা মিটিয়ে তানহার হাত ধরে চলতে লাগলাম।
ক্লাবের ভিতরে দেখলাম অনেক মানুষ আছে।প্রথমে গিয়ে বসকে আগে ওর পরিচয় দিলাম।এর পর ওকে এনে আমার কলিগদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম।পরিচয় শেষে দুজনেই দাঁড়িয়ে আছি।আশপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি অনেকেই তানহাকে দেখছে।বড্ড রাগ লাগছে, কেন ভাই এদের এতো অন্যের বউ এর দিকে নজর দেওয়া লাগবে কেন।যত্যসব হুহ।
আমি ওর পাশ ঘেসে কাঁধে হাত দিয়ে রাখলাম।ও আমার দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে আছে পারছে না শুধু কিছু বলতে।একপর্যায়ে স্টেজ এ কথা বলা হচ্ছে। বস কিছু কথা বললেন।এরপর এবার উনি উনার ছেলেকে ডাকলেন স্টেজে।
স্টেজে উঠে দারালেন বাপরে কি ডেশিং ছেলে বসের আমিতো বুঝতেই পারিনি স্যার এর ছেলে এতো ভালো। জানি না ব্যাবহার কেমন হবে?
আমি কাধ থেকে হাত নামিয়ে তানহার হাতে ধরতেই বুঝতে পারলাম ওর হাত গুলো বরফ হয়ে গেছে মানে অনেক ঠান্ডা হয়ে গেছে।আর হাতটাও কেমন জানি কাপছে। তাই আমি ওর দিকে নজর দিতেই দেখলাম ও সামনে কেরকম ভয় ভয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে একদম ভয়ে জমে গেছে আমি কি বলছি না বলছি ও কিচ্ছু শুনতে পারছে না।
আমি ওকে কিছুটা কাধ ধরে ঝাকি দিয়ে সবার থেকে কিছুটা আড়ালে নিয়ে বলতে লাগলাম,
—–তানু এই তানু কি হয়েছে?এমন ভয় পেয়ে গেলি কেন?
ও কিছুটে চমকে আমতা আমতা করে বললো,
—–চ চলু চলুনা এখান থ থেকে চ চলে জাই।আমার ভালো লাগছে না ধম বন্ধ লাগছে চলুন না প্লিজ।
ওর চোখে কেমন জেনো পানি টল মল করছে যা দেখে আমার খুব খারাপ লাগলো,তাই ওকে নিয়ে ওখান থেকে বের হয়ে গেলাম।একটু রাত হয়ে জাওয়াতে গাড়ি বা রিকশা পাচ্ছি না। অনেক সময় পর একটা রিকশা পেলাম।রিকশা করে বাসায় চলে এলাম।এর মাঝে তানহার সাথে আমার একটা কথাও হয়নি দুজনেই চুপ ছিলাম। আসার সময় হলো এক বিপত্তি, রাস্তায় বৃষ্টি নেমে গেলো।রিকশার হুট আর কাগজ বের করতে করতে দুজনে ভিজে একা কার অবস্থা। বাসায় এসেই ওওও নিজের রুমে চলে গেলো আর আমিও চলে গেলাম কাপোর চেঞ্জ করতে।
কাপোর চেঞ্জ করে চলে গেলাম রান্নাঘরে কারোন ওখানে খাওয়া হয়নি তার আগেই চলে এসেছি এখোন কিছু একটা হালকা পাতলা বানাতে হবে খাওয়ার জন্য তাই ভাবলাম বাসায় মেগি নুডুলস আছে রান্না করি। নুডুলস সিদ্ধ করার জন্য পানি বসিয়ে দিলাম।নুডুলস রান্না শেষ হয়ে গেলে দুটো প্লেটে বেরে নিলাম।
সোফায় বসে ওকে ডাকতে লাগলাম কিন্তু কোন সারাশব্দ নেই।কেমন জানো একটা ফিল হলো,তখোন বললো পার্টিতে ভালো লাগছে না বাসায় যাবে হলোটা কি মেয়েটার??? মনে হচ্ছে কিছু দেখে ভয় পেয়ে ছিলো।নাহ গিয়ে দেখতে হবে কি হয়েছে।তাই ওর রুমে নক করলাম।তাও কোন সাড়াশব্দ নেই।
তাই এবার দরজা খুলেই রুমে চলে গেলাম আসেপাশে চোখ বুলালাম কিন্তু দেখতে পেলাম না।ওয়াশরুম থেকে পানি পরার শব্দ হচ্ছে। ও এখোন ভিজতেসে কতোখোন হয়ে গেলো মেয়েটাও না পাগোল টান্ডা লেগে যাবেতো।তাই ওকে ডাকার জন্য দরোজায় বারি দিতেই দরোজা খুলে গেলো।দরোজাটা শুধু ভিড়িয়ে রেখেছিলো তাই বারি দিতেই খুলে গেছে।
আমিও দরোজাটা কিছুটা খুলে দেখি তানহা নিচে বসে ভিজতেছে, চোখ বন্ধ করে মনে হচ্ছে কিছুটা বির বির করছে,আর কেমন জানো করছে।তাই আমিও তারতাড়ি ওয়াশরুমে ডুকে নিচে বসে পরলাম ঝর্ণা ছারা থাকায় আমিও আবার ভিজে গেলাম।ওর গালে ধরে বলতে লাগলাম,
—–তানু এই তানু কি হয়েছে তোর এমন করছিস কেন?(ওও চোখ না খুলেই ভয়ে ভয়ে বলতে লাগলো)
—-ধ ধরবেন ন না আমায় ছেরে দিন যেতে দিন আমাকে।
—-তানু চোখ মেল দেখ আমি!!আমি আয়মান।
—-দুরে থাকুন। নাহলে মেরে ফেলবো দ দুরে জান।যেতে দিন আমাকে। কাছে আসবেন না আমার।
—-তানু দেখ আমি, অন্য কেউ নয়।ঠিক আছে আগে তুই শান্ত হ তারপর আমি চলে যাচ্ছি।
ও নিজের হাত পা ছোটা ছুটি করতে লাগলো,চোখ গুলো তখনো বন্ধই আছে।আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলাম,
—-তানু দেখ আমি!! আমি তোর আয়মান এখানে কেউ নেই,ভয় পাচ্ছিস কেন?চোখটা মেলে তাকা।
ও আমাকে নিজের থেকে ছারাতে লাগলো।আমিও ওকে আরো নিজের কাছেই মিশিয়ে নিচ্ছি। আসতে আসতে ওও ওও হাত পা নারানো বন্ধ করে দিলো কেমন নিস্তেজ হয়ে গেলো।তাই ওর মুখটা সামনে এনে দেখি,জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।ওখান থেকে ওকে পাজাকোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। দুজনে পুরো ভিজে আছি ওকেতো কাপোর গুলো বদলিয়ে দিতে হবে কে দিবে এখোন??
এই ভিজা শরীরে থাকলেতো ও আরো অসুস্থ হয়ে পরবে।কি করি এখোন আমি??উফ এই তানহাওও না।যা করার তোকেই করতে হবে আয়মান।
আমিও আগে নিজের কাপোর গুলো বদলিয়ে এলাম জলদি করে। না বলে এভাবে কারো গায়ে হাত দেওয়া ঠিক না তাও কিছু করার নেই ওকে ঠিক করতে হলে এই ভেজা কাপোর গুল বদলিয়ে দিতেই হবে। আমারিতো বউ। ঠিক হওয়ার পর এই কারোনটার জন্য আমাকে তানহা না কেলানি দিলেই হয়েছে।যাইহোক আলমারি থেকে একটা প্লাজো আর টপ এনে শাড়িটা চেঞ্জ করে দিলাম।
শাড়িটা চেঞ্জ করার সময় দেখতে পেলাম শরীরের কিছু জায়গায় কেমন লাল লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কিছু সময় আগে ও অনেক ডলেছে শরীর। আমি টাওয়াল এনে ওর চুলগুলো শরীরটা ভালো মতে মুছে দিলাম।
গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলাম দেখতে পেলাম তাও ওর শরীর প্রচুর ঠান্ডা হয়ে আছে।এভাবেতো ওকে রাখা যাবে না কি করবো???? পরে রুমের সব ফেন বন্ধ করে দিলাম।
কিছুসময় হাতে পায়ের তালু ডলে গরম করার চেষ্টা করলাম।তাও লাভ হলো না অতোটা এবার আমিও কম্বলএর নিচে গিয়ে ওকে নিজের শাথে মিশিয়ে নিলাম। আশঠেপৃশ্ঠে জরিয়ে ধরে শুয়ে রইলাম এদিকে গরমে আমার জায় জায় অবস্থা।
আসতে আসতে ওর শরীর গরম হতে লাগলো।প্রায় অনেক সময় পর ওর শরীর পুরো পুরি ভাবে নরমাল হলো তাই উপর থেকে একটা কম্বল ফেলে দিলাম।দিয়ে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখলাম।আর ভাবতে লাগলাম,তখোনকার কথা ওয়াশরুমে ও ওগুলা কি বলছিলো??ছেরে দিন আমাকে কাছে আসবেন না??
?কি হয়েছিলো, আর ওকি তখোন ক্লাবে কোন ভাবে বসের ছেলেকে দেখে ভয় পেয়ে ছিলো। কি হচ্ছে কিছুইতো বুঝতে পারছি না।আমাকে জানতে হবে সব জানতে হবে কি হয়েছে। তানুর আজকে এই অবস্থা কেন??
রাতের তিনটা বাজে ও কিছুটা নরা চরা করছে তারমানে জ্ঞান ফিরেছে। ও নিজেকে আমার বুকে দেখে কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেই এবার আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমিতো ভেবেছিলাম আমাকে এভাবে দেখে ধাক্কা দিয়ে ফেলেই দিবে তার জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিলাম কিন্তু এখোনতো দেখি কাহিনি অন্য কিছু।ভাবলাম যেহেতু এইভাবে আছি কিছুটা ভয় দেখাই।তাই আমি একটিং করে আমতা আমতা করে বলতে লাগলাম,
—–তানু আমাকে তোর এইখানে এভাবে দেখে দুরে ঠেলে দিতে ইচ্ছে করছে না।
—–না।
—–জিজ্ঞেস করবি না আমাদের মাঝে কিছু হয়েছে কি না।
—–না
—–কেন?
—–কারোন আমি জানি আমার অনুমতি ছারা আপনি আমার সাথে কিছু করবেন না।
—–বাপরে এতো বিশ্বাস কোথা থেকে উদয় হলো।এতদিনতো আমার সাথে কথাই বলতি না।
—–বিশ্বাসতো সেই কবে থেকেই আছে।কিন্তু আমার সময়টা যে ওখান পর্যন্ত থেমে ছিলো।আমার ঘরির কাটা ওই দিন থেকেই বন্ধ পরে আছে।(কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।)
—-আচ্ছা সব বাদ দে,এবার এটা বল কি হয়েছে এভাবে ভয় পেয়ে ছিলি কেন,ওয়াশ রুমে তখোন ভিজে আবোল তাবোল কি বলছিলি???
ওওও আমার কথা গুলো শুনে হাউমাউ করে চিৎকার দিয়ে কান্না করে দিলো।আমি হতবাক হয়ে গেলাম,হঠাৎ এভাবে ওর কান্না দেখে।
চলবে…….