অতল গভীরে পর্ব শেষ

#অতল_গভীরে
#১১শেষ_পর্ব
Eliyana Aara
অন্ধকার একটা রুমে মাটিতে পরে আছি।নাকে কেমন ভাপসা গন্ধ লাগছে,যেটাতে নিশ্বাস নিতেও কষ্ট লাগছে ফেলতেও কষ্ট লাগছে। হয়তো এই রুমটা অনেক দিন ধরে বন্ধ পরে ছিলো তাই এমন লাগছে।মুখ থেকে কোন আওয়াজ বের করতে পারছি না। মুখে রুমাল দিয়ে বাধা।হাত পা ও বাধা।নিচে ফ্লোরে পরে আছি। তানহার কথা মাথায় আশতেই হাত পা ছুটাতে লাগলাম।মাথায় শুধু এটাই ঘুরছে,

আমার তানহা কোথায়? কেমন আছে ওরা? কে আনলো আমাদের এখানে? যেটা ভাবছি সেটা নয়তো?ওর কোন ক্ষতি করলো নাতো?কোথায় আছে ওরা?আল্লাহ তুমি ওদের ভালো রেখো।

অনেক সময় ধরে চেষ্টা করছি হাত পায়ের বাধন খুলতে কিন্তু কিছুতেই সফল হচ্ছি না।মুখ দিয়ে জোরে চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু গোঙানির আওয়াজ ছাড়া কিছুই শুনতে পারছি না। অনেক সময় এরকম করার পরও কিছু করতে পারলাম না, ক্লান্ত হয়ে আরো শরীর নিস্তেজ হতে লাগলো, মাথা অসম্ভব রকম ব্যাথা করছে। চোখ গুলো খুলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি কিন্তু আমি ব্যার্থ পারলাম না।হঠাৎ আলো এসে আমার চোখে লাগলো,যেটাতে চোখ গুলো খুলে আবার বন্ধ করে নিলাম অতিরিক্ত রশ্মিতে। এরপর পিট পিট করে চোখ গুলো খুললাম।সামনে দুইটা লোক দেখতে পেলাম আমার দিকে এগিয়ে আসছে।

আমাকে দুটো লোক ধরে উঠালো আমি ওদের দেখে ছোটাছুটি করতে লাগলাম কিন্তু হাত পা মুখ বাধা থাকায় কিছুই করতে পারছি না। আমাকে নিয়ে একটা খোলা মেলা গোডাউনে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো। আমি মুখ থুবরে মাটিতে পরলাম। দুজন এসে আমাকে আবার উঠিয়ে দিয়ে গেলো। আমার হাত পা মুখের বাধোন গুলো খুলে দিলো। আমি ওঠে দাঁড়িয়ে গেলাম কিন্তু সজোরে ঠিক আমার ডান পাটাতে পেছোন থেকে বাড়ি দিলো।আমার পা টা মনে হয় ভেঙে গেছে।এতোটাই জোরে ছিলো। আমি পা ভাজ করে মাটিতে বসে পরলাম। মুখ থেকে আহ্ শব্দটা বেরিয়ে এলো।

ওখানেই বসে রইলাম, সামনে দেখতে লাগলাম একজন আমার দিকেই হেটে আসছে।আসতে আসতে আমার অনেকটা সামনে চলে এলো আমার মুখ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা দেখে অবাক হলাম না এরকমটাই দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।মুখ থেকে থুতু ফেলে বলতে লাগলাম,

—-যাক তাহলে তোর এন্ট্রিটা এবার ঠিক মতো ঠিক জায়গায় হলো।

—–অবশ্যই।কেউ আমাকে মনে করলে তাকে আমি বেশি সময় অপেক্ষা করাই না।

——সালা, হারামজাদা।

—–ও হো গালা গালি পরে করিস।

——ওকে। এবার বল আমাদের এখানে আনার কারোনটা জানতে পারি।

—–হুম, সেটা তুই না জানলে কে জানবে বল।তুইতো প্রমান জোগার করতে এক্সপার্ট।

—–আই এম ভেরি ইন্টেলিজেন্ট। ইউ নো!

—- তা তো মানতেই হয়।আমার পেছোন থেকে কিভাবে সব প্রমান জোগার করে ফেললি আমিতো প্রথমে যানতেই পারিনি।যদি না দেখতাম ওই দিন তুই আমাকে ফলো করছিস আর লুকিয়ে ভিডিও করছিস।

—–ওওওও।তো দেখতে চাস না ভিডিও গুলা ঠিক কেমন হয়েছে???

—–কেমন হয়েছে?

——একদম পরিষ্কার। নিট এন্ড ক্লিন

—–আচ্ছা তো এবার বলে দাও ভিডিও গুলা কোথায়?

—–হাহহাহা কি মনে হয় তুই জিজ্ঞেস করবি আর আমি বলে দিবো।ওহ কাম ওন তোর মাথায় এতটুকু বুদ্ধিতো থাকার কথা।আমি যদি মরেও যাই না তাহলেও বলবো না কোথায় রেখেছি।

—–ওহ্ , আমি জানতাম তুই এভাবে বলবি না, তাইতো তোর উইক পয়েন্ট সবার আগে ধরে এনেছি।

ওওও দুই জনকে ইশারা করতেই দুইজনে তানহাকে ধরে ধরে নিয়ে আসছে।তানহার যে জ্ঞান নেই বুঝা যাচ্ছে।

আমি ওঠে ওর দিকে যেতে নিলে ওই ছেলে দুটো তানহার গলায় ছুরি ধরলো যেটা দেখে আমি কিছুটা পিছিয়ে গেলাম।

—–তো আয়মান জুহায়ের এবার আমার মনে হচ্ছে আর এই দিকে আসার সাহস করবেন না।

—–হেই ইউ।লিভ হার।ছেরে দে আমার তানহাকে।লাগতে হলে আমার সাথে লাগ ওর সাথে নয়।

—–ওহ হো এই কাহিনিটার মুলেতো ওই মেয়েটাই আছে।যার জন্য তুই আমার পেছনে লেগেছিস।আর আমার যতদুর মনে আছে আমি ওকে এক দিনের জন্য নিজের করতে তুলে নিয়েছিলাম। একটা বুড়ো লোকের জন্য এই মেয়েটা আমার গালে সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছিলো।তার প্রতিশোধ নিতে তুলে নিয়েছিলাম।

এই মেয়েটা আমার মাথায় কাচের বোতল ভেঙে চলে আসে।ওই দিন আর মেয়েটাকে কিছু করতে পারিনি। এরপর দিন একে খুজে ছিলাম কিন্তু আর পাইনি।তাই আবার রাজশাহী বেক করি এরপর অফিসিয়াল কাজে আব্বু বাহিরে পাঠিয়ে দেয়।অফিসের মালিক হয়ে যেই না রাজত্ব করতে নিলাম ওমনি তুই তোর বা হাত দিয়ে বেঘাত ঘটিয়ে দিলি। তাও এই দুই টাকার একটা মেয়ের জন্য। আমিতো জানতামি না এ তোর বউ। আমিতো তোকে ভয় দেখানোর জন্য তুলে এনেছিলাম আর কারোন জানার জন্য এখোন একে দেখার পর বুঝলাম তুই কেন এরকমটা করলি।আমার পেছনে কেন লাগলি।
কি আছে এই মেয়ের মধ্যে? রাতে খুব আনন্দ হয় তাই না।খুব মজা দেয়।

—–কুত্তার বাচ্চা, তোর জিব টেনি ছিরে ফেলবো।কোন সাহসে তুই তানুর বেপারে খারাপ কথা বললি। তোকে কেটে আমি কুকুরকে খাওয়াবো।ম**** তোর সাহস কি করে হলো?তোকে আজকে আমি মেরেই ফেলবো।উঠে গিয়ে আমি ওর গলা টিপে ধরলাম হাতের কাছে কিছু পাইনি তাই, হাত দিয়ে ওর গলা টিপে ধরলাম এতোটাই জোরে ধরলাম যে ওর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। এক পর্যায়ে কিছু ছেলে এসে আমাকে ছুটিয়ে নিলো।

নিয়ে ওরা আমাকে ধরে রাখলো।এখানে মোট সাত জন গার্ড আছে।

সাদ্দাফ নিজের টাইটা হালকা করে আমার কাছে এসে বললো,

—–ওহ বস ধীরে ধীরে এতো রাগলে চলে।এখোনতো কিছুই করিনি। এখোন দেখবি তোর সামনে তোর বউ এর সাথে কি করি।ওইদিনতো কিছু করতে পারিনি আজকে তোর চোখের সামনে সব করবো।

বলেই ও তানহার দিকে এগোতে লাগলো,
আর আমি ছেলে গুলার সাথে জোরা জুরি করতে লাগলাম।এক পর্যায়ে এক জনের পকেট থেকে গুলি বের করতে পেরে ওই সাত জনকেই একে একে শুট করে দিলাম। এর পর ওই সাদ্দাফকে শুট করতে গিয়ে দেখি বুলেট শেষ।পা খুরিয়ে খুরিয়ে ওর কাছে যেতেই তানহাকে যেগুলো ধরে ছিলো তাদেরকে আমার দিকে ইশারা দিলো। ওরাও আমার কাছে আসতেই দুজনকেই মেরে মাটিতে লুটিয়ে দিলাম।

এর মধ্যে তানহার ওও জ্ঞান ফিরে গেছে।সাদ্দাফ এর হাত থেকে ছুটতে চাইছে কিন্তু পারছে না।সাদ্দাফ একটা ছুরি নিয়ে তানহার গলায় ধরে আছে।এই দিকে আমি অন্য একটা গার্ড থেকে পিস্তল নিয়ে সাদ্দাফ এর দিকে তাক করতেই সাদ্দাফ ধাক্কা দিয়ে তানহাকে ফেলে দিলো।ও গিয়ে একদম পেটের উপর ভর দিয়ে নিচে পরে গেলো।নিচে পরেই পেটে ধরে কাতরাতে লাগলো।

আমি ওকে পরতে দেখে আমি পিস্তল ফেলে দৌড়ে গিয়ে তানহাকে ধরলাম।ও পেটের যন্ত্রণায় নিচে কাতরাচ্ছে।আমি ওকে নিচে রেখে সাদ্দাফ এর সাথে ফাইট করতে লাগলাম।ফাইট করার পর একপর্যায়ে ও নিচে পরে গেলো। একদম ওর হাতের সামনে গান পরে থাকায় পিস্তল নিয়ে আমার দিকে তাক করলো।

আমার পায়ের কাছে একটা ছুরি পরে আছে।আমি ছুরিটা পা দিয়ে উঠিয়ে ঠাস করে সেটা সাদ্দাফ এর দিকে ছুরে দিলাম ও কিছু বুঝে উঠার আগেই ছুরিটা গিয়ে ওর পেটে লাগলো। আমি ওর দিকে এগিয়ে যেতে নিলে।

খুব জোরে আওয়াজ হলো,শব্দের কারোনে চোখ দুটা বন্ধ করে ফেললাম। পর পর দুই বার গুলি করার আওয়াজ এলো চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখি সাদ্দাফ এর নিথর দেহ নিচে পরে আছে। বুক চিরে গল গল করে রক্ত বের হচ্ছে। পেছনে তাকিয়ে দেখি আরিফ পিস্তল তাক করে আছে সাদ্দাফ এর দিকে।

আরিফ আর জাহিদকে দেখে শান্ত হলাম।যানতাম ওরা আসছে এখানে। ওরা আমদের ফ্লাটেই আসছিলো শুধু ঘন্টা খানেক সময়ের দেরি ছিলো বাসায় পৌঁছাতে। যখোন আমাদের ফ্লাটে লোক গুলো ঢুকলো তখোন আমি ওদের সাথেই কথা বলছিলাম ফোন হাতে ডাইনিং সব দেখে মোবাইলের কল না কেটে পেকেটে রেখে দিয়েছিলাম মোবাইল। যার কারোনে ওরা যানতে পেরেছে কোথায় আছি আমারা।চলে গেলাম তানহার কাছে।ও এখোন পেটে ধরে কাতারাচ্ছে।তাই ওকে সোজা কোলে নিয়ে আমি আর জাহিদ হসপিটালে চলে গেলাম আরিফ এর গারি নিয়ে। যেতে যেতে জাহিদকে সবটা বললাম তানহার বেপারে।

★★

ডাক্তার,ডাক্তার প্লিজ দেখেন না আমার ওয়াইফের কি হয়েছে??ও প্রেগনেনট ধাক্কা খেয়ে পেটে ভর দিয়ে নিচে পরে গেছে।দেখুন না ওরা ঠিক আচে কিনা? আমার বেবি ঠিক আছে কি না??

—–ওকে মিস্টার আপনি শান্ত হোন সব ঠিক হয়ে যাবে।

—-আয়মান নিজেকে শান্ত কর সব ঠিক হয়ে যাবে(জাহিদ)

—–কি করে করবো নিজেকে শান্ত জাহিদ কি করে??আমার তানু আমার বেবি জানি না ওরা কেমন আছে?কি হালে আছে।ওদের কিছু হয়ে গেলে আমি বাচবো নারে জাহিদ বাচবো না।

—–আল্লাহ আল্লাহ কর সব ঠিক হয়ে যাবে (জাহিদ)

প্রায় ঘন্টা খানেক পর ওটি থেকে ডাক্তার বের হয়ে এলেন,
ওনার কাছে যেতেই, আমি জিজ্ঞেস করলাম,

—–ডাক্তার আমার ওয়াইফ।

—–সি ইজ অলরাইট। উনি ঠিক আছেন উনার কোন প্রবলেম হয়নি।কিন্তু!

—–কিন্তু কি স্যার?

—–আপনাদের বেবিটাকে বাচাতে পারিনি।সরি এক্স কিউজমি।

বলেই ডাক্তার চলে গেলেন।আমি ফ্লোরে বসে পরলাম, আমার খুব কান্না পাচ্ছে একদম চিৎকার দিয়ে কান্না পাচ্ছে কিন্তু চিৎকার দিতে পারছি না ফ্লোরে বসে নিরবে চোখের পানি ফেলছি।জাহিদ আমার সামনে বসে আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,

—–কিরে পাগোল কাদছিস কেন শক্ত হ এভাবে ভেঙে পরলে হবে?

—–কি করে শক্ত হবো জাহিদ কি করে?কি মুখ নিয়ে তানহার সামনে জাবো? ওকে কি জবাব দিবো?আজ নিজেকে খুব অসহায় লাগছেরে।খুব অসহায় লাগছে।

—-ভেঙে পরিসনা। তুই ভেঙে পরলে তানহাকে কে দেখবে।ওকে কে বুঝাবে।

—-আমি পারবো নারে ওর সামনে যেতে। আমাদের বেবিটাকে আমরা বাচাতে পারলাম না।আজ সবকিছু আমার জন্য হয়েছে।এর জন্য আমি দায়ী।

—–যেটা হয়েছে সেটাতো হয়েছেই।এখোন কাদলে তোর কিছু ফেরত আসবে না।এটাই যে মনে একটু শান্তি পাবি।কিন্তু তানহা যে একেবারেই ভেঙে পরবেরে। ওকে সামলাতে তোর নিজেকে শান্ত রাখতেই হবে।

ঘন্টাখানেক সময় পর ওকে বেডে দেওয়া হলো।নার্স বলেছে এখোন দেখা করা যাবে,তাই চলে গেলাম বেড কেবিনে।গিয়ে ওর পাসটাতে একটা চেয়ার টেনে বসে পরলাম।ও আমার অনুপস্থিতি বুঝে একবার চোখ মেলে দেখে আবার চোখটা বন্ধ করে নিলো।

আমি ওর হাতটা ধরে নীরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম। আমি বললাম,

—–আমাকে মাফ করে দে তানু।আমি পারিনি আমাদের বাচ্চাটকে বাঁচাতে।আমি খুনি আমার বাচ্চার। আমাকে শাস্তি দে।

ও আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,

—–কাদবেন না আয়মান সব কিছু আল্লার হাতে। এসবের জন্য নিজেকে দোষী ভাববেন না।আপনি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন সেখানে কি করে আমাদের বাচ্চার খুনের দায় আপনাকে দেই।সব তো হয়েছে ওই সাদ্দাফ এর জন্য। ও মরেছে???

—–হুম।

—–এটাই শান্তি।আর কি চাই।কতগুলো মেয়ের সম্মান বাচবে এখোন।এই যে আরো কত গুলো মেয়ের সম্মান নষ্ট করেছে তাদের সবাই আজকে ইনসাফ পেয়েছে।সবাই আজকে হয়তো আনন্দিত হবে।কিন্তু এগুলাতে আবার আপনি??

—–আমার কিছু হবে না।আরিফ সব সামলে নিয়েছে।পুলিশ ইনকাউন্টার হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে।

—-ওওওও।যাই হোক আপনি কষ্ট পেয়েন না আপনার কষ্টতে যে আমার বুক ফেটে যায়।

—–ঠিক আছে আর কাদবো না কষ্ট ও পাবো না।

এখানে দুই দিন ভর্তি রেখে সবাই মিলে এক সাথে বাড়ি চলে গেলাম ওখানে গিয়ে সবাই একটু কান্না কাটি করলো।আমরাই সবাইকে বুঝিয়ে স্বভাবিক করলাম।

★★★★★★

৭ বছর পর,

—-আব্বুই দেখো ভাই আমার চকলেট নিয়ে এখোন আমাকে আর দিচ্ছে না।

——না আম্মুই আমি আপুর চকলেট নেই নি।আপু চকলেট খেয়ে এখোন আমারটা নিতে চাইছে।

—–না আব্বুই ও নিজেরটা খেয়ে এখোন আমরটা খাচ্ছে।

——ওহ্হো বাবারা ঝগরা করে না। এই নাও ধরো আরো চকলেট এবার যাও আর ঝগরা করো না।

—–আই লাভ ইউ আব্বু।

—–এই আমি আগে বলতাম তুই কেন বল্লি।আই লাভ ইউ আব্বু।

—-তুমি বলোনি তাই আমি বলে দিয়েছি।

—–ওকে ওকে হইসে থাক আর ঝগড়া করতে হবে না। আই লাভ ইউ টু বাবারা।

এরা দুই ভাইবোন ঝগড়া করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো আমি আর তানহা ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম।আমি তানহাকে বললাম,

——এই দুটো না একেবারে তোর মতোই ঝগড়ুটে হয়েছে।

——ঝগড়া আমি করি নাকি আপনি।সব চাল চলন আপনার মতো হয়েছে।বিশেষ করে মেয়েটা আপনার সব কিছু পেয়েছে।ছেলেটা তাও আমার মতো কিছুটা শান্ত।মেয়ের যেদ আর আপনার জেদ একদম একি রকম।

——দেখতে হবে না মেয়েটা কার।

ও মুখ ভেংচি দিয়ে রেডি হতে লাগলো,আর আমিও বসে রইলাম ওর রেডি হওয়ার অপেক্ষায়। দেখতে দেখতে প্রায় ৭টা বছর হয়ে গেলো।সবাই আগের মতো আছে শুধু সময়ের সাথে সাথে আমাদের ফেমেলিতে কিছু মেহমান এসেছে নতুন।

আমাদের বাসায় আসার পর থেকে দুজনেই স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করলাম।এখানে আসার সাত মাসের মধ্যে তানহা আবার বেবি কনসিভ করে। এরপর জাহিদ আর সামিয়ার বিয়ের দিন আমাদের ঘরে একটা নয় দুইটা মেহমান আসে।আমদের টুইনস বেবি হয়।বড় মেয়ে আরিয়ানা জারাহ্,আর ছোট ছেলে আদনান আলভি।

এখোন এদের বয়স সারে চার বছর। দুটাই সারাদিন মারা মারি পাকা পাকা কথা বলে পুড়ো বাড়িটা মাথায় করে রাখে এর সাথে আরো দুই জন আছে মিলি আর তানজিলের ৯ মাসের মেয়ে তুবা।আর জাহিদের ২বছরের ছেলে জুবায়েদ।আর আজকে আরো একটা নতুন সদস্য এর আগমন হবে।তাহমিনার মেয়ে মানহা, আজ চারদিন হয়েছে ওর বেবি হয়েছে ওরা আসছে সবাই বেবিকে নিয়ে সেটারি সব আয়োজন চলছে। সুমির বিয়ে হয়েছে তিন মাস হলো।নতুন বেবিকে দেখার জন্য আমার ছেলে খুব এক্সাইটেড। এতোসময় আমার মাথা পাগোল করে ফেলেছিলো কখোন আসবে সেটা নিয়ে।

আমরা নিচে সবাই বসে আছি এরি মধ্যে তাহমিনা আর ওর স্বামী সোহান এসেছে ওদের ময়েকে কোলে নিয়ে।সবাই বসে বসে গল্প করছি বাবুকে এটা সেটা গিফ্ট করছি।আমি বাবুকে একটা স্বর্নের চুরি পরাতে জাবো তখোন আমার ছেলে বললো,

——ছোট আম্মু।

—–কি বাবাই??(তাহমিনা)

—–তোমার মেয়েটা না খুব সুইট হয়েছে। আমাকে দিবে তোমার মেয়েকে বউ বানিয়ে।

আমার ছেলের কথা শুনে বাড়ির সবাই মুচকি মুচকি হাসছে পাকা ছেলে এখোনি নিজের খালাকে হাত করছে।বড় হলে কি করবে আল্লাহ জানে।তাহমিনা বললো,

—— দিবো।আগলে রাখবে তো আমার মেয়েকে সব সময় এর জন্য। কখোন ছারবে না তো ওর হাত।বড় হয়ে নিজের পায়ে দারাও আমি নিজে দাড়িয়ে থেকে তোমাদের বিয়ে দিবো।

—–ঠিক আছে নিজের পায়েই তো দাঁড়িয়ে আছি দিবে না।

—–তুমি বড় হবে তারপর দিবো।

——-বড় হলে ও আমার বউ হবে তো??

—-হুম হবে।

জানি না ও কি বুঝে কথা গুলো বলেছে, বাচ্চা মানুষ আর কি বা বুঝবে। কিন্তু ওর চোখ দেখে আমার তানুর কথা মনে হচ্ছে। ওও তো বিয়ের আগে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো তখোন ওর চোখের ভাষা পরতে পারতাম না এখোন পারি।এখোন ওর চোখের দিকে তাকালেই আমি সব বলতে পারি।যতোই অতল গভীরে নিজের ভালোবাসাকে লুকিয়ে রাখেনা কেন ঠিক আমি বুঝে ফেলি। তোর অতল গভীরে ভালোবাসাই আমি সব সময় থাকতে চাই। তাহমিনার মেয়েও যখোন বড় হয়ে আদনান এর ভালোবাসা বুঝতে পারবে সেদিনি ওর চোখের ভাষাও পরতে পারবে সেটা যতোই অতল গভীরে হোক না কেন।
দোয়া করবেন সবাই আমাদের জন্য। আমাদের ফেমেলির জন্য।

সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here