#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব -৯
___________
২১.
–“আমার সাথে কথা বলবে না,তৃপ্তি?বেশি বিরক্ত করি?”
শান্ত তবে গাম্ভীর্যতায় পরিপূর্ণ আদ্রিনের কণ্ঠস্বর।
তার এহেন বাক্য শুনে তৃপ্তির পা থমকে।গাড়ি থেকে নামতে গিয়েও নামলো না সে।আদ্রিনের বলা আজকের সকল বাক্যে সে একরাশ স্বস্তি পেলেও দমিয়ে ফেললো সে নিজস্ব পা’ষাণ মনকে।এমনকি অত্র ব্যাপারে কিছুই বলার সুযোগ দিলো না সে আদ্রিনকে।বিষয়টি লক্ষ্য করে আদ্রিনও তেমন কিছু ইঙ্গিত করলো না।তার ধারণা তৃপ্তির সময়ের প্রয়োজন।আর সেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে আদ্রিন অপেক্ষা করবে।কিন্তু,
বিদায়বেলায় মেয়েটা কিছু না বললে ঘাবড়িয়ে যায় নামহীন সেই প্রেমিক।তাই তো উপরোক্ত বাক্যটি ছুঁড়ে সে গোপন প্রেমিকার বিদায়বেলায়।
তৃপ্তি কিংকর্তব্যবিমূ়ঢ়।মানবটা তাকে বিরক্ত করে?নাহ।একদমই না।বৃষ্টিতে ভিজে নাজেহাল অবস্থা তৃপ্তির।সম্ভবত জ্বরের পূর্বাভাস।গলাটাও খুশখুশ করছে তার।বিনা মৌসুমের ঝর বাদল সহ্য হয় না।এছাড়াও আদ্রিনের বলা প্রত্যেক শব্দ বেসামাল করে মেয়েটার মন।এইযে আজ,নিজেকে না দমালে কি অঘটন ঘটতো!মায়ের মতো কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা নেই এই মেয়ের।তাই,সময় বুঝে চুপ করে ছিলো মেয়েটা।এইভাবেই একেবারে আদ্রিনকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয় তৃপ্তির।সামনে তৃপ্তি এবং আদ্রিনের জন্যে কি অপেক্ষা করছে এটাও তার অজানা।তৃপ্তির পাষাণ হৃদয়ে সবটাই এলোমেলো।তাই বলে আদ্রিন তাকে বিরক্ত করছে?ভুল,তা ইহকালে অসম্ভব!
–“নাহ,বিরক্ত কেনো করবেন?”
তৃপ্তি মিনমিনে সুরে প্রশ্ন করলো।
–“চলে যাচ্ছো কিন্তু,একটা বাই পর্যন্ত বললে না।ভাবলাম,আমার কারণে বেশ বিরক্ত হয়তো তুমি!”
আদ্রিনের অধরে তাচ্ছিল্যের হাসি।
মাথায় ভোঁতা যন্ত্রণা অনুভব হয় তৃপ্তির।ঠিক কেনো?আদ্রিন তার ব্যাপারে ভুল ভাবছে বলে নাকি শরীরের তাপমাত্রার নাজেহাল অবস্থা বলে?
–“ভুল ভাবছেন।আসলে আমার ভেজা কাপড়ের কারণে অস্বস্তি হচ্ছিলো।যতো দ্রুত বাসায় ফেরা যায়, আমার ততোই উত্তম।”
নিজের শরীর খারাপের কথা চেপে গেলো সে।
–“ঠিক আছে বাসায় যাও। যত্ন নিও নিজের।”
আদ্রিন গাড়ির ভেতরকার হলদেটে লাইটের আলো নেভালো।মেয়েটার মৃদু কম্পিত অধর সহ্য হচ্ছে না আদ্রিনের।
–“আসছি তবে।সময় নিয়ে একদিন আসবেন বাসায়।”
আদ্রিন নিরুত্তর।কেবল মাথা দোলালো।
তৃপ্তি পূর্বে নামার সময় আদ্রিনের কোট না খুললেও,
এইবার সে কোট খুলে পিছনের সিটে রাখলো,
–“থ্যাংকস কোটের জন্যে।”
আদ্রিন সম্মুখে তাকিয়ে।পাশে বসা বিদ্ধস্ত নারীর পানে তার নজর দেওয়া অসম্ভব।পাশে দৃষ্টি জ্ঞাপন না করেও মেয়েটার আবছা প্রতিচ্ছবি তার কর্নিয়ায় দৃশ্যমান।মুহূর্তেই বুকের ভেতরের উত্তাল শব্দ তার কানে স্পষ্ট।
–“বাসায় যাও।”
কেমন কম্পিত তার এই কণ্ঠ।তৃপ্তি গাড়ি হতে নেমে চলে যাওয়ার সময় সেই কণ্ঠ শুনে স্তব্দ।তবে পেছন ফেরার পূর্বেই শাঁ করে ছুটলো আদ্রিনের প্রাইভেট কার।তারপরও পেছন ফিরলো তৃপ্তি।খানিকটা দূরে লাল রঙের হেডলাইট জ্বলজ্বল করে উঠলো।তৃপ্তি এতোসেতো ভাবলো না আর।জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে মেয়েটার।দ্রুত পায়ে সে গেইটে প্রবেশ করলো নির্বিঘ্নে।
.
তৃপ্তির এলাকা হতে বের হয়ে আদ্রিন গাড়ি সাইড করলো।আঁখিতে ভাসছে আজকের দিনের তার মেহেবুবার সকল রূপ।স্টিয়ারিংয়ে মাথা ঠুকে বসে সে।মেয়েটাকে তার বড্ড প্রয়োজন।এমন’ই তো একজনের খোঁজে ছিলো সে,যার মাধ্যমে তার অতৃপ্ত হৃদয় খুঁজে পাবে তৃপ্ততা।এই তৃপ্তি মেয়েটা তার জীবনে এসে সকল ঘাটতি পূরণ করলো।তৃপ্তির প্রতি আজ তার ভালোবাসার মাত্রা বাড়লো হাজারগুণ।শাড়িতে মেয়েটাকে এতোটা আ’বেদনময়ী লাগবে তা জানা ছিল না আদ্রিনের।তার কল্পনার চেয়েও মেয়েটাকে শাড়িতে প্রেয়সী বলেই মনে হচ্ছিলো তার।কেনো মেয়েটার এক কালো অতীত আছে?এই অতীতের কারণেই আদ্রিন তাকে সময় দিবে বলে ভেবেছে।তবে এখন তার রাগ হচ্ছে।প্রচুর রাগ। সিটে সোজা হয়ে বসলো সে পুনরায়।না তৃপ্তির কালো অতীত থাকতো,আর না তার এবং তৃপ্তির মাঝে এমন সময় নামক দূরত্বের সৃষ্টি হতো!
দুই আঙ্গুলের সমেত কপাল ঘষলো সে।আদ্রিন বেশ জানে,নিজের বাবা-মায়ের সম্পর্কের ফাটলের দরুণ মেয়েটা এমন পাথর হৃদয়ের অধিকারী।পরক্ষণে আদ্রিন কিছু একটা ভাবলো এবং হাসলো সন্তর্পনে।তৃপ্তির মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করাটা আদ্রিনের নিকট এক রোমাঞ্চকর পর্ব হতে যাচ্ছে।আর সেই ভালোবাসা সৃষ্টি অতঃপর আগলিয়ে রাখতে আদ্রিন সব করতে প্রস্তুত।
তার ভাবনার ইতি ঘটে তন্ময়ের ফোনে।সন্ধ্যা সাতটার মিটিংয়ের পূর্বাভাস জানিয়ে দিয়েছে তন্ময়।সেই সুবাদে গায়ের অপরিপক্ক শুষ্ক শার্ট ঢাকতেই পেছন সিট হতে নিজের কোটটা নিলো সে।তৃপ্তির গায়ের উষ্ণতা এখনো এই কোটে বিদ্যমান।সেই সুবাসে নিজেকে হারিয়ে গায়ে জড়ালো কোটটি।একরাশ শিহরণ খেলে গেলো আদ্রিনের সারা সত্তা জুড়ে।মনে মনে সে এই সিদ্ধান্ত নিলো,কেবল সে একাই এখন এই সম্পর্কের পেছনে ছুটবে না।তৃপ্তিকেও তাদের ভবিষ্যতের প্রণয়ের সম্পর্কের পিছে ছুটতে এক প্রকার বাধ্য করবে স্বয়ং আদ্রিন।সম্পূর্ণ ব্যাপারটা ঘটবে আদ্রিনের পরিকল্পনায়, কিন্তু তা থেকে যাবে তৃপ্তির আড়ালে-আবডালে।
আঁধারে সন্ধ্যার বেশভূষা কৃষ্ণ।ঘটা করে বর্ষণ নামলো পুনরায়।পাশে অনুপস্থিত অপ্রেমিকার শূন্যতা গ্রাস করছে এই মানবকে।মিউজিক প্লেয়ারে নিজের পছন্দ অনুযায়ী গানের পসরা সাজিয়েছে আদ্রিন।তার কল্পনা জুড়ে কেবল সে আর তার মেহেবুবা।সেই প্রথম দিন হতে তাদের প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করছে গানের প্রত্যেক পংক্তি সমেত।অতঃপর কাঙ্খিত লাইন এলে তৃপ্তির কল্পনায় আদ্রিন ভরাট সুরে গুণগুণ করলো,
–“কেনো লাগে শূন্য শূন্য বলো,
তোমায় ছাড়া এত….
তুমি কি তা বলতে পারো?”
পরপর সে এক হাত স্টেরিয়াংয়ে রেখে অন্যহাতে মাথার অগ্রভাগের চুলে হাত বুলিয়ে অস্ফুট ভঙ্গিতে বিক্ষিপ্ত কণ্ঠে গর্জন করলো,
–“হুস!আই’ম মিসিং ইউ,তৃপ্তি।
২২.
জ্বরের কারণে এই সপ্তাহ তৃপ্তি ঘরের বাহিরে যায়নি।বাহিরে না বেরুলেও ইউনিভার্সিটি এবং ছোট্ট ব্যবসার সকল কাজ ঘরে বসেই সেরেছে সে।এই সপ্তাহখানেকের জ্বরে মেয়েটার গাল শুকিয়েছে।জ্বরের প্রথম দুদিন একেবারে বেখবর ছিলো মেয়েটা।তৃতীয় দিনে তার অবস্থার উন্নতি হলে সর্বপ্রথম তার স্মরণে এলো আদ্রিনের কথা।ছেলেটা গত দুইদিন তার একটাবার খবর না নেওয়ার কারণে কেমন এক চাপা কষ্ট অনুভব করলো তৃপ্তির পাষাণ হৃদয়।তারপরও ভেঙে যায়নি সে।কিন্তু পঞ্চম দিনেও আদ্রিনের কোনো হাদিস না পেলে বাধ্য হয়ে ফোন করে তাকে।মেসেজের উত্তরটাও আদ্রিন দেয়নি পঞ্চম দিনেও।হুট করে তার গায়েব হয়ে যাওয়াটা আয়ত্বে এলো না তৃপ্তির।তবে,তাকে ফোন দেওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আদ্রিনের কণ্ঠ শুনেছিলো তৃপ্তি।যেনো ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলো আদ্রিন।তার কণ্ঠ পূর্বের মতো গম্ভীর শোনালেও অপর পাশে উপস্থিত মানবের অধরের প্রাপ্য প্রশান্তির হাসি উপভোগ করতে পারেনি তৃপ্তি।মানুষটার পরিকল্পনা অনুযায়ী তৃপ্তির এই ফোন যেনো দুর্ভিক্ষের মাঝে মৃদু আহার।তৃপ্তি জানেও না,তার এই ফোনের কারণে তার প্রতি আদ্রিনের জিদ ঠিক কতটা বাড়লো!সেদিন তৃপ্তি রাগ করেনি আদ্রিনের লাপাত্তা হওয়াতে।সত্যিকার অর্থে আদ্রিন ব্যস্ত ছিলো নিজ কাজে,ঢাকায়।
এতদিন কাজে না ফিরলেও আজ তৃপ্তি বসে নেই।ড্রইং ক্লাস শেষ করিয়ে সে বেরুলো আলেয়ার বাসার উদ্দেশ্যে।রিক্সায় চড়ে ব্যস্ত শহরের অলিগলিতে ঘুরতে তৃপ্তির বেশ লাগে।এইযে এখনো বিকালের অন্তিম পর্যায়ে সূর্যের লাল আভায় জগৎ রক্তিম।স্নিগ্ধ পবন ছুঁয়ে যাচ্ছে তার দুর্বল সত্তায়।জ্বরের পর বেশ দূর্বলতা দেখা দিয়েছে মেয়েটার। তাও খুশি সে।বাহিরে ঘোরাফেরা করা তার সর্বপ্রিয়।
আলেয়ার বাসায় তার কাজের অন্ত ছিল না।তবে আলেয়া মেয়েটা আন্তরিক।তৃপ্তির অবস্থা পরখ করে সে শুধালো,
–“অসুস্থ হয়েও কি কাজ করবি?আমি আছি তো।দেখি বস।জিনিসপত্র গুছিয়ে দে বিছানায় বসে।অযথা দাঁড়িয়ে থাকবি না।”
–“দুইজনে একত্রে লাইভ করলাম।আর এইসব তুই একা সামলাবি?
তৃপ্তি ইশারা করলো ফ্লোরে ছিটিয়ে থাকা কাপড় এবং গয়নার পানে।
–“হ্যাঁ।আমি করবো।তুই আপাতত খাটের উপর রাখা কাপড় ভাঁজ কর বসে বসে।”
আলেয়ার ধমকে তৃপ্তি থামলো।এইভাবেও তার শরীরটা আবারও টলমলে।
রাত নয়টার দিকে তৃপ্তি নামলো আলেয়ার অ্যাপার্টমেন্ট হতে।নিচে সিএনজি অপেক্ষায়।বিভিন্ন অ্যাপে আজকাল রাতের বেলায়ও সুরক্ষার সাথে সিএনজি,মোটর সাইকেল বা কারের সুবিধা পাওয়া যায়।একা মেয়ে হিসেবে তৃপ্তি তাই এই সুযোগ হাতছাড়া করলো না।
সিএনজিতে উঠার জন্যে উদ্যত হতেই চিরচেনা কণ্ঠে স্তব্ধ হলো তৃপ্তি।
–“মেহেবুবা!”
বিচলিত নজরে পেছনে বাঁক ফিরলো তৃপ্তি। মোটা কাপড়ের ফুল হাতা গেঞ্জি পরিহিত কাঙ্খিত পুরুষটি দাঁড়িয়ে।অধর প্রসারিত।আঁখি তার জ্বলজ্বল।চাপা ঘন দাড়ি আজ মিহি।চুলের নকশা পরিবর্তিত।তৃপ্তির বুকের গভীরে শব্দ হচ্ছে তীব্র।লোকটা কাছে এসে দাঁড়াতেই ঝাঁঝালো মিষ্টি গন্ধ ভেদ করলো তৃপ্তির নসিকারন্ধ্রে।আদ্রিনের পুরুষালি সুবাস এবং পারফিউমের সুবাস মিলেই এমন সুবাসের সৃষ্টি।তৃপ্তির বেশ সন্নিকটে আদ্রিন।হুট করেই তার কপালে হাতের উল্টো পিঠ রেখে আদ্রিন প্রশ্ন করলো,
–“জ্বর সেরেছে পুরোপুরি?”
–“হ্যাঁ।আপনি এইখানে?”
তৃপ্তি কিঞ্চিৎ অবাক।
–“এইসব এলাকায় আমার আসা যাওয়া থাকেই।বেশিরভাগ বন্ধুদের আড্ডা জমে এইখানেই।”
আদ্রিন মিথ্যা বললো সাবলীলভাবে।রুদ্র তাকে তৃপ্তির ঘর থেকে বাহির হওয়ার সংবাদ দিলে কাজ শেষে আদ্রিন এইখানে পৌঁছে।রুদ্র পূর্ব হতেই এইখানে উপস্থিত ছিলো।আদ্রিনের নির্দেশে সে গাড়ি নিয়ে ফিরে গেলেও রয়ে যায় আদ্রিন তার মেহেবুবার অপেক্ষায়।
–“ওহ!চলে যাবেন এখনই?”
তৃপ্তি প্রশ্ন করলো হেসে।
–“হ্যাঁ,যাবো।গাড়ি গ্যারেজে।আজ এমনি বেরিয়েছি।তুমি একা যাচ্ছো?”
আদ্রিন এক হাত পকেটে পুরলো।
–“একাই যায়।আপনি যাবেন আমার সাথে?”
ফট করেই শুধালো সে আদ্রিনকে।তৃপ্তি নিজেই তার প্রশ্নে কিঞ্চিৎ অবাক।লজ্জা পেলো খানিকটা।
–“লজ্জা পেও না।যাবো।”
শেষ বাক্য আওড়িয়ে আদ্রিন নিজেই প্রথমে উঠলো।পরপর উঠলো তৃপ্তি।
দুজনার মাঝে কয়েক ইঞ্চির দুরত্ব।টুকটাক কথার ভান্ডারে ভালো সময়ই অতিক্রান্ত করছে মানব-মানবী।তবে,ব্যাঘাত ঘটলো অন্যথায়।
হুট করেই দুইটা বড় মাইক্রো তাদের সিএনজির সম্মুখে থামলো।সিএনজি কড়া ব্রেক কষতেই বিচলিত আদ্রিন মুহূর্তেই তৃপ্তির কোমর চেপে নিজের গায়ের সাথে মিশিয়ে নিলো তাকে।আতঙ্কিত তৃপ্তি আদ্রিনের গেঞ্জি খাঁমচে।
–“কি হলো?ভয় হচ্ছে।”
আদ্রিনের চোখের ভাষা অচেনা।ভাবভঙ্গি ভিন্ন।ধীর কণ্ঠে সে আশ্বাস দিলো,
–“ভয় পেও না,মেহেবুবা।আমি আছি তো।”
#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব -১০
___________
২৩.
–“ওরা কি আমাদের মে’রে ফেলবে,আদ্রিন?নাকি আবারও কিডন্যাপ করবে?”
ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে প্রশ্ন করলো তৃপ্তি।তার মুখশ্রী আদ্রিনের বক্ষ মাঝারে।এখনো সে দুহাতে খিঁচে রয়েছে আদ্রিনের গেঞ্জি।একা থাকলে এতোটা ভীত হতো কি মেয়েটা?নাকি কেবল আদ্রিন আছে বলেই খানিক আহ্লাদী হয়ে উঠেছে সে?জানেনা তৃপ্তি।আপাতত তার মন শঙ্কিত।গাড়ির ভেতরকার লোকজনের হাতে অ’স্ত্র নজর এড়িয়ে যায়নি তৃপ্তির।একা থাকলেও তৃপ্তি হয়তো আজ তার সাহসের সঞ্চারণ করতে পিছপা হতো।যতোই সে উপরে সাহস দেখাক না কেনো,দলবদ্ধ বা খারাপ লোকের সাথে একা মেয়ের সাহসী ব্যাপারটা সামলানো দুর্বোধ্য।ব্যাপক চিন্তিত তৃপ্তি।
আদ্রিন আলগোছে হাত রাখলো তৃপ্তির পিঠের মধ্যিখানে।ভ্রু কুঁচকে সে অজানা দুই মাইক্রোর পানে চেয়ে।ইতিমধ্যে বডি গার্ডের পোশাক পরিহিত কিছু লোক দুই মাইক্রো হতে নামলো।আদ্রিনের কুঁচকে যাওয়া ভ্রু সটান হলো নিমিষেই।যে কারণে সে চিন্তিত হচ্ছিলো,সেই কারণ বৃথা।এরা অন্য কেউ নয় বরং বডিগার্ডের টিম।নিজের জন্যে চিন্তা না হলেও বুকে লেপ্টে থাকা প্রেয়সীর চিন্তায় তার মস্তিষ্ক চতুর ভঙ্গিতে কাজ করছে।এইযে এখনো নিজ লোকেশন সে প্রয়োজনীয় মানুষদের পাঠিয়ে দিয়েছে আলতো হাতেই।তবে গার্ডদের বুঝতে পেরে সকলকে নিশ্চয়তামূলক এক বাক্যের মেসেজ করলো ফটাফট।মুক্ত অন্য হাত দ্বারা তৃপ্তির পিঠে আলতো স্পর্শ করে আদ্রিন বলে,
–“এরা গার্ড।ভ’য় পায় না।”
তৃপ্তির মনটা মুহূর্তেই শান্ত।আদ্রিনের বক্ষদেশ হতে নিজের মুখ উঠিয়ে ঝাপসা দৃষ্টিতে বাহিরের পানে তাকায়।সত্যিই লোকগুলো গার্ডের পোশাকে।ঠিক, আদ্রিনের সমেত সাক্ষাতের প্রথম দিনের ন্যায় সকলের পোশাক।তৃপ্তি কিছু বললো না।এখনো আদ্রিনের টিশার্টের নিচু অংশ তার হাতের দখলে।
গার্ডের প্রধান তার পিছে কয়েকজন নিয়ে আদ্রিনের দিকটায় আসলো।শক্ত মুখেই আদ্রিন তাকে প্রশ্ন করলো,
–“মাঝ রাস্তায় এইসবের মানে?”
–“শত্রুদের গোপন তথ্য বেরিয়েছে।আপনার প্রাণের ঝুঁকি আছে।ইনায়া ম্যাম জানিয়েছে বিনা ফোনেই যেনো আপনাকে আমরা আগলিয়ে নিই।আপনার ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে এবং রুদ্রের মাধ্যমে আপনার লোকেশন জেনেই হাজির হয়েছি আমরা।”
প্রধান গার্ড নির্দ্বিধায় বললেন।
–“আমাকে ফোন করলেও হতো।”
আদ্রিন শান্ত ভঙ্গিতে বললো।
–“ম্যামের মানা ছিলো।সরাসরি আপনার কাছে আসতে বলেছেন এবং আপনাকে নিয়ে ডাইরেক্ট বাসায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।”
পুনরায় জবাব দিলো গার্ড।
–“ফাইন।”
আদ্রিন কথা বাড়ায় না। তৃপ্তির উদ্দেশ্যে বলে,
–“নামো।”
–“আমি কেনো?”
তৃপ্তির প্রশ্ন।
–“আমার সাথে যাবে।”
আদ্রিন তৃপ্তির হাতের মুঠোয় গলিয়ে দিলো নিজের শক্ত হাতের বন্ধন।
–“আমি..”
বাক্য শেষ হলো না তৃপ্তির।এর মাঝেই বিকট শব্দ।গার্ড এর প্রধান তাড়া দিলো,
–“স্যার,সময় নেই।”
–“দ্রুত করো,তৃপ্তি।”
আদ্রিনের নির্দেশনায় টলমলে পায়ে নামলো তৃপ্তি।
সিএনজি পালালো।জ্বরের দরুণ দুর্বলতা কাটেনি এখনো তৃপ্তির।তার পা অল্প বেঁকে গেলে আদ্রিন তার বাহু আঁকড়ে ধরে,
–“ঠিক আছো?”
–“হুম।”
তৃপ্তির হুট করেই যেনো শরীরে কোনো ভরসা খুঁজেই পাচ্ছে না।তার পা অচল।আবছা হতে যাচ্ছে চারিদিক।অন্যদিকে গার্ডের প্রধান এবং বাকিরা তাদের দুজনকে গোলাকার ঘিরে।
–“ম্যাম,জলদি আসুন।”
আদ্রিন পেছনে বাঁক ফিরে দেখে,কয়েকটা গাড়ি সারিবদ্ধ এগিয়ে আসছে।কিছু মুখশধারি লোক গাড়ির জানালা ভেদ করে গু’লি ছুড়লে পাল্টা গু’লি ছুড়ছে অন্যান্য গার্ড।
আদ্রিনের আঁকড়ে ধরা তৃপ্তির বাহু ছেড়ে মুহূর্তেই তাকে কোলে তুললো আদ্রিন।মেয়েটার শরীর নিস্তেজ হচ্ছে।দ্রুত পায়ে কয়েক কদমেই গাড়িতে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করলো আদ্রিন।তীব্র বেগে গাড়ি ছুটছে। তাদের ছেড়ে আসা জায়গাটায় এখন পুলিশের ছড়াছড়ি।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তারা ব্যস্ত।
আদ্রিনের কাঁধে তৃপ্তির মাথা ঠেকে।তার শরীরের উষ্ণ উত্তাপ বেড়ে যাওয়ার তীব্রতা অনুভব করছে আদ্রিন। গালে আলতো স্পর্শ করে আদ্রিন ডাকলো তৃপ্তিকে,
–“মেহেবুবা!জ্বর বাড়ছে তোমার।”
–“উমহ।ওরা কারা ছিলো?”
তৃপ্তির দূর্বল কণ্ঠ।
–“সামলে ইলেকশন।তাই আমার ক্ষতি করে আম্মিকে দুর্বল করতে চায় তারা।কিন্তু,অবুঝরা জানেই না,আমি কেমন।গার্ড ছাড়াও আমার ক্ষতি করা দুঃ’সাধ্য।”
আদ্রিন শক্তমুখে জবাব দিলো।
–“আপনি সাবধানে থাকবেন,আদ্রিন।”
–“আমার কিছুই হবে না,তৃপ।তবে একটা সমস্যা।গাড়ি এখন আমার ফার্ম হাউজে যাবে।তোমার বাসায় যেতে রাত হতে পারে অনেক।বাসায় প্রব্লেম হবে?”
স্নেহের সুরে প্রশ্ন করলো আদ্রিন।
–“আপনি ঠিক থাকলেই হলো।”
তীক্ষ্ণ কণ্ঠে তৃপ্তি আওড়ালো।
তৃপ্তি তন্দ্রাসক্ত।তার জ্বরের তীব্রতা ব্যাপক।’শীত’ নামক জ্বরের শত্রু মুহূর্তেই আক্রমন করলো তৃপ্তির সত্তায়।আদ্রিনের শরীরে আরামদায়ক উত্তাপ খুঁজে পেয়ে তার উদরের উপর হাত রেখে তাকে জড়িয়ে ধরলো তৃপ্তি।আদ্রিন বাঁকা হাসে। জ্বরে মেয়েটা ভালোই কাবু হয়েছে।নাহলে,সঠিক জ্ঞানে তার অবস্থান এমনটা হতো না এতো দ্রুত।মোলায়েম ভঙ্গিতে আদ্রিন তার মাথায় হাত রাখে।এই অনুভূতি সকল কিছুর শীর্ষে।জ্বরে কাবু প্রেয়সীর মাথার তালুয় নিজ অধর স্পর্শ করে ফিচেল কণ্ঠে সে বলে উঠলো,
–“তোমার জ্বরই শ্রেয়।কাছে তো এসেছো!পা’ষাণ হৃদয়কে হার মানিয়ে তোমার মন এই ব্যাকুল হৃদয়ের অধিকারীর নামে লিখে দাও,মেহেবুবা।”
তৃপ্তির জ্বর কমানোর জন্যে আদ্রিন ব্যস্ত জলপট্টি নিয়ে।ইনায়া বারংবার চেয়েছে আদ্রিনের সমেত কথা বলতে।তবে নারাজ আদ্রিন।নিশ্চয় তৃপ্তির ব্যাপারে উল্টোপাল্টা কিছু বলতেই উনার এতো এতো ফোন।নাহলে সে সুরক্ষিত আছে,এটা গার্ডের থেকেই তার জানা হয়েছে সেই কবেই।আপাতত আদ্রিন চায় না তৃপ্তির নামে তার মা খারাপ কিছু বলুক।
সে তৃপ্তির সেবায় নিয়োজিত।নিরাপত্তার তাড়নায় ডাক্তার আসা বারণ। এতেই রাগে ফুঁসছে সে।
জ্বরে কম্পনরত তৃপ্তির ওষ্ঠদ্বয়।সেথায় নজর আটকে আদ্রিনের।চোখের পাতা ভিজে মেয়েটার। জ্বরে কেমন নাজেহাল অবস্থা বানিয়েছে সে।তারপরও আদ্রিনের নেশাক্ত দৃষ্টি সেই প্রাণ’নাশী চেহারায় আটকে। তার হাতের উল্টো পিঠে অধর ছুঁয়ে আদ্রিন অস্ফুট কন্ঠে আওড়ায়,
–“তোমাকে দেওয়া সময়টাই যে আমার বড্ড অপ্রিয় হচ্ছে দিনদিন।সময় নামক জিনিসটার জন্যে আমি বেড়াজালে বন্ধী।তোমার মাদ’কতায় আমি জর্জরিত।মাই হার্ট হার্টস,তৃপ্তি।”
২৪.
সেদিন মধ্যরাতে আদ্রিন সুরক্ষা সহিত তৃপ্তিকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়েছিল।ঢাকায় সেদিন রাতে বিরাট ঝামেলা বাঁধে।এর জন্যেই সাধারণ মানুষের বিভিন্ন কাজে ব্যাঘাত ঘটে।অনেকে সেই স্থানেই আটকেছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা।খবরে এইসব ঘটনার সূত্রপাত দেখে চামেলী বেশ অবাক হয়,খোঁজ নেওয়া শুরু করে তৃপ্তির।খবর না দেখলে হয়তো,বিনা চিন্তায় সে প্রিয়র সাথে ঘুমিয়ে যেতো।রূপম দেশে নেই।বিচলিত চামেলী তৃপ্তির খোঁজ না পেয়ে অরিত্রনের সাহায্য নেয়।পুলিশ যোগে অরিত্রন চট্টোপাধ্যায় মধ্যরাতে অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এলে তখনই আদ্রিনের গাড়ি থামে সেথায়।অসুস্থ তৃপ্তিকে বাবার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে নিজের গন্তব্যে ছুটে যায় আদ্রিন।
অরিত্রন চট্টোপাধ্যায় চিনতে ভুল করলো না আদ্রিনকে।ইনায়ার ছেলে হিসেবে আদ্রিন তার পরিচিত।এছাড়াও, ইনায়া সম্পর্কে সবকিছু জানে সে।তবে,তার মেয়ের এবং আদ্রিনের সম্পর্ক কি এটা তার অজানা।তৃপ্তিতে জিজ্ঞাসা করেও লাভ হয়নি একরত্তি।মেয়ে তার কথাটা অগ্রাহ্য করলো।
সেদিনের পর হতে কাটলো আরো চারদিন।তৃপ্তি এখন বেশ আছে।পুরোপুরি সুস্থ সে।সপ্তাহের দিন অনুযায়ী আজ সাফাকে ড্রইং করানোর সময়।নির্দিষ্ট কাজ শেষে বেরুলো সে।ধীর পায়ে হাঁটছে।একই এলাকার সুবাদে হেঁটেই যায় মেয়েটা।এতটুকুই তো পথ।পরিবেশ সতেজ।হালকা উষ্ণতার মাঝেও পবনের ছড়াছড়ি।এলোকেশ উড়ছে তৃপ্তির।মাঝে মাঝে তা কানের মাঝে গুঁজে দিচ্ছে।স্বভাবগত হাঁটার পাশাপাশি সে মোবাইলে মনোনিবেশ করলো।প্রথমেই ভেসে এলো আদ্রিনের মেসেজ,
–“তোমার বান্ধুবির এলাকায় গেলে সবসময় আমাকে আগেই জানাবে।আমি সেখানেই থাকি আড্ডার ছলে।দুজনে একসাথে ফিরবো।”
তৃপ্তির অধর প্রসারিত হতে চাইলেও সে স্বাভাবিক ভঙ্গি বজায় রাখলো।বিনিময়ে সে লিখে,
–“কেনো?আমি একাই যেতে পারবো।আপনার কষ্ট করা লাগবে না।আপনার বাসা একেবারে উল্টোদিকে।তাই অযথা কষ্ট কেনো করবেন?”
সাফাদের বাসায় সামনে আসলেই আবারও মেসেজের নটিফিকেশন আসে।থামে তৃপ্তি।ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছে আদ্রিন।সেটা চালু করতেই ঘাবড়িয়ে যায় মানবী,
–“শুনো মেয়ে,যা বলছি তাই করবে।বেশি কথা আমার অপছন্দ।তুমি আমাকে না জানালেও আমি সব জেনে যাবো।আমি একজন ম্যাজিশিয়ান।”
পরক্ষণে তৃপ্তি মেসেজ পাঠায়,
–“আপনি ম্যাজিশিয়ান না,পাগল।”
এইবার তৃপ্তির অধরে হাসি ফুটলো।
বিশালাকার গেইটে প্রবেশ করলো সে মোবাইল ব্যাগে পুরে।আদ্রিন নামের ছেলেটা ধীরে ধীরে যে তার মনের করুণ দশা করছে,তা মেয়েটা টেরই পাচ্ছে না।
তৃপ্তিকে দেখে বেজায় খুশি সাফা।ড্রইং করার এক পর্যায়ে সে তৃপ্তিকে বলে,
–“জানেন ম্যাম,কালকে আমি মামার বাসায় গিয়েছিলাম।”
তৃপ্তি অবাক হয়।মামার বাসায় বলতে!তার মামা কেবল আদ্রিন।যতটুক সে জানে,আদ্রিন পরিবারের সাথেই থাকে।তাহলে কি সেদিনকার ফার্ম হাউজের কথা বলছে সাফা!
–“মামার ফার্ম হাউজে গিয়েছিলে?”
সাফা মাথা নাড়ায়,
–“হ্যাঁ।নানুমনি বকেছে আমার মামাকে।মামা রাগ করেছে তাই।”
তৃপ্তি চুপ করে রয়।রাগের তাড়নায় মানবটা একা থাকছে!কি এমন হলো হঠাৎ?
–“তোমার মামা বেশী রাগী?”
পুনরায় প্রশ্ন করলো তৃপ্তি।সাফা উপর নিচ মাথা নাড়ায়,
–“হ্যাঁ।”
–“আমার ভাই রাগী কিন্তু মন ভালো।মায়ের সাথে তার ছোট বেলা থেকেই এমন সব সমস্যা থাকেই।”
হেসে প্রবেশ করলো রিয়ানা। হাতে নাস্তার ট্রে।
–“জ্বী,বুঝেছি।”
কিঞ্চিৎ হেসে জবাব দিলো তৃপ্তি।
সাফা নিশ্চিন্তে মনে ড্রইং করছে।রিয়ানা তৃপ্তির পাশেই বসলো।স্বাভাবিক সুরে বললো,
–“সেদিন আদ্রিনের ফার্ম হাউজে তুমি ছিলে,আমার ভাই নাকি তোমায় নিয়ে অনেক চিন্তায় পড়েছিল। মা থেকে শুনেছি আমি।আমার ভাইয়ের সাথে তোমার সম্পর্ক বেশ ভালোই,তাই না?”
লজ্জায় পড়ে তৃপ্তি।কি বলবে সে?ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না মেয়েটা।তাও আমতা আমতা করে বললো,
–“আমরা ভালো বন্ধু।”
–“তোমাদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ভালই।কিন্তু এমন সিনিয়র বন্ধু কয়জনই বা পায়?”
হাসলো রিয়ানা।সে অন্যকিছুর ইঙ্গিত করছে।রক্তিম আভায় সজ্জিত তৃপ্তির গাল।সেথায় হাত রেখে রিয়ানা বললো,
–“ইসস,লজ্জা পেও না।গেলাম আমি।”
বাকিসব ঝগড়া এবং তার মায়ের তৃপ্তিকে অপছন্দ করাটা উহ্য রেখে দ্রুত পায়ে কক্ষ হতে প্রস্থান করার সময় তৃপ্তি মুখ ফস্কে বললো,
–“তেমন কিছু না আপু।আপনি ভুল ভাবছেন।”
–“আগে ভুল ভাবলেও এখন ঠিকই ভাবছি।আমার ভাইকে তুমি সহজ ভাবে নিলেও,সে কিন্তু তোমাকে ছাড়ার পাত্র নয়।”
অবশেষে প্রস্থান করলো রিয়ানা।
শেষ কথায় পিলে চমকে উঠলো তৃপ্তির।ভাইবোন মিলে কি ব্যাপারে খোলাসা করে ফেললো?রিয়ানার এইসব কথা বলার মানে খুঁজে পেলো না তৃপ্তি।আদ্রিন কখনোই অন্য ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করেনি তার সাথে।মাথায় চাপ পড়ে তৃপ্তির।দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার।
সেদিক থেকে মনোযোগ হটিয়ে সে সাফার প্রতি ধ্যান দিলো।সেই দুইভাইবোনের কথাকেই পাগলামি ভাবছে তৃপ্তি।
মিনিট খানেক পর পুনরায় মেসেজ টোন বাজলো তৃপ্তির মোবাইলে।লাইট জ্বলতেই সেথায় আদ্রিনের নাম স্পষ্ট।গোটা অক্ষরে লেখা,
–“পাগলরাই আসল ম্যাজিশিয়ান।তারা তাদের পাগলামি দ্বারা সবাইকে অস্থির বানায়।আদ্রিনের পাগলামি নামক ম্যাজিকে নিজের অস্থিরতা বাড়াতে তৈরি তুমি,মেহেবুবা?”
চলবে…..