অদ্ভুত আসক্তি পর্ব -২৫+২৬

#অদ্ভুত_আসক্তি
#পর্ব_২৫ (ভাগ্যে নেই)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ

নিস্তব্ধ বাড়িতে বাবার অবাক কণ্ঠস্বর শোনা গেলো,“শেফালী!”

মা স্থির দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকালো। অসহনীয় যন্ত্রণা তার বুকে। প্রাক্তনকে সম্মান করা ভালো কথা। তাকে ভালোবাসা ভালো কথা। কিন্তু তার উপস্থিতিতে যদি নিজেরই সন্তানের প্রতি অবহেলা শুরু করে, তবে সেটা অন্যায়। ঘোর অন্যায়।

মা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। এতো যন্ত্রণা উপেক্ষা করে বললো,“সেদিন আমি যা বুঝেছিলাম, যখন শুনলাম সেটা মিথ্যে ছিলো। এক মুহূর্তের জন্য তখন ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। পরক্ষণেই যখন শুনলাম, তুমি পাল্টে গেছো। বিশ্বাস করো, সেদিনের চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছি। তোমার থেকে এটা আশা করিনি আমি।”

মায়ের কথার প্রেক্ষিতে বাবা চুপ। কিছুক্ষণ আগেই সবটা জেনেছে। রুদ্র বলেছে সবটা। সে যে নিজের মেয়ের প্রতি অন্যায় করে ফেলবে, বুঝতে পারেনি।

দীপ্তি কোনদিকে না খেয়াল করে এগিয়ে গেলো বাবার দিকে। মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,“বাবা!”

বাবা থমকে গেলেন। একবার দীপ্তির দিকে তাকিয়ে পুনরায় মায়ের দিকে তাকালেন। অবুঝ ভঙ্গিতে তাকালেন।

মা গম্ভীর কন্ঠে বললো, “বিয়ে করিনি আমি। তোমারই সন্তান।”

তখন রুদ্র সবটা বললেও, দীপ্তির ব্যাপারটা বলেনি। তাই এখন জানালো,দীপ্তির ঘটনাগুলো। বাবা অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে আছেন আমাদের দিকে।

ছোটমাকে বেশ অনেকক্ষণ আগেই পুলিশে নিয়ে গেছে। তখন থেকেই মীরা আপু নিজেকে ঘরবন্দী করে নিয়েছে। ভয় পেয়েছে ভীষণ। ড্রইং রুমে আমি, আরহান, রুদ্র, দীপ্তি, মা ও বাবা দাঁড়িয়ে।

বাবা অপরাধীর মতো মায়ের সামনে মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওভাবেই বললো,“আমাকে কি মাফ করা যায়না?”

মায়ের স্পষ্ট উত্তর,“না।”

তৎক্ষণাৎ মা বেরিয়ে গেলো দীপ্তিকে নিয়ে। বাবা আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো। চোখ ছলছল করছে তার। বাবা কখনো আমাদের সামনে কাঁদেনি। অগোচরে কেঁদেছে। আমি অনেকবার লক্ষ্য করেছি মায়ের ফটোফ্রেম সামনে নিয়ে বাবাকে নিজের ঘরে, লুকিয়ে কাঁদতে।

বাবা আমাকে কিছুই বললেন না। হয়তো বলার কোনো মুখ নেই। আলগোছে নিজের রুমে চলে গেলেন। আরহান ও আমাকে নিয়ে বেরোলেন। পিছে পিছে রুদ্রও এলো।

বাড়ির বাহিরে দীপ্তি আর মাকে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। আরহান রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন,“তুমি উনাদের নিয়ে, উনাদের বাড়িতে যাও। আমরা অন্য গাড়িতে আসছি।”

রুদ্র “জ্বি স্যার” বলেই মা আর দীপ্তিকে বললো,“আপনারা আমার সাথে আসুন।”

_____________
কারো জীবন হুট করেই থমকে যায়, আবার কেউ কেউ জীবনে নিজস্ব গতিতে চলতে থাকে। তবে বাধা বিপত্তিহীন জীবন কখনোই কেউ পায়না। বিগত আঠারো বছরের সত্য যখন আমার কাছে ক্ষণ মাত্র সময় নিয়ে তৈরি করা মিথ্যে কাহিনী প্রমাণিত হলো, আমি থমকে গিয়েছিলাম। এতকাল আমি আমার মাকে দোষী ভেবে এসেছি। তার জন্য ভীষন রাগ পুষে রেখেছিলাম মনে। কিন্তু…

কিন্তু, আজ মায়ের প্রতি কোনো ক্রোধ কিংবা অভিযোগ নেই। আমার বাবার প্রতিও আজ রাগ নেই। একসময় প্রচন্ড রাগ হতো। এখন নেই।

তবে ভাবনার বিষয় হলো, এখন তো আমার সবচেয়ে বেশি রাগ হবার কথা। হচ্ছে না কেনো? তবে কি আমি অতীতের সব ভুলে গেলাম? মা হীনা জীবনের প্রতিটি কষ্ট ভুলে গেলাম?

হয়তো তাই হয়েছে। তারা নিজেরাও তো ছোটমার খেলার গুটি ছিলো। হয়তো অতীতকে ছাড়িয়ে আজ আমার বর্তমান জিতে গেলো। জীবন যুদ্ধে জিতে গেলাম আমিও।

আচ্ছা, বাবা কি খুব কষ্ট পেয়েছেন আজ? যদি জীবনটাকে সেই আঠারো বছর আগের দিনে নিয়ে যেতে পারতাম! যদি সেদিন ছোটমা আর বাবার বিয়েতে মাকে দেখতে পেতাম!

আফসোস করে কী হবে এখন? যা হবার, হয়ে গিয়েছে। এখন আমার উচিত, বাবা মায়ের মধ্যেকার মনোমালিন্য সব দুর করা। আমি করবো এবং পারবোই। আমাকে যে পারতেই হবে।

খারাপ লাগার এসকল অনুভূতি নিয়ে আমি ড্রাইভ করতে থাকা আরহানের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলাম। একটা মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছি। আরহান উনার কাঁধে আমার স্পর্শ পেতেই দ্রুত ব্রেক কষলেন। স্থির দৃষ্টিতে আমার পানে চেয়ে রইলেন।

অবুঝ ভঙ্গিতে বললেন,“ঠিক আছো শুকতারা?”

নীরস মুখে উত্তর দিলাম,“হু.. ঠিক আছি। এভাবে থাকলে আপনার ড্রাইভিং এ সমস্যা হবে?”

“না, কিন্তু…”

আরহানকে আর কিছু না বলতে দিয়ে আমি বলে উঠলাম,“তবে থাকি না এভাবে! বড্ড শান্তি পাচ্ছি আমি।”

আরহান বুঝতে পারলেন। হালকা হেসে আমার কপালে ওষ্ঠের উষ্ণ স্পর্শ এঁকে দিলেন। আবেশে আঁখি পল্লব বুজে ফেললাম। আরহান পুনরায় হেসে “থাকো” বলে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আমি ওভাবেই চোখ বুজে আছি।

সত্যিই তো, আমি এখানেই শান্তি পাই। পরম শান্তি।

______________
ক্লান্ত সন্ধ্যেতে একসঙ্গে সবাই মিলে বসে আছি। আরহান বারবার তাগাদা দিচ্ছেন যাবার জন্য। যেনো কিছু থেকে পালাতে চাচ্ছেন। আমার মাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু আরহান থেকে যেতে পারবেন না, আবার আমাকেও রেখে যেতে পারবেন না।

অবশেষে মাকে বললেন,“আমাদের যাওয়া উচিত এখন।”

মা দ্রুত বললো,“আজ থেকে যাও না। মেয়েকে পেয়েছি, ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না।”

আরহান একটু হেসে বললেন,“আসলে, আমার কাজ আছে আর ওকে এখানে রেখে যেতে পারবো না, ভুল বুঝবেন না আপনি।”

মা উদাস মনে বললো,“আচ্ছা, তবে ডিনারটা আমাদের সাথেই করো। আজ বীনুর জন্য রান্না করবো আমি।”

কথাটি শেষ করেই মা আরহানের উত্তরের অপেক্ষা না করে কিচেনে ছুটলো। আমি কতো ভাগ্যবতী, এমন স্বামী পেয়েছি আমি। এমন মা পেয়েছি আমি।

আবারও আড্ডায় মশগুল হলাম আমি দীপ্তি আর রুদ্র। আরহান ফোনে কিছু একটা করে যাচ্ছেন। তখন কলিং বেল বাজায় দীপ্তি “আমি দেখে আসি” বলে উঠে গেলো।

আমার দৃষ্টি সামনের দিকেই। আমার সামনের সোফায় আরহান বসে আছেন। আর তার পেছনেই দরজা।

দীপ্তি হাসি মুখে দরজা খুলতেই আমি দরজার ওপাশে ব্ল্যাক টি-শার্ট, ব্ল্যাক জিন্স পরিহিত যুবককে দেখে বিস্ময়ে চোখ বড় করে ফেললাম।

সে সোজা যখন এদিকে তাকালো চমকের দরুন স্তম্ভিত হয়ে গেলো। হয়তো চোখের ভুল ভাবছে। বার দুয়েক চোখের পাতা এক করলো। পুনরায় আমাকে সামনে দেখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।

দীপ্তি তৃষ্ণাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,“ভেতরে আয় ভাইয়া। এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”

দীপ্তির কথা শুনে আরহান ফোন থেকে মাথা তুলে পেছনে তাকালেন। কপাল কুঁচকে ফেললেন আরহান।
বিড়বিড় করে বললেন,“এর এখনি আসার সময় হলো?”

তৃষ্ণা একবার দীপ্তির দিকে তাকিয়ে কম্পণরত ঠোঁট দিয়ে উচ্চরণ করলো,“উনি?”

দীপ্তি হাসি মুখে বললো,“আমার আপু।”

তৃষ্ণা অবাক চোখে তাকালো আমার দিকে। এগিয়ে এলো এদিকে। ততক্ষণে আমি ও আরহান দাঁড়িয়ে গিয়েছি।

দীপ্তি হেসে তৃষ্ণাকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আমাদের সবার মুখেই “হ্যাঁ”, “হুঁ” ছাড়া কিছুই নেই।

কিছুক্ষণ বাদে দীপ্তি তৃষ্ণাকে উদ্দেশ্য করে “আমি মাকে বলে আসি, তুই এসেছিস” বলে চলে গেলো।

আরহান হালকা হেসে বললেন,“আই হোপ, পার্সোনাল প্রবলেম এখানে আসবে না।”

তৃষ্ণা মৃদু কন্ঠে “হুঁ” বলে সহমত প্রকাশ করলো।

তৃষ্ণা আরহানের পাশের সোফায় বসে পড়লো। একনজর আমাকে দেখে ফোনে মনোযোগী হলো। এই নজরে হয়তো কিছু চাওয়া ছিলো কিংবা ছিলো না পাওয়া।
আরহানও আমার সামনের পুনরায় ফোনে মুখ গুঁজে সোফায় বসলেন। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

মিনিট বাদে মা এলো। এসেই তৃষ্ণার কাছে গিয়ে বললো,“বাবাই, এসেছিস?”

তৃষ্ণা ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিলো,“হুঁ…”

মা এগিয়ে গিয়ে আমার হাত ধরে তৃষ্ণার সামনে নিয়ে দাঁড় করালো। মুখ ভরা হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে তৃষ্ণাকে বললো,“আমার বীনু।”

তৃষ্ণা মাথা তুলে তাকালো। চোখাচোখি হয়ে গেলো আমাদের। অতঃপর দুজনেই চোখ সরিয়ে নিলাম। তৃষ্ণা মৃদু হাসলো। অনুভূতিহীন হাসি ছিলো এটা।

________________
রাতের খাওয়া শেষে আমাকে নিয়ে দীপ্তি রুমে এলো। এখানে ভালো লাগছে না। কেমন যেনো হাঁসফাঁস লাগছে। হয়তো তৃষ্ণার জন্যেই এমনটা। আমি ভালোবাসা না পাবার যন্ত্রণা বুঝি। আমি ছোটবেলা থেকে পরিবারের ভালোবাসা পাইনি। তাই আমি কখনোই তৃষ্ণার ভালোবাসাকে অসম্মান করতে পারিনা। ইন ফ্যাক্ট করিও না। তবে চোখের সামনে কাউকে এক তরফা ভালোবাসা যন্ত্রণা পেতে দেখলে অস্থির লাগে ভীষণ। যেমনটা এখন লাগছে। সেই যে মায়ের সামনে একবার চোখ তুলে তাকিয়েছিলো, এরপর থেকে আর তাকায়নি। হয়তো মায়া বাড়ানোর প্রচেষ্টা করেনি।

আমাকে গভীর ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে দীপ্তি মিষ্টি হেসে বললো,“উফফ! বীনুপু! তোমাকে যে কী বলবো! কতো হ্যাপি আমি।”

“কেনো, কী হয়েছে?”

“কী হয়েছে মানে? আমার বোনকে পেয়েছি আমি, হ্যাপি হবো না?”

“ওহ্, আচ্ছা!”

“হুঁ, তার উপর এতো মিষ্টি আর ভালো একটা বোন। আহা!” —বলেই দীপ্তি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

আমিও মিষ্টি হেসে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। মিনিট দশেক পর দীপ্তি বললো, “ছাদে যাবে?”

আমি একটু ভাবুক ভঙ্গিতে বললাম, “উম… যাওয়া যায়।”

দুজনেই হেসে দিলাম একসাথে। এরপর ছাদের উদ্দেশ্যে এলাম। প্রথম সিঁড়িতে পা রাখতেই দীপ্তি বললো,“আপু! তুমি যাও, আমি ফোন রেখে এসেছি। নিয়ে আসি।”

“আচ্ছা।”

এরপর একাকী ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। শেষ সিঁড়িতে উঠতেই আমি কারো কথা বলার আওয়াজ পেয়ে গেলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি আরহান আর তৃষ্ণা রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি দুজনেরই ঐ দূর আকাশে নিবদ্ধ।

তৃষ্ণা গম্ভীর কণ্ঠে বললো,“আমার পছন্দের সব কিছুই কেনো তোর হয়?”

“তুই ভুল বলছিস। তোর পছন্দের সব আমার হয়না। আমার সবকিছুই তোর পছন্দ হয়ে যায়।”

তৃষ্ণা বাঁকা হেসে বললো,“তুই ছিনিয়ে নিস।”

আরহানও তৃষ্ণার হাসির প্রেক্ষিতে হেসে বললেন,“তোর ভাগ্যে নেই।”
#অদ্ভুত_আসক্তি
#পর্ব_২৬ (সুখময় বৃষ্টি)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ

“আপনারা কবে থেকে একে অপরকে চেনেন?”

নিস্তব্ধ ও শান্ত প্রকৃতির মাঝে মনে ক্রোধ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন ব্যক্তি আমার উক্ত কথাটি শ্রবণ করা মাত্রই আলগোছে পিছে মুড়লো। আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একবার দুজন দুজনের মুখ চাইলো। আরহান এগিয়ে এলেন আমার দিকে। তৃষ্ণা পুনরায় আকাশের পানে তাকালো।

আরহান আমার কাছে এসে ভাবলেশহীন কন্ঠে উত্তর দিলো, “ছোট থেকে।”

আমার করা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে আবারও প্রশ্ন করলাম, “কীভাবে?”

নিজের শত্রু, সবচেয়ে বড় শত্রুর সাথে প্রকৃতি বিলাসেরর মানেটা আমার কাছে একদম অপরিষ্কার। এজন্যই এই প্রশ্ন করা।

আরহান পুনরায় বললেন,“এক সময়ের প্রিয় বন্ধু ছিলো সে।”

এটুকু বলে থেমে, আবারও বললেন,“বর্তমানের প্রিয় শত্রু।”

আমি অবুঝ চোখে তাকিয়ে রইলাম। প্রিয় বন্ধু কী করে প্রিয় শত্রু হতে পারে? আর শত্রু কারোর প্রিয় কী করেই বা হয়?

আমাকে চুপ থাকতে দেখে আরহান বললেন,“এবার আমাদের ফিরতে হবে।”

আমি রয়ে সয়ে উত্তর দিলাম,“হুঁ।”

একবার তৃষ্ণার দিকে তাকালাম। তখনই তৃষ্ণা তার দৃষ্টি আকাশপান থেকে সরিয়ে আমার পানে ঠেকালো। নীলাভ নয়নজুড়ে ছেঁয়ে আছে অপ্রাপ্তি। আমাদের আজ তৃতীয় বারের মতো চোখাচোখি হলো। বাড়িতে ঢোকার সময় একবার, মা যখন আমাকে তৃষ্ণার সাথে পরিচয় করালো তখন একবার, আর এই একবার। প্রতিবার নয়নে নয়নে সাক্ষাৎকার খুব একটা সময়ের ছিলো না। এবারের টা ছিলো।

তৃষ্ণা ওভাবেই তাকিয়ে রইলো। চোখ সরাইনি আমিও। তৃষ্ণা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। বিড়বিড়িয়ে কিছু একটা বলছে, যা আমার শ্রবণ ইন্দ্রীয় অবধি পৌঁছচ্ছে না।

আরহান একবার আমার দিকে আর একবার তৃষ্ণার দিকে তাকালেন। আমার হাত ধরে হালকা হেসে বললেন,“দেরি হচ্ছে শুকতারা।”

আমি এতক্ষন তৃষ্ণার দিকে তাকিয়েছিলাম খেয়াল করিনি। আরহান একদিন ঠিকই বলেছিলেন, এই চোখের দিকে কেউ একবার তাকালে অন্য কিছুর খেয়াল থাকে না।

আমি আরহানের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললাম,“চলুন।”

সিঁড়ি বেয়ে নামতেই সেখানে দীপ্তি চলে এলো। আমাকে নিচে চলে আসতে দেখে প্রশ্ন ছুড়লো,“চলে এলে যে এখনই?”

“উই আর গেটিং লেট। নাও, উই হ্যাভ টু গো।” —কথাটি বলেই আমাকে নিয়ে মায়ের কাছে চলে এলেন।

__________________
আরহান ড্রাইভ করছেন। আমি উনার পাশে। গাড়িতে দুজনই আছি। রুদ্র নিজে যেই গাড়ি নিয়ে এসেছিলো, সেটায় করে আলাদা গিয়েছে। মায়ের কাছ থেকে আসতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। অন্যদিকে তৃষ্ণা ছিলো বিধায় আরহান যতদ্রুত সম্ভব আমাকে নিয়ে এসেছেন। তৃষ্ণার সাথে আর দেখা হয়নি। ছাদ থেকে আসেইনি আর।

তৃষ্ণার জন্য আমার ভীষণ মায়া হয়। তার এতো খারাপ কাজের কথা শুনেও, আমি তাকে ঘৃণার চোখে দেখতে পারিনা। হয়তো তার মনেও ভালোবাসার উপলব্ধি রয়েছে বলেই, আমার তার প্রতি এমন অনুভূতি হয়।

শুনেছি একটা মেয়ে তার চোখেই বার বার হারিয়ে যায়, যার কাছে তার মনটাই হেরে বসে আছে। শুধু তারই চোখের মুগ্ধতায় ডুবে যায়। দিবা রাত্রি বিভোর হয়ে, একমাত্র তার চোখেই নিজের গোটা দুনিয়া দেখতে পায়।
সত্যি বলতে আমি তৃষ্ণার চোখে হারিয়ে গিয়েছিলাম। তবে এটা মুগ্ধতা নিয়ে নয়। তার চোখে আমি আকাশসম কষ্ট দেখতে পেয়েছি। সেই কষ্টের ছিটে ফোঁটা আমিও উপলব্ধি করতে পেরেছি। কীসের জোরে! জানা নেই।

আমার দৃষ্টি জানালার বাইরে। মৃদু হাওয়া বইছে। এসি অফ ও জানালার কাঁচ নামানো। একটা দিনে হুট করেই কতো কিছু ঘটে গেলো। শীতল বাতাস আমার চোখ মুখ ছুঁয়ে দিচ্ছে। আরো প্রবল ভাবে অনুভব করার জন্য চোখ বুঁজে ফেললাম।

মিনিট খানেক বাদে চোখ খুলে আরহানের দিকে তাকালাম। সর্বপ্রথম চোখ গিয়ে ঠেকলো আরহানের চোখে। ভালোবাসার মানুষটির চোখে হারিয়ে যাওয়াটা নাকি প্রচুর শান্তির। সেই লক্ষ্যে আমিও হারিয়ে যেতে উদ্যত হলাম। মিষ্টি হেসে তাকিয়ে রইলাম। নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে তার চোখের গভীরতায় হারিয়েই গেলাম।

বেশ খানিকক্ষণ বাদে কানে কারো কথা এলো। আরো একটু খেয়াল করতেই মস্তিষ্কে ধারণ করলাম এটা আরহানের কণ্ঠস্বর।

ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে সামনে দেখলাম আরহান স্টেয়ারিং এর উপর হাতের কনুই রেখে, সেই হাতের উপর মাথা ঠেকিয়ে আমারই দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি হকচকিয়ে উঠলাম। খানিকটা নড়ে চড়ে বসে বুঝলাম, গাড়িটা থেমে আছে। জিজ্ঞেস করলাম আরহানকে,“ওভাবে তাকিয়ে কী দেখছেন?”

“প্রিয় মানুষটির, প্রিয় অঙ্গের দিকে তাকিয়ে, এই অপ্রিয় আমিকে তার প্রিয় হিসেবে দেখছি।”

অবুঝ আমিটা কিছুটা সময় নিয়ে আরহানের এই কথাটা নিয়ে গবেষণা চালালাম।বুঝতে পেরে লাজুক হাসলাম আমি। তাতে আরহান তার অপর হাতটা নিজের বুকের বা পাশে রেখে, ঠোঁটে হাসির রেখা প্রশস্ত করে বললেন,“এই হাসিতেই খুন হয়েছি।”

কিছু কিছু পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যেখানে লাজুক ভঙ্গিতে আর থাকা যায়না। পেট ফেটে হাসি চলে আসে। যেমনটা আমার এখন হচ্ছে। অতিরিক্ত লজ্জায় হাসি পাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে হাসি থামানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করছি।

আরহান তা দেখে বললেন,“অনেকক্ষণ ধরে ডেকে চলেছিলাম তো! এখন কি এখানেই থাকবেন মহারানী? নাকি আমার রাজ্যে আপনার প্রবেশ হবে?”

আমি মুচকি হেসে বললাম, “ওহ্ হ্যাঁ! যেতে তো হবেই। চলুন।”
​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​

বাড়িতে প্রবেশ করতেই সামনে নিশাকে দেখতে পেলাম। নিশা আমাদের দেখে এগিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলো,“এসে গিয়েছো তোমরা! ফ্রেশ হয়ে এসো, খাবার সার্ভ করছি আমি।”

আরহান জবাবে বললেন,“খেয়ে এসেছি আমরা।”

“ওহ্ আচ্ছা।”

আরহান জিজ্ঞেস করলেন,“তুমি খেয়েছো?”

নিশা, আরহানের করা প্রশ্নে চমকিত হলো। আরহান আগ বাড়িয়ে কথা বলেনা। আজ বলছে। মনে মনে নিশার খুশি যেনো উপচে পড়ছে।
মুচকি হেসে জবাব দিলো, “হ্যাঁ ভাইয়া। খেয়েছি।”

“মা? খেয়েছে?”

“হ্যাঁ ভাইয়া।”

“ঔষধ!”

“নিয়েছে ভাইয়া। টেনশন করো না, সব হয়েছে। মা এখন ঘুমোচ্ছে। অর্ধেক ঘুম, ঘুমিয়েও নিয়েছে হয়তো।”

শেষোক্ত কথাটি বলে নিশা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। তাতে আরহানও মুচকি হাসলো। আরহানকে কখনোই এভাবে কথা বলতে দেখিনি কারো সাথে। আজ যে নিশার সত্যি খুব খুশি লাগছে। তা ওর চোখের কার্নিশ ঘেঁষে দৃশ্যমান অশ্রুকণা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​
_____________________
রাতের মধ্যভাগ। ফিরতে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল আজ। আরহান শাওয়ার নিচ্ছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ও ঘুমনোর আগে উনি শাওয়ার নেন। তবে একটা জিনিসে আমি সত্যিই বিস্মিত হই, একটা ছেলের শাওয়ার নিতে এতো সময় লাগে!

আরহানের সাথে কাটানো সব সময়গুলো নিয়ে ভাবছি। উনার সাথে এখনও আমার কোনো খারাপ স্মৃতি তৈরি হয়নি। যা হয়েছে সবটাই অসম্ভব ভালোলাগার এবং সাথে রয়েছে অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা।

মুচকি হাসলাম। চেঞ্জ করার উদ্দেশ্যে কাবার্ডের নিকট এলাম। কাবার্ড খুলে একটা একটা করে শাড়ি দেখে যাচ্ছি। কোনটা পরবো?

এমন সময় এক কোনা থেকে সাদা রঙের কিছু একটা নিচে পড়লো। আরহানের কোনো কিছুই আমি ধরিনা। আমার মতে সবারই ব্যক্তিগত কিছু ব্যাপার গুলো থেকেই থাকে, সেগুলোতে আমাদের ঢোকা উচিত নয়। সম্মুখে পড়ায় নিচু হয়ে হাতে তুলতেই খেয়াল করলাম, আরহানের টিশার্ট এটা।

শুভ্র রঙ্গা টিশার্টটা মুচকি হেসে বুকে জড়িয়ে নিলাম। এতে আরহানের শরীরের ঘ্রাণ মিশে আছে। হুট করেই একটা কোনায় আমার দৃষ্টি ঠেকলো। লক্ষ্য করলাম সেই কোনায় রেশম সুতোয় ছোট্ট করে অ্যালফাবেট ‘A’ লেখা।

কিছু সময় এমন হয়, যখন মনে হয় এই জিনিসটা, একই ভাবে আমার সাথে এর আগেও ঘটেছে। তখন অনেক মনে করার চেষ্টা করেও মনে আসে না

হুট করেই মস্তিষ্কে সেই দিনের কথা চলে এলো। সেই খুন! হিংস্রতা! রক্ত! সব মনে পড়তেই বিস্ময়ে, শঙ্কায় হতবিহ্বল অবস্থায় দাঁড়িয়ে রইলাম। হাতে এখনও আরহানের টি শার্ট।

আরহান! নাহ্! আরহান হতে পারে না। একই রকমের ডিজাইন অনেক কিছুতেই হতে পারে। তাও, মস্তিষ্কে ধরতে পারছি না কিছুই। ভাবনা সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

তখনই ওয়াশরুম থেকে বেরোলেন আরহান। আমাকে নীরস ভঙ্গিতে মাথা নত হয়ে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এলেন।

আমার সামনে এসে দাঁড়াতেই আমি মাথা উঁচু করে তাকালাম। আমার মুখে কোনো ত্রাস, ক্রোধ, গাম্ভীর্য, অভিমান, অভিযোগ কিছুই নেই।

হাতের টিশার্ট এগিয়ে বললাম,“এটা আপনার?”

“হ্যাঁ।”

“এই ডিজাইন?” —লাল রঙ্গা সুতোয় লেখা ‘A’ কে উদ্দেশ্য করে বললাম।

আরহান মৃদু হেসে বললেন,“আরে এটা! এই লোগো তো আমার আগের বেশির ভাগ হোয়াইট ফেব্রিকেই ছিলো। আমার অফিসের প্রিভিয়াস লোগো ছিলো এটা।”

“এরকম লোগো আর কারো কাছে থাকতে পারে?”

“একদমই না।”

আমার মাথা ঘুরে এলো। হাত থেকে টিশার্ট পড়ে গেলো। অবিশ্বাস্য নয়নে আরহানের দিকে তাকালাম। আরহান আমার এমন অবস্থার কারণ বুঝতে পারছেন না। এগিয়ে এলেন আমার দিকে।

আমি দৃষ্টি সরালাম। নিজের মনকে বুঝ দিচ্ছি, সেদিন সেই খুন অন্য কেউ করেছে হয়তো। হয়তো কোনো ভাবে আরহানের হ্যাঙ্কি সেই রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এই সকল কিছু আমার কাছে কাকতালীয় ঠেকছে না।

সব ভুলে সেই ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার জন্য যখনই উদ্যত হলাম, তখনই আরহান আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,“আমাকে বিশ্বাস করো?”

আরহানের চোখের মাঝে আমার দৃষ্টি স্থির রইলো। যে কাউকে হিপনোটাইজ করতে সক্ষম। আমিও হয়ে গেলাম। নজর আরহানের নয়ন জোড়াতেই সীমাবদ্ধ রেখে বললাম,“নিঃসন্দেহে।”

আরহান পুনরায় প্রশ্ন করলেন,“আমাকে কতটা বিশ্বাস করো?”

মস্তিষ্কে প্রথম যেই উত্তরটা ছিলো সেটা বললাম, “যতটা বিশ্বাস করলে চোখ বন্ধ করে পুরোটা জীবন সেই একজনের কথা মতোই চলা যায়।”

আরহান হাসলেন। সেই দিনের মতো আবারও বললেন,“এই বিশ্বাসটাই রেখো।”

কথাটি শেষ করতেই লোড শেডিং হয়ে গেলো। চারিপাশে অন্ধকার। বাহিরের ল্যাম্পপোস্টের আলো আসছে। তবে তার দরুন কেবল এই অন্ধকারের গভীরতা বোঝা যাচ্ছে। আরহান আমার হাত ধরে ব্যালকনির দিকে অগ্রসর হলেন। আমার যেনো কী হলো! আমিও বিনা কথায় উনার পিছু পিছু ব্যালকনিতে গেলাম।

ব্যালকনির গ্রিলের উপর এক হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছি। আমার ঠিক পাশেই আরহান। চারিপাশে শীতল বাতাস বইছে। কিছুক্ষণ আগের সেই ভয়ের রেশ মাত্র নেই। হুট করেই এক দমকা হাওয়া সাথে করে কিছু বারিধারা নিয়ে আগমন ঘটালো। সব ভুলে এই বর্ষণের রাতে প্রকৃতি বিলাসে মত্ত হয়েছি দুজন। ঘুম যেনো আমাদের দুজনের চোখের জন্য নিষিদ্ধ এক বস্তু হয়ে গিয়েছে।

বৃষ্টির ছিটে আমার চোখ মুখ ছুঁয়ে দিচ্ছে। এতক্ষণ বাইরে তাকালেও আরহানকে দেখতে চাওয়ার ইচ্ছেতে উনার দিকে মুখ ফিরালাম। চোখাচোখি হয়ে গেলো। উনিও আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। নেশাক্ত নয়ন তার। অধর কোণে নেই কোনো হাসি। বড্ড গম্ভীর তার মুখশ্রী। তা দেখেই আমার বুকটা ধুক করে উঠলো। নিস্তেজ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। হয়তো কিছু অনর্থ ঘটানোর জন্যই এই ধারার পতন।

আবেদনময়ী এই প্রকৃতিতে আরহানের নেশাক্ত নয়ন জোড়া আমার হৃদ যন্ত্রের অসুস্থ হয়ে যাবার মুখ্য কারণ হয়ে দাঁড়ালো। স্থির আরহান হুট করেই তার পা জোড়া গতিশীল করে আমার দিকে এগোলেন। মাঝে ইঞ্চির গ্যাপ রেখে থেমে গেলেন। শ্বাস গুলো মিলে যেনো এক হয়ে যাচ্ছে। হয়তো এক হবার সময় এসেই গিয়েছে।

ডান হাত এগিয়ে আমার বা পাশের এক গাছি চুল কানের পিঠে গুঁজে দিলেন। অধরযুগল কানের নিকটবর্তী রেখে ফিসফিসিয়ে বললেন,“ভালোবাসো?”

আরহানের ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ, ‘ভালোবাসো?’ প্রশ্নটি করার সময় বারবার আমার কানে এসে লাগছিলো। সমগ্র শরীরে অদ্ভুত, অচেনা, ভালোলাগার এক শিহরণ ছেয়ে গেলো। চেয়েও কিছু বলতে পারছি না। শরীরের প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা আমার। ঝড় যেমন বাইরে বইছে, তেমনই আমার অন্তরেও। অশান্ত এই মনটা যেনো এখনই তার কাঙ্খিত কিছুর সান্নিধ্য পেতে চাইছে। কিন্তু পারছে না। লাজুক ও ভীরু মুখশ্রী নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।

আমাকে নিশ্চুপ দেখে আরহান সরে গেলেন। নিজের সামনে উনার অনুপস্থিতির আভাস পেয়ে চট করে চোখ খুললাম। আরহান মৃদু কন্ঠে,“আমি বেশি করে ফেলছি হয়তো” বলেই চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলেন।

দ্রুত উনার হাত ধরে ফেললাম। আরহান আমার দিকে তাকাতেই আমি কম্পনরত অধর যুগল দ্বারা অতীব কষ্টে উচ্চারণ করলাম এই মধুর শব্দটি, “ভ’ভালো.. ভালোবাসি।”

“সত্যি?”

আরহানকে আজ বাধা দেবার ক্ষমতা আমার নেই। মাথা নিচু করে লাজুক হাসলাম। আরহান উনার জবাব পেয়ে এগিয়ে এলেন। আমার দুই গালে নিজের হাত এলিয়ে দিয়ে আমার মুখখানা নিজের দিকে তুলে ধরলেন। আমার নয়ন জোড়াকে নিজের গহীন দৃষ্টিতে প্রতীয়মান অনল দ্বারা ভস্ম করে বললেন,“নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসি তোমায় শুকতারা।”

দূরত্ব ঘুচিয়ে আমার সবচেয়ে কাছে চলে এলেন। ওষ্ঠের সাথে ওষ্ঠ মিলিত হলো। সময় যেনো থমকে গেলো। হৃদয়ের অন্তঃস্থলের ঘূর্ণিঝড়টি নিমিষেই বারিধারায় পরিণত হলো। অতঃপর আরহান আমাকে পাজো কোলে নিয়ে আলগোছে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে প্রবেশ করলেন।

আজ বাঁধা দেবার কেউ নেই। প্রকৃতিও আজ চাচ্ছে যেনো এমনটাই হয়। বৃষ্টির তেজ বাড়ছে তো বাড়ছেই। রুমের ভেতরেও দুজন ভালোবাসার মানুষ ভিজতে চলেছে এক বৃষ্টিতে। সমগ্র প্রকৃতি সাক্ষী রইলো। আজ দুজন ভালোবাসার মানুষ এক হতে যাচ্ছে। এক সুখময় বৃষ্টিতে ভিজতে যাচ্ছে।

চলবে…!
চলবে..!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here