অদ্ভুত মুগ্ধতা পর্ব: ১

অদ্ভুত মুগ্ধতা পর্ব: ১
লিখা: মিশু মনি
.
আব্বু আম্মুর তুমুল ঝগড়া লেগেছে।কেউ কারো চেয়ে কম নয়।গোল,পেনাল্টি,লাল কার্ড সবমিলিয়ে ঝগড়া বেশ জমে গেছে।
আম্মু বললেন – তোমার সংসারে এসে কি পেলাম?
আব্বু জবাব দিলেন, এক হালি বাচ্চাকাচ্চা।
আব্বুর কথায় রাগে গজগজ করতে করতে আম্মু বলল,সবসময় তোমার ইয়ার্কি না? তোমাকে বিয়ে করে জীবন টাই বরবাদ হয়ে গেলো আমার।
– লাখ লাখ টাকা খরচ করে ডিরেক্টর বরবাদ সিনেমা বানাইছে।তোমার জীবন টা ফ্রি তে বরবাদ হইছে এটা তো সুখের কথা।
আম্মু কটমট করে তাকালো আব্বুর দিকে।দেখেই মনে হচ্ছে দৃষ্টি দিয়ে আব্বুকে ভস্ম করে দেবে!
আব্বু বলল,এভাবে তাকাচ্ছো কেন বলোতো? আমি কি এখনো ইয়াং আছি? ছেলেমেয়েরা লজ্জা পাবে।
– তোমার সাথে কথাই বলা উচিৎ না।আর কথাই বলবো না।
– ঠিক আছে।ইশারায় বলবা,আমরা বুঝে নিবো।
আম্মু রাগে আগুন হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা।এবার চেঁচিয়ে বলল,তুমি কি জীবনে মানুষ হবা না?
– এতদিন কি তাহলে জন্তুর সাথে ঘর করলা তুমি?
– হ্যা তুমি একটা জন্তু।দা গ্রেট জানোয়ার।
এ কথায় আব্বুর হয়ত রাগ করা উচিৎ ছিল।কিন্তু আব্বু রেগে না গিয়ে বরং ফিসফিসিয়ে বলল,আস্তে বলো।এসব কঠিন সত্য এত জোরে বলতে নেই।পরে চিড়িয়াখানার লোকরা আমাকে ধরে নিয়ে গেলে সমস্যা হবে।
– সেটাই ভালো হবে।আমি চাই তাই হোক।তোমার জায়গা চিড়িয়াখানা।
– শোনো, তুমি স্বামী হারালে স্বামী পাবা কিন্তু তোমার ছেলেমেয়েরা বাপ হারালে বাপ পাবে না।অতএব, বুঝে শুনে কাজ করো।
আম্মু কটমট করে তাকিয়ে আছে আব্বুর দিকে।আর দাত কিড়মিড় করছে।এবার কি বলা উচিৎ বুঝতে না পেরে হনহন করে হেটে অন্য রুমে চলে গেলো।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



ওরা তিন ভাইবোন এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল।এবার ছুটে এসে আব্বুকে বলল, কংগ্রাচুলেশনস! আজকে আব্বু জিতেছে!
আব্বু হেসে বলল,একে বলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।বুঝলি?
মেজো ভাইয়া বলল,আব্বু তুমি তো একটা জিনিয়াস। কিভাবে আম্মুকে থামিয়ে দিলে।
– তোর আম্মু কখনো আমার সাথে ঝগড়ায় জিততে পারেনা।
এমন সময় আম্মু খুব শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিলো।মহিলা টা একটু পাগলি ধরণের।অনেক আবেগপ্রবণ। ঝগড়ায় হেরে গেলে দরজা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বাচ্চাদের মত কাদে।তারপর আব্বুকেই আবারো চকোলেট কিনে এনে আম্মুর রাগ ভাঙাতে হয়।তখন আম্মুর সব রাগ এসে পড়ে ওদের চার ভাইবোনের উপর! মন খুলে ছেলেমেয়ে দেরকে গালি দিয়ে বকাঝকা করেন। তখন মনে হয়,আম্মু তাদের চাইতে তাদের আব্বুকেই বেশি ভালো বাসেন!
.
ওরা চার ভাইবোন।বড় ভাইয়া সাইকিয়াট্রিস্ট, মেজো ভাইয়া ড্রামাটিস্ট,ছোট ভাইয়া কার্টুনিস্ট,আর সবার ছোট মেয়েটা আর্টিস্ট।
এই সব ধরণের টিস্ট দের মাথায় গণ্ডগোল থাকে বলে শোনা যায়।এদের ও হয়ত আছে।তাই সবাইকে সামলে রাখার জন্য আছে শিক্ষিকা আম্মু।শিক্ষায় কোনো ত্রুটি রাখেন নি ছেলেমেয়ে দের। কিন্তু দূর্ভাগ্য যে,এরা কেউই মানুষ হতে পারেনি;সবাই একেক টা বিরল প্রজাতির মানুষ হয়ে বসে আছে!
আব্বু পেশায় একজন বিজনেসম্যান।শখের বসে সাহিত্যচর্চা করেন।একজন ব্যবসায়ী ও যে এত ভালো গল্প লিখতে পারেন তা কাজী সাফায়েতউল্লাহ সাহেবের লেখা না পড়লে বিশ্বাস করা কঠিন।খুবই রসিক একজন মানুষ।একেবারে রসে টইটুম্বুর। কিন্তু আম্মু অনেক সময় আব্বুর জটিল কিছু রসিকতা বুঝতে পারেন না।তাই নিয়ে লেগে যায় ঝগড়া।
.
সাফায়েতউল্লাহ সাহেব দরজার কাছে গিয়ে ডাকলেন,তিন্নি।সন্ধ্যা পেরিয়ে যাচ্ছে।রান্না উঠাবে না?
ভিতর থেকে মা চেঁচিয়ে বললেন,না।
– সবাই খাবে কি তাহলে?
– সবাই গু খাও গিয়ে।
– ছি ছি তিন্নি।গু কুত্তাদের খাবার। আমাদের কি তোমার কুত্তা মনে হয়?
-আবার এসেছ? তোমরা যা খুশি খাও গিয়ে।আমাকে ডাকবে না।আমি আজ দরজা খুলবো না।
– সেকি! সামান্য একটু ঝগড়ার জন্য এত বড় শাস্তি! লক্ষী সোনা,চাদের কণা,দরজা খুলে বের হও না।তোমাকে না দেখলে আমি এক সেকেন্ড ও থাকতে পারিনা।
– ন্যাকামি রাখো। যাই বলো,আজ আমি বের হবোনা।
– প্লিজ তিন্নি।বাচ্চারা না খেয়ে থাকবে তাহলে।
– ঝগড়া করার সময় মনে থাকেনা?
এমন সময় রান্নাঘর থেকে চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসলো। সাফায়েতউল্লাহ সাহেব দ্রুত ছুটে গেলেন সেদিকে।গিয়ে দেখেন ছোট ছেলে মাত্রা রান্না করার জন্য চুলায় কড়াই তুলে দিয়েছিল।কড়াই তে তেল ঢেলে দিয়ে সে মেসেজের রিপ্লে দিচ্ছিল।তেল গরম হয়ে আগুন ধরে গেছে।তাই নিয়ে চেঁচামেচি।মেয়েটা এক বালতি পানি কড়াই সহ সারা ঘরে ছিটিয়ে দিয়েছে!
উনি হেসে বললেন, তুই চ্যাটিং টিটিং করছিস এটা না হয় আমরা বুঝি।নির্বোধ কড়াই তো তা বুঝেনা।
– আব্বু আমি বুঝতে পারিনি।কেন যেন রিপ্লাই দিতে অনেক সময় লেগে গেলো।
– তোর মোবাইল টেপার জন্য ভাবছি একটা রোবট কিনে আনবো। সেই সব এসএমএস রিপ্লাই দিয়ে দেবে।
বাকি দুজন হেসে উঠলো। মাত্রা হাতের কোথাও ফোসকা পড়েছে কিনা দেখতে দেখতে ভিতরে চলে গেলো।
ঘটনা শুনে মা আর ঘরে দরজা লাগিয়ে বসে থাকতে পারেন নি।দ্রুত বের হয়ে ছেলের হাত ভালো ভাবে দেখে তারপর রান্না শুরু করে দিয়েছেন।
.
খাবার টেবিলে বসে মা বললেন, তাই বলে ভেবো না আমার রাগ কমে গেছে।আমি এখনো রেগে আছি।
মেজো ছেলে মর্ম বলল,শিক্ষিকা দের এত ইমোশনাল হলে চলেনা।
মা চোখ তুলে একবার মর্ম’র দিকে তাকালেন। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে ছেলের এই ফাজলামি টাও তিনি বুঝতে পারেন নি।হয়ত এবার মর্ম’র সাথেও অভিমান করবেন। তাই মর্ম আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেতে লাগলো।
আর কোনরকম তর্ক বিতর্ক ছাড়াই খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হয়ে গেলো।
.
বড় ছেলে মৈত্রী এখনো বাড়ি ফেরেনি।আজ তাকে এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে যেতে হয়েছে।বন্ধুর ছোট বোনের মাথায় গণ্ডগোল দেখা দিয়েছে।তার চিকিৎসা করাতে হবে।পেশেন্টের বয়স অল্প।সবেমাত্র অনার্সে ভর্তি হয়েছে।ইদানীং নাকি কিসব উলটা পাল্টা কাজকর্ম করে!
পেশেন্ট দেখে কিছু বলার আগেই মেয়েটা তার ভাইকে বলল,ভাইয়া এই ক্যাবলা টা কে রে?
মৈত্রী একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তার চেহারা মোটেও ক্যাবলার মত নয়।তাহলে! অবশ্য একজন পাগলের ডাক্তার কে এ ধরণের কথাবার্তা অনেক শুনতে হয়।
মৈত্রী বলল,নাম কি তোমার?
– তোমার নাম কি?
– আমার নাম কাজী মৈত্রী।
মেয়েটা খিলখিল করে হেসে বলল,তাহলে আমার নাম সাম্য।
– মানে!
– সাম্য – মৈত্রী।
বলেই আবারো খিলখিল করে হাসতে লাগলো। মেয়েটার হাসিটা অনেক টা বাজনার মত।ঝুনঝুনির বাজনা!
মৈত্রীর বন্ধু তার বোনকে ভিতরে পাঠিয়ে দিলো। তারপর বলল,বন্ধু দেখলে কেমন ভয়ংকর ভাবে হাসে?
– কই না তো।ওর হাসি তো ঝুনঝুনির মত।
– আমরা খুব ভয়ে আছি ওকে নিয়ে।অনেক রিস্কি কাজকর্ম করে।
– যেমন?
– সারাক্ষণ একা একা কথা বলে,একা একা এদিক সেদিক চলে যায়।কখনো কখনো গভীর রাতে বাগানে গিয়ে বসে থাকে।একটু ভয় ও পায়না।
– হুম।
– সবার সাথে ইদানীং কেমন অস্বাভাবিক ভাবে কথাবার্তা বলে।
– হুম।
– আর খুব দুষ্টুমি ও করে।
– এগুলো মোটেও ভয়ের কারণ নয়।তার পরও তুমি কাল ওকে আমার চেম্বারে একবার নিয়ে আসো।
– মাথা খারাপ? ওর ট্রিটমেন্ট করাচ্ছি বুঝতে পারলে খুব আঘাত পাবে।ওকে বুঝতেই দেয়া যাবেনা।
– আচ্ছা তবে আমিই এসে এসে ওর সাথে কথা বলব।আমার বাসায় কি যেন হয়েছে,আমাকে এখুনি যেতে হবে।কাল আবার আসবো।
নাস্তা শেষ করে মৈত্রী দরজার কাছে এসে বন্ধু কে বলল,তোমার বোনের নামটা যেন কি?তখন তো বলল সাম্য।
– ফাজলামি করছে।ওর নাম মিশু।
– ও আচ্ছা।
বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়া মাত্রই উপর থেকে এক টা সুতো এসে ঝুলে পড়ল মৈত্রীর মুখের সামনে।সুতোর মুখে একটা ইদুর বাধা।ইদুর টা মুখের সামনে ঝুলছে ভাবতেই কেমন যেন লাগে!
মৈত্রী উপর দিকে তাকিয়ে দেখল,বিশাল একটা আম গাছ।সেই গাছে বসে আছে মিশু নামের মেয়েটি।হাতে একটা সুতো ধরে আছে,যার মাথায় ইদুর ঝুলছে!
মেয়েটি আবারো ঝুনঝুনির মত শব্দ করে হাসতে লাগলো। তারপর হাসি থামিয়ে বলল,আমার পোষা ইদূর।আপনাকে খুব পছন্দ করেছে।
মৈত্রী হেসে গাড়িতে গিয়ে উঠলো।এবারে পাজি একটা পেশেন্ট পাওয়া গেছে!
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here