“অদ্ভুত মুগ্ধতা ” পর্ব ২১

“অদ্ভুত মুগ্ধতা ”
পর্ব ২১
মিশু মনি
.
কয়েক মুহুর্ত চুপ থেকে ইফতি বলল,বাড়িটার ডেকোরেশন খুবই চমৎকার হয়েছে!
এমন সময় মিশু এসে হাজির।কথাটা শুনতে পেয়ে ও বলল,পুরো ক্রেডিট টাই আমার।
ইফতি একবার মিশুর দিকে তাকালো।তারপর হেসে বলল,আপনি নিশ্চয় ই মিশু?
– ইয়েস,আমি এম মিশু..
মিশু এখনো শিশু,
ইউ লাইক দিছু?
ছড়া শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ইফতি।হাসি চেপে রেখে বলল,হ্যা লাইক দিয়েছি।
মিশু মুখ বাঁকা করে বলল,শুধু লাইক? লাভ রিয়েক্ট দিবেন না?
ইফতি একবার তানিনের দিকে তাকিয়ে মিশুর কাছে এগিয়ে এসে বলল,আমি লাভ রিয়েক্ট দিলে মৈত্রী ভাইয়া কষ্ট পাবেন না?
মিশুর এ কথায় লজ্জা পাওয়া উচিত।কিন্তু মিশু যে মেন্টাল ডিসঅর্ডারের রোগী সেটা ভুলে গেলে তো চলবে না।পাগলের কাজ হচ্ছে অস্বাভাবিক কাজকর্ম করা।ও একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো ইফতির নাক বরাবর।এরকম ঘুষি ইফতি এ জীবনে খায়নি।তারচেয়েও বড় কথা কোনো কারণ ছাড়াই এভাবে ঘুষি বসাবে কেন? ইফতি নাক চেপে ধরে চেঁচাতে লাগলো।ঘটনার আকস্মিকতায় একদম থ হয়ে গেছে তানিন।অবাক হয়ে বলল,মিশু! ওনাকে তুমি চেনো?
– নাহ।
– তাহলে ঘুসি মারলে কেন?
-স্বরে অ পরিচিত দেরকে ঘুসি মারা যাবেনা এমন আইন তো কোথাও নেই।
কথাটা বলেই তানিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিশু চলে গেলো।ইফতি ও তানিন দুজনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে।তানিন কিছুতেই বুঝতে পারলো না মিশুর এরকম আচরণের কারণ।এত ভালো মেয়েটার আচরণ এমন অভদ্র হলো কি করে! ওর বিস্ময়ের সীমা রইলো না।
ইফতির কাছে এগিয়ে এসে বলল,সরি আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ।ও কেন এমন বিহ্যাভ করলো বুঝতে পারছি না।
ইফতি নাক থেকে হাত সরিয়ে বলল,মাথায় গণ্ডগোল হয়েছে নিশ্চয়ই।
তানিন ও একবার ভাবলো,সত্যি হয়ত কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে।নয়ত মিশু এরকম পাগলদের মত চলাফেরা করছে কেন?
ইফতি নিজের ব্যাগটা দেখিয়ে বলল,এগুলো কোথায় রাখা যায় একটু বলবেন?
– শিওর। আপনি ব্যাগটা আমায় দিন,আমি রেখে দিচ্ছি।
তানিন ইফতির ব্যাগটা নিয়ে চলে গেলো। ইফতি নিজের নাকে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,হাত নাকি হাতির পা! কি মাইর রে বাবাহ! আজীবন মনে থাকবে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



মিশু খাবার টেবিলে বসে একা একা খেতে লাগলো।বাড়িতে অনেক লোকজন।সবাই বাইরে হলুদের মঞ্চের কাছে হৈচৈ করছে। ভিতরে লোকজন তেমন একটা নেই।আজকে সবাইকে বেশ করে জব্দ করতে হবে।তাহলে সবাই ভাব্বে সত্যিই কোথাও একটা গণ্ডগোল হয়েছে।ভাবতে ভাবতে কয়েক টা শয়তানি বুদ্ধি বের করে ফেললো ও।
খাওয়া শেষ করে দ্রুত গেস্ট রুমে চলে আসলো।ইফতিকে নিশ্চয় ই এই রুমে থাকতে দেয়া হবে।আর অবশ্যই ও এই বাথরুম টাই ইউজ করবে।বেচারা এখনো আসেনি,ঘরে ঢোকার আগেই যা করার করে ফেলতে হবে।
মিশু বাথরুমে ঢুকে পড়লো।তারপর বাথরুমের মেঝেতে ভালো করে সাবান ঘষে ঘষে লাগিয়ে দিলো।বাথরুমে ঢোকা মাত্রই বাবাজি চিৎপটাং হয়ে যাবেন।এটা মিশুর কাজ সেটা বুঝার সাধ্য ওনার হবেনা।উনি শুধু কোমর চেপে ধরে চিল্লানি দিবেন, ব্যাপার টা বেশ মজার হবে দেখতে!
গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ও খুব সুন্দর করে বাথরুমের মেঝেতে সাবান লাগিয়ে একেবারে পিচ্ছিল করে দিলো।তারপর পা টিপে টিপে বাইরে এসে দৌড়ে অন্য ঘরে চলে আসলো।এমন সময় মর্ম’র গলা শোনা গেলো।ও চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কাকে যেন বলছে,আমার টাওয়েল টা এনে দিবি একটু?
মৈত্রী উত্তর দিলো, কই রাখছিস?
– ভাইয়া,গেস্ট রুমের বাথরুমে দ্যাখ।সকালে বড় মামা ওখানে রেখে এসেছেন বোধহয়।
কথাটা শোনামাত্রই মিশু ছুটে করিডোরে এসে দেখলো,মৈত্রী গেস্ট রুমের দিকে যাচ্ছে।সর্বনাশ! ও তো সোজা বাথরুমেই গিয়ে ঢুকবে।কিন্তু ফ্লোরে যে পরিমাণ পিচ্ছিল করে রাখা হয়েছে,নির্ঘাত বেচারার কোমর ভাঙবে।একদিকে মিশুর হাসি পাচ্ছে অন্যদিকে মৈত্রীর জন্য খারাপ ও লাগছে।ছেলেটা ওকে কত্ত ভালোবাসে।তাকে এইভাবে আছাড় খাওয়ানো ঠিক না।একদম ঠিক না।
মিশু চেঁচাতে গিয়েও চেঁচাতে পারলো না।চেঁচিয়ে বললে সবাই শুনে ফেলবে।দৌড়ে গিয়ে ওকে আটকাতে হবে।কিন্তু দৌড়ে আসতে গিয়ে একটু দেরী হয়ে গেলো।মৈত্রী যেরকম ঘোড়ার মত হাটে,এতক্ষণে বাথরুমে পৌছে গেছে বোধহয়।মিশু এক ছুটে গেস্ট রুমের দরজায় এসে দাঁড়াল। সেই মুহুর্তে শুনতে পেলো মৈত্রীর আছাড় খাওয়ার শব্দ,সেইসাথে একটা চিৎকার – ওহ মাগো! গেছি গো! ওরে বাবারে!
মিশু জিহ্বায় কামড় দিয়ে বাথরুমের দরজায় এসে দাঁড়াল।মৈত্রী একেবারে চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে।তাই দেখে ওর হাসি পেয়ে গেলো। কোনোমতে হাসি থামিয়ে ভিতরে ঢুকে ওকে টেনে তুলার চেষ্টা করে বলল,কিছু ভাঙল নাকি?
মৈত্রী কাতরাতে কাতরাতে বলল,কি ভাংবে?
– না মানে কোমর টোমর।হাড় হাড্ডি সব ঠিক আছে তো?
– আমার পড়ে যাওয়াতে বুঝি খুব আনন্দ হচ্ছে?
মিশু বুঝতে পারলো এতক্ষণ ও হেসে হেসে কথা বলছিলো।হাসি লুকানোর চেষ্টা করে বলল,ব্যথা পেয়েছেন?
মৈত্রী উঠে দাঁড়িয়ে বলল,একটু তো পেয়েছি ই।
– সরি।
– তুমি সরি বলছো কেন?
মিশু আমতা আমতা করে বলল,ছুটে আসতে একটু দেরী হয়ে গেলো আমার।আরেকটু আগে আসলে আপনাকে ধরে ফেলতে পারতাম।
মৈত্রী হেসে বলল,তুমি ধরে ফেলতে! হা হা হা।
মিশুর হঠাৎ ই মনে হলো,ও তো এখন পাগল হয়ে গেছে।এভাবে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলা যাবেনা।তাহলে ভুলভাল কিছু একটা বলতে হবে।ও এক ধাক্কা দিয়ে মৈত্রীকে আবারো ফেলে দিয়ে আশেপাশে তাকালো।মৈত্রি মেঝেতে পড়েই আবারো চেঁচিয়ে উঠল।মিশু দেখল পাশের বালতিতে কিছু পানি রাখা আছে।ও বালতি তুলে সব পানি মৈত্রীর মাথায় ঢেলে দিয়ে এক ছুটে বেড়িয়ে আসল।তারপর পালিয়ে কোথাও গিয়ে লুকিয়ে পড়লো।মৈত্রী এই ঘটনায় একেবারেই থ হয়ে গেছে।এটা কি হলো! একদিকে কোমরে ব্যাথাও পেয়েছে, অন্যদিকে মিশু ওকে ভিজিয়ে দিয়ে গেলো।এসব উদ্ভট কাজকর্ম কেন করছে ওই মেয়েটা? তবে কি ওর মাথাটা একেবারে ই খারাপ হয়ে গেছে!
নিজের ব্যথার চেয়েও মিশুর জন্য ওর মন খারাপ হয়ে গেলো বেশি।ও মেঝের দিকে তাকিয়ে দেখল পিচ্ছিল করে রাখা হয়েছে অনেকটা জায়গা।এটা কারো পূর্বপরিকল্পিত।ও ভাবল,পড়ে যাওয়া মাত্রই মিশু ছুটে এসেছে।তারমানে এই কাজটা মিশুর।কিন্তু ও কিভাবে জানে মৈত্রী এই বাথরুমে আসবে? নাকি মর্মকে ওই শিখিয়ে দিয়েছিল একবার এই বাথরুমে আসার কথা আমায় বলতে? মাথায় হাত দিয়ে বাথরুমেই বসে রইলো মৈত্রী।বসে বসে চিন্তা করছে মিশুর সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে?
এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো।অন্ধকার বাথরুমেই বসে রইলো ও।বাইরে যাওয়ার দিকে হুশ নেই।ভিজে গেছে সেদিকেও খেয়াল নেই ওর। ও শুধু একমনে চিন্তা করছে,মিশুর কোন জায়গায় সমস্যা হলো? এটা কোন রোগ হতে পারে? আর কিভাবেই বা এর চিকিৎসা করলে মেয়েটাকে সুস্থ করা যাবে? নাহ,আজই ওকে একবার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কিছু টেস্ট করাটা জরুরি।
এমন সময় মৈত্রীর মেজো মামী বাথরুমে ঢোকার জন্য এলেন।ভিতর টা একদম অন্ধকার।উনি বাথরুমে এক পা দিতেই আবছা অন্ধকারে বুঝতে পারলেন মেঝেতে কেউ একজন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।দরজা খোলা রেখে অন্ধকার বাথরুমে কেউ মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকবে এটা কল্পনার ও বাইরে।মেজো মামী এমনিতেই খুব ভিতু।উনি ভয়ে গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন!
মৈত্রী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দ্রুত উঠে মামীকে তুলে বসালেন বাথরুমের দরজার সামনে।তারপর একটু পানি নিয়ে মুখে ছিটিয়ে দিতেই মামী চেঁচিয়ে উঠে বললেন, ভু ভু ভু ভূত।ওরে বাপ রে!
মৈত্রী বলল,মামি আমি মৈত্রী।কোথায় ভূত?
– বাথরুমে।
– কোনো ভুত নেই,আমিই ছিলাম ওখানে।
মৈত্রীর গলা শুনে মামী একটু সাহস ফিরে ফেলেন।তবুও ওনার শরীর ভয়ে কাঁপছে।বাড়ির আরো কয়েকজন ওনার চিৎকার শুনতে পেয়ে ছুটে এসেছেন।বড় মামী লাইট জ্বালিয়ে এনেছেন।এরপর দুজন ধরাধরি করে মেজো মামীকে এনে বিছানায় বসালেন।ভূতের কথা শুনে বড় মামী কৌতুহল বশত এসে বাথরুমে ঢুকলেন।ঢোকা মাত্রই উনিও একেবারে চিৎপটাং!
মৈত্রী জিহ্বায় কামড় দিয়ে মনে মনে বলল,এই সেরেছে রে।মামীর বোধহয় খুব লেগেছে!এরপর সবাই এটা ওটা বলাবলি করতে করতে বেড়িয়ে অন্য ঘরে গেলো।মেজো মামী সবাইকে বোঝাচ্ছেন তিনি নিজের চোখে ভূত দেখেছেন।বড় মামী আছাড় খেয়ে তিনিও সবাইকে বিশ্বাস করাতে চাইছেন আসলেই সেখানে ভূত আছে।
মৈত্রী কাউকে কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবতে লাগলো,মিশুকে আজ হাসপাতালে নিয়ে যেতেই হবে।ওর পাগলামো বেড়ে যাচ্ছে।যদি আমার মা এভাবে আছাড় খেতেন তাহলে ধরেই নিতেন ওটা মিশুরই কাজ।তাহলে আমাদের বিয়েটা আর হতোনা! ভাবতে ভাবতে নিজের ঘরে এসে পোশাক বদলে নিলো মৈত্রী।মর্ম হুইল চেয়ার ঘুরিয়ে ওর ঘরের দরজায় এসে জিজ্ঞেস করল,কি হয়েছে ভাইয়া?
– ও কিছুনা।মামী ভয় পেয়েছিলেন।
– বড় মামি নাকি আছাড় খেয়েছেন?
প্রশ্ন শুনেই মৈত্রীর মনে হলো,বাথরুম টা ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।নয়ত আরো অনেকেই চিৎপটাং হয়ে যেতে পারে।
তারপর নিজেই এসে বাথরুমটা ভালো ভাবে পরিষ্কার করে ফেললো।
ইফতি তানিনের কাছে বুঝিয়ে নিচ্ছে কোনটা কিসের মঞ্চ আর দুজন মিলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।বাড়ির ভিতরে ওসব কান্ড হয়ে গেছে জানতেই পারলো না।
মিশু বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে নিচে তাকিয়ে দেখল তানিন ও ইফতি খুব জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।মিশুর দেখেই মনে হল,এদেরকে দেখলে যেকেউ নিঃসন্দেহে সেরা জুটি হিসেবে অভিহিত করবে।দুজনকে বেশ সুন্দর মানিয়েছে! এই দুটিতে প্রেম করিয়ে দিতে হবে।পাগলামির ছলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজও সম্পন্ন করতে হবে তাহলে!
মিশু দেখল, ইফতি বাসার ভিতরের দিকে আসছে।ও এক ছুটে টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এসে উপর থেকে সোজা ঢেলে দিলো ইফতির মাথায়।
ইফতি মাথায় হাত দিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।মিশু ততক্ষণে জানালার কাছ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।ইফতি উপরে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পেলো না।ইফতির গায়ে পানি পড়তে দেখে তানিন ছুটে এসে বলল,সেকি! আপনি ভিজে গেলেন কি করে?
– সেটা তো আমারও প্রশ্ন? মনে হচ্ছে উপর থেকে কেউ ফেলেছে।
তানিন অবাক হয়ে ভাবল,এই কাজ করার মত কে আছে! অবশ্য অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছেন।বাচ্চাকাচ্চাও নেহাত কম নয়।হয়ত ওদেরই কেউ দুষ্টুমি করে এটা করেছে।কিন্তু উনি এ বাড়িতে প্রথম এসেছেন।কি ভাব্বেন?
তানিন এক ছুটে ভিতরে গিয়ে একটা তোয়ালে নিয়ে বের হয়ে আসল।ইফতি মনে মনে মিশুকে সন্দেহ করছে।ওই মেয়েটার তো মাথায় গণ্ডগোল, শুরুতেই একটা জমের ঘুষি বসিয়েছে নাকের উপর।এটাও হয়ত ওর কাজ।কিন্তু এসব মনে হলেও তানিনকে কিছুই বলল না।
বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো বসার ঘরে সিড়ির নিচে একদিকে মিশু দোকান খুলে বসেছে।ইফতি অবাক হয়ে মিশুর দিকে তাকালো।চোখাচোখি হতেই মিশু দুষ্টুমি ভরা হাসি দিলো।ওর হাসি দেখেই ইফতি পুরোপুরি নিশ্চিত হলো এটা মিশুর ই কাজ।এরপর মেজো মামীর ভূত দেখার কান্ডটা শুনেও ওর কেবল ই মনে হতে লাগলো,এটাও মিশুর ই কারসাজি। কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতেও দিলো না।নিজে নিজেই মিশুর দিকে তাকাচ্ছে আর মুখ টিপে হাসছে।

মৈত্রী একগাদা ওষুধ নিয়ে এসে মিশুকে খাইয়ে দিলো।খাওয়ার পর মিশুর শরীর টা খুব ঝরঝরে লাগছে কিন্তু যথাসাধ্য চেষ্টা করছে অস্বাভাবিক আচরণ করার জন্য।
ইফতি শুধু দূরে দাঁড়িয়ে ব্যাপার টা খেয়াল করছে আর হাসছে।একটু পরপর মিশুর ছবিও তুলছে।মিশু ছবি তুলতে খুবই পছন্দ করে।তাই বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তুলতে লাগলো।অনেক হাসিখুশি থাকার পরও অনেকের মনে হচ্ছে,মিশু স্বাভাবিক নেই।ওর কিছু একটা হয়েছে!
দুপুরের মধ্যেই মিশুর বাবা মা চলে আসলেন।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ও ওনার স্ত্রী সহ ফিরে এসেছেন।সাথে খুজিন্তাকেও এনেছেন।নতুন বউকে দেখে সবাই খুশি ই হলো।ওকে আনা হয়েছে গায়ে হলুদের জন্য।হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলেই আবার বাসায় রেখে আসা হবে।
ফটোগ্রাফার ইফতি পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ঘনঘন ছবি তুলছে।মিশু বারবার ক্যামেরার সামনে এসে দাড়াচ্ছে ছবি তুলার জন্য।একবার সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের কান টেনে ধরে ছবি তুলল।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব কিছু মনে করেন নি।কিন্তু অনেকেই ওনাকে বলল,মেয়েটা পাগলামি করছে খুব।উনি কারো কথাতেই কান দিলেন না।ওনার ও মৈত্রীর মত সব অবস্থাতেই মিশুকে ভালোলাগে।
মর্মকে ধরে নিচে নামানো হলো।নিচতলায় একটা রুম ওকে দিয়ে দেয়া হলো।যতদিন অসুস্থ থাকবে,এই রুমেই থাকবে ও।হুইল চেয়ার নিয়ে তো আর উপর থেকে নিচে নামা সম্ভব নয়।শুধু উপরেই ঘুরঘুর করবে তা তো হতে পারেনা।বাড়িতে কত আনন্দ হচ্ছে,মর্মও উপভোগ করুক।
মর্ম হঠাৎ খুশিতে গদগদ হয়ে জানাল ওর সফলতার কথা।গত কয়েক দিনে ও মোট তিনটা শর্টফিল্ম বানিয়েছে।খুবই ছোট দৈর্ঘ্যের একেকটা ফিল্মে প্রডিউস করেছে মাত্র দশ হাজার টাকা করে।তিনটা ফিল্মে সবমিলিয়ে ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।কিন্তু আনন্দের সংবাদ এই যে তিনটাই প্রচুর দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ার কারণে ফিল্ম থেকে এসেছে মোট এক লাখ টাকা! এটা ওর জন্য অনেক খুশির বিষয়।এর ফলে মনের জোর অনেক বেড়ে গিয়েছে ওর।ও মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে যত দ্রুত সম্ভব ফেস্টিভালের ফিল্ম এর কাজ শুরু করতে হবে।প্রয়োজনে ক্রাচে ভর দিয়ে কাজ করবে।তবুও কাজ করা চাই,মনের জোর টাই সবচেয়ে আসল জিনিস।

সাফায়েত উল্লাহ সাহেব চোখে শসা দিয়ে বসে আছেন।মিশু জোর করে ওনার হেয়ার কালার করে দিয়েছে।এখন আবার জেদ করেছে ওনাকে ফেসিয়াল করিয়ে দিবেন।উনি মিশুর জেদের কাছে না করতে পারলেন না।কিন্তু দুষ্টু মিশু ফেসিয়াল প্যাকের কথা বলে খুব যত্ন করে ওনার পুরো মুখে কালি লাগিয়ে দিলো।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব কিছু দেখতেও পেলেন না,বুঝতেও পেলেন না।ফেসপ্যাক লাগানো শেষ হলে উনি উঠে ঘর থেকে বের হলেন।আয়নার দিকে তাকালেন ও না।
বাইরে আসামাত্রই সকলে হো হো করে হাসতে শুরু করলো।ওনার স্ত্রী এসে জিজ্ঞেস করলেন, এসব কি সাফায়েত?
– ফেসপ্যাক।
– এটা কোন উপাদানে তৈরী শুনি?
– তা তো জানিনা।মিশু দিয়ে দিয়েছে।
ব্যাপার টা বুঝতে সমস্যা হলোনা কারোই।বেশ একটা বিনোদন হয়ে গেলো। ছেলের বিয়েতে সাফায়েত উল্লাহ সাহেব কালি মুখে দিয়ে ঘুরছেন! কিছু আত্মীয় ও ছেলেমেয়েরা এসে ওনার পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে লাগলেন।ইফতির বেশ আনন্দ লাগছে।অন্য কোনো বিয়েতে ফটোগ্রাফি করে এত আনন্দ পাওয়া যায়নি! সাথে সুন্দরী কন্যা তানিনের সাথে আড্ডা দেয়ার সুযোগ তো আছেই।
মিশু একটা কাগজ নিয়ে অনবরত চিবিয়েই যাচ্ছে।চিবিয়ে চিবিয়ে মুখ থেকে বের করে কারো না কারো মাথার উপর ফেলে দিচ্ছে।মৈত্রী এসব খেয়াল করে ঠিক করলো,গায়ে হলুদ টা হয়ে গেলেই ওকে নিয়ে বেরোতে হবে।নানান বিষয় ভাবতে ভাবতে মৈত্রী পাঞ্জাবী ও প্যান্ট পড়লো।কিন্তু প্যান্টে পা ঢোকানোর পর নিচের দিকে তাকিয়ে দেখল,প্যান্টটা হাফ প্যান্ট হয়ে গেছে! নিচের দিকে হাটু পর্যন্ত কেটে এই অবস্থা করা হয়েছে।এত সুন্দর প্যান্টের অবস্থা এমন দেখেও মৈত্রীর একটুও রাগ হলোনা।বরং হাসি পেলো।ও মিশুকে খুশি করার জন্য সেই প্যান্ট পড়েই বাইরে বেড়িয়ে আসল।হলুদের মঞ্চের সামনে আসতেই ওকে দেখে একেকজন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিতে লাগলো।এই কান্ড টাও বিয়েবাড়ি তে নতুন বিনোদন যোগ করলো।কারোরই বুঝতে বাকি রইলো না এটা কার কাজ? কিন্তু সবাই এত মজা পাচ্ছে যে,অন্যকিছু ভাবার ই সময় পেলো না।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বললেন,তোর কি আবার হাফ প্যান্ট পড়ার শখ জাগছে নাকি?
– আব্বু,অনেক দিন আগেই খেয়াল করেছিলাম প্যান্টটা দিনদিন ছোট হয়ে যাচ্ছে।আজকে দেখি একেবারেই হাফ প্যান্ট হয়ে গেছে।কাল সকালে উঠে বোধহয় দেখবো জাঙিয়া হয়ে গেছে।
উপস্থিত সকলে হো হো করে হেসে উঠল।সবার হাসি দেখে মৈত্রী মনে মনে ভাবলো,মিশুটা পাগল হলে হোক না।এভাবে অনেক দিন কাউকে হাসতে দেখিনি।
মিশু নিজেও প্রাণখোলা হাসি হাসছে!
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here