“অদ্ভুত মুগ্ধতা” শেষ পর্ব

“অদ্ভুত মুগ্ধতা”
শেষ পর্ব
মিশু মনি
.
মিশু হলুদ শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সাজগোজ করলো।মাথায় দিলো তাজা ফুলের টায়রা।বাড়িতে একটা বসন্ত উৎসব ভাব চলে এসেছে।
দুহাত ভরে চুড়ি দিয়ে সেগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে নিচে নেমে আসলো মিশু।সিঁড়ির নিচে আসতেই মর্ম’র সাথে দেখা হলো।মর্ম ওকে দেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো!
মিশু হেসে বলল,আমায় শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখতে চেয়েছিলেন।
মর্ম উত্তর দিলো, হুম।আমি সত্যিই মুগ্ধ!
– কতটা?
– অদ্ভুত মুগ্ধতা!
মিশু হাসতে হাসতে দ্রুত বাইরে চলে গেলো।মর্ম’র সামনে থাকতে মোটেও ইচ্ছে করছে না।বাইরে গিয়ে সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে লাগলো।ইফতি ওকে দেখার পর থেকেই ঘনঘন ছবি তুলছে ওর।মিশু বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তুলছে।মৈত্রীকে কোথাও দেখা গেলো না।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব মিশুকে দেখে অনেক্ষণ চেয়ে রইলেন।কেমন যেন একটা মায়া লাগছে ওকে দেখে।এত হাসিখুশি, ফুটফুটে একটা মেয়ে! ওকে দেখলেই মনে ভয় হয়;মেয়েটা মরে যায় যদি হঠাৎ?
মিশু সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের সাথে অনেক্ষণ বসে হাসাহাসি করলো।হিমু এসে ওকে খবর দিলো, মর্ম একবার ডাকছে।
মিশুর মোটেও যেতে ইচ্ছে করলো না।মর্ম নিশ্চয় ই মিশুর জবাব টা শোনার জন্যই ডাকছে। মনটাকে শক্ত করে উঠে চলে আসলো বাড়ির দিকে।
মর্ম ওর নীচতলার ঘরে বসে আছে।মিশু ঘরে প্রবেশ করতেই মৃদু হেসে বলল,আসুন মহারাণী।বসুন আমার পাশে।কিছু জরুরি কথা আছে।
মিশু ওর সামনে বিছানায় বসতে বসতে বলল,বলুন।
– একটা কথা বলবো মিশু।কিছু মনে করবে না তো?
মিশুর হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো।মর্ম নিশ্চয় ই আবারো প্রপোজ করে বসবে।কি যে হবে এবার!
মিশু চিন্তিত হয়ে ওর দিকে চেয়ে বলল,বলুন।কিছু মনে করবো না।
– আগে বলো,তুমি আমায় ভালোবাসো কি?
মিশু কি বলবে বুঝতে পারলো না।এর উত্তর ওর জানা নেই।ও মনেমনে মৈত্রীকেই চাইছে ঠিকই কিন্তু মর্ম’র সাথে এত ভালো একটা সম্পর্ক ছিল।ওকে কিভাবে কথাটা বলে কষ্ট দেয়া যায়?
মর্ম জানতে চাইলো, এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারোনি তাইনা?
মিশু মাথাটা দুদিকে ঝাঁকিয়ে বলল,হুম তাই।এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।
– যাক,বাঁচালে।
– মানে!
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



মর্ম মিশুর কাছাকাছি এগিয়ে এসে বলল,আমাকে ভূল বুঝবে না তো?
– না।কি হয়েছে বলবেন তো?
মর্ম একটু চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ।তারপর বলল,মিশু তুমি আর আমি বন্ধু হয়ে থাকতে পারিনা? এসব প্রেম ভালোবাসা ছাড়াই দুজন দুজনের পাশে বন্ধুর মত থাকতে পারবো না?
মিশু হা করে মর্ম’র দিকে তাকালো।ওর কাছে এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দের প্রশ্ন এটি।এর মত সুখকর কথা বোধহয় আর হয়না।মর্মকে কিভাবে কঠিন সত্যটা বলবে সেটা ভেবে ওর টেনশনে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। সেই মর্ম ই যদি এমন প্রস্তাব দিয়ে বসে,তাহলে খুশিতে গদগদ হওয়ার কথা।যাকে বলে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!
মর্ম মিশুর দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,মিশু আমি সরি।রিয়েলি ভেরি সরি।হঠাৎ তোমাকে প্রপোজ করে বসে আবার হঠাৎ এমন প্রস্তাব দিচ্ছি।প্লিজ কিছু মনে করোনা।আমি আজ সকাল থেকেই ভেবে দেখলাম,এতে করে তোমার মত একটা ফুটফুটে মেয়ের জীবন নষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে যাবে।
মিশু এতক্ষণ হা করে ওর কথা শুনছিলো।এবারে বিস্ময় চেপে রাখতে না পেরে বলল,মানে! কি বলছেন এসব?
মর্ম বললো,তাহলে বুঝিয়ে বলছি।মিশু,আমার স্বপ্ন সম্পর্কে তুমি ভালোভাবেই জানো। যদিও নাট্য নির্মাতা হিসেবে অনেক জনপ্রিয় হয়ে গেছি।কিন্তু আমার স্বপ্ন মূলত,ফিল্ম মেকার হওয়া।এটা আমার ফ্যামিলির যে কাউকে বললেই বুঝতে পারবা।আমি সেই ছোট্টবেলাটি থেকেই পড়াশোনা, ফ্যামিলি সব বাদ দিয়ে সারাক্ষণ শুধু এই ফিল্মের পিছনে ছুটে আসছি।এত বছর ধরে নিজেকে প্রস্তুত করছি ছবি বানানোর জন্য।আমি এখনো পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা বানাই নি।একেবারে প্রস্তত হয়েই কাজে নামবো।ভাবছি,ফেস্টিভ্যালে সেরা ডিরেক্টর হতে পারলে আমার ক্যারিয়ার মোটামুটি গুছিয়ে আসবে।তারপর ই পূর্ণদৈর্ঘ্যের কাজ শুরু করার চিন্তা ভাবনা করছি।ফিল্ম নিয়ে যাদের স্বপ্ন,তাদের পারসোনাল লাইফ বলে কিছু থাকেনা মিশু।আর থাকলেও সে লাইফে শুধু অশান্তি আর অশান্তি।
মিশু চোখ বড় বড় করে এসব কথা শুনছিলো।
মর্ম আরো বললো- মিশু,আমি ফিল্ম ছাড়া আর কিচ্ছু ভাবতে পারিনা।হঠাৎ তোমার প্রেমে পড়ে যাওয়ায় আমার চিন্তা ভাবনা অন্যদিকে মোড় নিচ্ছিলো।এতে করে একটা পিছুটান তৈরী হচ্ছিলো।আমার স্বপ্ন পূরণ করতে এটা অনেক বড় বাধা।তুমি ফোভিয়ার পেশেন্ট,স্বাভাবিক ভাবেই তুমি আমার কাছে বেশিবেশি সময় চাইবে।কিন্তু আমিতো সময় দিতে পারবো না।একবার ফিল্মের কাজ শুরু করলে আর কোনোদিকেই হুশ থাকবে না আমার।ফিল্ম মেকার দের এমন হয়।তারা ফিল্ম নিয়েই মেতে থাকেন বলে,পরিবার কে সময় দিতে পারেনা।ফলে অনেকেরই সংসার ভেঙেও যায়।
মিশু নিষ্পলক ভাবে চেয়ে আছে।মর্ম ও এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে!
মর্ম বললো,তোমার মত একটা মিষ্টি মেয়ের জন্য এমন কাউকে দরকার যে তোমার কেয়ার করতে পারবে।আমিতো এখন ফ্রি আছি,তাই হয়ত মাঝেমাঝে সময় দিতে পারি।কিন্তু একবার ওই কাজে নামলে কষ্ট পেতে পেতে তুমি শেষ হয়ে যাবে মিশু।আমি সেটা চাইনা।আমি চাই তুমিও ভালো থাকো, আর আমার একমাত্র স্বপ্ন,আমার লক্ষ্য টাও যেন পূর্ণ হয়ে যায়।
মিশু এতক্ষণ শুধু শুনছিলো মনোযোগ দিয়ে।এবারে বলল,আমি জানি।হুমায়ূন আহমেদের জীবনী তে পড়েছি।উনি ছবি বানানোর কাজ শুরু করার পর আর পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারেন নি।ওনার স্ত্রী আর বাচ্চাকাচ্চা’রা খুবই দুঃখ পেতেন।
মর্ম বলল,ছবি বানানোর নেশাটা খুব ভয়ংকর সুন্দর একটা নেশা।ভালো লাগে কিন্তু খুবই জটিল একটা নেশা।ভালো নির্মাতা হতে চাইলে সবসময় সিনেমা নিয়েই পড়ে থাকতে হয়।আমি তোমাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারবো না মিশু।
মিশুর মুখে হাসি ফুটে উঠল।মর্ম তো জানেনা,ও মিশুর কতটা উপকার করলো।এই টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মিশু পাগলের অভিনয় করা শুরু করেছিলো।এতটাই দোটানায় পড়ে গিয়েছিলো ও।সেখানে মর্ম নিজেই তার সমাধান বের করে দিলো।মর্মকে খুব করে থ্যাঙ্ক ইউ বলতে ইচ্ছে করছে মিশুর!
মিশু বললো,ঠিক আছে।আমি কিছু মনে করিনি।আমরা ভালো বন্ধু হয়ে থাকবো।
– থ্যাংকস মিশু।
– থ্যাংকস তো আপনার প্রাপ্য।
– কেন?
– অনেক বড় টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম।
– সরি মিশু।
মিশু বলল,আরে আপনি সরি বলছেন কেন? একবার সরি আরেকবার থ্যাঙ্ক ইউ এসব কেন বলছেন? এটাই তো স্বাভাবিক তাইনা? কিন্তু নিজেই দুজনের ভালোর কথা ভেবে ভালোলাগা কে বিসর্জন দিতে চাইছেন এটা ভেবেই অবাক হচ্ছি।আপনার কি খারাপ লাগেনা?
– ততটা নয়।আমি যে একটা পিছুটান থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে পারছি সেটাই আমার কাছে বড়।নিজের ভালোলাগাটা নয়।তাছাড়া, ছবি বানানোর নেশায় মেতে উঠলে তোমাকে সামলে রাখবে কে? তুমিতো মরেই যাবে মিশু।
মিশু অবাক হয়ে বললো,আপনি আমার সুখের কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্তে আসলেন! আমাকে সময় দিতে না পারলে আমার কষ্ট হবে,আমাকে নিয়ে না ভাবলে আমার কষ্ট হবে এই জিনিস গুলো নিজের মত করে ভেবে এভাবে একটা কঠিন সত্য মেনে নিলেন! আপনি খুব অদ্ভুত!
মিশুর মুগ্ধতা’র সীমা রইলো না।ওর নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে।মর্ম একটা অসাধারণ মানুষ। অথচ মিশু ভেবেছিলো মর্ম ভালোবাসতেই জানেনা।বারবার শাড়ি পড়তে বলেছিল বলে মিশু ওকে কত কি ভেবেছে! ওর ধারণা হয়েছিলো,মর্ম একটা সাধারণ প্রেমিক যে কিনা প্রেমিকার সৌন্দর্য নিয়েই ব্যস্ত।কিন্তু আজ সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো।মর্ম একজন সত্যিকার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ! যে প্রিয়জন কে সময় দিতে না পারলে তার কষ্ট হবে ভেবে প্রিয় মানুষ টাকে দূরে ঠেলে দিতে পারে।যে মানুষ টা নিজের লক্ষ্য পূরণে সবসময় ই দৃঢ়প্রত্যয়ী! আর তাইতো একটা পিছুটান তৈরী হচ্ছিলো ভেবে নিজেই সেটা বুঝিয়ে সমাধান করে দিলো।
মর্মকে একজন সত্যিকার মানুষ মনে হচ্ছে মিশুর।ক্যারিয়ারের জন্য এমন ত্যাগ স্বীকার কয়জনে করতে পারে? এটা শুধুমাত্র মর্ম রা’ই পারে।মর্ম’র সাথে কারো তুলনা চলেনা।আর মৈত্রী? সে তো আরেক মুগ্ধ ব্যক্তিত্বের নাম।মেয়েটা কষ্ট পাবে ভেবে সে নিজের মনের কথাটাই প্রকাশ করতে চায়না।শুধু মানুষ টার উন্নতির জন্য সবসময় চেষ্টা করতে থাকে! এদের কারো সাথে কারো তুলনা হয়না।স্যালুট সাফায়েত উল্লাহ সাহেব! সত্যিকার দুজন মানুষ বানাতে পেরেছেন!
মিশুর চোখে পানি এসে গেলো।ও কান্না থামালো না।লজ্জা বা সংকোচ না করেই কেঁদে ফেললো ঝরঝর করে।মর্ম বললো,কি হয়েছে মিশু?
মিশু কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,আপনাকে একটা কথা জানানো হয়নি।
– কি কথা?
– আগে বলুন আপনি আমার বন্ধু, আমার ভাই হয়ে থাকবেন?
– হুম থাকবো, বলো কি হয়েছে?
মিশু চোখ মুছে বললো,আমাদের উভয়ের পরিবার মিলেই মৈত্রী ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দেবেন বলে ঠিক করেছেন।
মর্ম আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলল,সত্যি! তাহলে মিশু তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে হবে।তুমি জানোনা ভাইয়া কতটা অদ্ভুত মানুষ! ও কতটা কেয়ার করতে পারে সেটা সম্পর্কে ধারণাই করতে পারবে না।ও যেকোনো ভয়াবহ পেশেন্ট কেও রিস্ক নিয়ে সারিয়ে তোলে।ওর কেয়ারনেসের তুলনা হয়না মিশু।ওর ভালোবাসা পেলে তোমার মত সুখে কেউ থাকবে না।
মিশুর দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় জল পড়ছে।ও ভয় পেয়েছিল মর্ম কখনো কথাটা জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে।কিন্তু সেখানে মর্ম এতটা আনন্দিত হবে কল্পনা করাই শক্ত।
মর্ম ওর চোখ মুছে দিয়ে বলল,আমি খুব খুশি হয়েছি মিশু।তোমাকে নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয়,কিন্তু ভাইয়ার হাতে তোমাকে তুলে দিলে আর চিন্তার কারণ নেই।তুমি জানো,আমার এতদূর আসার পিছনে ভাইয়ার অবদান সবচেয়ে বেশি।তানিনের ক্যারিয়ারের সফলতার পিছনেও ভাইয়ার অনেক অবদান।ও সবসময় আমাদের কে ইন্সপায়ার করে।অসম্ভব সুন্দর একটা মানুষ!
মিশু মর্ম’র হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,থ্যাংকস মর্ম।
– উহু,আপনজন দের মাঝে কোনো সরি বা থ্যাঙ্ক ইউ থাকেনা।আমার টেনশন একেবারেই দূর হয়ে গেলো। তুমি তাহলে এ বাড়িতেই থাকবে।আর সবাই মিলে তোমার খেয়াল রাখতে পারবে,ওহ কতটা আনন্দের সংবাদ!
– আমার দিকে খেয়াল রাখা নিয়ে সবাই এত ভাবেন!
– তুমি যে খুব মিষ্টি একটা মেয়ে।তোমার কষ্ট হলে সবার ই কষ্ট হয়।যাক,অবশেষে টেনশন ফ্রি হলাম।
মিশু আরো অনেক্ষণ সময় নিয়ে কাঁদলো।মর্ম ওকে বাধা দিলো না।মেয়েটা সুখে কাঁদছে, কাঁদুক না।ওর সব কষ্ট দূর হয়ে গিয়ে যদি একটু সুখের ছোঁয়া পায়! ভাইয়ার হাতে তুলে দিলে মিশুকে নিয়ে আর কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না।তখন মর্ম খুব মনোযোগ দিয়ে ফেস্টিভ্যালের জন্য ফিল্ম বানাতে পারবে।আর একবার সেটা সেরা হয়ে গেলে,ওর স্বপ্ন পূরণে কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবে ও।ভাবতেই উত্তেজিত হয়ে পড়লো মর্ম! ভীষণ উত্তেজনা কাজ করছে,মৈত্রী ভাইয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে হবে।
উত্তেজনার টানে পায়ের কথা ভুলেই গেলো মর্ম।হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।মিশু একদম অবাক হয়ে গেলো এই ঘটনায়!
মর্ম দাঁড়িয়ে আছে ঠিকই কিন্তু হাটতে পারছে না।মিশু ওকে ধরে ফেললো। মিশুর হাত ধরে আস্তে আস্তে মাটিতে পা ফেললো মর্ম।এক পা এক পা করে এগোতে লাগলো।মিশুর কান্না কিছুতেই থামছে না,দুগাল বেয়ে পানি পড়ছে তো পড়ছেই।মর্ম’র চোখেও পানি এসে গেছে।ও মিশুর হাত ধরে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসলো।
সবাই হা করে তাকিয়ে রইলো সেদিকে! সাফায়েত উল্লাহ সাহেব একদম অবাক! এই অসাধ্য কিভাবে সাধন করলো ওরা? এত দ্রুত ও পা ফেলে লাফিয়ে লাফিয়ে হলেও হাটতে পারছে!
তানিন গিয়ে মর্ম’র আরেক হাত ধরলো।মর্ম তানিনের কাঁধে ভর দিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,আব্বু আমি হাটতে পারছি।এখন একটা ক্রাচ হলেই আর সমস্যা হবেনা।পা শুকাতে যতদিন লাগে ততদিন লাফিয়ে লাফিয়ে হাটবো।আমি সেরে গেছি আব্বু,আমি ভালো হয়ে গেছি।
মৈত্রী এগিয়ে এসে মর্মকে ধরতেই মর্ম ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,কংগ্রাচুলেশনস ভাইয়া।কিন্তু স্বার্থপর তুই একবার ও জানাস নি নিজের বিয়ের ব্যাপারে?
মৈত্রী অপরাধী’র সুরে বলল,সরি রে।সুযোগ হয়ে উঠেনি।ভেবেছিলাম আজ রাত্রেই তোকে জানাবো।
এদের এসব কথা শুনে সাফায়েত উল্লাহ সাহেব মিশুর সাথে চোখাচোখি করলেন।মিশু ইশারায় বুঝিয়ে দিলো, আর কোনো ভয় নেই।সব ঠিক হয়ে গেছে।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব নিজেও প্রচণ্ড খুশি হলেন! এত সহজে এই দুটো সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে,উনি কল্পনাও করেন নি।খুব বড় বড় সমস্যা ছিলো এ দুটি।একটা হচ্ছে মর্ম’র পা,আরেকটা হচ্ছে মিশু কার হবে?
উনি দ্রুত মিশুর কাছে এসে ওকে আড়ালে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে এটা হলো বলতো?
মিশু কাঁদতে কাঁদতে ওনাকে সব খুলে বলল।তারপর ওনাকে জড়িয়ে ধরে বললো,আজ আমি খুব খুশি আংকেল।
– বাপ ডাক।
– আজ আমি খুব খুশি বাপ।
– হা হা হা,আব্বু ডাকতে বলেছি রে পাগলী।
এরপর সাফায়েত উল্লাহ সাহেব মৈত্রীর সাথে মিশুর বিয়ের ব্যাপারে সবার সামনে ঘোষণা দিলেন।মিশুর সম্মতি নিয়েই ঠিক করা হলো,ফিল্ম ফেস্টিভাল টা হয়ে গেলেই ওদের বিয়ে হবে।পুরো বাড়িতে যেন একটা আনন্দের স্রোত বইতে লাগলো।

সবকিছু এত দ্রুত এত সুন্দর ভাবে গুছিয়ে যাবে এটা সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ভাবতেও পারেন নি।ওনার মনে আজ অনেক শান্তি।আগামীকাল ছেলের বিয়ে।ছেলে পালিয়ে বিয়ে করার পরও আবার কাল শ্বশুর বাড়ি গিয়ে সসম্মানে বউ নিয়ে আসবে।মর্ম এই এক সপ্তাহেই ১ লাখ টাকা ইনকাম করে ফেলেছে।তার নিজের লেখা গল্প দিয়ে ফিল্ম হতে যাচ্ছে! কত সুখকর কিছু সংবাদ! মাঝেমাঝে জীবন টা এত সুন্দর হয়ে ওঠে যে হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে হয়।
এদিকে তানিন ইফতিকে খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেস্টিভালের ফিল্মটাতে ইফতিকে নায়কের পার্ট দেবে।একটু পরিশ্রম বেশি হলেও ছেলেটার প্রতিভা আছে বেশ,ওকে দিয়ে অনেক কিছুই সম্ভব! কথাটা শোনার পর ইফতি হেসে সম্মতি দিয়েছে।কিন্তু মনে মনে ভেবেছে,সিনেমা থেকে রিয়েল লাইফের নায়ক ও হয়ে যাবো তোমার অজান্তেই।সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের মত একজন বাবাকে কাছে পেয়ে হারাই কি করে? আমিও এ বাড়ির ছেলে হয়ে যাবো।
মর্ম ক্রাচ নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে হেটে বেড়াচ্ছে।পায়ের ক্ষত এখনো শুকায় নি,কিন্তু এক পায়ে লাফাতে কোনো কষ্ট হয়না।বরং কুতকুত খেলার কথা মনে পড়ে যায়।ওর আজ মনে অনেক শান্তি! মিশুর দায়িত্ব ভাইয়ার কাঁধে দিয়ে দেয়া হয়েছে,ওকে নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই।মর্ম নিশ্চিত মনে খুব খুশির সাথে অনেক রাত জেগে জেগে ফিল্ম টার জন্য স্ক্রিপ্ট লিখে ফেললো।
গভীর রাতে মিশু একা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।মৈত্রী পাশে এসে দাঁড়াল।
মিশু ওর দিকে একবার তাকিয়েই বললো,ঘুমান নি আপনি?
– না।এত রাতে ছাদে কি করছো?
– ভাবছি।পৃথিবীর সব ছেলেরা কেন সাফায়েত উল্লাহ সাহেব কিংবা তার ছেলেদের মতন হয়না।
মৈত্রী হেসে বলল,আচ্ছা।তোমার শরীর কেমন? এত করে বললাম হাসপাতালে চলো, গেলেই না।
মিশু বলল,আমি একদম সুস্থ হয়ে গেছি।এত সুখের মাঝে কেউ অসুস্থ থাকতে পারে? যেটুকু সমস্যা আছে,আপনি সেবা করে সারিয়ে তুলবেন।
মৈত্রী মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,হুম।দুদিন বাদে পূর্ণিমা।আজকের চাঁদ টা অনেক সুন্দর আলো ছড়িয়েছে।
মিশু একটু এগিয়ে এসে বলল,হুম।জ্যোৎস্না আমার খুব প্রিয়।
– আর আমি?
মিশু চাঁদের আলোয় মৈত্রীর দিকে তাকিয়ে ওর হাতে হাত রাখলো।তারপর বললো,যতটা প্রিয় হলে জ্যোৎস্না রাতে ছাদে হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকা যায়।
মৈত্রী অবাক হয়ে মিশুর দিকে তাকালো।আর মিশু তাকালো বাইরের দিকে।বাড়ির উঠান টাকেও সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।পুরো বাড়িটায় খেলা করছে অসংখ্য লাল নীল বাতি! ফুলের গন্ধে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক।মৈত্রী মুগ্ধ হয়ে মিশুর দিকে চেয়েই আছে।মিশু উপভোগ করছে এই অপূর্ব রাতের সব সৌন্দর্য।গাছের পাতায় আলো লেগে চিকমিক করছে,বিয়ের গেটে আর আশেপাশে লাল নীল আলো জ্বলছে আর নিভছে,বিভিন্ন রঙের বেলুন,ফুল,ওড়না আর আলোয় আলোয় রঙিন হয়ে উঠেছে চারিদিক।পাশে মৈত্রী মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আজ জগতের সবকিছুই বড় ভালো লাগছে! যেন সবকিছু তেই ছড়িয়ে আছে অদ্ভুত মুগ্ধতা!
সমাপ্তি
.
(প্রতিটা পর্বেই সকলের অনেক মন্তব্য পেয়েছিলাম।একটা পর্বে মর্ম চরিত্রের দু একটা দূর্বল দিক তুলে ধরায় অনেকে লেখককে রাগী কথা শুনিয়েছেন।দুজন নায়ক থাকলে একজনের সাথে আরেকজনের তুলনা করাটাই স্বাভাবিক।মূলত নায়িকা মর্মকে ভুল বুঝেছিলো।সেসব আজ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।কাজেই আমি মনে করি,পুরোটা পড়ার পর সবমিলিয়ে একটা গঠনমূলক কমেন্ট করা উচিৎ,একটা পর্ব পড়ে গালি দেয়া নয়।যারা গল্পটা পড়েছেন, সকলের কাছে অনুরোধ সবমিলিয়ে কেমন ছিলো সেটা অবশ্যই জানাবেন।লিখাটা শুধুমাত্র আত্মতৃপ্তির জন্য,আর আমি বয়স ও অভিজ্ঞতার দিক থেকে অনেক ছোট্ট।কাজেই ভূল ভ্রান্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক।যার কাছে যে জায়গাটায় ভুল হয়েছে বলে মনে হয়েছে,সেটা একটু জানালে উপকৃত হবো।সেইসাথে কাহিনী, বর্ণনা,চরিত্র,ড
ায়ালগ সব কিছু বিবেচনায় কেমন ছিলো জানাবেন।কোথাও কোনো অসামঞ্জস্যতা থাকলে চিহ্নিত কিংবা নির্দেশ দিন।তাহলে পরবর্তীতে সেসব ভূল আর হবেনা।কষ্ট করে পুরোটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ)
– মিশু মনি

5 COMMENTS

  1. মিশু দিদি গল্পটা অনেক সুন্দর হয়েছে পরের গল্পের কবে দেবেন I love it this story thanks loot for gift this story 🎁🎁🎁🎁🎁❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️

  2. মিশু দিদি গল্পটা অনেক সুন্দর হয়েছে পরের গল্পের কবে দেবেন I love it this story thanks loot for this story ❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️👌👌👌👌👌👌👌👌👌🎁🎁🎁🎁🎁🎁🎁🎁🎁🎁

  3. গল্পটা আসলেই অনেক সুন্দর হয়েছে। আশা করি এভাবে আরও
    গল্প লিখবেন।

  4. সত্যি গল্পটা অসাধারন হয়েছে। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল। এভাবেই লিখতে থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here