১.
ছোঁয়ার রক্তে সারা রুম ভেসে যাচ্ছে। ছোঁয়া চিৎকার করে যাচ্ছে কিন্তু তার কন্ঠ কারো কর্ণধারে পৌঁছে না৷
ছোঁয়া ঘুমের মাঝে অনুভব করে কে বা কারা জানি ছোঁয়াকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে৷ ছোঁয়া চোখ খোলার চেষ্টা করে কিন্তু কোন ভাবেই তার চোখ খোলতে পারছে না৷ চোখের সাথে যুদ্ধ করে পরিশেষে চোখ খোলে৷ চোখ খোলার পর ছোঁয়া কাউকে দেখতে পারছে না৷ অথচও সে এখনও অনুভব করছে কে জানি তাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরে আছে৷
— কে আপনি? আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন কেন? প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন? আমার ধম আটকে যাচ্ছে তো।
— কোমল মিষ্টি কণ্ঠে বলে উঠে ভয় পাবার কোন কারণ নেই৷ আমি তোমাকে বিয়ে করেছি৷ আর তুমি এখনও সিঁদুর সাখা পলা পড়নি কেন?
— কিসের বিয়ে?
— সেদিন মন্দিরে তোমার সিঁথিতে আমার সিঁদুর পড়েছে৷
— কোন মন্দির। আমি জীবনে কোনদিন মন্দিরে যায় নি৷ বাজে কথা বন্ধ করেন৷
ছোঁয়া আর কিছু বলতে পারল না। তার আগেই তার কন্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়৷ ছোঁয়ার ঠোঁট অনবরত নড়ে যাচ্ছে। সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছে৷ কিন্তু সে নিজেকে সুপেয় দিতে বাদ্য৷ সেই অদ্ভুত লোকটি তার সাথে সহবাস করে যাচ্ছে। অনবরত রক্ত ঝড়ে যাচ্ছে। সে দিকে অদ্ভুত লোকটির কোন খরব নেই৷ সে নিজের কাছে মর্ত্য হয়ে আছে৷
ছোঁয়া কান্না করে যাচ্ছে আর একের পর এক কিল ঘুশি মেরে যাচ্ছে নিজের গায়ের উপর৷ কিন্তু তার গায়ে একটাও আঘাত পড়ছে না৷
ভোরে মন্দিরের সঙ বেজে উঠতেই অদ্ভুত লোকটি ছোঁয়াকে ছেড়ে দেয়। আর কোথায় চলে যায় জানা নেই৷
ছোঁয়া ফ্লোরে বসে চেখের জল ফেলে যাচ্ছে। তার দেহে কোন শক্তি পাচ্ছে না৷ সে কি করবে৷ এসব কথা তার পরিবারের লোকদের বলবে নাকি চেপে যাবে। তাছাড়া ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক। কিভাবে তারা এই শক মেনে নিবে।
ছোঁয়া নিজের মনকে শক্ত করে শাওয়ার নিতে যায়। ছোঁয়া দেখতে পায় দুই তিনটা পটেকশক পড়ে আছে৷ তার মানে ছোঁয়ার সাথে যা হয়েছে পটেকশন ছিল। কিছু তার ক্ষতি হবে না৷ কিন্তু বিছানার চাদর৷ সেটা ব্লাড দিয়ে পরিপুর্ণ৷
ছোঁয়া ওয়াসরোম থেকে বের হয় চাদর নেওয়ার জন্য৷ কিন্তু সে বিছানায় অন্য কারুকাজ যাক্ত চাদর দেখতে পাই। সাথে একটা চিরকুট।
ছোঁয়া আবেগ বিয়ে সেই চিরকুটটা খোলে।
লেখাঃ
প্রিয় লাইফ পার্টনার ছোঁয়া
রাতের ঘটনা সব ভুলে যায়। কারো সামনে এসব কথা বললে তোমার অবস্থা আমার মতো হবে বুঝতে পারোনি তাই তো। কাউকে আমার ব্যাপারে কিছু বললে তুমি তোমার মা বাবাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলবে। বেলকুনীতে চাদর শুকাতে দেওয়া আছে৷ এখন ভালো করে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে যাও।
ইতি
❤
ছোঁয়া চিরকুটটি পড়ে খুব ভয় পেয়ে যায়৷ সে কি করবে এখন৷ তার প্রাণ ভুমরা মা বাবাকে সে কিছুতেই হারাতে পারবে না৷ ছোঁয়া অদ্ভুত লোকটির কথা মতো নিজেকে শক্ত করে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়।
— একি ছোঁয়া আজ এত তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পরলি? (ছোঁয়ার মা)
— আসলে মা সকাল সকাল আজ ঘুম ভেঙে গেছে৷ আমার খুব ক্ষুধা লাগছে আমাকে খেতে দাও৷
— একি যে মেয়েকে জোর করে ধরে খাবার খাইয়ে দিতে হয় সে কিনা আজ নিজের হাতে খাবার খেতে চায়৷
— মা বাজে কথা বন্ধ করে খাবার দাও৷
— আমি এখন রুচি বেলছি৷ তুই বরং ফ্রিজ থেকে কিছু নিয়ে খেয়ে নে।
— ওকে মা৷
ছোঁয়া ফ্রিজ থেকে কিছু ফল নিয়ে খায়৷ খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে ফিরে আসে৷ রুমে এসে অভাগ৷ সারা রুম থেকে রজনী গন্ধা ফুলের সৌরভ ভেসে আসছে। কিন্তু কোথাও রজনীগন্ধা ফুল নেই৷ ছোঁয়া সারা রুমে খোঁজতে লাগে কিন্তু কোন ফুল পাই না৷ সে রহস্য জানার জন্য সেই সৌরভ ভেসে আসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ তার চোখ পড়ে নীল চিরকুটের দিকে। সেই চিরকুট থেকে রজনীগন্ধা ফুলের সৌরভ ভেসে আসছে। অজান্তেই ছোঁয়ার ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিৎ পরিমাণ হাসি পায়৷
২.
–ছোঁয়া তোর কি হয়েছে এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? ( ছোঁয়ার বান্ধবী রিয়া)
–কই মন খারাপ করে বসে আছি। এই তো হেঁসে হেঁসে কথা বলছি৷
— ছোঁয়া আমি তোর ফ্রেন্ড হয়৷ আমি তোর মনের খবর জানি৷ কি হয়েছে আমাকে বল?
★
কি করে তোকে বলবো। আজ রাতে আমার সাথে যা হয়েছে। তোকে বলতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু আমি শিকলে বাঁধা। তোকে কিছু বললে আমার মা বাবার অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে৷ ক্ষমা করে দিস আমায়৷
☆
— কি রে কোথায় হারিয়ে যাস?
— কই নাতো?
— কি ভাবছিলি?
— কিছুনা৷
— আমি এতক্ষণ ধরে তোকে ডেকে যাচ্ছি কোন সাড়া দিলি না কেন?
— ভালো লাগেনি তাই।
— চল ফোসকা খাবো৷
— হুম চল৷
— আজ তোর খাওয়ানোর কথা।
— ছোঁয়া আকাশ পাণে চেয়ে কি বলিস?
— হুম আমি টানা ২ দিন তোর ফুসকার দাম দিয়েছি৷
— তাহলে থাক?
— কি থাক😡
— আমার দেহটা আজ কেমন কেমন জানি লাগতেছি৷ আমি আজ খাবো না তুই বরং খা।
— কুত্তী তুই আমার ফুসকার দাম দিবি তোকে খেতে হবে না৷
— ওকে বাবা ফুসকা কি সেটাই তো আমি জানি না৷ আমি তো ফুসকা এই নামটা কোনদিন শুনি নাই৷
— সা* তুই এখন আমাকে ফুসকা না খাওয়ালে তোর ১২ টা বাজিয়ে ছাড়বো।
— এই রে আজ ভুলে ঘড়ি রেখে আসছি৷ তোকে কথা দিচ্ছি আমি এখনই বাসায় যাওয়ার পর ঘড়ির কাটা ১২ টার ঘরে দিব৷ সত্যি বলছি৷
— তুই যদি আজ আমাকে ফুসকা না খাওয়াস তোর সাথে কোন কথা নেই৷
— তাহলে তুই কাল থেকে বোবা হয়ে যাবি৷ চিন্তা করিস না আমিও ইশারায় কথা বলতে পারি।
— তুই যদি আজ সাথে বেইমানি করিস তপেসের কাছ থেকে ১২ প্লেট ফুসকা খাবো৷
— সা* তুই আমার হবু বরের নাম নিস৷ লজ্জা করে না৷ তোর একদিন কি আমার একদিন৷
— তো কি করবো৷ তোর মতো কিপ্টা লোক আমি আর দেখি নি।
— ওই কিপ্টা বলবি না৷ আমি কিপ্টা না৷
— তাহলে তুই কি?
— আমি আমার টাকা সঞ্চয় করি৷ জানিস না অপচয় কারী শয়তানের দাদা। আমি তো ভালা মানুষ। আমি অপচয় কেন করবো। তাও আবার তোর জন্য। যা ভাগাড়ে গিয়ে মর৷
— আমাকে মরতে হবে না৷ ওই দেখ কে এসেছে৷
— দূর বা* আবার কে আসলো।
— তোর ইয়ে৷
— ইয়ে মানে কি? আমি বাসা থেকে ইয়ে করে আসছি🤣
— পিছু তো দেখো?
— ওকে,, পিছু তো দেখলাম।
— ওই শয়তান তপেস এখানে এসেছে তুই বলবি না৷
— আমি কেন বলতে যাবো তুই তো আমার সাথে ঝগড়া করে যাচ্ছিস৷
— তোকে পরে কোন একদিন দেখে নিব৷
— দেখ তপেস কে খুব কিউট লাগছে৷ গাড়ীর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে কালো সানগ্লাস। যা লাগছে না তোকে বলে বুঝাতে পারবো না৷
— এভার দয়া করে তোর মুখটা বন্ধ রাখ।
— আমি বন্ধ রাখলেই কি? সবার মুখ বন্ধ করে রাখতে পারবি৷
— তোর সাথে আমার কাল ভার্সিটিতে আবার কথা হবে এখন আসছি৷
ছোঁয়া রিয়াকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে চলে যায়৷
৩.
— আপনি এখানে কখন আসলেন?
— এখানে এসেছি তো অনেক আগে৷ কিন্তু তোমার তো কোন খোঁজ নেই৷ (তপেস)
–আসলে রিয়ার সাথে কথা বলছিলাম। আপনি এখানে এসেছেন খেয়াল করি নি৷
–চল আমরা দূরে কোথায় ঘুরে আসি।
— না আজ বাড়িতে যেতে হবে৷
— আমি তোমার বাড়ি থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছি৷
— কি আপনি আমার বাড়িতে গিয়েছিলেন?
— হুম। কেন কোন সমস্যা?
— না কোন সমস্যা নেই৷ এমনেই বলছিলাম।
— চল আজ নদীর তীরে ঘুরতে যাবো৷
— সত্যি বলছেন (ছোঁয়া নদীর কথা শুনলে নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারে না)
–হুম সত্যি বলছি৷
তপেস ছোঁয়াকে নিয়ে নদীর তীরে নিয়ে আসে৷ ছোঁয়া নিজেকে নদীর তীরে আবিষ্কার করতে পেয়ে মহা খুশি। ছোঁয়া ছোট বাচ্চাদের মতো হাত তুলে উঠে যাচ্ছে।
হঠাৎ করেই তার চোখ পড়ে বালির উপর আঁকা একটা কারুকাজের উপর৷ ছোঁয়া কাছে কাছের কাছে যেতেই অভাগ। কেননা কারুকাজ টা ঠিক তার বিছানায় আজ যে চাদর বিছানো হয়েছে ঠিক তেমন কারুকাজ।
ছোঁয়া কারুকাজের উপর হাত রাখতেই তার কানে সেই মুগ্ধ করা কোকিলের কন্ঠের মতো ভেসে আসলো অদ্ভুত লোকটির কন্ঠ।
— এই মুহুর্তে এই নদীর তীর থেকে চলে যাও৷ এখানে আর কোনদিন আসবে না৷
— কেন?
— আমি যা বলছি তাই৷ এখানে আসবে না মানে আসবে না৷
— আমি তো এখানে অনেক আগে থেকেই আসি৷
–এখানে তোমার বিপদ আছে৷ তপেসের সাথে তোমাকে যেন না দেখি৷
— কে আপনি? আমি আপনাকে ভয় পায়৷
— ভয় পেতে হবে৷
— সাহস থাকলে চোখের সামনে আসেন৷
— সময় হলে ঠিক আসবো৷
–ভিতুর মতো পিছন থেকে আঘাত করেন লজ্জা লাগে না।
— এক মিনিটের মাঝে এখান থেকে চলে যাবে।
— আমি এখান থেকে ১ ঘন্টার মাঝেও চলে যাবো না৷ তোর সাহস থাকলে দেখা৷
— তাহলে দেখো আমার সাহস৷
ছোঁয়া কিছু তরল জাতীয় পদার্থের অনুভব করলো। শুধু তার মুখ দিয়ে তপেস বের হলো আর ছোঁয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেললো৷
তপেস ছোঁয়ার দিকে দৌড়ে এসে।
— ছোঁয়া চোখ খোল? কি হয়েছে তোমার৷
ছোঁয়ার আঙ্গুল গাড়ির দিকে।
— ছোঁয়া তুমি বলতে চাইছো চলে যাবে৷ ঠিক আছে আমরা এখনই চলে যাবো৷
তপেস ছোঁয়াকে কোলে তুলে নেয়৷ গাড়িতে নিয়ে এসে এক হাত দিয়ে আলতু করে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে রাখে। অন্য হাত দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে ছোঁয়াকে বাড়ি পৌঁছে দেয়৷
–
–
–
রাতের বেলা ছোঁয়া আজও ঠিক তেমনই অনুভব করছে,, কিন্তু আজ অদ্ভুত লোকটি খুব রেগে আছে৷ যা তার আচরণ দেখে বুঝা যাচ্ছে।
#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_০২
#অধির_রায়
৪.
রাতের বেলা ছোঁয়া আজও ঠিক তেমনই অনুভব করছে,, কিন্তু আজ অদ্ভুত লোকটি খুব রেগে আছে৷ যা তার আচরণ দেখে বুঝা যাচ্ছে।
কোন কথা নেই অদ্ভুত লোকটি এসে ছোঁয়ার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়৷ ছোঁয়া ছাড়া পাওয়ার অনেক চেষ্টা করছে৷কিন্তু কিছুতেই ছাড়া পাচ্ছে না৷ অদৃশ্য একটা লোকের সাথে কিভাবে ছোঁয়া যুদ্ধ করবে ভেবে কিছুই পাচ্ছে না।
১০ মিনিট পর ছোঁয়া ছাড়া পায়। ছাড়া পেয়ে জোরে জোরে নিঃশব্দে নিঃশ্বাস নিতে থাকে৷
আবার সেই মধুর কন্ঠ তার কানে ভেসে আসে৷ কিন্তু এখন ভেসে আসে ধারালো ছুরির মতো।
— তোকে কতবার বলছিলাম নদীর তীর থেকে চলে আসতে?
ছোঁয়াকে অপরিচিত কেউ তুই করে বললে ছোঁয়ার খুব রাগ হয়৷ ছোঁয়া ক্ষেপে বলে।
— আমি তোর মতো ভীতু রামের কথা কেন শুনতে যাইবো।তুই কে? সাহস থাকলে সামনে আয়৷
অদ্ভুত লোকটি ছোঁয়ার গাল চেপে ধরে
— তোমার তো সাহস কম নয় আমাকে রাগিয়ে দাও৷ তার একটু নমুনা দেখাচ্ছি৷
— কিসের নমুনা?
২ মিমিট পর ছোঁয়া দেখতে পায় তার মাকে শূন্যে ঘুরানো হচ্ছে।
— এর পর আমাকে রাগিয়ে দিতে চাও সুইটহার্ট।
— প্লিজ আমার মার সাথে কিছু করবেন না। আমি আপনার পায়ে পড়ি।
— তাহলে কথা দাও আমি যা বলবো তাই করবে?
— হুম কথা দিচ্ছি। এখন আমার মাকে ছেড়ে দেন। মার খুব কষ্ট হচ্ছে।
— ঠিক ততটাই কষ্ট আমারও হয়েছে যখন তুমি আমার কথা শুননি৷
— প্লিজ এমন করবেন না। আমার মাকে প্লিজ ছেড়ে দেন৷
–দেখে আসো তোমার মা ঠিপ আছে কিনা৷
ছোঁয়া এক দৌড়ে রুমে যায়। এসে তার আঁখি আকাশ পানে। এসে দেখতে পায় তার মা আর বাবা হেঁসে কথা বলছে তার বিয়ের জন্য৷ একবার ছুটে মাকে জড়িয়ে ধরতে মন চাইলো৷ কিন্তু মনের এই আবেগ টুকু ধরে রাখলো।
ছোঁয়া খুশি মনে রুমে ফিরে আসে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় রুমে সেই অদ্ভুত লোকটির সুগন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না৷ তার মানে সে রুম থেকে চলে গেছে।
ছোঁয়া তার পড়া কম্পিট করে শুয়ে পড়ে৷ ছোঁয়ার কথা হলো সে আজ ঘুম আসবে না৷ ছোঁয়া চোখ বন্ধ করতেই তার উপর সেই অদ্ভুত লোকটির ভর অনুভব করতে পারলো।
ছোঁয়া কথা বলার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না৷ সে খেয়াল করলো তার দেহ থেকে সমস্ত শক্তি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। তার দেহ এখন একটাও কাপড় নেই৷
ছোঁয়া বাঁধা দেওয়ার অনেক চেষ্টা করছে।তবুও ছোঁয়া এক চুলও নড়তে পারছে না৷ শুধু চোখের জল ফেলে যাচ্ছে ব্যাথা সহ্য করতে না পেয়ে। গতকালের থেকে আজ সে প্রচুর ব্যাথা অনুভব করছে তার মানে ছোঁয়ার উপর ক্ষেপে আছে৷
ছোঁয়া ঠোঁট অনবরত নড়ে যাচ্ছে। সে সবাইকে ডাকছে। তাকে বাঁচানোর জন্য। কারো কর্ণধারে ছোঁয়ার কথা পৌঁছে না৷ তার শেষ আশা ছিলো এভার তার কণ্ঠ সবার কর্ণধারে পৌঁছে যাবে৷ গলা ফাটিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ছোঁয়ার ঠোঁটে জোড়া দখল করে নেয়৷ হঠাৎ করে ছোঁয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
–
–
–
আঁধার কেটে নিয়ে আসে সোনালী প্রভা 🗯 মুছে যাক ঝড়া, ঝড়ে যায় গ্লানি৷ সকলে পায় বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা। ছুটে চলে সাফল্যের পিঁছে।কিন্তু ছোঁয়া জীবন সকালের আলোতে দূর্বিষহ হয়ে উঠে৷
ছোঁয়া পিন পিন করে আঁখি মেলে।আঁখি মেলতেও কষ্ট হচ্ছে। ব্যাথায় কুকরিয়ে উঠছে৷ দেহের সমম্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। অনেক কষ্টে নিজেকে কাপড়ে জড়িয়ে নিল ছোঁয়া। ছোঁয়া তার বেডে বিছানার পাশে একটা কারুকাজ করা চিরকুট পায়।
🖤
প্রিয়তমা
জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে। টেবিলে টেবলেট আছে৷ ভালোই খেয়ে নাও৷ না হলে পরে এর থেকে খারাপ কিছু ঘটতে পারে।
ইতি
❤
সালা তুই আমাকে হুমকি দেস। তোর কাছ থেকে আমি সব হিসাব নিবো৷ তোর বংশ আমিউ নির্বংশ করবো। এটা করতে না পারলে আমিও ছোঁয়া রায় নয়৷
ছোঁয়া ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়।
৫.
সকলে খুব হাসি খুশিতে ব্রেক ফাস্ট করছে। ছোঁয়া তাদের হাসি দেখে তার জমে থাকা সব কষ্ট ভুলে যায়।
— ছোঁয়া দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
— না মানে আসলে,
— আসলে আসলে কি?
— মা আমি আজ ভার্সিটিতে যাবো না৷
— কেন?
— মা আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে৷
— কি হয়েছে তোর?(ছোঁয়ার মা)
–জ্বর এসেছে তোমার। তাহলে সকাল সকাল স্নান করলে কেন?(ছোঁয়ার বাবা)
— আসলে বাবা আজ ভার্সিটিতে তেমন ক্লাস নেই৷ আমি বরং রিয়াকে এখানে ডেকে আনি৷
— ওকে আমরা কি তোর কথা ফেলতে পারি।তুই যা মনে করিস তাই কর?মুচকি হেঁসে ছোঁয়ার দাদা সিদ্ধার্থ বলে উঠে।
— কিরে দাদা আজ এতো খুশি কেন? আমি কিন্তু সব জানি।
— তুই কি জানিস?
— এখন কিছু বলবো না৷ তবে মা বাবা তোমরা একটা কথা মনে রাখো তোমাদের ছেলে প্রেম করছে৷
— দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি।
ছোঁয়ার খেতে মন চাইছিলো না। তাই এই অজুহাতে সে খাবারের টেবিল থেকে দৌড়ে চলে যায়৷
— তুই আমাকে ধরতে পারবি না৷ তোর মতো আমি হ্যারো না৷ আমি অলওয়েজ উইন৷
দাঁড়া তোর আমি ১২ টা বাজিয়ে দিচ্ছি৷
সিদ্ধার্থ ছোঁয়ার পিছু পিছু দৌড়ে চলছে৷ কিন্তু কিছুতেই ছোঁয়াকে ধরতে পারছে না৷ ছোঁয়া দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়।দ্বার লাগানোর আগেই সিদ্ধার্থ ছোঁয়ার রুমে ঢুকে যায়৷
ছোঁয়া ভয়ে কাচুমাচু করছে। যদি সিদ্ধার্থ কিছু জেনে যায়। এখানে কিছুতেই সিদ্ধার্থের চোখে এই নীল চিরকুট পড়তে দেওয়া যাবে না৷ এখন কি করতে হবে৷
আশ্চর্যের বিষয় এটা যে ছোঁয়া সেগুলো লুকাতে যাওয়ায় সেগুলো উধাও হয়ে যায়।ছোঁয়া অভাগ চোখে বলে উঠে।
— এটা কিভাবে সম্ভব?
— তুই কার কাছ থেকে মুরগি হলি। তপেসের নাকি। কিসের জন্য এতো অভাগ?
☆
না দাদাকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না৷ এখন আমাকেই কিছু করতে হবে। এখন কথা কাটিয়ে দিতে হবে৷
— আমি তপেসের জন্য হলে তোর কি? তুই তোর রিয়াকে নিয়ে ভাব৷
— কে রিয়া? আমি কোন রিয়াকে চিনি না৷
— দাদা আমি সব জানি তুমি চুপি চুপি রিয়ার সাথে দেখা করো। & ফোনে কথা বলো আমি রিয়ার ফোনে আমার ফোন নাম্বার মাই হার্ট দিয়ে সেভ করা দেখেছি৷
— তুই আর কি দেখেছিস?
— কিছু বলবো না এখন? যদি আজ রাতে তুই আমাকে আইসক্রিম খাওয়াতে না নিয়ে যাস তাহলে সবাইকে সব বলে দিব৷
— প্লিজ কাউকে কিছু বলিস না৷ আমি এখনো রিয়াকে প্রপোজ করতে পারিনি৷ তোর বন্ধু বলেই কিছু কথা বলি।
— দাদা আমার উপর ছেড়ে দাও৷ আমি আমার বউদিকে পটিয়ে নিব৷
— সত্যি বলছিস?
— হুম সত্যি বলছি৷ দেখ আজ রাতেই পটিয়ে নিব৷
— তুই যা খেতে চাইবি তাই খাওয়াবো৷
— এখন দেখ রিয়াকে ফোন করে বাড়িতে নিয়ে আসি৷
— ওকে,,
ছোঁয়া রিয়াকে ফোন করে বাড়িতে ঢেকে আনে৷ ছোঁয়ার পিছন ফিছন তপেসও আসে৷ এখন আমার কি করার৷ তার থেকে বরং রিয়াকে দাদার রুমে পাঠিয়ে দেয়৷ হ্যাঁ এটাই ভালো হবে।
৬.
— রিয়া চল আমার সাথে।আর আপনি এখানে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করেন৷
— তুই আমাকে কোথায় নিয়ে যাস?
— চল তাহলে বুঝতে পারবি।
ছোঁয়া খুব বুদ্ধির সাথে রিয়াকে সিদ্ধার্থের রুমে নিয়ে যায়।
–দাদা রিয়ার সাথে কথা বল প্লিজ।তপেস এসেছে তার সাথে আমাকে তো কথা বলতে হবে। প্লিজ মন খারাপ করিস না৷
ছোঁয়া কিছু না বলে বাহির থেকে দ্বার বন্ধ করে চলে যায়।
–
–
–
–রিয়াকে কোথায় রেখে আসলে?
–সেটা আপনাকে নিয়ে ভাবতে হবে না৷
— কথায় আছে সালি আদি ঘরওয়ালী৷ সো তাকে নিয়ে একটু ফার্ন করতাম৷ মুচকি শয়তানি হাসি দিয়ে
— দাঁড়ান ফার্ন করাচ্ছি।
ছোঁয়া ক্ষেপে এক প্রকার তেড়ে তপেসের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না। ফ্লোরে রিয়াকে জব্দ করার জন্য জল ফেলে রাখছিলো। সেই জ্বলে পা দিতেই ছোঁয়া পা স্লিপ কেটে তপেসের উপর পড়ে🙈
ছোঁয়ার ঠোঁট তপেসের ঠোঁটের সাথে মিলিত হয়ে যায়। কি থেকে কি হয়ে যাবে ছোঁয়া ভাবতে পারেনি৷ দু’জনের আঁখি বড় বড় রসে গোল্লার মতো হয়ে যায়। ২ মিনিট তাদের মাঝে কোন কথা নেই৷ তপেস নিজেকে কন্ট্রোল করে
— একটু দেখে তো চলতে পারো৷
— আমি দেখে চলবো কিনা সেটা আপনাকে দেখতে হবে না,, এখন ছাড়েন আমাকে?
ছোঁয়া তপেসের উপর থেকে উঠতে নিলে তপেস ছোঁয়াকে নিজের সাথে আটকে ধরে,
— আমার এই বুকে তুমি নিজ ইচ্ছায় এসেছো। আমার এই বুক থেকে তুমি তখন চলে যেতে পারবে যখন আমি তোমাকে চলে যেতে দিব সুইটহার্ট।
সুইটহার্ট কথা শুনে ছোঁয়ার রাতের কথা মনে পড়ে যায়। ছোঁয়া চিৎকার দিয়ে,
— আমাকে এই নামে কখনো ডাকবেন না! ক্ষেপে বলে উঠে ছোঁয়া।
— ছোঁয়া তুমি এভাবে ঘামছো কেন? কি হয়েছে তোমার?
— না কিছু না৷
— কেন তোমাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে?
— আসলে সুইটহার্ট কথাটার মাঝে আমার এলার্জি আছে৷ আমি ছোট থেকেই সুইটহার্ট কথাটা সহ্য করতে পারি না৷
— সরি ছোঁয়া। এভাবের মতো ক্ষমা করে দাও৷ আর কখনো এমন করবো না৷কান ধরতে হবে৷
তপেস ছোঁয়ার সামনে কান ধরে উঠ বস শুরু করে দেয়৷ ছোঁয়া মুচকি হেঁসে উঠে।
— হাসলে তো ফাঁসলে,,
–
–
–
আসলে ছোঁয়া তপেসের সাথে একা কিছু সময় কাটাতে চায়৷ আমি যেন তাকে ডিস্টার্ব করতে না পারি সেজন্য এখানে রেখে দ্বার বন্ধ করে দিয়ে গেছে৷ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বলে রিয়া।
— তুমি কিছু হারিয়ে ফেলছো?
— না আমি এখনো কিছু হারিয়ে ফেলি নি৷
— তাহলে ফ্লোরে তাকিয়ে কাকে খোঁজে যাচ্ছো?
— আসলে?
সিদ্ধার্থ রিয়ার সামনে এসে রিয়ার কাঁধে হাত রাখে।রিয়ার কাঁধে হাত রাখতেই রিয়া কেঁপে উঠে৷ রিয়ার শ্বাস ঘন হয়ে আসে৷
— ও সরি আসলে আমি বুঝতে পারিনি৷
— ঠিক আছে? এখানে বসো৷
— ওকে,,
— রিয়া তোমার কোন কোন বিষয় গুলো ভালো লাগে৷
— ভালো লাগে সব গুলোই। কিন্তু?
— কিন্তু কি?
— ছোঁয়াকে ফোন দিয়ে আসতে বলেন? আমি এখান থেকে চলে যাবো৷
–আমি বাঘ নাকি ভাল্লুক আমাকে ভয় পাও কেন?
— আসলে?
— আমার চোখে চোখ রেখে কথা বল।
রিয়া সিদ্ধার্থের চোখে চোখ রেখে সিদ্ধার্থের চোখে হারিয়ে যায়।সিদ্ধার্থ রিয়ার চোখে হারিয়ে যায়। ঠিক তখনই উদয় হয় ছোঁয়া।
–প্রেম পিরিতে হাবুডুবু। হাত তালি দিয়ে রুমে প্রবেশ করে।
রিয়া & সিদ্ধার্থ নিজেদের সংযত করে ফেলে।
— তুই আমাকে এখানে রেখে গিয়েছিলি কেন?
— এখানে রেখে যাওয়ার ফলে তুমি প্রেম করতে পারছো৷
রিয়া কিছু কথা না বলে ছোঁয়াকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
,
,
,
,
রাতে বেলা ছোঁয়া,সিদ্ধার্থ, রিয়া, তপেস রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে আইসক্রিম খেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ছোঁয়ার সাথে যা ঘটে তা দেখার জন্য তারা কেউ প্রস্তুত ছিল না৷
চলবে,,,,
বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা ঠিক ভাবে লিখতে পারছি কিনা তা জানাবেন৷ আমি নতুন লেখক। কেমন লিখতে পারি জানা নেই৷ যদি আপনাদের উৎসাহ পায় তাহলে লেখার প্রতি আলাদা একটা ফিলিংস আসে।
সকলের জন্য শুভ কামনা রইল।
চলবে,,,
#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_০১
#অধির_রায়