#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব : ১৯
” স্বামী স্ত্রীকে সময় দেয় না দেখে স্ত্রীর হাতে স্বামীর নির্মম মৃত্যু”
আদ্রাফ চোখ বাকিয়ে তাকায় মেহেরের দিকে। মেহের রাগে ফোঁস ফোঁস করে চলছে। আদ্রাফ মনে মনে ভাবে যে……….”এই মেয়ে কি ওর খুনের পরিকল্পনায় মেতে আছে নাকি?’
.
.
আদ্রাফ প্রশ্নবোধক কন্ঠে মেহেরকে প্রশ্ন করে……
—-এনি প্রবলেম মেহু?
.
আদ্রাফের শান্ত গলা মেহেরকে যেন আরও চক্রবৃদ্ধিহারে রাগের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। একটা মেকি হাসি দিয়ে সে প্রতিউত্তরে বলে…….
.
—-নাহ তো? আমার কি প্রবলেম হবে? আমি তো জাস্ট নিউজ পড়ছিলাম।
.
—-ওহ্।
এটা বলেই আদ্রাফ আবার নিজ কাজে মনোনিবেশ করে। মেহেরের রাগ এবার আর ধরে রাখে কে। কত সুন্দর করে আদ্রাফের এটেনশন পাওয়ার জন্য থ্রেড দিয়েছিলো সেটা আর কাজে লাগলো না ভাবতেই মেহেরের মন চাচ্ছে কবর খুঁড়ে মরে যেতে।আদ্রাফকে অবাক করে দিয়ে ওর ট্যাব কেড়ে পাশে থাকা ছোট টেবিলে মেহের ট্যাবটা রেখে দেয়। আদ্রাফ গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে।মেহেরের দিকে ঘাড়টা হালকা কাত করে সে বলে……….
.
—–আমি তো কাজ করছিলাম। ট্যাব নিয়ে নিলে কেন?
.
আদ্রাফের প্রশ্নে ভ্রুক্ষেপ না করে মেহের চড়ে বসে আদ্রাফের ওপরে। মেহেরের কাজের জন্য আদ্রাফের অবাক হওয়ার প্রবণতাটা যেন ধাপে ধাপে বেড়ে গিয়েছে। মেহের হালকা নিচু হয়ে আদ্রাফের মুখের কাছে আসে। পরিবেশটা কেমন যেন স্তব্ধ। মাথার উপর ঘূর্ণায়মান ফ্যান থাকলেও আদ্রাফের উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে কান থেকে যেন ধোয়া বের হচ্ছে মেহেরের। মেহের কিঞ্চিত ক্রোধের সাথে বলে ওঠে……….
.
—–এত আনরোম্যান্টিক কেন তুমি? আমার মতো এত কিউট বউ থাকতেও সারাদিন অফিস , ট্যাব , ল্যাপটপ নাহয় ফাইল…………আমারে কি তোমার চোখে পড়ে না।
.
মেহেরের কথা শুনে আদ্রাফ সন্দিহান দৃষ্টিতে বলে……
.
—–তুমি কি রোম্যান্টিকতার ওপর পি.এইচ,ডি করেছো নাকি?
.
আদ্রাফের ভ্রু নাচানো দেখে মেহেরের চোখ বন্ধ করে নেয়। এই ছেলের মারাত্নক চাহিনী কবে জানি তার জানই কেড়ে নিবে। একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে মেহের বলে……..
.
—–হ্যাঁ করেছি। তো? তোমাকে তো একফোটাও শিখাতে পারলাম না।
.
মেহেরের ঠোঁট উল্টানো দেখে আদ্রাফ দুষ্টু হাসি হাসে। এত বড় অপবাদ সে তো কিছুতেই নিতে পারবে না। আচমকা মেহেরের কোমড় জাপ্টে তাকে বিছানায় ফেলে তার ওপর নিজের ভর ছেড়ে দেয় আদ্রাফ। আদ্রাফের দুষ্টু হাসি দেখে মেহেরের চোখ যেন ছানাবড়া হয়ে গিয়েছে। আদ্রাফ নিজের মুখটা আস্তে করে মেহেরে কানের কাছে নিয়ে যায়। হিসহিসিয়ে বলে………..
.
——আমি অনেক আনরোম্যান্টিক। এটাই তো বললে? তো চলো আজ তোমার থেকে একটু ট্রেনিং নিয়ে নেই। In this Moonlight night………..Just you & me……..
.
মেহেরের রক্তপ্রবাহ যেন স্থির হয়ে গিয়েছে যেন আদ্রাফের কথা শুনে। এতদিনের পুষিয়ে রাখা সাহস আদ্রাফের উত্তপ্ত কন্ঠে নিমিষেই যেন স্রোতপ্রবাহ হয়ে এলো। আদ্রাফের চোখের দৃষ্টির মেহেরকে অন্যকিছুই বোঝাচ্ছে। যেই কালো চোখযুগলের বাহারে রয়েছে একরাশ মায়ার সমাহার। আদ্রাফের শীতল ঠোঁটযুগল চুম্বকের মতো আকৃষ্ঠ করছে মেহেরকে।
একটা শুকনো ঢোক গিলে মেহের আদ্রাফকে প্রশ্ন করে………
.
—–ট-ট-ট্রেনিং ন-নিবে ম-মমানে?
.
আদ্রাফ একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে ওঠে——আমি practically নাহয় দেখাই ?
.
এটা বলেই আদ্রাফ এক এক করে নিজের সমস্ত শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে। মেহেরের দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে। ওর সব পরিকল্পনা ভাবনাকে বিফলে ফেলে নতুন অনুভূতি বিরাজ করছে আদ্রাফের জন্য। ঘরের মৃদু আলোয় আদ্রাফের শার্টলেস বডি দেখে মেহেরের যেন অজ্ঞান হওয়ার মতো উপক্রম। চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নেয় সে।
.
আদ্রাফ এবার অবুঝ হওয়ার ভান করে বলে ওঠে………
.
—–OMG ! মেহু বেবি……….তুমিই তো বলেছিলে আমি আনরোম্যান্টিক। কই তোমার কাছ থেকে একটু ট্রেনিং নেবো আর তুমিই চোখ খিচে শুয়ে আছো। This is not fair…….
.
—–তোমার fair এর গুষ্টি কিলাই ! আল্লাহর ওয়াস্তে শার্টটা পড়ো আদ্রাফ।
.
মেহের চোখ খিচেই কাতরতার সাথে বলে। মেহেরের এমন ভাবভঙ্গি দেখে আদ্রাফ ঠোঁট কামড়ে হাসছে যা চোখ বন্ধ করে রাখার জন্য মেহের স্পষ্ট দেখতে পারছে না।আদ্রাফ এবার নিজের দুহাত দিয়ে মেহেরের দুহাত বালিশের ভীড়ে আগলে নেয়। মেহেরের কথার কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে মুখ ডুবিয়ে দেয় মেহেরের গলায়। মেহের স্পষ্টভাবেই আদ্রাফের আদুরে স্পর্শ অনুভব করতে পারছে। আবেশে আদ্রাফের চুল খামচে ধরতেই আদ্রাফ যেন আরো মাতাল হয়ে যায় ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ আরও গভীর করতেই আদ্রাফ মেহেরের কানের কাছে মৃদু কন্ঠে বলে……
.
——এখন তো আমি রোম্যান্টিক বয় হয়েছি তাই না? এবার নাহয় হটি-নটি বয় হয়ে দেখাই?
.
——মোটেও না।
.
মেহেরের এই কথাটা এতটাই জোরে বলে যে আদ্রাফের কানের পর্দা মোটামোটি ছিড়ে গিয়েছে। খানিকটা বিরক্তিসুরে মেহেরের দিকে তাকাতেই মেহের হালকা উঠে ওর ঠোঁটজোড়ায় কড়াকড়িভাবে একটা কামড় লাগিয়ে দেয়। ব্যস আদ্রাফও তড়িৎ গতিতে সরে আসে মেহেরের কাছে থেকে। অবাকের ন্যয় বলে ওঠে………
.
——তুমি কি মানুষ নাকি পেত্নী ! এভাবে কেউ কামড় দেয়?
.
মেহের উঠে বসে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। আদ্রাফের সান্নিধ্যে আর কিছুক্ষণ থাকলে এখনই ওকে পিজি হসপিটালে ভর্তি হতে হতো। ক্লান্তি কন্ঠে আদ্রাফকে বলে……….
.
—–তো কি করবো আমি? তুমি যা শুরু করেছিলে………..
.
—–কি শুরু করেছিলাম?
.
মেহের চুপসে যায়। আদ্রাফ বেশ ভালোমতোই ক্ষেপে আছে। মেহের এবার এক কানে হাত দিয়ে বলে ওঠে…….
.
—–সরি………..খুব ব্যথা লেগেছে?
.
—–একটা পেত্নী কামড় দিয়েছে আমাকে। ব্যাথা লাগাটা কি স্বাভাবিক নয় !
.
মেহের মুখ চুপসে বসে থাকে। আদ্রাফের গোলাপি ঠোঁটদুটো কামড় দেওয়ার কারনে একেবারে লাল হয়ে আছে। মেহের মিনতির সুরে বলে ওঠে………
.
—–সরি বললাম তো। প্রমিজ আর কখনও এমন করবো না।
.
—–শুধু সরি দিয়ে হবে না।
.
—–তাহলে?
.
মেহেরের কথার উত্তর না দিয়ে মেহেরকে ধাক্কা দিয়ে পুনরায় খাটে ফেলে ওর গলায় মুখ গুঁজে আদ্রাফ শুয়ে থাকে। মৃদু গলায় মেহেরকে বলে………..
.
—–আমার রাগ আর ব্যাথা দুটো কমানোর জন্যই বেস্ট ঔষধ আমার মেহু। So এখন আমি এভাবেই ঘুমাসবো। একটু নড়াচড়া হবে তাহলে একটা লম্বা লাভ ডোজ দিবো।
.
আদ্রাফের উন্মুক্ত বুকের সাথে নিজেকে অনুভব করতেই মেহের যেন নীরব হয়ে যায়। যতই আদ্রাফের ওপর রাগ হয়ে যাক না কেন………..এই ছেলের কথার জালিয়ে মেহের নিজেকে অন্যরাজত্বে হারিয়ে ফেলে। আদ্রাফ চোখ বন্ধ করে প্রায় ঘুমের জগতে পা দিয়েছে। নিঃশ্বাস-প্রঃশ্বাসের খেলার সাথে বারবার ওর ওষ্ঠ্যদ্বয় স্পর্শ করতে মেহেরের গলা আর ঘাড় কে। মেহের একপাশে দুর্ল চোখে শার্টটির দিকে তাকায়। অবহেলায় শার্টটি পড়ে আছে খাটের অপর প্রান্তে। মেহের বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে…………
.
——ওই শার্ট ! তুই আদ্রাফের গায়ে থাকতে পারলি না?এত হট বডি দেখে তো আমারই মাথা হাই ভোল্টেজের হয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর নিজের উদ্ভট কথা ভেবে নিজেই খুব অবাক হয়ে যায় মেহের। ভারক্রান্ত হওয়ার কারনে মাথার তার যে ওর ছিড়ে গিয়েছে এই নিয়ে সে একশ পার্সেন্ট নিশ্চিত।
.
.
.
.
আজ ভার্সিটর ক্লাস শেষ করে নাদিয়ার সাথে কথা বলতে বলতেই মেহেরের হঠাৎ চোখ যায় ক্যান্টিনের ওই পরিত্যাক্ত টেবিলটার দিকে। শাওন আর ওর বন্ধুরা সবাই আড্ডা মজলিশে মতে আছে সেখানে। সেই দুর্ঘটনার পর আজই শাওনকে প্রথম দেখলো মেহের। যদিও এই কয়েকদিনে চেহারায় বিন্দুমাত্র পরিবর্তনের কোনো রেশ দেখা যায়নি তবুও মেহেরের মনে হচ্ছে ছেলেটা মানসিকভাবে হয়তো খুবই দুর্বল। মেহের সেদিকে যেতেই নাদিয়া বাধা হয়ে দাঁড়ায়;
.
—-এই মেহের? শাওন ভাইয়ের কাছে যাচ্ছিস কেন ?
.
—–কথা আছে শাওন ভাইয়ের সাথে?
.
—–দেখ মেহের? ইচ্ছাকৃতভাবে বাঘের খাচায় যাচ্ছিস কেন?
.
বিরক্তিসুরে মেহের বলে….—উহ ! বললাম তো কথা আছে।
.
নাদিয়াকে আর কোনো সাফাই না দিয়ে মেহের শাওনের কাছে যায়। হঠাৎ মেহেরকে এভাবে আসতে দেখে শাওনসহ ওর সব বন্ধুরাই অবাক। শাওন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে শোভাকে বলে…….
.
——কি রে শোভা? এই মেয়ে কি নিজ থেকে অপমান হওয়ার জন্য আসছে নাকি?
.
শাওনের বিহেভ থেকে নিশা বরাবরই অবাক হচ্ছে। কত নিঁখুত অভিনয়টাই না শাওন করতে পারে। মেহের শাওনের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে ওর মুখের ওপর প্রশ্ন ছুঁড়ে বলে…….
.
—–সেদিন আপনি হসপিটালে আমায় দিয়ে আসার পর আর দেখা করতে আসেননি কেন?
.
—–What ?
.
—-বুঝেননা? আপনি আমায় সেদিন বাঁচিয়েছেন আমি তা জানি। তো এসব নাটক কিসের? আপনি সেদিন আমার সাথে দেখা করতে আসেননি কেন?
.
শাওন মেহেরের কথাটা শুনে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। হাতে থাকা বাইকের চাবিটা পকেটে গুঁজে মেহেরের কাছে দাঁড়ায় সে। মেহেরের উৎসুক দৃষ্টি বরাবরই শাওনের বিলাই চোখ দুটোর দিকে। শাওন নির্লিপ্ত গলায় বলে ওঠে……..
.
——কে হও তুমি আমার? যে আমি তোমার সাথে দেখা করে আসবো? বলো , কি হও তুমি আমার?
.
শেষের কথাটিতে শাওন বারবার আটকে পড়লেও তা সবাই বুঝতে পারেনি। মেহের ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে শাওনের দিকে। আসলেই তো। শাওন কি হয় ওর যে এত বড় এক্সপেক্টেশন নিয়ে বসে ছিলো ? অদ্ভুভাবেই শাওনকে মেহেরের বড্ড আপন লাগে যদিও শাওন কখনোই এমন কিছু করেনি।
.
শাওন এবার মেহেরের হাত চেপে ধরে। খুবই জোরে। চিল্লিয়ে বলে ওঠে………..
.
——-চেষ্টা করবে আমার থেকে ১০ হাত দূরে থাকতে। খুবই খারাপ মানুষ আমি। তোমাকে বাঁচিয়েছি তোমার হাজবেন্ট thanks বলেছে ব্যস! You may go now!
.
শাওন মেহেরের হাত ছেড়ে দিতেই মেহের নীরবে চলে যায় সেখান থেকে। শাওন নিজের চোখ ফিরিয়ে নেয়। মেহেরকে তার আসল পরিচয় থেকে দূরে রাখতে আর কোনো উপায় ছিলো না। নিশা ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে শাওনের দিকে। শাওনের এত চাপা কষ্ট মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। নিশার বিশ্বাস। এমন একদিন আসবে যেদিন শাওনের অগোছালো মনে কারও জন্য স্মিত হাসি থাকবে।
.
.
.
.
.
.
~চলবে
[আয়াতের পায়ের ওপর নিজের পায়ের ভর রেখে আমি মিশে আছি তার বুকের সাথে। সমুদ্রের উদাসীন ঢেউগুলো দুজনের হাটু বরাবর আছড়ে পড়ছে। তার চোখে মুখে আমি দেখতে পারছি একরাশ মুগ্ধতার হাসি। আচ্ছা………..উনি এতো সুন্দর কেন? সাহিত্যিকরা তো বলে সৌন্দর্য নাকি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য। তাহলে উনি কেন এক পাহাড় সৌন্দর্য নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন?
—-কি ভাবছো?
আয়াতের কথা ধ্যান ভাঙ্গে আমার। তার বুকে নিজের মুখ ডুবিয়ে বলে উঠি…..
—-আপনার সৌন্দর্য নিয়ে গবেষণা করছি।আপনার এই সুদর্শন চেহারা দেখে মাঝে মাঝে আমার প্রচুর হিংসে হয়।
আয়াত সশব্দে হেসে ওঠে। তারপর আমার কানে নেশাতুর কন্ঠে বলে ওঠে……..
—-আমাদের বিয়ের পর তোমার সাথে একেবারে মিশে আমার সৌন্দর্য তোমাতে বিলিয়ে দেবো নে। তখন আর হিংসে করতে হবে না। বুঝেছো মাইশু?
আমি তার ফিসফিসানো কন্ঠ শুনে লজ্জায় গুটিয়ে নেই নিজেকে। রাতের আকাশে চলছে শততারার খেলা। দক্ষিণা হাওয়ার সাথে সমুদ্রের ঢেউয়ের স্পর্শে ক্রমাগত মাতোয়ারা হয়ে পড়ছি আমি।
.
‘আরহাম আয়াত”। যেই নামটা শুনলেই মনে সব আজগুবি চিন্তাগুলো আমার কাজ করে। তার প্রতিটা মুহূর্তই আকর্ষণ করেছে আমার হৃদয় ; যার সূচনা হয়েছিলো এই সিন্ধুপাড়ের কাছেই। মাঝে মাঝে তো ভাবি ; ভাগ্যিস সেই দিন পালিয়ে সদরঘাটের লঞ্চে উঠেছিলাম। না উঠলে হয়তো আয়াত নামের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে জীবনে অনুভবই করতে পারতাম না।
.#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন
অন্তিম পর্ব
.
ঘ্ড়ির কাটা ৬টা ৩০ ছুই ছুই। পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবে দেখা যাচ্ছে রক্তিম আভা। শহরের কোলাহলপূর্ণ দালানকোঠা পেরিয়ে গাড়িটি এগিয়ে যাচ্ছে সবুজ সমারোহের পরিবেশের দিকে। মেহের অবাক নয়নে উপভোগ করছে পরিবেশটুকু। কিছুটা কৌতুহলের সাথে আদ্রাফের দিকে তাকায় সে। আদ্রাফ আজ ব্লু ডেনিম প্যান্টের সাথে পড়েছে হোয়াইট শার্ট। গলার কাছে ব্রাউন সানগ্লাসটি ঝুলিয়ে রেখেছে। তবে বরাবরের মতো এবার সেই গম্ভীরতাটি আর নেই ; রয়েছে স্মিত হাসি।
——আমরা কোথায় যাচ্ছি আদ্রাফ?
.
——ইটস সারপ্রাইজ !
.
আদ্রাফের প্রতিউত্তরে মেহেরের কৌতুহলতাটি যেন আরও দ্বিগুন হারে বেড়ে যায়। তবুও এবার আদ্রাফকে কিছু জিজ্ঞেস করেনা যেহেতু সে বলেই দিয়েছে যে এটা সারপ্রাইজ। পশ্চিম আকাশের রক্তিম আভাটা এবার অনেকটাই মিলিয়ে গিয়েছে। পরিবেশে ঘনিয়ে পড়েছে অন্ধকার। আর এই আবছা অন্ধকারে মেহেরকে দেখতে খুবই মায়াবী লাগছে। তার পরনে হলুদ কামিজটি যে ফর্সা গায়ে নিঁখুতভাবে ফুটে উঠেছে। আদ্রাফ তা দেখে বলে…….
——মেহু?
——-হুম?
——-আজ তোমায় খুব সুন্দর লাগছে। এক কথায় যাকে বলে হলদে পরী।
——-এই প্রথম আমায় সুন্দর বললে। আর এতদিন তো আমায় উল্টাপাল্টা নাম ধরে রাখতে।
ভ্রু কুচকে ফেলে আদ্রাফ। অবাক স্বরে বলে……….
——যেমন?
.
——এই যে : শাকচুন্নি , ডাইনী ব্লা ব্লা ব্লা।
.
আদ্রাফ সশব্দে হেসে দেয় মেহেরের কথা শুনে। গাড়িটা অন্যদিকে বাকিয়ে বলে……
——-আরও একটা নাম ধরে ডাকতাম।
——–কি?
——-শ্যাওড়া গাছের পেত্নী।
একথা বলেই আদ্রাফ ঠোঁট চেপে হাসি থামানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে। মেহের চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে আদ্রাফের দিকে। এই আদ্রাফ যতটা গম্ভীর সেজে থাকে ততটাও গম্ভীর না। ওর হাস্যোজ্জল রূপটা আদ্রাফ শুধু কাছের মানুষের কাছেই প্রকাশ করতে ভালোবাসে। বাইরে ঠান্ডা প্রবাহের কারণে গাড়ির গ্লাসটা আদ্রাফ খুলে দেয়। বাইরে বৃষ্টি বৃষ্টি ঘ্রাণ আসছে। অর্থাৎ যেকোনো সময়ই বৃষ্টির দাপটে এই পরিবেশ উন্মাদনায় মেতে যাবে। গাড়ি যতই দূরে যাচ্ছে ততই ঝিঁঝিঁ পোকার সমাগম যেন বাড়ছে।
মেহের চোখ বাকিয়ে আদ্রাফের দিকে তাকায়। সড়কের লাইটের মৃদু হলদে আলোটি আবছা ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে আদ্রাফের শুভ্র রঙের শার্টে। হাতের নীল রগগুলোও অনেকটা আবেদনময় করে তুলছে আদ্রাফকে যার দিকে একটা লম্বা সময় তাকিয়ে ছিলো মেহের।
ভাবতেই অবাক লাগে এই চমৎকার পারসোনালিটির ছেলেটা ওর লাইফ পার্টনার। যার প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রেই রয়েছে শুধুমাত্র মেহুর নাম।
.
গাড়িটি যে কখন থেমে গেলো মেহের যেন তা টেরই পেলো না। একটা লম্বা সময় সে আদ্রাফের ঘোরে ছিলো। আদ্রাফ মেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে মেহের একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তাই সে মেহেরের চোখের সামনে চুটকি বাজায়।
——-হ্যালো ! এসে পড়েছি আমরা?
.
——-হুমমমম? এসে পড়েছি?
.
——-হ্যাঁ।
.
——–মেহের গাড়ি থেকে নামতেই আদ্রাফ হাত চেপে মেহেরকে নিজের কাছে নিয়ে আছে। চোখে মুখে রয়েছে কিঞ্চিত অবাকতার ছাপ।
——–এতক্ষণ আমার কথা ভাবছিলে?
.
আদ্রাফের কথায় মেহের বিভ্রান্তিতে পড়ে গিয়েছে। একে তো এই নীরব পরিবেশে নিজের আর আদ্রাফের হৃদস্পন্দন স্পষ্ট শুনতে পারছে সে। আমতা আমতা করে সে বলে ওঠে……….
.
———-আ-আ-আসলে এ-একটু অন্য ধ্যানে ছিলাম। এখন এসব কথা রাখো না। আমি একটু দেখতে চাই যে তুমি আমায় কোথায় নিয়ে এসেছো?
.
——ওকে।
.
.
.
.
একটা অন্ধকার পথ দিয়ে এগোচ্ছে দুজনে। দুজনের হাতেই রয়েছে মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট যার আলোতে অন্ধকার কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না।মেহেরের কোতূহলটা এবার রূপ নিয়েছে ভয়ে। কেমন যেন গা ছমছম করা পরিবেশ। এমনিতেও আকাশে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে যার জন্য ওর কেমন যেন লাগছে। আদ্রাফের বাহু খামচে ধরে বলে…….
.
——এই আদ্রাফ ! আমারে কি এখানে খুন করার জন্য এনেছো নাকি?
.
——-What rubbish ! বললাম তো সারপ্রাইজ আছে!
.
—–ধ্যুর ! রাখো তোমার সারপ্রাইজ । ভূতে আমাদের ঘাড় মটকে ওদের বউ বাচ্চা নিয়ে সারপ্রাইজ পার্টি করবে।
.
——করবে না।
.
——কেন?
.
——ভূতে কখনও শ্যাওড়া গাছের পেত্নীর ঘাড় মটকাবে না।
মেহের চোখ পাকিয়ে তাকাতেই আদ্রাফ সিটি বাজাতে বাজাতে একটু এগোতে গেলেই মেহের চিল্লিয়ে বলে ওঠে…….
.
——এই ছ্যামড়া ! আমারে রেখে যাও কেন?
.
একথা বলেই আদ্রাফের হাত ধরে সে। আদ্রাফ বিনিময়ে আর কিছু না বলে এগিয়ে যেতে থাকে। দু তিন মিনিট কাচা রাস্তা দিয়ে হাটার পরপরই তারা এসে থামে একতল বিশিষ্টবেশ বড়সড় একটি বাড়ির সামনে। আশপাশ নারিকেল আর সুপারি গাছ দিয়ে ঘেরা। দক্ষিণ দিকে বয়ে যাচ্ছে ছোট্ট একটি খাল। সেখানে একটি বড় বটগাছ দেখে মেহেরর কাছে ওই জায়গাটি ভুতের ডিস্কোক্লাব মনে হচ্ছে।আদ্রাফের দিকে না তাকিয়েই সে বলে……..
.
——এটা কার বাড়ি?
.
——আমার বাড়ি। দেড় বছর আগেই কিনেছি এক বৃদ্ধ দম্পতি থেকে। তারা এখন তাদের ছেলেমেয়ের কাছে আ্যমেরিকায় চলে গিয়েছেন।
.
——ওহ !
.
.
.
বাড়িটা বেশ বড় হলেও অনেক সাদামাটা ধরনের। একমাস পরপর লোক দিয়ে আদ্রাফ এটা পরিষ্কার করায় তবে এখানে ধুলোবালির পরিমাণ কিছুটা কম বলে তেমন অপরিষ্কার হয় না আর সাফ করতেও কষ্ট হয় না। চারটা বেডরুম , সাথে এডজাস্ট ওয়াশরুম , তিনটা বারান্দা , কিচেন আর লিভিং রুম সবমিলিয়ে বাসাটা আসলেই খুব বড়। তবে মেহেরের মনে হচ্ছে বাইরের পরিবেশটা এর থেকে আরও বেশি সুন্দর।
.
——-পছন্দ হয়েছে? [আদ্রাফ]
——-অনেক……………..চমৎকার সারপ্রাইজ এটা।
——-আমি কি একবারও বলেছি এটা আমার সারপ্রাইজ?
.
মেহের অবাক চোখে তাকায় আদ্রাফের দিকে।
——মানে? তাহলে সারপ্রাইজ কোনটা?
আদ্রাফ মেহেরের পেছনে গিয়ে রুমাল দিয়ে চোখ বেঁধে দেয় মেহেরের। তারপর কানে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে……..
.
—–Just some more time Mehu……
.
আদ্রাফের কন্ঠ শুনে মেহেরের চাঞ্চল্যতাটি স্থির হয়ে গিয়েছে। তার চোখের সামনে সবকিছু লাগছে অন্ধকার। আদ্রাফের হাত ধরে মেহের এগিয়ে যাচ্ছে বাইরের। একরাশ ঠান্ডা হওয়া মেহেরের দুধে আলতা শরীরটিকে অদ্ভুদভাবে গ্রাস করে নিলো। নাকে ভেসে আসছে বৃষ্টির মৃদু ঘ্রাণ। যতই এগোচ্ছে পানির কলকল শব্দটি আরও গভীরভাবে শুনছেসে। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রাফ থামে। তার সাথে তাল মিলিয়ে মেহেরও। আদ্রাফ ওর চোখের রুমাল খুলে দিতেই মেহের পিটপিট করে চোখ খুলে।
প্রথম মেহেরের মনে হচ্ছিলো সে যা দেখছে এগুলো সব ভ্রম। কিন্ত না। সে যা দেখছে সবকিছুই সত্যি। মেহেরের সামনে ছোট্ট একটি ছাউনিযুক্ত ঘর দেখতে পাচ্ছে যেখানে শুধু উপরের ছাদটাই ঢাকা আর চারপাশে পিলার হিসেবে চারটি মোটাবাঁশ দেওয়া আছে। সেখানেই রয়েছে অনেকরকম বেলুন দিয়ে সাজানোর কারনে আরও সুন্দর লাগছে। বেতের টেবিলটির ওপর দুটো হা্যরিক্যান রাখা। আদ্রাফ মেহেরের হাত ধরে সেখানে থাকা ঘাসের গালিচায় বসিয়ে দেয়। মেহেরের ঠিক মুখোমুখি হাটু ভেঙ্গে বসে আদ্রাফ। মিহি কন্ঠে বলে ওঠে……………….
.
—–আমি জানি কি ভাবছো তুমি? মনে চলছে তোমার অনেক প্রশ্ন যে কি উপলক্ষে এমন সারপ্রাইজ । তাই না?
.
—–হুমমমম।
.
একটা লম্বা শ্বাস নেয় আদ্রাফ। তারপর শীতল গলায় বলা শুরু করে……….
.
—–আজ ২০ শে মার্চ। আর ঠিক এই দিনেই আরও দশবছর আগে তোমাকে প্রথম দেখি আমি যেদিন তোমার আর নাদিয়া স্কুলে ফার্স্ট টার্ম এক্সাম ছিলো।
এমনি মেঘাচ্ছন্ন দিন ছিলো সেটা। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে তখন দাঁড়িয়েছিলাম আমি নাদিয়াকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। তখনই স্কুল ছুটি হওয়ার পর অনেক ছেলে-মেয়ে বের হতে থাকে স্কুল দেখে। হঠাৎই আমি একটা দৃশ্য দেখে ভড়কে যাই। দু বেণী করা স্কুল ড্রেস পরিহিতা এক মেয়ে একটা ছেলের কান টেনে বাইরে নিয়ে আসছে। তারপাশেই কাচুমাচু হয়ে এগিয়ে আসছে নাদিয়া।
আমি একটু অবাক হই এ দৃশ্য দেখে। স্কুল গেট থেকে বের হয়েই ছেলেটার কান ছেড়ে দেয় মেয়েটি। আর চিল্লিয়ে বলে ওঠে……….
.
——-সাহস তো কম না তোর? আমার বেস্টিরে প্রোপোজ করস? একেবারে টেংড়ি ভেঙ্গে দিমু নেক্সট টাইম ওর আশেপাশে দেখলে। এখন দূর হ।
.
ছেলেটা চিল্লিয়ে মেয়েটাকে বলে ওঠে……..
——তোরে প্রপোজ করছি কুত্তী? তোর বান্ধুবীরে করসি তুই চেতস ক্যান?
.
——তুই কুত্তা তোর চৌদ্দ গুষ্ঠি কুত্তা। আমি বলসি ওরে লাইন মারবিনা মানে মারবিনা। সর তো।
.
——তোরে আমি দেইখা নিমু মেহের।
.
——ভালোমতো দেইখা নে যিতে নেক্সট টাইম আমার থাপ্পড় খাইয়া আবার আমারে ভুইল্লা যে না যাস। এখন চোখের সামনে থেকে সরবি নাকি লাথথি মারমু?
.
—–যাইতাসি।
.
আমি জাস্ট হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি সেদিকে। তখনই তোমার দস্যু রূপ প্রথমে দেখেছিলাম আমি। আর দেখো সময়ের তালে সেদিন নাদিয়ার বিয়ের সাথেই তোমার আর আমার বিয়ে হয়ে গেলো”
.
এতটুকু বলেই থামে আদ্রাফ। মেহের ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আদ্রাফের দিকে। আদ্রাফ এবার আলতো করে মেহেরের হাত আগলে ধরে বলে………
.
——-তখন থেকেই তোমায় আলাদা চোখে দেখা শুরু করি আমি। তোমার হাসি-কান্না-রাগ-দুষ্টুমি সবকিছুই পাগল করে দিতো আমাকে। আর আজ দেখো? আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখন শুধু তোমার বিচরণ।
.
বেশ কিছুক্ষণ কেটে যায় নিস্তব্ধতা। মেহের এখন বসে আছে পুতুলের ন্যায়। তার ধারনাই ছিলো না যে আদ্রাফ তাকে এত আগের থেকেই ভালোবাসতো।
.
.
.
————–
আজ বারে না গিয়ে শাওন বসে আছে ভার্সিটির বড় পুকুরটির সামনে। আকাশে ঘনঘন বজ্রপাত হচ্ছে তবে সেদিকে পরোয়া না করে শাওন উদাসীনভাবে ঢিল ছুঁড়ে মারছে দীঘির টলটলে পানিতে। আজ চিৎকার করে কাদতে মন চাচ্ছে শাওনের যে কেন মেহেরকে সে বলতে পারলো না ওর আসল পরিচয়। কেন ওকে বলতে পারলো না যে—বোন? আমিই তোমার ভাই। কে বলেছে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই?
আফসোস ! শাওন কিছুই বলতে পারবে না। ওর পাশেই অবহেলিতভাবে পড়ে আছে অনেকগুলো আ্যলকোহলের বোতল। কিন্ত মোটেও নেশা হলোনা এতে। শাওন চেয়েছিলো নেশাটা হোক। একবার নেশাটা চড়ে বসলে আর কোনো কষ্টই হতো না।
.
.
——–শাওন?
.
কারও মেয়েলি কন্ঠ শুনে পিছে ঘুরে সে। নিশাকে দেখা যাচ্ছে। শাওন শীতল কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
——এখানে কেন এসেছিস?
.
——-তোর জন্য।
শাওন একটা ব্যঙ্গ হাসি দেয়। মুখ ফিরিয়ে বলে ওঠে……..
——-আসতে হবে না আমার জন্য। এই শাওন চৌধুরি বড্ড নিঃস্ব মানুষ। তার কেউ নেই।
নিশির বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে।শাওনের পাশে বসে সে আলতো করে শাওনের মুখ আগলে ধরে। দুর্বল গলায় বলে……….
.
——–ক-ক-কে বলেছে কেউ নেই? সবাই আছি। শোভা , রাতুল , রাহাত…….
.
——–আর তুই?
.
চুপ হয়ে যায় নিশা। শাওনের দৃষ্টিতে রয়েছে হাজারো হাহাকার। নিশি মাথা নাড়ায়।
——-আছি তো। সবসময় থাকবো তোর সুখ-দুঃখের ভাগীদার হয়ে !
.
——-সত্যি?
.
——-হুমমম।
.
শাওন এবার নিশির কাধে মাথা রাখে। হয়তো সে আজ পেয়ে গিয়েছে তার পথচলার সঙ্গীকে যার সূচনায় একবারও ভালোবাসি কথাটা বলে হয়নি। শুধু এ সম্পর্কের সূচনাটাই হয়েছে অগাধ বিশ্বাসের সাথে।
.
.
.
.
————
টিমটিম বৃষ্টিটি এখন বয়ে যাচ্ছে মুষল ধারায়। আদ্রাফের বুকে মাথা রেখে মেহের ছাউনির নিচে সে দৃশ্য উপভোগ করতে ব্যস্ত। বৃষ্টির দাপটে দুজনের জামাই আংশিক ভিজে গিয়েছে। শোঁ শোঁ করে বহমান আল্লাহর দান এই হাওয়া। মেহের এবার আদ্রাফকে বাচ্চা কন্ঠে বলে ওঠে……….
.
——চলোনা বৃষ্টিতে ভিজি?
.
——এই রাতে ভিজবে? বৃষ্টি দেখছো এটাই অনেক।
.
মেহের তবুও হার মানে না। আদ্রাফের নাকে চুমু দিয়ে বলে .
.
——তুমিই দেখো বৃষ্টি। আমি একটু ভিজে আসি।
এটা বলেই মেহের বেরিয়ে আসে ছাউনির বাইরে। দুহাত মেলে উপভোগ করতে থাকে বৃষ্টির ছন্দ। পানিগুলো যেন সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে এই প্রথম মেহের রাত করে ভিজলো। যার বর্ণণা মেহের হয়তো নিপুণভাবে দিতেও পারবে না। মেহেরকে এতো প্রাণোচ্ছো্যল দেখে আদ্রারও তৃপ্তির হাসি হাসে। আজ সেও ভিজবে তার হলদে মেহুপরীর সাথে। ছাউনি থেকে বেরোতেই বৃষ্টির ভারী কণাগুণো ওর গা শিরশির করে দিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে সেও ভিজে গেলো বৃষ্টির স্রোতের ধারায়। সামনের ছোট খালও বৃষ্টির ছন্দে মধুময় লাগছে।
মেহের এবার পিছে ঘুরে তাকায় আদ্রাফের দিকে। আদ্রাফের নেশাক্ত দৃষ্টিতে যেন নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলেছে সে। আদ্রাফের সাদা শার্টটি একেবারে গায়ের সাথে লেপ্টে থাকার জন্যে প্রতিটা অ্যাবস স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মেহের তা দেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। এই ছেলেকে সুন্দর বললে ভুল হবে……………ভয়ঙ্কর রকম সুন্দর লাগছে।
.
মেহেরকে অবাক করে দিয়ে আদ্রাফ মেহেরের কোমড় চেপে মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে। আলতো হাতে বুলাতে থাকে মেহেরের ঠোঁটযুগল। মেহেরের গোলাপি ঠোঁটদুটো থেকে অবিরাম ধারায় পানি গরিয়ে পড়ছে যার রাজত্ব আদ্রাফ সহ্য করতে না পেরে দখলে নিয়ে নেয় সেই ঠোঁটজোড়া সাথে আঁকড়ে ধরে সেই ঠোঁটজোড়ার মালিককে। দুজনের কাছেই সময়টা যেন থমকে গিয়েছে।
.
বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রাফ মেহেরের ঠোঁট ছেড়ে দিতেই মেহের আদ্রাফের বুকে মিশে গিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। আদ্রাফ তা দেখে মুচকি হাসে। ভাবতেই আজব লাগে এই দুষ্টুমেয়েটাই তার প্রেয়সী।
আদ্রাফ মেহেরকে আগলেই নিজের গলায় সুর তোলে। কেননা আজ মেহেরের উদ্দেশ্যে গান গেতে খুবই ইচ্ছে করছে। আনমনেই সে গান শুরু করে…..
.
” কেন জানিনা………….মিষ্টি এ ব্যাথা!
থাকছি খেয়ালে…………………ভাছি তোর কথা !
….তোর প্রেমে বৃষ্টিতে হায় ভিজছি সারা দিন !
….তোর প্রেমে বৃষ্টিতে হায় ভিজছি সারা রাত !”💕💕💕
.
আর এভাবেই হয়তো চলতে থাকবে মেহেরাদ্রাফের দুষ্টু মিষ্টি অধ্যায়। হয়তো এভাবেই চলমান থাকবে দুজনের খুনশুটিময় ভালোবাসা।
.
.
.
.
.
.
……..*সমাপ্ত*………..
প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে লিখা এই শেষ পর্বটি। আমি শুরুতেই ভেবে রেখেছিলাম গল্পটি অল্প পর্বে শেষ করবো। তাই মেহেরাদ্রাফ ভক্তরা এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করবেননা আশা করি।
আমার আড়াইঘন্টা ধরে লেখার ফলাফলটা আপনাদের আড়াই মিনিটেরও কম লেখা মন্তব্যে পাবো। গঠনমূলক কমেন্ট করবেন আশা করবো। আর কিছুদিন পরেই নিয়ে আসবো নতুন গল্পটির প্রথম পর্ব নিয়ে। অবিরাম ভালোবাসা।
.
.