#অনেক_সাধনার_পরে
#মাইশাতুল_মিহির
[৩০]
রাতের ঘড়ির কাটা এগারোটা ছুঁই ছুঁই। সবাই শুয়ে পরেছে। জেগে আছে শুধু মিতালী ও শেফালী। দুইজন এখন একই কামরায়। মিতালী টেবিলে বসে আর্ট করতে ব্যস্ত। বেশ কিছুদিন ধরে ক্যানভাসে তুলি চালাতে সময় পাচ্ছে না। আজ মন ভালো নেই। মন খারাপের সময় রঙ-তুলিতে মাতিয়ে রাখে নিজেকে। তার মতে, মন ভালো রাখার ছোট মেডিসিন এই রঙ তুলি।
‘কিছু বলবি তুই?’
শেফালীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়লো মিতালী। রাতে খাবার খাওয়ার পর থেকেই শেফালী তার রুমে ঘুরঘুর করছে। ব্যাপার আচ্ করতে পেরেছে মিতালী। তার বোনের পেটে যখন আকাশ সমান কথা লুকিয়ে থাকে তখন সে মিতালীর পিছু পিছু ঘুরে। এবং সময় বুঝে কাঙ্ক্ষিত কথা পেট থেকে বের করে। আজও নিশ্চয় এমন কিছুই হবে। বিছানার হেডসাইডে হেলান দিয়ে বসে ছিলো শেফালী। বুবুর প্রশ্ন শুনে নড়েচড়ে বসলো। হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে বললো, ‘জিমির সাথে কথা হয় তোমার?’
কপাল কুঁচকালো মিতালী। ঘাড় ফিরিয়ে বোনের দিকে তাকালো। দেখলো সে আগ্রহপূর্ণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো মিতালী। চোখ ফিরিয়ে ছোট করে বললো, ‘না!’
‘কেন? আব্বু নিষেধ করেছে তাই?’
শেফালীর পালটা প্রশ্ন শুনে বিরক্ত হলো মিতালী। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো, ‘জেনে কি করবি তুই? এতো আগ্রহ দেখাচ্ছিস কেন? ছোট, ছোটদের মতো থাক।’
‘দেখো বুবু, ছোট বলে কিন্তু বাচ্চা ভেবো না। মাঝে মাঝে ছোটদের হাতে এমন কিছু আলৌকিত ক্ষমতা থাকে যার মাধ্যমে অনেক… অনেক….. অনেক কিছুইইইই হই।’
শেষের কথা গুলো অস্থির হয়ে টেনে টেনে বললো শেফালী। কারণ মোবাইলে অংকুরের কল এসেছে। মহা খুশি হলো সে। খুশিতে লাফিয়ে উঠলো একপ্রকার। তার হঠাৎ এমন আচরন দেখে অবাক হলো মিতালী। ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। শেফালী কল রিসিভ করে দ্রুত পায়ে বিছানা থেকে নেমে মিতালীর কাছে আসলো। হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘আল্লাহর দোহাই লাগে বোইন, পাষাণ হইছ না। কথা বল তাড়াতাড়ি। আমি যাই পরে এসে মোবাইল নিবো।’ দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো শেফালী।
আহাম্মক হয়ে গেলো মিতালী। হতভম্বের মতো হা হয়ে তাকিয়ে থেকে মোবাইল কানে রেখে বললো, ‘হ্যালো?’
‘তুমি আসোনি মিলি। আমি অপেক্ষায় ছিলাম তোমার।’
অংকুরের কন্ঠ শুনে কপালে পরপর কয়েকটা ভাজ পরলো মিতালীর। কান থেকে মোবাইল নামিয়ে নাম্বার টা ভালো করে দেখলো। বিস্মিত হলো সে। তারপর মোবাইল কানে রেখে বিস্মিত কন্ঠে বললো, ‘আপনি? শেফালীর নাম্বারে কল দিয়েছেন? আর কোথায় যাওয়ার কথা ছিল আমার?’
অংকুর অভিমানি গলায় বললো, ‘আজকে সকালে আমাদের সেকেন্ড টি-ডেইট ছিলো। আমি অপেক্ষায় ছিলাম ঠিকই কিন্তু তুমি আসোনি।’
বিস্মিত হলো মিতালী। চোখ বন্ধ করে ‘উফফ’ বলে তপ্ত শ্বাস ফেললো একটা। জিভ দিয়ে উষ্ঠধয় ভিজিয়ে নিলো একবার। এই ছেলে তাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলো না। বরঞ্চ কন্ঠস্বরে রুক্ষতা এনে বললো, ‘কারণ যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করিনি।’
‘কিন্তু কেন? তুমিই তো বলেছিলে এক কাপ চায়ে চলবে কিনা। হঠাৎ বদলে গেলে কেন? আমার দোষটা কোথায় বলবে প্লিজ? আম্মু যা বলেছে তার জন্য আমি সত্যি স্যরি।’
‘আমি বলেছি তো আপনাদের কারোর উপর আমি রেগে নেই। বারবার স্যরি বলতে হবে না।’
‘তাহলে? এমন করছো কেন আমার সাথে? একদম যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে কেন? জানো আমার দম বন্ধ হয়ে এসেছিলো প্রায়।’
‘দেখুন আপনি যথেষ্ট এডাল্ট। এভাবে টিনেজারের মতো কথা বলবেন না।’
চুপ হলো অংকুর। কিছুক্ষন পর মিহি কন্ঠে আবারো বললো, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই মিলি। ভালোবাসি তোমাকে। সারাজীবনের জন্য পাশে চাই। হুট করে কি থেকে কি হলো তার জন্য এভাবে যোগাযোগ বন্ধ করার মতো যুক্তিক কোনো কারণ দেখছি না। নিব্বা-নিব্বিদের মতো আচরন তোমাকেও মানায় না মিলি। আমাদের উচিত তোমার বাবাকে মানানো। উনার রাগ করাটা স্বাভাবিক। আমি তো ক্ষমা চেয়েছি। দরকার পরলে আবারো চাইবো। কিন্তু তার জন্য তোমাকে পাশে লাগবে আমার। তুমি পাশে থাকলে আমি ভরশা পাবো। তোমার বাবাকে মানানোর একটা প্লাস পয়েন্ট হবে তোমার সম্মতি।’
নিশ্চুপ হয়ে রইলো মিতালী। প্রতিক্রিয়া দেখালো না। মলিন হলো তার মন। খারাপ লাগলো নিজের মাঝে। কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকলো। তারপর মিনমিনে গলায় বললো, ‘আমি আব্বুর বিরুদ্ধে যেতে পারবো না।’
অংকুর শান্ত গলায় আবারো বুঝাতে লাগলো, ‘তোমার বাবার বিরুদ্ধে যেতে কে বলেছে বোকা? তোমার বাবার সম্মতিতেই সব হবে। এখন যেহেতু ঝামেলা হয়েছে সেহেতু আমাদের উচিত উনাকে বুঝানো। তাই না বলো?’
মিতালী ঠোঁট উলটে ছোট করে উত্তর দিলো, ‘হুম।’
‘তাহলে আমরা তাই করবো। দুইজন এক সাথে উনাকে বুঝানোর চেষ্টা করবো।’
‘আব্বু যদি না বুঝে?’
‘তোমার আব্বু তোমাকে অনেক ভালোবাসে মিলি। যদি তুমি রাজি থাকো তাহলে উনি তোমার মতের বিরুদ্ধে যাবে না নিশ্চিত থাকো। ভয় পাবে না যা সত্যি সরাসরি বলবে। বুঝাতে পেরেছি আমি?’
‘হুম।’
স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো অংকুর। এতোক্ষণে বোকা মেয়েটাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে সে। চোখ বন্ধ করে বড় একটা নিশ্বাস নিলো। অতঃপর মিহিয়ে যাওয়া গলায় বললো, ‘তাহলে কি এখন আনব্লক করা যাবে ম্যাডাম?’
মিতালীর কি হলো কে জানে। ‘ ম্যাডাম ‘ ডাকটা শুনে লজ্জাভূতি হলো সে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মাথা নিচু করে ফেললো। হাত বাড়িয়ে নিজের মোবাইলটা নিয়ে আনব্লক করলো অংকুরের নাম্বার। তারপর বললো, ‘করেছি।’
থামলো মিতালী। হঠাৎ একটা প্রশ্ন মাথায় আসতেই বলে উঠলো, ‘কিন্তু শেফালীর নাম্বার কোথায় পেলেন?’
‘তোমার বোনের কাছ থেকেই। মাশাআল্লাহ যা বুদ্ধি তোমার বোনের। এইটুকু সাহায্যের জন্য কায়দা করে এক মাসের নেটফ্লিক্সের বিল নিয়ে নিয়েছে আমার থেকে। ভাবা যায় এগুলা?’
খিলখিল করে হেসে উঠলো মিতালী। তার হাসির আওয়াজ শুনে স্বস্থি হলো অংকুর। নিজেও মৃদু প্রশান্তির হাসি দিলো একটা। বুকের বাম পাশটা এতোক্ষণে শান্ত হয়েছে। শান্তি শান্তি লাগছে তার। বুক ফুলিয়ে লম্বা একটা প্রশান্তির নিশ্বাস নিলো। এতোদিনের জমানো কথার ঝুলি খুলে বসলো মতালীর কাছে। হালকা লাগছে নিজেকে। মিতালিও অংকুরের সম্পূর্ণ অহেতুক, প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় সব কথা শুনতে লাগলো। যেন এক অদ্ভুত রকমের প্রশান্তির ভেলায় ভাসছে সে।
.
ডাইনিং টেবিলে মন খারাপ করে বসে আছেন সুপ্তি। মলিন চোখে তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে। বিবর্ণ তার মুখশ্রী। নিশ্চুপ রাকিব। নিরবতার সাথে দেখে চলছে চাচি ও অংকুরের কাহিনী। মনিরার বিয়ের ঘটনার পর আজ প্রায় সাত দিন হতে চললো। অথচ এখনো মহাশয়ের রাগ কমেনি। চাচির সাথে রেগে বসে আছেন। এই নিয়ে চাচির হতাশার শেষ নেই। ফুঁশ একটা নিশ্বাস ছুঁড়লো রাকিব।
নিঃশব্দে সকালের নাস্তা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো অংকুর। রুম গিয়ে অফিস ব্যাগ ও ল্যাপটপ নিলো। হাতে টাইটেন ব্যান্ডের ঘড়ি পরতে পরতে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। অতঃপর রাকিবের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, ‘তুই চলে আসিস। আমি যাই লেইট হচ্ছে আমার।’
রাকিব বাধ্য ছেলের মতো মাথা কাত করে সম্মতি জানালো। বেড়িয়ে গেলো অংকুর। আহত হলো সুপ্তি। অসহায় হয়ে বললো, ‘ছেলেটা এখনো আমার উপর রেগে আছে। কথা বলছে না আমার সাথে।’
রাকিব পরোটা ছিঁড়ে মুখে দিয়ে বললো, ‘যা একখান প্যাচ লাগাইছেন চাচিজান। এর পরেও যে আপনার ছেলে বাসায় আসে, বাসায় খায় এটাই অনেক। এর বেশি কিছু আশা কইরেন না।’
সুপ্তি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললেন, ‘কি এমন বলেছিলাম শুনি? মেয়েটা একটু মোটা তাই খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোল করতে বলেছি। এতে আমার উপর রাগার কি আছে বুঝে আসছে আমার।’
খাওয়া থামালো রাকিব। চাচির দিকে পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘চাচি? যে কোনো বাবাই তার মেয়েকে নিয়ে এমন উক্তি শুনতে নারাজ। তাছাড়া মেয়েটিকে অংকুর ভালোবাসে। ওই ঘটনার পর মিতালীর বাবা তাকে অংকুরের সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করেছে। তার বাবা রাজি না। এবার বলেন? অংকুরের রাগ করাটা কি স্বাভাবিক না?’
সুপ্তি বেগম কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘তার মানে ওদের মাঝে সম্পর্ক আছে?’
‘না তেমন কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই। অংকুর মিতালীকে পছন্দ করে। ভেবেছিলো কিছুদিন পরেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে। এখন তা ভাবনার মাঝেই রয়ে গেলো। আপনার জন্য আর পাঠানো হলো না। আফসোস!’
আবারো শুরু হলো রাকিবের কথায় কথায় খোঁচা দেওয়া। সুপ্তি বেগম মুখ কালো করে ফেললেন। একদম মায়ের মতো হয়েছে ছেলেটা। জুলির সাথে কোনো ব্যাপারে তার রাগরাগি কিংবা মতের অমিল হলে, কিংবা সে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলেই কথায় কথায় খোঁচা মেরে কথা বলতো জুলি। উঠতে বসতে বারংবার মনে করিয়ে দিতো মেয়েটি। তার ছেলে একদম তারই স্বভাবের। মায়ের একটা নখও ফেলেনি ছেলেটা। রাকিবের বেশিরভাগ চালচলনের মাঝে জুলিকে খোঁজে পায় সুপ্তি। এতো বছর পরেও বন্ধুত্বের স্বাদ অটল রয়েছে তার মনে। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নিরবে। জানতে চাইলেন, ‘যেহেতু ঝামেলা আমি বাধিয়েছি সেহেতু সমাধান আমাকেই করতে হবে। কি করবো এখন বলে দে বাপ।’
চকচকিয়ে তাকালো রাকিব। ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো, ‘বেশি কিছু না। অংকুরকে অবাক করে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান। ব্যাস, মেয়েটিকে পুত্রবধূ বানিয়ে আনেন। বউ পেলে আপনার ছেলে ভালো হয়ে যাবে। পাক্কা!’
শব্দ করে হেসে উঠলেন সুপ্তি। রাকিবের কান মুচড়ে ধরে বললেন, ‘তুই ভালো হবি কবে শুনি?’
আলতো ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো রাকিব। নিজের কান ছাড়িয়ে বলল, ‘কি করেছি আমি?’
‘এইযে কথায় কথায় আমাকে খোঁটা দেন! খোঁচা মেরে হাজারটা কথা শুনান তার বেলা?’
দাঁত কেলিয়ে হাসলো রাকিব। গ্লাস হাতে নিয়ে এক চুমুকে পানি শেষ করে টেবিলে খালি গ্লাস রাখলো। চেয়ার ছেঁড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সুপ্তির কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো, ‘এইদিক দিয়ে জীবনেও ভালো হবো না।’
বেড়িয়ে গেলো রাকিব। সন্তুষ্টি হয়ে প্রশান্তির হাসি দিলো সুপ্তি। এই দুই ছেলেকে নিয়েই তার জীবন। ওদের জীবনের সুখ দেখে মরতে পারলেই শান্তি। প্রাপ্তির হাসি দিলেন একটা।
.
বাহিরের পরিবেশ নিস্থব্ধ। প্রবল বাতাসের সু-সু শব্দ কানে ভেসে আসছে। তবে আকাশটা পরিষ্কার। থেমে থেমে সাদা মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। চাঁদটাও পূর্ণ আজ। যেন আজই সকলের মন ফুরফুরে। যেমনটা মিতালীর। আকাশের সাথে তার মনের মিল বেশ। বিশেষ করে সেদিন অংকুরের বর্ণনার পর থেকেই মিল পাচ্ছে মিতালী। গভীর ভাবে দেখতে গেলে তাই বুঝা যায়। যেদিন তার মন খারাপ, সেদিন আকাশের কালো মেঘ। যেদিন তার মন প্রফুল্লিত সেদিন আকাশটা স্বচ্ছ। আনমনে মুচকি হাসলো মিতালী। কানে হেডফোন লাগিয়ে একটা গান লাগালো। গানটা প্রিয়! ভীষণ প্রিয়!
‘মেঘেদের দেশে কি এখনো তুমি
হারাও আনমনে?
কবিতা কি লেখো এখনো
আমায় ভেবে?
বৃষ্টি নামে যখন তোমার এই শরিরে
আমার ছোঁয়া কি পাও বৃষ্টির সাথে
আনমনে??’
পূর্ণ মনোযোগের সাথে গানটা শুনছে মিতালী। সাথে সাথে আলতোভাবে মাথা দুলাচ্ছে। তখুনি কানে আসলো শেফালী ডাক। কান থেকে হেডফোন খুলে বললো বারান্দায় আছে সে। সেফালী বারান্দায় এসে প্রশ্ন করে বসলো, ‘বুবু তুমি কি অনলাইনে কিছু অর্ডার করেছো?’
শেফালীর এমন প্রশ্ন শুনে ভ্রুঁ কুঁচকালো মিতালী। কাপালে পরলো পরপর কয়েকটা ভাজ। চিন্তিত কন্ঠে বললো, ‘না-তো। কেন কি হয়েছে?’
নিচের ঠোঁট কামড়ে মিতালীর পাশে বসে বললো, ‘কুরিয়ার থেকে কল এসেছে। একটা পার্সেল আমার নামে এসেছে। ওটা কাল নিয়ে আসতে বলেছে।’
মিতালী চুপ থেকে কিছুক্ষন ভাবলো। হঠাৎ তার কিছু একটা মনে পরতেই বলে উঠলো, ‘ওহ হ্যাঁ। ওটা আমার পার্সেল। তোর নাম্বার দিয়েছিলাম আমি। গিয়ে নিয়ে আসিস।’
শেফালী ভ্রুঁ কুঁচকে বললো, ‘কি আছে তাতে?’
‘ফেসবুকে ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতা হয়েছিলো। সেখানে আমার একটা ক্যালিগ্রাফির ছবি দিয়ে পার্টিসিপেট করেছিলাম। ৫ তারিখ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম হয়েছি আমি। সেটারই পুরষ্কার পাঠিয়েছে।’
‘ওহ আচ্ছা। কিন্তু আমার নাম্বার কেন দিলে?’
‘আসলে আমার মন ভালো ছিলো না তখন। তাই তোর নাম্বার দিয়েছি।’
আরো কিছুসময় বসে কথা বললো দুজন। অতঃপর শেফালী বিদায় জানিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। একা হয়ে গেলো মিতালী। মোবাইলের দিকে তাকালো। হতাশ হলো সে। কাল রাতের পর থেকেই অংকুর লাপাত্তা। সকাল থেকে এখন অব্ধি না দিয়েছে কল, না দিয়েছে ম্যাসেজ। হঠাৎ গেলো কোথায় লোকটা? চিন্তায় পরলো মিতালী। ক্ষুন্ন হলো মন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে চলে আসলো।
#অনেক_সাধনার_পরে
#মাইশাতুল_মিহির
[৩১]
আজ সারাটা দিন বিষন্নতায় কেটেছে মিতালীর। ক্ষুন্ন মনে রুমে বসে ছিলো পুরোটা দিন। মন খারাপ থাকায় ক্যানভাসে তেমন মনোযোগ দিতে পারেনি। তাই রঙতুলি নিয়েও বসে নি। শেফালী ছিলো কলেজে। বিকেলে এইটুকু সময়ের জন্য দুজন আড্ডা দিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু পড়ার জন্য শেফালী নিজের রুমে পাড়ি জমিয়েছে। একাকিত্ব যেন আজ আঁকড়ে ধরেছে মিতালীকে। দীর্ঘক্ষণ পর মোবাইল হাতে নিয়ে সময় দেখলো অনেক রাত। ঘড়ির কাটা প্রায় এগারোটা ছুঁই ছুঁই। অংকুর কাল থেকে এখন অব্ধি একটাও কল দেয়নি। হঠাৎ কি হয়েছে মানুষটার? দুইদিন কোনো রকম খোঁজ খবর ছাড়া কিভাবে থাকতে পারলো? এতোই ব্যস্ততা ছিল তার? অন্যসময় তো ব্যস্ত থাকলে ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দিতো। তাহলে এই দুইদিন কি হলো? ক্ষুন্ন হলো মন। কান্না পেলো ভীষণ। আসলে তার মতো মোটা মেয়েদের কেউ ভালোবাসবে না। যদিও বাসে তবে তা সাময়িক সময়ের জন্য। এটাকে তাহলে ভালোবাসা বলে না। এটা হচ্ছে মোহ। মোহ কিছুদিন পর কেটে যায়। ঠিক মাদকের মতো। কিন্তু ভালোবাসা দীর্ঘস্থায়ী। সারাজীবন বেঁচে থাকে। যদি অংকুর ভালোবাসতো তাহলে একটা হলেও কল দিতো। কিন্তু সে দেয়নি। এতোদিন তাহলে মিথ্যে আশ্বাস দিলো আমায়?
মনের মাঝে যখন অংকুরের বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ তুলছিলো মিতালী, তখুনি কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটির কল আসলো মোবাইলে। খুশি হওয়ার কথা ছিলো মিতালীর। কিন্তু খুশি হলো না। অভিমান চেপে বসলো মনের সুপ্ত কোণে। প্রথমে কল ধরেনি। রিং হয়ে কেটে গেছে। আবারো মোবাইলটা কেঁপে উঠলো। এবার উপেক্ষা করলো না মিতালী। কল রিসিভ করে নিঃশব্দে কানে দিয়ে বিছানায় বসে রইলো। মোবাইলের অপরপাশ থেকে অংকুরের মোলায়েম কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো,
‘মিলি?’
চুপচাপ বসে রইলো মিতালী। কথা বলবে না সে। আকাশ সমান অভিমান জমেছে বুকে। এই অভিমান এতো সহজে ভাঙ্গাবার নয়। তাকে নিশ্চুপ দেখে আলতো ভাবে হাসলো অংকুর। আবারো বললো, ‘মহারানী তবে অভিমান করেছে আমার উপর? কথা বলবে না?’
এবার মুখ খুললো মিতালী। অভিমানি কন্ঠে বলে উঠলো, ‘আসলেই আপনার সাথে আর কথা বলবো না। দুইদিন ধরে নিখোঁজ আপনি। একটা কল অব্ধি করেন নি। ছিলেন কোথায়?’
‘অফিসের কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম।’
অভিমান এবার রাগে পরিণত হলো। তেঁতে উঠলো শরির। কন্ঠ রুক্ষ করে বলে উঠলো, ‘জানিয়ে যেতে বারণ কোথায়? আর কি এমন ব্যস্ত ছিলেন যে একটা কল কিংবা ম্যাসেজ দিয়েও জানাতে পারেন নি?’
অংকুর মৃদু গলায় বললো, ‘বারান্দায় আসো তো একবার।’
এমন কথা শুনে ভ্রুঁ কুঁচকালো মিতালী। বারান্দায় যাবে কেন? বুঝতে পারার পর হঠাৎ-ই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। দ্রুত বিছানা থেকে নেমে এক প্রকার দৌড়ে বারান্দায় আসলো। রেলিং’এর কাছে দাঁড়াতেই দূর প্রান্তে অংকুরকে দেখতে পেলো। নিস্প্রভ চোখে তাকিয়ে রইলো অংকুরের দিকে।
প্রশান্তির হাসি দিলো অংকুর। বলল, ‘তোমাকে খুব মিস করছিলাম মিলি।’
মিতালী শক্ত গলায় কাটকাট ভাবে বললো, ‘তাইতো কল কিংবা ম্যাসেজ কোনোটাই দেননি। এই আপনার মিস করা?’
হতাশার নিশ্বাস ছুঁড়লো অংকুর। কন্ঠে অসহায়ত্ব ফুটিয়ে বললো, ‘বস ছিলো সাথে তাই কল দিতে পারিনি। যদি বউ হতে তাহলে কিছু একটা বলা যেতো। তবুও চেষ্টা করেছিলাম। দুইদিন খুব ব্যস্ততায় কেটেছে। একটু আগে চট্টগ্রাম থেকে ফিরেছি। এখনো বাসায় যায়নি। তোমাকে এতোটাই মিস করছিলাম যে ডিরেক্ট এখানে চলে এসেছি।’
অংকুরের সম্পূর্ণ কথা গুলো শুনলো মিতালী। কিন্তু গায়ে লাগলো একটা কথা। ‘যদি বউ হতে তাহলে কিছু একটা বলা যেতো’। কথার অর্থোদ্ধান অন্য ভাবে করলো মিতালী। ক্ষুন্ন হলো মন। হাজারো রাগ, অভিমান জমে পাল্লা ভারি হলো। আড়ষ্ট কন্ঠে বললো, ‘কেন আমার পরিচয় দিতে লজ্জা পেয়েছিলেন? আমি একটু মোটা বলে?’
মিতালীর এমন কথা কর্ণপাত হতেই হকচকিয়ে গেলো অংকুর। চোখ দুটো তার বিস্ময়াদি হলো। ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবে নি মিতালী এমব কথা বলবে। গম্ভীর ভাব আসলো তার মাঝে। ভড়াট কন্ঠে বললো, ‘আমি এভাবে বলিনি মিলি। তুমি ভুল বুঝেছো।’
‘কিন্তু আমি তো স্পষ্ট এমনই শুনেছি।’
হতভম্ব হয়ে গেলো অংকুর। মিতালীর এমন উদ্ভট কথাবার্তা শুনে বিস্মিত হলেও কিঞ্চিৎ পরিমানের রাগও হলো। চোখমুখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেঁপে ‘শিট গার্ল’! বললো। তারপর কয়েকবার শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলালো। উষ্ঠধয় জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বললো, ‘আমি মোটেও এমন কিছু বলিনি। আর আমি কোনো নিব্বা না যে সিনিয়রদের সামনে গার্লফ্রেন্ড বলে তোমার পরিচয় দিব। তুমি যথেষ্ট ম্যাচিউরড মিলি। কথার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা বুঝার করার চেষ্টা করবে।’
চুপচাপ হয়ে গেলো মিতালী। রেলিং শক্ত করে ধরে অংকুরের দিকে নিস্প্রভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মন খারাপ হলো তার। রাগ হলো অংকুরের উপর। মিতালীকে নিশ্চুপ দেখে অংকুর আবারো কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিতালীর পিছনে তার বাবাকে দেখে চুপ হয়ে গেলো। প্রকাণ্ড রকমের অবাক হলো এই ভেবে যে এতো রাতে জুলফিকার এখানে কি করতে এসেছে? ঠোঁট কামড়ে ভাবলো কিছুক্ষণ। তারপর ধীর গলায় বললো, ‘মিলি? তোমার বাবা।’
ভ্রুঁ কুঁচকে এলো মিতালীর। বাবা? আশেপাশে চোখ বুলিয়ে পিছনে তাকাতেই ভড়কে গেলো সে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। ভয়ার্ত তার চোখের দৃষ্টি। ভয়ে শুকনো ঢুক গিললো।
জুলফিকার গম্ভীর চোখেমুখে একবার মিতালীর দিকে তাকালো। তারপর রাস্তার পাশে দাঁড়ানো অংকুরের দিকে তাকালো। আরো গম্ভীর হলো তার মুখ। ইশারায় মিতালীর হাত থেকে মোবাইল দিতে বললো। মিতালী কাঁপাকাঁপা হাতে তার মোবাইলটা এগিয়ে দিলো তার দিকে। তারপর ভয়ার্ত পায়ের কদম ফেলে রুমে চলে আসলো। মিতালী যেতেই জুলফিকার রেলিং’এর কাছে এসে কানে মোবাইল ঠেকালো।
অংকুর প্রথমের ন্যায় পকেটে এক হাত গুঁজে অপর হাতে কানে মোবাইল রেখে মিতালীর বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইলো। জুলফিকার কানে মোবাইল দিতেই সাবলীল ভাবে সালাম দিলো। জুলফিকার সালামের উত্তর নিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘মাঝ রাতে এখানে কি করছো?’
অংকুরের সহজসরল স্বীকারুক্তি, ‘এমনি। মিতালীকে দেখতে এসেছি।’
জুলফিকার গম্ভীরস্বরে বলল, ‘আমার জানা মনে কোনো ভদ্র বাড়ির ছেলেরা মাঝ রাতে মেয়েদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে না।’
মৃদু আওয়াজে হেসে ফেললো অংকুর। হাসির শব্দ অল্প হলেও শুনতে পেয়েছে জুলফিকার। অংকুর ঠোঁটে হাসি রেখেই প্রতিত্তুর করলো, ‘কি আর করবো আঙ্কেল। যতোদিন না বাসার গেইট দিয়ে সম্মান-সহিত ঢুকতে পারছি। ততোদিন পর্যন্ত এই পন্থা-ই অবলম্বন করতে হবে।’
‘মিতালী এখনও তোমার সাথে যোগাযোগ রেখেছে?’
অসন্তুষ্ট হলো অংকুর। বাপ-ব্যাটিকে নিয়ে সে আর পারে না। বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলো না। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে ফিচেল গলায় বলে উঠলো, ‘মিতালী রাখতে চায়নি কারণ সে আপনার বাধ্য মেয়ে। আপনারা যথেষ্ট বড়। বুঝাপড়ার জ্ঞানটাও আমাদের থেকে অধিক। আপনাদের এমন সিদ্ধান্ত মোটেও আমাদের প্রত্যাশিত ছিলো না। ছোট একটা ঘটনা কেন্দ্র করে মুখ মুড়িয়ে বসে থাকা আপনাদের মানায় না।’
জুলফিকার এক হাত পিছনে রেখে গম্ভীর কন্ঠে বললেন, ‘দুঃখিত। যা ভাবার ভাবতে পারো। যে পরিবারের মানুষ আমার মেয়েকে সম্মান করতে পারে না। সেই পরিবারে আমি আমার মেয়েকে দিবো না।’
‘আপনার মেয়েকে মোটেও অসম্মান করিনি। তখন মা হয়তো অবুঝের মতো যা বলার বলে দিয়েছে। তার জন্য আমি ক্ষমা চেয়েছি আর এখনো চাইছি।’
বিজ্ঞব্যক্তিদের মতো অংকুরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন জুলফিকার। ভাবতে লাগলেন এই ছেলের চতুরতার সম্পর্কে। বুকে সাহস আছে বটে। কথা বলার সময় বিন্দুমাত্র ভয় পাচ্ছে না। স্পষ্টভাষীদের মতো নিঃসংকোচে সব বলছে। কথার মাঝেও অযুক্তিযুক্ত কিছু নেই। অংকুরের চতুরতার তারিফ করতে হবে বটে। মনে মনে অংকুরের প্রশংসামুখর হলেন জুলফিকার। কিন্তু উপরে উপরে গম্ভীর ভাব ঠিকই বজায় রাখলেন।’
অংকুর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো বললো, ‘অন্যরা মিতালীকে পছন্দ করলো কি করলো না সেটা দেখার বিষয় আমার না। মিতালীকে আমি ভালোবাসি, আর সেও আমাকে ভালোবাসে। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ইম্পরট্যান্ট। মিতালী অলয়েজ আমার ফাস্ট প্রায়োরিটি। যেহেতু আমার মিতালীকে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই; সেহেতু এখানে অন্যদের সমালোচনার পাত্তা দেওয়ার সময় আমার কাছে নেই।’
অংকুরের সম্পূর্ণ কথা শুনে সুপ্রসন্ন হলেন জুলফিকার। অংকুরের অগোচরেই স্মিতি হাসলেন তিনি। কিছুসময় পর বললেন, ‘অনেক রাত হয়েছে বাসায় যাও। নাহলে আশেপাশের মানুষ তোমাকে অভদ্র দের তালিকায় ফেলে দিবে।’
মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো অংকুর। সালাম দিয়ে কল কেটে মোবাইল পকেটে রাখলো। বাইকের কাছে এসে উঠে বসলো। মিতালীর বারান্দায় আবারো তাকালো। বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো ‘আসলেন যেহেতু আরেকটু পরে আসতে পারলেন না? তুলতুলের রাগও ভাঙ্গাতে দিলেন না। ধ্যাৎ’! বিরক্তি নিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।
বারান্দায় আরো কিছুসময় অতিক্রম করে রুমের ভিতরে আসলেন জুলফিকার। গম্ভীর চোখেমুখে মিতালীর দিকে তাকালেন। মিতালী বিছানার হেডসাইডে কাচুমুচু অবস্থায় বসে আছে। চেহারায় তার ভীতিগ্রস্ত, লজ্জানত। বাবার চোখে চোখ রাখার মতো সাহস পাচ্ছে না। জুলফিকার গম্ভীর মুখে মোবাইলটা বিছানায় রেখে বললেন, ‘ভেবেছিলাম তুমি আমার কথার মান্য করো। কিন্তু আজ তার ভুল প্রমান হলো। তুমি আমার কথা শুনো নি।’
অসহায় চোখে তাকালো মিতালী। কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললো, ‘আব্বু..’
জুলফিকার প্রতিত্তুর করলেন না। দুই হাত পিছনে এনে মুষ্ঠি বদ্ধ করে বেড়িয়ে গেলেন। চোখ লাল হয়ে এলো মিতালীর। ঝাপসা চোখের দৃষ্টি। জুলফিকারের শেষ কথা গুলো শুনে কান্না পেলো তার। বাবা কষ্ট পেয়েছে? আমার জন্য? সম্পূর্ণভাবে দোষারোপ করতে লাগলো নিজেকে। এবার রাগ চাপলো অংকুরের উপর। আজ যদি অংকুর না থাকতো তাহলে তার বাবা তার জন্য কষ্ট পেতো না। এমনিতেই অংকুরের উপর অভিমান জমেছিল। সেই অভিমান বদলে রাগে পরিনত হলো। ভীষণ রকমের রাগ হলো অংকুরের উপর।
.
স্নিগ্ধ সকালের পাখির কুহুরব। প্রবল বাতাসের কারণে পরিবেশটা মুখরিত। আকাশটা ভীষণ স্বচ্ছ। সূর্যের কিরণ আজ একদম কোমল। নীল আকাশের মাঝে সাদা মেঘের ভেলা ভাসছে। রাস্তায় হাতে গুণা কয়েকজনের আনাগোনা চোখে পরছে। দূরে হাওয়াই মিঠাই ওয়ালাকে দেখা যাচ্ছে। ছেলেটা পিচ্চি। এই বয়সে তার স্কুলে পড়াশোনা করার কথা। কিন্তু পেটের দায়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছে। রিকশাচালক পায়ে হেন্ডেল ঘুরিয়ে এগিয়ে চলছে। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। কারোর অন্যের খেয়াল নেই। ঠিক তেমনি অংকুর। সেও নিজের মতো ব্যস্ত। কল দেবার সময় নেই। এইসব ভাবতে ভাবতে ফুটপাতের পাশ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে মিতালী। তখুনি কানে আসলো পরিচিত কন্ঠের গুনগুন করা গানের ধ্বনি।
‘এতো রাগ নয়
এ যে অভিমান
এ শুধু তোমায় চাওয়ার
আরো বেশী কাছে পাওয়ার
ছল ভরা গান
এ যে অভিমান।’
পিছু ফিরে তাকাতেই অংকুরের হাস্যউজ্জ্বল চেহারা নজরে আসলো মিতালীর। পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টি মেলে দেখলো অংকুর কে। পরনে তার অফ-হুয়াইট কালার শার্ট। হাতা গুলো ফোল্ড করা। বাম হাতে কালো ফিতার ঘড়ি। উড়ন্ত সিল্কি চুল গুলো বাতাসে উড়ে এসে কপালে আঁচড়ে পরছে। চোখে চোখ পরলো দুজনের। হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো মিতালী। চোখ সরিয়ে নিলো তাৎক্ষনাৎ। এই গভীর চোখের চাহনীতে তাকিয়ে থাকার সাধ্য তার নেই। ঘায়েল করার মতো কঠোর ক্ষমতা রাখে। মৃদু হাসলো অংকুর। মিতালীর দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো, ‘আজকের ওয়েদার টা সুন্দর না?’
মিতালী অংকুরের দিকে তাকালো। বিরক্তিসহিত বলে উঠলো, ‘একটুও না।’
#অনেক_সাধনার_পরে
#মাইশাতুল_মিহির
[৩২]
সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মিতালী। আশেপাশের কারোর দিকে বিন্দুমাত্র ধ্যান নেই তার। দ্রুত তার পায়ের কদম। তাও যেন অংকুরের সাথে পেরে উঠছে না। বিরক্ত হচ্ছে মনে মনে। অংকুর তার পিছু নয় বরঞ্চ পাশাপাশি হাঁটছে। মিতালী যতোই তাড়াতাড়ি হাঁটার চেষ্টা করুক না কেন অংকুরের বড়বড় পায়ের কদমের সাথে হার মানছে। ব্যাপার টা অংকুরের কাছে একটা বাচ্চা টাইপ খেলা মনে হচ্ছে।
বেশকিছু সময় নিরবতার পর অংকুর বলল, ‘জানো মিলি? আমি একটা কথা ভাবছি।’
মিতালী হাঁটা থামিয়ে অংকুরের দিকে ফিরে দাঁড়ালো। তারপর শক্ত গলায় প্রশ্ন করলো, ‘কি ভাবছেন?’
অংকুর নিজেও দাঁড়ালো। দাঁত কেলিয়ে বলল, ‘ভাজ্ঞিস তুমি সেদিন কলার খোসা ফেলেছিলে।’
ফুঁশ করে হতাশার নিশ্বাস ছুঁড়লো মিতালী। মাঝে মাঝে এই ছেলের উপর এতোটাই বিরক্ত হয় যা বলে বুঝানোর মতো না। আজও হলো! বিড়বিড় করে বলে উঠলো, ‘সেটাই আমার সব থেকে বড় ভুল ছিলো।’
দাঁড়াল না আর। তীক্ষ্ণ চোখে একবার তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। বিড়বিড় করে বললেও সম্পূর্ণ কথাটা অংকুরের কর্ণপাত হলো। এবার মজা করলো না। বরঞ্চ গায়ে লাগলো কথাটা। ইগোতে প্রচুর হার্ট হলো। গম্ভীর কন্ঠ পিছন থেকে ডাক দিলো মিতালীকে। অংকুরের গম্ভীর কন্ঠের ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পরলো মিতালী। ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে তাকালো পিছনে। প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অংকুরের পানে।
অংকুর আড়ষ্ট কন্ঠে প্রশ্ন করলো, ‘আমি তোমাকে খুব বেশি জ্বালাতন করি?’
এমন প্রশ্ন শুনে হতবাক হয়ে গেলো মিতালী। বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো অংকুরের দিকে। অংকুর ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁতে দাঁত পিষলো। কন্ঠে হালকা রাগ ফুটিয়ে বলে উঠলো, ‘ভুল ছিল? সেদিন যদি কলার খোসা না ফেলতে তাহলে আমাদের দেখা হতো না। কিন্তু তোমার কপাল খারাপ তুমি খোসা ফেলেছো। জানো তো কাউকে বেশি প্রায়োরিটি দিতে নেই। দিলেই তাদের ভাব তিরতির করে বেড়ে যায়। ঠিক যেমন তোমার। আমার কথাবার্তা সবই তোমার কাছে বিরক্ত লাগে। আমি তো ভুলেই গেছি যে তুমি আমাকে ভালোবাসো না। আমিই কিনা বেহায়াদের মতো তোমার পিছনে পরে আছি। ওকে ফাইন। আজ থেকে করলাম না তোমাকে বিরক্ত। তুমি তোমার মতো থাকো। আমি আমার মতো।’
অংকুরের চেহারায় স্পষ্ট রাগের ছাপ দেখতে পেলো মিতালী। তীক্ষ্ণ ও রুষ্ট তার চাহনী। কথা গুলো বলে দাঁড়ালো না অংকুর। মিতালীকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেলো মিতালী। হলোটা কি আজ? অংকুর কি রেগে গেছে আমার উপর? পিছু ফিরে তাকালো অংকুরের দিকে। এতোক্ষণে তার থেকে প্রায় অনেকটা দূরে চলে গেছে মানুষটা।
গলার আওয়াজ উঁচু করে ডাক দিলো অংকুরকে। দ্রুততার সাথে পায়ের কদম ফেলে একপ্রকার দৌড়ে অংকুরের কাছে আসলো। মিতালীর ডাক শুনেও অংকুর পায়ের গতি কমালো না। অংকুরের সাথে হেঁটে পারছে না মিতালী। তাই দৌড়ে অংকুরের সামনে এসে দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে বাধা দেওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়ালো। তাড়াহুড়ো করে আসার কারণে হাপিয়ে উঠেছে সে। জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো। গলা শুকিয়ে খরা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। জোড়-পূর্বক শুকনো ঢুক গিলে বললো, ‘সমস্যা কি? ডাকছি শুনতে পারছেন না?’
মনে মনে স্মিতি হাসলো অংকুর। একটু আগের বলা সম্পূর্ণ কথা বায়োনাট। বানিয়ে বানিয়ে যেভাবে পেরেছে সেভাবে বলেই ইমোশনাল করতে চেয়েছে মিতালীকে। কারণ তার পক্ষে আদৌ সম্ভব না তার এই গুলুমুলু ‘ তুলতুল ‘ মিতালীকে ছেড়ে দেওয়া। যা সম্পূর্ণ কল্পনার বাহিরে। মিতালী তার পিছু এসে তাকে আটকিয়েছে ভাবতেই লুঙ্গি ড্যান্সে নামতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু উপরে বুঝালো না। লুঙ্গি ড্যান্সটা মনে মনেই দিলো। উপরে গম্ভীর ভাব ধরে রাখলো।
দুই হাত নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো মিতালী। উড়ন্ত এলোমেলো চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে বললো, ‘এভাবে চলে যাওয়ার মানে কি? আশ্চর্য!’
প্রতিত্তুরে অংকুর ভড়াট কন্ঠে বললো, ‘থেকে কি করবো? যার জন্য আছি সেই তো পাত্তা দিচ্ছে না। তার থেকে ভালো না অন্য পথ খোঁজা।’
‘ অন্য পথ খোঁজা ‘ অর্থোদ্ধান হলো ‘ নতুন কাউকে খোঁজা ‘! কথাটা শুনেই শরিরে রাগ তিরতির করে বেড়ে গেলো মিতালী। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বললো, ‘দরকার নেই। যেখানে আসছেন সেখানেই থাকেন। তাহলে ভালো থাকবেন।’
স্মিতি হাসলো অংকুর। দুই কদম এগিয়ে মিতালীর একদম সামনে দাঁড়িয়ে মৃদু গলায় মোলায়েম কন্ঠে বললো, ‘যদি থাকি তাহলে সারাজীবনের জন্য রাখতে হবে।’
আড় চোখে তাকালো মিতালী। অংকুরের গহীন চাহনীতে দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলো। ইতস্তত করতে লাগলো। ব্যাগটা দুইহাতের মুঠোয় আঁকড়ে ধরলো। তারপর লাজুক হয়ে মিনমিনে গলায় বললো, ‘আগে হাওয়াই মিঠাই খাওয়ান। তাহলে ভেবে দেখবো।’
শব্দ করে হেসে উঠলো অংকুর। বাঁকা দাঁত টা ভেসে উঠলো তার। অংকুরের হাসিতে আরো লজ্জাভূতি হলো মিতালী। গাল দুটো তার লাল হয়ে এলো। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে লজ্জা থামানোর চেষ্টা করলো। অংকুর চোখেমুখে হাসির ঝিলিক রেখেই বলল, ‘হায়রে আমার ভাবুক-লতা, ভাবা তার এখনো শেষ হয়নি।’
মুচকি হাসলো মিতালী। চোখ ফিরিয়ে অন্য দিকে দিকে তাকালো। লজ্জায় মিহিয়ে গেলো একদম। অংকুর তার সামনে এক হাত এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘আসেন মহারানী, হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার জন্য আপনার আমন্ত্রণ।’
আলতো ভাবে হেসে উঠলো মিতালী। নিঃসংকোচে নিজের এক হাত বাড়িয়ে ধরলো অংকুরের হাত। প্রসন্ন হলো অংকুর। মিতালীর স্বযত্নে শক্ত করে ধরে পা বাড়ালো রাস্তার অপর পাশে হাওয়াই মিঠাইয়ের দিকে। মিতালী বিনা-সংকোচে, জড়তাহীন ভাবে পিছু হাঁটতে লাগলো অংকুরের। হাতে হাত রাখার প্রশান্তি আঁকড়ে ধরলো দুজনকে। এক সাথে, পাশাপাশি, সারাজীবন থাকার প্রতিজ্ঞায় যেন এখানেই আবদ্ধ হলো দুজন।
.
কানে সাদা হেডফোন, হাতে মোবাইল, কাধে ব্যাগ। কুঁকড়ানো খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। পরনে কালো টপ শার্ট, জিন্স। গলায় স্কার্ফ পেঁচানো। বিকেলের পরিবেশটা আজ স্নিগ্ধ। দুপুরের গমগমে ভ্যাঁপসা গরম টা এখন নেই। আজকের বিকেলটা স্নিগ্ধতায় মুড়িয়ে গেছে। তাইতো ফ্রেন্ডদের সাথে বের হবার প্ল্যান করেছে শেফালী। প্ল্যান অনুযায়ী বের হলো। তবে সময়ের ঠিক আধ ঘন্টা আগে। এই আধঘণ্টা সে একা একা কাটাবে। কানে ফুল ভলিউমে ‘ escape – Цунами ‘ গানটা বাজছে। পার্কের এক পাশ ধরে একা একা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে শেফালী।
.
রিমন নামে এক বন্ধুর সাথে হাঁটছিলো রাকিব। অবসর সময়ে বেশিরভাগ সময়েই রাকিব তার বন্ধুদের সাথে কাটায়। মাঝে মাঝে তাদের সঙ্গী হয় অংকুর। আজ অংকুর নেই। বের হবার আগে অংকুরের রুমে গিয়েছিলো ডাক দিতে। কিন্তু অংকুর ঘুমিয়ে ছিলো বিধায় ডাকেনি আর। একাই চলে এসেছে। রিমনের সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে পার্কের এক পাশে দৃষ্টি গেলো তার। বাচ্চা মেয়েটির পিছ দেখে চেনা চেনা লাগলো অনেক। কুঁকড়ানো চুল, ড্রেস-আপ সব মিলিয়েই শেফালীর নামটা তার মাথায় আসলো। ‘ তুই দাঁড়া আমি আসছি ‘ রিমন কে বলেই মেয়েটির দিকে এগিয়ে আসলো রাকিব। যদিও সে শতভাগ কনফার্ম না আসলে মেয়েটি কে। তবে দূর থেকে সন্দেহ করলেও কাছাকাছি এসে নিশ্চিত হয়ে গেলো। খুশি হলো মন। কারণ বিগত এই কয়েকদিন শেফালীর সাথে তার দেখা হয়নি। এমন কি ফোনালাপও হয়নি। কল দেবার কারণ খুঁজে পায়নি, আবার ব্যস্ততার জন্য কারণ খোঁজা হয়নি। শেফালীর কাছে এসে পিছন থেকে বেশ কয়েকবার তার নাম ধরে ডাকলো। কানে হেডফোন থাকায় শুনতে পায়নি শেফালী। নিজের মতোই আনমনে সামনে ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে । আবারো ডাকলো রাকিব। এবারো সাড়া আসলো না। এবার বিরক্ত হলো রাকিব। দাঁতে দাঁত চেপে শেফালীর মাথায় গা:ট্টা মা:রলো একটা। হঠাৎ আকস্মিক ঘটনায় হকচকিয়ে গেলো শেফালী। হতভম্ব হয়ে পিছু ফিরে রাকিবকে দেখলো। কান থেকে হেডফোন খুলে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘আপনি? আপনি আমার মাথায় মে:রে:ছেন? এতো বড় সাহস আপনার?’
রাকিব বিদ্রোপ মাখা কন্ঠে বললো, ‘হ্যাঁ আমি দিয়েছি। কতবার ডাকলাম শুনতে পাচ্ছো না। তাই বাধ্য হয়ে দিলাম।’
তেঁতে উঠলো শেফালী। রাগি গলায় বলে উঠলো, ‘তাই বলে মাথায় থা:প্প:ড় দিবেন? এই সাহস আপনাকে কে দিয়েছে?’
সাহসের কথা বলায় বিরক্ত হলো রাকিব। মেয়েটা সবসময় একটু বেশি ত্যাড়ামি করে। যা মাঝে মাঝে সহ্যের সীমানার বাহিরে। যদিও এই ত্যাড়ামি-ই তার কাছে অতিরিক্ত ভালো লাগে। তবে সেটা মনে মনেই চেপে রাখে। উপরে তো প্রচুর রাগ লাগে। তাই এবারো ধমকে উঠলো, ‘ভালো ভাবে কথা বলার অভ্যেস নেই তোমার? সবসময় এমন গ্যাঁজ-গ্যাঁজ করো কেন?’
‘করি তো বেশ করি। সমস্যা? এতোই যখন সমস্যা তাহলে এই গ্যাঁজ গ্যাঁজ করা মেয়েটার সাথে কথা বলতেই আসেন কেন?’
প্রগাঢ় চোখে তাকালো রাকিব। শেফালীর দিকে একটু ঝুকে মৃদু গলায় বললো, ‘যদি বলি ভালোলাগে তাই?’
থমথমে খেলো শেফালী। এমন প্রতিত্তুর শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। রাকিবের দিকে আড় চোখে তাকালো একবার। ছেলেটার হাবভাব একদম ভালো না। সর্ব আগেই উঠেপড়ে লাগে কথা বলার জন্য। পাগলাগারদ থেকে পালাতক। উফফ! মনে মনে রাকিবের চৌদ্দ গোষ্টি উদ্ধার করছে শেফালী। তার চেহারার এমন লাজুক অবস্থা দেখে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো রাকিব। হাসতে হাসতে বলে উঠলো, ‘আমি তোমার কথা বলি নি। তোমার বোন মিতালীকে ভাইয়ের বউ হিসেবে আমার পছন্দ হয়েছে। তাই অনিচ্ছা থাকা শত্বেও তোমার সাথে কথা বলতে আসতে হতেছে।’
এটা কি সরাসরি অপমানের তালিকায় পরে? নিরবে দাঁতে দাঁত পিষলো। মনে মনে ব্যঙ্গ্য করে বললো ‘তুই পছন্দ করলেই কি, না করলেই কি’?
রাকিব এক হাত উঠিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রিমনের দিকে ইশারা করে চেঁচিয়ে বলে উঠলো, ‘তুই যা। পরে কথা হবে তোর সাথে।’ রিমন সম্মতি দিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। কিছুসময় পর মুখ খুললো শেফালী, ‘কিছু বলবেন আপনি? বলার থাকলে বলেন নয়তো আমি যাই।’
শেফালীর দিকে পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিতে তাকালো রাকিব। মেয়েটা দেখতে একদম পিচ্চি। চেহারায় মিষ্টি মিষ্টি একটা ভাব আছে। সব চেয়ে বেশি কিউট গালের টুল দুটো। এতো কিউট কেন মেয়েটা? একদম কিউটের ডিব্বা। রাকিবকে এক নজরে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো শেফালী। ‘ হ্যালো? ‘ বলার পরেও কোনো সাড়াশব্দ পেলো না। দুই হাত সামনে এনে ইশারা করে হাল্কা উঁচু আওয়াজে ডাকলো।
‘হ্যালো মিঃ? কোথায় হারিয়ে গেলেন? হ্যালো?’
হকচকিয়ে গেলো রাকিব। দৃষ্টি সরিয়ে নিলো তাৎক্ষনাৎ। ইতস্ততবোধ করলো সে। কিভাবে বেহারার মতো তাকিয়ে ছিলো সে। থাকবেই না কেন? মেয়েটা বড্ড কিউট। তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে। হালকা গলা ঝেড়ে পরিষ্কার করে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। তারপর সিরিয়াস হয়ে বললো, ‘তোমার বাবা অংকুরের ব্যাপারে কথা বলেছে বাসায়?’
কিছুটা অবাক হলো শেফালী। অংকুরের ব্যাপারে কথা বলবে কেন বাবা? হঠাৎ-ই বিয়ে বাড়ির কথা মনে পরলো তার। বুঝতে পারলো। নিজেও সিরিয়াস হয়ে উত্তর দিলো, ‘এই ব্যাপারে আর কোনো কথা হয়নি। কেন বলুন তো?’
‘তোমার কি মনে হয়না ঝামেলার মিটমাট করা দরকার?’
অসহায় ভাবে তাকালো শেফালী। ঠোঁট উলটে বাচ্চাদের মতো করে বললো, ‘চাই। কিন্তু কিভাবে হবে? আব্বু তো রেগে আছে। আর বুবু আব্বুর কথার অমান্য করবে না।’
‘তাহলে আমাদেরই কিছু ভাবতে হবে।’
ঠোঁট কামড়ে ভাবতে লাগলো শেফালী। চিন্তিত হলো সে। অপরদিকে রাকিব চিন্তা বাদ দিয়ে শেফালীকে দেখতে ব্যস্ত। মেয়েটাকে যতোই দেখে সে ততোই ভালো লাগে। মায়াপরী! মায়াবিনী!
শেফালীর মাথায় কিছু একটা আটলো। ঝাকানাকা একখান বুদ্ধি বের করলো। চকচকিয়ে রাকিবের দিকে তাকিয়ে গরগর করে সব বলে দিলো। বুদ্ধিটা ভালো লাগলো না রাকিবের বের। টিনেজারদের মতো এমন অদ্ভুত কাজ তার মতো ম্যাচিউরড মানুষকে মানায় না। তাই স্কিপ করলো এটা। আবারো চিন্তিত হলো শেফালী। তাকে এমন হাইপার আর হতাশ দেখে স্মিতি হাসলো রাকিব। অতঃপর নিজের বানানো প্ল্যানটাই জানালো। বিস্মিত হলো শেফালী। মুখ হা হয়ে গেলো তার। এটা তার পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব না।
চলমান..
চলমান..
চলমান..