অন্তঃকরণে তোরই পদচারণ পর্ব -২৭+২৮

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-২৭
#লোখিকা-মেহরুমা নূর

★পরদিন সকাল সকালই সবাই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। প্রহর খুশির পরিবারকে ওদের বাড়িতেই যেতে বলেছিল। তবে খুশির বাবা বলেছে তারা ওদের ঢাকার আগের ফ্লাটে গিয়ে উঠবে। দুপুরের দিকেই ওরা ঢাকায় এসে পৌঁছায়। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যার দিকেই প্রহর খুশিকে নিয়ে আসে ডক্টরের কাছে। বাংলাদেশের বেস্ট নিউরো সার্জেনের চেম্বারে আসে ওরা। ডক্টর খুশিকে চেকআপ করে কতগুলো টেস্ট করতে দেয়। প্রহর সেই মোতাবেক খুশির সব টেস্ট করিয়ে নেয়। । ডক্টর রিপোর্ট গুলো দেখে প্রহরের সাথে একা কথা বলতে চায়।তাই প্রহর খুশিকে বাইরে গিয়ে বসতে বলে, বর্তমানে ডক্টরের সামনে বসে আছে প্রহর। হাত পা কাঁপছে ওর। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্যাবিন টাতেও ঘাম ছুটে যাচ্ছে প্রহরের। ভয়ে আত্মা শুঁকিয়ে আসছে ওর। নাজানি এইমুহূর্তে ডক্টর কি বলে? ডক্টর বলে উঠলো।
–দেখুন মিঃ প্রহর আপনার স্ত্রীর অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল। টিউমার টা মস্তিষ্কের প্রায় অনেক টা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। অপারেশন করে টিউমার সরানো গেলে উনি সুস্থ হতে পারেন। তবে এমন ক্রিটিকাল কেসে নাইন্টি পার্সেন্ট রুগীই অপারেশন থিয়েটারেই মারা যান।

প্রহরের মনে হচ্ছে কেউ ওর গলা চেপে ধরে আছে। ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবু্ও নিজেকে কোনরকমে সামলে নিয়ে প্রহর বলে উঠলো।
–ডক্টর আপনি শুধু বলুন অপারেশন করা যাবে কিনা? আর অপারেশন সাকসেসফুল হলে ওকি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে?

–হ্যাঁ অপারেশন যদি সাকসেসফুল হয় তাহলে উনি ঠিক হয়ে যাবেন। আমার নিউইয়র্কের বেস্ট নিউরো সার্জেনের সাথে পরিচয় আছে। আমি যদি আপনার স্ত্রীর কেসটা নিয়ে উনার সাথে কথা বলি তাহলে উনিও আমাদের হেল্প করতে পারবেন। হয়তোবা রিকুয়েষ্ট করলে উনি ঢাকায় এসে অপারেশন টা করে দিতে পারবেন। তাহলে অপারেশন সাকসেসফুল হওয়ার চাঞ্চ আরেকটু বাড়তে পারে।

এতসব হতাশার মধ্যে এতটুকু আশার আলোই যেন প্রহর কাছে সমুদ্র সমান। প্রহর আশাতীত সুরে বললো।
–দ্যাটস রিয়েলি ডক্টর। নিউইয়র্কে আমার বিজনেসের ব্রাঞ্চ আছে। সেই সুবাদে আমারও অনেক পরিচিত লোক আছে। দরকার পরলে আমি খুশিকে ওখানেই নিয়ে যাবো। আপনি শুধু বলুন কি করলে সবচেয়ে ভালো হবে। আমি সেটাই করবো।

–দেখুন আপনার স্ত্রীর ফিজিক্যাল স্ট্রেন্থ অনেক কমে গেছে। এই অবস্থায় উনাকে নিয়ে এতো জার্নি করা ক্ষতিকর হতে পারে। শুধু ডক্টর কে এখানে আনতে পারলেই কাজ হবে।

–ওকে ডক্টর যেটা ভালো হয় সেটাই করুন। ব্যাস আমার স্ত্রী যেন ঠিক হয়ে যায়। এরজন্য যা করতে হয় করুন।

–একজন ডক্টর সবসময় তার রুগীর বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। বাকিটা উপর ওয়ালার হাতে। আর এমনিতেও আপনার স্ত্রীর ক্ষেত্রে এটা অনেক রিস্কি অপারেশন। এখন আপনি ভেবে দেখুন কি করবেন।

–ভাবা ভাবির কিছু নেই। আমি আমার স্ত্রীর অপারেশন করাতে প্রস্তুত। আল্লাহর ওপর আমার বিশ্বাস আছে। তিনি নিশ্চয় সব ঠিক করে দিবেন।

–আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে ওই ডক্টরের সাথে কথা বলে দেখি উনি কবে আসতে পারবেন। সেই অনুযায়ী আপানকে অপারেশনের ডেট জানিয়ে দেব।

–ওকে ডক্টর। তবে যা করার একটু তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা করুন। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।

–ওকে আপনি চিন্তা করবেন না। আমি দ্রুতই প্রসেস শুরু করে দিচ্ছি।

কথা শেষে প্রহর খুশিকে নিয়ে আবার বাসায় চলে এলো। বাসায় এসে প্রহর খুশিকে বেডে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর সামনাসামনি বসলো। খুশির দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মায়া ভরা কন্ঠে বললো।
–খুশি আজ আমি ডক্টরের সাথে তোমার অপারেশনের ব্যাপারে কথা বলেছি। হয়তো দুচারদিনের মধ্যেই অপারেশনের ডেট হয়ে যাবে। অপারেশন টা হয়ে গেলে তুমি একদম ঠিক হয়ে যাবে দেখবে।আমার খুশিরাণী আবার সেই আগের মতো হয়ে যাবে।

খুশি প্রহরের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে ধরা গলায় বললো।
–না না আমি কোন অপারেশন করাবো না। এমনিতে যেই কয়টা দিন তোমার সাথে কাটাতে পারবো সেটুকু সময়ও কেঁড়ে নিতে চাও তুমি? আমি ওই অপারেশন থিয়েটারে ডক্টরের মুখ দেখে মরতে চাইনা। কিছুতেই না।

প্রহর দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে আবেগপূর্ণ কন্ঠে বললো।
–এমন করে বলিস না প্লিজ। আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করোনা সোনা। দেখ আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ। আমাদের ভালোবাসার ওপর বিশ্বাস রাখ। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিচ্ছু হবে না তোমার। জানি হায়াত মওত সব আল্লাহর হাতে। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টাতো করতে পারি। চেষ্টা না করেই হার মানলে কিভাবে হবে? আমি কি এভাবে কোন কিছু না করে তোমাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়া দেখবো? প্লিজ কলিজাটা রাজি হয়ে যানা।

খুশি কান্না জড়িত কন্ঠে বললো।
–কিন্তু আমি যদি অপারেশন থিয়েটারে মরে যাই তাহলে তো তোমাকে শেষ দেখাও দেখতে পাবোনা।

প্রহরের বুকের ভেতর যেন হাহাকার বয়ে যাচ্ছে। চোখদুটো লালবর্ণ হয়ে গেল। অশ্রুসজল চোখে বললো।
–হুঁশশ শুশ,, এমন অলক্ষুণে কথা কেন বলিস বারবার? একবার পজিটিভ টাওতো ভাবতে পারো। ভাবো একবার অপারেশন সাকসেসফুল হয়ে গেলে আমাদের পৃথিবীটা কতটা রঙিন হয়ে উঠবে। প্লিজ সোনা আমার ওপর একটু ভরসা করো। মেনে নাও আমার কথা।

খুশির নাক টেনে বললো।
–ঠিক আছে তুমি যদি এটাই চাও তাহলে আমি আর মানা করবোনা। তুমি যা চাও তাই হবে।

প্রহর খুশির কপালে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো।
–থ্যাংক ইউ খুশি। দেখবে শিঘ্রই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার বউটা একদম ঠিক হয়ে যাবে।

প্রহরের মুখে বউ ডাক শুনে এক অদ্ভুত সুখানুভব হলো খুশির মনে। কতো যেন মধুর ছিল শব্দটা। তবে এই ডাক টা আর কতদিনই বা শোনার ভাগ্য হবে ওর।

হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ার শব্দে দুজনেই সরে বসলো। প্রহর দরজার দিকে তাকিয়ে গলা উঁচু করে বললো।
–দরজা খোলা আছে।

একটু পরে বাসার কাজের বুয়া দরজা খুলে বললো।
–ভাইজান বউমনির সাথে তার ফুপু দেখা করবার আইছে।

খুশি হাস্যজ্বল কন্ঠে বললো।
–ফুপি এসেছে?? কোথায় ফুপি?

–যে নিচে বইসা আছে।

খুশি তড়িঘড়ি করে নামতে নিলেই প্রহর থামিয়ে দিয়ে বললো।
–আরে আরে তুমি কোথায় যাচ্ছ? তুমি এখানে আরামে বসো। ফুপি এখানেই আসবে।
প্রহর বুয়ার উদ্দেশ্যে বললো।
–আপনি ফুপিকে উপরে পাঠিয়ে দিন।

–জে আচ্ছা।

বুয়া চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই খুশির ফুপি বেলি আসলো প্রহরের রুমে। প্রহর বেলিকে সালাম জানলো। বেলিও সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে মাথা নারালো। খুশির পাশে এসে বসলো বেলি। খুশি উচ্ছ্বসিত হয়ে বেলিকে জড়িয়ে ধরে বললো।
–আই মিস ইউ সো মাচ ফুপি। কেমন আছ তুমি?

বেলিও মুচকি হেসে বললো।
–ভালো আছি। আমিও তোকে খুব মিস করেছি।তাইতো তোর আসার খবর শুনে দ্রুত চলে এসেছি। তুই কেমন আছিস?

খুশি বেলিকে ছেড়ে দিয়ে হাসিমুখে বললো।
–আমিতো সবসময় ভালোই থাকি। আর এখন তো আরও বেশি ভালো আছি।

–হ্যাঁ হ্যাঁ তাতো দেখতেই পাচ্ছি। আমার দুষ্টু পাজিটা এখন কারো বাড়ির বউ হয়ে গেছে। আমার তো বেচারা প্রহরের জন্য আপসোস হচ্ছে। নাজানি তোর মতো পাগলকে কিভাবে সামলাবে।

প্রহর মৃদু হেসে বললো।
–ঠিকই বলেছেন ফুপি। বাচ একমাত্র আপনিই আমার মনের বেদনা বুঝতে পারলেন।

খুশি গাল ফুলিয়ে বললো।
–বাহ্ এসেই পার্টি বানিয়ে নিলে? এখন আমার চাইতে তোমার কাছে প্রহরই বেশি আপন হয়ে গেল? ঠিক আছে যাও ওকে নিয়েই থাক। আমার সাথে আর কথা বলার দরকার নেই। ♬ আমিতো ভালা না, ভালা লইয়াই থাইকো।

প্রহর দুষ্টু হেসে বললো।
–ফুপি আমার মনে হচ্ছে আশেপাশে কিছু পুড়ছে। পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।

খুশি এবার জ্বলে উঠে হাতের কাছে থাকা বালিশ টা উঠিয়ে প্রহরের দিকে ছুঁড়ে মারলো। প্রহর সেটা ক্যাচ করে ধরে নিয়ে হেঁসে উঠলো। বেলিও ওদের সাথে হাসতে লাগলো। তখনই ওখানে জিদান সাহেব এসে হাজির হলো। ওদের কাছে আসতে আসতে বলে উঠলো।
–কি ব্যাপার ভাই আমাকে ছাড়াই আড্ডা চলছে?

জিদান সাহেবের কথায় সবাই তার দিকে তাকালো। হঠাৎ বেলির মুখাবয়ব পরিবর্তন হয়ে গেল।এতক্ষণের হাস্যজ্বল মুখটা কেমন চুপসে গেল। বিস্মিত নির্বিকার হয়ে গেল সে। তার জীবনের হারিয়ে ফেলা একমাত্র ভালোবাসার ব্যাক্তিটাকে এতদিন পর চোখের সামনে দেখে থমকে গেল বেলি। সেকি সত্যিই দেখছে? এটা কি সত্যিই জিদান?
জিদান সাহেব কে দেখে খুশি হাসিমুখে বললো।
–আরে এসবি আসুন না। আসলে অনেক দিন পর ফুপির সাথে দেখা হয়েছে তো তাই একটু মজা করছিলাম। এইযে এই হলো আমার সুইটেস্ট ফুপি।
বেলিকে দেখিয়ে বললো খুশি। জিদান সাহেব এবার বেলির দিকে তাকালো। বেলিকে দেখে তার কেমন যেন চেনা চেনা মনে হলো। ভ্রু কুঁচকে সে কিছুক্ষণ বেলিকে পরখ করতে লাগলো। বেলি অপ্রস্তুত হয়ে এদিক ওদিক নজর ঘুরাতে লাগলো। হঠাৎ জিদান সাহেবের চোখ মুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো।তিনি কৌতুহলী কন্ঠে বললেন।
–বেলি?? তুমি সত্যিই বেলি? ও মাই গড হোয়াট আ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ। কতবছর পর দেখছি তোমাকে?

বেলি কি বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। হঠাৎই যেন কন্ঠস্বর চেপে আসছে। খুশি আর প্রহর দুজনেই একটু অবাক হলো। খুশি কৌতুহলী কন্ঠে বললো।
–এসবি আপনি ফুপিকে আগে থেকেই চিনেন?

জিদান সাহেব হাসিমুখে বলে উঠলেন।
–আরে চিনি মানে, বেলিতো আমার কলেজে অনেক ভালো ফ্রেন্ড ছিলো। বলতে গেলে বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু হঠাৎ করেই কোথায় যেন চলে গেল। তারপর আর দেখা হয়নি আমাদের। আর আজ এতবছর পর দেখা হচ্ছে।

খুশির মনে খটকা লাগলো। সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো বেলির দিকে। বেলির চেহারার হাবভাব দেখে খুশির সব ক্লিয়ার হয়ে গেল। ও বুঝতে পারলো জিদান সাহেবই সেই লোক যাকে বেলি ভালোবেসেছিল। জিদান সাহেব খুশির উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন।
–খুশি মা তুমি কি সেদিন তোমার এই ফুপির কথা বলছিলে?

বেলি হঠাৎ চকিত কন্ঠে বললো।
–আ আমার কথা মানে? কি বলেছে আমার কথা?

খুশি বলে উঠলো।
–সেটা তোমাকে বলবো কেন? এটা আমাদের শশুর বৌমার সিক্রেট বুঝেছ।

বেলি এই পরিস্থিতি থেকে পার পেতে বললো।
–আচ্ছা আমি এখন আসি। বেশি রাত হলে আবার বাসায় যেতে সমস্যা হবে।

খুশি বলে উঠলো।
–আরে যাবে মানে? মাত্রই তো আসলে। একদম যাওয়া চলবেনা। আজ রাত আমাদের এখানেই থাকবে তুমি।

জিদান সাহেবও বললেন।
–হ্যাঁ বেলি খুশি মা ঠিকই বলেছে। রাত করে আর যাওয়ার দরকার নেই। এতবছর পর তোমার সাথে দেখা হলো। কত কথাবার্তা বলার আছে। আজ কলেজের সেই পুরাণ দিনগুলো একটু মনে করা যাবে। প্লিজ আজ থেকে যাওনা?

প্রহরও বেলিকে থেকে যাওয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করলো। বেলি আর মানা করতে পারলোনা। অগত্যা আজ থাকার জন্য রাজি হয়ে গেল সে। খুশি প্রফুল্লিত কন্ঠে বললো।
–সত্যিই?? ওয়াও অনেক মজা হবে।
খুশি জিদান সাহেবের দিকে তাকিয়ে গলা ঝেড়ে বললো।
–এসবি আপনি তো ফুপির ফ্রেন্ড। আপনাদের নিশ্চয় অনেক কথা বলার থাকবে। আপনি বরং ফুপিকে সাথে নিয়ে যান। কফি খেতে খেতে দুজন একটু খোশগল্প করুন।

জিদান সাহেব বলে উঠলেন।
–নট আ ব্যাড আইডিয়া। বেলি চলো তোমাকে আমার গরীবখানা টা একটু ঘুরে দেখায়।

বেলির প্রচুর নার্ভাস লাগছে। বুকের ভেতর কেমন কাঁপছে। এখানে এসে এমন একটা সিচুয়েশনে পড়ে যাবে তা ভাবতেই পারেনি ও। এখন জিদানের সাথে কিভাবে কথা বলবে ও? কেমন জড়তা কাজ করছে। তবুও সবার জোরাজুরিতে বেলি সৌজন্যতার খাতিরে জিদান সাহেবের সাথে রুমের বাইরে পা বাড়ালো। খুশি পেছন থেকে ওদের পানে তাকিয়ে রইলো। ও মনে মনে যা ভাবছে তাই যেন হয়। দুটো অসম্পূর্ণ কাহিনি মিলে যেন একটা সম্পূর্ণ উপন্যাস গড়তে পারে।

ছাদের মাঝামাঝি দুটো চেয়ারে বসে আছে জিদান আর বেলি। জোছনার আলোয় চারপাশ পরিস্ফুটিত। বেলির মনের মাঝে তোলপাড় চলছে। সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মনের মাঝে হাজারো শব্দের মেলা জমে থাকলেও এইমুহূর্তে কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না। মৌনতা ভেঙে জিদান সাহেবই বলে উঠলেন।
–আচ্ছা বেলি কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম। তুমি ওভাবে হঠাৎ করে কোথায় গায়েব হয়ে গেলে? জানো তোমার ব্যাপারে আমি অনেকের কাছেই জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু কেউই কিছু বলতে পারেনি। তুমি আমার অনেক ভালো বন্ধু ছিলে। তোমাকে আমি খুব মিস করতাম। জানো জীবনে একটা ভালো বন্ধু পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার।তোমার সাথে যেভাবে আমার সবকথা শেয়ার করতে পারতাম সেভাবে কারোর সাথেই পারিনা। তোমার মতো আর কেউই আমার ভালো ফ্রেন্ড হতে পারে নি। এমনকি প্রহরের মাও না।

বেলি আবেগময় চোখে জিদান সাহেবের দিকে তাকালো। তার কথার প্রতিত্তোরে কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না সে। চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো।
–খুশির কাছে শুনেছি প্রহরের মা নাকি…। আচ্ছা পাপিয়া তো তোমাকে ভালোবাসতো তাহলে ও তোমাকে ছেড়ে গেল কেন?

জিদান সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন।
–ভালো সে আমাকে কখনোই বাসেনি। সেতো শুধু আমার টাকার মোহে মোহিত হয়েছিল। আর মোহ বেশিক্ষণ কাওকে ধরে রাখতে পারে না। একসময় ঠিকই সেটা কেটে চলে যায়। পাপিয়াও তেমনি গেছে। আসলে ভুলটা আমারই। ওর বাহ্যিক সৌন্দর্যে ভুলে আমি ওর ভেতর টা দেখার চেষ্টা করিনি। আগেই যদি ভালো করে পরখ করে দেখতাম তাহলে হয়তো আজ উপযুক্ত কেউ আমার জীবনসঙ্গিনী হতো। যাক বাদ দাও সেসব কথা। তুমি বলো তোমার কি খবর? তুমি কিন্তু এখনো সেই আগের মতোই আছ। একটুও বদলাও নি। তা কোথায় থাক এখন?

বেলি মুচকি স্মিথ হেঁসে বললো ।
–এইতো লালবাগ থাকি। ওখানকার একটা স্কুলে শিক্ষকতা করি। ব্যাস পরিবার আর স্কুলের বাচ্চা কাচ্চাদের নিয়ে ভালোই কাটছে জীবন।

জিদান সাহেবের হঠাৎ খুশির সেদিনের কথা টা মনে পড়লো। খুশি বলেছিল বেলি নাকি কলেজে কোন ছেলেকে ভালোবাসতো। তাকে না পেয়ে সারাজীবন আর বিয়েই করেনি। কিন্তু কলেজে ওর একমাত্র বন্ধু তো শুধু আমিই ছিলাম। ওকে অন্য কোন ছেলের সাথে কখনো কথাও বলতে দেখিনি। তবে কি বেলি আমাকে……. কথাটা ভাবতেই জিদান চমকে তাকালো বেলির দিকে। ওকি সত্যিই আমাকে ভালোবাসতো? আর আমার জন্য সারাজীবন একা আছে ও? তাহলে একবারও বললো না কেন আমাকে? ও যদি আমাকে বলতো তাহলে আমি অন্য কোন মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাতাম না। ওকে কি একবার জিজ্ঞেস করবো? না না সিচুয়েশন তাহলে অনেক অকওয়ার্ড হয়ে যাবে। ও হয়তো আনকম্ফোর্টেবল হয়ে যাবে। তারচেয়ে যেমন আছে তেমনই থাক।
__

রাত তখন ১০ টা। ডিনার শেষে প্রহর একটু ওর বাবার সাথে খুশির অপারেশনের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিল। কথা শেষ করে রুমে এসে দেখলো সারারুম অন্ধকার। প্রহর দেয়াল হাতড়িয়ে সুইচটা অন করে সামনে তাকাতেই থমকে গেল। বেডের মাঝখানে ওর বউটা লালশাড়িতে বিশাল লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে। প্রহর নিচের ঠোঁট কামড়ে নীরবে একটু হাসলো। তারপর এগিয়ে গেল তার প্রিয়তমা স্ত্রীর নিকট। খুশির সামনে বেডের ওপর এসে বসলো। মায়াময়ী চোখে তাকিয়ে আলতো হাতে ঘোমটা টা উঠালো। নববধূ রুপে সামনে বসে থাকা রমনীকে আজ কোন অপ্সরী থেকে কম মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আজ আকাশের ওই চন্দ্রও ঈর্ষান্বিত হবে ওর প্রিয়তমাকে দেখে। প্রহর মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে আছে খুশির দিকে। তবে হঠাৎ খুশির মুখের এক্সপ্রেশন দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো প্রহরের। খুশি দু চোখের পাতা গতিতে দ্রুত পিটপিট করে,কেমন যেন অদ্ভুত মুখভঙ্গি করছে। প্রহর খুশির কপালে হাত ঠেকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–খুশি তুমি ঠিক আছো তো? তোমার কি শরীর খারাপ করছে?

খুশি থতমত খেয়ে বললো।
–আরে শরীর কেন খারাপ করবে? আমি একদম ঠিক আছি।

–তাহলে এমন আজব বিহেব করছো কেন?

খুশি দাঁত কিড়মিড় করে বিরক্তির সুরে বললো।
–আজব বিহেব?ধ্যাৎ, আরে আমিতো লজ্জা পাচ্ছিলাম। ফুপি বলেছে বাসর ঘরে নাকি লজ্জা পেতে হয়। এটা কম্পলসারি। আর আজতো আমাদের ফার্স্ট নাইট। তাইতো আমি লজ্জা পাওয়ার চেষ্টা করছি।

প্রহর কতক্ষন কপাল কুঁচকে খুশির দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর হঠাৎ শরীর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠলো। হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে সে। হাসতে হাসতে বলতে লাগলো।
–লাইক সিরিয়াসলি! তুমি আর লজ্জা? ও খুশি ইউ আর সো ফানি। আমার জীবনের বেস্ট বিনোদন ছিল এটা।

খুশির রাগে শরীর রি রি করছে। পাশের বালিশ টা তুলে প্রহরের ওপর বাড়ি মারতে মারতে বললো।
–ফানি? জোকার মনে হচ্ছে আমার তোমাকে? এতসুন্দর করে সেজেগুজে বসে আছি, আর উনার কাছে সব ফানি লাগছে। দেখাচ্ছি মজা তোমাকে। এই নাও, এই নাও আরও মজা নাও।

প্রহর এবার খুশির হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকে এনে ফেললো।এক হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে খুশির গালে রেখে মুচকি হেসে বললো।
–আরে আরে বাচ করো। বিয়ের প্রথম দিনই স্বামী পেটাচ্ছ? কি সাংঘাতিক বউ গো তুমি।

খুশি দুষ্টু হেসে বললো।
–ভালো হয়েছে। যে স্বামী বউকে নিয়ে মজা করে তার সাথে এমনই হওয়া উচিত। এত মেহনত করে সাজলাম তার একটু প্রশংসাও করলোনা। হুহ্..

প্রহর মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আবেগী কন্ঠে বলে উঠলো।
–কি করে করবো প্রশংসা? তোমার সৌন্দর্য জাস্টিফাই করতে পারি এমন কোন ভাষা যে আমার জানা নেই। তোমার রুপে যে বাক্যহীনতায় ভুগী। নিজেকে কেমন মূর্খ বালক মনে হয়।

প্রহরের হৃদস্পর্শী কথায় মোহিত হয়ে গেল খুশি। ঘোর লেগে গেল দৃষ্টি জুড়ে। খুশি প্রহরের গালে হাত রেখে ভাবপ্রবণ কন্ঠে বলে উঠলো।
–প্রহর আমি আজ পুরোপুরি তোমার হতে চাই। মিশে যেতে চাই তোমাতে। আমাকে নিজের গহ্বরে টেনে নাও।

প্রহর আস্তে করে খুশিকে পাশে কাত করে দিয়ে, খুশির গালে হাত বুলিয়ে মায়াময়ী কন্ঠে বললো।
–এই মধুর মিলন আমিও চাই খুশি। তবে এখন না৷ তুমি এখন অসুস্থ খুশি। তোমার শরীরের কন্ডিশন এখন সুস্থ সবল না। এই অবস্থায় তোমার সাথে ফিজিক্যাল হলে তুমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। যেটা আমি কখনোই করতে পারবোনা। একবার তুমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাও। তারপর আমরা আমাদের সুখী জীবনের শুভারম্ভ করবো।

খুশি ছলছল চোখে তাকিয়ে ধরা গলায় বললো। –কিন্তু সেদিন যদি কখনো না আসে? যদি আমি আর ফিরতে না পারি? কালকের কি ভরসা? প্লিজ প্রহর আমি যাবার আগে তোমাকে স্বামীর সুখটুকু দিয়ে যেতে চাই। এটুকু অন্তত তোমার জন্য করতে দাও আমাকে। প্লিজ,,,

–হুঁশশ অনেক বেশি বলতে শিখে গেছ তুমি। কে বলেছে তুমি ফিরবে না? তুমি অবশ্যই ফিরবে। আমার বুকে ফিরবে। তারপর আমাদের দুটো টিম বানানোর পরিকল্পনা ভুলে গেছ? সেটা কার্যকারী করতে হবে না? আর কে বলেছে শুধু স্ত্রীর দেহভোগেই স্বামীর সুখ পাওয়া যায়? এইযে তুমি আমার বুকের মাঝে শুয়ে আছ এটা যে কতবড় সুখকর অনুভূতি তা হয়তো তোমাকে আমি প্রকাশ করতে পারবোনা। তুমি বাচ এভাবেই আমার বুকের মাঝে লুকিয়ে থাকো। আর কিছু চাইনা আমার।

প্রহর খুশির চোখের পানি মুছে দিয়ে ললাটে গভীর চুমু একে দিয়ে বুকের মাঝে পরম আদরে জড়িয়ে নিলো। খুশিও আবেশে লুকালো স্বামীর বুকের উঞ্চতায়।
#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-২৮
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★আজ প্রহর আর খুশির জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম দিন। সবচেয়ে বড়ো পরিক্ষার দিন। যার ফলাফল স্বরুপ প্রহর হয় ওর প্রাণভোমরাকে ফিরে পাবে, আর নাহলে…..। না না নাহলে বলতে কিছুই না। খুশি ফিরে আসবে। ওকে ফিরতেই হবে প্রহরের কাছে। এমনটাই দৃঢ় বিশ্বাস প্রহরের।মনে মনে যতই নিজেকে মজবুত রাখার চেষ্টা করুক তবুও খুশিকে হারানোর আতঙ্ক প্রহরকে বোধশক্তিহীন করে দিচ্ছে। ভেতরে চলছে তুমুল ঝড়।অন্তর আত্মা সব গলায় এসে আটকে যাচ্ছে। কতক্ষণ নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবে জানা নেই প্রহরের। প্রতিটা ক্ষণ শুধু আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া চাইছে। ওর খুশি যেন ঠিক হয়ে যায়। গতকাল সারাটা রাত প্রহর একবারের জন্যও চোখের পলক এক করেনি। শুধু অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলো ওর হৃদহরণীকে। পারলে যেন বুকটা চিড়ে খুশিকে বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখতো প্রহর। যাতে ওর প্রাণভোমরা টা কোথাও হারিয়ে না যায়। রাতের শেষভাগে জায়নামাজে বসেছিল প্রহর। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে সকাল পর্যন্ত শুধু দু হাত তুলে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে খুশির রোগমুক্তির দোয়া চেয়েছে।

আজ সকালে খুশিকে হসপিটালে আনা হয়েছে অপারেশনের জন্য। গতকাল রাতে ডক্টর ফোন করে বলেছিল নিউইয়র্কের ডক্টর নাকি চলে এসেছে। তারা আজই অপারেশন করবে। সেই অনুযায়ী সকালবেলা ওরা চলে আসে। খুশির পরিবার, জিদান সাহেব আর ফাহিমও এসেছে। আপাতত অপারেশনের পূর্ববর্তী কিছু পরিক্ষা নিরিক্ষা করে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রহর গিয়েছিল ডক্টরের সাথে কথা বলতে। অপারেশনের পূর্বে বন পেপারে সাইন চেয়েছে তারা। একটা কাগজে শুধু সাইন করাটা যে কতটা কঠিন কাজ হতে পারে তা আজ বুঝতে পেরেছে প্রহর। মনে হচ্ছিল কাগজে না, প্রহর ওর অস্তিত্বের ওপর কলম বসাচ্ছে। কাঁপা কাঁপা হাতে কোনরকমে সইটা করেই বেড়িয়ে আসে প্রহর। কেমন যেন শ্বাসরুদ্ধকর লাগছিল ওর। প্রহর দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে খুশির কেবিনের দিকে। খুশির কেবিনের সামনে আসতেই হঠাৎ দেখলো খুশির কেবিনের দরজায় সবাই ভীড় করেছে। দরজায় চাপড় মেরে খুশিকে ডাকছে। এই দৃশ্য দেখে আৎকে উঠলো প্রহর। দৌড়ে গেল দরজার কাছে। অস্থির কন্ঠে বললো।
–কি হয়েছে? দরজা বন্ধ কেন?

রাকিব হাসান চিন্তিত সুরে বলে উঠলেন।
–দেখনা বাবা খুশি সেই কখন থেকে ভেতর থেকে দরজা আটকে আছে। এত ডাকছি খুলছেই না। আমাদের ভয় লাগছে। মেয়েটার কিছু হলোনা নাতো?

প্রহরের অশান্ত মনের ঝড় এবার প্রলয় বয়ে আনলো। ভয়ার্ত অন্তর কেঁপে উঠল ওর। প্রহর দ্রুত দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে অস্থির হয়ে খুশিকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু ভেতর থেকে কোন সারাশব্দ আসছে না। প্রহর আর না পেরে এবার দরজা ধাক্কিয়ে ভাঙার চেষ্টা করছে। কয়েকবার গায়ের জোরে ধাক্কানোর ফলে সিটকানি টা খুলে গেল। দরজা খুলে দ্রুত বেগে ভেতরে ঢুকলো প্রহর। ভেতরে ঢুকে দেখলো খুশি বেডের ওপর উল্টো দিকে কাত হয়ে চাদরে মাথা ঢেকে গুটিশুটি হয়ে আছে। তবে চাদরের ওপর দিয়েও খুশির শরীরের মৃদু কাপুনি টের পাওয়া যাচ্ছে। খুশি যে চাদরের ভেতর কাঁদছে তা বুঝতে বাকি রইলো না প্রহরের। প্রহর খুশির পাশে বসে চাদর সরানোর চেষ্টা করে আদুরে গলায় বললো।
–দেখি কি হয়েছে আমার খুশিরাণী টার? আমাকে বলো প্লিজ? এভাবে মাথা ঢেকে কেন শুয়ে আছ? নিঃশ্বাস আটকে যাবেতো। দেখি সরাও তো।

কিন্তু খুশি চাদর কিছুতেই সরাতে দিচ্ছে না। দুই হাতে চাদর শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বিচলিত কন্ঠে বললো।
–না না একদমই না। চাদর সরাবে না প্লিজ। তুমি যাও এখান থেকে যাও। আমাকে দেখনা প্লিজ। আমি বের হতে পারবোনা। তুমি যাও প্লিজ যাও..

–কি হয়েছে সোনাটা? এমন কেন করছিস? আমাকে বলনা প্লিজ? আমার ভয় করছে খুশি। প্লিজ খোল এটা।

কথা বলতে বলতে একসময় প্রহর জোর খাটিয়ে চাদর টেনে সরিয়ে দিল। খুশির দিকে তাকাতেই বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠলো প্রহরের। বুঝতে পারলো খুশির এই আত্মগোপনের কারণ। চাদর সরানোর সাথে সাথেই খুশি দুই হাতে মাথা ঢেকে নিয়ে আরও গুটিশুটি হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
–না…..না না তুমি দেখোনা। তোমার পায়ে পড়ছি তুমি চলে যাও এখান থেকে। আমাকে এই অবস্থায় দেখোনা। আমি মরে যাবো।

খুশির এই করুন অবস্থা দেখে প্রহর যেন হাজারো বার মরছে। আল্লাহ এতো কষ্ট কেন দিচ্ছে ওর খুশিকে? আর যে সহ্য হয়না। ওর সব কষ্ট আমার কেন হয়ে যায় না? অপারেশনের জন্য নার্স এসে খুশির চুল ফেলে নাড়া করে দিয়ে গেছে। সেজন্যই মেয়েটা এমন করছে। মেয়েটার তার চুলগুলো খুব প্রিয় ছিল। আর তারচেয়ে বেশি প্রিয় ছিল প্রহরের কাছে। এলোমেলো চুলগুলো প্রহরের মুখের ওপর এসে যখন বাড়ি খেত তখন মনে হতো যেন শ্রাবণের মেঘগুলো এসে ওকে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। খুশি যখন এটিটিউট দেখিয়ে চুলগুলো হাত দিয়ে ঝটকা মারতো তখন প্রহর যেন ফিদা হয়ে যেত।

খুশিকে এমতো অবস্থা দেখে খুশির মাও নিজের কান্না ধরে রাখতে পারলেন না। মুখে আঁচল চেপে ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি। খুশি যাতে বুঝতে না পারে তাই দৌড়ে বাইরে চলে গেলেন তিনি। তার পিছে পিছে বাকিরাও চলে গেলেন। এইমুহূর্তে শুধু প্রহরই পারবে খুশিকে সামলাতে। তাই ওদের একা ছেড়ে বাকিরা বাইরে চলে গেলেন।

প্রহর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে খুশির হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করে বললো।
–প্লিজ এমন করোনা সোনা। ঘোর আমার দিকে। একবার তাকাও প্লিজ।

খুশি কাঁদতে কাঁদতে বললো।
–না না আমি ঘুরবোনা। তুমি যাও এখান থেকে প্লিজ। আমাকে দেখোনা এভাবে। এভাবে দেখলে তোমার ঘিন্না লাগবে।

প্রহর এবার জোর করে খুশিকে নিজের দিকে ঘুরালো। কাঁদতে কাঁদতে খুশির চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। প্রহর দুই হাতে খুশির মুখটা আগলে ধরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে আবেগী কন্ঠে বললো।
–এই ময়না পাখি এমন করছিস কেন? একটু শান্ত হনা। তাকা আমার দিকে। একবার এই চোখে চোখ রেখে দেখ।

–আমি পারবোনা প্রহর। নিজেকে আমার বিবস্ত্র মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমাকে বস্ত্রহীন করে দিয়েছে। যেখানে আমি নিজেই নিজেকে দেখতে পাচ্ছি না। সেখানে তুমি কিভাবে দেখতে পারবে? আমাকে দেখলে তোমার ঘেন্না লাগবে। আমি সহ্য করতে পারবোনা। এরচেয়ে তো মরে গেলেও ভালো।

প্রহর এবার চোয়াল শক্ত করে ধমকের সুরে বললো।
–বাস অনেক হয়েছে। কি তখন থেকে আবোল তাবোল বলে যাচ্ছ? তুমি কি আমাকে এতটুকুই চিনেছ? তোমার প্রহরের ভালোবাসা কি এতটাই ঠুনকো? আমি কখনোই তোমার রুপের মোহে তোমাকে ভালোবাসিনি। তাহলে রুপ কমে গেলে ভালোবাসা কমে যাবে কেন? আর কে বলেছে তোমাকে এসব পঁচা কথা? তুমি আগেও আমার কাছে যা ছিলে এখনো তাই আছ আর ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। তোমার শারীরিক কোন পরিবর্তন আমার ভালোবাসার ওপর ভারি হতে পারবেনা। কখনোই না। তুমি যেমনই হও না কেন আমার কাছে তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী। আমার অপ্সরী। আমার খুশীরাণী। বুঝতে পেরেছ? আর কখনো এসব বাজে কথা বলবে না। আর এটাতো টেম্পোরারি করা হয়েছে। সবসময় কি আর এমনই থাকবে নাকি তুমি। অপারেশন হয়ে গেলে দেখবে কিছুদিনের মধ্যেই আবারও আমার সেই কেশবতী কন্যার ঘনকালো কেশের বাহার ফিরে আসবে।

খুশি তাও কেঁদেই যাচ্ছে। প্রহর এবার বলে উঠলো।
–ঠিক আছে তোমার মাথায় চুল নেই এটাইতো সমস্যা? তাহলে এক কাজ করি। আমিও আজ নাড়া করে ফেলি। তখন দুজনেই একরকম হয়ে যাবো। তাহলে তো আর সমস্যা নেই তাইনা?

খুশি এবার চমকে উঠে বললো।
–এই না না খবরদার এমন করবেনা। তাহলে কিন্তু আমি তোমাকে কখনো মাফ করবোনা।

প্রহর মুচকি হাসলো। চোখ দিয়ে ঝড়ে পড়লো নোনাজল। খুশির কপালে সময় নিয়ে একটা গভীর চুমু খেয়ে বললো।
–তাহলে কান্না বন্ধ করো এখন। নাহলে কিন্তু আমি সত্যি সত্যিই নাড়া করে ফেলবো। তখন তোমার টাকলা বরের সাথে থাকতে হবে কিন্তু।

খুশি অশ্রুসিক্ত চোখে হেঁসে দিয়ে প্রহরকে জড়িয়ে ধরলো।
__

অবশেষে সেই মুহূর্ত টা চলেই এলো। এখন সময় সকাল ১১টা। ১১-৩০ এ অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে খুশিকে। সবাই যেন কুকড়ে আছে। অপারেশনের আগে শেষবারের মতো খুশি সবার সাথে দেখা করতে চাইলো। সবার প্রথমে এলো খুশির মা বাবা। দুজনেরই চোখের পানি থামছেনা কিছুতেই। নিজের নারী ছেঁড়া ধন, কলিজার টুকরাকে তারা প্রাণভরে দেখছে। নাজানি আর এই মুখ দেখা তাদের নসিবে হবে কিনা। আজ সাহেলা বেগমের মতো শক্ত মনের মানুষও যেন সবচেয়ে বেশি দূর্বল হয়ে পড়েছে। কেনই বা হবে না, সে যে মা। আর এক মায়ের বুকে সন্তান হারানোর ভয় যখন হানা দেয় তখন সব শক্ত দেয়ালই ভেঙে পড়ে। মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে বড়ো দুনিয়াতে আর কিছুই নেই। লোকে বলে সন্তান হারালে নাকি মায়ের কলিজায় ছিদ্র হয়ে যায়। সাহেলা বেগমেরও একই অনুভব হচ্ছে। মেয়ের সামনে আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না তার। রাকিব হাসান তাকে ধরে রাখছেন আর নিজেও চোখের পানি ঝাড়াচ্ছেন। তাদের মন চাচ্ছে আবারও সেই ছোটবেলার মতোই মেয়েটাকে বুকের মাঝে আগলে রাখুক।

খুশি হাত বাড়িয়ে ওর মা বাবাকে কাছে ডাকলো। ওরা খুশির কাছে এসে বসলো। খুশি ওর মা বাবার চোখের পানি মুছে দিয়ে জোরপূর্বক হেসে বললো।
–আরে আরে এতো কাঁদার কি আছে? মনে হচ্ছে আমি এখনই পরপারে চলে গেছি। আর আম্মু তোমাকে এভাবে কাঁদলে কিন্তু একদম মানায় না। তোমাকে তো রাগী ভাবেই মানায়। একবার আবারও সেই আগের মতো করে বকোনা আমাকে আম্মু। প্লিজ শুধু একবার।

সাহেলা বেগম আরও বেশি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তবুও খুশির মন রাখতে কোনরকমে বলে উঠলেন।
–এ এই উড়নচণ্ডী মেয়ে, একদম পালানোর চেষ্টা করবিনা। ভালোই ভালোই ফিরে আসবি। নাহলে কিন্তু তোকে আমি মার দিবো।

খুশি অশ্রুসিক্ত চোখে হেঁসে দিল। তারপর বাবা মা দুজনের হাত ধরে বললো।
–আম্মু বাবা তোমরা আমাকে প্রমিজ করো। আমার কিছু হয়ে গেলে তোমরা ভেঙে পড়বেনা। একজন আরেকজনের খেয়াল রাখবে।

–এমন করে বলিস না মা। তোর কিছু হবে না। তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি দেখিস।

বাবা মায়ের সাথে দেখা শেষে এবার নিভান এলো খুশির কাছে। অশ্রু চোখে চেয়ে থেকে এগিয়ে এলো প্রানপ্রিয় বোনের কাছে। নিভানের কাছে তো ওর পৃথিবীই ছিল ওর আপু। আজ তার কিছু হয়ে গেলে নিভানও হয়তো বাঁচতে পারবেনা। নিভান খুশির সামনে এসে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
–আপু তোমার জন্য কিছু এনেছি আমি। দেখবে?

খুশি অশ্রুসিক্ত চোখে মুচকি হেসে বললো।
–হ্যাঁ দেখানা ভাই।

নিভান ওর হাতে থাকা আর্ট পেপার টা আস্তে করে উপরে তুলে ধরলো। পেপারে খুশির একটা হাস্যজ্বল মুখের ফুল স্কেচ আঁকানো। খুশি চোখের পানি ধরে রাখতে পারলোনা। অশ্রুসজল চোখে তাকালো ছোট ভাইটার দিকে। কান্না জড়িত কন্ঠে বললো।
–অনেক সুন্দর হয়েছে বাবু। আমার বাবুটা একদিন অনেক বড়ো আর্টিস্ট হবে। আমাদের নাম উজ্জ্বল করবে তাইনা?

নিভান আর থাকতে পারলোনা। দৌড়ে এসে খুশিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো।
–হ্যাঁ আপু আমি একদিন অনেক বড়ো আর্টিস্ট হবো। কিন্তু সেদিন আমার পুরস্কার হিসেবে তোমাকে চাই। আমি যখন কোন পুরস্কার পাবো সেখানে তোমার উপস্থিতি চাই। তুমি সবার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে আমার জন্য শিস বাজাবে,জোরে জোরে তালি বাজাবে। বলনা আপু তুমি থাকবেতো সেদিন?

খুশি অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই থাকবো। আমার বাবুর জন্য চেয়ারে উঠে দাঁড়িয়ে শিস বাজাবো। করতালিতে মুখরিত করে দিবো।

–প্রমিজ??

–পাক্কা প্রমিজ।

নিভানের পর এবার বেলি এলো খুশির কাছে। বাকি সবার মতো তারও একই অবস্থা। তিনিও অশ্রুসজল চোখে খুশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তখনই ওখানে জিদান সাহেবও এলো। খুশিই আসতে বলেছিল তাকে। খুশি হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকলো জিদান সাহেব কে। জিদান সাহেব নিজের কান্না আটকে জোরপূর্বক হেসে খুশির সামনে এসে বললো।
–অনেক হয়েছে বৌমা। অসুখের বাহানায় অনেক আরাম করেছ। এসব তালবাহানা আর চলবেনা বুঝেছ। জলদি জলদি ঠিক হয়ে বাসায় এসে সব কাজকাম করতে হবে। নাহলে কিন্তু আমি বকা দিবো। যতই মজা করিনা কেন শশুর হিসেবে কিন্তু আমি অনেক স্ট্রিক্ট।

খুশি মুচকি হেঁসে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি স্ট্রিক্ট হলে আমি অ্যাঞ্জেলিনা জলি। এখন এসব ছাড়ুন। এখানে আসুন আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
খুশি এক হাতে জিদান সাহেবর হাত ধরে, আরেক হাতে বেলির হাত ধরে বললো।
–আপনাদের দুজনের কাছে একটা ওয়াদা চাই আমি। আমার শেষ ইচ্ছাও বলতে পারেন। আমাকে কথা দিন আমার কথা রাখবেন।

জিদান সাহেব বললেন।
–হ্যাঁ মা অবশ্যই রাখবো। বলো কি চাই তোমার?

খুশি জিদান সাহেবের হাতের ওপর বেলির হাত রেখে বললো।
–আমাকে কথা দিন আপনারা দুজন মিলে একটা নতুন জীবন শুরু করবেন। আঙ্কেল, বেলি ফুপি আপনাকে অনেক ভালোবাসে। আপনার জন্য আজও সে বিয়ে করেনি। আর আপনিও এখন একাই আছেন। যে ভালোবাসা তখন অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিল। সেটা এখন পূরণ করবেন বলুন। আমার ফুপিকে বিয়ে করে তার হারানো ভালোবাসা ফিরিয়ে দিবেন। বলুন আমার কথা রাখবেন আপনারা।

বেলি চমকে উঠে বললো।
–খু খুশি কি বলছিস এসব? এটা হয়না মা। এখন আর এসব সম্ভব না।

তবে বেলিকে অবাক করে দিয়ে জিদান সাহেব অনায়াসে বলে উঠলেন।
–ঠিক আছে খুশি মা। তুমি যেমন চাও তেমনই হবে। তবে তোমাকেও প্রমিজ করতে হবে আমাদের বিয়েতে তোমাকে সবার আগে নাচতে হবে। বলো রাজি?

জিদান সাহেবের কথায় বেলি আরও বেশি চমকে গেল। তবে খুশি হাসিমুখে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ তাতো অবশ্যই। এটা আবার বলতে আছে নাকি।

এবার দেখা করার পালা এলো সেই ব্যাক্তির যার সামনে নিজেকে শক্ত রাখা সবচেয়ে কঠিন খুশির জন্য। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা ঠেলে মৃদু পায়ে কেবিনে ঢুকলো প্রহর। চোখ দুটো লাল টকটক করছে, মুখের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। যেন কোন ধ্বংসাবশেষ নির্জীব প্রাণী। খুশি হাতের মুঠো শক্ত করে নিজেকে শক্ত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। ও ভেঙে পড়লে যে প্রহর আরও ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে। প্রহর আস্তে করে এসে খুশির পাশে বসলো। খুশির দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেল। খুশি চোখের ইশারায় প্রহরকে ঝুঁকতে বললো। প্রহর মাথা ঝুকালে খুশি প্রহরের কপালে চুমু একে দিল। খুশির পর প্রহরও খুশির কপালে চুমু একে দিল। খুশি এবার মুখ উঁচু করে প্রহরের অধরে নিজের অধর চেপে ধরলো। ওভাবেই কিছুসময় অতিবাহিত করলো দুজন। দুজনেরই চোখে বরষার বৃষ্টিধারা ঝড়ছে। এরপর খুশি অধর ছেড়ে বলে উঠলো।
–আমাকে প্রমিজ করো আমার যদি কিছু হ…..

খুশির কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রহর খুশির ঠোঁটের ওপর তর্জনী আঙুল ঠেকিয়ে বললো।
–হুঁশশ,, তুমি যেটা বলতে চাইছ সেটা বলার চেষ্টাও করোনা। আমি তোমাকে কোন প্রমিজ করবোনা। কারণ প্রমিজ তুমি করবে। আর শুধু করবেনা সেটা করে দেখাবে। ফিরতে হবে তোমাকে। আমার কাছে ফিরবে তুমি। অবশ্যই অবশ্যই ফিরবে তুমি। তুমি হীনা প্রহরের কোন অস্তিত্ব নেই। তুমি আছ তো এই আমি আছি। নাহলে কিছুই নেই। তাই মনে রাখবে আমাকে ভালো রাখতে চাইলে তোমাকে ফিরতেই হবে। আর অন্য কোন উপায়ন্তর নেই।

প্রহর আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো খুশিকে। খুশিও দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো প্রহরকে। জানা নেই এই শান্তির আলিঙ্গন পাবে কিনা ও।

অতঃপর সেই সময় চলে এলো। খুশিকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নার্স আর ওয়ার্ড বয়রা এলো। খুশিকে স্ট্রেচারে শুইয়ে নিয়ে যেখানে লাগলো। খুশি এখনো শক্ত করে প্রহরের হাত ধরে আছে। প্রহর খুশির হাত ধরে থেকেই ওর সাথে সাথে যাচ্ছে। প্রহরের মনে হচ্ছে ওর ভেতর থেকে কলিজাটা কেউ ধীরে ধীরে টেনে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। জানটা যেন বেড়িয়ে যাচ্ছে ওর। একসময় ওটির সামনে চলে আসলো ওরা। প্রহরকে আর খুশির সাথে থাকতে দিলোনা ওরা। ধীরে ধীরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে গেল খুশিকে ওটির ভেতর। প্রহর অনুভূতি শূন্য হয়ে ধপ করে বসে পড়লো ওখানেই। ওর প্রাণভোমরা টাকি ফিরবে আবারও ওর কাছে?

সেই চার ঘন্টা ধরে খুশির অপারেশন চলছে। এখনো বের হয়নি ওরা। প্রতিটা মুহূর্ত যেন এক একটা যুগ মনে হচ্ছে প্রহরের কাছে। ওর ভেতর এখন কি চলছে তা কোন ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। ও বাস একটা অনুভূতি শূন্য পাথরের মতো দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। এই দেহে তখনই প্রাণ ফিরবে যখন খুশির কোন ভালো সংবাদ আসবে। খুশির মা বসে বসে শুধু তসবি টিপছেন আর দোয়াদরুদ পড়ছেন। নিভান কেঁদে কেঁদে অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা। বাকিদেরও খুবই দূর্বিষহ অবস্থা।

অতঃপর ওটির লাল আলোটা বন্ধ হলো। দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ডক্টর। প্রহর দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে ডক্টরের কাছে গিয়ে অস্থির কন্ঠে বললো।
–ড ডক্টর আ আমার খুশি কেমন আছে? ও ঠিক হয়ে গেছে তাইনা? আমি কি দেখা করতে পারি এখন? শুধু একটু দূর থেকে দেখবো।

ডক্টর মাথা নিচু করে মলিন সুরে বলে উঠলেন।
–অ্যাম সরি। উই ট্রাই আওয়ার বেস্ট। বাট ইটস নট সাকসেসফুল। সি ইজ নো মোর।

“” নো মোর”” বাচ এই একটা চারদিকে ধ্বনিত হতে লাগলো প্রহরের পুরো পৃথিবী মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল। অনুভূতি শূন্য জীবন্ত লাশ হয়ে গেল ও। বোধশক্তিহীন হয়ে ধীরে ধীরে পেছাতে লাগলো ও। হঠাৎ পাশে ফিরে তাকালো প্রহর।এইতো খুশি দাঁড়িয়ে আছে।সাদা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে কি সুন্দর হাসিমুখে দেখছে ওকে। প্রহরের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। প্রহর হাসিমুখে বললো।
–খুশি,, আমার খুশি…

খুশি মুচকি হেঁসে বলে উঠলো।
–আমি চলে যাচ্ছি প্রহর। ভালো থেক। নিজের খেয়াল রেখ।

খুশির কথায় প্রহরের ঠোঁটের হাসি বিলুপ্ত হয়ে গেল। খুশি হাত নেড়ে ধীরে ধীরে পিছিয়ে যেতে লাগলো। প্রহর আতঙ্কিত হয়ে খুশিকে ধরার জন্য এগিয়ে যেতে যেতে বললো।
–নো নো নো, ইউ কান্ট গো খুশি। ইউ প্রমিজ মি খুশি। যেওনা প্লিজ.. খুশি, খুশি…
খুশি শুনলোনা। একসময় ধোঁয়ায় মিলিয়ে গেল সে। প্রহর এবার গগনবিদারী আর্তচিৎকার দিয়ে বললো।
—খুশিইইইইইইইই

চলবে……

/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here