অন্তঃকরণে তোরই পদচারণ পর্ব -২৫+২৬

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-২৫
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★অশান্তি, অস্থির, চপল,অধীর,ব্যাকুলতা এমন সব শব্দের আরও যতো অনুভূতি আছে এই সবকিছুরই প্রতিফলন ঘটছে আপাতত প্রহরের শরীর মন জুড়ে। ক্রোধ আর জেদের বসে বিয়েতো করতে চেয়েছে ও।আর ওর জেদ মেনে মেয়ে ঠিক করে বিয়েও পাকা করে ফেলেছে জিদান সাহেব। প্রহর একাবারের জন্য মেয়েটিকে দেখেওনি। শুধু বলেছে দুদিনের মাঝেই বিয়ে করবে।তাই ওর কথামতো আজ ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। তবে বিয়ের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই অস্থিরতায় জ্বলে পুড়ে মরছে ও। অশান্তিতে মাথা ফেটে যাচ্ছে। একমুহূর্তের জন্যেও শান্তি পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে অনেক খারাপ কিছু হতে চলেছে।অতি মূল্যবান কিছু একটা ছুটে যাচ্ছে ওর হাত থেকে।

বিয়ে পড়ানোর জন্য নিচে আনা হয়েছে প্রহরকে। এখানে এসে ওর অশান্তি আরও বেড়ে যাচ্ছে। হাত পায়ের মাঝে নিসপিস করছে।অস্থির ভাবে পা দোলাচ্ছে আর হাতের তালু ঘষছে। গলা শুঁকিয়ে যেন মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে ওর। মনে হচ্ছে চারপাশ থেকে বিষাক্ত বিচ্ছুর দল ওকে কামড়াতে এগিয়ে আসছে।
একটু পরে কনেকে নিয়ে আসা হলো। কনেকে নিয়ে এসে প্রহরের বসানো হলো। প্রহর একাবারের জন্যেও মুখ তুলে তাকালো না সেদিকে। তবে কনেকে ওর পাশে বসাতেই প্রহরের অশান্তি যেন এবার শিখরে পৌঁছে গেল। মনে হচ্ছে কেউ ওর সারা শরীরে আগুন ঢেলে দিয়েছে। গলা কাটা মুরগীর ন্যায় ছটফট করছে ওর অন্তর বাহির। ওর পাশে তো শুধু ওর খুশি বসবে। আর কারোর অধিকার নেই। কারোর না। তাহলে এই মেয়েটা কেন বসেছে ওর পাশে? মেয়েটার এতো সাহস কি করে হলো?

কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। এবার যেন প্রহরের নিঃশ্বাসই বন্ধ হয়ে আসছে। নাহ আর পারছে না ও। এখানে আর এক সেকেন্ডও বসে থাকলে ও দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে। কাজি সাহেব যখন কবুল বলতে বললো তখন হঠাৎ প্রহর ঠাস করে উঠে দাঁড়াল। সবাই হতবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে। প্রহর ওর বাবার সামনে এসে করুন সুরে বললো।
–আই কান্ট বাবা। অ্যাম সরি।

প্রহরের মনের অবস্থান সম্পর্কে ভালো ভাবেই অবগত ওর বাবা। তাই তিনি বাঁধা দিলেন না প্রহরকে। চোখের ইশারায় প্রহরকে আস্বস্ত করলো। ব্যাস প্রহর আর একটা মুহূর্তও অপেক্ষা করলোনা। একছুটে বেড়িয়ে গেল বাইরে।

ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে চালাতে নিজের শেরওয়ানির বোতাম গুলো এক হাতে টেনে হিঁচড়ে খুলে ফেললো প্রহর। ও জানে না ও কি করছে। কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক তাও জানে না।ভালো মন্দের বিচার করার স্থিতি নেই এখন ওর মাঝে। শুধু জানে এই মুহূর্তে ওর খুশির কাছে যেতে হবে। তাছাড়া ওর এই অশান্ত ঝড় শান্ত হবে না। ও জানে না কেন যাচ্ছে ও খুশির কাছে। কিবা বলবে গিয়ে। শুধু জানে এই মুহূর্তে খুশিকে না দেখতে পেলে ওর দম বন্ধ হয়ে যাবে। তাই যে করেই হোক ওর খুশিকে দেখতেই হবে।

একটানা পাঁচ ছয় ঘন্টা যাবৎ ড্রাইভ করার পর খুলনা জেলার খুশির গ্রামে এসে পৌঁছালো প্রহর। কক্সবাজারের রিসোর্ট থেকে খুশির ঠিকানা সংগ্রহ করেছিল প্রহর। সেই ঠিকানায় এসে পৌঁছেছে ও।সময় তখন প্রায় রাত দশটা। গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে এগুলো বাসার দরজার দিকে। বুকের মাঝে অসম্ভব ধুকপুক করছে। নাজানি খুশিকে দেখলে ও কি বলবে? কিন্তু এসব কিছু এখন ভাবার সময় নেই ওর। যা হবার হবে। দরজার কাছে এসে কলিং বেল চাপলো প্রহর। একটু পরে একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দিল। প্রহর দেখে বললো।
–জ্বি আপনি কে? কাকে চান?

প্রহর গলা ঝেড়ে বিনয়ী সুরে বললো।
–জ্বি আমি মিসেস খন্দকারের সাথে দেখা করতে চাই।

–জ্বি বলুন আমিই মিসেস খন্দকার।

প্রহর ভাবলো মহিলাটি হয়তো বুঝতে পারেনি। তাই সে আবার বললো।
–জ্বি এটাকি জারিফ খন্দকারের বাড়ি না?

–হ্যাঁ।

–তো আমি একটু উনার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলাম।

–হ্যাঁ বলুন, আমিই ওনার স্ত্রী।

মহিলাটির কথায় প্রহর হতভম্ব হয়ে গেল। কি বলছেন ইনি? উনি যদি মিঃ জারিফের স্ত্রী হন তাহলে খুশি কই? আমি কি ভুল ঠিকানায় আসলাম নাকি? নাকি আমার বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে? প্রহর এবার সরাসরি জিজ্ঞেস করলো।
–জ্বি আমি আসলে খুশির কথা বলছিলাম। ও কি এবাড়িতে থাকে?

–খুশি? ও এবাড়িতে থাকবে কেন? খুশিতো ওদের বাড়িতে আছে। আপনি বোধহয় ভুলে এখানে চলে এসেছেন। এটাতো খুশির মামার বাড়ি। জারিফের ফুপুর মেয়ে খুশি।

স্তব্ধ হয়ে গেল প্রহর। বিস্ময়ে থমকে গেল ও। নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না ওর। মহিলাটি কি সত্যিই বলছে? তারমানে কি খুশি মিথ্যে বলেছে ওকে? খুশির কি তাহলে বিয়ে হয়নি? এইমুহূর্তে প্রহরের কি অনুভূতি হচ্ছে তা ও নিজেই জানে না। মনে হচ্ছে নতুন করে এক আশার আলো জ্বলছে মনে। প্রহর জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে থমকিত কন্ঠে বললো।
–খু খুশির বাড়িটা কোনদিকে?

মহিলাটি হাত উঠিয়ে সামনে ইশারা করে বললো।
–ওইতো সামনের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গেলে চার বাড়ি পরেই ওদের বাড়ি।

–জ্বি অনেক ধন্যবাদ।

প্রহর দ্রুত পা ফেলে সেদিকে এগিয়ে গেল। এইটুকু রাস্তা যেন আজ হাজার মাইলের দুরত্ব মনে হচ্ছে। মনের মাঝে তুমুল তোলপাড় চলছে প্রহরের। হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিক ভাবে। মস্তিষ্ক জুড়ে চলছে নানান প্রশ্নের বেড়াজাল। খুশির কি সত্যিই বিয়ে হয়নি? তাহলে ও মিথ্যে কেন বললো আমাকে? ওকি কিছু লুকাচ্ছে আমার কাছ থেকে? কিন্তু কি? নাকি আমিই আবার ভুল বুঝছি? এসব কিছুর জবাব এখন একমাত্র খুশিই দিতে পারবে। আর আজ ওকে জবাব দিতেই হবে। যাই হয়ে যাক না কেন।

ভাবনা চিন্তার মাঝেই প্রহর ওই মহিলার বর্ণনা অনুযায়ী খুশির বাড়ির সামনে চলে এলো। তবে বাড়ির সামনে এ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো প্রহরের। অজানা কোন ভয়ে প্রচুর অশান্ত হয়ে গেল মনটা। এ্যাম্বুলেন্স? খুশির বাড়ির সামনে এ্যাম্বুলেন্স কি করছে? কারোর কি কিছু হয়েছে? খু খুশির কিছু……… না না কি ভাবছি? খুশির কি হবে? ও ওর কিছু হবে না। ও একদম ঠিক আছে। আমি নিশ্চয় আবারও ভুল বাড়িতে চলে এসেছি। হ্যাঁ এটা খুশিদের বাড়ি না। নিজের মনকে এসব বুঝ দিয়ে ওখান থেকে সরে যেতে কদম বাড়ালো প্রহর। তবে এক কদম এগুতেই হঠাৎ হৃৎস্পন্দন অসম্ভব জোরে অধিকম্প আরম্ভ করে দিলো। থমকে গেল প্রহরের কদম। আর এগুতে পারলো না ও। ধীরে ধীরে পাশে ফিরে তাকালো প্রহর। বাড়ির দরজা দিয়ে কয়েকজন মিলে একটা স্ট্রেচার ঠেলে নিয়ে আসছে। তবে স্ট্রেচারে অক্সিজেন মাস্ক পড়া অবস্থায় জ্ঞানহীন খুশিকে দেখে প্রহরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। মুহূর্তেই পুরো পৃথিবী থমকে গেল ওর।অনুভূতিরা সব শূন্যের কোঠায়। চোখের সামনে যা দেখছে তা কোনমতেই মানতে চাইছে না ও। এ এটা আমার খুশি না। হতেই পারে না এটা খুশি। আমি নিশ্চয় ভুল দেখছি। মাথা নষ্ট হয়ে গেছে আমার। কিসব আবোল তাবোল দেখছি আমি।

প্রহর চোখ বন্ধ জোরে জোরে নিঃশ্বাস টেনে নিজের মাথার এলোমেলো ভুল ভাবনাগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলো। কিন্তু না বাস্তবতা ওকে আবারও প্রবল বেগে আঘাত করলো। চোখ খুলে তাকিয়ে সেই একই দৃশ্য দেখতে পেল প্রহর। এতক্ষণে খুশির পরিবারের সবাই বেড়িয়ে এসেছে। কান্নারত নিভানকে দেখে প্রহরের সব ভ্রম পরিস্কার হয়ে গেল। মন না মানলেও ওকে এই বিষাক্ত সত্য টা মানতেই হলো। আতঙ্কে হৃদপিণ্ড প্রচন্ড বেগে কাঁপছে । হাত পায়ের বোধশক্তি যেন হারিয়ে ফেলছে প্রহর। কোনরকমে কাঁপা কাঁপা পায়ে সামনে এগুলো প্রহর। তারপর হঠাৎ এক ছুটে চলে গেল খুশির কাছে। খুশির কাছে এসে দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে ভয়ার্ত কম্পিত গলায় বললো।
–খু খুশি, এ এই খুশি।খুশিরাণী, কি হয়েছে তোমার? এভাবে শুয়ে আছ কেন? আর এসব কি লাগিয়ে রেখেছ? প্লিজ ওঠনা? কথা বলো আমার সাথে।

হঠাৎ প্রহরকে দেখে সবাই হতবাক হয়ে গেল। অপরিচিত কাউকে খুশির জন্য এমন পাগলামী করতে দেখে বিস্মিত হয়ে গেল সবাই। খুশির বাবা রাকিব হাসান প্রহরের হাত ধরে খুশির কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো।
–এই ছেলে কে তুমি? আমার মেয়েকে কিভাবে চিনো?

প্রহর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আচমকা নিভান এসে প্রহরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। কাঁদতে কাঁদতে বললো।
–ভাইয়া কোথায় ছিলে তুমি? এতো দেরি কেন করলে আসতে? তুমিতো বলেছিলে তুমি আপুকে সবসময় ভালো রাখবে। কখনো কোন কষ্ট পেতে দিবে না। তাহলে আমার আপু এতো কষ্ট পাচ্ছে কেন? আপুর এতো কষ্ট আমার সহ্য হচ্ছে না ভাইয়া। প্লিজ আমার আপুকে ঠিক করে দাও তুমি।

প্রহর কি বলবে? ওতো নিজেই রক্তশূণ্য হয়ে পড়ছে। নিভানের কথায় মনে হচ্ছে ওর কলিজায় কেউ খামচে ধরেছে। খুশির যে কিছু একটা হয়েছে এই বিষাদময় সত্যটা না চাইতেও ওকে মানতে হচ্ছে। নিভানের কথায় খুশির পরিবারও এতক্ষণে বুঝে গেল ছেলেটা কে। খুশির বাবা প্রহরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–তাহলে কি তুমিই প্রহর?

প্রহর বলে উঠলো।
–জ্বি আঙ্কেল আমিই প্রহর। আঙ্কেল খুশির কি হয়েছে? ওকে এভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেন? প্লিজ বলুন না?

খুশির বাবা হু হু করে কেঁদে উঠলেন। কান্না জড়ানো কন্ঠে সবটা খুলে বললো প্রহরকে। সবটা শুনে প্রহরের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। অনুভূতি শূন্য পাথর হয়ে গেল প্রহর। হৃৎস্পন্দনের কম্পন যেন বন্ধ হয়ে গেল। হাত পা কাঁপছে থরথর করে। শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে ঠাস করে নিচে বসে পড়লো ও। ওর চোখের সামনে সব অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে।
__

হসপিটালের বেডে নীথর ভাবে শুয়ে আছে খুশি। হাতে লাগানো স্যালাইন, মুখে অক্সিজেন মাস্ক। কিছুক্ষণ পূর্বে জ্ঞান ফিরেছে। দূর্বল শরীরে চোখ বুজে আছে। আস্তে করে দরজা খুলে মৃদু পায়ে এসে দাঁড়াল প্রহর। রক্তলাল ব্যাথিত চোখ তুলে তাকালো খুশির পানে। প্রহরের মনে হচ্ছে এতদিনের কষ্ট বেদনা সবই যেন তুচ্ছ ছিল। যথার্থ মর্মপীড়া কি জিনিস সেটার উপলব্ধি তো আজ বুঝতে পারছে ও। খুশিকে এই অবস্থায় দেখার চেয়ে ভয়াবহ যন্ত্রণা আর কিছুতেই নেই। নিজের হৃদহরণী কে এই অবস্থায় দেখার চেয়ে তো মৃত্যুও বোধহয় সুখকর। সবকিছু যেন এক ভয়ংকর স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এটা যদি সত্যি স্বপ্ন হতো তাহলে প্রহর সারাজীবনেও আর কখনো ঘুমাতো না। এমনটা আমার খুশিরাণীর সাথেই কেন হলো? খুশির জায়গায় ওর নিজের কেন হলো না? আমার মাছুম পরিটা এত পীড়া কিভাবে সহ্য করছে? প্রহরের ভেতর টা যেন ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।

প্রহর কাঁপা কাঁপা পায়ে সামনে এগুলো। কারোর পায়ের আভাস পেয়ে দূর্বল চোখ দুটো ধীরে ধীরে মেলে তাকালো খুশি। প্রহরকে এইমুহূর্তে এখানে দেখে চমকে গেল খুশি। মনের ভ্রম ভেবে নিল ও। মনে করছে ও হয়তো ভুল দেখছে। খুশি বন্ধ করে আবার তাকালো। নাহ আবারও প্রহরকে দেখতে পেল ও। আৎকে উঠলো খুশি। প্রহর? ও এখানে কি করছে? ওর না আজকে বিয়ে? তাহলে কি ও সব জেনে গেছে? না না এ হতে পারে না। ও জানতে পারে না কিছু। খুশি নাকের অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে রেখে, জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
–আরে তু তুমি এখানে? কোন কাজে এসেছ বুঝি? আ আসলে আমার হালকা একটু মাথা ব্যাথা করছিল।তুমি তো জানোই এমন সময় এসব একটু আধটু হয়। তো তাই আমার হাসব্যান্ড এখানে নিয়ে এসেছে। ও না একটু বেশিই পাগল। আমার একটুখানি কিছু হলেই পাগল হয়ে যায়। সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

খুশির কথার প্রহরের মাঝে কোন প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছে না। প্রহর একইভাবে খুশির দিকে বেদনার্ত করুন চোখে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এসে খুশির বেডের পাশে এসে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। লাল অশ্রুসিক্ত চোখে স্থির দৃষ্টিতে খুশির মুখপানে তাকিয়ে রইলো। প্রহরের এই চাহুনি দেখে খুশি বুঝে গেল প্রহর নিশ্চয় সব জেনে গেছে। খুশি প্রহরের এই চাহুনি নিতে পারছে না। খুশি ধরা গলায় বললো।
–এ এভাবে তাকাবেনা। তাকাবেনা এভাবে আমার দিকে।

প্রহরের চোখের নোনাজল নীরবে গড়িয়ে পড়ছে। প্রহর কান্নাজড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো।
–আই হেট ইউ, আই হেট ইউ খুশি। আই জাস্ট হেট ইউ। তুমি এতটা স্বার্থপর কিভাবে হতে পারলে? আমিতো তোমাকে আমার জীবনের সুখের ভাগিদার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমিতো আমাকে তোমার দুঃখের ভাগিদার হবারও সুযোগ দিলে না। কিভাবে হলে এতটা স্বার্থপর? সব কষ্ট গুলো একাই নিতে চাচ্ছিলে? সম্পর্ক টাতো আমাদের দুজনের ছিল। তাহলে তুমি একাই কিভাবে দুজনের ফয়সালা করে ফেললে? কেন বলো?

খুশিও পারলোনা চোখের বাঁধ আটকে রাখতে। কান্না জড়িত কন্ঠে বললো।
–কারণ আমি তোমাকে আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে জড়াতে চাই না। যেখানে আমার জানা নেই আর কয়টা দিন আমার আয়ু আছে। আজকের দিনটাও পার করতে পারবো কিনা তার ভরসা নেই।

প্রহর আর থাকতে পারলোনা। উঠে গিয়ে খুশিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে হু হু কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো।
–কিচ্ছু হবে না তোমার। আমার কলিজাটার কিচ্ছু হবে না। আমি কিছু হতে দিবো না। তুমি একদম সুস্থ হয়ে যাবে।

খুশিও প্রহরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। কিছুক্ষণ পর প্রহর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে খুশির চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে মায়া ভরা কন্ঠে বললো।
–আর কাঁদে না। আমি এসে গেছি না? সব ঠিক করে দিবো।

খুশির হঠাৎ প্রহরের বিয়ের কথা মনে পড়লো। খুশি প্রহরকে ছেড়ে দিয়ে চোখ নামিয়ে মলিন কন্ঠে বললো।
–তোমার এখান থেকে যাওয়া উচিত প্রহর। তুমি এখন অন্য কারো। বিয়ে হয়ে গেছে তোমার।

প্রহর স্বাভাবিক সুরে বললো।
–হ্যাঁ বিয়েতে হয়েছে। তাও দু বছর আগে। আমার দুষ্টুপরির সাথে। আর আমি আমার বউয়ের কাছেই আছি।

খুশি বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে বললো।
–মা মানে? তুমি কি আজ বিয়ে করোনি?

–বউ থাকতে বিয়ে করবো কেন?

–হেয়ালি করো না। ঠিক করে বলো।

–আরে নারে পাগলি। প্রহরের জীবনে খুশি ব্যাতিত অন্য কোন নারীর জায়গা নেই। হ্যাঁ রাগের মাথায় বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ক্ষমতা হয়নি। আমার জীবন যে শুধুই আমার খুশিময়। তুমি ভাবলে কিভাবে আমি তোমাকে ছাড়া কখনো ভালো থাকবো? তুমি বিহীন তো আমার হৃদয়ের স্পন্দনই চলবেনা। ভালো থাকাতো অনেক দূরের কথা।

–তাহলে ওই ছবি?

–কোন ছবি?

খুশি প্রহরের ফোনটা নিয়ে ওই ছবিটা বের করে দেখালো। প্রহর ছবিটা দেখে বললো।
–আরে এটা হয়তো ফাহিম কোন একসময় তুলে আপলোড করে দিয়েছে।

–তারমানে তুমি সত্যিই বিয়ে করোনি।

–উহুম। আমার এতো মিষ্টি একটা বউ থাকতে আবার করবো কেন? আমার বাচ তুমি হলেই চলবে। আর কখনো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাববে না। শুধু এভাবেই আমার পাশে থেক। বাদবাকি আমি সব ঠিক করে দেব।
আবারও খুশির কপালে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নিল। খুশিও হার মেনে নিলো। চেষ্টা তো কম করেনি ও। কিন্তু নিয়তির হয়তো অন্য কিছুই ইচ্ছে। তাই সবকিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিল। যা হবার হবে। প্রহরকে আর দূরে সরাবেনা ও। মৃত্যুর সময় ওর মুখটা দেখে মরলে। তাও হয়তো শান্তি পাবে। তাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পরম আবেশে প্রহরের বুকে লুকিয়ে পড়লো। দেখা যাক ভাগ্য ওদের কাহিনির কি মোড় দেয়।
#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-২৬
#লেখিকা-মেহরুম নূর

★প্রহর বসে আছে খুশির বাবা মায়ের সামনে। খুশি আপাতত বেডে রেস্ট নিচ্ছে। প্রহর খুশির বাবাকে এযাবতকালের সব ঘটনাই বিস্তারিত খুলে বললো। সব শুনে খুশির বাবা মাও বাকরূদ্ধ হয়ে গেল। প্রহর যে তাদের মেয়ের জন্য এতোটা পাগল তা জানাই ছিলনা। ওরাতো শুধু খুশির মুখেই শুনেছিল প্রহরের কথা। তাছাড়া আর কিছুই জানতোনা। তবে আজ প্রহরকে দেখে তারা অবাক হয়ে যাচ্ছে।অন্য কেউ হলেতো এতদিনে কবে খুশিকে ভুলে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিতো। ছেলেটা কতো ভালোবাসে খুশিকে।সব বাবা মা তাদের মেয়ের জন্য এমন একটা জীবনসঙ্গী চায়। যে তাদের মেয়েকে তাদের চেয়েও বেশি ভালোবাসবে। কিন্তু মেয়েটার কপালে কি সেই সুখ আছে?

প্রহর খুশির অসুখের সব ডিটেইলস জানতপ চাইলো। রাকিব হাসান মলিন সুরে বললেন।
–টিউমার ধরা পড়েছে পাঁচ মাস পূর্বে। ডক্টর বলেছে অপারেশন করা গেলে ঠিক হয়ে যাবে। তবে এই অপারেশন অনেক রিস্কি। নাইন্টি পার্সেন্টই আনসাকসেসফুল হওয়ার ভয় আছে। তবুও আমরা সাহস করে করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু খুশি কিছুতেই রাজি হয়না। ও বলে সে অপারেশন থিয়েটারে মরতে চাইনা। এমনিতেই যে কয়দিন বাঁচতে পারে বাচবে। আমরাও ওর জেদের কাছে হার মেনে নিয়েছি।

প্রহর বলে উঠলো।
— আঙ্কেল আমার কাছে 90% পার্সেন্ট আনসাকসেসফুল হওয়া টা বড়ো কথা না। বড়ো কথা হলো দশ পার্সেন্ট সাকসেসফুল হওয়ার কথা। আর এটাই আমার বিশ্বাস গাঢ় করার জন্য যথেষ্ট। তবুও তো দশ পার্সেন্ট আছে। আরে শুধু এক পার্সেন্ট চাঞ্চও যদি থাকতো তবুও আমি ভরসা হারাতাম না। আল্লাহর ওপর আমার ভরসা আছে।তিনি হয়তো আমাদের পরিক্ষা নিচ্ছেন। তবে আমি জানি তিনি সব ঠিক করে দেবেন। আর খুশির চিন্তা করেন না। আমি ওকে রাজি করাবো।

–ঠিক আছে বাবা তুমি যেটা ভালো বোঝ তাই কর। বাচ আমার মেয়েটা যেন ঠিক হয়ে যায়। আমার সেই হাসিখুশি প্রাণচঞ্চল মেয়েটা যেন আবার ফিরে আসে। আর কিছু চাইনা আমাদের।

–আঙ্কেল আমি খুুশিকে আজই ঢাকায় নিয়ে যেতে চাই। ঢাকায় আমি ওকে দেশের সবচেয়ে বড়ো নিউরো সার্জেন কে দেখাবো।

–ঠিক আছে। আমি তাহলে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করছি।

–আঙ্কেল আপনি হয়তো বুঝতে পারেননি আমার কথা। আমি খুশিকে আমার বউ করে নিয়ে যেতে চাই। আমি আজই খুশিকে বিয়ে করতে চাই। আমার বাবাকেও ফোন করে দিয়েছি সেও কিছুক্ষণ পর চলে আসবে।

রাকিব হাসান এবং তার স্ত্রী মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। তারা বুঝতে পারছেন না এইমুহূর্তে তাদের কি বলা উচিত। রাকিব হাসান বলে উঠলেন।
–কিন্তু বাবা এটা কি করে সম্ভব? খুশির এই অবস্থায় এইমুহূর্তে বিয়ে? তুমি সব ভেবে চিন্তে বলছতো?

–হ্যাঁ আঙ্কেল। একদম সুস্থ মাথায় বলছি। আমি একবার খুশিকে হারিয়েছি। আর কোন রিস্ক নিতে পারবোনা। খুশিকে আমি আর একমুহূর্তের জন্যেও নিজের থেকে দূরে রাখতে পারবোনা। আমি আজ এক্ষুনি খুশিকে আমার বউ করতে চাই। এখন থেকে খুশির সব দায়িত্ব একান্ত আমার। ওর ভালো মন্দ সবকিছু দেখাশোনার দায়িত্ব আমার। দরকার হলে ওকে আমি দেশের বাইরে নিয়ে যাবো। আল্লাহ সহায় থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

–কিন্তু খুশি কি রাজি হবে?

–ওর চিন্তা করেন না। আমি ওকে মানিয়ে নিবো।

–ঠিক আছে আমি তাহলে গিয়ে খুশির ডিসচার্জ পেপার রেডি করছি। ডক্টর বলেছে স্যালাইন শেষ হলে ওকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো।

–ওকে।
__

খুশিকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে মাত্রই। বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে প্রহর খুশিকে কোলে করে নামালো গাড়ি থেকে। বাবা মায়ের সামনে এভাবে কোলে নেওয়ায় খুশি একটু থতমত খেয়ে গেল। কিন্তু প্রহরের সেসবে ভ্রুক্ষেপ নেই। নিভান এদিকে শুধু ঠোঁট টিপে হাসছে। প্রহর খুশিকে কোলে নিয়ে এসে খুশির রুমের বেডে আস্তে করে শুইয়ে দিলো। খুশির গালে হাত বুলিয়ে বললো।
–এখন ঠিক লাগছে তোমার? কিছু খাবে?

খুশি আস্তে করে মাথা নেড়ে বললো।
–না। আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছেনা। আর দেখ প্লিজ আমাকে সবসময় এমন রুগীদের মতো এক্সট্রা কেয়ার করবেনা প্লিজ। আমার এসব ভালো লাগে না।

প্রহর খেয়াল করছে খুশি কথা বলার সময় ওর দিকে তাকাচ্ছে না। প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি হয়েছে খুশি? আমার দিকে তাকাচ্ছ না কেন?

খুশি অভিমানী সুরে বললো।
–এমনি। তুমি প্লিজ আগে গিয়ে চেঞ্জ করে এসো।

প্রহর কপাল কুঁচকে নিজের গায়ে একটু শুঁকে দেখলো কোন দুর্গন্ধ আছে কিনা। তারপর বললো।
–চেঞ্জ? কেন? আমার কাছ থেকে কি কোন দুর্গন্ধ আসছে?

–জানি না। তুমি চেঞ্জ করে আসো ব্যাস।

–আরে বাবা চেঞ্জ করবো কিভাবে? আমি কি জামাকাপড় নিয়ে এসেছি নাকি? বাবাকে বলেছি আনতে। বাবা আসুক তারপর চেঞ্জ করে নিবো।

–ঠিক আছে আমি আম্মুকে বলে দিচ্ছি বাবার জামাকাপড় দিয়ে দিবে তোমাকে। আঙ্কেল না আসা পর্যন্ত ততক্ষণ ওগুলোই পড়ে নাও।

প্রহর এবার সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
–ব্যাপার কি বলোতো? আমার চেঞ্জ করার পেছনে লেগে আছ কেন? যা পড়ে আছি তাতে কি সমস্যা? এই শেরওয়ানিতে……
শেরওয়ানি বলতেই প্রহরের ব্রেনের বাতি জ্বলে উঠলো। আসল কাহিনি বুঝতে পারলো ও। প্রহর বলে উঠলো।
–ওওওও আচ্ছা তো এই কথা? মহারাণীর আমার এই শেরওয়ানি টা চোখে বিঁধছে তাইতো?

খুশি অন্যদিকে তাকিয়ে অভিমানী সুরে বললো। –হ্যাঁ। তুমি এই শেরওয়ানি পরে ওই মেয়েটার সাথে বসেছিলে। এটা দেখলেই আমার সেটা মনে পড়ে যায়।

প্রহর স্মিথ হেঁসে বললো।
–আচ্ছা তো ওই মেয়েটার কাছে বসাই তুমি সহ্য করতে পারছোনা। আর যদি সত্যি বিয়ে করে ফেলতাম তখন?

খুশি ব্যাথিত চোখে তাকালো প্রহরের দিকে। প্রহর খুশির কানের নিচে হাত রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–এভাবে দেখছ কেন হ্যাঁ? নিজেকে খুব জ্ঞানী মনে করো? তোমার বোকামির জন্য আজ যদি আমি রাগের বশে আমি বিয়েটা করে ফেলতাম তখন?

খুশি ওর অভিমানের মাত্রা আরও একটু বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
–কি হতো? ভালোই হতো। ওই চুড়েল টা তোমার বউ….

খুশির কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রহর ধমকের সুরে বলে উঠলো।
–শাট আপ ইডিয়ট। আজ শুধু অসুস্থ বলে বেঁচে গেলে আমার হাত থেকে। নাহলে তোমাকে তো আজ উঠিয়ে একটা আছাড় মারতাম। স্টুপিড সিলি গার্ল। খবরদার আর কখনো যদি এমন বোকামি দেখানোর চেষ্টা করেছ তো দেখ তোমার কি হাল করি আমি।
কথাটা বলে প্রহর খুশিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো।

হঠাৎ কারোর গলা ঝাড়ার শব্দে প্রহর খুশিকে ছেড়ে দিয়ে পেছনে তাকালো। খুশিও সামনে তাকিয়ে দেখলো প্রহরের বাবা জিদান সাহেব এসেছেন। খুশি হাসিমুখে বললো।
–আরে এসবি? কেমন আছেন?

তবে জিদান সাহেব খুশির কথার কোন উওর দিলেন না। গুরুগম্ভীর ভাব ধরে খুশির দিকে না তাকিয়ে সোজা প্রহরের কাছে গিয়ে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো।
–এই নে তোর জামাকাপড়।

প্রহর প্যাকেট টা হাতে নিল। খুশি বুঝতে পারছে জিদান সাহেব ওর ওপর অভিমান করেছে। খুশি অপরাধী সুরে বললো।
–এসবি কি আমার ওপর রাগ করে আছেন? কথা বলবেন না?

জিদান সাহেব প্রহরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন।
–প্রহর কাউকে বলে দে, আমি কারোর এসবি না। আর আমি কারোর সাথে কথাও বলতে চাইনা।

খুশি মুচকি হেসে বললো।
–একটুও না?

–এক চিমটিও না।

–সরি এসবি? দেখুন এভাবে বেশিক্ষণ গাল ফুলিয়ে থাকলে কিন্তু গালের ভেতর থেকে গাছ বেড়িয়ে যাবে। তখন কিন্তু দেখতে খুবই পঁচা লাগবে।

জিদান সাহেব তবুও ঘাড় বাঁকা করেই রইলো। খুশি আরও অনুনয়ের সুরে বললো।
–প্লিজ এসবি সরি না? দেখুন এবার কথা না বললে কিন্তু আমি কেঁদে দিবো।

জিদান সাহেব আর অভিমান করে থাকতে পারলেন না। হালকা হেঁসে বললো।
–ঠিক আছে ঠিক আছে কাঁদতে হবে না। একবারের মতো মাফ করে দিলাম। বিয়ের দিন আর কান্নাকাটির দরকার নেই। নাহলে বউ সাজলে খারাপ দেখা যাবে।

খুশি চকিত হয়ে বললো।
–এক মিনিট! বিয়ে? কিসের বিয়ে? কার বিয়ে?

–দেখ আমারতো এখনো বিয়ের বয়স হয়নি।অ্যাম টু ইয়াং নাউ। তো আপাতত তোমাদেরই বিয়ে হচ্ছে।

খুশির এবার প্রহরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–প্রহর এসবি কি বলছে এসব?

প্রহর খুশির হাত ধরে বললো।
–হ্যাঁ বাবা ঠিকই বলেছে। আজ আমাদের বিয়ে। আমরা আজ এক্ষুনি বিয়ে করবো।

খুশি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বললো।
–বিয়ে করবো মানে কি? বললেই হলো নাকি? আর আমার কাছে না জিজ্ঞেস করে তুমি বিয়ের ফয়সালা কিভাবে করে ফেললে? দেখ আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা। অ্যাম সরি।

প্রহর দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি। তোমাকে বলছি। আমরা আজ এক্ষুনি বিয়ে করবো এন্ড দ্যাটস ফাইনাল।

–দেখ প্রহর বোঝার চেষ্টা করো। আমার এই অনিশ্চিত জীবন নিয়ে কোন সম্পর্কের বন্ধনে জড়ানো টা মোটেও ঠিক না। আমরা সামনাসামনি আছি এটাই যথেষ্ট। বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কি দরকার? পরবর্তীতে তুমি এক অসম্পূর্ণতার মাঝে ভুগবে। যেটা আমি একদমই চাইনা। প্লিজ এই বিয়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।

প্রহরের এবার রাগ উঠে গেল। প্রহর চোয়াল শক্ত করে বললো।
–খুশি আবারও পাকনামি শুরু করেছ তুমি? আমি বলেছি আজ বিয়ে হবে মানে হবে। আর দ্বিতীয় কোন কথা শুনতে চাইনা আমি।

–কিন্তু আমি এই বিয়ে করবোনা।

প্রহর এবার রাগে খুশীর দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বললো।
–ডোন্ট ট্রাই মাই পেশেন্স খুশি। তুমি চাও বা না চাও বিয়েতো আজ হবেই।

ওইমুহুর্তে হঠাৎ ওখানে খুশির বাবা রাকিব হাসান এসে দাঁড়ালেন। প্রহরকে এভাবে খুশির সাথে রাগ দেখানো দেখে উনি রেগে উঠে বললেন।
–প্রহর, তোমার সাহস কি করে হলো আমার মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলার? তোমাকে তো আমি ভদ্র ছেলে ভেবেছিলাম। এখনতো দেখছি তুমি নিহায়েতই একটা অভদ্র উগ্র মেজাজী ছেলে। তোমার মতো উগ্র মেজাজী ছেলের সাথে আমার মেয়েকে আমি বিয়ে দেবোনা।

রাকিব হাসানের কথায় প্রহর একটু ঘাবড়ে গেল। খুশিরও খারাপ লাগছে প্রহরকে এভাবে কথা শোনাতে দেখে। বাবা প্রহরকে ভুল বুঝছে। প্রহর কিছু বলতে যাবে তার আগেই জিদান সাহেব তেতে উঠে রাকিব হাসানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন।
–দেখুন আমার ছেলের সম্বন্ধে একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবেন না। আমার ছেলে লাখে একটা। আগে নিজে ভদ্রতা ভালোকরে শিখে আসুন তারপর অন্যের ভদ্রতা জাজ করতে আসবেন।

–হ্যাঁ হ্যাঁ আপনিতো বলবেনই। নিজের টা সবসময় সবার কাছে ভালোই মনে হয়। যেমন ছেলে তেমন তার বাপ। আমারতো মনে হচ্ছে খুশি এইজন্যই আপনার ছেলের কাছ থেকে পালিয়ে এসেছে। নাহলে আপনার যে গুন্ডা ছেলে, হয়তো এতদিনে আমার মেয়েটাকে মেরে গুম করে ফেলতো।

–এইযে মিঃ মুখ সামলে কথা বলুন। আপনার সাহস কি করে আমার ছেলেকে গুন্ডা বলার? দেশের সেরা টপ টেন ইয়াং বিজনেস ম্যানকে আপনি গুন্ডা বলছেন? আমার তো মনে হচ্ছে আপনার মাথায় ঘিলুর বদলে এক বালতি গোবর পোরা আছে। পাগলের বংশধর।

ব্যাস এবারতো রাকিব হাসানের অগ্নিগিরির লাভা ফেটে গেল। দুজনের মাঝে তুমুল বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। কেউ কারোর থেকে কম যায়না। এদের মহাযুদ্ধ দেখে প্রহর আর খুশি দুজনেই হতভম্ব হয়ে গেল। সিচুয়েশন হঠাৎ এমন আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যাবে তা ভাবতেই পারেনি ওরা। প্রহর দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে জিদান সাহেবের হাত ধরে বলে উঠলো।
–কি করছো বাবা এসব? শুধু শুধু কথা বাড়াচ্ছ কেন?

খুশিও ওর বাবার উদ্দেশ্যে বললো।
–হ্যাঁ বাবা তুমিও প্লিজ শান্ত হও। তুমি প্রহরকে ভুল বুঝছ।

রাকিব হাসান দৃঢ় কন্ঠে বললেন।
–আমি একদম ঠিক বুঝে গেছি। এই ছেলেটা মোটেও তোর যোগ্য না। তুই ওর কাছ থেকে চলে এসে ভালোই করেছিস। আমি তোকে এই ছেলের সাথে কিছুতেই বিয়ে দেবোনা।

জিদান সাহেবও তেজী কন্ঠে বলে উঠলেন।
–আরে আপনি কি বিয়ে দিবেন না। আমিই আমার ছেলেকে আপনারদের মতো পাগলের খানদানে বিয়ে করাবোনা। এই প্রহর চল এখান থেকে আর একমুহূর্তও এখানে দাঁড়াবো না আমরা।
কথাটা বলে জিদান সাহেব প্রহরের হাত ধরে ওখান থেকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। প্রহর বেচারা যেন অথই সমুদ্রে পড়ে গেল। বাবার জেদের সামনে কিছুতেই পেরে উঠছে না। অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো খুশির দিকে। খুশির চোখেও পানি চলে আসলো। কি থেকে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছে না ও। সব ওর ভুল। ও যদি তখন প্রহরকে বিয়ের জন্য মানা না করতো তাহলে এসব হতোই না। তাহলে আবারও ওরা আলাদা হয়ে যাবে?
___

রাত ১২ টা,
খুশির চোখে ঘুম নেই। বারবার চোখের কোনে পানি জমে যাচ্ছে। প্রহরকে পেয়েও আবার হারিয়ে ফেললো ও। কে বলেছিল তখন অতো পন্ডিতি করতে? বিয়েই তো করতে চেয়েছিল বেচারা। রাজি হয়ে গেলে কি হতো? শুধু শুধু বাবা ভুল বুঝলো ওকে। নাজানি প্রহর কতো হার্ট হয়েছে বাবার কথায়। বাবারও হঠাৎ কি হয়েছে কে জানে? আগে তো কখনো এতো রাগ করতে দেখিনি। সবসময় সুইট ইনোসেন্ট হয়ে থাকা বাবার আজ আবার কি হলো? হঠাৎ এমন সি গ্রেট ফিল্মের বাবাদের মতো এমন করছে কেন?

হঠাৎ জানালায় টোকা পড়ার শব্দে হকচকিয়ে উঠলো খুশি। এতো রাতে জানালায় টোকা পড়ার শব্দে ভয় পেয়ে গেল খুশি। ভীতু স্বরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
–ক ককে???

ওপাশ থেকে ফিসফিস করে কেউ বললো।
–খুশি আমি প্রহর। জানালা খোল।

খুশি চমকে উঠলো। দ্রুত উঠে গিয়ে জানালা খুলে বললো।
–প্রহর তুমি এতোরাতে এখানে কি করছ?

প্রহর জানালার চৌকাঠ টপকে ভেতরে ঢুকে বললো।
–দিলওয়ালে দুলহানিয়া নিয়ে যেতে এসেছে।

–মানে?

প্রহর ফট করে খুশিকে কোলে তুলে নিয়ে বললো।
–মানে আমি কি বলেছিলাম ভুলে গেছ? আজ আমাদের বিয়ে হবে মানে হবে। বাই হুক অর বাই ক্রুক।

–কিন্তু আমাদের বাবারা তো রাজিনা।

–না হলো রাজি, হু কেয়ারস? আজতো আমি বিয়ে করেই ছাড়বো। এই সিঙ্গেল স্টাটাস আজ আপডেট করেই ছাড়বো।

–কি বলছ এসব? কিছুই তো বুঝতে পারছিনা আমি।

–কিছু বুঝতে হবে না তোমার। শুধু চুপচাপ আমার গলা জড়িয়ে ধরে থাক। আর আওয়াজ করবেনা একদম।

প্রহর খুশিকে কোলে নিয়ে এসে আস্তে করে দরজাটা খুলে মৃদু পায়ে বেড়িয়ে এলো। বাইরে এসে দেখলো নিভান দাঁড়িয়ে আছে। প্রহর ফিসফিস করে বললো।
–সালা সাহেব অল ক্লিয়ার?

নিভান বলে উঠলো।
–ইয়েস ইয়েস ভাইয়া ময়দান একদম ক্লিয়ার। এখুনি রওয়ানা দিতে হবে।

–বাহ্ এই না হলে সালা সাহেব বলে কথা। কি সুন্দর বোনকে ভাগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে। তোমার এই উপকার আমার ওপর ঋণ ধার্য থাকলো। তোমার সময় আসলে আমিও ঋণ পরিশোধ করে দিবো সালা সাহেব।

–ওসব তো ঠিক আছে কিন্তু এই সালা টালা সম্বোধন করবেন না প্লিজ। ইটস সাউন্ড ভেরি বিয়ার্ড।

এদের কথপোকথন শুনে খুশি বেচারি টাস্কি খেয়ে গেল। ও ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এই এই এক মিনিট! এসব কি চলছে? এনিহাউ তুমি কি আমাকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছ?

প্রহর চোখ গরম করে বললো।
–এই তোমাকে না চুপ করে থাকতে বলেছি? আবার কথা বলছ কেন? শুশ,,

–আরে কিন্তু,,,

খুশির কথার ভ্রুক্ষেপ না করে প্রহর দ্রুত চুপিসারে বেড়িয়ে এলো বাড়ির ভেতর থেকে। নিভানও এলো ওদের সাথে। বাইরে এসে দ্রুত হাঁটা ধরলো ওরা। কিছুদুর হেঁটে আসার পর প্রহরের গাড়িতে এসে পৌঁছালো ওরা। খুশিকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেরাও উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। খুশি বারবার নানান প্রশ্ন করে যাচ্ছে কিন্তু প্রহর বারবারই ওকে চুপ করিয়ে দিচ্ছে।

দশ মিনিট পর গাড়ি এসে থামলো কাজি অফিসের সামনে। প্রহর গাড়ি থেকে নেমে আবারও খুশিকে কোলে তুলে নিল। কাজি অফিস দেখে খুশির আর বুঝতে বাকি রইলো না এদের পরিকল্পনা। আর কিছু বললো না খুশি। জানে এখন আর বলে কোন লাভ নেই। প্রহর যা করার করেই যাবে।
প্রহর খুশিকে নিয়ে কাজি অফিসের ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে এসে ফাহিমকে দেখতে পেল খুশি। আর কাজি সাহেব টেবিলে হাত রেখে ঘুমে ঢুলছে।প্রহর খুশিকে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। খুশি ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বললো।
–আরে ফাহিম ভাইয়া আপনিও এসেছেন?

ফাহিম মাথা নিচু করে অপরাধী সুরে বললো।
–অ্যাম সরি ভাবিজী। ভেরি ভেরি সরি। সেদিন না জেনে শুনে আপনাকে কতো কটু কথা শুনিয়ে দিয়েছি। প্লিজ মাফ করে দিন আমাকে।

খুশি হাসিমুখে বললো।
–আরে চালতাহে ভাইয়া। আমি জানি আপনি প্রহরের জন্য চিন্তিত ছিলেন তাই ওমন রিয়্যাক্ট করেছেন। আমি কিছু মনে করি নি। তাই ওসব ভুলে যান। জাস্ট চিল।

–না আপনি আমাকে মাফ করেননি। মাফ করলে এখনও ভাইয়া ভাইয়া বলতেন না। আমি তো আপনার ওয়ান এন্ড অনলি দেবর জী ছিলাম।

খুশি মৃদু হেসে বললো।
–ও আচ্ছা এই কথা? তো এখুনি বলছি হায় দেবরজী কেমন আছেন?

ফাহিম এবার হাসিমুখে বললো।
–আমিতো বিন্দাস আছি ভাবিজী। আপনি জেনে খুশি হবেন যে, আমি আপনার দেবরাণী পেয়ে গেছি। কিছুদিনের মধ্যে আমাদের বিয়ে।

–ওয়াও এতো কামাল হো গায়া। কংগ্রাচুলেশনস দেবরজী।

–থ্যাংক ইউ ভাবিজী।

প্রহর বিরক্তির সুরে বললো।
–শেষ হয়েছে তোদের ভাবি দেওরের ভারত মিলাব? এখন আপনাদের কৃপা হলে কি দয়া করে যে কাজে এসেছি সেটা করতে পারি?

ফাহিম বলে উঠলো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই ইয়ার। এই দেখ কাজি বেডারে এই মাঝরাইতে কম্বলের ভেতর থেকে উঠাইয়া আনছি। বেচারা কি সুন্দর বউয়ের গলা জড়াইয়া ধইরা আরামে শুয়েছিল। আমি সেখান থেকে টেনে তুলে এনেছি তোদের জন্য। দেখনা এহোনো বেচারা ঝিমাচ্ছে।

প্রহর কাজীর ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য টেবিলের ওপর ঠাস করে একটা চাপড় মারলো। বেচারা কাজি ধড়ফড়িয়ে উঠে বলতে লাগলো।
–এই না না দয়া মারবেন না আমাকে ডাকাত ভাই। আমার ঘরে ছোট ছোট নয়টা বাচ্চা আছে। আর একটা বউয়ের পেটে।

ফাহিম বলে উঠলো।
–ও মাই গড,, তাহলে আপনিই সেই ধরনীর দুশমন? যার কারণে পৃথিবীতে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বেড়েই চলেছে। আপনাকে তো এই মুহুর্তে ডিসমেন্টাল করে দেওয়া উচিত।

কাজী সাহেব বেকুবের মতো তাকিয়ে বললো।
–আরে না না ভাই মেন্টাল কেন করবেন? আমি পাগল হয়ে গেলে আমার বউ বাচ্চাগুলোর কি হবে? আমার বউ আবার এমনিতেই একটু সহজসরল । বেচারি আবার আমার প্রতিবেশীর সাথে অ্যাফেয়ার শুরু করে দিবে।

প্রহর এবার চরম বিরক্ত হয়ে বললো।
–স্টপ দিস ননসেন্স। আর কাজি সাহেব আপনাকে এখানে আমাদের বিয়ে পড়ানোর জন্য আনা হয়েছে। তাই জলদি কাজ শুরু করুন।

কাজী সাহেব আবারও বেকুবের মতো বলে উঠলো।
–কি কন সাহেব এইগুলান? ছ্যা ছ্যা ছ্যা..। ছেলে হয়ে আরেক ছেলেকে বিয়ে করতে চান? দেহেন বিদেশে এইগুলান চললেও,আমগো দেশ এহোনো এতো উন্নতি করে নাই।

ফাহিম দুষ্টুমি করে বললো।
–প্রহর কাজি সাহেব এসব কি বলছে? তুই তো বলেছিলি তুই ভাবিজীরে বিয়ে করতে চাস। তাহলে এখন মত পাল্টাচ্ছিস কেন? দেখ তোর নিয়ত ঠিক লাগছে না আমার। তবে আমি কিন্তু মোটেও ওইধরনের ছেলে না।

প্রহর দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
–তোরা এসব বন্ধ করবি? নাকি এই রাতকরে উদম কেলানি খেতে চাস? গ্রামের বাড়ি এতরাতে কিন্তু ডাক্তারও খুঁজে পাবিনা। আর কাজী সাহেব আপনি কানের পর্দা খুলে ভালো করে শুনুন। আমি আপনার সামনে বসা এই মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি। তো দয়া করে এখন বিয়ে পড়ানো শুরু করবেন।

কাজি সাহেব বললেন।
–ও আইচ্ছা আইচ্ছা বসেন আপনেরা।

অতঃপর বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। প্রহর একটা লাল রঙের ওড়না বের করে খুশির মাথায় দিয়ে দিলো। কাজী সাহেব প্রথমে বিয়ের রেজিষ্ট্রেশনে দুজনের সই নিলো।সাক্ষী হিসেবে ফাহিম আর নিভান সই দিলো। তারপর বাকি বিধিমালা শুরু করলো। প্রহরকে কবুল বলতে বললে প্রহর ফটাফট বলে দিলো। তারপর খুশিকে বলতে বললে খুশিও বলে দিলো। অতঃপর দুজন স্বামী স্ত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেল। দুজন দুজনার দিকে মায়া ভরা নজরে তাকালো। এতো বাঁধা বেদনার পর আজ ওদের সেই কাঙ্ক্ষিত মুহুর্ত টা এসেই গেল। দুজনের চোখের ভাষায় ভেসে উঠলো অপরিসীম আবেগময় প্রাপ্তির আনন্দ।

তখনই হঠাৎ করতালির শব্দে ওদের ঘোর কাটলো। খুশি পেছনে তাকিয়ে দেখলো জিদান সাহেব আর খুশির পরিবারের সবাই এসেছে। ওদের দেখে খুশি অবাক হয়ে গেল। কারণ সবার মুখে হাসির রেখা। খুশি কিছুই বুঝতে পারছে না। খুশি প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালো প্রহরের দিকে।

প্রহর মুচকি হেঁসে বললো।
–তুমি হয়তো ভুলে গেছ তবে আমি ভুলিনি। তোমার ইচ্ছে ছিল পালিয়ে বিয়ে করার। তাইতো এতসব মেলোড্রামা রচাতে হলো।

খুশি বিস্ময়কর কন্ঠে বললো।
–তারমানে ওসব ঝগড়া সব নাটক ছিল?

রাকিব হাসান বলে উঠলেন।
–হ্যাঁরে মা। প্রহরই আমাদের এসব করতে বলেছিল। কারণ ও পালানোর বিষয় টা রিয়াল করতে চেয়েছিল। শুধুমাত্র তোর ইচ্ছে পূরণ করার জন্য।

খুশি ছলছল চোখে তাকালো প্রহরের দিকে। এই ছেলেটা এমন কেন? কেন সে আমাকে এতো ভালোবাসে? আমার ভালোবাসা যে ওর ভালোবাসার কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছে। খুশি আবেগপ্রবণ হয়ে সবার সামনেই প্রহরকে জড়িয়ে ধরলো। প্রহরও মুচকি হেঁসে জড়িয়ে নিলো খুশিকে।

জিদান সাহেব দুষ্টুমি করে বললেন।
–বিয়াই বিয়াইন নিজেদের চোখ বন্ধ করে নিন।আজকালকার পোলাপানের লজ্জাশরমের কোন বালাই নাই। কি যে দিন আইলো।

সবাই একত্রে হেঁসে উঠলো।

চলবে…..
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here