অপরাজিতা পর্ব -১৭

#অপরাজিতা
#১৭তম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

আনানের সাথে কথা বলার পর রাজিতার আর পড়ায় মন বসছিলো না। জোর করে একটু পড়লো তারপর আনানের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল।

–“অফারটা গ্রহণ করেছো?এখন কিন্তু ঘড়িতে রাত এগারোটা বেজে উনচল্লিশ মিনিট! তোমার হাতে আর মাত্র একুশ মিনিট সময় আছে৷ এরপর বারোটা বেজে গেলেই আরেকটা নতুন দিন শুরু হয়ে যাবে। তখন কিন্তু অফারটা আর থাকবে না। বাকিটা তোমার ইচ্ছে!”

আনানের কথায় রাজিতা একটু লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,

–“তোমার অফার গ্রহণ না করে উপায় আছে!এতবড় একটা অফার একমাত্র বোকারাই হাত-ছাড়া করতে পারে! আমিতো আর বোকাদের দলে পড়িনা! তাই অফারটা নিয়েই নিলাম!”

বলেই লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে দুইহাতে মুখ লুকালো রাজিতা। আনানের কলিজাটা মনে হয় ঠান্ডা হয়ে গেলো। এ এক অন্যরকম অনুভূতি! রাজিতা লজ্জায় যেন নড়াচড়া করতেও ভুলে গেছে!

–“কতটা ভালবাসো আমাকে? এক আকাশ সমান? নাকি এক সমুদ্র সমান? নাকি পাহাড় সমান? নাকি এই পৃথিবী সমান? নাকি এই পুরো মহাবিশ্বের সমান?”

–“জানিনা!এমনভাবে বলছে যেন এইগুলা হচ্ছে ভালবাসার পরিমাপক! ভালবাসা পরিমাপ করা গেলে সবাই তা পরিমাপ করেই বলতো!”

–“আন্দাজে বলো একটা কিছু!তোমার যা মনে হয় তাই বলো। সবাইতো দেখি তাদের প্রিয় মানুষটার থেকে এটা জানতে চায়! আমিও চাইলাম ক্ষতি কি!”

–“ভালবাসা কি কোনো বস্তু নাকি! যে তা পরিমাপ করা যাবে! আপনি আগে বলুন যে, আমাকে কতটা ভালবাসেন? তারপর আমি বলছি!”

–“ভালবাসা পরিমাপের জন্য একটা যন্ত্র থাকা উচিৎ ছিলো! তাহলে কে কাকে কতটা ভালবাসে তা সহজেই বোঝা যেতো। এই যেমন ধরো, এখন মেপে দেখতাম যে, তুমি আমাকে বেশি ভালবাসো! নাকি আমি তোমাকে বেশি ভালবাসি!”

–“আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করি? একদম সত্যি-সত্যি উত্তর দিবেন। কোনো মিথ্যে চলবে না।… আমার আগে অন্যকোনো মেয়েকে ভালবেসেছেন কখনো? ”

প্রশ্নটা শুনে আনান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।তারপর কথা ঘুরানোর জন্য বলল,

–“এই যে, আবার আপনিতে চলে গেছো! তোমার সাথে আর কথা নেই!তোমার লাইফের ‘তুমি’ হওয়ার জন্য এতবড় একটা অফার করলাম! আর তুমি সেটাকে ব্যবহার-ই করছো না! এইটা কোনো কথা!”

–“আচ্ছা বাবা সরি! আর হবেনা। অপরিচিত কাউকে এতসহজে তুমি করে বলা যায় নাকি!আমিতো তাও চেষ্টা করছি। আচ্ছা, নেক্সট টাইম আর হবেনা! মনে রাখার চেষ্টা করবো ব্যাপারটা! ”

–“তোমার কাছে আমি এখনো অপরিচিত-ই থেকে গেলাম! দুইমাসের বেশি পার হয়ে গেছে! এই সময়টাকে তোমার এতটাই অল্প মনে হয় পরিচিত হওয়ার জন্য। আর আমি তোমার স্বামী। ”

–“আরে আমি তা বলিনি। কথাটা আমি কীভাবে বললাম! আর আপনি কীভাবে নিলেন! ”

–“তাহলে কি বললে মাত্র? তুমি বললেনা যে, অপরিচিত! আর আবার ‘আপনি’!”

–“আমি ওভাবে বলিনি। আচ্ছা ঠিক আছে, নেক্সট টাইম আমি চেষ্টা করব মনে রাখার।আর হবেনা! দেখবেন!”

–“আচ্ছা ঠিক আছে৷ এবার ঘুমাও।”

–“হুম।”

তারপর তাদের নিরবতাই যেন জানান দিচ্ছিলো দুজনের প্রতি দুজনের ভালবাসার!

কালো শাড়ীতে রাজিতাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। আনান নিজে রাজিতার জন্য কালো শাড়ীটা কিনে দিয়েছে। সেদিন নাকি কালো শাড়ীতে ওকে অনেক সুন্দর লাগছিলো, তাই আজও রাজিতাকে কালো শাড়ী পড়তে বলেছিল। আনানের কথাতো আর রাজিতা ফেলতে পারেনা!

পার্লার থেকে লোক আনতে চেয়েছিলো রাজিতাকে সাজানোর জন্য, কিন্তু রাজিতা বলেছে যে, ও শিমলা ভাবির কাছেই সাজবে। উনি অনেক সুন্দর সাজাতে পারেন।

সন্ধ্যা থেকেই লোকজন আসতে শুরু করেছে। রাজিতা আর আনানের জন্য বর আসন আর কনে আসন করা হয়েছে। আনানের সেখানে বসে থাকতে বিরক্ত লাগছিলো। রাজিতা তখনো আসেনি।

রাজিতা পৌঁছাতেই সবাই ওর দিকে তাকিয়ে হাঁ হয়ে গেলো! সেজেগুজে অনেক সুন্দর লাগছে রাজিতাকে। আনান যেন ওর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। ওর ফ্রেন্ডরা ওর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলো সবাই। রাজিতাকে দেখতে পেয়েই আনানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

–“এই কি তোর সেই হুরপরী! যাকে দেখতে আসার জন্য আমাদের ফোন করে করে মাথা খাচ্ছিলি! তাইতো বলি! আনান আমাদের এত রিকুয়েষ্ট কেন করছে! এমন বউকে না দেখিয়ে তোর শান্তি হচ্ছিলো না৷ তাই না!”

ওদের কথায় আনানের চমক ভাঙলো। রাজিতার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

–“কি সব বলছিস তোরা! বিয়েতে কোনো প্রোগ্রাম করতে পারিনি বলে তোদের জন্যই প্রোগ্রাম রাখলাম! আর এখন তোরাই এমনভাবে বলছিস! এত আদর করলাম আসার জন্য, যেন তোরা না বলতে পারিস যে, আমার বউ দেখিস নি! আর তোরা!”

–“দোস্ত! ওসব বাদ দে! তার আগে বল যে,তুই এই মেয়েকে কোথায় পেলি? এর কোনো ছোটবোন-টোন আছে নাকি! তাহলে আমরাও একটু চান্স নিতাম!যে মেয়ে এতো সুন্দর তার বোন থাকলে সেও নিশ্চয়ই সুন্দরীই হবে!”

–“তোরা এবার একটু চুপ থাকবি! খুবতো আমার বউ দেখার জন্য পাগল হয়ে ছিলি! এইবার দেখ। তবে বেশি দেখবি না, নজর লেগে যাবে!”

–“নজর যেন না লাগে তার জন্য কি তুই আগে থেকেই কালো শাড়ী পড়িয়ে রেখেছিস নাকি!ওই যে দেখিস না, গ্রামে ছোট বাচ্চাদের কালো টিপ দেয় যাতে নজর না লাগে!”

বলেই সবগুলো হেসে উঠলো। আনানের মা রাজিতাকে এনে আনানের পাশে বসিয়ে দিলো। দুজনকে অনেক সুন্দর মানিয়েছে। আনান কালো রঙের একটা শেরওয়ানী পড়েছে।

রাজিতা আনানের পাশে বসতেই আনানের এক ফ্রেন্ড বলে উঠল,

–“ভাবির কি ছোট কোনো বোন আছে? না মানে পরিচিত হতাম আর কি!”

রাজিতা কিছু বলার আগেই আনানের আরেক ফ্রেন্ড বলে উঠল,

–“আরে ভাই, সরাসরি এভাবে কেউ জিজ্ঞেস করে! ভাবি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না। ওর মাথার একটা তার আসলে ছেড়া আছেতো! আপনি এটা বলুন যে, আপনারা কয় ভাইবোন? আর আপনি কত নাম্বার?”

এরমধ্যেই রাজিতার ফ্রেন্ডরাও ওখানে চলে এসেছে। রাজিতার চাচার বাসা থেকেও সবাই চলে এসেছে।শুধু রিমি আসেনি৷ সবাই আশেপাশেই আছে। রাজিতা খুব অস্বস্তিবোধ করছে। চারপাশে এত লোকজন!অথচ ও পুতুলের মতো বসে আছে। সবাই এসে ছবি তুলায় ব্যস্ত!

রাজিতাকে চুপ থাকতে দেখে আনানের প্রথম বন্ধুটি বলল,

–“ভাবি কি আমাদের সাথে কথা বলবেনা নাকি? নাকি আনান আগেই মানা করে দিয়েছে যে, ‘ আমার বন্ধুরা কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে কথা বলবে না’..”

কথাটা শুনেই রাজিতা আমতা-আমতা করে বলতে লাগলো,

–“আরে না, তেমন কিছু না। আসলে আমি একাই, আমার আর কোনো ভাইবোন নেই!”

ঠিক সেই মূহুর্তে সেখানে আনানের মামাতো বোন রুকমা এসে উপস্তিত! রাজিতার কথা শুনে আনানের বন্ধুরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুকমা বলল,

–“আসলে আমাদের ভাবি সাহেবা এতিম! তার মা-বাবাই নেই! ভাইবোন কোথা থেকে আসবে!”

আনানের এক ফ্রেন্ড রুকমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“আপনি আনানের বোন? না মানে, ওর বউকে যেহেতু ভাবি বললেন, সেহেতু বোন-ই হবেন!”

ওর কথাশুনে আনানের আরেক ফ্রেন্ড বলে উঠলো,

–“আরে আনানের বোন আসবে কোথা থেকে! তুই জানিস না, ও একাই।”

ওদের কথা শুনে রুকমা হেসে বলল,

–“আমি আনান ভাইয়ার বোন। তবে আপন নয়, মামাতো বোন। সরি, আপনাদের কথার মাঝে ইন্টারফেয়ার করলাম! কিছু মনে করবেন না।”

–“আরে না! আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো।আনানের মামাতো বোন মানেতো আমাদেরও মামাতো বোন।”

কথাটা বলে আনানের প্রথম ফ্রেন্ডটা রুকমার সাথে গল্প জুড়ে দিলো।

ওদের কথা বলার ফাঁকে আনান রাজিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“তুমিতো দেখছি আজ আমাকে বেহায়া বানিয়ে ছাড়বে!”

–“মানে?”

–“এতো সুন্দর কেন লাগছে! আমিতো চোখ ফেরাতেই পারছি না। কেউ খেয়াল করলে নির্ঘাত আমাকে বউ-পাগল আর না হলে বেহায়া বানিয়ে ছাড়বে!”

আনানের কথা শুনে রাজিতা আনানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,

–“আপনাকেওতো কম সুন্দর লাগছে না!”

বলেই লজ্জায় চোখটা নামিয়ে নিলো। রাজিতার মুখে আনান এই প্রথম প্রশংসা শুনে ভীষণ খুশি হলো। তবে ওর মুখে আবার আপনি শুনে আনান একটু অভিমানী সুরে বলল,

–“আবার!”

–“ওহ সরি!আবার ভুলে গিয়েছিলাম!… আচ্ছা, আমরা এখন উঠলেইতো পারি। আমার ফ্রেন্ডরাও চলে এসেছে৷ আর সবাই এসে গেছে, সবার সাথে একটু কথা-বার্তা বলি। এমন সং সেজে বসে থাকতে ভালো লাগছে না!”

–“কেন? আমার পাশে বসে থাকতেও তোমার বিরক্ত লাগছে?নাকি সবার সাথে কথা না বলতে পেরে খারাপ লাগছে? আমি পাশে আছি, অথচ তুমি অন্য সবার কথা চিন্তা করছো। আমরা কি ইচ্ছে করে বসে আছি নাকি! মা যে কেন এইসব ঢং করতে গিয়েছিলো! আমার কথা শুনলেতো! সে যা বলবে তাই! সে তোমার শখ পূরণ করতে নাকি এসব করছে! কি সাদামাটা ভাবে তোমার বিয়ে হয়েছে! তোমার কত স্বপ্ন ছিলো বিয়ে নিয়ে! এবার পূরণ করো সব!”

–“না, আমি বলছিলাম যে, সবার সাথে একটু কথা বলে আসতাম। আমিতো জানতাম-ই না যে, মা আমার জন্য এতসব করেছে। তাহলে আমি আগেই মানা করে দিতাম! বিরক্ত লাগছে একদম । ”

–“আচ্ছা। যা হওয়ার হয়েছে৷ বাদ দাও। সবাই এদিকেই আসছে। চুপচাপ নতুন বউয়ের মতো বসে থাকো।কোনো কথা বলতে হবে না আর৷ সবাই দেখছে!”

ওদের দুজনের মাঝখান থেকে হঠাৎ শিমলা ভাবি এসে বলল,

–“দেবরজি, আশেপাশে আরো লোকজন আছে! এখন এতো গল্প না করলেও চলবে! আপনাদের পার্সোনাল গল্পগুলো আমাদের না শুনালেও চলবে!”

কথাগুলো শুনে রাজিতা আর আনান দুজনেই খুব লজ্জা পেয়ে গেলো। শিমলা ভাবির সাথে আনান তেমন একটা কথা বলে না। সত্যি বলতে আনান সবার সাথে একটু কথা কম বলে।

এরপর শিমলা ভাবি রাজিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

–“তোমার ভাইকে বলেছি তোমাদের রুমটা সাজানোর ব্যবস্থা করতে! সেদিনতো আনান কিছু করতে দেয়নি! তাই আজ আনানকে না জানিয়েই তোমাদের সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছি। তোমাকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখলাম! হাজারহোক আমার জা তুমি!”

বলেই হাসতে হাসতে ওখান থেকে চলে গেলো শিমলা ভাবি। রাজিতা লজ্জায় চোখ একদম মাটির দিকে দিয়ে রেখেছে৷ শিমলা ভাবি কি বলল তা জিজ্ঞেস করতে যাবে, তখন আনানের ফ্রেন্ডরা এসে পড়লো।

সবার ছবি তোলার হিড়িক দেখে আনান আর রাজিতা দুজনেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।রাজিতা একটু ছুট পেতেই লোকজন কম আছে এমন একটা জায়গায় গিয়ে প্রাণভরে শ্বাস নিতে লাগলো। হঠাৎ ও দেখলো যে নিশাদ কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। সুবহার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার এটাই উপযুক্ত সময়! মনে মনে এটা ভেবে নিশাদের দিকে এগিয়ে গেলো রাজিতা৷ তারপর নিশাদের ফোনে কথা বলা শেষ করতেই আশেপাশে দেখে নিয়ে রাজিতা নিশাদকে বলল,

–“ভাইয়া, কেমন আছেন? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?কখন আসলেন?”

–“জ্বি ভালো, তুমি?…আর দিনকাল ভালই যাচ্ছে, অনেকক্ষণ হলো এসেছি।… তুমি একবারে এতগুলো প্রশ্ন করেছো!”

–“অনেকগুলো প্রশ্ন একসাথে করে ফেলেছি। সরি!আমিও ভালো আছি। আচ্ছা,নিলা আপুর সাথে দেখা হয়েছে?ও বাসার সবার সাথে দেখা হয়েছে? সবাই ওদিকটায় আছে।”

–“হুম। কথা হয়েছে তোমার আপুর সাথে। বাকি সবার সাথেও কথা হয়েছে৷ রিমি আসেনি মনে হয়। নিলা বলল যে, ও নাকি অসুস্থ! বেচারী একটু মজা করবে!…. আর তোমার দেখা হয়েছে সবার সাথে?”

–“হুম। আমিও দেখা করেছি৷ আচ্ছা ভাইয়া, কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?”

–“হুম, বলো কি জানতে চাও! এতে মনে করার কি আছে! ”

–“আপনার গার্লফ্রেন্ড কীভাবে মারা গিয়েছিলো?না মানে, আমার জানার খুব ইচ্ছে। এই বয়সে অবশ্য কোনো কারণ ছাড়া মারা যায়নি। ঘটনাটা জানার আগ্রহ থেকেই বলছি।প্লিজ কিছু মনে করবেন না!”

–“গার্লফ্রেন্ড? আমার? তাও আবার মারা গিয়েছে? তুমি এসব কি বলছো? আমারতো কখনো কারো সাথে রিলেশন-ই ছিলো না! কলেজে থাকতে একটা মেয়েকে প্রপোজ করে রিজেক্ট হয়েছিলাম! তারপর ভয়ে আর কাউকে প্রপোজ-ই করিনি! সেখানে রিলেশন!”

–“তাহলে সুবহা?…”

রাজিতার কথা শেষ হতে না হতেই নিশাদ নিলাকে দেখতে পেয়ে বলে উঠল,

–“আরে তুমি এখানে? আসো৷ রাজিতাও এখানেই আছে।তোমার কথাই বলছিলাম। কোথায় ছিলে এতক্ষণ? আমিতো একটু আগে দেখলাম সবার সাথে নেই!”

নিলা হাসিমুখে নিশাদের কথার উত্তর দিলেও রাজিতার সামনে এসে থমথমে মুখে বলল,

–“তুই এখানে কি করছিস?…একদম কোনো খিচুড়ি পাকানোর চেষ্টা করবি না। ওর থেকে দূরে-দূরে থাকবি! ”

পরের কথাগুলো রাজিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল নিলা। যেন, নিশাদ শুনতে না পায়!
নিশাদের সাথে ওই বিয়ের ব্যাপারে হেল্প করছে! অথচ নিলা এখন ওকেই সন্দেহ করছে! আজিব দুনিয়া! কারো ভালো করতে নেই! সবাই ভুল বুঝে! ভাবতে থাকে রাজিতা! তারপর রাজিতা কিছু বলার আগেই নিশাদ বলল,

–“কিছুই না। আমি এখানেই ছিলাম, আর রাজিতাও এদিকে আসলো, তাই দেখা হয়ে গেলো। চলো ওদিকটায় যাই!”

বলে ওরা ওখান থেকে চলে গেলো। নিলার কথাগুলো শুনে রাজিতা বুঝে গেলো যে, নিলা কি বুঝাতে চাইছে।

একটা কথা কিছুতেই রাজিতার মাথায় ঢুকছে না যে, নিশাদের যদি কোনো গার্লফ্রেন্ড না থেকে থাকে তাহলে সুবহা কে? আনান কি ওকে মিথ্যে বলেছে? কিন্তু আনান ওকে মিথ্যে কেন বলবে? অন্যদিকে নিশাদের এক্স থেকে থাকলেও সেটা স্বীকার করতে সমস্যা কোথায়! বরং লুকিয়ে রাখলেইতো সমস্যা!

রাজিতাকে আনমনা দেখে আনান ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

–“কি হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?তোমার মুখটা এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন? ক্ষুধা পেয়েছে? চলো কিছু খেয়ে নিবে।”

রাজিতা অতগুলো লোকজনের সামনে থেকে আনানকে কিছুটা আড়ালে নিয়ে যেতে লাগলো। আনান এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

–“কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? সবাই দেখছে। ”

বলেই সবার দিকে হাসিমুখে তাকালো আনান৷ রাজিতা বুঝতে পারলো যে, এই সুবহার রহস্য জানার জন্য ও পাগলের মতো ব্যবহার করছে। এই সুবহার কথা যখনি উঠে তখনি রাজিতা অন্যমনস্ক হয়ে যায়। নিশাদের গার্লফ্রেন্ড না হলে কে এই সুবহা! রাজিতাকে ব্যাপারটা জানতেই হবে। নইলে ওর শান্তি নেই!

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here