অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -২৬

গল্প : #অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা
লেখক : #কাব্য মেহেরাব
পর্ব : ২৬

দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এতো কিছু হয়ে গেলো দুপুরে ঠিকমতন খাওয়া-দাওয়া হলো না কারোর। মেঘাকে এখনো রুমের মধ্যে আটকে রেখেছে প্রবীশ। বিকাল থেকেই প্রবীশ এই ডিভাইনে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। চোখ বন্ধ করে হয়তো অনেক কিছু ই ভেবে চলছে। অমিত বাবু অফিসে গিয়েছেন ঐ ছেলেটার ঠিকানা লাগাতে প্রবীশ বাবুর আদেশ এ। রামু চাচা প্রবীশ বাবু কে এই ভাবে দেখতে পারছেন না। তাই তিনি একটু এগিয়ে গিয়ে বললো_

রামু জেঠু : বাবা সাহেব? দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে সন্ধ্যার শেষ প্রহর চলছে। কতক্ষণ না খেয়ে এভাবে বসে থাকবে তুমি? মেঘা মামনি এখনো না খেয়ে রয়েছেন সেই কখন থেকে তাকে রুমে আটকে রেখেছো তাকেও তো কিছু খাওয়াতে হবে নাকি? আমি না হয় তোমাদের দুজনের খাবার উপরে পাঠিয়ে দিচ্ছি এক সাথে খেয়ে নাও।

প্রবীশ বাবু : …….( চোখ মেলে তাকালেন)

রামু চাচা : যাও প্রবীশ বাবা, এখন তোমাকে ঠান্ডা মাথায় সবকিছু চিন্তা করতে হবে । এভাবে না খেয়ে বসে থাকলে তোমার সুগার ফেইল করবে।

প্রবীশ সোফা থেকে উঠে বসে রামু জেঠু কে বললো_

প্রবীশ : তুমি ঠিকই বলেছ… এখন সবকিছু ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে। আচ্ছা তুমি খেয়েছো?

রামু জেঠু : ……( মাথা নিচু করে নিলো)

প্রবীশ : (স্মিত হেসে বললো) তুমি এত ভালো কেন জেঠু ? সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমি না খাওয়া পর্যন্ত তুমি না খেয়েই থাকো। আচ্ছা তুমি আর অমিত খেয়ে নিও। পেটুক ছেলেটা ও না খেয়ে বসে আছে হয়তো। আমি মেঘার জন্য খাবার নিয়ে উপরে যাচ্ছি।

রামু জেঠু : না না প্রবীশ বাবা তুমি নিয়ে যাবে কেন ? আমি খাবার নিয়ে যাচ্ছি তুমি উপরে চলে যাও।

প্রবীশ : আজ আমাকে নিতে দাও জেঠু….

এই প্রথম প্রবীশ বাবু রামু চাচা কে রামু জেঠু না বলে শুধু জেঠু বলে ডাকল রামু চাচার চোখে পানি চলে এসেছে খুব আপন মনে হচ্ছে ডাকটা কে ।তিনি তার ঘাড়ে ঝুলিয়ে রাখা গামছা দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল_

রামু চাচা : ……. ঠিক আছে।(চোখের পানি মুছতে মুছতে)

প্রবীশ কিছু খাবার নিয়ে প্লেটে সাজিয়ে ট্রে তে করে নিয়ে সোজা ওপরে চলে আসলো।দরজার লক খুলতেই প্রবীশ দেখতে পেল মেঘা ফ্লোরে শুয়ে আছে। প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে মেঘার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বোঝায় যাচ্ছে মেঘা হয়তো কান্না করতে করতেই ফ্লোরে শুয়ে পড়েছে।

প্রবীশ আলতো হাতে মেঘার মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিল। চোখে মুখে পানির ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অনেক কান্নার ফলে হয়তো নাকটা লাল হয়ে গেছে ,চোখের পাতা ফুলে গেছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে এখন মেঘা।

প্রবীশ খুব সাবধানে মেঘা কে কোলে তুলে নিলো। হঠাৎ মেঘার মনে হলো মেঘা শূণ্য তে ভাসছে। চোখ পিটপিট করে তাকাতেই দেখে প্রবীশ তাকে পাজো কোলে তুলেছে ,মাথা কাত করে নিচের দিকে তাকাতেই পড়ে যাবে ভেবে প্রবীশের গলা জড়িয়ে ধরলো। চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিল। মেঘার এমন কাজে প্রবীশের মুখে হাসি ফুটে উঠল। মেয়েটা হয়তো ভাবছে প্রবীশ তাকে ফেলে দিবে।

প্রবীশ মেঘার চোখের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে, মেঘা ও তাই।প্রবীশ মেঘাকে আস্তে করে বেডের উপর বসিয়ে দিল। তারপর খাবারের প্লেট টা এনে হাত ধুয়ে মেঘার মুখে খাবার তুলে দিলো। মেঘা এখনো চেয়ে চেয়ে দেখছে প্রবীশের এহেম কাজ।

প্রবীশ : হা করো …….

মেঘা : ……(আমি মাথা নিচু করে চোখের নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।)

প্রবীশ : হা করো মেঘা প্লিজ..

মেঘা : …..(আমি তার দিকে তাকালাম)

প্রবীশ : এর আগে আমি কখনও কাউকে নিজের হাতে খাইয়ে দেই নাই, এই প্রথম তোমাকে দিচ্ছি খাবেনা আমার হাতে?

মেঘা : …….(আমার চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল, একদিন ভাবি আমাকে প্রচন্ড আঘাত করেছিল আমার শরীরে ,কত গুলো বাজে কথা আর খাওয়ার খোটা দিয়েছিলো ।সারাদিন না খেয়ে ছিলাম।পরের দিন কলেজে গেলে কাব্য জানতে পেরে আমাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছিলো। কাব্যর কথা খুব মনে পড়ছে। প্রবীশ বাবুর ভেতর যেন আমি কাব্য কে দেখছি। মুখ আড়াল করে চোখের পানি মুছে নিলাম।)

প্রবীশ : চড় টা খুব জোরে লেগেছে তাই না? আই এম সো সরি। এই দেখো কান ধরছি আর কখনো তোমার গায়ে হাত তুলবো না।(এক হাতে নিজের কান ধরে বললো)

মেঘা : প্রবীশ বাবুর এমন কাজে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।

প্রবীশ : এইতো হেঁসে দিওছো, এবার লক্ষ্মী মেয়ের মতন হা করো। আমার হাত ব্যথা হয়ে গেছে, এতোক্ষণ মুখের সামনে ধরে রেখে।

মেঘা : ….(আমি হাঁ করে প্রবীশ বাবুর হাতের খাবার খেয়ে নিলাম ।) আপনি খেয়েছেন?

প্রবীশ বাবু : (একটু হেসে বললেন)না..

মন খারাপ হয়ে গেল আমার। প্রবীশ বাবু নিজে না খেয়ে আছেন অথচ আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন।

মেঘা : আপনিও খেয়ে নিন তাহলে..

প্রবীশ : আমার খিদে নেই তুমি খেয়ে নাও।(কথাটা খুব গম্ভীর ভাবে বললেন তিনি। যেন অনেক অভিমান লুকিয়ে আছে কথাটার মাঝে।)

আমি তাকে আর কোন কথা বলতে পারলাম না। একটু আগে তো বেশ নরমাল মানুষের মত বিহেব করছিলো। হঠাৎ করে আবার কি হলো কে জানে।খাবার খাইয়ে দিয়ে আইসব্যাগ এনে আমার মুখে দিয়ে দিলেন প্রবীশ বাবু। আমার দুই গালে তার হাতের পাঁচটি আঙ্গুলের ছাপ ই যেন বসে গেছে। আমি শান্ত মেয়ের মতো চুপ করে বসে রইলাম।

রাত তখন দশটার কাছাকাছি। প্রবীশ বাবু সোফায় বসে খুব মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে অফিসের কোন একটা কাজ করছিলেন আর আমি তার বেডের উপর পা গুটিয়ে বসে আছি। নিজের রুমে যাবো তাও যেতে পারছিনা। স্টার্চু মতন বসে আছি আমি বেডের ওপর, আর তিনি কাজ করছেন সোফার উপর বসে বসে। কতক্ষণ ভালো লাগে এই ভাবে থাকতে?তাই পা দুটি নিচে নামিয়ে আস্তে আস্তে করে ছোট ছোট পায়ে রুমের দরজার কাছে আসতেই প্রবীশ বাবু হেঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন ,তাল সামলাতে না পেরে পরলাম তার বৃক্ষবাহুর উপর। দুই হাত দিয়ে তিনি আমাকে আকারে ধরলেন। আমার দুই হাত তার বুকের উপর।তার নিশ্বাস পরছে আমার চোখে নাকে মুখে। এই প্রথম তিনি এভাবে আমার উপর জোর করছেন। সেদিন পার্টিতে যেটা হয়েছে তখন হয়তো জাস্ট দুজনের মধ্যে হয়ে গেছিলো কিন্তু আজ?

প্রবীশ : কোথায় যাচ্ছো তুমি ?

মেঘা : আআ… আমার রুমে…..( এমন ভাবে ধরাতে আমি অপ্রস্তুত হয়ে পরলাম)

প্রবীশ : বলেছি না আজ থেকে আমার রুমে ই থাকবে তুমি?

মেঘা : ছাড়ুন আমাকে ( তার থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি আর বলছি)

প্রবীশ : যাও ছেড়ে দিলাম (কথা টি বলেই আমাকে ধুপ করে ছেড়ে দিলেন।)

তার এমন কাজে আমি আহাম্মক হয়ে গেলাম। নিজেই তো আমি এমন টা চেয়েছিলাম, তাহলে আমার এমন অদ্ভুত কেন মনে হচ্ছে বুঝতে পারছি না।

প্রবীশ : এখন ছেড়ে দিলাম তার মানে এটা নয়, আমার জীবন থেকে ছেড়ে দিলাম… পুরো আমাকে সহ্য করতে হবে তোমার সেটাও সারাটা জীবন ভর। আগে ও বলেছি আবার ও বললাম।

তার এমন কথায় আমি আবার ও দরজার দিকে পা বাড়াতেই তিনি আবার ও বললেন_

প্রবীশ : ভদ্রভাবে এবং ভালোভাবে বলছি, যাও গিয়ে বেডে শুয়ে পড়ো । কথা দিচ্ছি আমি তোমার অসম্মান করবো না। আমি অতটা নিচু মনের মানুষ নই।

আমি থেমে গেলাম তার এমন কথায়।

প্রবীশ : তুমি আমার বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ো আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি ।

মেঘা : বাসার সবাই কি ভাবে বিষয়টা একবার ভেবে দেখেছেন?

প্রবীশ : কে কি ভাবলো তাতে আমার কিছু এসে যায় না। যাও শুয়ে পরো।

বুঝতে পারলাম তিনি আমার কোন কথায় শুনবেন না। তাই বাধ্য মেয়ের মত আমিও যেয়ে শুয়ে পড়লাম । আর তিনি অফিসের কিছু কাজ ল্যাপটপে সেরে সোফার উপর দিয়ে শুয়ে পড়লেন লাইট অফ করে।
*
*
*
*
*
~সকালে~

প্রবীশ : মেঘা তোমার জন্য এই ব্যগে তোমার জন্য কিছু শাড়ি আছে এটার মধ্যে যেটা পছন্দ হয় পরে রেডি হয়ে নাও ,আজ আমরা সারাদিন ঘুরবো…

মেঘা : 😳😳😳😳আপনি ঘুরবেন?

প্রবীশ : কেন আমাকে কি এলিয়েন মনে হয় তোমার?

মেঘা : (এই প্রবীশ বাবুর সাথে আগের প্রবীশ বাবুর কোন মিল আমি খুঁজে পাচ্ছি না। যেন নিজের ক্যারেক্টর এ নেই প্রবীশ বাবু।) আমি যাবো না কোথাও!

প্রবীশ : যাবে না তাই তো? ঠিক আছে। শাড়ি টা কি নিজে পরবে না কি আমি পরিয়ে দিবো?

মেঘা : আপনি প্রবীশ বাবু তো…?

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here