অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -২৭

গল্প : অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা
লেখক : কাব্য মেহেরাব
পর্ব : ২৭

হসপিটালে অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে পাইচারি করছে Mr. মেহেরাব। আজ মেঘার ডেলিভারির জন্য সিজার করা হচ্ছে। প্রায় দুই ঘণ্টা পার হয়ে গেল কিন্তু এখনো খোঁজ পেল না। না ডক্টর বাহিরে আসছে, না নার্স। অমিত Mr.মেহেরাবের সামনে গিয়ে বলল

অমিত : প্লিজ স্যর একটু এদিক টাই বসুন(OTএর সামনে তিন সেটের চেয়ার রাখা আছে সেটা দেখিয়ে বলল) এত অস্থির হবেন না একটু ধৈর্য ধরুন।

Mr.মেহেরাব : আমিত ওলরেডি দুই ঘণ্টা দশ মিনিট পার হয়ে গেল , এখনো কেউ বের হলো না।‌ টেনশনে আমার হাত-পা সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

অমিত : এত অস্থির হবেন না স্যার সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভরসা রাখুন। সে আপনার সাথে খারাপ কিছু করবে না।

Mr. মেহেরাব : তুমি বুঝতে পারছ না আমিত, নিশ্বাস নেওয়ার জন্য আমার হাইড্রোজেন অক্সিজেন সব যেন কম পড়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমি নির্ঘাৎ আমার বাচ্চাদের মুখ দেখার আগেই মারা যাব।

অমিত : কি সব…….

একজন ডক্টর সাথে একজন নার্স পিছনে, ডক্টর টি হাত মুছতে মুছতে বাইরে বেরিয়ে এলো। মুখের থেকে মাক্স টা খুলে বলল_

ডক্টর : কনগ্রাচুলেশন Mr. মেহেরাব! আপনার টু-ইন-ওয়ান বেবি হয়েছে। একসাথে আপনি ছেলের বাবা এবং মেয়ের বাবা হয়ে গেছেন।

Mr. মেহেরাব জানত যে তার একসাথে দুই টি বেবি হবে ,তবে ছেলে নাকি মেয়ে সেটা বলতে পারেনি ডক্টর রা কেউ আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে। তবে একি সাথে যে ছেলের বাবা মেয়ের বাবা হয়ে যাবে ধারণার বাইরে ছিল। Mr.মেহেরাব খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠছেন। অমিত কে জড়িয়ে ধরে বললো_

Mr.মেহেরাব : অমিত শুনেছো ডক্টর কি বলেছে? আমি …. আমি বাবা হয়েছি , আমার আমার একটা ছেলে একটা মেয়ে । আর কি চাই বলো জীবনে? আমি যে কতটা খুশি হয়েছি বলে বোঝাতে পারবো না।

অমিত : কনগ্ৰাচুলেশন স্যার!

Mr.মেহেরাব : হিম……

অমিত : ……… (স্যার কে এতো খুশি হতে দেখে নিজের ও অনেক আনন্দ লাগছে।)

Mr.মেহেরাব : (ডক্টর কে উদ্দেশ্য করে) ডক্টর থ্যাংকিউ ! থ্যাংকিউ সো মাচ…! কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দিবো……?

ডক্টর : No….. Mr.মেহেরাব ধন্যবাদ আমাকে নয় , সৃষ্টি কর্তা কে দিন। তিনিই আপনার ওয়াইফ কে পরিপূর্ণ সুস্থ দুই টি বাচ্চা কে জন্ম দেওয়ার তৌফিক দান করেছেন। আমরা তো শুধু একটা মাধ্যম মাত্র।

Mr.মেহেরাব : জি অবশ্যই! আল্লাহ তায়ালার কাছে লক্ষ লক্ষ বার শুকরিয়া জানাই , তিনি যে আমার জীবনে এতো সুখ দান করেছেন আমি জাস্ট কল্পনাও করতে পারি নি।ডক্টর ! ডক্টর আমার ওয়াইফ মেঘা কেমন আছে? ( ডক্টরের হাত ধরে বলেন) আমি আমার ওয়াইফ এর সাথে এখুনি দেখা করতে চায় প্লিজ ডক্টর..?

ডক্টর : এত ব্যস্ত হবেন না, রিল্যাক্স! আপনার ওয়াইফ সুস্থ আছেন।

Mr.মেহেরাব : প্লিজ ডক্টর একবার , শুধু একবার দেখতে দিন…

ডক্টর : দেখুন এটা নিয়মের বাইরে। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই পেশেন্টকে কেবিনে শিফট করবো ,আপনি তক্ষনি দেখা করতে পারবেন।

অমিত : স্যার একটু ধৈর্য ধরেন, এত অস্থির হবেন না। ডক্টর বলছেন ই তো বৌদি সুস্থ আছে ।
*
*
*
*

সাদা সফেদ বেড সিটের ওপর শুইয়ে রাখা হয়েছে মেঘাকে হাতে স্যালাইন চলছে প্রচুর পরিমাণ বিল্ডিং হওয়ার কারণে অন্য হাতে ব্লাড দেওয়া হচ্ছে।Mr.মেহেরাব ধীর পায়ে কেবিনে প্রবেশ করল। মেঘার চোখ মুখ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে শুকিয়ে গেছে। ঠোঁট এ কালশে রং ধারণ করে একে অপরের সাথে যেন জোড়া লেগে গেছে। মেহরাবের বুকের ভিতরটায় যেন দুরুম দুরুম করে শব্দ হচ্ছে। অস্পষ্ট শব্দ মেঘাকে ডেকে উঠলো।

Mr.মেহেরাব : মেঘাআআআ…..

মেঘা : ……..(আমার কানে একটা বাক্য ভেসে আসলো,একজনের কণ্ঠস্বর কেমন অদ্ভুত শোনাল! ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি মেহেরাব আমার সামনে কেমন বিধ্বস্ত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। চট করে ভীতিগ্রস্ত গলায় আমি চোখে প্রশ্ন করি)

Mr.মেহেরাব : …….(ঠোটে আনন্দর হাসি থাকলেও চোখ দুটো ছল ছল করছে)

মেঘা : কী হয়েছে আপনার? এমন দেখাচ্ছে কেন?”(অনেক কষ্টে বললাম)

Mr.মেহেরাব : ( ঠোঁট কামড়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চেয়ে প্রশ্ন করলো ) কেমন আছো এখন?

মেঘা : …..….(স্মিত হেসে চোখ হালকা নিচু করে বুঝালাম ভালো আছি।)

Mr. মেহেরাব: (ফিচেল গলায় বলল) বাহ এক বেলার ব্যবধানে তুমি চিকন হয়ে গেলে? দারুণ তো!”

মেঘা : ……..(পুরো শরীর কাঁপিয়ে একটু হেসে দিলাম) আপনার মুখটা এমন শুকনো কেন? কোথায় ছিলেন আপনি?”

Mr. মেহেরাব: OT এর বাহিরে অপেক্ষা করছিলাম তোমার জন্য। তুমি কি জানো কতটা টেনশনে ছিলাম আমি?

আসলে টেনশন তো হওয়ারি কথা। মেঘা এতো দিনে খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে , মেহেরাব এর জীবনে বাচ্চা টার মুল্য কত টা । তাছাড়াও মেঘা তার প্রাণদেবী হয়ে উঠেছে। আর এমন কঠিন মুহূর্তে সে কোন পুরুষ মানুষ ই উতালা হয়ে উঠবে।তাই কথা না বাড়িয়ে মেঘা বলল_

মেঘা : (নিরুত্তাপ হেসে বললাম)আমি কিন্তু এখনো আমাদের ছেলে মেয়েদের দেখিনি। কোথায় ওরা?”

Mr. মেহেরাব : আমিও এখনো দেখিনি। কথা ছিল না দুজনে একসাথে দেখব?

মেঘা : হালকা ঠোঁট প্রসারিত করে একটু হেসে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললাম হ্যাঁ।

তখনি কেবিনে দুইটি নার্স বাচ্চা দু’টি কে ভেতরে নিয়ে আসে। হাসতে হাসতে একটি নার্স বলেন

-এই যে আপনাদের টুইন ওয়ান বেবি…
-দেখুন দেখতে কত মিষ্টি হয়েছে…

কথাটি বলেই নার্স দুটি বাচ্চা দু’টোকে মেঘা এবং মেহরাবের সামনে ধরল। মেঘা বাচ্চা দুটিকে দেখে মুখে স্মিত হাসির রেখা তুলে ধরলো। মেহেরাব বাচ্চা দুটোকে ধরতে গিয়ে ও ধরল না। ধরতে ভয় পাচ্ছে। আসলে জীবনে কখনো এভাবে কোন বাচ্চার সংস্পর্শে আসে নি তো তাই!

নার্স দুটি বাচ্চা দুটিকে দোলনায় শুইয়ে দিয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন একটু পরেই বাচ্চা দুটিকে ফিডিং করাতে হবে। আপনারা দ্রুত কথা বলে নিন আপনাদের বাইরে চলে যেতে হবে ফিডিং করানোর সময়।

রামু চাচা ঘরের তৈরি খাবার আর অমিত বাচ্চাদের যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে একসাথে এসেছে দুজন।

মেহেরাব ধীর পায়ে দোলনার দিকে এগিয়ে গেলো। মাঝখানে ছোট লম্বা বালিশ দিয়ে দুই পাশে দুটি বাচ্চা শোয়ানো আছে।বাচ্চা দুটির দিকে তাকিয়ে আছে মেহেরাব। সে বাবা হয়েছে, ভাবতেই মনের কোণে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। ছোট্ট দুটো মেঘের টুকরো মনে হচ্ছে তাদের।ধবধবে সাদা দুটি বাচ্চা শুইয়ে আছে তার চোখের সামনে। বাচ্চা দুটির ঠোঁট গোলাপের পাপড়ি র মত মনে হচ্ছে। চোখ দুটো দুজনার ই ফোলা।ঠোঁটের নিচ থেকে থুতনির মাঝ বরাবর একটা করে ভাঁজ পরে আছে। ছেলে টার একটি হাত বুকের উপর অন্য হাত মুখের সাথে মিশিয়ে দিয়ে শুয়ে আছে। মেয়ে টি দুটি হাত এক করে মাথার দুপাশে মেলে ধরে আছে। ভুরু ভাঁজ করে মসৃণ হেসে চেয়ে রইল মেহেরাব বাচ্চা দুটির দিকে। ছুয়ে দেখতে মন চাচ্ছে কিন্তু ছুঁয়ে দিলে যদি ব্যথা লাগ!। তার এই শক্ত-পোক্ত হাত যদি তার রাজকন্যা আর রাজপুত্রদের ব্যথার কারণ হয়!

মেহেরাবের খুশির জল চোখে চিকচিক করছে। রামু চাচা কেবিনে প্রবেশ করেই বলে উঠলো_

রামু চাচা : প্রবীশ বা …

মেহেরাব : ……(রামু চাচার দিকে তাকিয়ে মেঘার দিকে চোখ ফেরালো।)

মেঘা : ……..(মেঘার হাসিহাসি মুখটা প্রবীশ নাম শোনাতেই মলিন হয়ে গেল।)

অমিত :…….. (হাত উঁচু করে রামু চাচাকে কিছু বলতে গিয়েও মেঘার দিকে তাকিয়ে কিছু বলল না!)

মেহেরাব : (মেঘার মুখে হাসি আবার হাসি ফটোতে রামু চাচা কে উদ্দেশ্য করে বলল) ওহো রামু চাচা..? তুমি একীভুল প্রতিবার করো। সবকিছু বদলে গেছে কিন্তু তুমি সেই একই জায়গায় পড়ে আছ।তোমার জ্ঞান বুদ্ধি সব লোপ পাচ্ছে। ডক্টর দেখাতে হবে তোমাকে বুঝলে?

রামু চাচা : ☹️☹️….(ঠোঁট বেঁকিয়ে মেঘা এবং অমিতের দিকে তাকালো )

অমিত: রামু চাচা র এমন ফেস দেখে অমিতবাবু হেসে দিলো। (সাথে মেঘাও হো হো হো করে হেসে দিলো!)

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here