#অপ্রেমের_প্রিয়_অধ্যায়
#পর্ব_৯ (নন্দিনীর রূপের আগুন!)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ
“সিদ্দিক, তুমি ইদানিং এরকম করছ কেন?”
সবে অফিস থেকে ফিরতেই স্বীয় স্ত্রীর মুখে এমন কৈফিয়ত চাওয়াটা ঠিক নিতে পারল না সিদ্দিক। বিরক্তিভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে বলল, “কাজ ছিল, তনু।”
তনুজা সরু চোখে তাকিয়ে রইল। সিদ্দিক পরনের ব্লেজারটি খুলতে লাগল। তখনই কানে এলো তনুজার স্থির প্রশ্ন, “কই, আগে তো এত কাজ থাকত না!”
সিদ্দিক তনুজার দিকে তাকাল না। কেবল বলল, “এই প্রজেক্টটা কম্পলিট হলেই প্রোমোশন পাব। তাই, অনেক ধকল যাচ্ছে আমার উপর দিয়ে। সারাদিনের এই এত কাজের প্রেশারে সত্যিই আমার মাথাটা ঠিক নেই, তনু। প্লিজ, একটু রেহাই দাও।”
তাচ্ছিল্য ভঙ্গিতে হাসল তনুজা, “ওহ্! আমাকে এখন বিরক্ত লাগছে!”
“তনু, ভুল বোঝো না, প্লিজ। আচ্ছা! পরে কথা বলি এসব নিয়ে?”
“না। যা কথা হবার, এখনই হবে।”
স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু স্বর। সচরাচর তনুজা এমন করে না। তাই সিদ্দিক খানিকটা বিচলিত হলো। ত্বরিতে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল, সেটা ভিড়িয়ে রাখা। তনুজা যেভাবে কথা বলছে, তাতে বাইরে থেকে শোনা যাবে। তারপর বাড়ির সবাই এখানটায় চলে আসবে। এত রাতে এরকম নাটক সিদ্দিক চাইছে না বলেই শান্ত গলায় তনুজাকে বলল, “একটু আস্তে বলো, তনুজা। আম্মা-আব্বা শুনতে পাবে।”
আগের চেয়ে কণ্ঠের তেজ বাড়ল তনুজার, “পাক! শুনতে পাক না! তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দাও।”
অসাড় হয়ে এলো সিদ্দিকের হাত-পা। থমথমে মুখে শেষবারের মতো আরও একবার অনুরোধ করে বসল, “প্লিজ, তনুজা! একটু থামো। রাত অনেক।”
তনুজা চিৎকার করেই গেল, “কেন থামব আমি? কেন থামব? কী শুরু করেছ তোমরা? আমাদের সংসারটার এই তিন বছরে কখনও এরকম করেছ তুমি? যেরকমটা ইদানিং করছ! কেন করছ? কী হয়েছে? খুলে বলো আমায়! বলো না!”
নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না সিদ্দিক। গলার স্বর উঁচুতে তুলে সে-ও বলল, “কী করেছি? কী অন্যায় লাগছে? ভালো করে বলা কথা কানে যায় না? বলছি এসব নিয়ে পরে কথা বলব। তা-ও তোমার হচ্ছে না। এই রাত করে সিনক্রিয়েট না করলে চলত না?”
সিদ্দিকের কড়া কথায় তনুজার চোখ ছলছল করে উঠল। বেশি আদরের ফল এটাই। মেঘের ঘন ঘন ডাক, সেই সাথে হুট করে বৃষ্টির আগমন। জানালা খোলা, তা দিয়ে বৃষ্টির ছিটে ঘর ভেজাচ্ছে। ওদিকে মাথাব্যাথা নেই তনুজার। সে তো একদৃষ্টে সিদ্দিককে দেখতে ব্যস্ত। বাতাসের বদৌলতে তার শাড়ির আঁচলটা এদিক-ওদিকে দোল খাচ্ছে। খোঁপা ছেড়ে বেরিয়ে আসা সামনের ক’গাছি চুল মুখের উপর লুটে পড়ছে। সে তা সরানোর ইচ্ছেও পোষণ করল না। বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, “সিদ্দিক, আমাকে কি তোমার আর ভালো লাগে না? মানে অন্য কোথাও?”
বোধ হয় পৃথিবীর সবচেয়ে অযৌক্তিক প্রশ্নগুলোর মাঝে একটি এটাই। সিদ্দিক জবাব দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলল। কতটা নিচু মনের ভাবনা থেকে তনুজা প্রশ্নটি করতে পেরেছে, সিদ্দিক ভেবে কূল পেল না। কয়েকটা প্রলম্বিত শ্বাস ছেড়ে নিজেকে না চাইতেও আরও একবার শান্ত, স্থির করে বলল, “তনুজা, তোমার মাথা ঠিক নেই। উলটা-পালটা বকছ। মাথায় পানি দিয়ে এসো, যাও।”
তনুজা নিজ জায়গায় অটল, এক চুলও নড়ল না। নিজের শেষকথাটির রেশ টেনে বলল, “কাউকে ভালো লাগলে, জানিয়ে দাও আমায়। চলে যাব আমি।”
অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে সিদ্দিক শুধাল, “কই যাবে?”
তনুজা চোখে চোখ রেখে বলল, “যাওয়ার প্রয়োজনীয় কাজটি সত্যিই করেছ তুমি?”
“কী যা-তা বলছ!”
“যা-তা বলছি না। বলো তুমি। কাকে ভাল্লাগে? আমি পুরোনো হয়ে গেছি, তাই না? আমাকে তো ভাল্লাগবেই না।”
“তনুজা!”
“চিল্লাবে না, সিদ্দিক। তুমি আমার মন নিয়ে খেলছ! আমাকে দিয়ে আর হচ্ছে না তোমার। তা-ই তো! এজন্যই বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে না। আজ তোমার ফোন দেখেছি আমি।”
থমকে গেল সিদ্দিক, “ফোন দেখেছ মানে?”
একপ্রকার উদ্ভ্রান্তের মতো করছে তনুজা। একদম সিদ্দিকের মুখোমুখি দাঁড়াল। অস্থির চিত্তে সে এবার সরাসরি মোদ্দা কথায় এলো, “তোমার সাথে আশার অ্যাফেয়ার চলছে, সিদ্দিক! অস্বীকার করবে না।”
অবুঝকে বুঝ দেওয়া যায়। কিন্তু যে নিজ থেকে সব আগে-ভাগে ভুল বুঝে আছে এবং সেই ভুলটাকেই ঠিক ভেবে আছে, তাকে কীভাবে বোঝাবে! তবুও সিদ্দিক চেষ্টা করল। নিজের পক্ষে বলে উঠল, “মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্রিয়েট হয়েছে, তনু। আমরা বসে আলাপ করছি।”
এতে তনুজা আরও চেতে উঠল, “কী বোঝাবে তুমি আমাকে? হ্যাঁ? কী বোঝাবে? এ-ই বোঝাবে, তোমার আর তার মাঝে কিছুই নেই! তবে কেন সে রাত বিরেতে তোমাকে নিজের ফাঁকা ফ্ল্যাটে ডেকে নেয়? আড্ডা দিতে মাঝরাতে কল দিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে ডাকে? আমাকে কী বোঝাতে চাও? কেন সেদিন মেডিকেলে আমাকে একা ফেলে তুমি তার একটা কল আসায় ছুটে চলে গিয়েছিলে? কেন আমাদের প্রাইভেট মোমেন্টের কথাগুলো সে জানে? কী করে আমার মাতৃত্বে নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস পায় সে? বলো!”
সিদ্দিক শুকনো ঢোক গিলে কৈফিয়তের সুরে বলল, “ও আমার ফ্রেন্ড, তনু। ভুল ভাবছ তুমি। আর..”
তনুজা এই মুহূর্তে এসে সিদ্দিকের কর্লার চেপে ধরল। ইতোমধ্যে বাড়ির সবাই চৌকাঠে এসে দাঁড়িয়েছে। আড়চোখে সিদ্দিক তা খেয়াল করে হাত দিয়ে ইশারা করল—এর মাঝে না ঢুকতে। সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে তনুজাকে দেখতেই তনুজা বলে উঠল, “যা দেখেছি, সব ভুল দেখেছি? তোমরা আমাকে নিয়ে যেসব কথা বলেছ—সেগুলো ভুল ছিল? ওগুলো মিথ্যে ছিল? কি? মিথ্যে ছিল?”
মাথা নিচু করে সিদ্দিক কেবল বলল, “না। সত্যি ছিল। কিন্তু তোমার বোঝার ভুল, তুমি..”
“চুপ!” তনুজা সিদ্দিককে ছেড়ে দাঁড়িয়েছে। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইল ক্ষণকাল। এরপরই ঠোঁট ভিজিয়ে বলা শুরু করল, “আমি তোমার থেকে এসব একদমই আশা করিনি, সিদ্দিক। ইউ চিট অন মি। আমাকে দেখে তুমি ওই অবলা টাইপের মেয়ে ভেবেছ, তাই সুযোগ নিয়ে এসেছ। আরে! তোমরা পুরুষ জাত মানেই, ঘরে একটা আর বাইরে হাজারটা। একটা দিয়ে চলে না, না?”
দাঁতে দাঁত পিষে সিদ্দিক বলল, “কথার আঘাত কোরো না, তনুজা। মুখ ফসকে বেরিয়ে আসা কথা কখনই ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। দোহায় লাগে, এখানেই থামো।”
তনুজা হাসল। পাগলের মতো হেসে বলল, “লজ্জা করে না তোমার? আমারই তো লজ্জা হচ্ছে তোমার উপর। লজ্জা হচ্ছে আমার ভালোবাসার উপর। শরীরের জ্বালা এতই বেশি? এর চেয়ে বে*শ্যাবাড়িতে গেলেই পারতে, না? ছিঃ!”
এই মুহূর্তে এসে সিদ্দিক খুব শক্ত হাতে তনুজার গালে থাপ্পড় লাগাল। মিথ্যে অভিযোগ নিয়ে এত কাহিনি কতক্ষণই বা সহ্য করা যায়! সিদ্দিক পারছে না। মস্তিষ্কের বিগড়ানো ভাবটা নিয়ে বাজে কিছু কথা বলেই উঠল, “তোমার মুখের ভাষাকে ছিঃ! কীভাবে এসব বলতে পারছ? এত জঘন্য কীভাবে? আমার উপর বিশ্বাস নেই? আমি কি তোমার দুইদিনের চেনা যে, না বুঝেই যে-কোনো কমেন্ট করে দিলে! এখন জাস্ট ভাবতেই পারছি না, কেমন মেয়েকে বিয়ে করেছি। হঠাৎ এত অধঃপতন কী করে তোমার? শরীরের জ্বালা! ছিঃ! আমি কেবল ‘হ্যাঁ’ বললে এখনই এই বেডে তোমার মতো হাজার তনুজা চলে আসবে। কিন্তু, তনুজা! তোমার মতো নোংরা মানসিকতার নই আমি। বুঝলে? তোমার মতো মেয়েকে এই আবরার পায়েও মাড়ায় না, যেখানে বিয়ে করা বউ বলে একসাথে উঠতে-বসতে-শুতে পারছ। কিন্তু, সে যোগ্যতা তোমার নেই, আফসোস! তোমার চেয়ে আশা শতগুনে ভালো আছে। আর যাই হোক, এভাবে কাহিনি গড়ে না। আমার জীবনটাই শেষ তোমাকে বিয়ে করে।”
এরপর দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা নিজের মা’কে উদ্দেশ্য করে বলল, “তোমাকে বলেছিলাম না, ভালো করে মেয়ের খোঁজ নিতে! বার বার বলেছিলাম না, বাপ-মা মরা মেয়েরা সুবিধার না। কথা শোনোনি! এখন ভুগতে হবে আমাকেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা না দেখে, যাও! নিজেদের রুমে যাও তোমরা।”
এতদিনের এই ক্ষোভটা সিদ্দিক ভুলের বশেই বলে দিলো। বুঝতেও পারল না কী বলেছে। আর ঠিক এখানটায় গিয়েই সিদ্দিক ভুলটা করে ফেলল। তনুজার জায়গা বরাবর আঘাত দিলো। মা-বাবার বিষয়ে সে এমনিতেও খুব নাজুক। তাই আর কথা বলার শক্তি পায়নি। সে আরও কিছু কটু কথা বলে থেমেছে। সিদ্দিকের মা চোখে বিতৃষ্ণা এনে তনুজাকে দেখে প্রস্থান ঘটাল, সিঁথি ভাইয়ের ধমক শুনতেই চলে গিয়েছিল।
সিদ্দিক সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল। এদিকে তনুজার তখন হাত-পা কাঁপছে। হাঁটু ভেঙে আসতেই ফ্লোরে বসে পড়ল সে। একসাথে মানসপটে ভেসে এলো তার তিন বছরের সংসারটা।
সিদ্দিক ওপাশে নিজেকে শান্ত করতে বেগ পোহাচ্ছে। আজ অনেক বাড়াবাড়ি ধরনের ঘটনা ঘটে গিয়েছে। সে মানছে, তনুজা ভুল বলছিল। কিন্তু সে নিজেও যে একদমই ঠিক ছিল না।
কিছু কিছু মানুষ থাকে না? খুবই শান্ত প্রকৃতির। একদম নির্ঝঞ্ঝাট! এদেরকে নিরামিষ ধরনেরও বলা হয়। এরা বিনোদন জানে না, ঝগড়াটাও ঠিক করতে জানে না। এদের রাগ ওঠে না কোনোক্রমেই। এরা কাঁদেও কালেভদ্রে। কিন্তু কিন্তু কিন্তু! এরা যে কতটা আবেগী! তা সময় বুঝিয়ে দেয় চমকপ্রদভাবে। একবার চেতে উঠলে এরা মানুষ খুনও করতে পারে। ঠিক সেটাই হয়েছে আজ তনুজার ক্ষেত্রে। বেশি উত্তেজিত হওয়ার দরুন মূদ্রার ওপিঠটা সে দেখতে পায়নি। সিদ্দিকের উচিত ছিল, ধৈর্য ধারণ করা। তাকে বোঝানো—আশা কেবল একটা ফ্রেন্ড আর কলিগ ছাড়া কিছুই না। আর বিপদে পড়েই এত রাতে কল/ম্যাসেজ করেছে। বিপদটা অবশ্য ছোটোখাটো ছিল না।
সিদ্দিক নিজেকে সামলে নিতে সময় লাগাল। রাগ নেমে যেতেই রুমে এলো। দেখতে পেল, বিছানার পাশেই, গুটিশুটি মেরে ফ্লোরে শুয়ে আছে তনুজা, কেমন যেন জড়োসড়ো হয়ে। সিদ্দিক হাঁটুমুড়ে সেখানে বসল। তনুজার স্নিগ্ধ মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। হাত বাড়িয়ে মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। এরপর তনুজাকে পাজাকোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। দরজা আঁটকে, জানালা আঁটকাল। বৃষ্টির জলে ভিজে যাওয়া ফ্লোরটুকু পরিষ্কার করে কাপড় পালটে নিল। এরপর লাইট অফ করে বিছানায় এসো শুলো। তনুজাকে আলতো হাতে বুকে জড়িয়ে নিল। হুট করে চেনা উষ্ণতা পেয়ে তনুজা সিদ্দিকের বুকে আরও মিশে গেল, দু-হাত দিয়ে সিদ্দিককে শক্ত করে জড়িয়ে বুকের মাঝে নাক ঘষল। সিদ্দিক হাসল। তনুজার সিঁথিতে গিয়ে ঠেকাল অধর। হালকা এক চুমু দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “আমার অবুঝ বউ নও তুমি, তনু। আমাকে বুঝবে না? এভাবে কথা বলা তো আমি নিতে পারিনি। জানো না—কতটা ভালোবাসি আমি তোমায়? আমার সবটা জুড়ে তো কেবল তুমিই। ট্রাস্ট মি, আর কেউ নেই। কেউ না। আমার বউটা সব বোঝে, একটু বোঝালেই বোঝে। এই বোঝানোর সময়টা অন্তত দিয়ো, জান।”
ঘুমের ঘোরেই তনুজা সিদ্দিকের বুকে আরও মিশে গেল। আস্তে-ধীরে উচ্চারণ করল, “উমম..”
সিদ্দিক হেসে তনুজাকে নিজের বুকের উপর রেখে ড্রিম লাইটের আলোতে এই ঘুমন্ত, নিভন্ত বাঘিনীকে দেখতে দেখতেই শেষরাতের দিকে ঘুমিয়ে পড়ল। অথচ, সকালে উঠে বোঝানোর আর সুযোগই পেল না।
______
“ম্যাম! আপনি কি ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি?”
শুদ্ধর প্রশ্নে তনুজা চকিতে মাথা তুলল তার পিঠ থেকে। বাইক থেমেছে, কোনো মেইনরোডের এক কোনায়। কখন থেমেছে—তনুজা ঠিক বলতে পারল না। তবে হ্যাঁ, সে খানিকটা ঝিমিয়ে পড়েছিল, খানিকটা অসতর্ক মনেই শুদ্ধর এতটা কাছে এসেছিল। রেস্টুরেন্টে সিদ্দিকের সাথে আশাকে ওভাবে দেখার পর থেকে তার বুকে অসহনীয় পীড়া হচ্ছে। সেটা সে শুদ্ধকে বুঝতে দিলো না। সরু চোখে তাকাল কেবল।
শুদ্ধ গলায় শব্দ করে কেশে বলল, “ম্যাম, বাইকে এভাবে ঘুমোলে এক্সিডেন্টের প্রোবাবিলিটি থাকে। আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আর আধা ঘন্টার মাঝেই আমরা শহরে ঢুকব।”
তনুজা মাথা উপর নিচ নেড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বাইক স্টার্ট করার আগেই ফিসফিসিয়ে বলে উঠল, “শ্লার লাইফটাহ! হাতে আইস্ক্রিম আর মাথার উপর সূর্য। অথচ, আইস্ক্রিম আনপ্যাক করার পারমিশন নেই।”
তনুজা শুনতে পেল। তবুও বুঝল না। বোঝার জন্য কৌতুহলী মন থেকে শুধাল, “কী বললে?”
শুদ্ধ মাথা ঘোরাল। দেখল—তনুজা তার খুব কাছে। তাই একটু পেছালো। সবসময়ের মতো এক হাতের দূরত্ব রেখে অপ্রুস্তত হেসে বলল, “আইস্ক্রিম খাব, ম্যাম।”
তনুজা এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল, “আমরা তো আউট অব্ লোকালিটি। সামনে থেকে নিয়ো।”
শুদ্ধ সামনে ঘুরল। আরেকবার হেলমেটটা ঠিক করতে করতে সাইড মিররে তনুজাকে দেখল। মিররটা আরেকটু ঠিক করে তনুজার গতিবিধি লক্ষ করতে লাগল। তখন তনুজা দর্পণের এপারে নিজের সাথে আরও একজনের দৃষ্টি সেখানে খেয়াল করল। সেই দৃষ্টিটা খুব অস্বস্তিদায়ক। তাই চোখ সরানোর ইচ্ছে মানসপটে পোষণ করল। কিন্তু তার আগেই সেই দর্পণে থাকা ব্যক্তিটি ঠোঁট এলিয়ে বড্ড মিনমিনে করে বলল, “এভাবেই এক নন্দিনীর রূপের আগুনে ঝলসে যাচ্ছি। আমার এ-রাস্তাটা সহজ হোক!”
চলবে…
আমরা মাঝে-মাঝেই অতীতে ডুব দেবো, আবার বর্তমানে ঘুরব-ফিরব। পাঠকেরা একটু লক্ষ করলেই, বুঝতে পারবেন। ইতোমধ্যে আমরা মূল কাহিনিতে ঢুকে গিয়েছি। হ্যাপি রিডিং ❤️