অবশেষে তুমি এলে কাছে পর্ব -০৩

#অবশেষে_তুমি_এলে_কাছে
#লেখিকা_জেনিফা_চৌধুরী(ছদ্মনাম)
#পর্ব_তৃতীয়

পেছন থেকে কেউ নুসাইবার মুখ চেপে ধরতেই নুসাইবা ভয়ে আতৎ কে উঠলো।নুসাইবা হাত দিয়ে ওর মুখ টা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।পেছনে ঘুরে দেখতে ও পারছেনা এটা কে?চাতক পাখির মতো চারদিকে চেয়ে তিশানের খোঁজ করছে কিন্তু তিশান কোথাও নেই?এখানেই তো ডান্স করছিলো হঠাৎ করে কোথায় ভেনিস হয়ে গেলো তিশান?নুসাইবার ভয়ে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে।পেছনের লোক টা নুসাইবাকে টেনে পেছনে নিয়ে যেতে লাগলো।নুসাইবা এখনো লোক টার মুখ দেখার আপ্রান চেষ্টা করছে।নুসাইবাকে অফিসের পেছনে টেনে নিয় এসেই লোক টা নুসাইবার মুখ ছেড়ে দিতেই নুসাইবার সামনে এসে দাড়ালো।নুসাইবা লোক টা মুখ দেখে অনেক টা অবাক চোখে চেয়ে আছে।নুসাইবা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠলো,,

—আপনি?আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো?আর এভাবে মুখ চেপে ধরার মানে কি তিশান।

তিশান নুসাইবার ভয়ার্ত মুখ দেখে একটু মুচকি হেসে হাত দিয়ে অন্য দিকে ইশারা করতেই নুসাইবা ও তিশানের হাত বরাবর তাকাতেই ওর চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম।কারন অনুষ্ঠানে যেই ছেলেগুলো ড্রিংকস করে উল্টা পাল্টা বিহেভিয়ার করতে দেখেছিলো সে ছেলে গুলো একেকজন রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে। নুসাইবা একবার ভয়ার্ত চোখে তিশানের দিকে আরেক বার ছেলে গুলোর দিকে তাকাচ্ছে।নুসাইবা ছোট থেকেই রক্ত সহ্য করতে পারেনা।রক্তে ওর ফোবিয়া আছে তাই এখনো এত রক্ত দেখে নুসাইবার চারদিক ঘুরতে লাগলো এতক্ষন মুখ চেপে রাখা সাথে এত রক্ত দেখে নুসাইবা মুহূর্তেই মাটিতে ঢুলে পড়লো।নুসাইবা কে হঠাৎ এভাবে সেন্সলেস হয়ে যেতে দেখে তিশান ভয়ে পেয়ে দৌড়ে গিয়ে নুসাইবাকে জড়িয়ে ধরলো।কয়েকবার ডাকার পর ও নুসাইবার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে তিশান কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়লো।এখানে সামনেই সাহেরিকার বাড়ি ছিলো তিশান আর কিছু না ভেবে নুসাইবাকে কোলে তুলে নিলো।
____________________________________________
দরজার কলিং বেল বাজতেই সাহেরিকা দরজা খুলতেই তিশানের কোলে নুসাইবাকে দেখে অবাক এর সাথে মুহূর্তেই রাগী চাহনি নিক্ষেপ করলো তিশানের দিকে।তিশান সেদিকে চোখ না দিয়ে সোজা ভেতরে ঢুকে নুসাইবাকে সোফায় সুইয়ে দিয়ে সাহেরিকার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,,,

–সারু প্লিজ একটু পানি নিয়ে আয়। কুইক।

সাহেরিকা কিছু না বলে রাগে ফোস ফোস করতে করতে গিয়ে পানি এনে তিশানের হাতে দিলো।তিশান নুসাইবার মুখে কয়েকবার পানি ছিটে দিলে ও নুসাইবার কোনো সাড়া পাওয়া গেলোনা।
!
!
!
অনেক ক্ষন যাবৎ নুসাইবা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।ওর সামনেই হাটু মুড়ে বসে আছে তিশান ওর মাথায় হাজার টা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।আজ এত বছর পর নিজের অতীত টা নিজের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে তিশান।তিশানের পাশেই বিরক্তি ভরা মুখে চেয়ে আছে সাহেরিকা।সাহেরিকা অনেক ক্ষন যাবৎ দাড়িয়ে থেকে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,,,

—তুই কতক্ষন আর এই মেয়েটার ড্রামা দেখবি।তুই বুঝতে পারছিস না এই মেয়েটা ড্রামা করছে।

তিশান চুপ করে সাহেরিকার কথা শুনে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নুসাইবার চেয়ে থেকে সাহেরিকার উদ্দেশ্যে বললো,,,।

—তোর এই ননসেন্স কথা বার্তা অফ কর প্লিজ।

বলেই তিশান ফোন টা বের করার জন্য নুসাইবার হাত থেকে হাত টা সরাতেই নুসাইবার জ্ঞান ফিরতে লাগলো।নুসাইবা আস্তে আস্তে চোখ টা খুলতেই অচেনা একটা রুমে নিজেকে আবিষ্কার করলো।সামনে তাকাতেই তিশান আর সাহেরিকাকে চোখে পড়তেই নুসাইবা হুট করে বসে পড়লো।নুসাইবা বসে পড়তেই চারদিক ঘুরতে লাগলো।নুসাইবা মাথা চেপে ধরে তিশানের উদ্দেশ্য বলে উঠলো….

—আ আ আমি এখানে কি করে এলাম?

তিশান বিচলিত কন্ঠে জবাব দিলো…

—তুমি ঠিক আছো?তোমার কি হয়েছিলো হঠাৎ করে?

নুসাইবা কিছু বলার আগেই সাহেরিকা পাশ থেকে জবাব দিলো….

—আরে তিশান তুই বুঝতে পারছিস না সিমপ্যাথি পাওয়ার জন্য ও নাটক করছিলো।

সাহেরিকার কথা শুনে নুসাইবা কড়া কন্ঠে বললো…

—এনার মতো লোকের কাছ থেকে সিমপ্যাথি পাওয়ার কোনো ইচ্ছা বা রুচি আমার নেই। অন্যের স্বামীর কোলে ঢুলে পড়ার স্বভাব আমার নেই। আমার রুচি আপনার মতো অতটাও খারাপ না।

বলেই নুসাইবা উঠে দাড়াতেই আবার পড়ে যেতে নিলে তিশান ধরে ফেললে তিশানের হাত টা নুসাইবা সরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,,

—আমাকে দয়া করে একটু বাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন।

বলেই নুসাইবা হাটা শুরু করলো।তিশান ও আর কিছু না বলে নুসাইবার পেছনে পা বাড়াতেই সাহেরিকা তিশানের হাত টেনে ধরে বলে উঠলো,,

–তুই কোথায় যাচ্ছিস।তুই কোথাও যাবিনা এখন। আমার তোর সাথে কথা আছে।

তিশান সাহেরিকার থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,,,

–তোর যা কথা আছে পরে হবে।

বলেই নুসাইবাকে নিয়ে চলে আসলো।ওরা চলে যেতেই সাহেরিকা রাগে ক্ষোভে হাতের সামনে থাকা কাচের গ্লাস টা মেঝেতে ছুড়ে মারলো।তারপর এক টুকরো কাচ নিয়ে নিজেই নিজের হাতে আঘাত করতে করতে বলে উঠলো,,,

–আমি তোমাকে কিছুতেই তিশানের হতে দিব না। কিছুতেই না।

সাহেরিকার হাত থেকে রক্ত গুলো টপ টপ করে নিচে পড়ছে।এই মুহূর্তে সাহেরিকা সাইকো রুপ ধারন করেছে।
____________________________________________
নুসাইবা বাড়ি ফিরেই নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে মাথা চেপে ধরে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো।ওর চোখে এখনো ওই ছেলে গুলোর রক্তাক্ত চেহারা গুলো ভাসচ্ছে।

—ওই ছেলে গুলো ওই অবস্থা কি করে হলো?আর তিশান এই-বা কেনো আমাকে ওই ভাবে ওইখানে নিয়ে গেলো।

নুসাইবার শরীর টা বড্ড ক্লান্ত লাগায় নুসাইবা চেঞ্জ না করেই সুয়ে পড়লো।
____________________________________________তিশান নিজের রুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে।আর ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।অতীত মানুষ কে না দেয় ভালো থাকতে না দেয় ভুলে থাকতে। অতীত বরাবরেই বিষাক্ত।ঠিক তেমনি তিশানের অতীত টা ও তিশানকে ভালো থাকতে দেয়নি এত দিন।আজ যখন এত বছর পর নিজের অতীতের সাথে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়লো তখন প্রবল ঝড়ে তিশানের ভেতর টা উথাল-পাতাল করছে।ছোট বেলার অতীত টা এভাবে তিশানের কাছে ফিরে আসবে তিশান নিজেও কল্পনা করেনি।শুধু মাত্র নিজের অতীতের জন্য নুসাইবার গায়ের রঙ নিয়ে তিশানের এতটা আপত্তি ছিলো।

“ভালোবাসার মধ্যে অদ্ভুত এক অনুভূতি মিশ্রিত থাকে।
যাকে মন থেকে ভালোবাসা যায় তাকে কষ্ট পেলেও ছাড়া যায় না
আবার মন ভেঙে দিলে তাকে ঘৃনা করা যায় না”

–ঠিক তেমনি আমিও তোমাকে ঘৃনা করতে পারিনি কখনো।তুমি আমার ভেতরের আমি টাকে কষ্ট দিয়েছো, ভেতর থেকে ভেঙে দিয়েছিলি আমাকে।কিন্তু দেখো ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে#অবশেষে_তুমি_এলে_কাছে। ভাগ্য বোধহয় আমাদের বিচ্ছেদ চায়নি তাই তো এত বছর পর ঠিক আমাদের এক করে দিলো।।

কথা গুলো বলতে বলতেই তিশান ওর শার্ট টা খুলতেই বুকের মাঝে (শ্যামকন্যা)লেখাটার দিকে ওর চোখ গেলো।
তিশান নিজের হাত টা লেখারটার উপর ছুয়ে দিয়ে একটু মুচকি হেসে বলে উঠলো,,,

–শ্যামকন্যা।তুমি আমার ছিলে,আছো,আর থাকবে।একবার যখন তোমাকে পেয়ে গেছি এ জীবনে আর ছাড়ছি না।

বলেই একটু রহস্যময় হাসি দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
____________________________________________
সকাল সকাল তিশান কে নিজের বাড়িতে দেখে নুসাইবার বাবা রায়হান মির্জা খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,

–তিশান তুমি এত সকালে এখানে?সব কিছু ঠিক আছে তো।

তিশান উঠে দাড়িয়ে নুসাইবার বাবার সামনে এগিয়ে গিয়ে পকেট থেকে একটা ছবি বের করে নুসাইবার বাবার দিকে ধরতেই নুসাইবার বাবা অবাকের শেষ সীমানায় চলে গেলো।তিশান ছবিটা ধরেই জিজ্ঞেস করে উঠলো…..

—চিনতে পারছেন।অসুবিধা হচ্ছেনা তো চিনতে।আমি কি আপনাকে একটু সাহায্য করব।

নুসাইবার বাবা ভয়ার্ত কন্ঠে জবাব দিলো…

—তু তু তুমি কে?আর এই ছবিটা তুমি কোথায় পেলে।কে তুমি?

তিশান একটা রহস্য মাখা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,,

—আপনার সব খেলার অবসান ঘটাব খুব শিঘ্রই মিস্টার রায়হান মির্জা। নুসাইবার বাবা সেজে থাকার দিন শেষ আপনার…….

#চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here