অবশেষে তুমি এলে কাছে পর্ব -০৫

#অবশেষে_তুমি_এলে_কাছে
#লেখিকা_জেনিফা_চৌধুরী(ছদ্মনাম)
#পর্ব_পঞ্চম

—তোমার সাথে হওয়া প্রত্যেক টা অন্যায়ের শোধ তুলবো আমি শ্যামকর্ন্যা।ওই রায়হান মির্জাকে আমি নিজে হাতে খু’ন করবো।

নুসাইবার পাশে বসে নুসাইবার হাত আকড়ে ধরে নিজে নিজেই কথা গুলো বলে উঠলো তিশান।নুসাইবা গভীর ঘুমে বিভোর থাকায় এসব কিছু টের পাচ্ছেনা।তিশান নুসাইবার হাতের উল্টো পিশে নিজের ঠোঁট ছুয়ে বলে উঠলো,,,

—তোমাকে আমি আর কোনোদিন এক ফোটাও কষ্ট পেতে দিব না। কেনো চলে গিয়েছিলি তুমি ওইদিন?যদি ওইদিন চলে না যেতে তাহলে আজ আমাদের জীবন টা অন্যরকম থাকতো?

তিশানের চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে।
____________________________________________
সকালে নুসাইবা রান্না ঘরে কাজ করছিলো।দরজায় কলিং বেল বাজার শব্দে নুসাইবা খানিক টা অবাক হলো।রান্না ঘর থেকে ড্রয়িং রুমে গিয়ে ঘড়ির দিকে তাকাতেই নিজে নিজেই বলে উঠলো,,,

—এত সকালে কে আসবে?সবাই তো ঘুমাচ্ছে এখনো?

মনের মধ্যে দ্বিধা রেখে দরজা খুলতেই কেউ ওর মাথায় সজোরে বাড়ি মারতেই নুসাইবার চারদিক ঘুরতে লাগলো।মিনিটেই চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো।নুসাইবার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসার আগ অব্দি ও চেয়ে ছিলো দরজার সামনে থাকা অচেনা ব্যাক্তিটির দিকে।নুসাইবা হাত দিয়ে জোরে দরজা ধাক্কা দিয়েই মাটিতে পড়ে গেলো।



হঠাৎ নিচ থেকে জোরে শব্দ আসতেই তিশান দৌড়ে নিচে নেমে আসলো।সদর দরজা খোলা দেখে খানিক টা অবাক হলো।নুসাইবার কথা মনে উঠতেই রান্না ঘরে দৌড়ে যেতেই রান্না ঘরের কোথাও নুসাইবাকে চোখে পড়লো।তিশান নুসাইবাকে ডাকতে ডাকতে দরজার সামনে আসতেই নুসাইবার হাতে থাকা কাচের ভাঙা চুড়ি পড়ে থাকতে দেখলো।আচমকা অচেনা ভয়ে তিশানের বুকের ভেতর টা মুচড়ে উঠলো।তিশান পাগলের মতো দৌড়ে বাড়ির বাইরে আসতেই কাউকে দেখতে পেলোনা।গেটের সামনে যেতেই দারোয়ান কে অজ্ঞান অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে তিশানের ভয় টা আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো।তিশানের হাত পা অবশ হয়ে আসচ্ছে ভয়ে।দারোয়ান কে তুলে পানি ছিটে দিতেই জ্ঞান ফিরে আসলো।দারোয়ান তিশান কে দেখেই ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠলো,,,

—তিশান বাবা ও ও ও রা ওরা আমার ননুসা…

তিশান উত্তেজিত কন্ঠে চেচিয়ে বললো….

—সুমন কাকু বলো কি হয়েছে?তোমার এই অবস্থা হলো কি করে ?নুসাইবা কোথায়?বলো প্লিজ?তাড়াতাড়ি বলো।চুপ করে থেকোনা।

—-আমি সবে মাত্র এসে দেখি কয়েক টা লোক নুসাইবা মামনি কে গাড়িতে উঠাচ্ছে নুসাইবা মামনি অচেতন অবস্থায় ছিলো।আমি গিয়ে বাধা দিতে ওদের মধ্যে একজন আমার মুখে রুমাল জাতীয় কিছু একটা চেপে ধরলো তারপর আর আমার কিছু মনে নেই বাবা।

দারোয়ানের কথা শুনে তিশানের আর বুঝতে বাকি রইলোনা কাজ টা কে করেছে?তিশান আর দেরি না করে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
____________________________________________
—বা.বা বাবা তুমি এসেছো বাবা।প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো এখান থেকে।আমার মাথায় খুব যন্ত্রনা করছে বাবা।তুমি তো জানো আমি এইসব একদম সহ্য করতে পারিনা।প্লিজ নিয়ে চলো আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসচ্ছে বাবা।

রায়হান মির্জা কে চোখের সামনে দেখতেই নুসাইবা একনাগাড়ে কান্না করতে করতে কথা গুলো বলে উঠলো।নুসাইবার কথা শুনে রায়হান মির্জা হা হা করে হেসে উঠলো।রায়হান মির্জা কে হঠাৎ এইভাবে হাসতে দেখে নুসাইবা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।তারপর কাপা কাপা কন্ঠে বললো….

—কি হলো বাবা?তুতুতুমি এইভাবে হাসছো কেনো?প্লিজ বাবা আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।

রায়হান মির্জা হাসতে হাসতে বললো….

–যদি তোমাকে নিয়ে যাওয়ার এই হতো তাহলে কি এত খাটুনি খেটে তোমাকে এখানে নিয়ে আসতাম মামনি?

রায়হান মির্জার কথা শুনে নুসাইবা যেনো আকাশ থেকে পড়লো।ওর মাথা মুহূর্তেই ভন ভন করে ঘুরতে লাগলো।নুসাইবা যেনো নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।নুসাইবা মাথার যন্ত্রনায় চোখ খোলা রাখতে কষ্ট হচ্ছে।নুসাইবা দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বললো….

—-ততততুমি এইসব কি বববলছো বববাবা।আমি জানি বাবা তুমি আমার সাথে মজা করছো।যেনো আমি ভয় না পাই তাই আমার সাথে মজা করছো তাইনা বাবা।প্লিজ বাবা এখন মজা করোনা।আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে বাবা।আমার মাথা ছিড়ে যাচ্ছে প্লিজ নিয়ে যাও আমাকে।

বলেই নুসাইবা কাঁদতে লাগলো।রায়হান মির্জা নুসাইবার কান্না দেখে নুসাইবার সামনে হাটু ভেঙে বসে অসহায় কন্ঠ করে বললো….

—তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে তাইনা মামনি?

নুসাইবা ছলছল চোখে রায়হান মির্জার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো যার অর্থ হ্যাঁ! বাবা আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।নুসাইবা মাথা নাড়াতেই নুসাইহার বাবা খপ করে নুসাইবার চুলে মুঠি ধরতেই নুসাইবা ব্যাথায়”আহঃ”করে উঠলো।চুলে মুঠিটা শক্ত করে ধরে রায়হান মির্জা বলতে লাগলো….

—শুধু মাত্র তোর জন্য আজ আমি সর্বস্ব হারাতে বসেছি।এত বছর ধরে আমার বিছিয়ে আসা জাল আজ শুধু মাত্র ওই তিশান ভেঙে দিবে তা কি করে হতে দেই বল।

রায়হান মির্জা এমন ভাবে চুলে মুঠি ধরে রাখায় নুসাইবা ব্যাথায় বার বার কুকিয়ে উঠছে।নুসাইবা অনেক কষ্টে দাতে দাত চেপে বলে উঠলো,,,

—আহঃ বাবা আমার লাগছে।প্লিজ ছেড়ে দাও।আমি তোমার একটা কথাও বুঝতে পারছিনা বাবা।

নুসাইবা কথাটা বলতেই রায়হান মির্জা আরো জোরে চুলের মুঠি ধরতেই নুসাইবার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।ওর মনে হচ্ছে ওর মাথা টা এক্ষুনি ছিড়ে যাবে।রায়হান মির্জা জোরে চেচিয়ে বলে উঠলো,,,

—কে তোর বাবা?আমি তোর বাবা নই।বাবা নই আমি তোর।

বলেই নুসাইবাকে চুলের মুঠি ধরেই ছিটকে ফেলে দিতেই নুসাইবা ঘুরে দেয়ালের সাথে বাড়ি লাগতেই ওর কপাল ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো।নুসাইবার চারদিক চড়কির মতো ঘুরছে।সব কিছু ঝাপসা লাগছে ওর।নুসাইবা পড়ে যেতে নিলেই রায়হান মির্জা আবারো ওর হাত খপ করে ধরে ফেললো।নুসাইবার এবার চোখ খোলা রাখতেও কষ্ট হচ্ছে।যেকোনো সময় নুসাইবা ঢুলে পড়ে যাবে সেটা ও খুব করে টের পাচ্ছে।

—কে আছিস কাগজ টা নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি….

রায়হান মির্জার হাক শুনে একটা মধ্য বয়স্ক ছেলে একটা কলম আর কিছু কাগজ নিয়ে আসলো।কাগজ গুলো নুসাইবার সামনে ধরে রায়হান মির্জা বললো…

—আজকে সব খেলার অবসান ঘটাব।আর সেই সাথে তোর জীবনেও সমাপ্তি ঘটবে।সাইন কর এখানে?

এত কষ্ট সহ্য করে নুসাইবা একটু হালকা হেসে জবাব দিলো….

— নিজের চোখে সামনে নিজের বাবার ভয়ংকর রুপ দেখছি অথচ আমি জানিই না আমার কি দোষ। কেনো আমার সাথে এতটা নির্মম আচরন করছে আমার নিজের বাবা?সেখানে এই পাতলা একটা কাগজে সাইন করা খুব বড় কঠিন কাজ না।কি আছে এখানে সম্পত্তির কথা আছে তো?আরে বাবা তুমি আমার কাছে হাসি মুখে কিছু চাইলে তো আমি হাসতে হাসতে দিয়ে দিতাম।এতটা নিচে নামার কোনো দরকার ছিলোনা।মিস্টার রায়হান মির্জা কান খুলে শুনে রাখুন এখন আমাকে মে’রে ফেললে ও আমি এই কাগজে সাইন করব না।করব না আমি।শুনতে পেরেছেন আমি এই কাগজে সাইন করব না।

কিছুটা চেচিয়ে কথা গুলো বলে উঠলো নুসাইবা।নুসাইবার কথা শুনে রায়হান মির্জা রাগে ফেটে পড়ে সোজা নুসাইবার গাল চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বললো….

—করবি না মানে?এক্ষুনি এই কাগজে সাইন কর।না হলে?

নুসাইবা দাতে দাত চেপে ব্যাথা সহ্য করে বললো…

—না হলে কি?না হলে মে’রে ফেলবেন আমাকে।মে’রে ফেলুন।আজকে আমারে মে’রে ফেললেও আমি এই কাগজে সাইন করব না।

রায়হান মির্জা নুসাইবার কথা শুনে।একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো…

–হা হা কি ভেবেছিস রায়হান মির্জা অনেক কাচা খেলোয়াড়। না না মামনি। একটু চোখ টা ঘুরাও মামনি।দেখো তো কিছু দেখতে পাচ্ছো কিনা?

রায়হান মির্জার কথা শুনে নুসাইবা ওর ডান পাশে তাকাতেই নুসাইবার মাথায় বাজ পড়লো।কারন গরম ফুটন্ত পানির উপর উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তিশান কে।তিশান কে এই অবস্থায় দেখে নুসাইবা ভয়ে জোরে চিৎকার করে উঠলো…..

—-তিশানননন…….

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here