#অবেলায়_তুমি (পর্ব-৩)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
–‘আকাশের জীবন টাকে একদম নড়ক বানিয়ে দিব। পরিশেষে আকাশ তো পথে নামবেই সেই সঙ্গে আকাশের পরিবারকেও পথে নামাবো। যেমনটা গত পাঁচ বছর আগে আমাদের সাথে হয়েছিল।’
আকাশ তনুর অফিসে জয়েন করেছে সেই কথাটা শুনা মাত্রই তনুর মা ভীষণ খুশি হয়। তবে পরবর্তীতে তনুর কথা শুনে তনুর মা’য়ের হাসিমাখা মুখ খানা মুহূর্তের মধ্যেই পরিবর্তন হয়ে যায়। তনুর মা তনুর কথা শুনে ভূত দেখার মতন করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। তনুর মা জানতো তনুর ভিতরে সেলিম সাহেবের পরিবারকে নিয়ে অনেকটা রাগ অভিমান রয়েছে। বিশেষ করে সেমিল সাহেবের ছেলে আকাশের উপরে। কিন্তু রাগের পরিমাণটা যে এতোটা বেশি সেটা তনুর মা তনুর মুখে শুনার পর রীতিমতো অবাক। ভূত দেখার মতন করে আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তনুর মা তনুর দিকে। অপরদিকে তনু তার মা’কে আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে তার তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাস করে,
–‘মা তুমি আমার দিকে এমন অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকিয়ে আছো কেন? তোমার তো আরো আমার থেকে বেশি খুশি হওয়ার কথা। কারণ আমার বাবা মানে তোমার স্বামীর অসময়ে সেলিম সাহেবের পরিবার কোনো প্রকার সাহায্য করেনি। যদি তিনারা সাহায্য করতো তাহলে হয়তো আজ তোমার স্বামী বা আমার বাবা বেঁচে থাকতো। আমার বাবার মৃত্যুর জন্য সেলিম সাহেবের পরিবার পুরোপুরি দায়ী। এক সাথে এতো বছর সেলিম সাহেব আমার বাবার সাথে বিজনেস করেছে, কিন্তু যখন আমার বাবার দুঃসময় এসেছে, তখন সেলিম সাহেব কেটে পড়েছে। এছাড়া মা গত পাঁচ বছর আগে বাবা মা’রা যাওয়ার সাপ্তাহ দুই সাপ্তাহ পর যখন আমরা শহর ছেড়ে চলে যাবো তার দুইদিন আগে আমি নির্লজ্জের মতন সেলিম সাহেবের ছেলে আকাশকে নিজের মনের কথা বলেছিলাম। তখন সে আমাকে থা’প্পড় মা’রার পাশাপাশি আমাকে আমার বান্ধবীদের সামনে অপমান করে বলেছিল, আমি তার যোগ্য নই। আমার মতন অসংখ্য মেয়ে নাকি দৈনিক তার পিছনে ঘুরে। আমার কোনো স্টাটাস নেই। আমার বাবার টাকা পয়সা ডুবে যাওয়ায় আমি নাকি তাদের অর্থসম্পদের লোভে তার সাথে সম্পর্কে জড়াতে চাচ্ছি। মা জানো সেদিন আকাশ আমাকে আমার বান্ধবীদের সামনে থা’প্পর মা’রায় যতোটা কষ্ট পাইনি, তার থেকে দ্বিগুণ কষ্ট পেয়েছি তার কথাবার্তা শুনে। আমি সেদিন অপমানে মাথা মাটির দিকে নুইয়ে রেখেছিলাম। আর সেই সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমার বাবার চাইতেও দ্বিগুণ নাম ডাক আর অর্থসম্পদ আমি জুড়াবো। সেদিন সে আমার ভিতরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তার সাথে সাথে পরিশেষে সে আমায় আরো একটা কথা বলেছিল, আমি যদি কখনো তার লেভেলে
যেতে পারি তাহলে সেদিন গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার কথা বলতে। তখন সে আমাকে মেনে নিবে। মা সেদিন আমার ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়েছিল আকাশের কথা শুনে। যার কারণে আমি দিন-রাত পরিশ্রম করে নিজেকে এই পজিশনে নিয়ে এসেছি। তবে মা সে এখন আমার লেভেলে নাই। আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে এখন বুক ফুলিয়ে হাজারটা কথা বলতে পারবো, কিন্তু সে আমার সামনে বুক ফুলিয়ে একটা কথা বলবে সেই যোগ্যতাটাও বর্তমানে তার নেই। সে বর্তমানে আমার অফিসের নিম্নস্তরের একজন কর্মচারী। আজ আমার সময় চলছে। তার সময়টা বহু আগেই ফুরিয়ে গেছে। এখন তাকে আমি নিজের যোগ্যতা দেখাবো পদে পদে। তারপর সে শিক্ষা পাবে।’
তনুর মা তনুর কথা শুনে তনুকে শান্ত গলায় বলে,
–‘তনু গত পাঁচ বছর আগের ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে আজ তুই এতোদিন পর এসে আকাশের উপরে প্রতিশোধ নিতে চাইছিস যেটা তোর একদম উচিত হচ্ছে না। হ্যাঁ আমাদের অসময়ে সেলিম সাহেব আমাদের উপকার করেনি। এছাড়া আকাশ তোকে অপমান করেছিল। তবে তাই বলে যে তুই সেম কাজটাই আকাশের সাথে করবি সেটা কিন্তু একদম ঠিক না।’
–‘মা তোমার কাছে সেটা ঠিক না লাগলেও আমার কাছে একদম ঠিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ সে আমার প্রেমের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছিল আমার যোগ্যতা নেই বলে। কিন্তু বর্তমানে সে আমার অফিসের কর্মচারী। আর আমি অফিসের ম্যাডাম। মা আমি তার উপরে বিনা কারণে প্রতিশোধ নিচ্ছি না। সে আমার সাথে অন্যায় করেছে বিধায় আমি তার উপরে সেসবের প্রতিশোধ নিব। আর আমার কাজে তোমার আরো খুশি হওয়া উচিত। কারণ তোমার স্বামীর মরণের জন্য সেলিম সাহেবের পরিবার দায়ী।’
–‘তনু তোর কাছে প্রতিশোধ নেওয়াটা আনন্দজনক হলেও সেটা আমার কাছে আনন্দজনক না।’
–‘তাহলে মা তোমাকে আর আমার কিছু বলার নেই। তবে আকাশের উপরে আমি প্রতিশোধ নিব সেটা আমি মনে মনে একদম ঠিক করে ফেলেছি। ওর কোনো ছাড় নেই। যে যেমন কর্ম করবে তেমনটাই তাকে ফল পেতে হবে।’
–‘তনু তুই যেহেতু ঠিক করেই নিয়েছিস আকাশের উপরে প্রতিশোধ নিবি, তাহলে সেখানে আর আমার কিছু বলার নেই। তবে একটা কথা জানিস তনু, কিছু সময় কিছু জিনিস সৃষ্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিতে হয়। কারণ আগ বাড়িয়ে সব কিছু নিজে করতে গেলে সেটাতে অনেক সময় ভুল হয়।’
–‘মা ভুল হলে হোক। তবে আমি প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো।’
–‘ঠিক আছে নে। আমি তোকে কোনো প্রকার বাঁধা দিব না। আর না কখনো তোর এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবো। তবে তোকে এই বিষয়ের উপরে শেষ আরেকটা কথা বলবো। তনু এই শহরটা অনেক অনেক বিষাক্ত। বিশেষ করে আমাদের জন্য। কারণ এই শহরে থাকা অবস্থাতেই আমরা তোর বাবাকে চিরতরের জন্য হারিয়েছি। দেখিস তোর বেলাতেও যেনো এমনটা না হয়, যে তুই প্রতিশোধ নেওয়ার চক্করে আকাশকে চিরতরের জন্য হারিয়ে বসেছিস। তাহলে কিন্তু সারাটা জীবন তোর চোখের পানি নিয়ে কাটাতে হবে।’
–‘মা বাবার বিষয়টা ভিন্ন। আর আকাশকে হারালে আমার কিছুই আসবে যাবে না। কারণ আকাশকে এখন তো আর আমি ভালোবাসি না। আর না তার সাথে আমি সারাজীবন সংসার করবো। তবে আজ সকালে একটা এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে আকাশকে আমি তিন বছরের জন্য বিয়ে করেছি। কিন্তু সেটা শুধু তার উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। আকাশ চাইলে চাকরি থেকে যে কোনো সময় চলে যেতে পারে। আমি তাকে যতোই শর্ত দিয়ে চাকরি দেই না কেন, সে পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে দিলে তাকে খুঁজে পাওয়া আমার জন্য কষ্টের হবে। তবে তাকে বিয়ে করার কারণে সে আমার কাছে ধরা। এগ্রিমেন্ট বা কন্ট্রাক্ট পেপার নিয়ে আমি থানায় গেলে আকাশ আন্ডারগ্রাউন্ডে লুকিয়ে থাকলেও থানার লোকেরা তাকে খুঁজে বের করে ফেলবে। তাই তাকে আমি কৌশল করে বিয়ে করেছি। যাতে করে সে চাকরি ছাড়লেও আমার থেকে মুক্তি না পায়। আমি আগামী তিন বছর তার উপরে নানান ভাবে প্রতিশোধ নিব। তারপর তার চোখের সামনেই আরেকটা ছেলেকে বিয়ে করে সংসার করবো।’
–‘তনু আকাশ না হয় তোকে অপমান করে অন্যায় করেছে। তবে তুই যেটা করতে চাইছিস সেটা কিন্তু মহা অন্যায়। আর মানুষ কখনো সময়ের আগে অসময়ে আফসোস করে না। সব কিছুর একটা সঠিক সময় থাকে। তনু আমার কথা মিলিয়ে নে, তুই যেটা করতে যাচ্ছিস সেটার জন্য তোর অনেক বড় মাশুল দিতে হবে।’
–‘মা প্লিজ অলক্ষুণে কথাবার্তা বলো না। আমি কোথায় ভাবলাম তুমি আরো খুশি হবে। কিন্তু এখন দেখছি তুমি খুশি হওয়ার বদলে আমাকেই আবোল-তাবোল বলছো।’
–‘আচ্ছা বাদ দে এখন এসব কথাবার্তা। অফিস করে এসেছিস যা ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি চুলোয় চা বসাচ্ছি।’
–‘ঠিক আছে।’
তনু তার মা’য়ের কথা মতন ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আর তনুর মা তনুর জন্য কিচেনে গিয়ে চা বসায়। অপরিদকে আকাশ ও বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। আকাশের আগমনে আকাশের মা রহিমা বেগম বাসার দরজা খুলে। কিন্তু রহিমা বেগম দরজা খুলতেই আকাশের কপালে ব্যান্ডেজ দেখে চমকে উঠে। চোখ-মুখ মলিন করে ছেলেকে প্রশ্ন করে,
–‘আকাশ কপালে কি হয়েছে তোর?’
–‘মা ছোটোখাটো একটা চোট পেয়েছি।’
–‘এই ছেলে কি করে ছোট পেলি তুই? আর কতোখানি লেগেছে তোর?’
রহিমা বেগমের প্রশ্নের উত্তরে আকাশ মিথ্যা উত্তর দেয়।
–‘আরে মা তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠার সময় বাড়ি খেয়েছি। তবে মা বেশি একটা লাগেনি। অল্প একটু লেগেছে। মা তুমি একদম টেনশন করো না।’
–‘এই ছেলে এতো বড় হয়ে গেছিস কিন্তু এখনো সাবধানে চলাফেরা করতে পারিস না। আর তুই বললেই কি আমার টেনশন হবে না নাকি?’
–‘মা ছাড়ো তো ওসব। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন তোমাকে একটা গুড নিউজ শুনাই। মা আমার চাকরিটা হয়ে গেছে।’
–‘আলহামদুলিল্লাহ।’
–‘তবে মা জানো আজ আমার সাথে বেশ আশ্চর্যজনক একটা ঘটনা ঘটেছে।’
–‘কি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছে আবার তোর সাথে?’
–‘মা আমি যেই অফিসে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছি, সেই অফিসের বস হচ্ছে বাবার বিজনেসের পার্টনার জসিম সাহেবের মেয়ে তনু।’
–‘কিহহহ! তার মানে সে তোকে দেখা মাত্রই চাকরিটা কনফার্ম করে দিয়েছে তাই না?’
রহিমা বেগমের কথা শুনে আকাশ মুখ বাঁকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলে,
–‘না মা চাকরিটা সে আমাকে দেখে দেয়নি। চাকরিটা নেওয়ার জন্য আমাকে অনেক বড় একটা রিস্ক নিতে হয়েছে।
–‘ওমা এটা কেমন কথা! তনুকে কি তুই নিজের পরিচয় দেস নি? বা সে কি তোকে চিনতে পারেনি? আর কিসের রিস্ক নিয়েছিস তুই?’
–‘মা তনুকে আমার পরিচয় দেওয়ার দরকার পড়েনি। আমার চেহারাটা তার একদম মনের মধ্যে গাঁথা। আর রিস্ক বলতে তনু আমাকে দিয়ে একটা কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করিয়েছে।’
–‘কিসের কন্ট্রাক্ট পেপার? আর কি কারণে তনু এমনটা করলো?’
–‘মা কন্ট্রাক্ট পেপারটা ছিল তিন বছরের চুক্তির বিয়ের। তনু আমাকে আগামী তিন বছরের জন্য চুক্তিতে বিয়ে করেছে। আর সেই সঙ্গে চুক্তির মধ্যেমে আগামী তিন বছরের জন্য আমাকে আঁটকেছে তার অফিসে। আমি আগামী তিন বছর চাইলে তার অফিস ছেড়ে যেতে পারবো না। তনু চায় আমার উপরে প্রতিশোধ নিতে। তাই সে এই নোংরা কাজটা করেছে।’
–‘আকাশ কি বলছিস এবস! আমার তো মাথায় কিছু কাজ করছে না! আকাশ তোর একদম উচিত হয়নি এতোকিছু করে চাকরিটা নেওয়া। দরকার হয় আরো কিছুদিন কষ্ট করতাম তোর অন্য কোথাও চাকরি হওয়া পর্যন্ত। এছাড়া তুই তো বুঝতেই পেরেছিস তনু তোর উপরে প্রতিশোধ নিতে চাইছে। তাহলে কেন তুই ওর ফাঁদে পা দিলি?’
–‘মা তনুর কোম্পানিটা শহরের নাম করা একটা কোম্পানি। এছাড়া সংসারের অভাব-অনটন দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাই চাকরিটা হাত ছাড়া করিনি। আর তাছাড়া আরেক টা কারণ আছে চাকরি নেওয়ার সেটা তো তুমি জানোই।’
–‘হ্যাঁ জানি। কিন্তু বাবা তোর যদি বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করে দেয় তনু?’
–‘আহ মা তুমি টেনশন করো না। দেখবে সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
–‘তাই যেনো হয়।’
–‘আচ্ছা মা এখন খাবার রেডি করো। আমি ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে আসছি। কাজের চাপে আজ দুপুরে সেভাবে খাওয়া হয়নি। বেশ খিদে লেগেছে।’
–‘আচ্ছা ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি টেবিলে খাবার লাগাচ্ছি।’
আকাশ ফ্রেশ হতে চলে যায়। ওয়াশরুম ঢুকে গা থেকে শার্ট খোলার পর আকাশ দেখে তার পেটের অনেক খানি জায়গায় ফোস্কা পড়েছে। ঐ যে তনু আকাশের দিকে গরম চা ছুঁড়ে মে’রেছিল অফিসে, যার ফলেই আকাশের পেটে ফোস্কা পড়েছে। আকাশ নিজের পেটের অবস্থা দেখে ভাবে, চা ছুঁড়ে মা’রা আর কপালে চোট পাওয়ার বিষয়টা যদি সে তার মা’কে খুলে বলতো, তাহলে তার মা তাকে আর তনুর অফিসে চাকরি করতে দিবে না। আকাশ এই কারণেই কপালে চোট পাওয়ার বিষয়টা নিয়ে মা’য়ের কাছে মিথ্যা বলেছে। আকাশ বিষয় গুলা নিয়ে ভাবতে ভাবতে গোসল শেষ করে। তারপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমে এসে পোড়া ঘায়ের মলমটা পেটে লাগিয়ে গায়ে শার্ট পড়ে খেতে চলে যায়। আকাশের মা ইতিমধ্যে টেবিলে খাবার লাগিয়ে দিয়েছে। আকাশ খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার রুমে চলে আসে। এরপর রুমে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট করার মনোভাব নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকে। কিন্তু আকাশ কখন যে ঘুমিয়ে যায় সেটা সে নিজেও বলতে পারে না। তবে তার ঘুম ভাঙ্গে ফোনের আওয়াজে। চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানার এক পাশে রাখা ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে কেউ বলে উঠে,
–‘মিস্টার আকাশ আমি তনু বলছি। শুন আমি তোকে ম্যাসেজ করে একটা বাড়ির ঠিকানা পাঠিয়েছি। তুই জলদি সেই বাড়ির নিচে এসে আমার জন্য অপেক্ষা কর। আমি মিনিট দশেক পর নিচে নামছি। তারপর আমরা কয়েকজন বান্ধবী মিলে শপিং করবো। আর তুই ও আমাদের সঙ্গে যাবি আমাদের জিনিসপ্রত্র গুলা ক্যারি করতে।’
তনুর কথা শুনে আকাশের মাথা গরম হয়ে যায়। কারণ এমনিতেই বেচারাকে ঘুম থেকে ফোন দিয়ে উঠিয়েছে। তার উপরে তনু তাকে ঘরের পোষা চাকরের মতন ব্যাগ ক্যারি করার কথা বলছে। আকাশের ইচ্ছা করছে ফোনের মধ্যে দিয়ে ঢুকে গিয়ে তনুকে কোষে এক থা’প্পড় লাগাতে। তবে আকাশ নিজের রাগেকে তনুর সামনে প্রকাশ করে না। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে শান্ত গলায় বলে,
–‘ম্যাডাম আমি আসতে পারবো না। কারণ এখন কোনো অফিস টাইম না যে আমি আপনার কাজ করবো। আর আপনি আমাকে যেই কাজের কথা বলছেন সেটা একদম আপনার ব্যক্তিগত। ম্যাডাম আমি আপনার অফিসের এসিস্ট্যান্ট। অফিসের কাজ ছাড়া আপনার ব্যক্তিগত কোনো কাজ আমি করবো না।’
–‘দ্যাখ আমার কথার অমান্য করে নিজের বিপদ ডেকে আনিস না। তুই ভালো করেই জানিস আমার কথার অমান্য করলে তোর জন্যই ক্ষতি হবে। তাই ভালোয় ভালোয় বলছি দশ মিনিটের মধ্যে আমার লোকেশনে এসে হাজির হ। ফোন রাখলাম।’
তনু আকাশকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দেয়। এদিকে আকাশের মেজাজ আগের চেয়ে আরো বেশি গরম হয়ে যায়। তবে আকাশের কিছুই করার নেই। সে যদি এখন তনুর কথা না শুনে তাহলে সেটার শোধ তনু অফিসের মধ্যে তুলবে। তাই আকাশ তনুর কথা মতন গায়ে অন্য আরেকটা শার্ট লাগিয়ে তনুর পাঠানো ঠিকানায় চলে যায়। তারপর সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তনুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তনু বাড়ি থেকে নিচে নেমে আকাশের কাছে আসে। তনু যেই বাড়ি থেকে নিছে নেমেছে সেটা তনুর নিজের বাড়ি। আর আকাশ এটা তনুর সাথে ফোনে কথা বলা অবস্থাতেই বুঝে গিয়েছে। তনু আকাশের কাছে আসার পর গ্যারেজ থেকে নিজের গাড়ি বের করে আকাশকে নিয়ে শপিংমলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। তনু নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছে। আর আকাশ তার পাশের সিটে চুপচাপ করে বসে আছে। কিছুক্ষণ গাড়ি করে যাত্রা করার পর আকাশ আর তনু শপিংমলে গিয়ে পৌঁছায়। শপিংমলের সামনে তনুর ফ্রেন্ডরা দাঁড়িয়ে তনুর জন্য বহু আগ থেকেই অপেক্ষা করছে। তনু শপিংমলে পৌঁছে নিজের বান্ধবীদের সাথে দেখা করে তাদের নিয়ে শপিংমলে ঢুকে যায়। আর আকাশকে তার পিছনে পিছনে যেতে বলে৷ তনু আর তার বান্ধবীরা শপিংমলে ঘুরে ঘুরে অনেক শপিং করে। তনু নিজের ক্রয়কৃত জিনিস গুলা সব আকাশের হাতে ধরিয়ে দেয়। তবে তনুর বান্ধবীরা যখন তাদের ক্রয়কৃত জিনিস আকাশের হাতে দিতে যাবে ক্যারি করার জন্য, তখন জিনিসটা তনুর কেমন যেনো গায়ে গায়ে। তাই সে সবাইকে বলে নিজের জিনিস নিজেকেই ক্যারি করতে। আর তার জিনিস গুলোই খালি সে আকাশের হাতে দেয়। এরপর শপিং শেষ করে যে যার মতন বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে যায়। আর তনু আকাশকে নিয়ে গাড়ি করে নিজের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায়। বাড়ির সামনে পৌঁছানোর পর গাড়ি সাইড করে তনু আকাশকে বলে তার শপিংব্যাগ গুলো বাসা অব্দি পৌঁছে দিতে। আকাশ কোনো কথাবার্তা ছাড়া চুপচাপ তনুর কথা মেনে জিনিস গুলো সঙ্গে নিয়ে তনুর পিছনে পিছনে যেতে থাকে। তনু বাড়ির দরজার সামনে পৌঁছে দরজার কলিংবেল বাজাতেই তনুর মা এসে দরজা খুলে দেয়। তারপর তনু আকাশের হাত থেকে শপিংব্যাগ গুলো নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে আকাশকে বলে,
–‘হয়েছে এবার তুই বাড়ি চলে যা।’
আকাশ তনুর কথা শুনে চলে আসতেই ধরবে, তখনি তনুর মা ঘরের ভিতর থেকে তনুকে ধাক্কা দিয়ে দরজার বাহিরে বের করে দেয়। এরপর আকাশের হাত ধরে টেনে তাকে ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তনু পুরোপুরি অবাক হয়ে যায় তার মা’য়ের এমন আচরণে….
চলবে….
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)