অবেলায় তুমি পর্ব -০৪

#অবেলায়_তুমি (পর্ব-৪)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

আকাশ তনুর কথা শুনে চলে আসতেই ধরবে, তখনি তনুর মা ঘরের ভিতর থেকে তনুকে ধাক্কা দিয়ে দরজার বাহিরে বের করে দেয়। এরপর আকাশের হাত ধরে টেনে তাকে ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তনু পুরোপুরি অবাক হয়ে যায় তার মা’য়ের এমন আচরণে। তনু বুঝে উঠতে পারছে না কি ঘটছে তনুর সাথে। সব কিছু কেমন যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তনুর। বেকুবের মতন কিছুটা সময় দরজার বাহিরে আশ্চর্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তনু। কিন্তু সে তারপরেও কোনো আগামাথা বুঝে উঠতে পারে না। তাই সে দরজায় বাড়ি নিয়ে নিজের মা’কে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

–‘মা এটা কি হলো? তুমি আমায় দরজার বাহিরে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করলে কেন?’

তনুর মা তনুর চেঁচানি শুনে আকাশকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে তিনি দরজার সামনে আসে। এরপর মেয়ের প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে ঘরের ভিতর থেকে বলে উঠে,

–‘কি হলো সেটা তো তুই নিজেই দেখতেই পেলি। তোকে দরজার বাহিরে বের করে দিয়েছি। আর আমার এমমটা করতে ইচ্ছে হয়েছে তাই আমি এমনটা করেছি।’

–‘মা দেখো আমার প্রচন্ড রাগ উঠছে দরজা খুলো।’

–‘দরজা খোলা যাবে না। তুই বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাক।’

তনুর মা’য়ের কথা শুনে রাগে তনুর সারা শরীর কটকট করতে থাকে। মেজাজ পুরো চূড়ায় গিয়ে পৌঁছেছে তনুর। আগের বারের চাইতে গলার সাউন্ড আরো বড় করে দরজায় লাগাতার বাড়ি দিয়ে বলে,

–‘মা দরজা খুলো। আমার কিন্তু প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এবার কিন্তু ভয়ানক কিছু ঘটবে বলে দিলাম।’

তনুর মা এবার দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই তনু হাতে থাকা শপিংব্যাগ গুলো হাত থেকে নিচে ছুঁড়ে বলে,

–‘মা সমস্যাটা কোন জায়গায় তোমার? তুমি আমাকে ঘরের বাহিরে বের করে দিয়ে ঐ অকর্মা টাকে ঘরের ভিতরে ঢুকিয়েছো এর কারণ কি?’

–‘কারণ হলো তুই আকাশকে বাসা অব্দি এনে তাকে বাসায় না ঢুকতে বলে চলে যেতে বলেছিস।’

–‘তো কি করবো? তার কাজ শেষ তাই আমি তাকে চলে যেতে বলেছি। কিন্তু তুমি তো দেখছি তাকে জামাই আদর করে ঘরে ঢুকিয়েছো। মনে হচ্ছে যেনো সে তোমার বাড়ির জামাই।’

–‘তোর যেটা করনীয় সেটা তুই করিস নি। তাই তোকে বের করে দিয়ে আকাশকে টেনে ঘরে ঢুকিয়েছি। আর তুই ঠিক কথাই বলেছিস। সে আমার বাড়ির জামাই। তাই তাকে জামাইয় আদর করে টেনে ঘরে ঢুকিয়েছি। আজ সকালে তুই তাকে এগ্রিমেন্ট বা কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করিয়ে বিয়ে করে করেছিস, কিন্তু তুই সেটা যেই কারণেই করিস না কেন সে আগামী তিন বছরের জন্য আমার বাড়ির জামাই। আর আমি তার শ্বাশুড়ি। তাই আমারো কিছু দায়িত্ব কর্তব্য আছে মেয়ের জামাই ঘরে আসলে তার সমাদর করা। সেজন্য আমি সেটাই করেছি।’

–‘মা আকাশের বিষয়টা নিয়ে কিন্তু এবার একটু বেশি অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে।’

–‘অতিরিক্ত আমি নয় তুই করেছিস। একটা মানুষ বাসা অব্দি আসলে তাকে বাসার ভিতরে ঢুকতে বলাটা ভদ্রতা। কিন্তু তুই ভদ্রতা তো দেখাস নি। বরং তাকে চলে যেতে বলে উল্টো আরো অপমান করেছিস।’

–‘মা আমি তাকে বাসায় আসতে বলিনি সেটা তোমার কাছে অপমান করা বলে মনে হয়েছে। কিন্তু সে যে গত পাঁচ বছর আগে আমাকে আমার বান্ধবীদের সামনে থা’প্পড় মে’রে সত্যিকারত্বে অপমান করেছিল সেটা কি তোমার কাছে কিছুই না?’

–‘তনু যেটা গত পাঁচ বছর আগে চলে গেছে সেটা চলে গেছে। অযথা পাঁচ বছর আগের বিষয় নিয়ে পাঁচ বছর পর রেষারেষি করার কোনো মানেই দেখি না। আর তাছাড়া তুই যেমনটা করেছিস তার সাথে সেটা তার পরিবার কোনোদিন ও তোর সাথে বা আমার সাথে করেনি। আমরা যতোবার তাদের বাসায় গিয়েছি তারা বরাবরের মতোই আমাদেরকে খাতিরযত্ন করেছে। তবে হ্যাঁ তোর বাবার খারাপ সময়ে হয়তো তারা এগিয়ে আসেনি। আর সেটার জন্য হতে পারে তাদের অন্য কোনো কারণ ছিল। কিন্তু তারা কখনোই আমাদেরকে এভাবে অপমান করেনি। তবে তুই আকাশকে ডিরেক্ট অপমান করেছিস। যেটা তোর মোটেও উচিত হয়নি।’

–‘মা কোনটা উচিত আর কোনটা অনুচিত সেটা আমি ভালো করেই বুঝি। তোমার আমাকে নতুন করে এখন সেসব শিখাতে হবে না। আর তোমার যেহেতু তাকে নিয়ে এতো আদিখ্যেতা করার ইচ্ছে তাহলে তুমি করো। আমি আর এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবো না। তবে তাকে আমি সময় মতন সব কিছু বুঝাবো।’

–‘তোর যা করার তুই করিস। এবার বকবক না করে ব্যাগ গুলো উঠিয়ে নিয়ে রুমে যা।’

তনু আর কোনো কথা না বলে রাগে ফসফস করতে করতে শপিংব্যাগ গুলো ফ্লোর থেকে উঠিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তনু চলে যাওয়ার পর তনুর মা আকাশকে বলে,

–‘বাবা কেমন আছো তুমি?’

–‘আলহামদুলিল্লাহ আন্টি। আপনি কেমন আছেন?’

–‘এই তো বাবা আমিও আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা বাবা তুমি মাথায় চোট পেয়েছো কি ভাবে?’

–‘আসলে আন্টি আজ বিকালে অফিস শেষ করে বাসায় যাওয়ার পথে গাড়িতে উঠার সময় গাড়ির সাথে একটু বাড়ি খেয়েছি।’

–‘ইশশ রেহ! বেশি লেগেছে কি বাবা?’

–‘না আন্টি বেশি লাগেনি। সামান্য একটু লেগেছে।’

–‘কি যে করো তোমরা। একটু সাবধানে চলতে পারো না।’

–‘আসলে আন্টি…

–‘আচ্ছা হয়েছে আর বলতে হবে না। তবে আগামী থেকে একটু সাবধানে চলাফেরা করো।’

–‘জ্বি আন্টি।’

–‘আচ্ছা বাবা তুমি এবার একটু বসো। রাত তো অনেক হয়েছে৷ আমি টেবিলে খাবার লাগাচ্ছি। তারপর আমাদের সাথে এক সাথে খাওয়া দাওয়া করে বাড়ি যেও।’

–‘না আন্টি আমার খাওয়া করা সম্ভব না। তনু এমনিতেই আমার উপরে বেশ রেগে আছে। সে যদি খাবার খেতে এসে আমাকে দেখতে পায় তখন সে আবারো রাগারাগি করবে।’

–‘আরেহ আকাশ ছাড়ো তো তনুর কথা। ওর কথা চিন্তা করে লাভ নেই। দিন দিন মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি বৃদ্ধি পায়। আর তনুর টা দিন কমছে খালি। তুমি ওর চিন্তা করো না। আমি খাবার রেডি করছি। তারপর আমাদের সাথে খাওয়া দাওয়া করে পরে বাসায় যেও।’

–‘না আন্টি প্লিজ এমনটা করবেন না। আসলে তনুকে নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে আমার বাসায় মা একা। ছোট বোন আফিয়াও বাড়িতে নেই। আফিয়া ছোট খালার বাড়ি কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছে। আমার যেতে হবে আন্টি। না হয় মা আমার অপেক্ষায় না খেয়ে বসে থাকবে।’

–‘আকাশ কোনো মতে কি আজ আমার সাথে খাওয়া যায় না?’

–‘আন্টি আজ সম্ভব না। পরে কখনো খাবো।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে আর জোর করলাম না। তবে পরেরবার আসলে কিন্তু না খেয়ে যেতে পারবে না বলে দিলাম।’

–‘আচ্ছা আন্টি পরেরবার অবশ্যই খাওয়া দাওয়া করে যাবো। এবার তাহলে আমি যাই।’

–‘ঠিক আছে।’

আকাশ তনুর মা থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। এরপর একটা রিক্সায় করে নিজের বাসায় চলে আসে। আকাশ এতো রাত করে বাড়ি ফেরায় আকাশের মা আকাশকে প্রশ্ন করে,

–‘কিরে বাবা আজ এতো দেরি করলি যে? কখনো তো তুই নয়টার পর বাড়ির বাহিরে থাকিস না।’

–‘আসলে মা একটা কাজের জন্য তনুদের বাসায় যেতে হয়েছে। কিন্তু তনুর মা আমাকে আঁটকে রেখেছিল রাতের খাওয়া দাওয়া করার জন্য। তাই এতো দেরি হয়েছে।’

–‘ওহ আচ্ছা। আর তুই তাহলে তনুদের বাসা থেকে খেয়ে এসেছিস?’

–‘না মা খাইনি। তনুর মা অনেক বার খাওয়ার জন্য জোর করেছিল, কিন্তু আমি কোনো মতে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে চলে এসেছি। কারণ একে তো তুমি বাসায় একা। তার উপরে তনুর কথা তো তুমি জানোই। আমি কাজ শেষ করে তনুর বাসার দরজা থেকেই চলে আসতে ধরেছিলাম। তবে তনুর মা আমায় জোর করে বাসার ভিতরে নিয়ে গিয়েছে। যেটা নিয়ে তনুর একটু রাগ হয়েছে। তাই আমি ওদের বাড়িতে আর খাওয়া দাওয়া করিনি।’

–‘বেশ ভালো করেছিস। সেই মেয়ে সাপের পাঁচ পা দেখেছে। সময় হলে তার হুঁশ ঠিকানায় ফিরে আসবে।’

–‘আচ্ছা মা এখন এসব বাদ দাও। আর খাবার রেডি করো।’

–‘খাবার সেই বহু আগেই আমি রেডি করে রেখেছি। তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর দু’জনে খেয়ে নিব।’

–‘ঠিক আছে।’

আকাশ ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে এসে মা’য়ের সাথে এক সঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়া করে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার উদ্দেশ্যে শুয়ে পড়ে। রাত কেটে যায়। পরেরদিন সকাল আট টার দিকে আকাশ ঘুম থেকে উঠে যায়। ঘুম থেকে থেকে হাত-মুখ ধুয়ে নাস্তা পানি শেষ করে নয়টার কিছু সময় পরে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। বিশ মিনিট পর নয়টা চল্লিশের দিকে আকাশ অফিসে গিয়ে পৌঁছায়। অফিসে পৌঁছে দেখে অফিসের কর্মচারীরা ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছে। আকাশ অফিসে ঢুকে পড়ে। অফিসের ভিতরে ঢুকার পর ম্যানেজারের সাথে আকাশের দেখা হয়৷ ম্যানেজার আজ একটু আগেই এসে পড়েছে। ম্যানেজারের সাথে আকাশের দেখা হওয়ার পর ম্যানেজার আকাশকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে আকাশকে তার বসার স্থান দেখায়। এরপর আকাশকে বলে,

–‘এটাই হচ্ছে তোমার বসার জায়গা। তুমি এখানে বসেই নিজের কাজকর্ম করবে। আর সেই সঙ্গে খেয়াল রাখবে ম্যাডাম বেল বাজাচ্ছে কিনা। তুমি গতকাল হয়তো দেখেছো ম্যাডামের টেবিলের উপরে ঘন্টার মতন কিছু একটা আছে। যেটা বাজালেই মনে করবে ম্যাডাম তোমাকে ডাকছে।’

–‘আচ্ছা।’

–‘এবার তাহলে থাকো। আমি ঐ দিক টাতে গেলাম।’

ম্যানেজার আকাশকে তার বসার জায়গা দেখিয়ে দিয়ে নিজের কাজে চলে যায়। ম্যানেজার চলে যাওয়ার পর আকাশ চেয়ারের উপরে গিয়ে বসে পড়ে। আকাশের জন্য তনুর কেবিনের এক পাশে একটা ছোট ডেস্ক আর একটা চেয়ার রাখা হয়েছে। আকাশ তার বসার স্থানে বসে তনু আসার অপেক্ষা করতে থাকে। অপেক্ষা করতে করতে দশটা বাজার দুই মিনিট আগে তনু অফিসে প্রবেশ করে। তনু অফিসে প্রবেশ করার পর কেবিনে ঢুকার সময় আকাশকে ইশারা করে তার কেবিনে আসতে বলে। আকাশ তনুর আদেশ মতন তনুর পিছনে পিছনে তনুর কেবিনে প্রবেশ করে। আকাশ তনুর কেবিনে ঢুকতেই তনু আকাশকে বলে,

–‘আচ্ছা আকাশ তোর সমস্যাটা কি?’

–‘কেন ম্যাডাম কি হয়েছে? আমি কি কোনো ভুল করেছি নাকি?’

–‘তুই গতকাল না খেয়ে বাসা থেকে এসেছিস কেন? মা তোকে এতো করে বলেছে গতকাল রাতে খেয়ে আসার কথা, কিন্তু তুই না খেয়েই চলে এসেছিস। তুই জানিস মা তোর জন্য গতকাল থেকে আমার উপরে অভিমান করে আছে। তার উপরে তিনি গতকাল রাতে কিছুই খায়নি। আমি রাতে কতোবার বলেছি খাওয়ার কথা, কিন্তু গতকাল তুই না খেয়ে আসার কারণে মা’ও রাতে খায়নি। কেন করেছিস এমনটা? আমি তোর উপরে রেগে ছিলাম বলে?’

–‘না ম্যাডাম এমনটা নয়। আসলে আমার বাসায় মা একা। তাই তাড়াহুড়ো করে না খেয়ে চলে এসেছিলাম। কারণ না হয়তো মা আমার জন্য না খেয়ে বসে থাকবে।’

–‘আকাশ যেটাই হোক তোর খেয়ে আসা উচিত ছিল। একদিন আমার বাসায় খেলে তেমন কিছুই হতো না। আন্টিকে না হয় পরে গিয়ে বুঝিয়ে বলতি। কিন্তু তুই না খেয়ে আসায় মা অনেক কষ্ট পেয়েছে। তার উপরে আমি নিজেও জানি তুই আমার কারণেই খাবার খাসনি। এছাও মা নিজেও আমায় বলেছে আমি খাবার খেতে এসে তোকে দেখলে রাগারাগি করবো তাই তুই খাসনি।’

আকাশ তনুর কথা শুনে কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছে। সত্যিকারত্বে গতকাল রাতে তনুর বাসায় না খাওয়ার অনেক বড় কারণ কিন্তু তনু নিজেই ছিল। সেজন্য তনুর মা জোর করার পরেও আকাশ তাদের বাসায় খাবার খায়নি। না হয়তো এক রাত বাহিরে খেয়ে এসে আকাশ নিজের মা’কে বললে আকাশের মা আকাশকে এই বিষয় নিয়ে একটা কথাও বলতো না। আকাশ বেশ চিন্তায় পড়ে যায় তনুর কথার কি উত্তর দিবে। তাই সে চুপ করে আছে। অপরদিকে তনু আকাশকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে,

–‘আচ্ছা শুন যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন গিয়ে কাজে মন দে। আর দুই ঘন্টা পর মানে ঘড়ির কাঁটায় বারোটা বাজলেই তুই আমার কেবিনে এসে দেখা করবি। তারপর তোকে নিয়ে একটা কাজে বের হবো।’

–‘ঠিক আছে ম্যাডাম।’

তনুর কেবিন থেকে বেরিয়ে আকাশ নিজের ডেস্কে এসে বসে। দেখতে দেখতে বারোটা বেজে যায়। আকাশ বারোটা বাজতেই অনুমতি নিয়ে তনুর কেবিন প্রবেশ করে তনু তাকে নিয়ে বারোটার সময় কোথায় যেনো যাবে সেই কথাটা তনুকে স্বরণ করে দেয়। তনু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ফাইল নিয়ে কাজ করছিল। কিন্তু আকাশ এসে তাকে নিয়ে বের হওয়ার কথাটা স্বরণ করে দিতেই তনু ফাইল বন্ধ করে দিয়ে আকাশকে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে। এরপর তনু গাড়ি ড্রাইভ করে আকাশকে নিয়ে একটা ডক্টরের কাছে যার। পরে আকাশকে দেখিয়ে ডক্টরকে বলে,

–‘ডক্টর ও মাথায় আর পেটে আঘাত লেগেছে। আপনি একটু দেখুন তো ওকে।’

–‘ঠিক আছে দেখছি। তবে কি ভাবে আঘাত গুলো পেয়েছে উনি?’

–‘ডক্টর আমরা দু’জন স্বামী-স্ত্রী। দু’জনের মধ্যে একটু ঝগড়া হয়েছিল। যার ফলে আমি ওর উপরে রেগে গিয়ে গরম চা আর ফোন ছুঁড়ে মে’রেছিলাম।’

ডক্টর আর আকাশ দু’জনেই তনুর কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। বিশেষ করে আকাশ বেশি অবাক হয়। কারণ তনু ডক্টরের সামনে তাকে নিজের স্বামী বলে পরিচয় দিয়েছে। অপরদিকে ডক্টর তনুর কথা শুনে তার দিকে এক নজর আশ্চর্যের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আকাশের জখম গুলো দেখতে শুরু করে। ডক্টরের ইচ্ছে করছে তনুকে ইচ্ছে মতন কথা শুনাতে। তবে তিনি সেটা করতে পারবেন না। কারণ তিনার কোনো রাইট নেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কথা বলার। তাই তিনি নিজের কাজে মন দেয়। ডক্টর আকাশের জখম গুলো দেখে প্রেসক্রিপশনের মধ্যে কিছু ঔষধ লেখে দেয়। আর ঔষধ গুলা কন্টিনিউ করতে বলে এবং সেই সঙ্গে আরো পেটের ফোস্কার জন্য একটা মলম ব্যবহার করতে বলে আকাশকে। ডক্টরের কাজকর্ম শেষ হলে তনু ডক্টরের ফিস দিয়ে আকাশকে নিয়ে ডক্টর চেম্বার থেকে বের হয়। এরপর আকাশের হাত পেঁচিয়ে ধরে আকাশকে নিয়ে গাড়ির দিকে এগোতে থাকে। তনুর এমন আচরণে আকাশ আরো অবাক হয়ে যায়। রাস্তাঘাটে স্ত্রী যেই ভাবে স্বামীর হাত ধরে হাঁটে, তনুও সেভাবে আকাশের হাত ধরে রেখেছে। তার উপরে তনু তাকে এনে ডক্টর দেখিয়েছি। তনুর এমন আচরণে আকাশের মনে হচ্ছে তনু সত্যিকারত্বের তার বিয়ে করা বউ। আকাশের ভিতরে নতুন এক অনুভূতি জন্মাচ্ছে তনুকে নিয়ে। ভিতরটা খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে আকাশের। তবে আকাশ তনুকে কিছুই বলে না। চুপচাপ তার সাথে সাথে হাঁটতে থাকে। এভাবে তনু আকাশকে নিয়ে গাড়ির সামনা-সামনি যাওয়ার কিছুটা আগ মূহুর্তে হুট করে আকাশের হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলের কাছে যায়। এরপর ছেলেটার সাথে কথা বলতে আরম্ভ করে। তনু আকাশের হাত ছেড়ে যেই জায়গা থেকে দৌড়ে ছেলেটার কাছে গিয়েছে, আকাশ সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে দু’জনের কথা বলার দৃশ্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। অপরদিকে তনু ছেলেটার সাথে দেখা করে কিছুটা সময় কথা বলার পর আকাশকে ডেকে বলে,

–‘আকাশ এদিকে আয়। তোকে আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পরিচিত করিয়ে দেই।’

ছেলেটা তনুর বয়ফ্রেন্ড হয় কথাটা তনুর মুখে শুনার পর আকাশের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। সেই সঙ্গে আকাশের হাসি-খুশী চেহারাটা মূহুর্তের মধ্যেই মলিন হয়ে যায়….

চলবে…..

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here