অবেলায় তুমি পর্ব -০৫

#অবেলায়_তুমি (পর্ব-৫)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

ছেলেটা তনুর বয়ফ্রেন্ড হয় কথাটা তনুর মুখে শুনার পর আকাশের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। সেই সঙ্গে আকাশের হাসি-খুশী চেহারাটা মূহুর্তের মধ্যেই মলিন হয়ে যায়। আকাশের মনের ভিতরে বিশাল এক ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়েছে। আকাশ কোনো ভাবেই তনুর মুখ থেকে তার বয়ফ্রেন্ডে কথা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু তনু আকাশকে তার বয়ফ্রেন্ডের কথা বলে অবাক করে দিয়েছে। আকাশ তনুর কথায় সাড়া না দিয়ে চোখ-মুখ মলিন করে তাদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে। অপরিদকে তনু আকাশের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আবারো আকাশকে বলে উঠে,

–‘এই আকাশ তোর কি হয়েছে? তোকে আমি এদিকে আসতে বললাম, কিন্তু তুই দেখি রোবটের মতন সেই এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছিস। আমার কথা কি তুই শুনতে পাস নি নাকি?’

আকাশ তনুর কথা শুনে এবার নিজেকে স্বাভাবিক করে। তারপর তনুর কথা মতন চুপচাপ হেঁটে তাদের দু’জনের সামনে যায়। আকাশ তনু আর তার বয়ফ্রেন্ডের সামনে যেতেই তনু তার বয়ফ্রেন্ডকে বলে,

–‘সোহান এটাই হলো সেই অকর্মার ঢেঁকি আকাশ। যার কথা তোমায় আমি বলেছিলাম। আর আকাশ এটা হচ্ছে আমার বয়ফ্রেন্ড সোহান। নে তোদেরকে ইন্ট্রোডিউস করিয়ে দিলাম। এবার তোরা নিজেরা দু’জন কথা বল।’

তনুর কথা শুনে আকাশের রাগে পিত্তি ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমনিতেই বেচারার ভিতরে তনুর বয়ফ্রেন্ডকে দেখে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়েছে। তার উপরে তনু তার বয়ফ্রেন্ড সোহানের সামনে আকাশকে অকর্মার ঢেঁকি বলে বাজে ভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আকাশের ইচ্ছে করছে তনুকে রসমালাইয়ের মতন টুকুস করে এক গালে গিলে খেয়ে ফেলতে। এছাড়া তনুর বয়ফ্রেন্ড সোহানের উপরেও বেশ রাগ উঠছে আকাশের। কারণ তার বিবাহিত স্ত্রীর উপরে সোহান লাইন মা’রছে। তবে হ্যাঁ তাদের বিয়েটা স্বাভাবিক নয়। কিন্তু তার পরেও আকাশের কেন জানি তনুর প্রতি একটা টান জন্মেছে৷ যতো সময় যাচ্ছে আকাশ ক্রমাগত ভাবে ততোই তনুর প্রতি দূর্বল হচ্ছে। তনু আকাশকে এতো অপমান- অপদস্ত করে, কিন্তু তার পরেও আকাশ চায় তনু শুধু তার হয়ে থাকুক।
কিন্তু তার পরেও আকাশ চায় সে ছাড়া তনুর জীবনে আর কেউ কখনো কদম ফেলুক। কিন্তু সব কিছুই কেমন যেনো আকাশের ইচ্ছের বিপরীত হচ্ছে। আকাশ নিজের ভারসাম্যকে ঠিক রাখতে পারছে না তনুর বয়ফ্রেন্ডকে দেখে। তবে তার ভারসাম্য হারালে চলবে না। কারণ না হয়তো তনুর কাছে তাকে আবার অপমান হতে হবে। তনু এমনিতেই ছোট খাটো বিষয় নিয়ে আকাশকে অপমান করায় কমতি করে না। তার উপরে আকাশ যদি এখন নিজেকে সামলে না রাখে, তাহলে বড়সড় একটা তুফান আসবে তার উপরে। তাই আকাশ নিজেকে সামলে নিয়ে তনুর বয়ফ্রেন্ড সোহানের দিকে হ্যান্ড শেক করার উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সোহান আকাশের সাথে হ্যান্ড শেক না করে অপমানজনক ভাবে নিজের হাতকে আরো গুটিয়ে নিয়ে আকাশকে বলে,

–‘থাক হাত মেলানোর প্রয়োজন নেই। এমনিতেই আমরা মুখে কথা বলতে পারি।’

সোহানের অপমানজনক আচরণ আর তার কথাবার্তা শুনে আকাশের মাথায় এবার রক্ত চোটে বসে৷ যার ফলে আকাশ আর নিজের উপরে কন্ট্রোল রাখতে পারে না। চোখে-মুখে রাগের ছাপ এনে সোহানকে বলে,

–‘সুট-বুট পড়েছিস দেখে নিজেকে এলিট ক্লাস মনে হচ্ছে তোর? কিন্তু বাস্তবে তোকে আমার রাস্তার টোকাই বলে মনে হচ্ছে। এখনো মানুষের সাথে কোন ভঙ্গিমায় কথা বলতে হয় শিখতে পারিস নি। কিন্তু শরীর ভর্তি কারেন্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াস। শুন তোর মতন এলিট ক্লাস মানুষজন একটা সময় আমার পিছনে-পিছনে লাইন দিয়ে ঘুরতো। আর তুই এসে আমার সাথে ভাব নিচ্ছিস? একদম উল্টো করে ঝুলিয়ে তোর ভিতর থেকে সমস্ত ভাব বের করে ফেলবো টোকাই কোথাকার। আর ম্যাডাম আপনাকে বলি, নেক্সট টাইম এমন টোকাই-ফোকাইয়ের সাথে আমাকে পরিচয় করাবেন না কখনো। কারণ এই সব টোকাই-ফোকাই আমার সম্পর্কে না জানলেও আপনি কিন্তু ভালো করে জানেন আমি একটা সময় কেমন ছিলাম। তাই অনুরোধ করবো এসব নিচু মনমানসিকতার মানুষের সাথে আমাকে আর কখনো পরিচয় করাবেন না। আমি এবার গাড়ি উঠে বসলাম। আপনি টোকাইয়ের সাথে নিজের কথাবার্তা শেষ করে গাড়িতে আসুন।’

আকাশ রেগেমেগে অনর্গল ভাবে সোহানকে একগাদা কথা শুনিয়ে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। অন্যদিকে তনু আর সোহান আকাশের কথাবার্তা শুনে পুরো অবাক। সেই সঙ্গে সোহানের লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে মতন অবস্থা। আসলে কথায় আছে না মানুষ বুঝে কথা বলতে হয়। কিন্তু সোহান সেটা করেনি। যার কারণে আকাশ সোহানের ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিয়ে চলে গেছে। সোহান লজ্জায় কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। অপরিদকে আকাশের বেশ শান্তি লাগছে সোহানকে অপমানের জওয়াব দিতে পেরে। মনে প্রশান্তি নিয়ে আকাশ গাড়িতে বসে আছে। কিন্তু সোহানকে কথা শুনিয়ে এসে গাড়িতে উঠে বসার পর বাহিরে দু’জনের মাঝে কি কথাবার্তা হচ্ছে বা কি ঘটছে সেসব নিয়ে আকাশের কোনো আইডিয়ার নেই। সে তার মতন চুপচাপ করে গাড়িতে বসে আছে। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর তনু চোখ-মুখ লাল করে গাড়িতে উঠে বসে। এরপর গাড়ি স্টার্ট করে আকাশকে বলে,

–‘এই আকাশ তুই কোন সাহসে সোহানকে অপমান করেছিস? তোর তো দেখছি অনেক সাহস বেড়ে গেছে।’

সোহানের হয়ে তনুকে কথা বলতে দেখে এবার আকাশের তনুর উপরেও চরম রাগ উঠে যায়। তাই সে
তনুকে বলে উঠে,

–‘সাহসের তো এখনো কিছুই দেখিস নি। রাস্তার টোকাই টাকে নিয়ে ওকালতি করতে আসলে তোকে এখন কোষে এমন এক থা’প্পড় মা’রবো, সোজা গাড়ির দরজা ভেঙ্গে রাস্তার উপরে গিয়ে ছিটকে পড়বি। কি ভেবেছিস আমাকে? সব সময় চুপ করে থাকি বলে আমি দূর্বল? তুই আমাকে এটা সেটা বলিস সেটা না হয় কোনো ভাবে মানা যায়, কিন্তু কোন সাহসে তোর সেই রাস্তার টোকাই বয়ফ্রেন্ড আমাকে অপমান করে? এতো সাহস কই পেয়েছে সে?’

তনুর এমনিতেই মেজাজ খারাপ। আকাশ সোহানকে অপমান করে চলে আসার পর তনুর সাথে সোহানের ছোট খাটো একটা ঝামেলা লেগেছে। তার উপরে আকাশ এখন আবার তনুর সাথে তুইতোকারি করার পাশাপাশি তাকে থা’প্পড় মা’রবে বলেছে। আকাশের উপরেও তনুর এবার চরম রাগ উঠে যায়। রাস্তার এক পাশে গাড়ি থামিয়ে তনু আকাশকে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

–‘এই অকর্মা গাড়ি থেকে নাম। না হয় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তোকে রাস্তায় ফেলে দিব। বেয়াদব তোর কতো বড় সাহস তুই আমার সাথে বড় গলায় কথা বলার পাশাপাশি আবার আমাকেই বলিস থা’প্পড় মা’রবি? এখুনি নাম তুই গাড়ি থেকে। না হয় তোর অবস্থা বারোটা বাজিয়ে দিব আমি।’

আকাশ আর কোনো কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে আরম্ভ করে। হাঁটতে হাঁটতে আকাশ অনেকটা সামনে চলে যায়। আর তনু রাস্তার একপাশে গাড়ি সাইড করে এখনো গাড়িতে বসে আছে। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর তনু কি যেনো একটা ভেবে গাড়ি স্টার্ট করে আকাশের কাছে পৌঁছায়। এরপর আকাশের সামনে গাড়ি থামিয়ে আকাশকে ডেকে বলে,

–‘এই আকাশ গাড়িতে এসে উঠে বস।’

–‘না ম্যাডাম আমি আপনার সাথে যাবো না। আপনি গাড়ি নিয়ে চলে যান।’

–‘আকাশ প্লিজ রাগ করিস না। গাড়িতে এসে বস প্লিজ।’

–‘না ম্যাডাম আমি যাবো না। কারণ আমার মতন মানুষের কোনো যোগ্যতা নেই আপনার গাড়িতে বসার। আপনার বয়ফ্রেন্ড আমাকে আপনার সামনে অপমান করেছে। কিন্তু তখন আপনি তাকে কিছুই বলেন নি। কিন্তু আমি আপনার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে কয়েকটা কথা বলায় আপনার গায়ে লেগে গেছে। তো আমি আর আপনার গাড়িতে বসে কি করবো? এছাড়া আপনার সাথে বাজে বিহেভ করেছি। যার কারণে আপনি আমায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছেন। আমার সাথে এমনটাই হওয়া উচিত ম্যাডাম।’

–‘এই আকাশ সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর আমি সোহানের তরফ থেকেও তোর কাছে ক্ষমা চাইছি। তুই এবার প্লিজ গাড়িতে উঠে বস।’

তনু আকাশের কাছে কয়েকবার ক্ষমা চাওয়ায় আকাশের মন গলে যায়। তাই সে তনুর কথা মতন গাড়িতে এসে উঠে বসে। আকাশ গাড়িতে উঠে বসতেই কেন জানি তনুর মুখে হাসি ফুটে উঠে। তনু গাড়ি স্টার্ট করে আকাশকে নিয়ে অনেক নামি-দামি একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে পৌঁছোয়। এরপর তনু আকাশকে বলে,

–‘গাড়ি থেকে নাম। আজ দুপুরের খাবারটা আমরা দু’জন রেস্টুরেন্টে বসে একসাথে খাবো ‘

আকাশ তনুর কথা শুনে বেশ অবাক। কিন্তু সে কিছুই বলে না। তনুর কথা মতন চুপচাপ গাড়ি থেকে নিচে নামে৷ আকাশ গাড়ি থেকে নিচে নামতেই তনু সেই আগের ন্যায় আকাশের হাত পেঁচিয়ে ধরে। যেমনটা ডক্টরের কাছ থেকে বেরিয়ে করেছিল। তনুর চোখে-মুখে আনন্দের হাসি। তবে এই হাসি বেশিক্ষণ দীর্ঘায়ু হয় না। তনু আকাশের হাত পেঁচিয়ে করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আকাশ তনুর থেকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। যেটাতে তনু বেশ অবাক হয়। আর সেই সঙ্গে তনুর মুখের এক্সপ্রেশন ও পাল্টে যায়। তখনি আকাশ তনুকে বলে উঠে,

–‘ম্যাডাম আমি আপনার আপন বা ঘনিষ্ট
কেউ নই। তাই আমার হাত এভাবে পেঁচিয়ে ধরার কোনো মানেই হয় না। এভাবে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের হাত চেপে ধরে। কিন্তু আমরা তো সেই রকম কেউ না। হ্যাঁ যদিও বা আমাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু বিয়েটা আপনার জন্য শুধু মাত্র একটা মাধ্যম আমাকে জিম্মি করে কষ্ট দেওয়ার। তাই আমার মনে হয় না আমাদের এভাবে হাত ধরে হাঁটা উচিত। সেজন্য আমি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়েছি৷’

আকাশের কথায় তনুর কেন জানি মনের ভিতরে রক্তক্ষরণ হতে আরম্ভ করে। আকাশের হাত শুরুতেই সে মনের আনন্দে পেঁচিয়ে ধরেছিল। তবে পরবর্তীতে আকাশ তার হাত ছাড়িয়ে নেওয়ায় তার মনের ভিতরে কেমন যেনো এক ধরনের খারাপ লাগা কাজ করছে। তনুর খানিকের জন্য মনে হচ্ছে আকাশ তার সত্যিকারত্বে হাসবেন্ড। তনু ভাবনায় পড়ে যায়। আকাশের হাত চেপে ধরার ইচ্ছা কেন তার মনে জেগেছে। আবার আকাশ তার থেকে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ায় কেন তার ভিতরে খারাপ লাগা কাজ করছে। তনু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না৷ তনু কিছুটা সময় ভাবে। তবে সে কোনো উত্তর পায়না। কিন্তু তনু শুধু এটুকুই জানে আকাশ তার থেকে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ায় তার ভিতরে একটা খারাপ লাগা কাজ করছে। কিন্তু কেন করছে সেটার উত্তর তনুর কাছে জানা নেই। তনু এক বিপাকে পড়ে যায়। তবে সে আকাশের সামনে লজ্জায় পড়বে দেখে কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে আকাশকে বলে,

–‘চল রেস্টুরেন্টের ভিতরে চল।’

তনু আকাশকে রেস্টুরেন্টের ভিতরে যেতে বলে সে হাঁটা শুরু করে। আর আকাশ তনুর কথা মতন তার পিছনে পিছনে হাঁটছে। দু’জনেই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে একটা টেবিলে গিয়ে বসে। বসার কিছুক্ষণ পর রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী এসে তাদেরকে খাবারের ম্যানু কার্ড দেয়। তনু ম্যানু কার্ডটা উঠিয়ে নিয়ে নিজের মন মতোই ম্যানু কার্ড থেকে অনেক ভালো ভালো খাবার নিজেদের জন্য অর্ডার করে। রেস্টুরেন্টের কর্মচারী খাবারের অর্ডার নিয়ে চলে যায়। অন্যদিকে আকাশ তনুর আচার-আচরণ দেখে খুব অবাক। কারণ আজ সকাল থেকেই তনুর মধ্যে কেমন যেনো পরিবর্তন লক্ষ্য করছে সে। প্রথমে সে তাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো। তারপর ডক্টরের কাছে নিজেদেরকে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিলো। এরপর আকাশ তার সাথে গাড়িতে বাজে ভাবে কথা বললো, যার দরুন তনুর রেগে থাকার আকাশের উপরে। কিন্তু সে পরবর্তী নিজেই আকাশের কাছে সরি বলেছে। এছাড়া এখন আবার তাকে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্যে নিয়ে এসে ভালো ভালো খাবার অর্ডার করেছে। আকাশ ভাবনায় পড়ে যায় তনুর এমন পরিবর্তন দেখে। চুপচাপ বসে ভাবতে থাকে তনুকে নিয়ে। এভাবে বিশ মিনিট কেটে যায়। এরমধ্যে রেস্টুরেন্টের কর্মচারী তনুর অর্ডার করা খাবার গুলো নিয়ে আসে। তবে আকাশ এখনো তনুর সম্পর্কে কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারে না। রেস্টুরেন্টের কর্মচারী খাবার দিয়ে যাওয়ার পর তনু আকাশকে বলে খাওয়া শুরু করতে। আকাশ তনুর কথা অনুযায়ী চুপ করে খেতে আরম্ভ করে। তনুও নিজের খাবার খেতে আরম্ভ করেছে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে তনু রেস্টুরেন্টে বিল পরিশোধ করে আকাশকে নিয়ে এসে গাড়িতে উঠে বসে। এরপর গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করে। কিছুটা পথ গাড়ি ড্রাইভ করে অতিবাহিত করার পর তনু আকাশকে বলে,

–‘জানিস তোকে নিয়ে কেন রেস্টুরেন্টে এসেছি?

–‘না জানি না!’

–‘শুন তাহলে কারণ টা বলছি। ঐ যে তুই গতকাল না খেয়ে চলে এসেছিস সেজন্যই তোকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে এসেছি। জানিস তোর বিষয়টা নিয়ে গতকাল মা অনেক কষ্ট পেয়েছে। তার উপরে আমি যখন জানতে পেরেছি তুই আমার জন্য খাবার খাসনি, তখন বিশ্বাস কর আমারো কেন অনেকটা খারাপ লেগেছে। তাই আজ তোকে সঙ্গে করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছি খাবার খাওয়ার জন্য।’

তনুর কথা শুনে আকাশের ভিতরে বেশ আনন্দ লাগে। কারণ সে খায়নি বলে কারোর অনেক পরিমাণে খারাপ লেগেছে। তাও সেটা আবার তনুর। তার মানে তনুর মনেও কিছুটা জায়গা হয়েছে আকাশের জন্য। ভিতরে ভিতরে লাড্ডু ফুটতে শুরু করে আকাশের। কিন্তু পরক্ষণেই আকাশের পিছনের ঐ সময়কার কথা মনে পড়ে, যখন তনু তার হাত ছেড়ে দিয়ে তার প্রেমিকা সোহানের কাছে দৌড়ে চলে গিয়েছিল। আকাশের চেহারায় আবারো হতাশা এসে ভর করে। বেশ খারাপ লাগছে আকাশের। আকাশ নিজের খারাপ লাগাকে আর দমিয়ে রাখতে না পেরে সেটা তনুকে বলে বসে,

–‘ম্যাডাম আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।’

–‘কি কথা বল।’

–‘ম্যাডাম আপনি আর ঐ সোহান নামক ছেলেটার সাথে চলাফেরা করবেন না।’

–‘এটা কেমন কথা আবার? সে আমার বয়ফ্রেন্ড। আমি তার সাথে চলাফেরা না করলে কার সাথে করবো? আর আমি তার সাথে চলাফেরা করলে তোর সমস্যাটা কোথায়?’

–‘ম্যাডাম আপনাকে আমার অন্য কারোর সাথে সহ্য হয় না।’

–‘মানে কি আকাশ?’

–‘মানে হলো আপনাকে আমার সারাজীবনের জন্য চাই। তাই আপনি আমি ছাড়া আর অন্য কোনো পুরুষের সাথেই চলাফেরা করবেন না।’

আকাশের কথা শুনে তনু রেগে গিয়ে গাড়ি ব্রেক করে কোষে একটা থা’প্পড় বসিয়ে দেয় আকাশের গালে। আকাশ পুরো থতমত খেয়ে যায় তনুর হাতে থা’প্পড় খেয়ে। আজ সকাল থেকে তনু তার সাথে বিবাহিতা স্ত্রীর মতোই আচরণ করেছে। কিন্তু আকাশ তাকে এখন মনের কথা বলায় তনু তাকে কোষে থা’প্পড় লাগিয়ে দিবে সেটা আকাশ কোনোদিন ও কল্পনা করেনি। অসহায়ের ন্যায় তনুর দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ।
অপরদিকে তনু আকাশকে থা,প্পড় মা’রার পর রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে,

–‘এই অকর্মা তোর সাহস কি করে হয় এসব কথাবার্তা বলার? একটু প্রশ্রয় দিয়েছি বলে মাথায় উঠে বসেছিস দেখি। কি যোগ্যতা আছে তোর আমার সাথে সারাজীবন থাকার? নিজের দিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখেছিস? তোকে আমি কেন রাস্তার পাগল ও তোর সাথে থাকবে না। সেখানে তুই আমার সাথে সারাজীবন থাকার স্বপ্ন দেখছিস?’

তনুর হাতে কিছুক্ষণ আগে থা’প্পড় খেয়ে আকাশের মন খারাপ হলেও তনুর এখনকার কথা গুলো শুনে আকাশের রক্ত মাথায় উঠে যায়। যার ফলে আকাশ কোনো কিছু না ভেবেই দু’হাত দিয়ে হিংস্র পশুর ন্যায় খপ করে তনুর গলা চেপে ধরে….

চলবে….

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here