অবেলায় তুমি পর্ব -০৬

#অবেলায়_তুমি (পর্ব-৬)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

–‘কি যোগ্যতা আছে তোর আমার সাথে সারাজীবন থাকার? নিজের দিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখেছিস? তোকে আমি কেন রাস্তার পাগল ও তোর সাথে থাকবে না। সেখানে তুই আমার সাথে সারাজীবন থাকার স্বপ্ন দেখছিস?’

তনুর হাতে কিছুক্ষণ আগে থা’প্পড় খেয়ে আকাশের মন খারাপ হলেও তনুর এখনকার কথা গুলো শুনে আকাশের রক্ত মাথায় উঠে যায়। যার ফলে আকাশ কোনো কিছু না ভেবেই দু’হাত দিয়ে হিংস্র পশুর ন্যায় খপ করে তনুর গলা চেপে ধরে সজোড়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

–‘হ্যাঁ আমার কোনো যোগ্যতা নেই। আমি অযোগ্য একটা মানুষ। আর আমার সাথে রাস্তার কোনো পাগল থাকুক আর না থাকুক, কিন্তু তোকে অবশ্যই থাকতে হবে। এটা আমার ফাইনাল কথা। তোকে যেনো আর কখনো ঐ সোহানের সাথে দেখতে না পাই। কথাটা মনে থাকবে তোর?’

তনু কোনো উত্তর দেয় না আকাশের কথায়। কারণ তনুর গলায় বেশ ব্যথা লাগছে। সেই সঙ্গে প্রচন্ড রাগ ও উঠছে তনুর। তার উপরে তনু আকাশের কথায় কোনোদিন ও সম্মতি জানাবে না। তাই তনু চুপ করে আছে। অপরদিকে আকাশ তনুকে চুপ করে থাকতে দেখে আরো জোরে তনুর গলা চে’পে ধরে। এরপর সেই আগের ন্যায় রাগান্বিত কন্ঠে তনুকে বলে,

–‘কি হলো আমার কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন?
তুই আর সেই ছেলের সাথে কখনো দেখা-সাক্ষাৎ করবি না। আর কখনো ঐ ছেলের আশেপাশেও যেনো তোকে দেখতে না পাই। এক কথায় তোর সাথে সোহানের আর কখনো যোগাযোগ হবে না। কথাটা কি তোর মনে থাকবে?’

আকাশ তনুর গলা এতো জোরে চেপে ধরে যার ফলে তনুর মনে হচ্ছে সে এখুনি দম বন্ধ হয়ে মা’রা যাবে। তনুর এবার আরো বেশি ব্যথা লাগছে। তনু নিজেকে বাঁচাতে আকাশের কথায় সম্মতি জানিয়ে বলে,

–‘হ্যাঁ…হ্যাঁ মনে থাকবে।’

–‘তুই আর কখনো ঐ ছেলের সাথে দেখা করবি নাতো?’

–‘না আর কখনো ঐ ছেলের সাথে দেখা করবো না।’

–‘কথাটা যেনো মাথায় থাকে। মনে রাখবি তোকে আমার সাথে সারাজীবন কাটাতে হবে। ভুলেও কিন্তু কখনো আমায় ছেড়ে ঐ সোহানের কাছে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আনবি না। হ্যাঁ আমার কিছু নেই। আর আমি তোর অফিসের কর্মচারী। আমার কর্তব্য হচ্ছে তোর আদেশ মেনে কাজ করা। আর আমি তোর আদেশ মেনেই কাজ করবো। কিন্তু তোকে আমার এই আদেশটা মানতে হবে। তুই আমি ছাড়া অন্য পুরুষের সাথে চলাফেরা তো দূরের কথা, অন্য পুরুষের দিকে দৃষ্টিপাত ও করবি না। মনে থাকবে তোর আমার এই সকল কথা?’

–‘হ্যাঁ…হ্যাঁ আমার মনে থাকবে।’

–‘কি মনে থাকবে তোমার মুখ থেকে একবার একটু শুনি।’

–‘তুমি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের দিকে তাকাবো না।’

–‘মনে থাকে যেনো। এবার ছেড়ে দিলাম। পরের বার আর এমন করবেন না। আর আমি ক্ষমাপ্রার্থী এতো সময় তুইতোকারি করার জন্য। আসলে আমার কেন জানি হুট করে রাগ উঠে গিয়েছিল। তাই পাগলের মতন আচরণ করেছি এতোটা সময় আপনার সাথে। তবে আগামীতে আর কখনো করবো না।’

আকাশ তনুর গলা ছেড়ে দিয়ে তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়। তবে তনু আকাশের কথার প্রত্যুত্তরে পরবর্তীতে আর কিছু বলে না। আকাশ থেকে ছাড়া পেয়ে সোজা গাড়ি স্টার্ট করে অফিসে চলে আসে। এরপর গাড়ি থেকে নেমে সোজা কেবিনে চলে যায়। অপরিদকে আকাশ গাড়ি থেকে নেমে অফিসে প্রবেশ করে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে। ডেস্ক বসে একটু আগের বিষয়টা নিয়ে ভাবতেই আকাশের মনে হয় সে তনুর সাথে যেটা করেছে সেটা বেশ অন্যায়। তনুর সাথে তার এমন করাটা কখনোই উচিত হয়নি। হ্যাঁ বিয়ে করেছে তনু তাকে। কিন্তু তনু তার সাথে সংসার করার জন্য তাকে বিয়ে করেনি। কিন্তু আকাশ এই বিষয়টা নিয়ে একটু অতিরিক্ত করে ফেলেছে তনুর সাথে। অবশ্য একটু নয় অনেক বেশি অতিরিক্ত করেছে সে। আকাশ ভালো করেই জানে সে তনুর সাথে যেটা করেছে সেটার তিন ডবল তনু তাকে ফিরিয়ে দিবে। আকাশ একটু আগের বিষয়টা নিয়ে ভাবনায় মশগুল। এমন সময় তনুর ডাক পড়ে কেবিনের ভিতর থেকে। আকাশ ডেস্ক থেকে উঠে তনুর অনুমতি নিয়ে তনুর কেবিনে প্রবেশ করে। তখনি তনু চেয়ার থেকে উঠে এক গাদা ফাইল ধ্রামম করে আকাশের মুখের উপরে ছুঁড়ে দিয়ে বলে,

–‘আমার গলা চে’পে ধরেছিলি না? এবার তুই হারে হারে টের পাবি। আমি তখন নিরুপায় ছিলাম। যার কারণে তুই আমার সাথে ঐরকম টা করে বেঁচে যেতে পেরেছিস। তবে এখন আর পারবি না। এবার তোর কি হাল করবো তুই নিজেও বুঝে উঠতে পারবি না। আর যেই ফাইল গুলো তোকে ছুঁড়ে মে’রেছি, সেসব তুই কালকের ভিতর যে কোনো মূল্যে কমপ্লিট করে দিবি। না হয়তো আগামী তিন মাস তুই কোনো বেতন পাবি না। আমার গলা চেপে ধরার ফল তুই এবার পাবি। তোর খাওয়া-দাওয়া এবং ঘুম আমি সব কিছুই হারাম করে দিব। আগামী কালকের মধ্যে কি ভাবে ফাইল গুলো কমপ্লিট করবি আমি জানি না! তবে সাতটা ফাইল আমার আগামীকাল কমপ্লিট চাই। না হয় যেটা বলেছি তোর সাথে সেটাই হবে। যা এবার ফাইল গুলো মাটিতে থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে কাজে লেগে পড়। আর আমিও নিজের কাজ করি। অবশ্য এখন আমার কোনো কাজ নেই। কারণ আমার কাজ গুলো তোকে করতে দিয়ে দিয়েছি। যা এবার জলদি ফাইল গুলো উঠিয়ে নিয়ে আমার কেবিন থেকে বের হ।’

আকাশ তনুর দিকে এক নজর তাকিয়ে তনুর কথা মতন চুপচাপ ফাইল গুলো মাটি থেকে উঠিয়ে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের ডেস্কে এসে বসে। এতো গুলা ফাইল দেখে আকাশের মাথা ঘুরতে শুরু করে। তবে তার কিছুই করার নেই। সব কয়টা ফাইল তার যে কোনো মূল্যে আগামীকালের ভিতর কমপ্লিট করতে হবে। না হয়তো আগামী তিন মাস তাকে না খেয়ে ম’রতে হবে। আজ এক বছর ধরে আকাশ সংগ্রাম করে বেঁচে আছে। জীবনটা তার ভালোই চলছিল। কিন্তু হুট করেই বছর খানিক আগে আকাশের বাবা ভয়ানক একটা রোগে আক্রান্ত হয়। যার কারণে আকাশের বাবার চিকিৎসার জন্য সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে হয় আকাশদের। আকাশ ও তার পরিবার বহু চেষ্টা করে আকাশের বাবাকে বাচাঁনোর। দেশের বাহিরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চিকিৎসার জন্য আকাশের বাবাকে। কিন্তু আকাশের বাবার শেষ রক্ষাটা আর হয়নি। উপর ওয়ালার ডাকে তিনাকে সাড়া দিতে হয়েছেন৷ সেই থেকেই আকাশের পরিবার একদম পথে চলে এসেছে। তাই আজ আকাশকে এতোটা সংগ্রাম করতে হচ্ছে। আকাশ ডেস্কে বসে তনুর দেওয়া ফাইল গুলো রেডি করতে শুরু করে। প্রথম ফাইলটা রেডি করতে করতে দুই ঘন্টা সময় চলে যায়। আর আধঘন্টা বাকি আছে অফিস ছুটি হওয়ার। তবে আকাশের সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই। আকাশ একটা ফাইল শেষ করে আরেকটা ফাইলে হাত দেয়। যেই ফাইলটা নিয়ে তনু কিছুটা কাজ করেছিল। আকাশ তনুর কাজ করা ফাইলে হাত দেওয়ার পর দেখে তনুর কাজে কিছুটা ভুল আছে। তাই আকাশ ফাইলটা নিয়ে তনুর কেবিনে যায়। তনু কেবিনে বসে বসে ফোনে কথা বলছিল। আকাশ তনুর কথা বলার ভঙ্গিমা দেখেই বুঝে ফেলে তনু কার সাথে ফোনে কথা বলছে। অপরদিকে তনু আকাশের আগমনে ফোনটা রেখে দিয়ে আকাশকে জিজ্ঞাস করে,

–‘কিরে কি হয়েছে?’

–‘ম্যাম আপনি হয়তো আমাকে দেওয়া সাতটা ফাইল থেকে একটা ফাইলে নিজে কিছুটা কাজ করেছেন?’

–‘হ্যাঁ করেছি। কিন্তু কি হয়েছে এখন?’

–‘ম্যাম আপনার কাজে কিছুটা ভুল চোখে পড়েছে। তাই কি করবো জিজ্ঞাস করতে এসেছি।’

–‘কি করবি আবার সেসব ঠিক করবি। আর এই ছোট খাটো বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসার কি আছে? অযথা আমাকে ডিস্টার্ব না করলে কি তোর পেটের ভাত হজম হয় না? দেখছিস না আমি ফোনে ব্যস্ত আছি। তাও তুই কোন কারণে আমার কেবিনে এসেছিস?’

–‘আসলে ম্যাডাম আমি চাইলে নিজের মতন করে ভুল গুলো সংশোধন করতে পারতাম, কিন্তু তাও আপনাকে জিজ্ঞাস করাটা আমার অনেক জরুরী ছিল। না হয়তো নিজের মতন কাবিলতি করতে গেলে দেখা যাবে পরবর্তীতে আপনার থেকে আমাকে আবার কথা শুনতে হবে। তাই জিজ্ঞাস করতে এসেছি।’

–‘হয়েছে যা এবার কেবিন থেকে ভাগ। আর আমাকে ডিস্টার্ব করবি না। আমি ফোনে জরুরী কথা বলছি। এমনিতেই তুই আমার অনেক বড় সর্বনাষ করেছিস। আমি বহু কষ্টে সোহানের সাথে সব কিছু ঠিক করেছি। কিন্তু তুই এখন আবার এসে ঝামেলা করছিস। দ্যাখ নিজের বিপদ ডেকে আনিস না। তোকে যেই কাজ দিয়েছি তুই গিয়ে সেটা কর। আর আমাকে আমার কাজ করতে দে।’

–‘ঠিক আছে ম্যাডাম আমি গিয়ে নিজের কাজ করছি। কিন্তু ম্যাডাম একটা কথা। আমি না আপনাকে ঐ রাস্তার টোকাইটার সাথে কথা বলতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু তাও আপনি ঐ টোকাইটার সাথে ফোনে কথা বলছেন যে?’

আকাশের কথা শুনে তনুর মাথা একশতে একশ গরম হয়ে যায়। বসা থেকে উঠে এসে সোজা আকাশের গালে কোষে কয়েকটা থা’প্পড় লাগিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

–‘এই ফকিন্নি তুই কাকে রাস্তার টোকাই বলিস? তোর সাহস তো দেখছি কম না। তুই আমার বয়ফ্রেন্ডকে টোকাই বলিস। তার উপরে আবার আমাকে হুকুম করিস সোহানের সাথে কথা না বলতে। কতো বড় আস্পর্ধা তোর। তখন কিছু বলিনি দেখে সাহস বেড়ে গেছে মনে হয়? একদম থা’পড়ে গালের সমস্ত দাঁত ফেলে দিব আর একবার আমার বিষয় নিতে মাতব্বরি করলে। করুণা করে তোকে চাকরিটা দিয়েছি। কিন্তু তুই তো দেখছি আমার উপরেই অধিকার ফালতে বসে আছিস। তার উপরে আবার সোহানকে নিয়ে যা তা বলছিস। দ্যাখ এটাই তোর জন্য লাস্ট ওয়ার্নিং। এরপর আর একটা মাতব্বরি করলে তোর ঠিকানা হবে জেল খানার ভিতরে। থানায় গিয়ে সোজা তোর উপরে উল্টো-পাল্টা মামলা ঠুকে দিব। তখন কিন্তু হাতে-পায়ে ধরলেও কোনো কাজ হবে না বলে দিলাম। তাই এখনো সুযোগ আছে ভালো হয়ে যা ।আর আমার বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ কর।’

আকাশ আর কোনো কথাবার্তা না বলে তনুর কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের ডেস্কে এসে বসে। এমন সময় অফিস ছুটি হয়ে যায়। আকাশ চোখ-মুখ কালো করে তনুর দেওয়া ফাইল গুলো হাতে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। রিক্সায় করে বাড়ি যাচ্ছে আকাশ। রিক্সায় বসে বসে একটু আগের কথা গুলো ভাবতে থাকে সে। তনু কতো সহজেই তার উপরে হাত তুললো। একটা সময় এই মেয়েই পাগলের মতন তাকে ভালোবাসতো। আর আজ সেই মেয়েই সামান্য একটা কথায় তাকে থা’প্পড় মে’রে লজ্জিত করলো। রিক্সায় বসে বসে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আকাশের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। দু’হাত দিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে নিয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে আর কখনো সে তনুর বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবে না। আর কখনো সে তনুর জন্য মনের ভিতরে ফিলিংস তৈরী হতে দিবে না। সে এখন থেকে অফিসের কাজ নিয়েই মতলব রাখবে। কারণ তনু কখনোই তার হবে না। এছাড়া সে এখন অন্যের প্রতি আসক্ত। তার উপরে আবার আকাশের এখন কিছুই নেই। কিন্তু তনুর অনেক কিছুই আছে। নাম-ডাক এবং টাকা পয়সার কোনো কমতি নেই তনুর। তাই তনুকে নিয়ে আকাশচুম্বী স্বপ্ন না দেখাটাই আকাশের জন্য শ্রেয়। চুপ করে আকাশ এতোটা সময় রিক্সায় বসে বিষয় গুলা নিয়ে ভাবছিল। কিন্তু ভাবনার এক পর্যায়ে রিক্সা ওয়ালা মামা আকাশকে ডেকে বলে,

–‘মামা চইলা আইছি গন্তব্যে।’

আকাশ ভাবনার ইতি টেনে রিক্সা ওয়ালা মামাকে ভাড়া চুকিয়ে বাসায় চলে আসে৷ শরীর পর্যন্ত টায়ার্ড লাগছে। কাঁধের ব্যাগটা খাটের উপরে রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায় আকাশ। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম বেরিয়ে আসে। এরপর তনুর দেওয়া ফাইল গুলো কমপ্লিট করতে খাটের উপরেই বসে পড়ে। কাজ করতে করতে রাত একটা বেজে গেছে। আকাশ কিছুক্ষণের জন্য কাজ থামিয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে খাওয়ায় পরিকল্পনা করে। কিন্তু তখনি আকাশের মনে পড়ে তার মা সেই দশটা বাজে তার টেবিলের উপরে খাবার রেখে গেছে। আকাশ তাড়াতাড়ি করে হাত ধুয়ে টেবিলে উপরে থেকে খাবার নিয়ে খেতে আরম্ভ করে। কিন্তু খাবারের প্রথম লোকমা মুখে দিতেই আকাশ দেখে ভাত-তরকারি সব ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। আকাশ সব সময় গরম খাবার খেতে পছন্দ করে। কিন্তু তার এখন কিছুই করার নেই। অপারগ হয়ে ঠান্ডা খাবার গুলোই আকাশ খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে আবারো কাজে লেগে পড়ে। সারারাত কাজ করতে করতে কেটে যায়। পুরো রাতে এক ফোটাও ঘুমায়নি আকাশ। রাত জেগে ফাইল গুলো নিয়ে কাজ করেছে সে। তনু সত্যি সত্যিই আকাশের খাওয়া-দাওয়া এবং ঘুম সব কিছুই হারাম করে দিয়েছে আজ রাতে। সকাল আট টার দিকে সাতটা ফাইল পুরোপুরি কমপ্লিট হয় আকাশের। কাজ শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে নয়টার কিছু সময় পর ঘর থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে আকাশ। অফিসে পৌঁছে তনুর কেবিনে সব কয়টা ফাইল রেখে এসে ডেস্কে বসে ঝিমাতে শুরু করে। ঝিমাতে ঝিমাতে এক পর্যায়ে আকাশ ডেস্কের উপরেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়। আসলে সারারাত জেগে কাজ করায় প্রচন্ড টায়ার্ড আকাশ৷ তাই সে ডেস্কের উপরেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে৷ কিছুক্ষণ পর কেউ একজন জগ ভরে পানি এনে আকাশের মুখের উপরে ছুঁড়ে মা’রায় আকাশ লাফিয়ে উঠে ঘুম থেকে পড়ে। তখনি অপরপাশ থেকে ম্যানেজার আকাশকে বলে উঠে,

–‘এখানে কি ঘুমানোর জন্য এসেছেন নাকি মিস্টার আকাশক মাহমুদ?’

আকাশ ম্যানেজারের কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে হ্যাঁ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই সময় ঘটনাস্থলে এসে তনু উপস্থিত হয়। ম্যানেজার তনুকে আকাশের ঘুমিয়ে যাওয়ার বিষয়টা জানায়। তনু ম্যানেজারের কাছে আকাশের ঘুমিয়ে যাওয়ার বিষটা শুনে ম্যানেজারকে বলে,

–‘খালেক সাবেব এবার তো ঠান্ডা পানি ছুঁড়ে মে’রেছেন। আগামী থেকে অফিসে এসে ঘুমালে ফুটন্ত গরম পানি ছুঁড়ে মা’রবেন। যাতে করে চেহারার নকশা সহ বদলে যায়। যত্তসব আজাইরা লোক এসে জুটেছে আমার অফিসে।’

তনু আকাশকে অপমান করে নিজের কেবিনে চলে যায়। আর ম্যানেজার ও নিজের কাজে চলে যায়। আর আকাশ ডেস্কের উপরে চুপচাপ বসে পড়ে। তনুর কথায় আর ম্যানেজারের আচরণে মনের ভিতরে কষ্ট লাগলেও উপরে কোনো রিয়াকশন করে না আকাশ। কারণ এসব কিছু তার সাথে নিত্যদিন ঘটতে থাকবে যেটা তার সহ্য করতে হবে। এক ঘন্টা কেটে যায়। ঘড়ির কাটা সবে কেবল এগোরাটা অতিক্রম করেছে। এমন সময় হুট করে তনু রেগেমেগে কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে আকাশের কলার চেপে ধরে আকাশকে জোরপূর্বক টেনে অফিসের সকল কর্মচারীর সামনে নিয়ে যায়। এরপর সবাইকে ডেকে বলে,

–‘এই যে দেখুন অফিসের সব চাইতে বড় অকর্মা৷ সে নাকি বলে আরো গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে। আমি তাকে কয়েকটা ফাইল দিয়েছিলাম কাজ করার জন্য, কিন্তু সে একটা ফাইলের মধ্যে বিরাট বড় একটা ভুল করে বসেছে। এখন একে কি করা উচিত সবাই বলেন?’

তনুর কথার প্রত্যুত্তরে অফিসের কর্মচারীরা বলে আকাশকে অফিস থেকে বের করে দিতে। কারণ ওর মতন কর্মচারীর জন্য অফিসের অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। তনু অফিসের কর্মচারীদের কথা শুনে আকাশকে বলে,

–‘সবাই ঠিক কথাই বলছে। তুই অফিস থেকে বেরিয়ে যা। কারণ তোর কোনো যোগ্যতা নেই আমার অফিসে কাজ করার। তোর মতন মানুষ আমার অফিসে থাকলে আমার অফিস ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই এখুনি সোজা আমার অফিস থেকে বেরিয়ে যা। না হয় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তোকে বের করে দেওয়া হবে।’

আকাশ তনুর দিকে হতাভাগার মতন তাকিয়ে আছে। কারণ সারারাত জেগে কাজ করার ফল তনু তাকে এভাবে দিবে সেটা সে কখনো কল্পনা করেনি। এক দৃষ্টিতে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ। অপরদিকে তনু আকাশকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিকিউরিটিকে ডেকে বকে,

–‘সিকিউরিটি এই অকর্মা টাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিন। সে কতো বড় বেহায়া হলে এখনো না গিয়ে আমার দিকে বেহায়ার মতন তাকিয়ে থাকতে পারে। বের করে দিন ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে।’

তনুর কথা মতন সিকিউরিটি আকাশকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিয়ে আসে। সিকিউরিটি আকাশকে অফিস থেকে বের করে দেওয়ার সময় তনু দূর থেকে লক্ষ্য করে তার মা অফিসের প্রধান গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তনুর মা কোনো একটা কারণে অফিসে এসেছিল। কিন্তু তিনি এসে তনুর কৃত্তিকলাপ
সব কিছু দেখে ফেলে। তনু তার মা’কে দেখে মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে। অন্যদিকে আকাশকে অফিস থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার পর আকাশ ও মাথা নুইয়ে গন্তব্যহীন ভাবে হাঁটতে আরম্ভ করে….

চলবে….

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here