#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_১৭
ইমরানের চোখ ছলছল করছে। মনে মনে বলে,,,রিপা তুমি শুধু আমার রাগটাই বড় করে দেখলে।
তোমাকে যে আমি কত ভালোবাসি আর তোমার জন্য আমার বুকের ভিতরে কতটা ভালোবাসা যত্ন করে রেখেছি বলেই দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
রিপা মাথা নিচু করে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর মাথা তুলে ইমরানের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চোখের জল ছেড়ে দিলো।
বুকের ভিতরটা হাহাকার করছে রিপার। কেনো জানি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলোনা।
.
ইমরানের পিছনে গিয়ে কাঁধে হাত দিতেই মুখটা ঘুরিয়ে রিপার দিকে তাকায়। রিপার মুখে অনিচ্ছাকৃতই অস্ফুট স্বরে উচ্চরিত হলো,,,ইমরান!
-“কিছু বলবে??
-“ইমরান আই অ্যাম স্যরি। আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে মাফ করে দাও।
ইমরান মুখটা অন্যদিক করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রিপার বুকের মাঝে এক ঝাঁক কষ্ট দানা বেঁধে ওঠে। ভীষণ কান্না পায় তার। ইমরান যে খুব কষ্ট পেয়েছে এবং ভীষণ রাগ করেছে স্পষ্ট বুঝতে পারছে রিপা।
কিছুক্ষণ পরে রিপা ও ইমরানের পিছু পিছু যায়। তারপর ইমরানের সামনে খুব কাছাকাছি হয়ে দাঁড়ায়।
-“ইমরানের হাত ধরে অনুরোধের সুরে বললো,,,
আমাকে ক্ষমা করে একটিবার ভালো হওয়ার সুযোগ দাও ইমরান। এভাবে চুপ করে থেকো না।
-“ইমরান স্বাভাবিক ভাবে বললো,,,রাগ করবো কেনো?? তোমার সাথে রাগ করার কিছু নাই। যা করেছো সেটা আমার প্রাপ্য ছিলো। তবে একটা কথা মনে রেখো তোমার প্রতি আমার যে বিশ্বাস ছিলো সেটা একেবারে শেষ হয়ে গেছে। তাই এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী হয়ে একসাথে থাকলে ও তোমাকে আমার হৃদয়ে ঠাঁই দিতে পারবোনা।
ইমরানের কথাশুনে রিপার মুখটা কালো হয়ে গেলো। মনে হচ্ছো বুকের ভিতরে কেউ যেনো ধাক্কা মারছে।
.
পরেরদিন সকালে,,,,
রিপা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সামনের রুমে গিয়ে ইমরানকে ডাক দিলো। ইমরান সোফার উপরে ঘুমিয়ে আছে।
ইমরান চোখ মেলে তাকিয়ে শোয়া থেকে উঠে ফ্রেশ হলো। তারপর রেডী হয়ে অফিসে চলে গেলো। যাওয়ার আগে রিপাকে বলে যায়নি।
রাত ১১ টায় ইমরান বাসায় ফেরে।
সারাদিনে সে রিপাকে একবার ও কল করেনি। রিপা তো ভেবেছিলো ইমরান তাকে ক্ষমা করে দিয়ে বুকে টেনে নিবে কিন্তু না! ইমরান রিপাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা।
এটা ইমরান কেনো?? কোন পুরুষই মেনে নিতে পারবে না। তার বউ অন্যের সাথে রাত কাটানোর পরে তার সাথে আবার ও সংসার করতে।
রিপাকে ইমরান বড্ড ভালোবাসে কিন্তু পিছনের কথাটা কিছুতেই ভুলতে পারছেনা।
.
ইমরান ফ্রেশ হয়ে সোফার উপরে শুয়ে পড়লো। ইমরান সোফায়ই ঘুমায়। নিজের রুমে যায়না।
রিপা ইমরানের পাশে গিয়ে বললো,,,
তুমি শুয়ে পড়লে যে?? খাবেনা??
-“গম্ভির গলায় বললো,,,না ক্ষিদে নেই।
-“খেয়ে এসেছো??
অন্যদিকে মুখটা ফিরিয়ে বললো,,,,
-“না।
-“তাহলে খাবে না কেনো??
-“ভালো লাগছেনা। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
-“তুমি আসো।।এক সাথে খাবো।
-“দেখো রিপা বেশি ন্যাকামি করোনা। আমার ভালো লাগছেনা তাই খাবো না। আর তার জন্য তোমায় কৈফয়েত দিতে আমি বাধ্য নই।
-“আই অ্যাম রিয়েলি রিয়েলি স্যরি ইমরান। একটিবার আমাকে ক্ষমা করো। আমি তো স্বীকার করেছি আমার ভুল হয়ে গেছে।
ইমরান এসে বললো,,,রিপা তুমি কী ভাবছো?? একটা স্যরি করে সব কিছু সমাধাণ হয়ে যাবে। তুমি কী পারবে একটা স্যরি বলে রাহাতের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ফিরিয়ে নিতে। তোমার যে ভিডিও করেছে পারবে স্যরি বলে ডিলিট করাতে??
কখন ও পারবেনা। ভালোবাসা কী আগে জানাতাম না। তোমার কাছ থেকে জেনেছি। তুমি আমাকে শিখিয়েছো কীভাবে ভালোবাসতে হয়। কিন্তু তুমি কী করলে রিপা??
উফফফ! আল্লাহ আমি আর এসব মনে করতে চাচ্ছিনা। তুমি আমার কাছ থেকে দূরে থাকো। তোমাকে দেখে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়।
আমার কাছ থেকে দূরে থাকো।
.
রিপা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেলো।
.
১০ দিন পর……..
.
জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ইমরান। বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করলেই রিপার মুখটা ভেসে ওঠে। অস্থির হয়ে ওঠে রিপা আর রাহাতের ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মনে করে। বিষয়টা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা ইমরান।
রিপার ভালোবাসার ছোঁয়া ইমরানের শরীরের প্রতিটি লোমে লোমে মিশে আছে। যাকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে চোখের কোণে ঘুম আসেনা। যাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতো। কিন্তু সেই ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কেউ ভোগ করেছে।
আসলে সত্যি কারো জীবনে এত সুখ,,,এত ভালোবাসা স্থায়ী থাকেনা। সুখের পরে যেমন দুঃখ আসে ঠিক দুঃখের সাগরে ভাসতে ভাসতে সুখের দেখা মিলবেই।
কিচ্ছু ভালো লাগছে না,, এত কিছু ভাবতে ও পারছেনা।
অফিসে তো যাচ্ছে তবুও কাজের প্রতি একদম কোন মন নেই তার। দিনের পরে রাত আসে কিন্তু দুজনের মাঝে যে ফাটল দেখা দিয়েছে সেটা কিছুতেই জোড়া লাগছেনা।
.
হঠ্যাৎ রিপার গলার আওয়াজ পেলো ইমরান। পিছন ফিরে তাকানোর প্রয়োজন মনে করছেনা।
কোনো জানি রিপার কাছে আসাকে তার সহ্য হচ্ছেনা।
কিন্তু দূরে গেলে তাকে ভীষণ মনে পড়ে।
খক খক কাশি দিয়ে রিপা বললো,,,
-“অফিসে যাবেনা??
-“নিশ্চুপ ইমরান।
-“কিছু জিজ্ঞাস করছি। শুনছো না?
-“আমার সময় হলে যাবো তার জন্য তোমার চিন্তা করা লাগবেনা।
-“আমি তোমার কাছে স্ত্রীর অধিকার নিয়ে বলতে আসিনি। একজন মানুষ হিসাবে জিজ্ঞাস করতে এলাম।
অফিসে যাবে কী যাবেনা সেটা তোমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু রাতে যেহেতু কিছু খাওনি তাই এসে নাস্তা করো।
-“ক্ষিদে লাগেনি।
-“ইমরান আমি মানছি আমাকে তোমার এখন আর সহ্য হয়না। কারণটা আমার জানা। আমি যে অন্যায় করেছি তার কোন ক্ষমা নেই। কিন্তু তাই বলে কী আমার জন্য নিজেকে কষ্ট দিবে??
একটা মানুষ কী এভাবে না খেয়ে বাঁচতে পারে??
-“রিপা তোমাকে কতবার বলবো,,,কত করে বুঝাবো আমার চিন্তা তুমি করো না।
-“কীভাবে চিন্তা না করি বলতে পারো?? তুমি ঘুমাও না,,খাও না,,,অফিসে গিয়ে বাসায় ফিরে আসার নাম ও নাও না। অনেক রাত করে আসো। তারপর বাসায় এসে সিগারেট হাতে বসে পড়ে সারারাত ধরে একের পর এক সিগারেট খাও। চেহারার কী হাল বানিয়ে ফেলেছো এই কয়েকদিনে। চোখের নিয়ে কালি পড়ে গেছে। চোখের দিকে তাকালে মনে হয় কতমাস যেনো ঘুমাওনি। এভাবে চলতে থাকলে তো তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে।
তুমি একটা কথার উত্তর দিবে আমার?? জানি আমার সাথে কথা বলতে তোমার ঘৃণা লাগছে তবুও বলাটা খুব জরুরী।
-“কী কথা?? বলো।
-“আমাকে তো তোমার একদম সহ্য হয়না। তাই বলছিলাম কী আমাকে তুমি ডিভোর্স দাও। আর এটাই হবে আমার কঠিন শাস্তি।
সারাজীবন এই কষ্টটা বয়ে বেড়াবো আমি। তবুও বুঝবো পাপ করলে তার শাস্তি হয়।
-“ডিভোর্সটা কী সব সমস্যার সমাধাণ রিপা??
তোমাকে যদি ডিভোর্স দেয়ার হতো তাহলে তো অনেক আগেই দিয়ে দিতাম। রিপা তোমাকে আমি ভালোবাসি বলেই বিয়ে করেছি। তোমার প্রতি অটুট বিশ্বাস এবং সত্যিকারী ভালোবাসি বলেই কিন্তু আজকে এতটা কষ্ট পাচ্ছি। তুমি তো শুরুতে এমনটা ছিলেনা। কিন্তু হঠ্যাৎ করো এমন ছন্দপতন হয়েছে তোমার। আর তার পিছনে নিঃশ্চয়ই বড় কোন কারণ আছে। কারণ ছাড়া কোন সুস্থ মানুষ কখন ও এমন কোন কাজ করতে পারেনা। তুমিও হয়তো এমন কোন কিছুর সম্মুখীন হয়েছো বলেই এমন স্টেপ নিতে বাধ্য হয়েছো। আমি তোমার হাজবেন্ড বয়ফ্রেন্ড কিন্তু না। তুমি বলো কোন হাজবেন্ড কী মেনে নিতে পারে তার ওয়াইফ অন্য পুরুষের সাথে রাত কাটিয়েছে। পারেনা রিপা তাই না! আমি ও পারছিনা।
অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছি।
রিপা তুমি বলো আমার স্থানে যদি তুমি থাকতে তাহলে কী আমাকে তুমি ক্ষমা করে মেনে নিতে পারতে??
কিছুতেই পারতে না। কারণ এটা কোনভাবেই সম্ভবনা।
বাস্তব জীবন বড়ই কঠিন রিপা। মুখ দিয়ে বলা যতটা সহজ করাটা তার থেকে তিনগুন কঠিন।
ইমরান যে ভুল আমি করেছি সেটা ভুলে গিয়ে একবার আমাকে সুযোগ দিয়ে সংসারটাকে টিকিয়ে রাখা যায়না??
রিপার কথাশুনে ইমরান চলে যেতে নিলে রিপা হাতটা টেনে ধরে।
-“হাত ছাড়ো রিপা।
-“কেনো??
-“ভালো লাগছেনা আমার।
-“নাস্তা খাবো চলো।
-“বললাম না ক্ষিদে নেই।
-“প্লিজ চলো।
রিপা ইমরানের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ডাইনিং টেবিলে। তারপর প্লেটে নাস্তা নিয়ে ইমরানকে খাইয়ে দিলো। প্রথমে ইমরান একটু সংকোচবোধ করলেও অবশেষে রিপার হাতে নাস্তা খেলো। তারপর উঠে মুখ ধুয়ে বেসিনের সামনে দাঁড়ায়।
-“রিপা ইমরানের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,,,
-“মাফ করেছো আমায়??
-“মাফ না করলে তোমার হাতে নাস্তা করতাম না।
-“তোমার মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে এখন ও রেগে আছো!
-“বেশি কথা বলবেনা। যা হয়ে গেছে ঐ বিষয়ে আর কোন কথা বলবেনা। তারপর মাথাটা নিচু করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো ইমরান। নিজের চেহারা স্বাভাবিক করে বললো,,,
-“রিপা তুমি খেয়ে নাও।
-“গলা দিয়ে যে খাবার ঢুকবে না আমার।
-“কেনো?? তুমি??
-“তুমি আমাকে মন থেকে ক্ষমা করোনি তাই।
-‘আবার ও সেইম প্রসঙ্গে কথা তুলছো কেনো??
-“আমি আর পারছিনা যে। তোমাকে এতটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। তাই নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা লাগছে।
-“রিপা এবার মাইর খাওয়ার কথা বলছো।
কথাটা বলার সাথে সাথেই ইমরানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো রিপা।
ইমরান রিপার কাঁধে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলো। তারপর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো যেভাবেই হোক রাহাতের কাছ থেকে রিপার ভিডিও ক্লীপটা উদ্ধার করে ঘরের সম্মান ঘরেই ফিরিয়ে আনতে হবে।
চলবে…………..