অবৈধ সম্পর্ক পর্ব ১৮

#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_১৮

ইমরান রেডী হয়ে অফিসে চলে গেলো। অফিসে গিয়ে চেয়ারের সাথে মাথাটা হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে তুহিন এসে ইমরানের পাশে দাঁড়িয়ে ইমরানকে ডাক দিলো।
কী রে শালা কয়েকদিন ধরে দেখছি সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকিস। যে কাজটা করতে আগে তোর ২ দিন লাগতো আর এখন সেটা ৩ দিনের ও শেষ করতে পারিস না।

অফিসে আসিস আবার কোন ফাঁকে চলে যাস টের ও পাইনা। বউকে কাছে পেয়ে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে নাকি! (হেসে হেসে)

তুই তো বিয়ে করে তোর লাইফটা সেটেল করে নিলি এখন আমার একটা ব্যবস্থা করে দে না দোস্ত।

-“দেখ তুহিন মন মেজাজ ভালো না আমার তাই এখন ইয়ারকি করিস না তুই।
-“যা বাবা আমি আবার কী ইয়ারকি করলাম। আচ্ছা শোন রাতে ক্লাবে আসবি?? কয়েকদিন ধরে হুইস্কি খাইনি আমরা। চল না দোস্ত না করিস না।
-“দেখছি দাঁড়া।
-“দেখছি না। তোর যেতেই হবে আমার সাথে না হলে আমার মন খারাপ লাগবে।
-“আচ্ছা অফিস শেষ হলে তারপর যাবো।
-“ওকে ডান। এই না হলে আমার জানের দোস্ত।
.
সন্ধ্যা…….৭ টা
.
এদিকে ইমরান বাসায় আসেনি। তাই তো রুমের ভিতরে পায়চারী করছে রিপা।
রিপা ভাবছে ইমরান তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আর এই ভালোবাসাটা স্বাভাবিক। একটা ভুলের কারণে
আগুনে জ্বলছে রিপা।
মন খারাপ করে গালে হাত দিয়ে বিছানার উপরে বসলো রিপা।

রাত….. ৯ টা বাজতে চললো। তখনি কলিংবেল বাজে উঠে।

রিপা গিয়ে দরজাটা খু্লে দিলো। তারপর রিপা তো পুরোই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবুও ভয়ে ভয়ে বললো,,
-“কে তুমি???
-“আপনি নিঃশ্চয়ই রিপা ভাবী অ্যাম আই রাইট।
-“হ্যাঁ। কিন্তু কে তুমি??

-“আমি ইমরানের খালাতো বোন ইতি। ভাইয়া বাসায় নেই।

রিপা মেয়েটির দিকে খুঁনসুটি ভাবে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে। মেয়েটি জিন্সের প্যান্ট সাথে শর্ট শার্ট পড়েছে। চুলগুলো বেণী করে বুকের একপাশে রেখেছে। মনে হচ্ছে ১৫-১৬ বছরের বাচ্চা একটা মেয়ে। কিন্তু কথাবার্তায় আর্টিফিশিয়াল।

-“না ইমরান এখনো আসেনি। ইতি তুমি কী একা এসেছো??

-“হুম। আমি বিকালে এসে ঢাকা পৌঁছেছি ভাবী। ঢাকায় তো আমার কোন রিলেটিভ নেই তাই ইমরান ভাইয়ের কাছে আসলাম। যতদিন থাকার কোন বন্দোবস্ত করতে না পারি ততোদিন না হয় এখানে থাকবো।

রিপা কিছুটা বিস্মিত কন্ঠে বললো,,
-“আচ্ছা তুমি ইমরানের কেমন খালাতো বোন হও।
আমার জানা মতে ওর একটা খালা আর তার একটা মেয়ে কিন্তু সেই মেয়ের তো বিয়ে হয়ে গেছে।
তাহলে তুমি……!

-“আসলে ভাবী আমি ইমরান ভাইয়ের একটু দূরসম্পর্কের খালাতো বোন হই। তাছাড়া ইমরান ভাইয়া আমাকে নিজের বোন হিসাবে জানে।
-“বুঝলাম।
-‘ভাবী ভাইয়া কখন আসবে তুমি কিছু জানো??

-“না। তবে প্রতিদিন আরো আগে চলে আসে কিন্তু আজকে দেরী হচ্ছে। হয়তো জরুরী কাজে আটকা পড়েছে। তুমি ভিতরে আসো ইমরান আসলে কথা বলো।
.
রিপার ইতিকে গেষ্ট রুমে বসিয়ে দিয়ে বললো,,
-“তুমি ড্রেসআপ চেঞ্জ করে ফ্রেশ হও। আমি তোমার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছি।
.
ইতিকে বসিয়ে রেখে রিপা সোজা রান্না ঘরে ঢুকলো।
ফ্রিজ থেকে গোশত বের করে পানিতে ভিজিয়ে রাখল।
.
তারপর সেই ফাঁকে ইতির জন্য নুডলস আর কফি বানিয়ে ওর রুমে ঢুকলো।
ঢুকতেই তো রিপা হকচকিয়ে গেলো।

ইতি প্লাজুর সাথে গেঞ্জি পড়ে বসে আছে ওড়ণা বিহীন। দেখে তো রিপার মেজাজ পুরো বিগড়ে গেলো। এভাবে যদি ইমরানের সামনে যায় তাহলে তো ইমরান যতই ভালো হোক না কেনো নিজেকে কয়দিন ঠিক রাখতে পারবে। তাছাড়া ইতির কথাবার্তা রিপার কাছে তেমন ভালো লাগছেনা।

রিপাকে দেখে মুচকী হাসি দিয়ে এগিয়ে এসে হাত দিয়ে কফির মগটা আর নুডলসের বাটিটা নিয়ে টেবিলে রাখলো।

-‘ধন্যবাদ ভাবী। আমার অনেক ক্ষিদে পেয়েছে তোমাকে বলতাম তার আগেই তুমি নিয়ে এসেছো। বাহ্ কত সৌভাগ্য আমার।
রিপা কথাটা বলতে গিয়ে ও বলতে পারছেনা। যে এই মেয়ে এটা একটা ফ্যামিলি বাসা এখানে ওড়ণা বিহীন চলাফেরা করা যাবেনা।
কিন্তু রিপা কোন কথা না বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে রান্না ঘরে আবার আসলো।

তারপর গোশত নরম হয়ে গেলে মসলা কষিয়ে দিয়ে গোশত ভূনা করলো। এরপর পোলাউ আর মুরগি দিয়ে সংক্ষেপে কোর্মা রান্না করলো।

২ ঘন্টা পর রান্না শেষ হলে রিপা ওয়াশরুমে ঢুকে চোখে মুখে পানি দিয়ে আসলো।
খাবারগুলো রান্না ঘরে রেখে ইতির রুমে গিয়ে জিজ্ঞাস করলো,,,
-“তুমি কী এখন ডিনার করবে??
-“মুখটা রিপার দিকে ঘুরিয়ে বললো,,,ইমরান ভাইয়া এসেছে??
-“না আসেনি। তুমি খেয়ে নাও। ওর আসতে দেরী হবে নিঃশ্চয়।
-“তাহলে এখন খাবোনা ভাবী। ইমরান আসুক তারপরে একসাথে খাবো।

ইতির কথা শুনে মনে মনে ভীষণ রাগ হলো রিপার।
কী বলে এই মেয়েটা??
ইমরান আসলে খাবে তা যত রাতই হোক অপেক্ষা করবে। মনে হচ্ছে সে ইমরানের বউ এমন ভাবে বলছে।
মেয়েটিকে আমার একদম ভালো লাগছেনা। ইমরান আসুক তারপর বলবো এই মেয়েকে ভালো কোথায় ও থাকার ব্যবস্থা করতে। আমার বাসায় আমি কাউকে রাখবো না।
.

ইমরান আর তুহিন রাস্তায় হাঁটছে। রাত প্রায় ১ টা বেজে গেছে। পুরো রাস্তা ফাঁকা। কোন মানুষ নেই বললেই চলে। দুজনের কেউ আজ খুশির ঠেলায় গাড়ি নিয়ে আসেনি। কারণ দুজনে অনেকদিন পর Bare এসেছে।
অথচ আজ দুজনেই ড্রিংকস করেছে বেশী পরিমাণে।
ইমরান চোখ কচলাচ্ছে আর ঢুলে ঢুলে হাঁটছে। হঠ্যাৎ তার চোখ আটকে গেলো হসপিটালের সামনের ফার্মেসিতে। দেখেই হতভম্ব হলো। স্বপ্ন দেখছে না তো??
কারণ এত রাতে রাহাত ঢাকার ফার্মেসিতে কী করছে? না এটা কী করে সম্ভব?? নেশার ঘোরে আছে যে তাই হয়তো এমন মনে হচ্ছে। কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে ভালো করে খেয়াল করলো রাহাত দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
.
তুহিন তুই দেখতো হসপিটালের সামনের দোকানে কোন ছেলেকে দেখতে পাচ্ছিস কিনা!

-“এ্যা এ্যা ঐ যে একটা ছেলেকে দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে ওষুধ কিনছে।
-“আচ্ছা। তাহলে ঠিকই দেখছি। আমি তো ভাবলাম স্বপ্নে দেখছি।

-“ইমরান অনেক নেশা করে ফেলেছে। তাই সে ভালো করে হাঁটতে ও পারছেনা। তুহিন ইমরানের থেকে দু-পেগ কম গিলেছে তাই ওর একটু নেশাটা কম হয়েছে।

তুহিন ইমরানকে সামলে বাড়ি অব্দি পৌছে দিয়ে সে চলে গেলো।
.
দরজায় কলিং বেল বাজলে রিপা গিয়ে লুকিং গ্লাস দিয়ে ইমরানকে দেখে তারপর দরজাটা খুললো।
ইমরান ঢুকেই রিপাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলো।

-“কী করছো ইমরান?? আর তুমি মদ গিলে এসেছো?
-“হুসসসসসসসস,,,,এটা মদ না হুইস্কি বলো। মদ তো ছোটলোকেরা খায়।
-“তাই! তবে নেশা যারা করে সবাই ছোটলোক।

ইমরান তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো ডিনার করবে।
-“ক্ষিদে নেই। পেট ভরে গেছে।
-“ক্ষিদে নেই বললেই হলো নাকি! এসব খেলে পেট ভরা ভরা লাগে কিন্তু ক্ষিদে তো মিটে না। তাছাড়া তোমার খালাতো বোন ইতি এসেছে। আর তোমার জন্য সে না খেয়ে আছে।
-“ইতি এসেছে??
-“হুম
-“কখন??
-‘রাতে।
-“আমাকে কল করে বলোনি কেনো??
-“আমি তো ভাবছি তুমি চলে আসবে তাই।
-“ওকে। আমি এখুনি আসছি। তুমি খাবার রেডী করো।
-“ইমরান হঠ্যাৎ ইতির নামটা শুনে এতটা পরির্বতন হলো যে?? প্রথমে বললো খাবেনা পরে ইতির কথা শুনে খাবার রেডী করতে বললো।

কোন কিন্তু আছে নাকি…….???
.
ইমরান ফ্রেশ হয়ে এসে রিপাকে বললো,,, ইতিকে জলদী
ডাক দাও। এতরাত পর্যন্ত না খেয়ে থাকার অভ্যাস নেই ওর। কেন যে মেয়েটা আমার জন্য অপেক্ষা করলো।
.

রিপা ইতির রুমে গেলো। কিন্তু ইতি ঘুমিয়ে পড়েছে। অনেকবার ডাকার পরেও ইতির ঘুম ভাঙ্গলো না। গ্রামের মেয়ে তো রাত করে সজাগ থাকার অভ্যাস নেই। রিপা ফিরে গিয়ে বললো,,,
-“ইতি ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
ইমরানের এত বেশী নেশা হয়ে গেছে যে সে সব কিছু ডাবল ডাবল দেখছে। রিপা ইমরানকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।
-“আমি বুঝতে পারছি তোমার খাওয়ার প্রতি কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু একটা কথার উত্তর দিবে??
-“কী কথা??
-“তুমি মদ গিলে এসেছো কেনো??
-“আবার মদ বলো কেনো?? বলছি না হু…..হু….হুইস্কি।
-“ঐ হলো একটা।
-“না হলো না।

রিপা কথা বলছে কিন্তু রিপাকে ডাবল ডাবল দেখার কারণে ইমরান একটু ভয় পাচ্ছে।
ইমরান ও মনে মনে তুহিনকে গালি দিচ্ছে। শালা হারামী আমাকে জোড় করে দু-পেগ বেশি খাইয়ে দিয়ে বললো,,,দেখবি তোর মনের ভিতরের যত কষ্ট আছে সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তো সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

রিপা আমাকে একটু পানি দাও। অনেক তৃষ্ণা পেয়েছে।
গলাটা একেবারে কাঠ হয়ে আছে।
রিপা পানির গ্লাসটা এগিয়ে ধরতেই দেখে তিনটে গ্লাস একসাথে তার দিকে ধরেছে। বুঝতে পারছেনা কোনটা ধরবে।
পানিটা খাওয়ার পরে মাথাটা নাড়া দিয়ে বসলো ইমরান।
আবার চোখ মেলে রিপার দিকে তাকায়।
.
একি কী করছো??? শাড়ীটা খুলছো কেনো???
পুরোটা খুলে ফেলবে নাকি??
রিপা তো পুরোই অবাক হয়ে মুখ টিপেটিপে হাসছে।
সে তো থ্রি-পিচ পড়েছে। কিন্তু ইমরান কল্পনা করছে সে শাড়ি পড়েছে আর সেটা খুলছি ভাবছে।
.
রিপা ও মুখটা ঘুরিয়ে বললো,,
-“শাড়ী খুলবো না কী করবো বলো??
শাড়ি পড়ে কী ঘুমাবো নাকি!

কথাটা বলেই রিপা আবার ও খিলখিল করে হাসছে। যেনো এই হাসি থামারই না।
.
এদিকে ইমরান লজ্জায় চোখে হাত দিয়ে বসে আছে।
রিপা এক পা দু পা করে ইমরানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
হাতের আঙুলের ফাঁক দিয়ে ইমরান তাকাচ্ছে আর বলছে রিপা শাড়ী খোলা অবস্থায় আমার কাছে এসো না ১০০ হাত দূরে থাকো।
.
আমি কী ট্রাক নাকি যে আমার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকার কথা বলছো। কথাটা বলেই রিপা অট্টহাসিতে মেতে উঠলো।

চলবে…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here