অশ্রুমালা পর্ব ৪৩+৪৪

#অশ্রুমালা
Part-43
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

রোদেলার ভয়ে মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। রোদেলার মুখের বাধনটা আস্তে করে আলগা হয়ে গেল। হুট করে রোদেলা তার কোমড়ে কারো হাতের বিচরণ লক্ষ করল।

রোদেলা যেন বরফের ন্যায় জমে যাচ্ছে। ভয়ে গলা কাঠ কাঠ। আতকে উঠায় বুকের ধুকপুক বহু মাত্রায় বেড়ে গেছে।

হুট করে সেই ব্যক্তি তাকে কোলে তুলে নিল। রোদেলার চোখ কপালে! চমকে উঠে সে।

কেউ তার কানে ফিরফিস করে বলে, আরে আরে,ভয় পেয়েছো নাকি?

আবেগের কন্ঠ শুনে স্বস্তি অনুভব করে রোদেলা। তার তো জান বের হওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল৷।আর একটু হলেই হার্ট ফেল হয়ে যেত তার।

অন্ধকারের মধ্যেই রোদেলা আবেগের গলা জড়িয়ে ধরে। আবেগ হোহো করে হেসে দেয়।

রোদেলা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, এইভাবে কেউ ভয় দেখায়?, আমার আত্মা শুকায় গেছিল৷

আবেগ আদুরে গলায় বলে, সর‍্যি বউ!

রোদেলা মৃদ্যু হাসল।

আবেগ সামনের দিকে পা বাড়ালো। ডাইনিং রুম ক্রস করে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে,

আবেগ বলে উঠে, তোমার খাওয়া বাড়ায় দিতে হবে৷

–কেন? (আবেগের গলা জড়িয়ে ভ্রু কুচকে রোদেলা)

–হাইট আর বিএমআই এর সাথে ওয়েট মিলে না।অনেক কম ওয়েট তোমার ।মিনিমাম পাচ কেজি ওয়েট বাড়াতে হবে।

রোদেলা আবেগের হাতে আস্তে করে কিল মেরে বলে, সবসময় ডাক্তারগিরি না করলে তোমার চলে না! না?

–না চলে না!

রুমের সামনে এসে রোদেলাকে নামিয়ে দিল আবেগ। পুরা বাড়ি জুড়ে অন্ধকার। রোদেলা গেট খুলতেই বিকট জোড়ে শব্দ হলো। রোদেলা কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

চোখ বন্ধ রাখা অবস্থাতেই শুনতে পেল সবাই একসাথে বলছে সারপ্রাইজ!

সে আস্তে করে চোখ খুলে যা দেখল তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷ পুরা রুম জুড়ে বেলুন দিয়ে সাজানো। টেবিলের উপরে একটা চকলেট কেক আর মোমবাতি জ্বলছে৷ পাশেই একটা লাল গোলাপের তোড়া। রোদেলা অবাকের নয়নে চেয়ে রইল। চোখ-মুখে উপচে পড়া ভালোলাগা আর মুগ্ধতা!

কেকের উপরে লেখা,

“হ্যাপি থার্টি ডে’স অফ টুগেনারনেস!”

রোদেলার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। আজকে ১১ তারিখ। নভেম্বরের এগারো তারিখে তাদের বিয়ে হয়ে ছিল। দেখতে দেখতে মাত্র একটা মাস কেটেছে। কিন্তু রোদেলার মনে হচ্ছে কতো বছর হলো তার বিয়ের!

বাড়ির সবাই উপস্থিত। মামা-মামী, ইভানা আর মেঘ। মামা একটা পাঞ্জাবি পড়েছে। মামী ভালো দেখে একটা শাড়ি আর ইভানা ও ভালো জামা পড়েছে।

আবেগ রোদেলাকে টেবিলের সামনে নিয়ে গেল। তারপর চাকু তার হাতে তুলে দিয়ে বলল,নাও তাড়াতাড়ি কেক কাটো। কেক খাব।

রোদেলার মুখভর্তি হাসি। চোখে আনন্দের ছাপ। তাকে আর আবেগকে ঘিরে দাড়ালো সবাই। ইভানা সমুদ্র কে আবেগের কোলে দিয়ে দিল।

রোদেলা আর আবেগ মিলে কেক কাটলো। তারপর রোদেলা সবার আগে মামীকে খাওয়ালো। জাবেদা খাতুন মুখ হাসি হাসি রেখে কেক খেলেন। সে নিরুপায়। তার ছেলেকে সে চেনে। এক কথার মানুষ। সত্যি যদি রোদেলা জাবেদা খাতুনের জন্য সামান্য তিল পরিমাণ ও কষ্ট পায় তাইলে আবেগ বাসা ছেড়ে চলে যাবে। শেষ বয়সে ছেলে ছাড়া থাকতে চান না তিনি। তাই রোদেলাকে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও মেনে নিয়েছেন তিনি৷

রোদেলা মামার কাছে গিয়ে কেক খাওয়ালো। ইমতিয়াজ রহমান নিজেও রোদেলা কে কেক খাওয়ায়৷ একে একে সবাইকে কেক খাওয়ালো রোদেলা। সবার শেষে আবেগকে কেক খাওয়ায় সে। আবেগ ও রোদেলাকে নিজ হাতে কেক খাওয়ালো।

কেক কাটিং পর্ব শেষে সবাই ড্রয়িং রুমে গিয়ে আড্ডা দিতে লাগলো। আড্ডা দিতে দিতে রাত হয়ে যায়। তারপর ডিনার করে নিল সবাই। আজকে রাতের রান্না মামী নিজ হাতে বানিয়েছিলেন। সবার খাওয়া শেষ হলে মেঘ সবার উদ্দেশ্য বলে উঠে, কালকে সকালে আমি চলে যাব। এখান থেকেই ডিরেক অফিস করে তারপর আমার বাসায় যাব।

মেঘ চলে যাবে শুনে সবাই একটু মন খারাপ করল। মেঘ থাকার কারনেই প্রতিদিনের আড্ডাটা দারুন জমত।

ইভানা মনে মনে ঠিক করে,কালকেই সে শায়েরীর বাসায় যাবে।আজকেই যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ভাবীকে সারপ্রাইজ দেওয়া হবে জন্য আর সে আর বাইরে যেতে পারে নি।

খাওয়ার পর যে যার রুমে চলে যায়৷ রোদেলা রুমে ঢুকে সোজা ফ্রেস হতে চলে যায়।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে আবেগ তার জন্য বাথরুম গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে। রোদেলা মুচকি হাসল।

আবেগ মাথা চুলকে বলে, বারান্দায় আসো তো একটু!

রোদেলা না বুঝে প্রশ্ন করে, এই ঠান্ডায় এখন বারান্দায় কেন যাব?

আবেগ তার উত্তর না দিয়ে হাত ধরে রোদেলাকে বারান্দায় নিয়ে গেল৷

আরেকদফা চমক খায় রোদেলা। পুরা বারান্দা জুড়ে মোমবাতি দিয়ে সাজানো। গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ইংরেজি তে আই লাভ ইউ লেখা। পাশেই রোদেলার পছন্দের চকলেট দিয়ে একটা বুকেট সাজানো।

আবেগ কিছুটা সংকোচ নিয়ে রোদেলার সামনে গিয়ে দাড়ালো এবং তার নিজের হাত দিয়ে রোদেলার হাত দুটো আলতো করে ধরে, রোদেলার চোখে চোখ রেখে বলে, আমি জানি এই দিনটা তোমার-আমার জীবনে অনেক আগে আসলে তোমাকে এতো ভুগান্তি পোহাতে হত না। আমার জন্য তোমার জীবনের একটি বছর জাহান্নামে পরিনত হয়েছে। পৃথিবীতে জান্নাতের সুখ পাওয়া অসম্ভব! তাই তোমাকে জান্নাতের সুখ দিতে পারব না। কিন্তু চেষ্টা করব আখিরাতে যেন একসাথে জান্নাতে যেতে পারি। আর ইহকালে তোমার হাতের মুঠোয় পৃথিবীর সকল সুখ দিতে পারি যেটা তুমি ডির্জাভ করো।

রোদেলার চোখ ভরে উঠতে লাগে।

আবেগ তার আরো নিকটে গিয়ে বলে, খুব ভালোবাসি তোমায়! খুব সুখে রাখতে চাই আমি তোমাকে! আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলে দিতে পারব, আমি যতোটা ভালোবাসা দিব তোমায়, অন্য কেউ তোমাকে এতোটা ভালোবাসতে পারবে না!

রোদেলার সারা শরীর বেয়ে মৃদ্যু কম্পন বয়ে গেল। সে ঝাপ্টে আবেগকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিল।কাদতে কাদতে অস্ফুটস্বরে বলে, অন্য কারো ভালোবাসা কি আমি কোন দিন চেয়েছি?

রোদেলার চোখের জলে আবেগের শার্ট ভিজে যাচ্ছে। শীতের রাতেও শীত লাগছে না তাদের!

আবেগ রোদেলার কান্না থামিয়ে দিয়ে বলে, এই কথাটা যদি আগে বলতাম তোমাকে তাহলে আর এতো ঝড় সইতে হতো না আমাদের!

রোদেলা কাপা গলায় বলে,আগের কথা সব বাদ। যা হয়েছে সেটা বদলানো যাবে না। আমরা এখন কেবল ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববো।

আবগ একটা চকলেটের প্যাকেট খুলতে খুলতে বলে, চল,একটা কিটক্যাট খাই!

রোদেলা জোড় গলায় বলে, তোমার ডায়বেটিস লেভেল কিন্তু একটা বর্ডার বরাবর।মাত্র এক পিস কেক খেয়েছো তাই এখন আর চকলেট খাওয়া যাবে না।

আবেগ কিটক্যাট টা মাঝ বরাবর ভেঙে, রোদেলার মুখের সামনে ধরে বলে, তোমাকে খাওয়াব জন্য খুলেছি। নিজে খাওয়ার জন্য না।

রোদেলা চকলেট খেতে খেতে বলে, বাব্বা!ডাক্তার সাহেব আজকে এতো রোম্যান্টিক হলো কিভাবে? সূর্য কি আজকে পশ্চিম দিকে উঠেছে নাকি?

আবেগ রোদেলার আরো কাছে এগিয়ে এসে প্রায় ফিসফিস করে বলে, আজকে সূর্য উত্তর দিকে উঠেছে তাই আজকে যা হবে অন্য কোন দিন তা হবে না!

— সূর্য আবার উত্তর দিকে উঠে নাকি?

— পৃথিবীতে যেদিন অবিশ্বাস্য কোন ঘটনা ঘটে সেদিন করে সূর্য উত্তর দিকে উঠে আর দক্ষিণ দিকে অস্ত যায়!

রোদেলা হিহি করে হেসে দিল এবং সে আবেগের চোখের দিকে তাকালো। আবেগের চোখে নেশা কাজ করছে।

আবেগ রোদেলার ঘাড় থেকে এক এক করে চুল সরাতে লাগলো।

ঠান্ডা হীম হাওয়ার মধ্যে আবেগের বরফ ঠান্ডা হাতের ছোয়ায় রোদেলা বরাবরের চেয়ে একটু বেশিই কেপে কেপে উঠছে মনে হাজারো রঙিন স্বপ্ন উড়াউড়ি শুরু করে দিয়েছে যার সবটা জুড়ে কেবল এবং কেবলমাত্র আবেগ!

আবেগ রোদেলাকে একটা চিকন চেইন পড়িয়ে দিল আর বলল,আপাতত এই চিকন চেইন দিয়ে কাজ চালাও। আমি যখন আরো স্বচ্ছল হবো তখন মোটা একটা নেকলেস দিব তোমাকে৷

রোদেলা চেইনটাতে হাত বুলাতে লাগলো । কোন জড়বস্তুর উপর ও এতো মায়া কাজ করতে পারে না এই মূহুর্তে তা রোদেলা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না।

আবেগ একটা ডায়েরি বের করে সঙ্গে একটা কলম, রোদেলার হাতে দিয়ে বলে, আমাকে নিয়ে কয়েক লাইন লিখো তো৷ আমিও জানতে চাই তুমি আমাকে নিয়ে কি ভাবো?।

রোদেলা ডায়েরি আর কলম হাতে নিয়ে মিনিট দশেক কি কি যেন গভীর মনোযোগ দিয়ে ভেবে তারপর লেখা শুরু করে৷ আবেগ দেখার চেষ্টা চালায় কি লিখছে কিন্তু রোদেলা দেখতে দেয় না। লেখা শেষ করে একটা গোলাপের পাপড়ি ডায়েরির সেই পৃষ্ঠার ভাজে সযত্নে রেখে মলাট বন্ধ করে আবেগকে উদ্দেশ্য করে বলে, আমাদের বিয়ের যেদিন পঁচিশ বছর পূর্ণ হবে সেদিন এই ডায়েরির লেখাটা পড়বে তার আগে না কিন্তু!

আবেগ হতভম্ব হয়ে গেল এবং বলল, লেখাটা পড়ার জন্য এখন আমাকে চব্বিশ বছর এগারো মাস অপেক্ষা করতে হবে?

রোদেলা হেসে উত্তর দিল, ইয়েস!

–নট ফেয়ার রোদেলা৷

–ওয়াদা করো — ডায়েরি টা পঁচিশ বছরনা হওয়ার আগে খুলে পড়বে না ? যদি আগে পড়ে ফেল তাহলে কিন্তু আমি খুব কষ্ট পাব বলে দিলাম।

–আচ্ছা যান করলাম ওয়াদা। তোমার কষ্ট দেওয়ার সাধ্য আমার নাই! এবার রুমে চল। ঠান্ডা লেগে যাবে তোমার । (আবেগ)

–আবেগ? (রোদেলা)

–কি বল?

–এক সাগরে যতোগুলো ঢেউ হয় ঠিক সেই পরিমাণ ভালোবাসি তোমায়! (রোদেলা)

★★★

ডিসেম্বরের হালকা উত্তাপে ভরা সূর্যের কিরন অথৈ গায়ে মাখছে৷ আজকে দুপুরে ই বাসায় ফিরেছে সে। মনটা ভারাক্রান্ত তার৷ দিন গুলো এতো দ্রুত যাচ্ছে কেন! সময় ও যেন তাকে বিদায় জানাতে উঠে-পড়ে লেগেছে! কি নির্মম সময়?

ধীরে ধীরে কেন বয় না সময়? অথৈ তার বাবার রুমের দিকে পা বাড়ালো। আজকে বাবাকে কিছু কথা সে বলবে। মেঘের ব্যাপারে না। সে তার বাবাকে কথা দিয়েছে যে সে মেঘকে ভুলে অন্য কাউকে বিয়ে করবে। যে কোন মূল্যেই কথাটা রাখবে অথৈ।

বাবার রুমে গিয়ে অথৈ বলে, বাবা? ঘুমাচ্ছিলে?

–না মা। আয় ভেতরে আয়।

অথৈ গুটিগুটি পায়ে ভেতরে এসে মাথা নিচু করে এক দন্ড না থেমে বলতে আরম্ভ করল, আজকে তোমার কাছে একটা দাবি নিয়ে এসেছি। আশা রাখছি আমার ইচ্ছাটা পূরন করবে।

–বল কি ইচ্ছা? –কিছু টা বিচলিত হয়ে আজিজুল সাহেব

অথৈ মাথা নিচু করে বলে, বিয়ের এক সপ্তাহের মতো বাকি। আমি চাই এই কয়েকটি দিন যেন আমরা একটা স্বাভাবিক পরিবারের মতো চলি। অন্যান্য সব ফ্যামিলি তে যেমন বাবা-মা এক রুমে থাকেন, সবাই একসাথে একত্রে বসে খায়, দিনের কোন এক সময় সবাই মিলে টিভি দেখে বা একসাথে টাইম স্পেন্ড করেন,শুক্রবারে বাড়ির ছেলেরা একসাথে নামাজ থেকে ফিরলে সবাই মিলে দুপুরে বিরিয়ানি খায়।বিকেলে একসাথে ঘুরতে যায়। — আমি চাই আমার এ বাসার শেষ দিন গুলোর এভাবেই কাটুক।

কথা গুলো বলার সময় অথৈয়ের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। সে ঠিক করে এসেছিল এক ফোটা পানিও ফেলবে না। কিন্তু এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে কান্নাকাটি করে এবং একটা সমুদ্র বানিয়ে ফেললে মন্দ হয় না তো!

অথৈ নাক টেনে বলে, ভাইয়া, আমি, তুমি, আম্মু– সবাই একসাথে একটা হ্যাপি ফ্যামিলি হয়ে এই এক সপ্তাহ থাকব– এই দৃশ্য আমি দেখে যেতে চাই। দেখে যেতে চাই এজন্য বললাম কারন বিয়ের পর আমি আর কোন দিন এই বাসায় আসবনা। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আমি। কেন আসব না কারনটা তোমার অজানা না। আমি তোমার অনুরোধ কিংবা আদেশ মেনে নিয়ে নিজের ভালোবাসা ত্যাগ করেছি। এবার তোমার পালা। আমার শেষ আবদারটা পূরণ করে আমাকে বাধিত কর৷ তুমি কল দিয়ে আসতেই বললেই ভাইয়া চলে আসবে।

কথাগুলো এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে বলে অথৈ নিজের রুমে চলে গেল। তার চোখ থেকে কান্নার দলা বেরিয়ে আসতে চাইছে।

তার ইচ্ছাটা কি বাবা পূর্ণ করবে এই নিয়ে সে বেশ সন্দিহান! হয়তো করবেন না! কিংনা শেষ ইচ্ছা জেনে করতেও পারেন!

আজিজুল সাহেব হতবিহ্বল হয়ে মেয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে৷। তার চোখ ও ভিজে উঠতে শুরু করেছে৷ কি আশ্চর্য! চোখে কোন সমস্যা হলো না তো আবার? হুটহাট করে চোখ দিয়ে পানি পড়া তো ভালো লক্ষন না। বয়স বাড়ার জন্য এমনটা হচ্ছে বুঝি৷ কালকেই চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে। চোখের পাওয়ার বাড়লো নাকি চেক করাতে হবে।
#অশ্রুমালা
part–44
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগনা পেল আবেগ। পাশের রাস্তা দিয়েই হকার রা বিকট শব্দ করে যাচ্ছে। সেসবের আওয়াজেই ঘুম ছুটে গেল আবেগের।

“ধনিয়া পাতা-কাচা মরিচ” শব্দ করতে করতে লোকটা সামনে পা বাড়াচ্ছে৷ এই লোকটাকে কোন দিন দেখে নি আবেগ। কিন্তু প্রতিদিন সকালের লোকটার কন্ঠ পায় সে৷ প্রায় আট-সোয়া আটটার দিকে এই লোকটা এই রাস্তা ধরে যায়। আবেগ চোখ কচলে শোয়া থেকে উঠে বসে। পাশেই গুটিসুটি মেরে রোদেলা ঘুমাচ্ছে।

সূর্যের আলো এসে রোদেলার গায়ে পড়ছে। আবেগ কিছুক্ষন রোদেলার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হলো। এই সাতটা দিন ঠিক মতো হাসপাতালের কাজ করে নি। আজকে এক্সট্রা টাইমেও থাকবে ভাবছে সে৷

আবেগ একেবারে রেডি হয়ে বের হয়ে দেখে সমুদ্র জেগে গেছে। সে সমুদ্র কে দেখে দ্রুত তার কাছে গিয়ে কোল তুলে নিল।

সমুদ্র কে কিছুক্ষন কোলে করে সারা রুম পায়চারি করে দোলনায় শুইয়ে দিয়ে ফিডার বানাতে গেল।

বাসায় কেউ এখনো উঠে নি। সবাই ঘুম। শীতের সকালে সবাই দেরিতেই উঠে। ময়নার মাও দশটার দিকে আসবে৷ সে ফিডার খাইয়ে দিয়ে রোদেলার পাশে শুইয়ে দিল সমুদ্র কে। মায়ের পাশে বাচ্চার ঘুম ভালো হয়। সম্ভবত মায়ের গায়ের গন্ধ নাকে গেলে সে সুনিশ্চিত থাকে জন্য ঘুম থেকে আর জেগে যায় না৷

নয়টা বাজার আগেই রোদেলা ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে। আবেগ তখন যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷

রোদেলা দ্রুত উঠে তাড়াহুড়ো করে বলে, তুমি অফিস যাচ্ছো এখনি?

–হুম৷

–আমাকে দশটা মিনিট দাও, আমি নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি৷

আবেগ রোদেলাকে বলল, লাগবে না। আমি ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিব৷

রোদেলা আবারো ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে, জাস্ট পাচ মিনিটের মধ্যে নাস্তা বানাচ্ছি। একটু ওয়েট করো।

আবেগ রোদেলাকে বাধা দিল। রোদেলাকে নিজের কাছে টেনে এনে বলে, বললাম তো– লাগবে না। এতো অস্থির করছো কেন? তোমাকে কোন চিন্তা করতে হবে না। এবার একটু হাসো তো দেখি! হাসলে কেমন লাগে তোমাকে।

রোদেলা আবেগের বুকে মাথা রেখে নিচু গলায় বলে, ভালোবাসি!

আবেগ ও দ্বিগুন শক্তি প্রয়োগ করে রোদেলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর রোদেলা তাড়া দিল অফিস যাওয়ার জন্য। আবেগ ও বেরিয়ে যায়।

★★★

আজকের সকালটা অথৈয়ের জন্য একটা কল্পনার স্বপ্নের মতো! কল্পনার স্বপ্ন এজন্য ই বলা হচ্ছে কারন অথৈয়ের এতো বিষ্ময়কর দৃশ্য না তার কল্পনায় আসবে আত না স্বপ্নে!

সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে বের হতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ডাইনিং টেবিলে ভাইয়া বসে আছে। ভাইয়া যে বাসায় এসেছে এই খবর সে জানে না। কখন আসল? রাতে? হতে পারে! সে কালকে বিকেলে বাবার রুম থেকে বের হয়ে আর রুম থেকে বের হয় নি৷

ভাইয়ার বিপরীতে বসে আছে বাবা। মা রান্নাঘরে। অথৈকে আসতে দেখে আজিজুল সাহেব বললেন, দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো।

অথৈ বসল না। সোজা রান্নাঘরে চলে গেল।

তার মা রুটি বেলছে। তাকে আসতে দেখে বলে উঠে, পরোটা একটু উলটে দে তো। তাড়াতাড়ি কর নাহলে পুড়ে যাবে।

অথৈ পরোটা ভাজতে ভাজতে বলে, পরোটা কি ভাইয়ার জন্য?

–হ্যা। অর্পন তো পরোটা খুব পছন্দ করে।

–ভাইয়া কখন এসেছে?

অথৈয়ের মাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে ছেলে আসায় সে খুব খুশি। তার চোখ জ্বলজ্বল করছে। উনি উত্তরে বলে, সকালে এসেছে। তুই কি রুটি খাবি না পরোটা?

–তরকারি কি?

–সবজি।

–তাহলে পরোটাই বানাও। আর ভাইয়ার জন্য ডিম পোচ করো। ও ডিম পোচ খেতে পছন্দ করে।

–আচ্ছা।

অথৈ আর তার মা একসাথেই এসে বসলেন। সবাই একসাথে বসে খাচ্ছে। অথৈ আড় চোখে তার বাবার দিকে তাকালো। তার বাবার মধ্যে কোন ভাবান্তর নেই। তিনি এক মনে খেয়ে যাচ্ছেন। অথৈও খাওয়া শুরু করেন।

দুপুরের আগে আগে তারা শপিং এ গেল সবাই মিলে। ভাইয়ার মধ্যে কোন ধরনের রাগের উপস্থিতি খুজে পাচ্ছে না অথৈ।বরং খোস মেজাযে আছেন বলেই মনে হচ্ছে তাকে।

বিয়ের অনেক কেনাকাটা করা হলো।বিয়ের শাড়ি ও কেনা হলো। অথৈ পুরাটা সময় শুন্যদৃষ্টিতেই বিয়ের লাল শাড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে৷

বিয়ের প্রতিটা লাল শাড়িই একদিন না একদিন দোকাম থেকে বেঁচা হয়ে যাবে, কেউ না কেউ তো কিনবেই। প্রত্যেক টা লাল শাড়িই একদিন না একদিন একটা করে গল্পের সাক্ষী হয়ে থাকবে। কোন কোন বিয়ের জামদানী শাড়ির ভাজে প্রেমের গল্প লেখা থাকবে। কোনটাতে ভালোবাসার গল্প,আবার কোনটার ভাজে মান-অভিমান ভঙ্গনের গল্প থাকবে! কিন্তু তার লাল শাড়ির ভাজে মন ভাঙ্গার গল্প লেখা থাকবে।

শপিং শেষে তারা লাঞ্চ সারল বাহির থেকেই। কতোদিন পর যে তারা সবাই একসাথে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চে এসেছে মনে করতে পারল না সময়টা অথৈ! হয়তো বা নয় বছর পর!

বিকেলের দিকে অথৈরা বাসায় ফিরল। অথৈ বেশ ক্লান্ত থাকায় এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় এবংং সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে।

★★★

হাতে সাড়ে পাচ হাজার টাকা পেল শৌখিন। টাকাটা পকেটে ঢুকিয়ে সে একবার টিভি টার দিকে তাকালো। তার একটা বদ স্বভাব আছে তাহলে, খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাপারে মনটা বিরস হয় তার।আবার যেদিন কোন সুসংবাদ পায় সময় দিন ও তার মনটা খারাপ থাকে।

আজকেও অকারণেই তার মন খারাপ। টিভিটা বেঁচার পর থেকে এর মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। কষ্ট লাগছে তার।

শৌখিন দোকান থেকে বের হলো। এই সাড়ে পাচ হাজারের মধ্যে চার হাজার আপাতত বাড়িয়ালাকে দিতে হবে। বাকি এক হাজার দিয়ে বাজার-খরচ। মিস্টি কিনবে। অনেক দিন মিস্টি খাওয়া হয় না। লাল লাড্ডু, কালো জাম আর সন্দেশ কিনবে বলে ঠিক করল শৌখিন।

শৌখিন খুব হীনমন্যতায় ভুগছে। তার বোন ও কালকে থেকে টুউশনি শুরু করেছে।বড় ভাই থাকার পর ও যখন ছোট বোনকে কাজে নামতে হয় সেটা যে একটা ভাইয়ের জন্য কতোটা লজ্জাজনক ব্যাপার সেটা কেবল সেই ভাইটাই বুঝে।

শৌখিন একটা ছোট করে নিশ্বাস ছেড়ে বাড়ির পথে এগিয়ে যেতে লাগলো। খুব ঠান্ডা পড়েছে আজকে। জ্যাকেট পড়েও তার ঠান্ডা লাগছে। কান ঠান্ডা হয়ে আসছে। নাকেও ঠান্ডা লাগছে। সে দ্রুত পা বাড়িয়ে বাসায় ফিরে আসল। আজকে বিকেলে বাড়িওয়ালার বাসায় যাবে।

বেল বাজালো শৌখিন। দুবার বেল বাজাতেই গেট খুলে দিল ইভানা।

ইভানাকে দেখে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা। কিন্তু শৌখিনের নিজের প্রতিক্রিয়া লুকানোর স্বভাব আছে। তাই সে যে চমকে গেলে এটা অন্য কেউ খুব সহজে ধরতে পারে না। সহসাই ইভানা ও ধরতে পারে নি।

শৌখিন দ্রুত নিজেকে সামলে নিল। সে খুব আস্তে বাসার ভেতরে ঢুকল। কোন কিছু জিজ্ঞেস করল না। চোখ বুলিয়ে শায়েরীকে খুজতে লাগে সে৷

তা দেখে ইভানা বলে,শায়েরী রান্নাঘরে।মাছ রান্না করছে। আজকে পাঙ্গাশ মাছ আর ভাত। আমি ভুনা ভুনা করে রান্না করতে বলেছি। শায়েরী প্রথমে আলু দিয়ে ঝোল করতে চাচ্ছিল। আমি মানা করে দিয়েছি। পাঙ্গাশ মাছ ঝোল দিয়ে খেতে আমার ভালো লাগে না তাই ভুনা করে রাধতে বলেছি। হাতে কি? বাজার করেছো নাকি?

–হুম।

–তোমার কি ভুনা মাছ খেতে কোন সমস্যা আছে?

–না কি সমস্যা থাকবে?

–তাহলে ওকে রান্না শুরু করতে বলি?

–আচ্ছা।

শৌখিন এমন ভাবে আচ্ছা বলল যেন ইভানার তাদের বাসায় এসে কি রান্না হবে তা তদারকি করা খুব তুচ্ছ এবং স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।

ইভানা আবারো বলে, ব্যাগটা দাও। আমি রান্না ঘরে নিয়ে যাই।

–না। থাক। আমি রেখে দিচ্ছি।

বলে শৌখিন সামনে পা বাড়ালো। কিন্তু সে কিছুতেই মনে করতে পারছে না তাদের রান্নাঘর কোন দিকে? বাম দিকে? নাহ ওদিকে তো বারান্দা! তাহলে কি ডানে? ডান দিক কোনটা?

শৌখিনের এই ছোট্ট বাসাটাই এখন অনেক বিশাল লাগছে। যার কোন কূল-কিনারা সে বেমালুম চিনছেনা। সে যে একটা ঘোড়ের মধ্যে আছে তা দিব্যি টের পাচ্ছে। মাথা ভোভো শব্দ করছে।

এখন রান্নাঘর না নিজের রুমে যেতে মন চাচ্ছে তার। কিন্তু! সে এই মূহুর্তে নিজের রুম কোন দিকে সেটাই মনে করতে পারছে না। শৌখিন পাশে থাকা একটা বেতের টুলে ধপ করে বসে পড়ে।
মাথা নিচু করে ফেলে সে।

ইভানা শৌখিনের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে? তোমার কি শরীর খারাপ?

–না।

–তাহলে এভাবে বসে পড়লে কেন? মনে হচ্ছে অসুস্থ তুমি?

তখন ই শায়েরী রান্নাঘর থেকে বের হলো। তাকে দেখে শৌখিন উঠে দাড়িয়ে বলে, আমি রুমে গেলাম।

বলে নিজের রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। চোখ জুড়ে ঘুম। মনে হচ্ছে এখনি ঘুমিয়ে যাবে সে কিন্তু ঘুমাতে পারলনা। চোখ বুজে রেখে বুঝল কেউ তাকে পর্যবেক্ষন করছে। গভীর দৃষ্টিতে যে কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে এটা শৌখিনের অবচেতন মন বুঝতে পারছে৷ অবচেতন মন এটাও জানে ব্যক্তিটা কে! তাই সে চোখ খুলছে না। আপ্রাণ চেষ্টা করছে ঘুমে তলিয়ে যেতে। কিন্তু ঘুম আসতে না।

এবার আর ইভানা পারল না। সে বেশ বিরক্ত। ছেলেটা এরকম অদ্ভুত আচরণ করছে কেন আসা থেকেই? কি হয়েছে ওর?

ইভানা শৌখিনের বিছানায় গিয়ে পা উঠিয়ে বসে পড়ে। শৌখিনের খুব কাছাকাছি বসে সে। হয়তোবা ইভানার স্পর্শ পেয়েছিল শৌখিন তাই তো তড়িৎ গতিতে উঠে বসে দূরে ছিটকে যায়

শৌখিনকে হুট করে উঠে এভাবে নড়তে দেখে ইভানা ভড়কে যায়। সে বলে উঠে, তোমার কি কিছু হয়েছে?

শৌখিন আওয়াজ নিচু করে বলে, প্লিজ তোমার বাসায় চলে যাও এখনি এই মূহুর্তে।

ইভানা অভিমানী গলায় বলে, কেন আমি এসেছি বলে ভালো লাগলো না? দুপুরে খেলে এক পিস মাছ এক্সট্রা লাগবে জন্য এখন তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছো?

শৌখিন নড়েচড়ে বসে অদ্ভুত নজরে ইভানার দিকে তাকালো। আর কাঠ গলায় বলে, আমি গরিব হতে পারি কিন্তু মনটা ছোট না আমার!

ইভানা এই প্রথম শৌখিনকে কিছুটা রাগতে দেখল। সে শৌখিনের দিকে আরেকটু ঘেষে বসল।

শৌখিন ঘাবড়ে গিয়ে তোতলানো তোতলানো বলে, ক,,কি স,,সমস্যা? ওইদ,,দিকে যাও।

শৌখিনের চেহাররা রিয়্যাকশন দেখে ইভানা ফিক করে হেসে দিয়ে বলে, এই শোন! আমার হাতের বেসলেটটা একটু খুলে দাও না! প্লিজ?

শৌখিন বিষ্ফরিত চোখে ইভানার দিকে তাকিয়ে থেকে আরো দূরে বসে পড়ল৷ একেবারে বিছানার শেষ সাইডে। ইভানা থেকে বেশ দূরে।

ইভানা ভ্রু কুচকে বলে, আচ্ছা আমার কি কুষ্ঠ রোগ যে দূরে দূরে থাকতে হবে?

–এটা ঠিক না ইভু! তুমি প্লিজ এমন বাচ্চামি করিও না। আমার খুব কষ্ট হয়। চলে যাও।

ইভানা শৌখিনের আরো কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আই লাভ ইউ।

ইভানার মুখে এই কথাটা শুনে খুব খুব আনন্দ অয়ায় সে। মনে হচ্ছে আকাশের তারার চেয়েও দামী কিছু পেয়ে গেছে। কিন্তু প্রকাশ করে না। শৌখিন মুখে বলে,

–প্লিজ এমন বলবে না। এই কথা আর কোন দিন মুখে আনবে না।

ইভানা একটু রগচটা স্বভাবের। সে শৌখিনের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে তার শার্টের কলার খামচে ধরে বলে, কি বললি? আবার বল?

শৌখিন ভীষণ লেভেলের ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল ইভানার এই দস্যি রুপ দেখে। ইভানার নাক নিয়ে গরম হাওয়া বের হচ্ছে, সে দাতে দাত চেপে শৌখিনের কলার আরো অনেক শক্ত করে ধরে ফেলে।

শৌখিন আস্তে করে বলে, ছাড়ো। শায়েরী চলে আসবে,,,,

–ওই হাদারামটাকে এদিকে আসতে মানা করেছি। ও আসবে না।

–ও।

ইভানা আরো একটু কাছে এসে শৌখিনের মুখ বরাবর তাকিয়ে বলে, সাত দিন ধরে লাইন ঠিকই মারবা মেয়ের সাথে, এখন প্রেম করার সময় তোর সমস্যা তাই না?

শৌখিন চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে ইভানার দিকে। কি।বলবে বুঝে পাচ্ছে না।

ইভানা দাতে দাত চেপে বলে,যদি সম্পর্কে জড়ানোর ইচ্ছাই না থাকত তাহলে মায়া বাড়াইলি কেন? কি দরকার ছিল হিরো সেজে আমাকে রক্ষা করার? নিজ দায়িত্বে বাসায় রেখে আসবার আর প্রতিদিন আমার খোজ-খবর নেওয়ার?

–ভুল হয়ে গেছে।

ইভানা আরো জোড়ে শার্টটা ধরে টেনে আনে শৌখিনকে নিজের কাছে।

শৌখিন বলে,আরে, আমার শার্ট ছিড়ে যাবে তো।

–যাক ছিড়ে। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে৷

শৌখিন মাথা নিচু করে বলে, আমার চাকরি নাই তিন মাস ধরে। তোমাকে এই কথা বলি নি।

–তো? চাকরির সাথে আমার কি?

শৌখিন ইভানার গালে হাত রেখে বলে, তুমি খুব অবুঝ ইভানা। কিছু ই বুঝো না।

–সব বুঝ তোমার একারই তাই না?

–সেটা বলি নি। তোমার জন্ম সোনার চামচ মুখে দিয়ে হয়েছে আর আমি ছোট থেকে অভাবে বড় হয়েছি। যায় না তোমার সাথে আমার। আমি তোমার সামনে অনেক ক্ষুদ্র কেউ একজন! অতি নগন্য, নূন্যতম।

ইভানার চোখ বেয়ে এক ফোটা পানি পড়ল। সে কাপা গলায় বলে উঠে,আমার এই নগন্য মানুষটাকেই চাই!

শৌখিন অপলক বিমুগ্ধ নয়নে ইভানার দিকে তাকিয়ে আছে।

ইভানা নাক টেনে বলে,চাকরি নেই, পরে চাকরি পাবে। এটা কোন সমস্যা না।এখনি তো আমাকে বিয়ে করবে না। আমার নিজেরই পড়া শেষ না হলে আমি বিয়ে করব।

শৌখিন বড়ই আশা নিয়ে বলল, তুমি কি আমার পাশে থাকবে? যদি সফল না হই তখন কি হবে?

ইভানা হেসে বলে, কম্পাস দিয়ে বৃত্ত আকলে খাতায় কাটা কম্পাসের বিন্দুটার একটা ছোট দাগ হয় না? সেই পরিমান সাকসেসেও আমি তোমার পাশে থাকব।

শৌখিন আনন্দে মাথা নিচু করে ফেলে। সে কি পাবে একটা ভালো চাকরি? মেয়েটাকে কে সুখে রাখার ক্ষমতা হবে তার? কে জানে কি হবে এগুলোর উত্তর? আল্লাহ পাকই ভালো জানেন।

চলবে৷

[আসসালামু আলাইকুম। কালকে গল্প দিবনা তাই অগ্রিম দুঃখিত ]
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here