আগন্তুকের আসক্তি পর্ব -০৬+৭

#আগন্তুকের_আসক্তি
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৬]

থ্যাঁতলানো হাতটা নিয়ে বেশ সাবধানেই দরজা খোলে ইনান।ইতিকা স্কুলে আছে ভেবে সোজাসুজি বেড রুমের দিকে পা বাড়ায়।থ্যাঁতলানো হাতটায় টপটপ করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।টনটনে ব্যাথায় হাতটা যেন অসাড় হয়ে আসছে।

– ইতিবউ?

ইনানের অবাক কন্ঠে চমকে তাকায় ইতিকা।আজ স্কুলে যাওয়ার কথা থাকলেও স্কুলে যায়নি সে।সুফিয়া বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে ইতিকাকে ভেতরে রেখেই চলে যায়।
ইনানের হাত থেকে গড়িয়ে রক্ত ঝরছে সেদিকে তাকিয়ে চাপা আর্তনাদ করে উঠে সে।

– আ…আপনার কি হয়েছে?হাতের এই অবস্থা কেন?

– ইতিবউ আপনি স্কুলে যাননি কেন?
– আপনি আগে বলুন আপনার হাতে কি হয়েছে?
– সে কথা পরে হবে আগে আপনি বলুন স্কুলে যাননি কেন?

ইতিকা ইনানের প্রশ্নের উত্তর দিল না বরং গায়ের ওড়নাটা দিয়ে ইনানের হাত চেপে ধরে।

– আপনার হাতে কি হয়েছে প্লিজ বলুন।
– তোমার না জানলেও চলবে।সরো সামনে থেকে।

ইনান ইতিকাকে উপেক্ষা করে সরে যায়।ইনানের হাতের এতটাই বাজে অবস্থা হয়েছে হাতে থাকা কাপড়টা সরালে যে ইতিকা আঁতকে উঠবে সে খুব ভালো করেই যানে।

– আপনি আমাকে সরিয়ে দিচ্ছেন কেন?প্লিজ অলীদ ভাইয়াকে ফোন করুন।

– শুনো ইতিকা পাশের রুমে যাও আমার এমন আঘাত অহরহ হয়েছে আমার জন্য নতুন না কিন্তু তোমার জন্য নতুন।তুমি ভয় পাবে পাশের রুমে যাও।

– যাবো না আমি।নাটক করছেন আপনি?দ্রুত অলীদ ভাইকে ফোন করুন।

– আমি অলীদকে ফোন করেছি ডাক্তার নিয়ে আসবে।

ইতিকা আর কিছু বললো না চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ইনানের দিকে।কিছুক্ষণ পরে ডাক্তারের সঙ্গে অলীদ ফ্লাটে আসে।ইনান ইতিকাকে আড়ালে যাওয়ার জন্য ইশারা করলে ইতিকা সরে যায়।

_

পর্দার আড়ালে ইনানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে কাদঁছে ইতিকা।চঞ্চল মানুষটি আজ কেমন শান্ত নিস্তেজ হয়ে গেছে।ইনান বিছানার সাথে হেলান দিয়ে কারো সাথে খুব বাজে ভাবে বকাবকি করছে।কিছুক্ষণ পরেই দ্রুত বিছানা থেকে উঠে গায়ে শার্ট জড়িয়ে রুম থেকে বের হতে নিলেই পথ আটকায় ইতিকা

– কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

– বাইরে যাবো কাজ আছে।

– এই শরীরে বাইরে যাওয়া কি খুব দরকার?

– দেখুন ইতিবউ আপনি যতটা আহামরি ভাবছেন আমার ততটাও চোট লাগেনি।এইসব কাটা – ছেড়া আমার শরীরে সহ্য করার অভ্যাস আছে।

– কিন্তু আমার তো নেই।আপনার এই অবস্থা দেখে আমার কি হাল হয়েছে আপনি জানেন?

ইনান এবার ইতিকার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রাখলো।চোখ গুলো ভিজে চুপসে আছে।নাকটা লাল হয়ে আছে।ইনান এক পা দুই পা করে এগিয়ে আসে তার দিকে।

– আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো বুঝি?

ইনানের প্রশ্নে চনমনিয়ে উঠে ইতিকা।ডানে,বামে তাকিয়ে নিজের অবস্থান থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে দু কদম পিছিয়ে যায়।

– পালাতে চাইছো?

– ন..না।

– তাহলে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। ভালোবাসবে আমায়?

ইতিকা উত্তর দিল না একছুটে পালিয়ে গেলো পাশের রুমে।ইনান রুমে প্রবেশ করার আগেই ঠাসস করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।ইতিকা দরজার সাথে হেলান দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলতে থাকে,

– পুরুষ জাতিটাই এমন একটু আশকারা দিলেই মাথায় চড়ে নাচতে থাকে।

– তুমি না হয় আমার মাথা খাও,আমার মাথায় চড়ে নাচো আমি সহ্য করে থেকে যাবো তবুও আমার প্রশ্নের উত্তর দাও ভালোবাসবে আমায়?

ইতিকা নিজের অজান্তে কথাটা বেশ জোরেই বলে ফেলেছে যার কারনে বাইরে থেকে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকা ইনান কথাটি শুনতে পায়।

__
বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুনগুন শব্দে গান গাইছে ইতিকা।তখনি তার পেছনে হাজির হয় সুফিয়া।

– কি করছো ইতিকা?

– হাহ,কিছু না আপু।

– তোমার সাথে একটা জরুরি কথা ছিল।ইনান কোথায়?

– তিনি পাশের রুমে ঘুমিয়ে আছেন।

– শুনো তোমার শাশুড়ী মা তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে কিন্তু ইনান কিছুতেই দিচ্ছে না।

– কিন্তু কেন?আমি কথা বলতে চাই আপু তুমি প্লিজ ফোন করো।

– তুমি ইনানকে কিছু বলো না প্লিজ।

– ঠিক আছে আগে তুমি ফোন করো।

ইতিকার ভরসায় স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো সুফিয়া।দ্রুত ফোন নিয়ে ইনানের মা নাসরিনকে ফোন করেন।

ইতিকাও দ্বিধাহীন ভাবে তার সঙ্গে কথা বলতে থাকে।

বেশ কিছুক্ষণ পর ইতিকার কানের পাশ থেকে ফোন নিয়ে দেয়ালের দিকে ছুড়ে মারে ইনান।সবটা বুঝে ওঠার আগেই সুফিয়ার দিকে তেড়ে আসে সে কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের মাঝে ইতিকা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

– দ…দোস্ত।

– চুপ!তোর সাহস কম না আমার কথার অমান্য করিস।আমি বলেছিলাম কারো সঙ্গে ইতিকার কথা বলার প্রয়োজন নেই তুই কেন ফোন করলি?আমার অনুমতি নিয়েছিস?

– আন্টি খুব কেঁদেছিল তাই আমি….

– তোর আন্টি কেঁদেছিল বলে তুই আমার অনুমতি নিবি না।বেরিয়ে যা বাসা থেকে।

ইনানের ধমকে চোখের কোনে পানি এসে যায় সুফিয়ার।ইতিকা ঘাবড়ে গিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।

– সুফু যা করেছিস মাফ নেই তোর।বিশ্বাস করেছিলাম তোকে।আর আসবি না এই বাড়িতে গেট আউট।

ইনান সুফিয়ার হাত ধরে বের করতে নিলে রেগে যায় ইতিকা।

– আপনি কি কোন দিন ভালো হবেন না?সুফিয়া আপুর কাছে ক্ষমা চান।

– এক চড়ে সবকটা দাত ফেলে দেবো তোমার।বেয়াদপ মেয়ে।কথার মাঝে একদম কথা বলবে না।

– ঝগড়াটা যখন আমায় নিয়ে তখন আমি কথা বলতেই পারি।

ইনান আর থেমে রইলো না।বরং টেনে হিঁচড়ে পাশের রুমে তাকে বন্দি করে নেয়।সুফিয়া মুখে হাত দিয়ে বেশ শব্দ করেই কেঁদে উঠলো।তার সামনে দাঁড়িয়ে ইনান দাঁতে দাঁত বলে,

– তুই তো জানিস আমি বেইমানকে ক্ষমা করি না।তোকে ক্ষমা করতে পারবো তো?

– আমি কোন অন্যয় করিনি ইনান।আন্টি তার পুত্রবধূর সাথে কথা বলতে চেয়েছেন আর আমি তার ব্যবস্থা করেছি এখানে আমি কোন অন্যায় দেখছিনা।

সুফিয়া আর দু’বাক্য না করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
.

রাত বেশ গভীর।সেদিনের পর কেটে গেলো দু’দিন।গত দু’দিন সুফিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি ইনানের।অলীদ সম্পূর্ণ বিষয়টা ধামাচাপা দিতে চাইলেও কোন কাজ হলো না।এদিকে ইনানের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ইতিকা এখনো তার সঙ্গে কথা বলেনি।গত দুইদিন অনাহারী সে।তাই
যত রাগ,জেদ সব ভুলে ইতিকার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইনান।মেয়েটি কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে আছে

– ইতিবউ?
-….
– ইতিবউ?
-উহ
– উহ কি?উঠুন।
– উমমম?
– কি উমম, উমম করছেন?গায়ে পানি ঢেলে দিলে তখন ঠিকি লাফিয়ে উঠবেন এখন ভালোভাবে ডাকছিত তাই কানেই তুলছেন না।

কথাটা বেশ জোরেই বললো ইনান।যার কারনে বেশ তোড়জোড় করে চোখ খুলে ইতিকা।

– আপনি এখানে কি করছেন?

– আদর করতে এসেছি আপনাকে ইতিবউ।

– আহ, কিসব কথা বলছেন?

– কেন আপনাকে কি আদর করতে পারবো না?
– না পারবেন না।এমন নির্বোধ,হৃদয়হীন স্বার্থপর মানুষের সাথে আমার কোন কথা নেই।

ইতিকার বাজঁখাই কন্ঠে ইনান বেশ রেগে যায়।কিন্তু তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ইতিকার পাশে সটান হয়ে শুয়ে যায়।

– এখানে শুয়েছেন কেন? নিজের রুমে যান।

-এটাও আমার রুম।আমার রুম আমার খাট,আমার বালিশ আর পাশে আমার বউ। সব যখন আমার তখন আমি কেন অন্য রুমে যাবো?

– ঠিক আছে আমি নিজেই চলে যাচ্ছি।

ইতিকা উঠে যেতে নিলেই ইনান তাকে আকড়ে ধরে।তার কানের কাছে মুখ নিয়ে আলতো করে কামড় বসায়।

– আহ্!পাগল হয়ে গেছেন?

– এত হাইপার হচ্ছেন কেন ইতিবউ?আমি ছুঁয়ে দিয়েছি অন্য কেউ নয়।আর অন্য কেউ ছুঁয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে হাত কে/টে ফেলবো তার।

– আন্টি ঠিকি বলে আপনি সন্ত্রাস গুন্ডার থেকেও কম না।

– এইজন্যই আমি কথা বলতে বারন করেছি।জানতাম কথা বললেই তোমার কানে বিষ ঢালা হবে।জানোতো আমার বাবা-মা আমার চাওয়া পাওয়ার মূল্য দেয় না।

– তাই নাকি?তা আপনার চাওয়া-পাওয়াটা কি?

– মামু আমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যাক্তি।তার সঙ্গে থাকবো ধীরে ধীরে মামুর অবস্থানে নিজেকে দাড় করাবো।রাজনীতি করতে চাই।গল্পটি লেখনীতে পলি আনান। কিন্তু বাবা পছন্দ করেন না।ঠিক এক বছর আগে বেশি রাত করে বাড়ি ফেরায় আমাকে বলেছে বেরিয়ে যেতে তিনি নাকি আমার মুখ দেখতে চান না আমিও বিনাবাক্য বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বেরিয়ে আসি।তারপর আর ওই বাড়ির ত্রি-সিমানায় যায় নি।

– বাবা-মা কি কখনো সন্তানের খারাপ চায়?তারা আপনার ভালো চায় বলেই শাসন করে।আপনার কি মায়া লাগে না তাদের জন্য?

– এত কথা শুনতে ভালো লাগছে না আমার।

ইনান কথাটি বলে ইতিকাকে আরেকটু কাছে টেনে নেয়।ইতিকা সরে আসতে চাইলে কৌশলে ইনান তার পেটে হাত রেখে রাগান্বিত স্বরে বলে,

– আপনি আমার উপর রাগ দেখালেন মেনে নিলাম কিন্তু খাওয়া দাওয়া বন্ধ করলেন কেন?

– সেই কৈফিয়ত আপনাকে দিতে চাই না আমি।

– আপনারা মেয়েরা এই একটা গুন ভালো ভাবে কবজা করেছেন।চুন থেকে পান খসলেই গাল ফুলিয়ে থাকবে সাথে খাওয়া দাওয়া বন্ধ।বাজে স্বভাব।

– আমরা আর যাই করি বাড়ি থেকে তো আর বেরিয়ে যাই না।

– যদি আপনারা সুযোগ পেতেন তবে ঠিকি বেরিয়ে যেতেন।কিন্তু ঘরের বাইরে তো আর আপনাদের জন্য নিরাপদ নয়।তাই এই এক কিসিমের রাগ দেখিয়ে ঘরে থাকো।

ইতিকা উত্তর দিলো না।বিরক্ত হয়ে সরে গেলো।ইনান নিজেও বিছানা থেকে উঠে ইতিকাকে সহসা কোলে তুলে নেয়।

– আরে কি করছেন কি?এত রাতে কি মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে?

– চলুন খাবো।

– আমার খিদে নেই।

– আমার আছে।আর একটা কথা বললে ছাদে উঠে আপনাকে নিচে ফেলে দেবো মাইন্ড ইট।

ইতিকা আর কিছু বললো না ইনান ইতিকাকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে যায়।ইতিকার মুখে খাওয়ার তুলে দিতেই হাত ছিটকে দূরে সরিয়ে দেয়।

– খাবোনা আমি।

– সরি বলেছি তো ইতিবউ?আমায় মাফ করে দিন এমন রাগ আর দেখাবো না এবার খেয়ে নিন প্লিজ।
– আমি মাফ করার কে?সুফিয়া আপুর কাছে মাফ চান।

ইনান ইতিকার কথা মতো ফোন করে সুফিয়ার কাছে মাফ চাইলো।কথা শেষে ইতিকার মুখে চুপচাপ খাবার তুলে দেয় ইনান।

অপর দিকে দরজাটা ফাঁক করে মুখ গোমড়া করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে অলীদ।এত্ত রাতে ইনানের চাপা ধমকে ঘুম ভাঙ্গে তার।কিন্তু দরজা খুলে ইনান ইতিকাকে একসাথে দেখে রুম থেকে আর বের হলো না।পর্দার সাথে হেলান দিয়ে আফসোস ভঙ্গিতে বলে,

– দূর, এই বাসায় আর থাকা যাবেনা।এক জোড়া দম্পত্তি আমার সামনে খুনশুটি করবে আর আমি তা চুপচাপ গিলবো তা হয় না।মরার জীবনটা আমার সিঙ্গেল হিসবে যাবে।

__

স্কুল গেটের সামনে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে ইতিকা।স্কুল ছুটি শেষে একে একে প্রায় সব শিক্ষার্থী বাসার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়েছে কিন্তু ইতিকা এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।ইনান শহরের বাইরে আছে বাহরুল ইসলামের কাজের সূত্রে। সুফিয়া তাকে আজ নেওয়ার কথা থাকলেও এখনো এসে পৌছায় নি।

– হ্যালো ইতিকা।

একটি ছেলের কন্ঠে পাশ ফিরে তাকায় ইতিকা।কলেজ ড্রেস পরা, কাঁধে ব্যাগ, ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখেছে মিষ্টি হাসি।

– কি হলো মিস কথা বলছেন না কেন?

– কি কথা বলবো আমি?

– আমি রাতুল এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।আপনাকে আমি চিনি।

– ওওও

ইতিকার এমন হেলদোল হীন কথায় বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ছেলেটি।

– আপনি ইতিকা ইয়াসমিন।ক্লাস নাইনে পড়ছেন।আপনি যে ফ্লাটে থাকেন আমি সেখানেই থাকি।প্রায় ১৫ দিন হলো আমি দশ তলায় নতুন এসেছি।

– ওও।

– বাড়ি ফিরছেন না কেন?একা দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক নয়।ওহ আচ্ছা আপনার কাজিন আপনাকে নিয়ে যাবে বুঝি?

– কাজিন?

– একটা মেয়েকে দেখি প্রায় সময় আপনাকে নিয়ে যায়।আচ্ছা চলুন আমরা একসাথে যাবো একই স্থানে বাড়ি যখন আমাদের যাতায়াত একই হোক।

ইতিকা পড়েছে মহা ফ্যাসাদে।ভাগ্য ভালো আজ ইনান নেই যদি ইনান দেখে নেয় তবে আবার আগুন জ্বলবে।ইতিকা কিছু বলার আগেই হুড়মুড় করে তার সামনে দাঁড়ায় অলীদ।

– চলো ইতিকা।আ’ম সরি এত দেরি করার জন্য আসলে সুফু আসার কথা ছিল কিন্তু বেচারি একটা ঝামেলায় পড়ছে।

ইতিকা সুযোগ বুঝে অলীদের আগে হাটতে শুরু করে অন্যদিকে রাতুল তার দিকে আহাম্মক বনে তাকিয়ে আছে।অলীদ বিষয়টি বুঝতে পেরে ইতিকাকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।

– ছেলেটা কে?
– আমি চিনি না

– কথা বলছিলে কেন?ইনান জানলে খবর আছে।

– আমি কথা বলিনি ভাইয়া সে যেঁচে এসে কথা বলছিল।যাই হোক উনি তো নেই জানবেন না আশা করি।

– তোমার উনিকে এই খবর জানানোর মানুষের অভাব হবে না।

– মানে?

– তার দলের লোকেরা তোমাকে পাহাড়া দিচ্ছে।আমার আর তোমার অন্তরালে।সেটা তুমিও বুঝতে পারবে না আর আমিও বুঝি না।যাই হোক আমি ম্যানেজ করে নেবো বিষটি।

ইতিকা এবার মহা ঝামেলায় পড়েছে।মাথাটা ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে সে আবারো চমকে যায়।ছেলেটি তার দিকে এখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
#আগন্তুকের_আসক্তি
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৭]

শেষ বিকেলে হঠাৎ করেই আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা বেড়ে চলেছে।দমকা হাওয়া উলটে পালটে দিচ্ছে জানলার পর্দা।চেয়ারের সঙ্গে হেলান দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে ইনান।ইতিকা তার পাশেই বসে আছে।তবে আজ ইনানের আচরণ বিধি সুবিধা ঠেকছে না তার কাছে।কেমন যেন ভাব গম্ভীর নিয়ে বসে আছে।তবে কি কালকে রাতুলের সাথে কথা বলার বিষটি তিনি জেনে গেছন?
কিন্তু অলীদ ভাই তো বলেছিলেন ম্যানেজ করবেন বিষটি।
ইতিকার ভাবনার ছেদ ঘটে এক পাশলা ঝুম বৃষ্টিতে।আকাশ বেয়ে নেমে আসা ভারী বর্ষণ ভিজিয়ে দিচ্ছে,মৃত্তিকার উপর থাকা গাছ,গাছালি,দালানকোঠা। এক দৌড়ে ইতিকা ছুটে যায় বারান্দায়।চঞ্চল চোখ দুটি চারিদিকে বিচরণ করতে ব্যস্ত।

– ইতিবউ?

ইনানের ডাকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সে।

– কিছু বলবেন?

– আপনার ফুফু কথা বলতে চাইছে আপনার সঙ্গে।

– আমি বলবো না। আপনি ফোন রাখুন।

– ইতিবউ!

– ধমকাচ্ছেন কেন?আমি বলেছি আমি কথা বলবো না সেখানে আমার সঙ্গে জোড়াজুড়ি কেন করা হচ্ছে?

ইনান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ইতিকার দিকে।মেয়েটা ইদানীং বদলে গেছে।

– ঠিক আছে আপনার কথা বলতে হবে না, মিহির সাথে অন্তত কথা বলুন।

ইতিকা মাথা নেড়ে সায় দিয়ে ফোনটা হাতে তুলে নেয়।বেশ কিছুক্ষণ পর কথা শেষে ইনান ইতিকাকে প্রশ্ন করে,

– ফুফির উপর এত রেগে থাকেন কেন সব সময়?

– যে যেমন তার সঙ্গে আমি তেমনি আচরণ করবো।

– কেন আমার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়ায় রেগে আছেন বুঝি?

ইতিকা উত্তর দিলো না।বারান্দায় গিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ছুঁয়ে দেওয়ার ছলচাতুরী করলো।

– ইতিবউ?

ইনানের ডাকে আবারো ঘুরে তাকায়।একটি দীর্ঘ শ্বাস আড়াল করে চুপচাপ দাঁড়ায় ইনানের সামনে।

– আমার প্রশ্নের উত্তর আমি পাইনি ইতিবউ।

– মহিলাটি মানুষ হলেও অমানুষ।প্রায় এক বছর আগে আমাকে শহরে কোন এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করতে উঠে পড়ে লাগে।বিষটি জানতে পেরে আমি পালিয়ে যাই।আবার আমায় ধরে নিয়ে আসে।পালিয়ে যাওয়ার কোন ফাঁদ খুঁজে পাইনি।আবারো মিহির সাহায্য আমি পালিয়ে যাই তখনি দেখা হয় গ্রামের ধনী ব্যবসায়ীর নাতি ওয়াসিমের সঙ্গে।

‘ওয়াসিমের’ নামটা মুখে তুলতেই তীর্যক ভাবে তার দিকে তাকায় ইনান।ইতিকা বিষয়টি বুঝতে পেরে চুপসে যায়।তবুও দ্বিধা ভুলে আবারো বলতে থাকে।

– ওয়াসিম আমাকে নিরাপত্তা দেয়।ধীরে ধীরে আমাদের মাঝে সর্ম্পক গড়ে উঠে।আর সেই সর্ম্পকের কথা গ্রামবাসী সকলেই জানতো এরপর আমাকে কেউ কটূ বাক্য বলা তো দূরের কথা আমার দিকে চোখ তুলে তাকাতেও সাহস পেত না।আমার ফুফা, ফুফি কেউ কখনো আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার সাহস পায়নি।সেদিন গুলো ছিল স্বাধীন এক কথায় আমার জীবন আমার রাজত্ব্য।তারপর কেটে যায় পাচঁ/ছয় মাস।হঠাৎ ওয়াসিম গ্রামে আসে এবং তার সাথে আমার শেষ কথা হয় সে আমেরিকায় যাচ্ছে পারিবারিক বিজনেস সামলাতে।খুব শীঘ্রই ফিরে আসবে।তারপর কেটে যায় একসাপ্তাহ।
হুট করেই আপনার আগমন তারপর বিয়ে আর আমিও অদ্ভুত ভাবে জড়িয়ে গেলাম অন্য শহরে,অন্য কোন মায়ায়, স্থান হলো অচেনা কারো বুক পাঁজরে।আর সেই অচেনা মানুষটির ভালোবাসা প্রকাশ পেতে থাকে রাগ,জেদ,অভিমানের মাধ্যেমে।

ইতিকা ক্লান্ত ভঙ্গিতে মেঝেতে বসে যায়।পা মুড়িয়ে হাটুতে থুতনি রেখে তাকিয়ে থাকে বারান্দার দিকে।ঝমঝম করে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো আছড়ে পড়ছে জমিনে।ইনান তার দিকে তাকিয়ে আছে বিনাবাক্য।

– একটা প্রশ্ন করবো আপনাকে? আমায় কেন বিয়ে করেছেন?

ইতিকার প্রশ্নে কিঞ্চিৎ হাসে ইনান

– ভালোবাসতে,ভালো রাখতে।আমি জানি আপনি এখনো মানিয়ে উঠতে পারছেন না।সমস্যা নেই সব ঠিক হয়ে যাবে দৈর্য্য ধরুন।

ইতিকা ইনানের কথার পিঠে আর কথা বাড়ালো না।উঠে দাঁড়িয়ে আবারো বারান্দায় চলে যায়।বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ছুঁয়ে দিয়ে ছুটে আসে ইনানের কাছে।

– চলুন আমরা ছাদে যাই।বৃষ্টির ফোঁটায় একটু গা ভাসাই।

ইতিকার হাসিখুশী মুখটা দেখে ইনান কিছু একটা ভাবলো হঠাৎ করেই মুখভার করে বলে,

– দরকার নেই। আমি এখন ঘুমাবো আমার চুলে বিলি কেটে দিন।

ইনানের এমন উত্তর আশা করেনি ইতিকা।মনে রাগ জমা হলেও চুপচাপ ইনানের পাশে বসে যায়।
_

শেষ বিকেলে বৃষ্টির গতিক আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।ইতিকার অশান্ত মন বার বার ভিজতে চাইছে তাই ইনানের ভয়কে উপেক্ষা করে এক ছুটে ছাদের দিকে পা বাড়ায়।আকাশ থেকে অস্থির গতিতে আসা বৃষ্টি তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে।ভিজে যাওয়া ইতিকা জুবুথুবু হয়ে ছাদের কোনায় গিয়ে দাঁড়ায়।রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকাতেই ভয়ে কুঁকড়ে উঠে।সে বর্তমানে বারো তলা বিল্ডিং এর ছাদে অবস্থান করছে।এত বড় উচুতে সে আগে কখনো উঠেনি।ভেজা চুলগুলো চারিপাশটায় ছড়িয়ে আবারো হাত উচু করে বৃষ্টির পানি জমাট বদ্ধ করে।হঠাৎ করেই তার কানে আসে অচেনা কোন পুরুষের কন্ঠ।

– ঠান্ডা লেগে যাবে তোমার।এবার সবুর করো।

ইতিকা ভয়, সংশয় নিয়ে পেছনে তাকায়।ভিজে যাওয়া জুবুথুবু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাতুলকে দেখে যেন আসমান থেকে টুপ করে পড়েছে সে।

ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে দু’পা পিছিয়ে গিয়ে রেলিং এর সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায় ইতিকা।

– আরে আমায় ভয় পাচ্ছো কেন?

– আ..পনি এখানে?

– আমি তোমার আগেই এসেছিলাম।ওই যে ছাদের কোনায় ছিলাম।তুমি আমায় খেয়াল করোনি।প্রায় বিশ মিনিট তুমি সমান তালে ভিজেছো।ঠান্ডা লেগে যাবে হয়তো।যাও নিচে যাও।আর আমাকে এত ভয় পাচ্ছো কেন?

ইতিকা কি বলবে বুঝতে পারছেনা।হঠাৎ করেই হালকা বাতাসে তার সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠছে।

– আচ্ছা একটা কথা বলো তো,তুমি আমায় এত ভয় পাও কেন?কালকেও সেইম আচরণ করেছো।এখন আবার। আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে তোমায় টুপ করে গিলে খাবো?

রাতুলের প্রশ্নে কি বলবে বুঝে উঠে পারছে না ইতিকা।হঠাৎ মাগরিবের আযান পড়ায় ইতিকা এক ছুটে নিচে নেমে যায়।একা ছাদে তাকে আর রাতুলকে যদি ইনান কিংবা ইনানের লোক দেখে নেয় তাহলে কেলেংকারী হয়ে যাবে।

ইতিকাকে ছুটে পালিয়ে যেতে দেখে তার পেছন পেছন আসতে থাকে রাতুল।

– এই মেয়ে দাঁড়াও।পালিয়ে যাচ্ছো কোথায়?

রাতুলকে কাছে আসতে দেখে ভেজা শরীর নিয়ে দৌড়তে শুরু করে ইতিকা।সব সিড়ি শেষ করে তার ফ্লাটের সামনে শেষ সিড়িটায় পা মুছড়ে পড়ে যায়।ব্যাথায় চাপা আর্তনাদ করে উঠার চেষ্টা কর‍তেই লক্ষ্য করে পা ছিলে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।এদিকে রাতুল উপরের সিড়ি থেকে তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।রাতুল কয়েক সিড়ি নেমে আসতেই ইতিকা দ্রুত দরজা খুলে ভেতরে ডুকে যায়।এবং দরজার সঙ্গে পিঠ লাগিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।

ইনান হয়তো ঘুমাচ্ছে ভেবে ইতিকা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে চোখ খুলে।কিন্তু চোখ খুলে ইনানের আগুনের চুল্লির ন্যায় মুখ খানা দেখে দুনিয়া আন্ধার হয়ে যায় ইতিকার।

ভয়টা মূহুর্তে তাকে আবারো আঁকড়ে ধরেছে।ইনানের আরক্ত দৃষ্টি তার ভেতরটা নাড়িয়ে তুলছে।ভয়ে প্রায় কান্না করে দেওয়া অবস্থা ইতিকার।ইনানের চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না মেয়েটি।ছুটে গিয়ে আকঁড়ে ধরে ইনানকে।
ইনানের বুকে মুখ গুজে শব্দ করে কেঁদে উঠে সে।ইতিকার চোখের পানি উত্তপ্ত রাগটা যেনো নিভে গেছে ইনানের।

– ইতিবউ কান্না থামান।

ইতিকা কান্না থামায় নি বরং আরো শক্ত করে চেপে ধরে ইনানের টি-শার্ট।

– আ..মি আর ক..খনো ন..না বলে যাবো না কো..থাও
– ঠিক আছে এবার কান্না থামান।

ইতিকা কান্না থামালো না বরং ছেড়ে দিল ইনানকে ইতিকা কান্নারত মুখটা দেখে ইনানের সব রাগ জেদ হওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
ইনান ইতিকার মাথায় হাত রেখে বলে,

– ইতিবউ জামা কাপড় পালটে আসুন

ইতিকা মাথা নেড়ে সায় দিয়ে যেতে নিলেই ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে।

– পায়ে কি হয়েছে আপনার?

– পড়ে গেছি।পা বোধহয় মুচড়ে গেছে।

ইনান মাথা নুইয়ে পা দেখেই ভড়কে যায়।রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।বাম পা টা নীল হয়ে ফুলে উঠেছে।

__

ইতিকার সামনে নিজেকে শান্ত রাখলেও ইনানের রাগ একটুও কমে নি বরং আরো দিগুন বেড়েছে।ইতিকাকে সুফিয়ার কাছে রেখে,অলীদকে নিয়ে রাতে বেরিয়ে পড়ে ইনান।

– কিরে দোস্ত রেগে আছিস কেন?

– তোরা কি আমার বন্ধু অলীদ?তুই আর সুফিয়া একের পর এক আমার কাছে সব লুকিয়ে যাস কেন?

– ম..মানে কি বলছিস?

– সেদিন বারন করা সত্ত্বেও সুফু মায়ের সঙ্গে ইতিকাকে কথা বলতে দিয়েছে।আর তুই!

– আমি আবার কি করলাম?

– কাল ইতিকার স্কুলের সামনের ছেলেটা কে ছিল?একবার আমায় জানালি না।

অলীদ এবার ভড়কে গেছে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।তার অবস্থা দেখে ইনান ঠোঁট বাকিয়ে হাসে।

– আজকে ইতিকা ছাদে উঠেছে আর ছেলেটা তার পিছু পিছু এসেছে।

– তুই কি করে জানলি?

– ফ্লাটের সিসি ক্যামরা চেক করছি।ছেলেটা রাতুল।

– বাদ দে দোস্ত।হয়তো একই ফ্লাটে তাই ভাবীকে দেখে কথা বলতে চাইছে।সব কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি ঠিক নয়।

ইনান অলীদের কথার পিঠে আর কিছু বললো না।চুপচাপ ভাবতে থাকে ইতিকার কথা।

_

প্রায় চারদিন পর ইতিকা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে পেরেছে।পায়ের ব্যাথাটা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।এক ঘরে থাকতে থাকতে বিরক্ত সে।তাই গায়ে হাওয়া লাগাতে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।কিছুক্ষণ পরেই তার সামনে হুড়মুড় করে দাঁড়ায় ইনান।গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।ইতিকা অবাক চোখে ইনানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।

– কি হয়েছে আপনার?

– শুনুন ইতিবউ নিজের প্রিয় মামুর কথা উপেক্ষা করে আপনাকে বিয়ে করেছি।এক কথায় গ্রামের সবার মুখ বন্ধ করে জোর করে বিয়ে করে এনেছি। নিশ্চয়ই এমনি এমনি তো আর এতটা পাগল হইনি।মায়ায় পড়েছি বলে একান্ত আমার করে এনেছি আপনাকে।আর এখন আমার বউয়ের উপর ইন্টার পড়ুয়া ছেলের নজর পড়েছে।আমি যে কি করবো বুঝে উঠতে পারছিনা।

ইনান কথা গুলো বলেই আবার রুমে চলে যায়।ইতিকা আহাম্মক বনে তাকিয়ে আছে ইনানের দিকে।কিছুক্ষণ পর ইনান আবারো বারান্দায় আসে হাতে তার জ্বলন্ত সিগারেট।ইতিকার দিকে এগিয়ে এসে সিগারেটের ধৌঁয়া তার মুখে উড়িয়ে দেয়।তার অস্থিরতা ভাব বুঝে উঠতে পারছেন না ইতিকা।

– ইন্টার পড়ুয়া ছেলে আমার বউয়ের পেছনে হাটে অদ্ভুত।শুনুন ইতিবউ সাবধানে থাকবেন বাইরের ছেলেদের পেটাতে পেটাতে কখন যে রাগের দরুনে আপনাকে পেটাতে শুরু করি আমি নিজেও জানি না।বি কেয়ারফুল!

তর্জনির আঙুল ঘুরিয়ে ইতিকাকে শাসিয়ে আবারো বারান্দা থেকে রুমে চলে যায় ইনান।বুকের ভেতরের হৃদযন্ত্রটা প্রবল ভাবে কম্পিত হচ্ছে ইতিকার।
বারান্দার দরজা দিয়ে ইতিকা আড়ালে দেখে, ইনান জামাকাপড় কাধে তুলে বাথরুমের দিকে পা বাড়ায়।সুযোগ বুঝে ইতিকা অলীদের রুমের দিকে যায়।

– অলীদ ভাইয়া কি সমস্যা?উনি আমার উপর রেগে আছেন কেন?

– রাতুল তো কেস জন্ডিস করে দিয়েছে।

– মানে?

– ছেলেটা তোমার সম্পর্কে তেমন অবগত নয়।সে জানেও না তুমি বিবাহিত।তোমায় গত কয়েকদিন না দেখে ইনানের কাছে প্রশ্ন করে, “আপনার বোন’কে দেখছি না কেন?স্কুলেও আসছে না।

– তারপর?

– ইনান মাথা গরম করে কিছু বলার আগেই আমি তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসি।ভাবতে পারছো?আজ যদি আমি ইনানকে না নিয়ে আসতাম তবে ছেলেটা নির্ঘাত এতক্ষণে হাসপাতালে ভর্তি থাকতো।

– অলীদ ভাই আপনার বলা উচিত ছিল ইনান আমার স্বামী।

– দূর আমার তো ভয়ে হাত পা কাঁপছিল।তৎক্ষনাৎ মাথায় কোন বুদ্ধি আসেনি।তুমি।বরং রুমে যাও ইনান তোমায় না দেখলে আরো ক্ষেপে যাবে।

ইতিকা অলীদের রুম থেকে বের হওয়ার আগেই ইতিকা শুনতে পায় ইনান তাকে ডাকছে।

– ইতিবউ কোথায় তুমি?পালিয়ে গেছো?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here