আগাছা পর্ব ৪

#আগাছা
#Khadija_Akter
#পর্ব_০৪

ঠাসসসস!

মেহেরীমার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে, চেচিয়ে উঠলো অনিক,

-স্টপ দিস ননসেন্স ইউ ইডিয়ট !
কিছু বলছি না তাই যা মনে আসে তাই বলে যাবে নাকি?
তুমি কি বলছো,বুঝে বলছো তো?

ছিঃ মেহের ছিঃ!

তুমি এতো ছোট মনের মানুষ আগে বুঝিনি।৩ বছরের বোঝাপড়ার পর আজ ৪ বছর ধরে যে মানুষটার সাথে সংসার করছো সে মানুষটাকে এসব অপবাদ দিতে পারলে তুমি?একটুও বাঁধলো না?

তরীকে কি আমি ডেকে এনেছিলাম বাসায় বলো?

হ্যাঁ আমি মানছি,আমি মানছি যে তরীর প্রতি আমার একটু বেশিই আগ্রহ আছে।কিন্তু কেন,সেটা কখনো জানতে চেয়ো না।
তবে এটুকু মনে রেখো,তুমি যে নোংরামির কথা বলছো তা কখনোই সত্য নয়।
অত্যন্ত আমার দিকটা আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। আমার জন্য তুমি শুধু তুমিই যথেষ্ট ছিলে।
কিন্তু তুমি,সেই তুমিই আমাকে আজ এতোগুলো কথা শুনালে?
আমি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না।
আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।

একটুও না থেমে একটানা কথাগুলো বলতে বলতে অনিক তার হাতের পাঁচটা আঙুল মুষ্টিবদ্ধ করে সজোরে দেয়ালে একটা ঘুষি মারলো।
সাথে সাথেই মধম্যা আঙুলের উপরিভাগ ফেটে গিয়ে রক্ত ফিনিক দিয়ে বের হতে থাকে।
সে আর একমুহূর্তও দেরী না করে বেরিয়ে গেল এখান থেকে।

এদিকে অনিকের থাপ্পড় খেয়ে আমি ছিটকে পড়ি যাই দরজার পাশে।

নিচে পড়ার আগেঅ কপাল দরজার হাতলে লেগে গিয়েছিল।এখন হাত না দিয়েও বুঝতে পারছি অনেকটা ফোলে গেছে।ব্যাথায় টনটন করছে।

আর গালে আছে থাপ্পড়ের যন্ত্রণা!

তারচেয়েও বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভিতর!কি থেকে কি হয়ে গেল!

গালে একবার হাত বুলালাম!

তারপর ব্যালকনির দরজায় হেলান দিয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরছে।
এটা ছিল,অনিকের কাছ থেকে পাওয়া আমার প্রথম শারীরিক আঘাত!

হাতে একটা সুয়েটার নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা মেইন দরজা দিকে চলে গেল অনিক।

তরী ড্রয়িংরুমেই বসে ছিল।কানে ইয়ারফোন থাকায় এতো চিৎকার চেচামেচির কিছুই শুনেনি সে।

অনিককে এতো রাতে বেরিয়ে যেতে দেখে পিছন থেকে ডাকলে সে,

–অনিক জিজু, এতো রাতে কোথায় যাও?

অনিক এক মুহূর্ত থামলো তারপর আবার দরজার দিকে হাটতে লাগলো। পিছনে না তাকিয়েই সে উত্তর দিল,

–একটু কাজ আছে।

তরী আদুরে গলায় বললো,

–এতো রাতে কিসের কাজ হুম?তুমি এখন কোথাও যেতে পারবে না।আসো আমরা এখন একটা মুভি দেখবো।

অনিক দরজার কাছে যেতে যেতে অত্যাধিক শীতল অথচ কঠিন কন্ঠে উত্তর দিল,

–তরী,আমি তোমাকে বলেছি যে আমার এখন কাজ আছে।

তরী দৌঁড়ে এসে পিছন থেকে অনিকের শার্ট টেনে ধরে।

–আমিও তো বলেছি, তোমাকে আমি এখন কোথাও যেতে দিব না।তুমি আমার সাথেই থাকবা এখানে…..

এবার অনিক ঘুরে দাঁড়ালো,আর চিৎকার করে বললো,

— জাস্ট শাট আপ!এণ্ড স্টে এওয়ে ফ্রম মি।আন্ডার্স্ট্যান্ড?

অনিক তরীর হাত থেকে নিজের শার্টের অংশটা ছাড়িয়ে নিল।

তরী দেখলো,অনিকের চোখ দুটো রাগে লাল হনহন করছে।অনিকের সেই অগ্নিদৃষ্টি দেখে তরী বেশ ভয় পেয়ে দু’পা পিছিয়ে গেল।
অনিকের এই রুপ সে কখনোই দেখেনি।

অনিক বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।

—————–

সূর্যের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই ঘুমটা ভেঙে গেল আমার।মাথা প্রচন্ড ভারভার লাগছে।

ঘুম ঘুম চোখে ভালো মতো আশেপাশে চেয়েই আমি হকচকিয়ে গেলাম।
আমি এখনো ব্যালকনিতেই বসে আছি দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে !রাতে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।

রাতের ঘটনাটা মনে পড়তেই বিষাদে মনটা ছেয়ে গেলো।
নিজের অজান্তেই আস্তে করে হাতটা বাম গালে চলে গেল।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে রুমে চলে এলাম।

রুমে অনিক নেই।বিছানাও রাতে যেমন ছিল তেমনি!তারমানে রাতে ও রুমে ছিল না!

তাড়াতাড়ি ড্রয়িংরুমে গেলাম,দেখি তরী সোফার উপর ঘুমিয়ে আছে।ওর দিকে একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলাম।

হায়রে,মেয়েটা কত শান্তিতে ঘুমাচ্ছে!আমার সংসারের শান্তি নষ্ট করে।

বাসার সব জায়গা খুঁজে দেখলাম,ছাদেও দেখলাম।
অনিক নেই।কোথাও নেই!

তাহলে রাতেই বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে।

কোথায় যেতে পারে?নিশ্চয়ই বন্ধুদের মধ্যে কারো বাসায়।

যাক যেখানে যাবার,আমি কেন ভাবছি এতো!কোনো প্রতারকের জন্য জায়গা নেই আমার মনে।

রুমে এসে জানালার পর্দাগুলো টেনে দিয়ে ঘর অন্ধকার করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।

————–

অনিকের চোখে একফোঁটাও ঘুম নেই!সারারাত না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিয়েছে সে।

বাসার কাছেই একটা বাস স্ট্যান্ডে বসে আছে অনিক।
সেই যে রাতে বাসা থেকে বের হয়ে এখানে এসে বসেছে,সেই থেকে একইভাবে বসেই আছে।

রাতে প্রায় জনশূন্য ছিল জায়গাটা।সকালের আলো ফোটার সাথে সাথেই বাড়ছে মানুষজনের আনাগোনা।
কর্মব্যস্ত শহরের কর্মব্যস্ততা আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছে।

অনিকের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে,শার্টের উপরের কয়েকটা বোতাম খোলা,চোখগুলো লাল হনহন করছে,উদভ্রান্ত দৃষ্টি মেলে সে রাস্তার দিকে তাকিয়ে মানুষজন দেখছে আর একের পর এক সিগারেট শেষ করে যাচ্ছে।

দীর্ঘ ৬ বছর পর সে আজ সিগারেট খাচ্ছে।
যে মানুষটা তাকে সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস ফিরিয়েছিল,সেই মানুষটার জন্যই আজ আবার সে সিগারেট হাতে নিয়েছে।কি অদ্ভুত!

এখানে আসার সময় সে বাসার নিচের দোকান থেকে ২ প্যাকেট সিগারেট কিনে নিয়ে এসেছিল।এখন আর শুধু গোটা কয়েক অবশিষ্ট আছে!

সিগারেট যেভাবে পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ হচ্ছে।অনিকের অন্তরটাও সেভাবে পুড়ছে।

হুট করে সে তার ডান হাতটা চোখের সামনে তুলে ধরলো।এই হাত দিতে কাল সে তার মেহেরকে মেরেছে!এই হাত দিয়ে!এই হাত দিয়ে!

ভাবতে ভাবতেই সে রাতের মতো আরেকবার ঘুষি মারলো বসে থাকা বেঞ্চের উপর।

কাল রাতের কাটা জায়গাটা কাঁচা হয়ে আবার ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করেছে।
অনিক এক নজরে চেয়ে রইলো সেই রক্তের দিকে।
নাহ্ সে একটুও ব্যাথা অনুভব করছে না।এই রক্ত তো কিছুই না তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণের তুলনায়।

হঠাৎ করেই অনিকের প্যান্টের পকেটের ভিতরে থাকা ফোনটা ভ্রাইব্রেট করে বেজে উঠলো।
নিশ্চয়ই বাসায় আমাকে না পেয়ে মেহের ফোন দিয়েছে!অনিকের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।

পকেট থেকে ফোনটা বের করে হাতে নিতেই ওর হাসি আবার মিলিয়ে গেল।
নাহ্ তার ধারণা ভুল।
অনিকের বসের ফোন…

–Hello sir

–Hello Mr. Anik.
Please come to the office within 30 minutes now.

–Sir, today I want to take leave. I need some break .

— Mr. Anik, this is an important meeting.
Being the head of the project, it is important that you attend the meeting. Do you understand me?

–…….

–Hello!Hello!

–yes.
yes sir. I’m coming.

–hurry up young man .

–All right sir.

অনিক উঠে দাঁড়ালো।দ্রুত পায়ে হেটে বাসার দিকে যাচ্ছে সে।

মন ভালো নেই তার।ভেবেছিল আজ ছুটি নিয়ে নিবে।কিন্তু জরুরি ডাকে রেগুলার টাইমের আগেই অফিসে যেতে হচ্ছে তার।

বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই তরী দরজা খুলে দিল।অনিকের দিকে অভিমান ভরা চোখ নিয়ে একবার চেয়েই সে দৌঁড়ে রুমে চলে গেল।

অনিকের মনে হলো,মেয়েটাকে সে না চাইতেও কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।মেহেরের রাগ ওর উপর তো আমি দেখাতে পারি না।

সে কখনোই তরীকে অন্য নজরে দেখেনি আর তার মনে হয়না যে তরী তাকে ভালো বন্ধু আর বোনের জামাই ছাড়া আর কিছু ভাবে।
তার কাছে মনে হলো,মেহেরের এই অযৌক্তিক সন্দেহ একদম ভিত্তিহীন।

যাইহোক,অফিস থেকে এসে তরীর রাগ কিভাবে ভাঙানো যায় দেখা যাবে।এখন হাতে সময় নেই।

দ্রুত রুমে ঢুকে যায় সে।

মেহের ঘুমিয়ে আছে।ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো অনিক।কতটা নিষ্পাপ লাগছে মেহেরকে!পুতুলের মতো এই মেয়েটার গায়ে আমি হাত তুলেছি গতরাতে!ছিঃ! নিজেকে নিজের ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।

একটু পরেই কাল রাতের মেহেরীমার কথাগুলো ফ্ল্যাশব্যাকের মতো মনে পড়ে গেল তার।সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিল সে।
এই নিষ্পাপ মেয়েটাই কালরাতে আমাকে কতই না অপবাদ দিল।

রাগে অনিকের মাথা আবার ঝিমঝিম করতে শুরু করলো।

সে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে ৫ মিনিটের মধ্যে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।

এদিকে ঘুমটা প্রায় লেগেই এসেছিল আমার । ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে পুরোপুরি সজাগ হয়ে গেলাম।কিন্তু চোখ খুললাম না।চোখ খুললেই হয়তো ওর চোখাচোখি হতে হবে।

আচ্ছা চোখ খুললে ওর চোখে আমি কি দেখতে পাবো!
আমার প্রতি ঘৃণা নাকি আমাকে আঘাত করার জন্য অনুশোচনা! নাকি ধোঁকাবাজির ঝিলিক!

থাক এর চেয়ে চোখ বন্ধ করে থাকাই ভালো।

বেশ কিছুক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে,একটুখানি চোখ খুলে দেখলাম,অনিক ওয়ারড্রবের সব কাপড়চোপড় এলোমেলো করে কিছু একটা খুঁজছে।

কিছুক্ষণ পর চিৎকার করে উঠলো,

–আমার সাদা শার্ট কই?মিটিং আ্যটেন্ড করতে হবে আমার।
ঘরটাতে কেন কিছুই ঠিকমতো পাওয়া যায় না!শার্ট কি খাওয়ার জিনিস যে খেয়ে একদম উধাও হয়ে যাবে!

আমি এপাশ থেকে ফিরে ঐপাশ হলাম শুধুমাত্র কিন্তু উঠলাম না।
অনিকের এতো জোরে চিল্লানির শব্দেও যদি আমি একইভাবে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকি,তাহলে ও নির্ঘাত বুঝে যাবে যে আমি জেগেই আছি।আর ইচ্ছে করে ঘুমের ভান ধরে আছি।
তাই একটু আড়মোড়া দিলাম।

কিছুসময় পর আবার একটু চোখ খুলে দেখলাম,ও আলমারীর সব শার্ট চেক করছে আর ছুড়ে ছুড়ে ফেলছে ফ্লোরে।

মনে মনে ভাবছি আচ্ছা,ওর শার্ট না পাওয়ার কারণ কি?

ওর অফিসে পরে যাওয়ার সবগুলো শার্টই তো আমি হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখি।
তাহলে তো সাদা শার্ট ওর চোখের সামনেই থাকার কথা।বিশেষ করে সাদা শার্টটা,যেটা ওদের অফিসের মিটিংয়ে পরে যেতে হয় সবসময়।সেটা সবচেয়ে সামনেই রাখি।
কিন্তু ও পাচ্ছে না কেন?

মনে পড়লো গতকাল আমি ওর অন্যান্য শার্টের সাথে সাদা শার্টটাও ধুয়ে ছাদে শুকাতে দিয়েছিলাম।
কাল বিকালে তো আমি ঘুমিয়েছিলাম।ছাদ থেকে নিশ্চয়ই তরী জামাকাপড় এনেছে।

আবারও একটু চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম,কালকের ধোয়া ২/১ টা শার্ট দেখা যাচ্ছে ফ্লোরে।
অন্যসব শার্ট থাকলে সাদা শার্টটা গেল কোথায়?ছাদেই ভুলে ফেলে রেখে আসেনি তো।
পরে একবার গিয়ে দেখতে হবে।

সাদা শার্ট না পেয়ে কিছুক্ষণ বেশ চিল্লাচিল্লি করে,অবশেষে হালকা আকাশী রঙের একটা শার্ট পরে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো অনিক।

অনিক চলে যেতেই আমি উঠে এলোমেলো সব জামাকাপড় গুছাতে লাগলাম।

————

সন্ধ্যার একটু আগে আগে পড়ন্ত বিকালে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আছি।

সকালে সেই ঘুমিয়ে থাকতে দেখার পর তরীর সাথে আজ সারাদিনে আর দেখা হয়নি।আমার বাসায়,আমারই চোখের সামনেই দরজা আটকে রাখে সারাক্ষণ ও।

দুইপাশে দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে রেলিঙের উপর ভর করে, আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। আর ভাবছি কাল রাতের ঘটনা।
অনিক এতো রিয়েক্ট করলো কেন?ওর এক্সপ্রেশন দেখে তো মনে হচ্ছিল আমিই ভুল আর ও সঠিক।

ইশশ,যদি আমিই ভুল হতাম!আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শোকরিয়া গুজার করতাম।

কিন্তু আমি জানি,আমি যা বলেছি আর যা দেখেছি তার কোথাও কোনো ভুল নেই।
হয়তো ধরা পরে যাওয়ার পর অনিকের গলার স্বর চড়া হয়ে গেছে। কথায় আছে না,চোরের মার বড় গলা!এরকমই আর কি।

বুকের ভিতরটা কষ্টে হুহু করে উঠলো।

–আপুউউউ

তরীর ঝাঁঝালো কন্ঠের ডাক শুনে,ফিরে তাকালাম।
কেমন কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটা আমার দিকে।আশ্চর্য তো!

আমি নিস্প্রভ কন্ঠে উত্তর দিলাম,

–বলো।

–তুমি কাল রাতে অনিক জিজুর সাথে কি করেছো?জিজু সারারাত বাহিরে কেন ছিল?সকালে ফিরেছে লাল টকটকে চোখ নিয়ে।
তোমার সাহস হয় কি করে জিজুকে কষ্ট দেওয়ার?

একে তো ওর কথা বলার ভঙ্গি আমাকে বিস্মিত করে দিচ্ছিল আবার ওর শেষের কথাটা শুনে এবার আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল।

–এই মেয়ে,তোমার সমস্যা কি হা?আমার স্বামীর সাথে আমি যা খুশি করবো।তুমি কে কথা বলার?
২ দিন হয়নি আমার সংসারে এসে আবার আমাকে চোখ রাঙাচ্ছো।
আমার আর অনিকের ব্যাপারে তুমি মাথা ঘামাবে না কখনো।
মেহমান, মেহমানের মতো থাকবা।

–তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো!

–তুমি এই কথাগুলো শোনার যোগ্য,বুঝছো?

–মেহেরীমা আপু,তুমি আমার ভালো দিক দেখছো;খারাপ দিক কিন্তু দেখোনি এখনো।আমি চাইলেই…

–চুপ!একদম চুপ!তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না আর আমি।বেরিয়ে যাও এই রুম থেকে।বেয়াদব মেয়ে,কাল সকালেই আমার বাসা তুমি ছেড়ে দিবা।
এটা আমার অর্ডার।

–হাহাহা।তুমি আমাকে কিভাবে এই বাসা থেকে তাড়াও সেটা আমি দেখে ছাড়বো।
শুধু কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করো।তুমি নিজে এসে আমার কাছে স্যরি বলবে মিসেস মেহেরীমা অনিক।

তীক্ষ্ণ সুরে কথাগুলো বলেই ধুপধাপ করে চলে গেল তরী।

তরীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে দাঁতে দাঁত পিশছি আমি।কানটা এখনো ঝাঁ ঝাঁ করছে ওর কথাগুলো শুনে।

আমি খাল কেটে কুমির এনেছি তাহলে আমার বাসায়।যার উপকার করলাম আজ সে-ই আমার প্রতিদন্ধী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু একটা ব্যাপার আমার খটকা লাগছে,ও বললো সকালে আমি নিজে গিয়ে নাকি ওর কাছে ক্ষমা চাইবো!
কিন্তু কেন চাইবো?কি করবে ও?আসলেই কি কিছু করবে নাকি আমাকে এমনি শাসিয়ে গেল!

———–

রাত-১১টা
অনিকের কোনো খবর নেই।
সাধারণত রাত ৯টার মধ্যেই চলে আসে ও বাসায়।
আজ কেন দেরী করছে ও?

রাত-১২টা
দিব না দিব না করেও অনিকের নাম্বারে একটা কল দিউএ দিলাম।
ফোন বন্ধ পেলাম।

সাথেই সাথেই ডায়েরীটা বের করে ওর অফিসের নাম্বারটা খুঁজে কল করলাম।
অনেকবার রিং হলো,কেউ রিসিভ করছে না।
এতো রাতে কেউ অফিসে থাকার কথাও না যে রিসিভ করবে!তবুও একটু পরপর কল দিয়ে যাচ্ছি।

রাত -১টা
অনিকের খবর নেই।
চিন্তায় আমার গলা শুকিয়ে এলো।ডাইনিং এ পানি খেতে গিয়ে চোখ পড়লো তরীর রুমের দিকে,ওর রুমের দরজা খোলা।এতো রাতে ওর রুমের দরজা খোলা থাকবে কেন?

আমি হাত থেকে পানির গ্লাসটা টেবিলের উপর নামিয়ে রেখে,তরীর রুমের দিকে ধীর পায়ে শব্দ না করে চুপি চুপি এগুতে লাগলাম।

দরজার কাছাকাছি গিয়ে ওর রুমে উঁকি দিলাম…..।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here