আড়ালে_ভালোবাসি পর্ব ২৭+২৮

#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_২৭||

আরহান ছুটে গিয়ে নিশাতকে বলে

_”কি হইছে এভাবে চিৎকার করছো কেনো ?

নিশাত চোখ বন্ধ রেখেই অস্থির কণ্ঠে বলে

_”এইসব কিসের জন্য ?আমি ঠিক আছে তো।প্লীজ এটা খুলো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।জ্বলছে অনেক প্লীজ

আরহান দেখে স্যালাইন প্রায় শেষের দিকে।আরহান জয়ের দিকে তাকিয়ে বলে

_”সামান্য একটা স্যালাইন এর ব্যাথা সহ্য করতে পারছ না।এই মেয়ে নাকি সারাদিন আমার সাথে ঝগড়া করে।

ঠাট্টা করে বললেও নিশাত সেদিন কান না দিয়ে রেগে বলে

_”এতো বকবক না করে খুললে তো হয়।তাড়াতাড়ি খুলো!আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমি কিন্ত টান দেবো

নিশাত অন্য হাত এগিয়ে আনতে দেখে আরহান নিশাতের কাছে গিয়ে হাত ধরে বলে

_”আর একটু।প্রায় শেষ।একটু কষ্ট করো

নিশাত চোখ বন্ধ করে দাতে দাত চেপে সহ্য করে।নিশাতের চোখের কর্নিশ বেয়ে পানি পড়ছে।আরহান ঠোঁট দিয়ে সেটা সুষে নেয়।

আরহানের ছোঁয়া পেয়ে নিশাত কিছুটা ঠান্ডা হয়।জয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে

_”আমি বাইরে আছি ইউ গাইস ক্যারি অন!

জয় যেতেই আরহান নিশাতের পেটের কাছে বসে।এক হাত দিয়ে নিশাতের হাত শক্ত করে ধরে তো অন্য হাত দিয়ে পেটের কাপড় উঠিয়ে সেখানে ভালোবাসা দেয়।

নিশাত ফট করে চোখ খুলে ।দুইজনের চোখাচোখি হয়ে যায়।নিশাত লজ্জায় নিজের চোখ সরিয়ে নেয়।
আরহান নিশাতের হাত ছেড়ে উঠে দাড়ায়।

নিশাত বুঝতে পারছে আরহানের অনেক অভিমান হয়েছে।নিশাত করুন চোখে তাকিয়ে আছে।আরহান একবার তাকিয়ে সোফায় বসতে গেলে নিশাত চিৎকার করে

_”আহহহহহহ

আরহান ছুটে এসে বলে আবার কি হলো?নিশাত কি বলবে বুঝতে না পেরে বলে

_”বেবি ডাকছে তোমায়?

আরহান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে

_”বেবি ডাকলো কি করে?

নিশাত অসহায় মুখ করে বলে

_”ডেকেছে তো আমি মা সেইজন্য আমি বুঝতে পারি।কান পেতে শুনো ডাকবে

আরহান তাচ্ছিল্যের শুরে বলে

_”কেমন মা যে নিজের সন্তান কে

বাকিটা বলার আগেই নিশাত আবার বলে

_”দেখো সত্যি ডাকছে

আরহান এবার হাটু গেড়ে বসে নিশাতের পেতে কান দেয়। নিশাত আরহানের মাথা চেপে বলে

_”কিহলো কিছু অনুভব করছো?

আরহান পেটে চুমু দিয়ে বলে

_”আর কিছু দিন সোনামনি তারপর তুমি এই পৃথিবীতে আসলে তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো।যেখানে তুমি আর আমি থাকবো

নিশাতের মুখ ছোট হয়ে আসে চোখ ছলছল করছে

_”আমি কি করে ওকে মানাবো?অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।আমি নিজেও জানিনা কি করে নিজের সন্তান কে মেরে ফেলতে চাইলাম।অনেক বড় ভুল করছি যার সন্তানের মা হতে যাচ্ছি তাকে কখনো বুঝলাম না।সংসার তো করেছি কিন্ত বুঝতে শিখিনি।যেইভাবে হোক আমাকে ওর অভিমান ভাঙাতে হবে।এক পাহাড় সমান অভিমান এক বুক ভালোবাসা দিয়ে ভাঙাবো।প্লীজ আল্লাহ পাশে থেকো আর এতদিন ভুল করার জন্য মাপ করো।আজ আমি নফল নামাজ পড়ে দেবো প্রমিজ (মনে মনে)

নিশাত মনে মনে ভাবছে আরহানের চুটকি বাজাতে হুশ ফিরে ।

আরহান ভ্রু কুচকে বলে

_”কি এত ভাবছো?কখন থেকে ডাকছি।শুনো তোমার যা হয় হোক কিন্ত আমার বাচ্চার কিছু হলে তোমাকে ছাড়বো না।ডক্টর তোমাকে টেনশন ফ্রি থাকতে বলছে আর তুমি রাজ্যের সব চিন্তা নিয়ে বসে থাকো।মনে হয় প্রধামন্ত্রী তুমি ।

_”আমার কিছু তোমার সত্যি কিছু যায় আসে না?

নিশাতের কথায় আরহানের বুকে ব্যাথা শুরু করে

_”তোমার কিছু হলে আমি বাঁচতে পারব না।অনেক কিছু হারিয়েছি তোমাকে হারাতে চাই না।(মনেমনে)

_”কিহলো কোথায় হারিয়ে গেলে?কিছু বলছি!

_”প্রশ্নটা ছোট কিন্ত উত্তর আমার কাছে নেই।যেদিন আমাকে বুঝতে পারবে সেদিন এর উত্তর ও পেয়ে যাবে।

আরহান চলে যেতে গেলে নিশাত বলে

_”আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।আমার কিছু হলে তোমার কষ্ট হবে।তুমি আমার উপর রাগ করে আছো আর রাগ অভিমান আসে ভালোবাসা অধিকারবোধ থেকে।

_”কিসের ভালোবাসা?আমার নাম সহ্য করতে পারতে না সেটাকে ভালোবাসা বলছো।জয় কত বার তোমাকে আমার কথা বলতে চেষ্টা করছে কিন্ত প্রতিবারই তুমি থাক বাদ দাও রাতে কি খাবে ?এখন থেকে বেশি করে খেতে হবে সাথে ওষুধ তো আছেই

_”সে তো খাবোই কিন্ত এটা ত খুলো

আরহান এসে স্যালাইন খুলে দিতে নিশাত হাফ ছেড়ে বাঁচে। আরহান চলে যেতে নিশাত আবার বলে

_”আরে কই যাও?আমাকে ওয়াশরুমে দিয়ে আসো ওযু করে নামাজ পড়বো।

আরহান তাকাতেই নিশাত হাত বাড়িয়ে দেয়।আরহান কিছু না বলে নিশাত কে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে যায়।

নিশাত ওযু করে আবার আরহান কোলে করে আসে।

আরহান বেরিয়ে গেলে নিশাত নামাজ পড়ে আরহানের ফোন নিয়ে লক খুলে। লক খুলতেই ওয়ালপেপার এ নিশাত আর আরহানের কাপল পিক।নিশাত আলতো করে ছুয়ে গ্যালারি তে যেতেই
সেখানে শুধু নিশাতের পিক ।

_”এত ভালোবাসেন অথচ আমি

আরহান নিচে এসে দেখে জয় বসে গেম খেলছে ।আরহান বলে

_”রাতে কি খাবি ?

জয় না তাকিয়ে বলে

_”কি প্ল্যান করলি?আমি বলি কি তুই থাক আমি কাল সকালে যাই।ওখানে কি হচ্ছে সব আপডেট আমি তোকে দিতে থাকবো।

আরহান রান্না ঘরে যেতে যেতে বলে

_”সবজি কাটতে একটু হেল্প কর তো।

_”সে করলাম।তাহলে কাল আমি যাচ্ছি।

_”নো মিনস নো।কাল আমি যাবো তুই টিকিট কেটে রাখ।

জয় অবাক হয়ে বলে

_”নিশাতের শরীর ভালো না।ওকে তোর দরকার।তুই এখন গেলে ভালো হবে না আর ওখানে যা খুশি ঘটতে পারে।

আরহান নিজের কাজে মনোযোগ নিয়ে বলে।

_”আমি না থাকলে তুই নিশাতের খেয়াল খুব ভালো করে রাখতে পারবি সেটা আমি জানি।সব ভেবে চিনতে বলছি কাল আমি যাবো আর এই নিয়ে কোনো কথা না তুই টিকিট বুক কর

_”কিন্ত!

_”বললাম তো

জয় আর কিছু বলে না ।জানে বলে কোনো লাভ নেই।এই ছেলে নিশাতের ছাড়া কারোর কথা শুনে না।

রান্না শেষ করে আরহান ওয়াশরুমে যায়। নিশাত ঐভাবে বসে আছে ।

উঠে আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকে।চুল গুলো আঠা হয়ে গেছে।মুখ শুকিয়ে গেছে ।আয়নায় নিজের নিজেকে চিনতে পারছে না ।

ওয়াশরুমে দরজা খুলার আওয়াজে নিশাত সেদিকে তাকিয়ে দেখে ।আরহান একটা তোয়ালে পড়ে চুল ঝাকাতে ঝাকাতে আসছে।

আরহান যত এগিয়ে আসছে নিশাতের হার্ট বিট তত বাড়ছে হটাৎ নিশাতের চোখ যায় আরহানের হাতের ডান পাশে ক্ষতর দিকে ।

আরহান নিশাতের পাশ কাটিয়ে আয়নায় দাড়াতেই নিশাত নিজের দিকে ঘুরিয়ে ক্ষত টা স্পর্শ করে বলে

_”এটা কিসের ক্ষত?আগে তো কখনো দেখিনি।এটা তো মনে হচ্ছে বেশি দিনের না কিসের ক্ষত এটা?

নিশাতের কথা আরহান সরে এসে শার্ট পড়তে নিলে নিশাত বাধা দেয়।

_”কিহলো আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।কিভাবে হলো?এটা তো অনেক গভীর ক্ষত

আরহান সোজাসাপ্টা উত্তর দেয়

_”সেটা তোমার না জানলেও চলবে।আরহান আবরার কারোর কাছে কৈফিয়ত দেয় না।

_”আচ্ছা তো আমিও মিসেস আবরার।আমার জানার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।তুমি কি বলবে?

আরহান নিশাতের চোখে চোখ রেখে বলে।

_”সেই অধিকার কি তোমার সত্যি আছে? নিজের মনের কাছে প্রশ্ন করো তো।

_”দেখো একদম কথা পাল্টানোর চেষ্টা করবে না।

_”কাউকে জবাব দেওয়ার টাইম ইচ্ছা কোনোটা আমার নেই।

কথাটা বলে আরহান বারান্দায় চলে যায়।নিশাত পিছন পিছন যেতে গেলে জয় কে দেখে থেমে যায়

_”জয় তুমি কখন আসলে ?

_”কিছুক্ষণ আগে তিনি চোখ বন্ধ করে ছিলে।

আরহান বারান্দা থেকে গেঞ্জি টাউজার পড়ে এসে বলে

_”কোথাও যেতে হবে না আজ থেকে তুই এখানে থাকবি ।চল রাতের খাবার খেয়ে নিবি ।

_”টিকিট কাটা হয়ে গেছে কাল সকাল ৮টায় বাস।

আরহান কিছু বলার আগেই নিশাত প্রশ্ন করে

_”কিসের টিকিট?আর কে কোথায় যাচ্ছে?

জয় কে কিছু বলতে না দিয়ে আরহান বলে

_”তোমার জানার দরকার নেই। পরে জানতে পারবে এখন চলো খেয়ে নিবে।

নিশাত কিছু একটা ভেবে আরহানের কানে কানে বলে

_”আমাদের হানিমুনের টিকিট?

নিশাতের কথায় আরহান হা হয়ে যায়।

_”এই মেয়ে তো আমাকে মেরে ছাড়বে।আমি এর থেকে দূরে যেতে চাইছি আর এ কি না হানিমুন নিয়ে আছে ।তবে সত্যি তো আমাদের হানিমুন হয়নি যাই হক নিজেকে ঠিক কর আরহান।এই মেয়ের মাথায় সমস্যা আছে কখন কি বলে নিজেও জানে না (মনে মনে)

_”কিহলো উত্তর দিচ্ছ না কেনো?

_”চুপ করো

নিশাত কিছু বলার আগেই আরহান কোলে তুলে নেয়। নিশাতের চোখ গুরুর মত বড়ো বড় হয়ে যায়।পিছনে জয় মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে আসছে ।

আরহানের কোনো হেলদোল নেই সে নিজের মতো হেঁটে যাচ্ছি । নিশাত কিছু বলতেও পারছে না ।

আরহান নিশাতকে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিয়ে নিজে বসে।

নিশাত শুধু খাবার নাড়াচাড়া করছে লজ্জায় মুখ তুলতে পারছে না। আরহান রেগে বলে

_”কিহলো খাচ্ছো না কেনো?

_” আমার খুদা নেই

নিশাত আস্তে করে কথাটা বলে উঠে যেতে গেলে আরহান হাত ধরে বলে

_”চুপচাপ খাও

নিশাত তবু ও নাড়াচাড়া করছে জয় বুঝতে পারে বলে

_”আরে ভাবী রিলাক্স।এত চাপ নেওয়ার কিছু নেই সব আমরা নিজেদের লোক।

আরহান নিশাতের মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজে হাতে খাইয়ে দেয়। নিশাত ও চুপচাপ খাচ্ছে ।

জয় দুঃখ করে বলে

_”আজ কেউ নেই বলে

নিশাতের কাশি উঠে যায়।

রাতে নিশাত বসে আছে ।আরহান জয়ের সাথে কথা বলে রুমে আসতেই বলে

_”ওষুধ খেয়েছো?

নিশাত মাথা নাড়ায়।আরহান শুয়ে পড়ে।নিশাত বালিশ দিয়ে মেরে বলে

_”জয়ের সামনে ওমন করলে কেনো?

আরহান অবাক হয়ে বলে

_”তুমি তো বলছিলে তাই তো

নিশাত গাল ফুলিয়ে বলে

_”আমি বলেছি রুমের ভিতর।সবার সামনে তো না। জানো না স্বামী স্ত্রীর কথা কাউকে বলতে নেই আর তুমি

নিশাত পাশে তাকিয়ে দেখে আরহান ঘুমিয়ে গেছে ।নিশাত গাল ফুলিয়ে আরহানের বুকে শুয়ে পড়ে।

_”আহহ কি শান্তি

আরহান চোখ বন্ধ করে সবটা অনুভব করছে ।

(সবাই প্রেম করছে আর আমি বসে বসে অ্যাসাইনমেন্ট করি এটা কোনো কথা।আবার নাকি স্কুল খুলবে।দীপু খালা এমন কেন করলো?আপনারা বলেন আমার মত নিরীহ মাসুম মানুষকে এত কষ্ট দেওয়ার কি দরকার ।সবার তো বিএফ জামাই করে দিচ্ছে আর আমার না বিএফ আছে ,না জামাই আর না কাজিন।ফ্যামিলি টে আমি অন পিছ 😶ভালো লাগে না । কেউ সান্তনা দাও)

সকালে
নিশাত বসে বসে আরহানের কান্ড দেখছে ।আরহান আয়নায় দাড়িয়ে রেডী হচ্ছে ।নিশাত সেই থেকে প্রশ্ন করছে কিন্ত একটার উত্তর ও পায়নি তাই চুপ করে আছে ।

আরহান রেডী হয়ে বলে।

_”বাসায় জয় থাকবে আর কাজের লোক আছে।কোনো প্রয়োজন হলে শিরীন (কাজের মেয়ে) কে বলবে ।তোমার বয়সী আর জয় মাঝে মাঝে দেখে যাবে ।সাবধানে থেকো

নিশাত এবার চিল্লিয়ে বলে

_” আমি সেই থেকে প্রশ্ন করছি একটার উত্তর ও দিলে না এখন আবার দরদ দেখাচ্ছো।লাগবে না তোমার দরদ থাকবো না আমি এখানে

বিছানা থেকে নামতে গেলে আরহান চোখ রাঙিয়ে বলে

_”আমাকে ভয়ানক কিছু করতে বাধ্য করো না।অনেক নিজের মনমতো চলছ এখন থেকে আমি যা বলব তাই শুনবে। কোথাও যাবে না এখানে থাকবে আমি যদি এসে শুনি তুমি একটা কথা ও শুননি তাহলে

নিশাত কিছু ভয় পেয়ে বলে

_”শুনবো কিন্ত কোথায় যাচ্ছো সেটা তো বলবে?

_”কাজ আছে

আরহান নিশাতের পেটে চুমু খেয়ে চলে যায়।

_”শুধু বেবি কে কিসি দিলো আমাকে দিলো না হুঁ কথা বলবো না।কিন্তু কোথায় গেলো ?

শিরীন এসে বলে

_”আফা মনি কিছু খাইবেন ?

নিশাত মাথা নাড়িয়ে না বলে ।শিরীন চলে যেতে গেলে নিশাত ডাক দেয়

_”শুনো তুমি আমার সাথে থাকবে? আমার একা একা লাগছে

_আফা আপনি বয়েন আমি আপনার জন্য দুদ নিয়ে আসি তারপর গল্প করমু

নিশাত মন খারাপ করে বসে থাকে হটাৎ কি মনে করে ফোন হাতে নিয়ে একজনকে ফোন দেয়।

ফোন ধরতেই নিশাত বলে

_”হেলো আমার সাথে কি দেখা করতে পারবে ?

……

_”ওকে তাহলে চলে আসো

নিশাত ফোন কেটে বারান্দায় দাড়ায় ।আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_২৮||

আকাশের প্রাণে চেয়ে জীবনের সব হিসাব মিলাতে ব্যাস্ত নিশাত তখনই পিছন কেউ কাধে হাত দেয়।

নিশাত পিছনে তাকিয়ে বলে

_”তাহলে আসছো আমি তো ভাবছি ভয় পেয়ে গেছো?

জয় মুচকি হেসে বলে

_”কিসের ভয়?তুমি আমার বেস্টফ্রেন্ড+ভাবী।ভয় পাবো কেনো?

_”হুম বুঝলাম।তোমাকে ডাকার কারণ কি জানো তো?

_”কেনো আবার শরীর ভালো না তাই তো?

নিশাত ভেংচি কেটে বলে

_”জি না।তুমি আরহানের সব থেকে আপনজন।আর আমার সব প্রশ্নের উত্তর একমাত্র তুমি দিতে পারবে।কোনো ভনিতা না করে সোজা কথার সোজা উত্তর দিলে খুশি হবো।

জয় হাসার চেষ্টা করে বলে

_”আমি কিছু জানিনা। জানলে তো বলবো।

_”দেখো এখন তুমি আমার দেবর হও।আর দেবরকে মারতে হাত কাপবে না।

_”আসলে আমার না একটা দরকারি কাজ পড়ে গেছে।আমি আসি কেমন

জয় চলে যেতে গেলে নিশাত বলে

_”ওহ বুঝছি তুমি চাও না আমি আর আরহান ভালো থাকি।আমাদের মধ্যে সব ভুল বুঝাবুঝি শেষ হোক।

জয় এগিয়ে এসে বলে

_”না আমি চাই আরহান ভালো থাকুক।আমার আব্বু আম্মুর পর আমি আরহান কে ভালোবাসি।ছেলেটা অনেক কষ্ট পেয়েছে তুমি প্লীজ ওকে আর কষ্ট দিও না।আমি তোমার কাছে হাত জোড় করে বলছি

_”দেবো না প্রমিজ দেবো না।কিন্ত আমি জানতে চাই।আরহানের কি হয়েছিল

জয় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে

_”সেদিন তুমি সেন্স হারানোর পর ওখানের লোক তোমার ফোনে দিয়ে আমাদের কাছে ফোন দেয়।আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখি তুমি সেন্স হারিয়ে আছো আর ওখানের লোকজন বলে আরহান পানিতে পড়ে গেছে।আমি দেরি না করে তোমাকে হসপিটালে পাঠিয়ে লোক দিয়ে আরহান কে খুঁজতে থাকি।অনেকসময় পর পেয়ে যাই ওকে হসপিটালে নিয়ে জানতে পারি ওর গুলি লেগেছে।ডান হাতে লাগার ফলে বেচে গেছে।আরহানের সেন্স ফিরার পর আমি বাড়ির সবাইকে বলতে গিয়ে জানতে পারি ঈশা মারা গেছে আর আরহান বলেছে ওকে কেউ মারার চেষ্টা করছে তাই ওর বাচার কথা যেনো কাউকে না বলি।তোমাকে বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু তুমি শুনোনি।তখন থেকে আরহান ওর বাবার ফ্ল্যাটে থাকে এই বাসার কথা কেউ জানে না।আমি আর আরহান মিলে প্রুফ খুজার চেষ্টা করছি।ঈশার খুনিকে আরহান ধরার জন্য গেছে আশা করি পেয়ে যাবো।জানিনা ওখানে কি হবে আমি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার পাশে থাকার জন্য আমায় যেতে দেয়নি।তুমি আরহান কে যেমন ভাবছো আরহান তেমন না ওর লাইফের ব্যাপারে তুমি কিছুই জানো না।আরহান যতই খারাপ হয়েছে শুধু পরিস্থিতির জন্য ওর জায়গায় যে কেউ থাকলে সুইসাইড করতো।শুধু তোমার জন্য ও ভালো হয়েছিল তোমাকে ভালোবেসে নিজের সব কিছু বদলে ফেলেছিল কিন্ত

নিশাত ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ।জয় আবার থেমে বলে

_”ওকে এখান থেকে দূরে নিয়ে যাও।জানিনা কে ওকে মারতে চেষ্টা করছে আবারও চেষ্টা করবে কি না জানিনা।ভালোবাসার অনেক জোড় তুমি চাইলে ওকে ভালোবাসা দিয়ে ভালো রাখতে পারবে।রাখবে তো ?

নিশাত মুচকি হেসে বলে

_”প্রমিজ করলাম ওকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।কফি খাবে

জয় মুচকি হেসে বলে

_”আমি বানাবো?

নিশাত দুষ্টুমি করে বলে

_”খাওয়া যাবে তো?

_”খেয়েই দেখো। আমি আসছি

নিশাত চোখের পানি মুছে ফেলে।কিছু অনুভূতি সবার আড়ালে প্রকাশ করতে ভালো লাগে।আরহান যাই হোক নিশাত কে খুব ভালোবাসে সেটা নিশাত খুব ভালো করে জেনে গেছে।

যে ছেলে নিজের সব কিছু ছেড়ে ভালোবাসার মানুষকে সাথে নিয়ে চলতে চায় সে কখনো কাউকে ঠকাতে পারে না।

_”আমি খুব বড়ো ভুল করেছি।সেই ভুলের শাস্তি কি করে পাবো তুমি তো দূরে গিয়ে বসে আছো।এত অভিমান একটু ভাঙ্গানোর সুযোগ দিলে না।

পেটে এক হাত রেখে নিশাত বিড়বিড় করে বলে

_”দেখছো তোমার আব্বু মাম্মামের উপর কত অভিমান করে আছে।আমাকে তোমাকে একা ফেলে চলে গেলো এটা কি ঠিক তুমি বলো!আসুক তারপর তুমি আর আমি মিলে ঢিসুম ঢিসুম করবো কেমন!

পিছন থেকে জয় কফি হাতে বলে

_”কার সাথে কথা বলছো?এখানে তো কেউ নেই।

নিশাত মুচকি হেসে বলে

_”কারোর দরকার নেই।আমার সোনামনি থাকলে চলবে।নালিশ করছিলাম আমার সোনামনিকে।কত বড় সাহস আমাদের একা রেখে চলে যায়।

জয় ঘাড় ঝাকিয়ে বলে

_”দেখো বাচ্চা ওর চাচ্চুর মত হবে।শান্ত, ভদ্র, কিউটের ডিব্বা!

নিশাত ভেংচি কেটে বলে

_”আহারে কত কিউট!দুই ভাই ভূতের মত দেখতে।

_”ওহ আচ্ছা তাই!এই নাও কফি খেয়ে রেডী হবে।আজ তোমাকে ডক্টরের কাছে দেখানোর কথা। আরহান বলে গিয়েছে।

নিশাত মন খারাপ করে বলে

_”কেনো?সে থাকলে কি খুব ক্ষতি হতো?সবাই এই সময় নিজের স্বামীকে কাছে চায় আর উনি অভিমান করে দূরে আছে।

_”চলে আসবে।দুই একদিনের মধ্যে।

নিশাত মন খারাপ করে পুরো কফিটা শেষ করলো। জয় আর কিছু বলল না।

জয় গাড়িতে বসে নিশাতের অপেক্ষা করছে।নিশাত বের হতে জয় একবার তাকিয়ে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয়। নিশাত গাড়িতে বসতে বসতে বলে

_”এসি অন করতে হবে না প্রাকৃতিক বাতাস ভালো।তাড়াতাড়ি চলো।একটু পর জেম লেগে যাবে।

জয় গাড়ি চালানোর আগে একবার ফোন চেক করে দেখে একটা মেসেজ আসছে।

মেসেজে লিখা..

_”গাড়ি সাবধানে চালাস আর এসি অন করতে হবে না ওর সমস্যা হয়।ডক্টর দেখিয়ে একটা নদীর পাড় নিয়ে যাস মন ভালো হয়ে যাবে।নিস পাখি নদীর পাড় খুব পছন্দ করে।

জয় মেসেজটা দেখে মুচকি হাসে।নিশাতের চোখ এড়ালো না।নিশাত আড় চোখে তাকিয়ে বলে

_”হাসছো কেনো?আমাকে কি খারাপ লাগছে?

জয় মাথা ডানে বামে নাড়িয়ে বলে

_”একদম না আমার ভাবী+বেস্ট ফ্রেন্ড কে কি খারাপ লাগতে পারে।খুব সুন্দর লাগছে।আরহান থাকলে পাগল হয়ে যেতো।

নিশাত কিছু না বলে জানলার দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকে।এই সময় আরহানকে খুব মিস করছে।

_”একটা বার কি আমাকে বলে যাওয়া যেত না?এত অভিমান!ভাঙ্গানোর ও সময় দিলেন না।(মনে মনে)

জয় একবার নিশাত কে দেখে গাড়ি চালানোর মনোযোগ দিলো।

এদিকে
আরহান মাত্র হোটেলে এসে পৌঁছাল।ফোনের টোন বেজে উঠায় ফোন হাতে নিয়ে দেখে নিশাতের ছবি।আজকে নিশাতের দিকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে।

আরহান আনমনে বলে

_”সবাই সত্যি বলে বিয়ের হবার পর আর বাচ্চা পেটে আসার পর মেয়েদের সুন্দর্য এমনি বেড়ে যায়।এই পিক দেখলে তো আমি থাকতে পারবো না।কতোটা কিউট লাগছে।সামনে থাকলে তো পাগল হয়ে যেতাম।

পাশ থেকে হোটেল বয় বলে

_”কিছু বললেন স্যার?

আরহান নিজেকে স্বাভাবিক করে শান্ত গলায় বলে

_”না কিছু না।আমার রুমটা দেখিয়ে দিলে ভালো হয় ।

_”জি স্যার

হোটেল বয় আরহান কে রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়। আরহান বেড়ে শুয়ে ফোন বের করে

_”এখনো খোঁজ নিতে হবে নাহলে অন্য কোথাও যেতে পারে।

আরহান কাউকে ফোন দেয়।

_”হুম কোথায় আছে এখন?

…..

_”আচ্ছা নজর রাখো আমি আসছি

আরহান ফোন কেটে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে

_”এখন আবার যেতে হবে।উফফ বিরক্তিকর!

একটু ফ্রেশ হয়ে আরহান বেরিয়ে যায়।

নিশাত কে ডক্টর দেখিয়ে বের হতে নিশাত বলে

_”আচ্ছা আরহান কি ফোন দেয়নি?পৌঁছে গিয়েছিল কি না একবার শুনতে পারলে ভালো হতো।

আমতা আমতা করে বলে।জয় মুচকি হেসে বলে

_”কথা বলবে?

নিশাত মাথা নাড়ায়। জয় ফোন দিতেই নিশাত অস্থির হয়ে কানে ধরে।

রিং হচ্ছে কিন্ত ধরছে না।আবার ফোন দিতেই আরহান ধরে বলে

_”জয় তোর সাথে আমি পরে কথা বলছি।ব্যাস্ত আছি রাখ

নিশাত কে কিছু বলতে না দিয়ে কেটে দেয়। নিশাত মন খারাপ করে ফোন দিয়ে দেয়।জয় বলে

_”কিহলো?

_”ব্যাস্ত আছে

নিশাত এর চোখ ছলছল করছে ।জয় বুঝতে পেরে বলে।

_”হয়তো ব্যাস্ত আছে।ফ্রী হলে ফোন করবে।চলো তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাই

নিশাত চুপ করে হাঁটতে থাকে। জয় ও যায় ।

রাতে নিশাত শুয়ে আছে সারাদিন আরহান একবারও নিশাত কে ফোন করলো না।জয়ের সাথে কথা বলছে নিশাত ফোন ধরতেই কেটে দেয়।সেই কথা মনে উঠতেই নিশাতের চোখ ভিজে আসছে।

_”এত কি অভিমান যে একটু কথা বলা যেত না।ফোন দিলেই ব্যাস্ত ব্যাস্ত।আমার কথা কি একটুও মনে পড়ে না।কি নিষ্ঠুর!তোমার এই ইগনোর আমি মেনে নিতে পারছি না।

নিশাত না পারছে হাত পা ছুরে কান্না করতে।শিরীন রুমে এসে দেখে নিশাত নিজের সাথে বকবক করছে

শিরীন দুধ টেবিলে রেখে বলে

_”আফা আপনে একলা একলা কি কন?

নিশাত চুপ করে থাকে।শিরীন বলে

_”আফা স্যার ফোন করছিলো আপনি ঠিক মত খাচ্ছেন না সেটা আমি বলে দিয়েছি।

নিশাত এখন সোজা হয়ে বলে

_”আরহান ফোন করছিলো?কখন?আমাকে তো ফোন করেনি?

_”ল্যান্ড লাইনে ফোন করছিলো।বলছে ঠিক মত খেতে নাহলে বাড়ি এসে মাথায় তুলে আছার মারবে

_”তোকে বলছে তুই খা।আমাকে যেনো কিছু বলবি না।একবার আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজনবোধ করলো না। ধুর

_”আফা দুধ খেয়ে নেন।

নিশাত তেড়ে এসে বলে

_”তুই খা।নিয়ে যা এখান থেকে।নাহলে তোকে আর এটা কে এক সাথে বাইরে ফেলে দেবো

রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিশাত কথাগুলো বলে।শিরীন বাইরে চলে যায়।

একটু পর এসে বলে

_”আফা স্যার আপনার লগে কথা বলবে।

নিশাত বিছানা থেকে নেমে বলে

_”দে

ফোন কানে ধরতেই আরহানের ঝাড়ি

_”কি সমস্যা কি তোমার?খাচ্ছো না কেনো?তোমাকে বলেছি না ঠিক মত খাবে।আমাকে আসতে হলে তোমার কপালে দুঃখ আছে।

নিশাত এবার কান্না করে বলে

_”দুঃখ তো এমনি আছেই।আপনি এমন কেনো হা?সবার সাথে কথা বলছেন আমার সাথে বললে কি হয়?নাকি এগো টে লাগছে।এত খারাপ কেনো আপনি? এই নাকি আপনি আমাকে ভালোবাসেন।আসলে সব আপনার ঢং।সবার সামনে দেখান আমাকে ভালোবাসেন কিন্ত আসলে সব মিথ্যে।অসহ্য লোক।বাজে লোক।আমাকে একা রেখে গেছে।এখন আবার খোজ খবর ও নেয় না।আমাকে তো একবার এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দিবেন।আরে সব সম্পর্কে তো ঝগড়া হয় তাই বলে কি দূরে যেতে হবে।এই সত্যি বলেন তো ওখানে কে আছে?আপনি কার সাথে লোটরপটর করতে গেছেন হুম?

একদমে কথাগুলো বলে ফেলে নিশাত।আরহান বড়ো একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে

_”হয়ে গেছে?নাকি এখনো বাকি আছে?হয়ে গেলে এখন পানির গ্লাস নিয়ে পানি খাও। যাও।

নিশাত এবার আরো রেগে যায়

_”আপনার কাছে আমার কথার কোনো দাম নেই?বুঝছি অন্য কারোর চক্করে পড়ছেন তাই না ?

_”shut up। চুপচাপ দুধ খেয়ে নাও।কথার যেনো নড়চড় না হয়।আমার বেবির কিছু হলে কিন্ত তোমার খবর আছে ।

_”শুধু বেবি আর বেবি।ওকে ফাইন বেবি থাকবে কিন্ত আমি থাকবো না তখন বুঝবে কেমন লাগে।হাজার বার কান্না করলে ও আসবো না।

নিশাত কান্না করতে করতে কথাগুলো বলে।আরহান এবার রেগে বলে

_”আমার মাথা গরম না করে যা বলছি করো।আমি আসলে একটা মার ও মাটিতে পড়বে না।

নিশাত কিছু বলে না।আরহান আবার বলে

_”যাও দুধ খেয়ে নাও।আর লক্ষ্মী মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পরো।

নিশাত ফোন কেটে দিতে দেখে শিরীন দুধ হাতে দাড়িয়ে আছে। নিশাত আরহান কে বকতে বকতে খেয়ে নেয়।

দুইদিন পর
নিশাত ছাদে দোলনায় বসে বসে আরহানের সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা মনে করছে।এই দুইদিন একবারও আরহান নিশাতের সাথে কথা বলে নি।নিশাত কতবার ফোন দিয়েছে কিন্ত আরহান এড়িয়ে গেছে ।

দোলনায় বসে নিরবে চোখের পানি ফেলে তখনই নিচ থেকে শিরিনের ডাক পড়ে।নিশাত চোখের পানি মুছে সিড়ি দিয়ে নামে।

আনমনে হাঁটতে গিয়ে পড়ে যেতে নিলে সিড়ি ধরে নিজেকে সামলে নেয়।বুকে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে আর একটু হলে কি হতো হটাৎ গালে সজোরে কিছু পড়ায় চোখ খুলে নিশাত।

চলবে

( ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here