আবছায়া
writer::প্রিয়া
২১
ইনায়া বাসায় যেতেই সবাই অবাক। দু দিন আগে গিয়ে আবার ফিরে আসলো।
-ইনায়া কি হলো তুই।
‘মা,বাবা বাসায় আছেন।
-হ্যা কিন্তু কি হয়েছে মা।
‘ভাইয়া আর বাবা কে ডাক দাও।
ইনায়ার মা কিছুই বুঝলেন না তাড়াহুড়ো করে রুমে গিয়ে ওর ভাই আর বাবাকে ডেকে আনলেন।
আইজান গাড়ি রেখে ভিতরে আসলো।
ড্রইংরুমে ওদের দুজন কে দেখে সবাই অবাক।
বাবা-কি রে কিছু হয়েছে।
-বাবা আমি সেদিন আনায়ার বিয়ের কথা বলছিলাল না।
‘হ্যা আবেগের সাথে।
-কালই বিয়েটা হবে।
ভাইয়া -এতো তাড়াহুড়ো কেনো বুঝলাম না। ধীরস্থির ভাবে হোক।
-ভাইয়া আবেগ আর ওর মা,বাবা চাইছেন কাল বিয়েটা হোক।
বাবা-আমি আবেগের বাবার সাথে কথা বলতে চাই।
ইনায়া আবেগের বাবার কাছে ফোন দিলো।উনি রিসিভ করতে ইনায়া ওর বাবার হাতে ফোন দেয়।
-আসসালামু আলাইকুম ভাই সাহেব।আমি ইনায়ার বাবা।
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।বিয়াই বলেন ভাইসাহেব।
-ভাইসাহেব এতো জলদি বিয়ের আয়োজন করতে চাইছেন কেনো।
‘আসলে আবেগ ১৫দিন পর আবার বিদেশে যাবে ব্যবসার কাজে ফিরতে বছর চলে যাবে।একা বাসায় বুড়ো-বুড়ি থাকবো তাই ভাবলাম বউ নিয়ে আসি।
-ওহ আচ্ছা আচ্ছা ভাইসাহেব।তাহলে কাল জোহরের পর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হউক।
– আলহামদুলিল্লাহ বেয়াই।
উনি ফোন রেখে ইকরামের উদ্দেশ্যে বললেন।
-আবেগ বিদেশে যাবে ব্যবসার কাজে তাই বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছে ওর পরিবার।
তোরা তিন ভাই বোন মিলে বিয়ের সবকিছু করে নে। কালই বিয়ে হবে।
আড়ালে থেকে সব শুনে আনায়া খুশিতে নাচতে থাকে।পিছন থেকে ইনায়া ওর কান টেনে ধরে।
-এই মেয়ে বিয়ের জন্য এতো পাগল কেনো।
‘আপু লাগছে তো।
-এতো যে ভালোবাসিস কখনো বুঝতে দিস নি তো।
‘ভয় করতো আপু।
-যা রেডি হয়ে আয় তোকে নিয়ে শপিং করতে যাবো।
আনায়া রেডি হতেই আইজান,ইনায়া তিনজন মিলে শপিং করতে যায়।
এদিকে আবেগের বিয়ে শুনে দরজা বন্ধ করে কান্না করছে অরিত্রি।
আবেগ নিজেও কাঁদছে যাকে ভালোই বাসে না তাকে নিয়ে সারাজীবন কি করে কাটাবে।
রাতে সবাই মিলে শপিং শেষ করে বাসায় আসে।
একটু হলুদ ছুঁইয়ে মেহেদী পড়িয়ে দেয়া হয় আনায়ার হাতে।
ইনায়া মস্ত ব্যস্ত আইজানের দিকে খেয়ালই নেই।বেচারা আইজান বউয়ের পিছন পিছন হাটছে এ নিয়ে হাসাহাসি করছে ইনায়ার ভাবি।
রাত প্রায় দুটো।আবেগ ফোন করলো অরিত্রি কে।
অরিত্রি দেখে ও ফোন রিসিভ করলো না।
আবার ফোন দিলো এবার ও রিসিভ করলো না।
আবেগের রাগে মাথা গিজগিজ করছে অরিত্রি কেনো ফোন রিসিভ করছে না।
কয়েকবার দেয়ারপর যখন অরিত্রি সুইচড অফ করে দিলো তখনি আবেগের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।
সোজা বাইক নিয়ে ছুটে গেলো অরিত্রির বাসায়।
বাসার দারোয়ান নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে গেইট বেয়ে ভিতরে ডুকে অরিত্রির জানালা টোকা দিচ্ছে।
এতো রাতে কে হতে পারে ভেবে অরিত্রি ভয় করছে।
বাইরে থেকে ফিসফিস শুনে জানালায় কান এগিয়ে দিতেই শুনতে পায়।
-আমি জানি তুই ঘুমাস নি তাড়াতাড়ি জানালা খুলে না হয় চিৎকার করবো।
আবেগের কন্ঠ শুনে অরিত্রি দ্রুত জানালা খুলে।
-এতো রাতে কেনো সিনক্রিয়েট করছিস।কাল তোর বিয়ে যা বাসায় যা।
‘বাইরে আয়।
-আমি পারবো না।
‘তাহলে কি আমি আসবো।
-কি আজব এরকম করছিস কেনো।প্লিজ তোর পায়ে ধরি যা।
‘ফোন রিসিভ করলে আমি আসতাম না।এসে যখন গেছি তাহলে তোকে বাইরে আসতে বলছি আয়।
-আমি কি তোর কেনা গোলাম তোর কথায় কেনো সবকিছু হবে।
‘আসবি না ফাইন আমি আসছি।
-উফফ দাঁড়া আসছি।
আবেগের জেদের কাছে বরাবরই হার মানতে হয় অরিত্রি কে।
কোনোমতে বাইরে আসে অরিত্রি।
-কি হয়েছে কি হয়েছে তোর হ্যা কি ভেবেছিস আমায় যখন যা বলবি সব মানতে হবে কেনো হোয়াই।
‘তুই জানিস তুই ছাড়া আমার আপন কেউ নেই।আমার সব কষ্ট তুই বুঝিস।
-আমার কষ্ট বুঝিস তুই আমার ফিলিংস বুঝিস তুই।কিচ্ছু বুঝিস না তুই।
‘কি বলছিস আরু। তোর কি কষ্ট কখনো বলিস নি তো।
-কেনো বলতে হবে আমায় হা কেনো বলতে হবে।তুই না বললে আমি সবকিছু বুঝে যাই।আমার বেলা কেনো বুঝবি না।
‘আমি তো বোকাসোকা সেটা জানিস তাহলে।
-আবেগ তুই যা আমার চোখের সামনে থেকে যা।কাল তোর বিয়ে যা গিয়ে বিয়ে কর।
‘আমি তো বিয়ে করবো না।
-মানে।
‘আমি এখন পালিয়ে যাবো।
-হোয়াট ননসেন্স।
খেলা পেয়েছিস মেয়েটা তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে।
‘ওই মেয়ে একটা বাজে মেয়ে।তুই কি যাস সারাজীবন একটা বাজে মেয়ের সাথে জীবন কাটাতে।
-আগে ভাবিস নি কেনো।এখন এসব বলে কি লাভ।দেখ আমি কিন্তু তোকে হেল্প করতে পারবো না।
‘হেল্প করতে হবে না শুধু তুই আমার সাথে চল পালিয়ে যায়। কিছুদিন বাইরে ঘুরে আসি।
-ইডিয়েট মানুষ হবে কবে তুই।সবকিছুতে আমাকে লাগে কেনো তোর।
‘তোকে ছাড়া আমার ভালো লাগেনা সময় কাটে না তুই আমার অভ্যেস হয়ে গেছিস।কেনো তখন একা ছাড়িস নি পাশে ছিলি কেনো।অসময়ে যখন পাশে ছিলি। তাহলে তোকে সারাজীবন পাশে চাই।
যাবি না হলে তুলে নিয়ে যাবো।
অরিত্রি ঘোরের মধ্যে আছে।
**কনে সেজে বসে আছে আনায়া মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগছে। ভালোবাসার মানুষকে পাশে পাবে চোখেমুখে ওর কি যে খুশি।
দুপুর পেড়িয়ে যাচ্ছে এরমধ্যেই অনেক আত্মীয় স্বজন এসে গেছে।
বর আসছে না ইনায়া অনেকবার ফোন দিচ্ছে আবেগের ফোন বন্ধ।
তিনটে হয়ে গেছে বিয়ে বাড়ি যেনো থমকে গেছে। আবেগের বাবা ফোন রিসিভ করে বলেন। আবেগ বিয়ে করবে না চিঠি লিখে চলে গেছে।
ইনায়া ফ্লোরে বসে পড়ে।
আনায়া- তুই আমায় কখনো দেখতে পারতি না আপু।শেষ পর্যন্ত আমার জীবন নিয়ে এরকম করলি।এই জীবন রাখবো না।
আনায়া ছুটে গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।
সবাই দরজা ধাক্কাধাক্কি করছে। কিছু পড়ার শব্দ আসে রুম থেকে। সাথে ইনায়ার বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।উনার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
আবছায়া
writer::প্রিয়া
২২
হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়িয়ে কান্না করেই যাচ্ছে ইনায়া।
দুইটা কেবিনে ওর দুজন প্রিয় মানুষ একজন বাবা অন্যজন বোন।
ইনায়ার বাবার স্ট্রোক হয় আর আনায়া তেলাপোকা মারার ওষুধ খেয়ে নেয় দরজা ভেঙে ওকে বাইরে আনা হয়।
এই সমস্ত কিছুর জন্য ইনায়ার দিকে আঙ্গুল উঠে।
শুধু মা ছাড়া বাড়ির প্রত্যেকটা লোক ইনায়াকে কথা শুনাচ্ছে।তা ও বেহায়ার মতো হাসপাতালে কামড় খেয়ে বসে আছে।
আইজান ইনায়ার মাথায় হাত রাখে।
-বাবা আনায়া ঠিক আছে এতো চিন্তা করো না প্লিজ।
‘আমি খুব খারাপ আইজান আমি খুব খারাপ আমার ভুলে এই গুলো হলো।
-আবেগ তো নিজেই রাজি হয়েছিলো।
নিজই বিয়ের তারিখ দিলো।
‘কেনো এসব করলো আমার ছোট্র বোনটা ওকে কত ভালোবাসতো।
আইজান আর কিছু না বলে ইনায়াকে বুকের সাথে আগলে রাখলো।
রাতের বাসে করে অরিত্রি আর আবেগ ছুটে চলছে কক্সবাজার।
অরিত্রি হঠাৎ খেয়াল করলো ওদের পাশের সীটে দীপক বসা।
অরিত্রি দীপককে দেখে ভয় পেয়ে যায়।না দেখার ভান করে জানালার দিকে তাকিয়ে তাকে।
দীপক এক ধ্যানে অরিত্রির দিকে তাকিয়ে থাকে।
শান্ত পরিবেশে দীপক হুট করে গলা ছেড়ে গান ধরলো।
দুনিয়া তোর সঙ্গেতে নাই
মন তোরে কেমনে বুঝাই
একলা হাঁটো রে মন
একলা হাটো রে
মনরে মন রে
তুই বড় বোকা
নিজের বুঝ বুঝলি না
খাইয়া গেলি ধোঁকা
মনরে ওরে মন
তুই বড় বোকা
নিজের বুঝ বুঝলি না
খাইয়া গেলি ধোঁকা
এ কেমন ভালোবাসা
ভিটে মাটি ছাড়ো
এখানে তরি বেঁধে
আছে পাগল পাড়া
যে ভুলিয়ে দেবে
বলি বলি বলি তারে
তারে বুঝা যায় না
সেও নয় বোকা
মনরে মন রে
তুই বড় বোকা
নিজের বুঝ বুঝলি না
খাইয়া গেলি ধোঁকা
দীপকের গান শেষ হতেই হাত তালি শুরু হলো।
আবেগ অরিত্রির দিকে তাকালো।
-অরু দীপক এখানে কি করে।
‘সেটাই বুঝতে পারছি না।কেমন করে তাকাচ্ছে দেখ।
-বাদ দে তুই তাকাস না।
পুরো রাস্তা দীপক তাকিয়ে ছিলো অরিত্রির দিকে।
সকালে বাস কক্সবাজার এসে থামলো।
ওরা সি,এন,জি করে একটা হোটেলে আসলো।ঠিক তার পাশের হোটেলে দীপক উঠলো।
দুজনেই টায়ার্ড থাকায় ঘুমানো নিয়ে সমস্যা বাঁধলো।
-অরু প্লিজ তুই কষ্ট করে সোফায় ঘুমিয়ে নে।
‘পারবো না আমি অনেক টায়ার্ড আমাকে বিছানায় রিলাক্স করে ঘুমাতে হবে।
-প্লিজ অরু প্লিজ সারাজীবন তো সেক্রিফাইস করলি আমার জন্য এবার আরেকটু কর।
‘কিছুতেই না।
বলেই বিছানায় গিয়ে শুইয়ে পড়লো অরিত্রি।আবেগ বেচারা উপায় না পেয়ে সোফায় ঘুমিয়ে রইলো।
**আনায়া কথা বলছে সবাই ওর সাথে দেখা করে।ইনায়া ওর রুমে যেতেই মুখ ফিরিয়ে নেয় আনায়া।
বড় ভাবির উদ্দেশ্যে বলতে থাকে ওকে চলে যেতে বলো। ও যদি এখান থেকে না যায় তাহলে আমি সত্যি মরে যাবো।
সবাই ইনায়াকে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিলো।
বাবাকে দেখার জন্য উনার কেবিনের দিকে যেতেই ওর মা তেড়ে আসলেন।
‘এতোক্ষণ তোকে কিছু বলিনি কিন্তু এবার বলবো প্লিজ মাফ কর আমাদের আমার রঙ্গিন শাড়ি খুলে সাদা শাড়ি পড়া আমায় দেখতে যাস।
-মা চুপ করো।
‘আমাদের ভুল হয়েছিলো তোকে বাড়িতে নিয়ে আসা ত্যাগ করেছিলাম কেনো যে আবার বুকে জড়াতে গেলাম।পাপের শাস্তি পেতে হচ্ছে।
ইনায়া ধুপ করে মায়ের পায়ের কাছে বসে পড়লো।
-আমি ইচ্ছে করে করিনি মা আমি তো জানতাম আনায়া আবেগ দুজন দুজনকে ভালোবাসে। আমি জেনেশুনে আমার বোনের ক্ষতি করবো কি করে
ওর মা কিছুই শুনলো না।কেবিনে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো
আইজান এসে ইনায়াকে তুলে গাড়িতে নিয়ে বসাই।
ইনায়া কান্না করেই যাচ্ছে।
বাসায় এসে কাউকে কিছু না বলে রুমে যায়।
আইজান সকলকে পুরো ঘটনা খুলে বললো।
আইজানের ফুফু কিছুক্ষণ পর ইনায়ার রুমে আসলেন।
ইনায়া ফুফুকে জড়িয়ে কান্না করলো।
উনি অনেকক্ষণ বুঝিয়ে ওকে শান্ত করে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন।
আইজান রুমে এসে ইনায়ার মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়।
ইনায়ার পাশে পুরো রাত জেগে থাকে।ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ও ফুফিয়ে উঠে ইনায়া।
*সকালে আইজান ঘুমিয়ে থাকে ইনায়া উঠে ফ্রেশ হয়ে ফোন হাতে নিয়ে বাড়িতে ফোন দিলো।কেউ রিসিভ করেনি।
এক এক করে সবার ফোনে কল দিলো।লাস্ট রিসিভ করলো ইসহাক।
-ভাইয়া বাবা আর আনু কেমন আছো।
‘ভালো বিকেলে বাসায় নিয়ে যাবো।
-ভাইয়া প্লিজ তুই অন্তত বুঝ আমি জানতাম ওরা দুজন সম্পর্কে জড়িয়েছে। আবেগ নিজে বিয়ে করবে বলছে।বাবা তো আবেগের বাবার সাথে কথা বলছেন।
আমি কি জানতাম আবেগ এরকম কিছু করবে।
‘তোকে একটা খবর দেই।
-কি?
‘আবেগ অরিত্রিকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।
কী!!!
-সকালে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারলাম।
এই খবর শুনে ইনায়া পুরো ভেঙ্গে পড়লো।
**বিকেলে অরিত্রি আবেগ দুজন সমুদ্র দেখতে বের হয়।
আবেগ সমুদ্রের জলে গোসল করছে।তখনি হুট করে অরিত্রির সামনে এসে দাঁড়ায় দীপক।
-জাত ধর্ম বিসর্জন দিয়ে কি নোংরামো শুরু করলো।
‘ভালোবাসার থেকে বড় ধর্ম কিছু নেই।আমি আমার ভালোবাসা কে পেয়েছি এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
-তাহলে বিয়ে করে নাও।এভাবে বিয়ের আগে একসাথে থাকার কোনো মানে হয়।
অরিত্রি চুপ করে থাকে দীপক আবার বলে।
-ভালোবাসা যেমন পবিত্র তেমনি সেটা বড্ড নোংরা।দেহের খেলায় মেতে উঠে গেলে সেটা শুধু অপবিত্র করে দুটো দেহ। যৌনতার নেশায় মেতে উঠার আগে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাও।
দীপক চলে গেলো অরিত্রি ভাবছে দীপক মিথ্যে বলেনি।
আজই আবেগকে বলবে ওকে বিয়ে করে নিতে।
চলবে
চলবে